#রিস্টার্ট,পার্ট_৭
#পিকলি_পিকু
মেয়েকে নিয়ে চিন্তা করতে করতে সামাদ সাহেবের একসাথে ডায়াবেটিস আর প্রেসার সবই হাই হয়ে গেছে। তাই তিনি আজ চেক আপের জন্য এসেএছন। প্রথমে খালি পেটে স্যাম্পল দিলেন। সেখানে পরিচিত হলেন সুব্রত বাবুর সাথে।
– দেখুন , ছেলেমেয়েদের বড় করলে মনে করে তাদের আমাদের উপরের সব দায়িত্ব শেষ। তাদের জীবন তাদের আমাদের ও তো চিন্তা হয়।
– ঠিক বলেছেন। আমার পরিবারে এখনো কোনো ডিভোর্স হয়নি। আমি চাই না আমার মেয়ে,
– ভাই, শুনুন, ব্যাপার টা পরিবারের ডিভোর্স বলে না। আপনার জামাই, সে কী ভালো? সে কী অত্যাচার করে?
– জাহিদ ছেলে হিসেবে খুবই ভালো। বিয়ের আগে আমি সব যাচাই বাছাই করেছি।
– কিন্তু বিয়ের পর মানুষ বদলেও যেতে পারে।
– বিয়ের পরও ও একই আছে। ও একটু শান্ত, কথা কম বলে। আমার মেয়ে ই রাগী। ছোটবেলা থেকে।
– এক হাতে তো তালি বাজে না।
– আমার মেয়ে যেমন, জাহিদ ওর জন্য পারফেক্ট ছিল। ও কাউকে রাগায় না। সেদিনও ও যখন চিৎকার করছিল, ওর একবার বলাতে থেমে গিয়েছিল। ও কিন্তু পাল্টা চিৎকার করেনি। আস্তেই বলেছিল। মেয়ে আমার শান্ত হয়ে গেল, যেন মন্ত্র শুনলো।
– তো আপনার মেয়ে ছেড়ে দিচ্ছে কেন?
– ওদের মধ্যে নাকি অনেক দূরত্ব। এখন জাহিদের কোনো বাবা মা ও নেই, ও দেরিতে আসে। ওদের মধ্যে দূরত্ব থাকবে না তো কী থাকবে?
– সামাদ ভাই, আমার মনে হয় আপনার পি.পি. কে দরকার।
– পি.পি. কে?
– ড. পি.পি.
– ডাক্তার কেন লাগবে? আমার ছোট ছেলেও ডাক্তার।
– এই ডাক্তার সেই ডাক্তার না। এটা বিয়ের ডাক্তার। আমার একমাত্র ছেলে, সুশান্ত। ওর একটা মেয়ে পছন্দ ছিল। ইঞ্জিনিয়ার আমার ছেলে। চাকরি পেতেই বিয়ে দিলাম। কিছুদিন যেতেই, ওদের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। ছেলে নাকি আর বউ কে আগের মতো ভালোবাসে না। বউ চলে যাবে।
– তারপর?
– আমাদের পরিবারেও কখনো ডিভোর্স হয় নি। তাই আমরা ঠিক করলাম, গোপালগঞ্জে একটা মন্দির আছে। ওখানকার ঠাকুর খুব জাগ্রত। সেখানে গিয়ে মাথা ঠেকাবো। যদি ঠাকুর সদয় হয় তবে আটকেও যেতে পারে। ফেরত আসার পথে সেখানকার রেল স্টেশনে একজন একটা লিফলেট দিয়ে যায়। ড. পি.পি. সেখান থেকেই খোঁজ পেলাম।
– এখন কী গোপালগঞ্জ যেতে হবে? সেখানে আমাদের কেউ নেই। একটু সমস্যা হয়ে যাবে।
– উনি তো ঢাকাতেই থাকেন। আমরা বিজ্ঞাপন দেখেই ওনার কাছে গিয়েছিলাম।
– কী বললেন উনি?
– যা বলার আমার ছেলে বউমাকেই বললেন। ওদের দিয়ে কী যেন কাজ করাতেন। বিভিন্ন টাস্ক বলে। করতে করতে ওদের সম্পর্ক টা জোড়া লেগে গেল।
– বাহ!
– এখন ওদের আর ডিভোর্স হয়নি। খুব ভালো সম্পর্ক চলছে। একটা ছেলেও হলো সেদিন। সেই আনন্দে মিষ্টি খেয়েই না আজ এলাম চেক আপে।
– তো পি. পি কে কোথায় পাব?
– এই যে ওনার কার্ড। আমরা আবার কাল সুশান্তর ছেলেকে নিয়ে সেই মন্দিরে যাব। সেই মন্দিরে গিয়েই না পেলাম ভগবানের দূতের খবর। আমার ঘর ভাঙার হাত থেকে বাঁচিয়ে দিল।
– আচ্ছা ভাই, এই পি. পি. মানে কী ? প্রশান্ত পাল?
– পলাশ পারভেজ ও হতে পারে। হাহাহ! কী আসে যায়। কাজই তো আসল। আসলে আমি নিজেও জানিনা তার পুরো নাম কী, হিন্দু না মুসলিম, বাড়ি কোথায়। তবে সে খুব ভালো কাজ করে। সম্পর্ক জোড়া লাগায়।
– সব ধরণের সম্পর্ক?
– শুধু স্বামী স্ত্রীর। তার পি এইচ ডির বিষয় নাকি এইটা। তবে দুপক্ষের কেউ একজন যদি না চায়, অ্যাফেয়ার করে বা , অত্যাচারী হয় তবে তিনি সেই কেস নেন না।
– আমাদের বোধহয় তেমন সমস্যা হবে না। জানিনা, এখন মেয়ে কী চায়। ধন্যবাদ ভাই, আপনার নাম্বার টা দেবেন।
পরদিনই নিজের মেয়েকে সেই কার্ডটা দিতে গিয়ে মাথা ঘুরিয়ে পড়লেন তিনি। আজ প্রায় পাঁচদিন তিনি নাদিয়ার বাসায়। নাদিয়া ওর বাবার খুব ভালো করে খেয়াল রাখছে। জাহিদ তো ইদানিং তাড়াতাড়ি ই আসে। নাদিয়া অবাক হয়, আগে তো সাড়ে ন’টার আগে আসতই না। এখন দেখছি তার আমূল পরিবর্তন। লোক দেখানো যত্তসব। আজ রাতে ওরা একসাথে খেতে বসেছে। জাহিদ খাওয়ার সময় একদম শব্দ করে না। নাদিয়া আর ওর বাবা বাড়িতেও খাওয়ার সময় সমসাময়িক নানা ব্যাপারে অনেক কথা বলত। তারা সবসময় বলে। আজ ও বলছে কোনো পলিটিশিয়ানের ছেলের কথা। রেপ কেসে ফেঁসে যাওয়ার পর বিদেশে গিয়েছিল। সেই কেস আজ ও ঝুলছে। নাদিয়ার বাবা দেখছে জাহিদ কেমন যেন কোনো কথাই বলছে না। ওর বোধহয় ভালো লাগছে না ওরা এসব ব্যাপারে কথা বলছে। ওর খাবার খাওয়ার গতি ও কমে গেছে।
– জাহিদ, তোমার আর কিছু লাগবে?
– নননা বাবা। আমার খখখাওয়া শেষ।
জাহিদের তোতলানো শুনে নাদিয়ার বাবা ভাবলো ও বোধহয় নার্ভাস। হাজার হোক এখনো পরিবার হয়ে উঠতে পারে নি ওর।
– জাহিদ, নাদিয়া, খাওয়ার পর তোমরা আমার সাথে পাঁচ মিনিট কথা বলবে?
ওরা দুজনে দুজনের দিকে তাকায়। জাহিদ ই বলে, “ঠিক আছে বাবা।” নাদিয়ার চিন্তা হচ্ছে বাবা আবার কী বলে। খাওয়া শেষে জাহিদ নাদিয়াকে থালা বাসন ধুতে সাহায্য করতে রান্নাঘরে এলো। নাদিয়া ওকে আবার বসার ঘরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। জাহিদ ওর দিকে তাকিয়ে, যেন একটা নিষ্পাপ শিশু।
– কী বলবেন?
– আপনি, একা পারবেন তো?
– তিন জনের প্লেট, আর কিছু বাটি।
– ……..
– আপনি কোনো কথা না বলে দাঁড়িয়ে থাকেন, তাকিয়ে থাকেন কেন? শুনুন, আজকে বাবা যা যা বলবে হ্যাঁ হ্যাঁ করবেন। কারণ বাবা হয়তো কাল চলে যাবে। অনেক কথাই বলবে। বাবাকে আমি চলে যাচ্ছি, ডিভোর্সের পর আসব এসব বলার দরকার নেই। যা বলবে, জ্বী বাবা, জ্বী বাবা করবেন। ওকে?
– ওকে।
– আমি এখন রিজাইন করছি না। পরে করবো। করার পর চলে যাব।
– সিলেটে?
– হ্যাঁ। যদি রিজাইন না করি নিজের বাসা নেব। এখানে আর থাকব না। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপানাকে অনেক কষ্ট দিলাম। এখন যা বলেছি মনে রাখবেন। বাবাকে কিছু বলবেন না।
জাহিদ মাথা নাড়ল। ওর মন খারাপ হয়ে গেছে। ভেতরে একটা দীর্ঘশ্বাস জমা রয়ে গেল। জাহিদ আর নাদিয়া নাদিয়ার বাবার সামনে। তিনি ড. পিপি এর কার্ড হাতে।
– তোমাদের মধ্যে সব কী এখন ঠিক আছে?
জাহিদ ওর নাদিয়া একে অপরের দিকে তাকায়। এরপর একসাথে বলে, ” জ্বী বাবা।” নাদিয়ার বাবা সব বুঝতে পারে। এরপর তিনি হতাশ হয়ে বললেন, ” না, নেই। আমি জানি। মিথ্যে বলতে হবে না। আমার কেন যেন মনে হয় আমি খুবই বাজে বাবা। আমি কী ভুল করেছি? জাহিদ তো খারাপ ছেলে না, আমার মেয়ে ও খারাপ না। তবে কেন? ” নাদিয়ার বাবা কাঁদতে লাগলেন। নাদিয়া ওর বাবার পাশে গিয়ে বসে তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। জাহিদ বুঝতে পারছে না কী করবে?
– বাবা , তুমি চিন্তা করো না।
– কেন করব না? আমি চাই আমার মেয়ে সুখে থাকুক!
– আমি সুখে থাকবো।
– কী করে? বল আমাকে?
নাদিয়া চুপ করে আছে। নাদিয়ার বাবা এবার সেই কার্ডটা বের করে দিলেন। জাহিদ কার্ডটা দেখার আগেই নাদিয়া দেখল। এরপর জাহিদ ও দেখলো।
” ড. পি.পি.
ম্যারিজ স্পেশিয়ালিস্ট
পি এইচ ডি ফ্রম মাকেরেরে ইউনিভার্সিটি, কামপেলে, ইউগান্ডা। ”
নাদিয়ার হাসি পেয়ে গেল। জাহিদ ওর দিকে তাকালো। অদ্ভুত তো! হাসছে কেন? ইউগান্ডা কী দেশ না?
– কী হয়েছে নাদিয়া?
– ইউগান্ডা তে পড়া লোক তুমি কোথা থেকে খুঁজে পেলে?
– যেখান থেকেই পাই। লোকটা ভালো। ফোন করে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট নাও। এটাই শেষ বার বলছি। এটাই শেষ অনুরোধ। শেষ চেষ্টা টা করো।
নাদিয়ার বাবার কান্না দেখে নাদিয়ার খারাপ লাগলো। কিন্তু এটা সম্ভব না। কোনোভাবেই না। এই লোকটা কিছুতেই ঠিক হবে না। সে নিজেই তো থাকতে চায় না। কেন বারবার মাথা নোয়াবে ওর সামনে? ও তো মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে। অসভ্য লোক।
” জ্বী বাবা, আমরা চেষ্টা করব।”
নাদিয়া অবাক হয়ে তাকালো। কী বলল ও? চেষ্টা করবে? কী চেষ্টা করবে?
– ধন্যবাদ বাবা। একবার গিয়ে দেখো। হয়তো ঠিক হবে সব।
– জ্বী অবশ্যই।
জাহিদ আর নাদিয়া ওদের ঘরে বসে আছে, দুজন দু দিকে ফিরে। নাদিয়া রেগে আছে , জাহিদ তা বুঝতে পারছে।
– কী দরকার ছিল?
– মানে?
– বাবার কাছ থেকে ওটা নেওয়ার কী দরকার ছিল?
– আপনিই তো বললেন, জ্বী জ্বী করতে।
– তাই জন্য?
নাদিয়া কিছুক্ষণের জন্য চুপ করে রইল। শুধু বাবা কে খুশি করতে। আর কোনো কারণ নেই। সাধু পুরুষ সাধু রূপেই থাকবে। ভিলেন তো সবসময় নাদিয়াই হবে।
– আপনার আমার বাবাকে খুশি করতে হবে না। আমি মানছি আমি বলেছিলাম, কিন্তু এই কার্ড টা যে নিলেন এখন ওখানে যেতে হবে।
– তো?
– আমরা তো ডিভোর্স নিচ্ছি। এখন আবার ওখানে শুধু শুধু মিথ্যা আশা। আর সময় নষ্ট তা আলাদা। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ কী জানেন? আমি আমার সময় নষ্ট করতে চাই না, তাও আবার এরকম একটা নিষ্ফল সম্পর্কে। হয়তো আমি আবার জীবন শুরু করবো না, কিন্তু একজন ব্যক্তি হিসেবে আমার কিছু কাজ আছে। এখানে আমি যে পরিমাণ স্ট্রেস দিয়ে যাচ্ছি, শুধু আমি না আপনিও। এই সময়টা আমরা অন্য কিছু করতে পারি।
– হুম।
– আপনি বুঝতে পারছেন? আপনার কোনো ইচ্ছা নেই তা ও হ্যাঁ বলে দিলেন! আপনি কী নিজেকে হাতেম তাই ভাবেন!
– আস্তে, পাশের ঘরে বাবা।
– কিন্তু ব্যাপারটা তো সিরিয়াস!
– তো আপনি যেতে চান না?
নাদিয়া নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে। যেতে চায় না, কিন্তু চায়। ও চাইলেও কী? জাহিদ তো চায়না।
– আপনি তো চান না। যথেষ্ট বিরক্ত হচ্ছেন, আরো বিরক্ত করবো?
– একদিন গেলে সমস্যা ই বা কী। বাবা এত করে বললেন।
নাদিয়ার বাবা সকালে চলে গেলেন। নাদিয়া ফোন দিয়ে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিল পিপির থেকে। জাহিদ যখন চায় একবার গিয়েই দেখুক। তবে ও আজ ও জানে না জাহিদ আসলে কী চায়? আজ সন্ধ্যায় ওরা দুজনে একসাথে গেল। বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। ভেতরে ঢুকেই দেখল ইউগান্ডার পতাকা আর বাংলাদেশের পতাকা একসাথে। বাইরে একজন পি এ আছেন। কেবিনে যেতেই দেখল একটা পঞ্চাশোর্ধ লোক বসে আছেন। তার আধাপাকা চুল, সোনালি ফ্রেমের চশমা। তার গায়ে স্ট্রাইপ শার্ট। খুব অমায়িক হাসি নিয়ে স্বাগত জানালেন।
– ওয়েলকাম মিস্টার অ্যান্ড মিসেস?
– জাহিদ অ্যান্ড নাদিয়া।
– সারনেম?
– ওনার আহমেদ, আমার সামাদ।
– একই হওয়ার কথা না? বিয়ের পর তো একই পরিবার।
– কিন্তু স্যার, সার্টিফিকেট হতে সব জায়গাতেই আমার সামাদ।
– বদলানোর কোনো প্ল্যান নেই?
– না। এইটা আমার নাম। আমি আমার নাম বদলাব না।
পিপি সাহেব মুচকি হাসলেন। তার কাগজে কী যেন লিখলেন।
– কেন?
– আমার নাম আমার পরিচয়। ওনার সাথে বিয়ের আগেই আমি এইটা তৈরি করেছি। সবাই আমাকে এই নামেই চেনে। এখন হঠাৎ বদলে কী হবে?
– আই লাইক ইট। একমাত্র তোমরাই আলাদা নামেই অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছ। বাকি কাপলরা মিস্টার অ্যান্ড মিসেস। আচ্ছা তুমি করে বললে কোনো সমস্যা?
– না না, বলতে পারেন।
– তোমার উনি, কী মিউট?
জাহিদের দিকে ইশারা করে। জাহিদ গলা ঝেড়ে বলে ,
– না।
– তোমার কী আপত্তি, নাম নিয়ে? ও যে বদলালো না?
– না। ওনার নাম, ওনার ইচ্ছা।
– তোমরা এখানে কেন এসেছ?
জাহিদ চুপ করে থাকে। নাদিয়া জাহিদের দিকে একবার তাকিয়ে বলে,
– আমার বাবা পাঠিয়েছে।
– বাহ! কিছু একটা কারণ তো থাকবে?
– বিয়ে টা যাতে না ভাঙে তাই। আপনি এমন ভাব করছেন যে জানেন না। (হাসি মুখে।) স্যার আপনি জানেন না আপনি এখানে কেন বসে আছেন?
– বিয়েটা কেন ভাঙছে? সেটাই জানতে চাই। নাদিয়া , তোমরা এভাবেই মন খুলে কথা বলবে। লজ্জা পেও না।
ওরা দুজনেই চুপ করে থাকে। পিপি ওদের দুজনকে আবার পর্যবেক্ষণ করে কী যেন লিখলেন।
– বিয়েটা হয়েছিল কী করে? প্রথম প্রেমে পড়লে কখন? কে আগে বলেছিল ভালোবাসি?
– অ্যারেঞ্জ। লাভ ম্যারেজ না। কেউ বলেনি।
– ইম্প্রেসিভ! নাদিয়া, তুমি বলো। তোমার পক্ষের কাহিনী। তোমার সাথে কথা বলতেই ভালো লাগছে। অন্য জন তো সাইলেন্ট মোড এ।
– কী? কী বলব?
– বিয়েটা কী করে হলো?
– আমার বিয়ের জন্য পাত্র দেখা চলছিল। অনেক পাত্র দেখা হলো। কাউকেই পছন্দ হয়নি। উনি আমার বড় খালার বান্ধবীর বড় ভাইয়ের ছোট ছেলে। দেখা করলাম। ডিসেন্ট মনে হলো। বিয়ে হলো।
– ডিসেন্ট কেন মনে হলো?
– কোনো বাজে প্রশ্ন করেননি। আসলে কোনো প্রশ্ন ই করেননি।
– আর এখন?
– একই। উনি কথাই বলেন না। এভাবে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না।
– বিয়ের কয় বছর?
– প্রায় আট মাস।
– ও মাই গড! গুড ডিসিশন। আর জাহিদ?
জাহিদ বলল,
– জ্বী?
– তোমার কী কাহিনি?
– আমার, ফুপু মেয়ে দেখছিল। ওনার খোঁজ দিল। দেখা করলাম। উনি প্রশ্ন করলেন। উত্তর দিলাম। দু পক্ষের পজিটিভ রেসপন্স। দেন বিয়ে।
– তুমি ওর আগে কাউকে দেখনি?
– দেখেছি। ওনারা আগান নি।
– বাহ! এখন কেন ডিভোর্স নিচ্ছ?
জাহিদ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। নাদিয়া আর পিপি দুজনেই ওর দিকে তাকিয়ে আছে। খানিকটা নার্ভাসনেসের পর সামনে রাখা পানি খেয়ে বলল,
– উনি বললেন তাই।
নাদিয়া ওর উত্তর শুনে চমকে উঠল। দারুণ! ও কথা বললে ঠিক করে উত্তর দেয় না, আর ওর বলায় নাকি ডিভোর্স দিচ্ছে। পিপি হাসতে গিয়ে মুখে হাত দিয়ে থামিয়ে দিলেন।
” একটা সাধারণ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবো। তোমাদের দুজনের জন্মদিন কবে? নাদিয়া জাহিদের টা, জাহিদ নাদিয়ার টা বলবে।”
নাদিয়া হাসতে হাসতে মুখে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে ফেলল। জাহিদ অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।
– বলো।
– আমরা একে অপরের ব্যাপারে কিছুই জানি না।
– জিজ্ঞেস করনি?
– একটা মানুষ ইন্টারেস্টেড না। তার সাথে কী কথা বলবো। ঐ যে আত্মমর্যাদা, সেটা ভুলে কয়েকবার নানা ভাবে ট্রাই করেছি। টু বি অনেস্ট, এতটা ডেসপারেট আমি কখনো ছিলাম না। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।
– ও কিছুই বলেনি।
জাহিদ নীচের দিকে তাকিয়ে আছে। সে অত্যন্ত লজ্জিত। পিপি সব খেয়াল করছে।
“তোমরা দুজন আউট অফ দ্য ওয়ার্ল্ড। মানে এত বাজে কেস আমার সামনে আর কখনো আসেনি। আগে যা এসেছিল তারা প্রেম করে বিয়ে করেছে, বিয়ের পর তাদের প্রেম বদলে গেছে। এই কারণে বিয়ে ভেঙে যেত। তবুও কোথাও না কোথাও কিছু ছিল। তোমরা একদম লাস্ট স্টেজ। কোনো আশা নেই। তোমরা কী করে আসলে একসাথে থাকতে চাও? কামন! আই নিড অ্যান্সার। নইলে সবার সময় নষ্ট। এক কাজ করো, বাইরে গিয়ে একটু আলোচনা করো। এরপর ইচ্ছে হলে ভেতরে এসো। যদি একজন ও না বলো, আমরা আর আগাবো না। মনে রেখ, নিজের কাছে সৎ থেকো। ”
ওরা দুজন বাইরে বসে কথা বলছে। মানে বসেই আছে ,
– জাহিদ, চলুন।
– কোথায়?
– বাসায়।
– বাবাকে কী বলবেন?
– বলব, উনিই রিজেক্ট করে দিয়েছেন। সবচেয়ে বাজে কেস। আমাদের কোনো আশা নেই।
– উনি রাগ করবেন না?
– উনি আমার বাবা। ওনার রাগ আমার বিষয়। আপনার ওনাকে খুশি করতে হবে না।
– কিন্তু,
– কোনো কিন্তু না। এমনিতেই যথেষ্ট সময় নষ্ট হয়েছে। এতদিন নিজেদের সময় নষ্ট করতাম, এখন ওনার সময় নষ্ট করবো।
নাদিয়া ওর পার্স ঝুলিয়ে উঠে দাঁড়ায়। এরপর হেঁটে আসতেই জাহিদ ওর হাত ধরে। নাদিয়া শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। কী হলো!
– একটা চান্স,
– কীহ!!
– একটা চান্স কী দেওয়া যায় সম্পর্ক কে?
– আর ইউ শিওর! কী বলতে চান?
ওরা দুজন পিপির সামনে বসে। পিপি ওদের দিকে তাকিয়ে হাসছে।
– আমি জানতাম তোমরা আসবে।
– কীভাবে?
– কারণ যারা এখানে আসতে চায়, তারা সম্পর্ক টা কে ভাঙতে চায় না, তাই আসে। অনেকে শেষ বার চেষ্টা করে, যাতে কোনো আফসোস না থাকে। ইশ যদি না ভাঙতাম! আমি বলছি না তোমাদের সম্পর্ক জোড়া লাগবে। আমি বলছি সম্পর্ক টা পরে ভেঙে গেলেও কোনো আফসোস থাকবে না।
– কিন্তু আমরা,
– জানি নাদিয়া। আমি সাধারণত আমার অ্যাসাইনমেন্ট ফলো করি সাবজেক্টদের প্রথম দেখা থেকে শেষ কী নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল তার উপর। এরপর সব আস্তে আস্তে রিক্রিয়েট করি। আসলে তারা সময়ের সাথে ভুলে যায় বা হারিয়ে ফেলে তারা কার প্রেমে পড়েছিল। আর অ্যাসাইনমেন্ট শুরুর আগে বলি লেটস ফল ইন লাভ এগেইন! কিন্তু তোমাদের কেস পুরোই ভিন্ন। সো লেটস রিস্টার্ট ইওর জার্নি অফ ম্যারেজ। যেটা তোমরা এখনো শুরু করনি।
– মানে?
– মনে করো আজকেই তোমাদের দেখা হয়েছে। আমি তোমাদের দেখা করিয়েছি। বা ধরো নব্বই দশকের বিয়ে। বিয়ের দিনই দেখা হলো। কেউ কারো সম্পর্কে কিছুই জানোনা। তোমাদের নেক্সট টাস্ক হবে, একে অপরকে জানা। শুরু থেকে। বেসিক জিনিস, কে কোন স্কুলে পড়তে, কার কয়টা এক্স ব্লাহ ব্লাহ। এরপর তোমরা দুজন আমার সাথে আলাদা আলাদা দেখা করবে। আমার প্রশ্নের উত্তর দেবে। আমাকে তোমাদের মেইল অ্যাড্রেস দিয়ে যেও। টাস্ক সেন্ড করবো।
– এতে কী হবে?
– মার্কিং হবে। প্রতি টাস্কে যে জিতবে তাকে আমি পাঁচ হাজার টাকা দেব।
– ওয়াও! আপনার লস না?
নাদিয়া হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলো। জাহিদ ও আগ্রহ নিয়ে শুনছে। এ তো লস প্রজেক্ট।
– না। কারণ যে হারবে, সে আমাকে পাঁচ হাজার টাকা দেবে। নইলে মজা হবে না।
– ওওও!
– তাই সিরিয়াস হতে হবে। টাস্ক অনুযায়ী কাজ করবে। এরপর আবার একসাথে আসবে। সেখানে নতুন টাস্ক হবে। আপাতত বাড়ি যাও। কাল পরশু, তোমরা কথা বলবে। তরশু দুজন দুই সময়ে আসবে আমার পি এ মেইল করে দেবে সময়টা। আমার একটু সময় লাগবে তোমাদের টাস্ক তৈরী করতে। আপাতত তোমরা কথা বলো বাসায় গিয়ে। পরিচয় পর্ব টা সেরে এসো।
পিপির চেম্বার থেকে বেরিয়ে ওরা গাড়িতে উঠে। সেখান থেকে সোজা বাড়ি। জাহিদ নিজেও জানে না ও কেন শেষ মুহূর্তে আটকে দিল। এসব কিছুর ফল যে কত ভয়াবহ হতে পারে জাহিদ কী তা জানে না! নাদিয়া যখন সমস্ত সত্যি টা জানবে কতটা কষ্ট পাবে! ও সহ্য করতে পারবে না। আর জাহিদের পক্ষে সারাজীবন নিজের মধ্যে সেই সত্যি টা লুকিয়ে নাদিয়ার সাথে সুখের সংসার করাটাও সম্ভব না। এসব করে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে এনেছে জাহিদ। সামনের দিনগুলো কত ভয়ানক হতে যাচ্ছে দেখা যাক।
(চলবে)