রিস্টার্ট,পার্ট_৩৩

0
676

#রিস্টার্ট,পার্ট_৩৩
#পিকলি_পিকু

“তোমার সাথের ঐ ছেলেটা কে?” জাহিদের মুখে এই প্রশ্ন শুনে নাদিয়া কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। এরপর বলল, “কলিগ।” ফ্রেশ হয়ে আসার পর জাহিদ ওর হাত ধরে বলল,
– কলিগটাকে ভালো করে চেনো?
– তুমি ভয় পাচ্ছ আবার?
– হ্যাঁ। কারণ তুমি কিছু করার আগে একটুও চিন্তা করোনা।
– কলিগের সাথে কী প্রবলেম? আগেও তো ছিল।
– ছিল, কিন্তু এখন সিচুয়েশন ভিন্ন।
– এখন কী সিচুয়েশন?
জাহিদ আর কথা বলল না। এখন ও ম্যাগনেফিসেন্টে। এখন সবাই বিপদজনক। ওখানে না জানি কী কী করছে?

লন্ডনে নিজের পেন্টাহাউসে বসে চা পান করছে সারা। ওর হাতে আছে আই প্যাড , সেখানে ও সানির নিউজ দেখে হাসছে। এরপর ওর পাশে এসে বসলো এক ইংরেজ যুবক। সারা আই প্যাডটা বন্ধ করে দিয়ে মুচকি হাসলো। তারপর সেই ইংরেজ ছেলেটার কাঁধে মাথা রেখে ভাবতে লাগলো শুদ্ধের কথা। সানি যে লুজারের কথা বলছিল তা কী সেই শুদ্ধ? ওর বউটা কে?

নাদিয়া আর ওয়াসি ক্লাস শেষে ওয়াসির বাসায় যাচ্ছে। নাদিয়ার ভয় লাগছে। কারণ একা একটা ছেলের সাথে। আজকাল ঐ ভীতুটার জন্য নিজের ও ভয় লাগছে।

– ভয় পেও না। আমি তোমাকে কিডন্যাপ করছি না।
– হাহাহা খুব ফানি।

ওয়াসির বাসায় যাওয়ার পর ওয়াসি ওর ল্যাপটপ বের করলো। এরপর একটা ঝুড়ি আনলো।
– এসব কী?
– এখন বলব তা শোনার পর ঘাবড়ে যেও না। এটাই সত্যি।
– কী?
– তুমি কী ফোনে ওয়ার্ক প্রোফাইল চালাও?
– জ্বী। সবাইকেই চালাতে হয়।
– বের হওয়ার পর অফ করো?
– হ্যাঁ।
– থ্যাংক গড। এই ওয়ার্ক প্রোফাইল তোমার ফোনের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
– সত্যি!
– হ্যাঁ। ওখানে যাওয়ার সাথে সাথে ওয়াইফাই কানেক্ট হয়। এরপর তোমার ফোনের সব ম্যাগনেফিসেন্ট সার্ভারে যায়।
– তার মানে,
– তারমানে এই ফোন দিয়ে কোনো ছবি ভিডিও করা যাবে না। করেছ?
– না। আমার কাজ তো ওটা ছিল না।
– আর তুমি যে বারবার স্টোর রুমে যাও এটাও চোখে পড়ার মতো।
– তো আমি ধরা পড়ে গেছি! ডোন্ট টেল মি ওয়াসি তুমি ম্যাগনেফিসেন্টের,
– লোক? না। তুমি ধরা পড়নি। প্রথম দিন তুমি ঢুকেছ। পরদিন আমি ঢোকার আগে মডিফাই করে নিয়েছিলাম।
– মানে।
– এই ডিভাইস। এটা একটা ছোট নেটওয়ার্ক জ্যামারের মতো। মানে আমি যখন এটা স্টার্ট করেছিলাম স্টোর রুমের পাশে কারো নেটওয়ার্ক দেখায়নি। এমনিতেও ওদিকে কেউ যায় না। তো এটা স্বাভাবিক ছিলো।
– হোয়াট দ্য!
– হুম।
– তুমি ধরা পড় না?
– লুক অ্যাট দিস। এটা আর এটা, আমার গাড়ির চাবির সাথেই থাকে। কেউ সন্দেহ করে নি।
– আস্তাগফিরুল্লাহ! তুমি আসলে কে?
– হাহাহ! আমি একজন আর্টিস্ট। আর্টিস্ট রা ক্রিয়েটিভ হয়। এই যে ঝুড়িতে এসব আমার আর্ট। এইসব স্পাই ক্যাম!

ওয়াসি একে একে সব বের করে দেখাতে থাকে। এসব কী!

– আমি শুধু স্পাই ক্যামের নামে পেন ক্যাম শুনেছিলাম। এটা তো পুরো স্টেশনারির দোকান!
– ইয়েস। কারণ এই যে পেন ক্যামেরা এত কমন যে বাচ্চারাও জানে। তুমি যখন ম্যাগনেফিসেন্টে ঢুকো তখন তোমার ব্যাগ একটা ছোট মেশিনের নীচ দিয়ে যায়।
– হ্যাঁ।
– ওটা কোনো বোম ডিটেক্টর না। ক্যামেরা আর মাইক্রোফোন ডিটেক্টর।
– মাই গড! এগুলো ধরা পড়ে না?
– না। কারণ এগুলো আমার বানানো। এই যে এটা তোমার। লিপস্টিক ক্যামেরা। পাশের বাটনটা প্রেস করলেই রেকর্ড শুরু। এই যে নীচে, এসডি কার্ড আর ইউ এস বি কানেকশন। কখনো প্রিন্সিপাল স্যার ওদের কথা বলে ধমকালে এইটা বের করবে। বা টিচার্সরুমে সবার হেনস্থার কথা বলার সময় এইটা পারফেক্ট। মহিলা টিচারদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলো। তারা যখন কথা বলবে এটা চালাবে।
– ইম্পেসিভ! সেদিন কী করেছিলে প্রিন্সিপালের রুমে?
– অফকোর্স! আমার লকেট।
– ভয়েস? ক্লিয়ার আসে?
– ব্রেসলেট। এইচডির জন্য।
– তোমার বউ বড় দুর্ভাগ্যবতী!
ওয়াসি মুচকি হাসলো। এরপর একটা বল বের করলো,

– স্ট্রেস বল?
– ইয়েস। এই যে সেদিন মারামারি দেখলে, সেরকম যখনই দেখবে এই স্ট্রেস বল টা এইভাবে হালকা করে ছুড়বে। এইটা রাগবির মতো। তাই অ্যাঙ্গেলে প্রবলেম নেই।
– তাও তো,
– চারদিকে ক্যামেরা। এইটা সব সময়ের জন্য না। আর এসডি দেখো,

বলটা মাঝখান থেকে খুলে যায়। নাদিয়া অবাক হয়ে মুখে হাত দিয়ে ফেলে।

– তোমার মাথায় কী? দেখি, এই ঝাঁকড়া চুলের ভেতরে তুমি ক্যামেরা রাখোনি তো?

নাদিয়া ওয়াসির চুল হাতাতে থাকে।

– আরে আপা থামেন। এসব কী? বিবাহিত নারীর একজন অবিবাহিত পুরুষের উপর এ কেমন নির্যাতন?
– তুমি কী করে এসব করো?
– মাত্র দুটো দেখে এমন করছ?
– তো?
– এই যে পারফিউমের বোতল। এইটা তোমার লাগবে কী না জানিনা। তুমি নিজেও বুদ্ধিমতী, তো ব্যবহার করতে পারবে।
– পারফিউমের স্প্রের ফুটো!
– ক্যামেরা। আর এই প্রাণ আপের বোতল,
– ক্যামেরা!
– এই যে চুইংগামের বাক্স।
– এটা আমি দেখেছি।
– ওকে। বাট এটা, এটা হচ্ছে চিপকু। এইটা কাকে দেওয়া যেতে পারে?
– আরো আছে?
– শুধু আমরা দুজন এখন। তবে আরো স্টুডেন্টদের মধ্যে দরকার। ওরা যখন টর্চার করবে সেই মুহূর্তে ভালো ভিউ পাওয়া যাবে।
– এমন স্টুডেন্ট কোথায় পাব?
– এখনই না। আমাদের আগে যথেষ্ট প্রমাণ জোগাড় করতে হবে। যদি ধরা পড়েও যাই তবে কেটে পড়ার সময় ডিফেন্সে এই ভিডিও দেখালে এটলিস্ট কিছু হবে।
– তুমি আসলে কে? পুলিশ অফিসার? না এস এস এফ আই এর লোক?
– লাস্টের টা কী বললে?
– সিক্রেট সিকিউরিটি ফোর্স অব ইনটেলিজেন্স।
– ওমা! আমি একজন আর্টিস্ট। বেশি কিছু না। আচ্ছা, এই ক্যামেরা টাও রাখো।
– কী? এটাও ক্যামেরা।
– হ্যাঁ। এই কী চেইন আর চাবি। তবে একটা জিনিস কী জানো, এগুলো বাগ ডিটেক্টরেও ধরা পড়বে না।
– এই জিনিসটা তুমি আমাদের ন্যাশনাল সিকিউরিটি তে দিতে পারো।
– যাতে ভুল লোকের কাছে চলে যায়! আর ওনাদের কাছেও থাকবে এমন।
– আচ্ছা, কী করে ধরা খায় না?
– ঐ মেকানিজম এখন বোঝাতে পারবো না।
– যাই হোক। ধন্যবাদ।

আজকেও ওয়াসি ওকে বাড়ি পৌঁছে দিলো। জাহিদ ওপরে বারান্দা থেকে দেখলো।

– ঐ ছেলেটা কে?
– কালকের টাই।
– ও তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেয় কেন?
– ইচ্ছে হয়েছে তাই। তোমার কী হিংসে হয়?
– ব্যাপারটা সেটা না। ও কী পড়ায়?
– ও নতুন। আর্ট টিচার।
– নাম কী?
– সালমান খান!
– মজা করছো?
– সত্যি ওর নাম সালমান খান। জানো, ও না এই স্কুলে পড়তো। পরে ছেড়ে দিয়েছে। এখন এখানে টিচার হয়ে পরিবেশ ফেরাতে চায়।

জাহিদের চেহারার রং বদলে যায়। ও কী সেই সালমান? ওর সাথে একটা সালমান পড়তো। সেই ছেলে পরে টিসি নিয়ে চলে যায়। সেই সময় জাহিদ ও ভেবেছিল চলে যাবে, কিন্তু পারে নি। সেই সালমান হলে তো চিনে ফেলবে। সেই সালমান আবার ওর স্ত্রীর সাথে ঘুরছে কেন?
– কী হলো?
– পুরো নাম?
– সালমান খান ওয়াসি।
– ওহ!

এই সালমান কী ওকে এখনো মনে রেখেছে? ওর থেকে এখন নাদিয়া কে কী করে দূরে রাখবে? সব স্ট্রেস বের করতে ও আবার পিপির কাছে,
– আসুন আসুন! আপনারা মিয়া বিবি এত ঝামেলা করেন কেন?
– আমরা ঝামেলা করি না। ঝামেলা ই আমাদের করে।
– আমি শুনলাম তোমার মিষ্টি কণ্ঠ। সানি ধরা পড়েছে তাই কংগ্র্যাটস্।
– তার সাথে যে আরো বিপদ আসলো। আমি এখন আসলাম আরেকটা ঝামেলা নিয়ে।
– বলো।

ঘটনা শোনার পর পিপি বলল,
– তুমি শুধু শুধু স্ট্রেস নিচ্ছ। নাদিয়া জানে তুমি ম্যাগনেফিসেন্টে পড়তে।
– কী!
– হ্যাঁ। আমি ওকে বলেছি এ নিয়ে আর প্রশ্ন না করতে। তুমি কী ভেবেছ, ও সানির এত বড় সিক্রেট বের করলো আর তোমার এই একটু সত্যি জানবে না?
– প্রিয়মের কথা জিজ্ঞেস করলে?
– আপাতত বলো তোমার মনে নেই। আমি বলেছি অনেক বড় স্কুল, আর সবাই সবাই কে চেনে না।
– পরে যখন জানবে?
– উই উইল ম্যানেজ। আর পরে কী হবে তা পরের ব্যাপার। বর্তমানে ফোকাস করো।

কিন্তু জাহিদের পক্ষে কখনোই শুধু বর্তমানে মনোযোগ দেওয়া সম্ভব না। ওকে প্রতিদিন সেই চিন্তা করতে হয়। অযথা এইসব চিন্তার ছাপ অফিসেও দেখা যাচ্ছে। নেক্সট প্রজেক্ট টা বড়। ওকে সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনালসকে রিপ্রেজেন্ট করতে হবে। এই মেগা প্রজেক্ট নিয়ে ও দিন রাত কাজ করছে। ওদের প্রতিদ্বন্দ্বী আরো বাঘা বাঘা কোম্পানি। কিন্তু হঠাৎ ওর ফোনে একটা কল আসলো,
– আপনার সাথে দেখা করতে চাই।
– কী বিষয়ে?
– সামনের মেগা প্রজেক্ট নিয়ে।
– ফোনে বলুন।
– দেখা করে বললেই বেটার।

জাহিদ দেখা করতে গেল। ওর জন্য দামী ফোন আর গোল্ড চেইন নিয়ে এসেছে তারা। জাহিদ হাসলো,
– এসব কী?
– শুনেছি আপনি সেঞ্চুরির স্টার।
– তো?
– আমাদের পক্ষে একটা কাজ করলে আপনি যা চাইবেন তা পাবেন।
– কী কাজ?
– এমনিতেও সেঞ্চুরির হাতে বিশাল প্রজেক্টের অভাব নেই। একটা না পেলেও কিছু যায় আসে না।
– যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন?
– আপনি কোনো এক ভাবে আপনাদের নাম উইথড্র করে নিন। বিনিময়ে মুখ খোলা দাম পাবেন।
– কিনতে চাইছেন?
– না, বন্ধু কে উপহার।
– কোন কোম্পানি আপনারা?
– না জানলেও হবে।
– তবে এটা জেনে রাখুন, আমি একজন সৎ ব্যক্তি। আমার সততা আমি বিক্রি করতে পারব না। আর নাম টা না বলে ভালো করলেন। কমপ্লেইন করে দিতাম। মুরোদ থাকলে ফেয়ার খেলুন।

এরকম হাজারো দেখেছে জাহিদ। কত জন কিনতে আসে ওকে। আগে ভাবতো এমন টা শুধু সরকারি চাকরি তে হয়। কিন্তু এরকম বড় প্রজেক্ট গুলো তে বড় লাভ। তাই এসব ছোটখাটো ছোটলোকি মানুষ করে থাকে। সেদিন জাহিদ নিরিবিলি বাসায় কাজ করছিল। নাদিয়া ওর ক্যামেরা গুলো চেক করে চার্জ দিচ্ছিলো। সাধারণ একটা শুক্রবার। দরজায় কলিংবেল বাজলো।

– জাহিদ একটু খোলো না।
– আমি কাজ করছিলাম। ঠিক আছে।

জাহিদ ভাবলো রাহু ই হবে। শালাটা ইদানিং বেশি খোঁজখবর নেয়। ওর প্রশ্নের জবাব নেই ওর কাছে। কারণ নাদিয়ার বানিয়ে বলা কাহিনী টা ভালো করে ও জানে না। আবার হুমকি দেয় ওর বোনের যদি জাহিদের জন্য কিছু হয়। উল্টো জাহিদের ওর বোন ঝামেলা করে বেড়ায়।

– আসসালামু আলাইকুম জাহিদ সাহেব। কেমন আছেন?
– আপনি!!!
– ছোটবেলার বন্ধু কে আপনি করে বলছিস।

জাহিদ ভয়ে ঢোক গিলতে থাকে। আজফার দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ে। এরপর ওর সাথে ওর লোকেরাও একে একে ঢুকল।

– এসব কী?
– কী আবার? বন্ধুর বাড়ি তে এতদিন পর। তাই খালি হাতে আসিনি।
– তুমি আমার ঠিকানা পেলে কোথায়?
– পেলাম। তোকে যে আবার খুঁজে পাবো ভাবিনি।
– কেন এসেছ?
– জরুরি কাজে। আয়, বোস। গল্প করি।

ভয়ে জাহিদের হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। ও কী সানির বদলা নিতে আসলো? সব বিপদ এক সাথে। নাদিয়া বসার ঘরে এসে সালাম দিলো।

– ইনি বুঝি ভাবি?
– হ্যাঁ। তুমি কেন এসেছ?
– ভাবি ভালো আছেন? আমি ওর বন্ধু।
– নাদিয়া, তুমি ভেতরে যাও।
– ভেতরে কেন যাবে? ভাবি ও এসে বসুন। গল্প করি।
– তুমি ভেতরে যাও!

নাদিয়া বুঝতে পারলো খুবই খারাপ কিছু। ও রান্না ঘরে গিয়ে শরবত বানাতে লাগলো। এটা শুধু একটা বাহানা ওখানে যাওয়ার।

– এখন কী করছিস?
– চাকরি করছি। তুই, এখানে কেন বল?
– বন্ধুর বাসায় বন্ধু আসবে, এতে এত ভয় কীসের? আচ্ছা, তুই এ লেভেল শেষে কোথায় গিয়েছিলি?
– দেশে ছিলাম।
– পরে? সব দেশেই?
– না। পরে বার্মিংহামে।
– বাহ! তোর কাছে এসেছি একটা প্রয়োজনে। আমি জানি তুই না করতে পারবি না।

নাদিয়া ওদের রান্নাঘর থেকে দেখছে। কী বলছে এমন যে জাহিদ একদম ঘাবড়ে গেল। নাদিয়া শরবত নিয়ে সামনে যেতেই জাহিদ বলল, “ভেতরে গিয়ে বসো।” আজফার নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,

‐ দেখ, ভাবি কত হসপিটালিটি জানেন। তোর মতো না।
– কী জন্য এসেছিস?
– আশুলিয়ার মেগা প্রজেক্ট টা করিস না।
– কেন?
– ওটা আমরা করতে চাই।
– তো কাজের দক্ষতা দিয়ে পেয়ে দেখাও।
– দেখ, পুরনো আজফারকে জাগাবি না। আমি শুধরে গেছি। নইলে এখনো কী করে কাজ বের করতে হয় আমি তা জানি। উপহার দিয়ে আদর করে বলছি তোর ভালো লাগছে না। যখন বউয়ের সামনে ঘাড় ধরে বোঝাবো তখন বুঝবি?
– দেখো, তোমাদের করা প্রজেক্ট গুলো বেশির ভাগ দুর্নীতি গ্রস্ত আর ভেঙেও পড়েছে। মেগা প্রজেক্ট তোমরা কী সামলাবে? সেখানে অনেক মানুষের জীবন জড়িয়ে আছে।
– আর বাকি দের সমস্যা নেই শুধু তোর ই প্রবলেম? তোর মুখে এত বুলি ফুঁটছে কী করে? দেখ আমাকে আগের মতো হতে বাধ্য করিস না।
– কী করবে? মারবে? আমি ও বদলে গেছি। আমার পক্ষে এতগুলো মানুষের সাথে বেইমানি করা সম্ভব না।
– এই তোর শেষ কথা?

জাহিদ কিছুক্ষণ চুপ করে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলে , “হ্যাঁ! আসতে পারো।” আজফার পকেট থেকে গুলি বের করে টেবিলে রাখলো,

– এই গুলি টা দিয়ে নিজেকে মার বা বউকে মার। চয়েস ইজ ইওরস!
– মানে?
– মারবো তো আমি, ইন্ডিরেক্টলি তুই মারবি। আগে কে মরবি ডিসাইড কর।

এরপর গুলি টা হাতে নিয়ে জাহিদ মুখের সামনে নিয়ে আবার ইশারা করে নাদিয়া কে ডাকতে থাকে, ” ভাবি আসুন, কথা আছে।” জাহিদ এটা দেখার পর লাফিয়ে ভেতরের ঘরের সামনে গিয়ে চিৎকার করতে থাকে, ” নাদিয়া, ভেতরে থাকো! ভুলেও আসবে না। ” এই চিৎকার চেঁচামেচি শুনে নাদিয়ার কৌতুহল আরো প্রগাঢ় হয়। সে এগিয়ে আসে। তখন জাহিদ নাদিয়াকে ভেতরের ঘরে ঠেলে ঢুকিয়ে দরজা আটকে দেয়।

– সেই তো পুরনো লুজার। আগেও পারিস নি, এখনো পারবি না।
– প্লিজ এমনটা করো না।
– চয়েস তোর হাতে। বউকে হারাবি, না প্রজেক্ট। সামান্য প্রজেক্টে তোর কিছুই হবে না।
– এত গুলো মানুষ!
– আমার কী? আমি কখনো আমার বাইরে আর বাকি কারো কথা চিন্তা করিনি, করবো না। আমি বুদ্ধিমান। তোর মতো লুজার না। ভাবি!!! স্বামী কে একটু বোঝান! আপনাকে তো বুদ্ধিমতী মনে হয়।

আজফার আর ওর সঙ্গী রা সেখান থেকে চলে যায়। জাহিদ ভয়ে ভয়ে দরজা খোলে। নাদিয়া বের হয়ে ওকে জিজ্ঞেস করতে থাকে কী হয়েছে? জাহিদ নাদিয়াকে ধরে কান্না করতে থাকে। নাদিয়া সান্ত্বনা দিতে দিতে খোলা দরজায় রাহু প্রবেশ করে।

– কী হয়েছে তোদের!!!
– একটা লোক এসে হুমকি দিয়ে গেল?
– জাহিদ ভাই কী বলেছে?

জাহিদ কাঁদতে কাঁদতে ওদের সব বলতেই আরো একজন প্রবেশ করলো।

– ঘাবড়াবেন না। আমি পুলিশের লোক। আপনাদের ওপর নজর রাখা হচ্ছিল। আমার সোর্স বলল কিছু সন্দেহ ভাজন লোক আপনাদের বাসায় প্রবেশ করেছে।
– জ্বী। হুমকি দিল।
– কী নিয়ে?

সবাই সব শোনার পর ওদের আপাতত এই বাসা থেকে অন্য কোথাও যেতে বলল। আর প্রজেক্ট থেকে সরে যাওয়াই ভালো ওর জন্য। ওরা এখন জিনিসপত্র গুছিয়ে নাদিয়াদের বাসায় যাচ্ছে,

– কী ভাবছো?
– ভাবছি, আমি কী সত্যি এত দুর্বল?
– কেন?
– আমি প্রজেক্ট থেকে সরে গেলাম, চাকরি ও ছেড়ে দিলাম। কাল যখন সেখানে বড় কিছু হবে, তখন দায় টা তো আমার ই না?
– ওসব ভেবো না।
– কেন না? আমি ঘুমাতে পারব না যদি আমার জন্য আবার কিছু হয়। না আমি তোমাকে হারাতে পারবো না ওসব নির্দোষ মানুষের দায় এড়াতে।
– আচ্ছা থাক। আমরা বাবার বাসায় যাই।
– নাদিয়া, ওরা আমাকে বাসার ভেতরে হুমকি দিয়ে গেল। আমার অফিসে এটা জানলে কী হবে?
– ওরকম গান দেখলে ওরাও ভয় পেয়ে যেত। সমস্যা নেই, ঠিক হয়ে যাবে।
– আমি চাই না ওরা সেই কাজটা করুক।
– তাই?
– জ্বী।
– পুলিশ কে বলবে? কেস করবে?
– কেস নিবে? ঝুলে থাকবো না তো?
– তোমার সব বসকে একটা মেইল করো। বলো তোমাকে ভয় দেখানো হয়েছে। কমপ্লেইন টা তুমি না, কোম্পানি করলে বেশি গুরুত্ব পাবে।
– কিন্তু আমার ভয় করছে।
– কেন? তুমি কী আজফারকে ও ভয় পাও? ও কী সানির বন্ধু?
– জ্বী। আজফার সানির চেয়েও ভয়ংকর ছিল।
– একটা কথা কী জানো, তুমি সানিকে যতটা ভয় পেয়েছিলে আজফারকে ততটা পাওনি।
– সত্যি?
– হ্যাঁ। আগে ওখানে যাই। এরপর তুমি সবাইকে একসাথে মেইল করবে।

ওরা এখন নিরাপদ আশ্রয়ে আসলো। সত্যি বলতে আজফার তালুকদারের বিপক্ষে যাওয়ার মতো ক্ষমতা অংশু বা নাদিয়ার বাবার নেই। তাই তাদের পরামর্শ আপাতত ওদের সাথে শত্রুতায় না জড়ানো। জাহিদ সবাইকে একসাথে মেইল দেওয়ার পর উত্তরের অপেক্ষা করছে। উত্তর আসতে দেরি হচ্ছে। একটা উত্তর আসলো আর তা হচ্ছে প্রমাণ দিতে হবে যে আজফার হুমকি দিয়েছে। প্রমাণ হিসেবে ওদের বাসার সামনে সিসি টিভি ফুটেজ সহকারে জাহিদ আর ও সহকর্মীরা পুলিশের বড় কর্মকর্তার কাছে গেল। তিনি সব ভিডিও চিত্র দেখে বললেন,

– এখানে কোথায় হুমকির কথা নির্দেশ করছে?
– ওরা বাসায় ঢুকে হুমকি দিয়েছে।
– কোথায়? ওদের কে শুধু বাসায় ঢুকতে দেখা যাচ্ছে। আর আজফার সাহেব বললেন, আপনি আর উনি ছোটবেলার বন্ধু। বন্ধুর বাসায় বন্ধু আসতেই পারে।
– কিন্তু ও গান দেখিয়ে আমাকে ভয় দেখিয়েছে।
– কোথায়? প্রমাণ আছে?

ওরা সবাই চুপ করে রইলো। বের হয়ে আসার পর ফরিদ সাহেব বলল, ” থাক। এরকম একটা প্রজেক্ট গেলে হাজার টা আসবে। জীবন একটাই। তা আর সংশয়ে ফেল না।”

জাহিদ ভাবছে ওরা যদি প্রজেক্ট টা চায় তো এমনিতেই সেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের টাকা খাইয়ে পেতে পারে। কিন্তু এভাবে উপহার দিয়ে কিনতে চাইছে কেন? তারমানে কী সবাইকেই কিনেছে? আর না পারলে এরকম হুমকি দিয়েছে? জাহিদ আজফারদের বিগত ইতিহাস খুঁজে দেখলো। ওদের রেকর্ড সত্যিই খারাপ। ওদের আর্থিক অবস্থা ও মন্দা। এই প্রজেক্ট ওরা তখনই পেতে পারে যখন আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবে না। আর সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনাল এর এই কাহিনী শুনে সবাই আস্তে আস্তে নিজেদের এই প্রজেক্ট থেকে সরিয়ে নিচ্ছে। এসব ভাবতে ভাবতে জাহিদের মাথা ধরে গেল। একটু পর একটা ফোন আসে ওর কাছে,
– কীরে লুজার! কেমন আছিস?
– কেন ফোন করেছ?
– ধন্যবাদ দিতে। এই যে তুই পুলিশের কাছে গেলি।
– মানে?
– মানে আমার কাজ সহজ হয়ে গেল। এখন থেকে আমি যেখানে যাব, সেখান থেকে সবাই নাম তুলে নেবে। তুই সেটা সহজ করলি।
– কী বলতে চাও?
– বললাম লুজার তো তুই লুজার ই রয়ে গেলি। যেখানে আমি গিয়ে সেঞ্চুরি কে ভয় লাগাতে পারি, সেখানে বাকিরা এমনিতেই ভয় পাবে। খেলা টা দারুণ ছিলো, তাই না? খরচ হলো না, পয়সা ও এলো।

ওর বাকি সহকর্মীরা ওর দিকে সহানুভূতির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আগে ওদের দৃষ্টিতে সম্মান ছিল, এখন সহানুভূতি। আস্তে আস্তে সব বদলে যাবে। ওর হাতে আর শক্তি থাকবে না। ওর আর ক্ষমতাশালী হওয়া হয়ে উঠবে না। নাদিয়া ওকে এমনিতেই ভীতু ভাবে, এখন এরাও ভাববে। তার মানে এটা একটা চাল ছিল! জাহিদ কে টার্গেট করে আজফার এই খেলা খেলেছে। যতদূর ওর মনে পড়ে, আজফারের মাথা থেকে এই বুদ্ধি আসার কথা না। ও আবার পুরনো লুজারে ফেরত যাচ্ছে। ওর চোখের নীচে আস্তে আস্তে দুশ্চিন্তার রং দেখা দিচ্ছে। গভীর রাতে ও নাদিয়ার বারান্দার বেল গাছের দিকে তাকিয়ে থাকে। এখন নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। বেনজির ম্যাডাম কে জিজ্ঞেস করতে হবে এই শ্বাসকষ্টের জন্য একটা ইনহেলার নেওয়া যাবে কিনা। ঘরের ভেতর ঢুকে ও আরেকটা ঘুমের ঔষধ খেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। পাশ থেকে উঠে দেখলো ও আরেকটা ঘুমের ঔষধ খেয়েছে। এভাবে তো ঘুমের ঔষধের ওপর নির্ভর হয়ে যাবে।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here