#রিস্টার্ট,পার্ট_৪১
#পিকলি_পিকু
“এখন আমাকে এটা বলোনা শি ওয়াজ রে*ইপড!”
জাহিদ এই কথা শুনে নাদিয়ার দিকে তাকায়। ওর চোখ থেকে অঝোরে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। ও কী করে জানলো? আশেপাশে ওদের দেখে জাহিদ বুঝলো এটা বিশাল বড় একটা ফাঁদ ছিল। আগে থেকেই এসব সাজানো হয়েছিল। ওদের এইজন্যই ডেকে আনা হয়েছিল। জাহিদের চেহারা দেখে নাদিয়ার যা বোঝার ও বুঝে গেছে। সত্যের মুখোমুখি হওয়ার চেয়ে কঠিন হলো সত্য মেনে নেওয়া। সত্যের মুখোমুখি হওয়ার পর এ ছাড়া আর কোনো উপায় ও থাকে না। এই মিথ্যেবাদী বেইমান লোকটা প্রিয়মের বন্ধু ছিল, আর ও জানতো ওর সাথে কী হয়েছিল। তাও এতদিন চুপ ছিল। ও জানতো নাদিয়া কে। তবুও অভিনয় করে গেছে।
এই থমথমে নীরবতার মধ্যে সারা মুখে হাত দিয়ে বলল,
” কে করেছিল গেস করো তো অরনী। শুদ্ধ?”
এটা শুনে নাদিয়ার হাত পা অবোশ হয়ে মাটিতে পড়ে যাচ্ছিল। অসম্ভব! রোহান বলেছিল, মেয়েটার বন্ধুরাই…
জাহিদ ওকে ধরে সারার দিকে চিৎকার দিয়ে বলল, “চুপ করো! এত কিছু করার পর আবার মিথ্যা বলছ!”
সারা হাসতে হাসতে বলল, ” একটু মজা করছিলাম। শুদ্ধ ভালো ছেলে। ও কিছু করেনি, শুধু দেখেছিল। পুরোটাই দেখেছিল।”
নাদিয়া জাহিদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। ভিরাজ হাসি থামিয়ে বলল, “ডোন্ট অ্যাক্ট ঠু সারপ্রাইজড! ইউ স্টিল ডোন্ট নো আ লট। হোল্ড ইউর ব্রেথ অ্যান্ড আস্ক ইওর হাসবেন্ড সাম মোর হিস্ট্রি। অ্যান্ড গাইজ, লেটস গো ব্যাক।”
ওরা সবাই ভেতরে চলে গেল। নাদিয়া হেঁটে চলে আসছিল। জাহিদ নাদিয়ার পেছনে দৌঁড়ে আসছিল। তখনই নাদিয়া পেছনে ফিরে বলল, ” আমার পেছনে আসবে না। আমার পেছনে আসলে আমি রাস্তায় যে গাড়ি টা আসবে তার সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ব!!!”
জাহিদ কাঁদতে কাঁদতে সেখানে বসে পড়লো। ওরা ওর জীবনটা শেষ পর্যন্ত শেষ করেই দিল। নাদিয়া চলে গেছে। ও একা কোথায় যাবে? তাই জাহিদ রাহু কে ফোন দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল, ” নাদিয়া কে একটা ফোন দিয়ে ওকে এখনই বাসায় নিয়ে যাও। ও কিছু একটা করে ফেলবে।”
রাহু ফোনটা রেখে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে গেল। এই লোকটা আবার কী করলো ওর বোনের সাথে। রাহু হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেল। নাদিয়াকে ফোন করতে করতে পাগল হয়ে যাচ্ছে ও। নাদিয়া ফোন ধরছে না। জাহিদ কে ফোন করে সেই জায়গার আশেপাশে অংশুকে পাঠায় ওর খোঁজ করতে। এদিকে জাহিদ পিপিকে ফোন করে কাঁদতে থাকে। কোনো কথাই বলতে পারে না ও।
– কথা বলো জাহিদ, আমার ভয় করছে।
– ও জেনে গেছে সব। সারা ভিরাজ ওরা প্ল্যান করে এনেছে আমাদের।
– কী বলছ? তুমি কোথায়? আমি এখনই আসছি।
ভেতরে সারারা সবাই ড্রিংক করছে। আজকে দারুণ গেম হয়েছে। শুধু সানিই দেখতে পারল না।
– ফাইয়াজ কোথায়? মেইন বস ই নেই।
– ইয়েস লেডি বস। সব কাজ ও করে ও কোথায়?
– এই অর্ঘ্যদীপকেও দিয়েছিলাম একটা। এইটা সত্যি যে ফাইয়াজের থেকে বেটার কেউ না।
অর্ঘ্যের রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। শুধু ফাইয়াজ আর ফাইয়াজ। ও রেগে বলল,
– তুই ও রেপ করেনি বললি কেন?
– আশ্চর্য! ও করেনি। শুধু শুধু ..
– বললে কী হতো? বিশ্বাস করছিল তো।
– এতটাও করা উচিত না। যা করেছি যথেষ্ট।
“না, যথেষ্ট ছিল না। সারা ওটা না বললেও পারতি। খেলা আরেকটু জমতো।” সবাই পেছনে তাকালো। ফাইয়াজ এসেছে। ওর অগোছালো চুল, বাদামি হুডি আর সোনালি চশমা দেখে সারা বলল,
– অ্যাটলিস্ট পার্টিতে ভালো জামা পরতে পারতি। এই ব্রোক অ্যাটায়ার কেন?
– কমফরটেবল। আর আমি পার্টি করতে আসিনি।
– তোর এই চোহারা, এটা তো ফাইয়াজ না।
– হ্যাঁ, এটা রোহান।
– আসিস নি কেন? মজা দেখতি।
– দেখিনি কে বলল। পুরোটা দেখেছি। কী জোরে জোরে ধাক্কাটাই না মারছিল অরনী। হায়! মরে গেলাম!
সারার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। ও অরনীকে সহ্য করতে পারে না তা ফাইয়াজ জানে। ইচ্ছে করেই বলল। আজফার জিজ্ঞেস করল,
– কী করে করলি এসব?
– আই লাইক স্মার্ট গার্লস। ওদের একটাই উইকনেস, আমি। যে মেয়ে যত স্মার্ট, তাকে পাওয়া আমার কাছে ততই সোজা।
এই কথা শুনে সারা বলল,
– কিন্তু আমার তো তুই উইকনেস না।
– আমি কী বলেছি তুই স্মার্ট? আর তোর কয়টা? আমার অরনী, প্রিয়ম, ওরা হার্ড টু গেট। নট লাইক ইউ।
সারা এটা শুনে অপমান বোধ করলো। তখন আজফার বলল,
– আগের কথা বল। কী করে?
– আমি কিছুদিন ছিলাম না। এদিকে ওরা স্পাইং করছিল সেখানে। স্মার্ট! বাট, খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি ও জানেই না প্রিয়মের কী হয়েছিল, আর শুদ্ধই বা কে?
সারা হকচকিয়ে বলল,
– হি লাইড!
– ইয়েস। ইউ বিলিভড! হায়! হায়!
ফাইয়াজ গালে হাত দিয়ে ফেলল। অর্ঘ্যদীপ কঠিন হয়ে বলল,
– ভনিতা না করে কীভাবে করলি বল?
– কিছুই না। ম্যাগনেফিসেন্টে কিছু গন্ডগোল হচ্ছে ভেবেই ঢুকলাম। যেটা ভয় ছিল সেটাই হলো। অরনী আমাকে বোকা বানালো। ও ঢোকার সময় আমিই ওকে সিলেক্ট করেছিলাম। আই লাইকড হার। কিন্তু আস্তে আস্তে সব জেনে আমি নিজেই ঢুকলাম। ও বুদ্ধিমান, কিন্তু আমি প্রিয়মকে কাজে লাগালাম।
– তোকে বিশ্বাস কীভাবে করল?
– লিসেন কেয়ারফুলি, মানুষের বিশ্বাস জেতার সবচেয়ে সহজ উপায়, “কাউকে বিশ্বাস করো না। সবাই ফেক!” এইটা বলা। দেখবি সে কাউকে বিশ্বাস করুক আর না করুক, তোকে তো বিশ্বাস করবেই।
সবাই চুপ হয়ে গেল। ফাইয়াজ সত্যিই একটা জিনিস। সবার এই নিস্তব্ধতা ভাঙাতে ফাইয়াজ বলল, ” সো, কাউকে বিশ্বাস করো না।” সবাই ফাইয়াজের দিকে তাকালো। হ্যাঁ, ওকে বিশ্বাস করা উচিত না। সারা ওর গ্লাস রেখে বলল,
– আমি আসি।
– হোয়ার ইজ মাই গিফ্ট?
– হোয়াট গিফ্ট?
ফাইয়াজ সারাকে ঘুরিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর ঘাড়ে চিবুক রেখে বলল,
– এই যে, করে দিলাম কাজ। এটা কী ফ্রি তে?
– তোর ও কাজ এটা। আমার একার নাকি?
– না, আমার না। আমার ওর সাথে কাজের কোনো প্রমাণ নেই, না আছে লেনাদেনা।
এই বলে ফাইয়াজ সারাকে চুমু খেতে যায়। সারা নিজেকে বাঁচাতে হাত দিয়ে আটকায়। পরক্ষণে অর্ঘ্যদীপ ফাইয়াজ কে সরিয়ে দেয়।
– ও মানা করছে তো।
– ওকে সারা। আমি আর আমাদের এক্টিভিটিস ভিডিও করবো না। বাট ফেভার তো দিতেই পারিস।
সারা দাঁতে দাঁত চেপে বলে, “ব্লাডি সাইকোপ্যাথ!!!” ফাইয়াজ হেসে বলে,
– আপনারা কেউ খুশি হবেন না। অরনী ছাড়া আরেকটা স্পাই ছিল। ওরা কী কী ভিডিও করেছে তা তো জানি না। তবে কিছু ফাঁস হলে সবাই ডুববে। শুধু ম্যাগনেফিসেন্ট না।
– হোয়াই? (ভিরাজ)
– কারণ, তোমাদের সবার ভিডিও এখনো ম্যাগনেফিসেন্টেই আছে।
এই বলে ফাইয়াজ সারাকে নিয়ে চলে যায়। বাকি তিনজন দাঁড়িয়ে থাকে। ভিরাজ বলে,
– দিস ইস দ্য রিজন আই নেভার কেইম ব্যাক টু বাংলাদেশ। দিস সাইকো! আই ওয়াস নেভার লাইক দিস! হি মেড মি ওয়ান।
– কিন্তু ও এখনো ভিডিওগুলো কেন রেখেছে?
আজফারের কেন এর উত্তর অর্ঘ্যদীপ জানে। ও অবশ্যই কোনো একদিন এসব ব্যবহারের জন্য রেখেছে। ফাইয়াজ যে কী সেটা ফাইয়াজ ছাড়া কেউ জানে না। ফাইয়াজ গাড়িতে বসে ওয়াসির খবর নেওয়ার জন্য বলল। ওয়াসিকে গায়েব করে দিতে হবে। সারা ভয়ে ভয়ে ফাইয়াজের পাশে বসে আছে। ফাইয়াজের আশেপাশে থাকা অনেক বিপদজনক।
এদিকে নাদিয়া কে রাস্তা থেকে বিধ্বস্ত অবস্থায় ওর ভাইয়েরা বাসায় নিয়ে এসেছে। নিস্তব্ধ নাদিয়া কিছুই বলেনি অনেকক্ষণ। মিষ্টি আর ওর মা নাদিয়ার পোষাক বদলে ওকে স্বাভাবিক করতে চাইলো। কিছু সময় পর ও কিছু কিছু বলল, কিন্তু গুছিয়ে বলতে পারল না। নাদিয়াকে কখনো এমন দেখা যায়নি। জীবনের সবথেকে কঠিন মুহূর্তেও সে ছিল পাথরের মতো শক্ত, তার দৃঢ় মনোবল ছিল উদাহরণ। আজকে ওকে এমন দেখে সত্যিই সবাই ভেঙে পড়েছে।
“মা, ও এতদিন মিথ্যা বলেছিল। প্রিয়ম বন্ধু ওর। ওরা এক স্কুলে ছিল। ও জানতো প্রিয়মকে ধ*র্ষণ করেছিল। ও নাকি ছিল। ও দেখেছে। ও আমাকে বলেনি। অভিনয় করলো। মা আমি এত বোকা? বাবা! ও আমাকে বোকা বানিয়েছে। ধোঁকা দিয়েছে। আমি একটা স্টুপিড! মা!!! আমার প্রিয়ম ওর সামনে ধ*র্ষিত হয়েছে। ঐ কুলাঙ্গারটা কিছুই করেনি।” নাদিয়ার কথা তারা স্পষ্ট বুঝতে পারছে না। ও কী জাহিদের কথা বলছে? জাহিদ কী করে প্রিয়ম কে চিনবে? নাদিয়া ওর দুই কান হাত দিয়ে বন্ধ করে চোখ বন্ধ করে চিৎকার দিতে থাকে। মিষ্টি বা ওর মা কেউই ওকে ধরে রাখতে পারছে না। সেই সময়ই কলিংবেল বাঁজলো। রাহু দরজা খুলে দেখলো জাহিদ আর পিপি এসেছে। জাহিদ কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে। রাহু চোখে আছে কৌতুহল। জাহিদ কে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ওকে অংশু জিজ্ঞেস করে কে এসেছে? ওপর থেকে খুব জোরে জোরে নাদিয়ার চিৎকারের শব্দ আসছে। পিপি তখন বলে,” একটিবার নাদিয়ার সাথে জাহিদের কথা বলা দরকার। শুধু ও না, তোমাদের ও।” রাহু ওপরে গিয়ে নাদিয়া কে কথাটা বলতেই নাদিয়া নীচে এসে জাহিদের কলার চেপে ধরে জাহিদ কে সজোরে ধাক্কা দেয়। রাহু দৌঁড়ে গিয়ে নাদিয়া কে অটকায়। তবে একটিবার ওর মুখ থেকেও তো শোনা দরকার।
নাদিয়ার পাশে নাদিয়ার মা ওর দুই হাত শক্ত করে ধরে আছে। অপর পাশে ওর বাবা বসে আছে। মুখোমুখি সোফাটিতে জাহিদ আর পিপি বসে আছে। অন্য দুটো সিঙ্গেল সোফায় রাহু আর অংশু বসেছে। মিষ্টি পাশে একটি চেয়ারে বসেছে। এতক্ষণ ওরা এটাকে সাধারণ দাম্পত্য কলহ ভাবছিল। কিন্তু এটা যে ঠিক কী তা ওরা বুঝতে পারেনি। অশ্রুসজল চোখে জাহিদ যতটুকুই বলেছে, পিপি জিনিসগুলোকে গুছিয়ে দিয়েছে। সে ক্ষমা ও চেয়েছে কারণ জিনিসটা জানার পর তারা আরেকটু দেরিতে বলতে চেয়েছে। ছেলেটি সত্যিই জানতো না নাদিয়া আসলে কে। আর ওরা দুজনেই মানসিক ভাবে জিনিসটাকে নিতে পারত না।
সব শোনার পর নাদিয়া চুপচাপ বসে আছে। ওর মা ওর হাত ছাড়ছে না। তিনি একটু হাত ছাড়তেই নাদিয়া ওর চোখের পানি মুছলো। এরপর জিজ্ঞেস করলো,
– প্রেগনেন্ট ছিল?
– জ্বী।
– প্রেগনেন্ট অবস্থায় আত্ম*হ*ত্যা কেন করলো?
– জানি না।
– আমাকে বলেনি কেন?
– ও তোমাকে বলতে চেয়েছিল। ও লড়াই করতে চেয়েছিল।
– কেন করলো তাহলে? ওর লা*শ দেখতে তুমি এসেছিলে?
– হুম। জানাজাতে ছিলাম।
– তখন বলোনি কেন?
জাহিদ চুপ হয়ে যায়। নাদিয়া আরেকবার জিজ্ঞেস করে ,”বলোনি কেন!!!” এরপর তেড়ে গিয়ে জাহিদকে আরো চড় থাপ্পড় মারতে থাকে। এবার আর রাহু থামায় না। তবে নাদিয়াকে ওর বাবা মা ভেতরে নিয়ে যেতে থাকে। রাহুর ক্রোধে চোখ থেকে পানি ঝড়তে থাকে আর তার কিছুক্ষণ পরেই রাহু জাহিদকে উঠিয়ে ঘুষি মারতে থাকে। এরপর ওকে মাটিতে ফেলে লাথি মারতে থাকে। “দেখা হয়েছিল সেদিন!!! বললি না কেন? বললি না কেন!!!” জাহিদকে মারতে দেখে নাদিয়া থেমে যায়। অংশু এসে রাহুকে থামিয়ে বলে, “মরে যাবে তো! পুলিশ কেস হয়ে যাবে।”
রক্তাক্ত অবস্থায় জাহিদ মাটিতে পড়ে গোঙাচ্ছে। পিপি ওর পাশে গিয়ে বসে মিষ্টিকে বলল একটু পানি দিতে। ভয়ার্ত মিষ্টি পানি আনতে যাচ্ছিল তখন রাহু বলল, “একে পানি দেবে না ভাবি।” মিষ্টি রাহুর কথা শুনল না। তৎক্ষণাৎ পানি এনে বলল, “আমি শিমার না। মরে যাবে তো।” নাদিয়া এখনো জাহিদের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর ছলছল চোখে ও জাহিদের কাছে এসে বলল, “ম*রে যাওনি কেন তুমি? ম*রে যেতে পারতে তো। তুমি ম*রলে না কেন!!!! বেঁচে থেকে কী করেছ? কাপুরুষ! একটা কাপুরুষ তুমি। এই জীবন নিয়ে লাভ? ঠিক করে শ্বাস নিতে পারো না। ওহ! তোমার তো আবার লজ্জা নেই।”
কথাটা শেষ করতে পিপি বলল, ” নাদিয়া!!! তুমি যা জানো না তা নিয়ে কথা বলো না। ও নিজেও আত্ম*হ*ত্যা করতে গিয়েছিল। ফাইয়াজরা ওকে করতে দেয়নি।” রাহু চিৎকার দিয়ে বলল, “কেন দেয়নি! কারণ ও ওদের সহযোগী ছিল। ও পাঠিয়েছিল প্রিয়ম কে।”
“না! না! আমি পাঠাইনি। আমি দেখাতে চেয়েছিলাম ওর বয়ফ্রেন্ডই মেইন বস। ও যে ধরা পড়ে যাবে ভাবিনি। আমি ম*রে গেলে সবচেয়ে বেশি খুশি আমিই হতাম। কিন্তু ওরা আমাকে বলেছিল আমি যদি মরে যাই তো ওরা আমি ল*ম্পট, প্রিয়মের ধ*র্ষক এমন কথা ছড়িয়ে দেবে। তখন আমার পরিবারের বদনাম হবে। আমি মরে গেলে ওরা আমার পরিবারকে শান্তি দিত না।” জাহিদের কথা শুনে পিপির খুব মায়া হলো। সে জাহিদের পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে নাদিয়া বলল, “অন্তত আপনাকে খুব ভালো মানুষ জানতাম পিপি স্যার।”
পিপি হাত বুলানো থামিয়ে নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
” এখন কী খারাপ হয়ে গেছি? আচ্ছা তোমার কাছে খারাপের সংজ্ঞা টা কী বলো! তুমি ওর উপর ক্ষিপ্ত হচ্ছ কী জন্যে? ও কী করেছে? রে*প করেছে? না মা*র্ডার করেছে? ও নিজেও একজন ভিকটিম। তুমি ওকে শুধু এই কারণেই দোষারোপ করতে পারো কারণ ও তোমাকে এতদিন এসব বলেনি। কেন বলেনি তার পেছনের কারণ ও জানো। আর এখানে উপস্থিত সবার চেয়ে বেশি জানো। ও যে অ্যাবিউসের শিকার, ও যে মেন্টালি নট ওকে তা তুমি জানো। এরপর ও তুমি ওকে অন্য কারণে কী করে ব্লেইম করছো যা ও করেনি?”
নাদিয়া কথা গুলো চুপ করে শুনলেও একটু পর মুখ খুলে বলল, “এখন কী করবে জাহিদ?” জাহিদ কান্না চোখে নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। এরপর নাদিয়া জাহিদের সামনে এসে মেঝেতে বসলো,
– তোমার প্ল্যান কী ছিল? এভাবে মিথ্যা বলতে থাকা?
– না। সত্যিটা একদিন অবশ্যই বলতাম।
– এরপর?
– জানিনা।
– তোমার কী মনে হতো, আমাকে এসব বলার পর আমি তোমার সাথে সংসার করবো?
– না। সেটা না। সেটা যে সম্ভব না তা আমি জানতাম।
– তাহলে আমাকে বলার কারণ কী?
– জানিনা। শুধু সত্যি টা,
– সত্যি জেনে আমি কী করব!!!!! সত্যি দিয়ে আমার কী হবে!!! প্রিয়ম কী আসবে? বলো? দিতে পারবে আমার প্রিয়মকে ফেরত? আমার তো মনে হয় সত্যি না জানলেই ভালো হতো।
নাদিয়ার ক্রোধ আবার সীমা ছাড়াচ্ছে। পিপি জাহিদ কে টেনে আনলো। নাদিয়া ওর চুল গুলো পেছনের দিকে নিয়ে বলল, “জাস্টিস দাও আমাকে। আমাকে আমার প্রিয়মের জন্য জাস্টিস দাও!!!!” নাদিয়ার চিৎকারে জাহিদ চোখ বন্ধ করে ফেলল। নাদিয়া এরপর কাঁদতে কাঁদতে বলল, ” কাপুরুষ তুমি! সাহস থাকলে প্রিয়মের পরিবারকে সত্যিটা বলে আসো। আমাকে সত্যি বলে কী হবে? যাদের মেয়ে তাদের বলে দেখ।” জাহিদ কাঁদতে কাঁদতে বলে, ” পারব না। আমার সেই সাহস নেই। এর থেকে ভালো আমাকে মেরে ফেল।” নাদিয়া ওর চোখের পানি মোছার সময় জাহিদ ওর হাত ধরলো। নাদিয়া তখন ঘৃণা ভরে জাহিদের হাত ফেলে দিয়ে বলল, “তোমার এই জঘন্য চেহারা আর আমাকে দেখাবে না। আমি তোমাকে আর দেখতে চাই না। আমার নাম তোমার নামের সাথে আর কখনো জড়াবে না।” জাহিদ নিঃশব্দে তাকিয়ে আছে। নাদিয়া সেখান থেকে উঠে বলল, “রাহু, একে বের করে দে। একে যাতে বাসার সামনে আর না দেখি। আমার সামনে এর কথা আর উঠবে না।”
রাহু আক্রমণাত্মক ভাবে জাহিদের কলার ধরে ওকে উঠিয়ে ফেলে। জাহিদ রাহুকে হাত দিয়ে থামিয়ে বলে, “আমি কী করেছি? আমি কেন এমন ব্যবহার পাব?”
নাদিয়া জাহিদের দিকে তাকিয়ে বলে,
– তোমার লজ্জা করে না?
– করে, কিন্তু তুমি যে কারণে বলছ, সে কারণে না। প্রিয়ম আমার ও বন্ধু। তোমার চেয়ে বেশি কষ্ট আমি পেয়েছি, কারণ যা হয়েছিল আমার সামনে হয়েছিল। আজ তোমার সামনে এমন হলে তুমি কী করতে তাও দেখতাম।
– যাই করতাম তোমার মতো কাপুরুষের পরিচয় দিতাম না।
– আমি কাপুরুষ। হ্যাঁ, আমি কাপুরুষ। এই কাপুরুষ আমি প্রিয়মকে জাস্টিস দেব।
– আর মিথ্যা কথা বলো না। মিথ্যেবাদী, বেইমান! আমি আর তোমার কোনো কথাই বিশ্বাস করিনা।
– এটা সত্যি কথা! আই প্রমিস মাইসেল্ফ, আমি জাস্টিস চাইবো। যদি এই লড়াইয়ে আমার জীবন চলে যায় তবুও।
– রাহু, একে আমার চোখের সামনে থেকে নিয়ে যা। এর এত মিথ্যা কথা শুনে আমার একে খু*ন করতে ইচ্ছে হচ্ছে।
রাহু জাহিদ কে ধাক্কা দিতেই জাহিদ রাহুকে চোখ বড় করে তাকালো। এরপর রাহু আরেকটা ধাক্কা দিতেই পিপি রাহুকে সরিয়ে জাহিদ কে নিয়ে বেরিয়ে এলো।
নাদিয়া সেখান থেকে ওপরে গিয়ে নিজের রাগ কমাতে ইচ্ছেমতো ভাঙচুর শুরু করলো। ভয়ে ওর বাবা বা মা ওর কাছে যাচ্ছে না। মিষ্টি দৌঁড়ে অর্ষার ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দিলো। অর্ষা খুব ভয় পাচ্ছে। ওকে থামাতে অংশু বা রাহু কেউ যাচ্ছে না। ওদের কারো ইচ্ছা নেই। পারলে রাহুও ভাঙচুর করে। কিন্তু একটু পর নাদিয়ার মা চিৎকার করে উঠলো। সেই চিৎকারে সবাই উপরে উঠে দেখলো নাদিয়া জ্ঞান হারিয়েছে।
পিপি জাহিদ কে মাঝরাতে নিজের বাসায় ই নিয়ে গেল। সেখানে বেনজির জাহিদের ফার্স্ট এইড করছে।
– তুমি শেষের কথাগুলো বলে আগুনে ঘী ঢেলেছ।
– কী বলেছে?
– ও নাকি জাস্টিস দেবে।
– এটা বলা উচিত হয়নি। কোনো প্রমাণ নেই কিছু নেই। কী করে? তাও আবার এত ক্ষমতাধর প্রতিপক্ষ। এটা কী কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা না?
জাহিদ মাথা নীচু করে আছে,
– আমি প্রিয়মের মায়ের সাথে দেখা করবো।
– না জাহিদ। একদম না।
– দরকার আছে।
– ওখানে ঐ দুই ভাইবোনের উদোম ক্যালানি খেয়ে ওখানে আবার!
– সমস্যা নেই।
– তোমার বুঝতে হবে। ওরা তোমাকে মেরে ফেলবে। কারণ এতদিন কাউকে ব্লেম করার মতো কেউ ছিল না। এখন আছে। আর মানুষ যখন কিছু করতে পারে না তখন দোষারোপ করে খুব খুশি হয়।
– তবে তাই হোক। তবুও আমি আমার পক্ষ থেকে যা সম্ভব তা করবো। কারণ আমার কাছে হারাবার মতো আর কিছু নেই।
জাহিদের কাঁদো কাঁদো গলায় এই কথা গুলো শুনে পিপির খুব খারাপ লাগলো। সত্যি ওর সবচেয়ে বড় ভয় ছিলো নাদিয়া ওকে ছেড়ে চলে যাবে। সে ছেড়ে চলে গেছে। এখন আর সেই ভয় নেই। এদিকে নাদিয়াকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়ানো হয়েছে। রাহু অংশু আর বাবাকে বলল, “অরনীর আর ঐ স্কুলে যাওয়ার দরকার নেই। পরে একটা হেল্থ ইস্যু দেখিয়ে রিজাইন দিয়ে দিবে।”
আর ম্যাগনেফিসেন্টে আজ দুজন শিক্ষক অনুপস্থিত। একজন নাদিয়া আর আরেকজন ওয়াসি। নাদিয়া তো বাড়িতে, ওয়াসি কোথায়?
(চলবে)
(জানি, আজকে নাদিয়ার উপর অনেক রাগ হবে। কিন্তু ওর এই আচরণের পেছনে কারণ ওর ক্ষোভ। এতদিন দোষারোপ করার মতো কেউ ছিল না। মানুষ যখন কিছু পারে না তখন দোষারোপ করে সান্ত্বনা পায়। তবে জাহিদের প্রতি নাদিয়ার ব্যবহার একদম ঠিক না।)