রিস্টার্ট,১৯,২০

0
604

#রিস্টার্ট,১৯,২০
#পিকলি_পিকু
#পার্ট_১৯

মিষ্টি বিয়ের আগেই এই বাড়িতে এসেছিল। তবে অতিথি হয়ে। তখন ও রাহু অরনীর মিষ্টি ভাবি ছিল না। মিষ্টি আপু ছিল। এই বাড়ি তখন অনেক হাসিখুশি ছিল। তিনটে একই বয়সের ছেলেমেয়ে সারাদিন দৌঁড়াদৌঁড়ি করতো। রাহু, অরনী, প্রিয়ম। মাঝে মাঝে শুক্রবার গুলো তে মিষ্টি মিশান আর মিঠাই ও। মিশান আর মিঠাই মিষ্টির চাচাতো ভাইবোন তবে অংশুর ফুফাতো ভাইবোন। অর্থাৎ মিষ্টির চাচা আর অংশুর ফুফু স্বামী স্ত্রী। তবে ছোটবেলায় ওদের এত দেখা হতো না। মিষ্টির ভার্সিটিতে পড়তে এসেই দেখা হয়েছিল। মিষ্টির বাবা নেই। গ্রামে মানুষ। অংশুর ওকে পছন্দ হবে কে জানতো?

একদিন শুক্রবার, অরনীদের বাসায় সবাই ছিল। ওর কাজিন আর প্রিয়ম ও। সবাই ছাঁদে মাঁচায় আর নীচে বসে গল্প করছে। অরনী সেখানে বলছে, ” ছি ছি! কাজিনের সাথে প্রেম। জঘন্য অপরাধ! আমার এক ক্লাস মেট নাকি ওর খালাতো ভাইকে ভালোবাসে! ভাবতেই বমি আসে। ছিছি!”
এই কথা শুনে প্রিয়ম রাহু মিঠাই হেসে উঠে। হাসেনি শুধু মিশান আর মিষ্টি। মিষ্টি তাই বলে, ” কাজিন তো কী হয়েছে? এইটা বৈধ। অনেকেই করে। আপন ভাইবোন তো আর না।” ওরা সবাই মিষ্টির দিকে তাকায়। মিঠাই খিলখিলিয়ে হেসে বলে,

– আপনের মতোই। ব্লাড রিলেটেড। জেনেটিক ডিজিজ হয়।
– সবার হয় নাকি।
– হোয়াটেভার। ভাবতেই গা খিতখিত করে। কাজিন! আমার ভাগ্য ভালো সবাই আমার ছোট।
– অংশু ভাইয়া আছে তোমার বড়।
– অংশু! ছি!!! বমি আসছে আমার। অরনী আমাকে বাঁচা।

অরনী আর প্রিয়ম তো হাসতে হাসতে মরে যাচ্ছে। মিশান মন খারাপ করে সেখান থেকে চলে গেল। মিষ্টি তা খেয়াল করে এরপর ওর পেছনে গেল। মনমরা মিশান দোতলার বারান্দায় বসে রইলো। মিষ্টি ওর পিঠে হাত রেখে বলল,

– মন খারাপ করিস না। ও এখন বুঝছে না। একদিন বুঝবে।
– আপুও তো উষ্কাচ্ছে। এই কারণেই বলিনি কাউকে।
– আরে, মামাতো বোনকে ভালোবাসা পাপ নাকি?
– ওরা তো নাক ছিটকাচ্ছে।
– ওরকম সবাই একটু আধটু করে। আরে, এখনো তো কলেজে। প্রেম ভালোবাসা ওর মনে আস্তে আস্তে বাসা বাঁধবে।
– কবে! কবে আপু?
– তুই এক কাজ কর, ওকে বল তুই ওকে ভালোবাসিস।
– না না! ও যদি মানা করে দেয়?
– মানা করে দেবে তাই বলবি না? তার মানে তুই ওকে ভালোবাসিস না।

প্রিয়ম সেখানে আসতেই দেখে মিশান আর মিষ্টি হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মিশান বলছে, “ভালোবাসি, ভালোবাসি তো! বলতে ভয় পাই।” প্রিয়ম এই দৃশ্য দেখে পা টিপে টিপে সেখান থেকে চলে আসে।

বাইরে এসেই প্রিয়ম রাহুকে দেখতে পায়। রাহু একটা কথা বলতে গেলেই প্রিয়ম ওর মুখ চেপে ধরে ওকে ছাঁদে নিয়ে আসে। অরনী ওদের ওভাবে দেখে বলে,

– কীরে, কী হয়েছে?
– তুই বিশ্বাস করবি না আমি কী দেখেছি। মিষ্টি আপু আর মিশান ভাইয়া একে অপরের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
– তো?
– ভাইয়া বলছে, ভালোবাসি তো, বলতে ভয় পাই। তাই ওরা বিরোধিতা করলো, আবার বেরিয়ে ও গেল।
– তাই!

মিঠাই মাঁচাতে শোয়া থেকে উঠে পড়ল।

– অসম্ভব! মিষ্টি বড় মিশানের।
– কয় দিনের?
– প্রিয়ম, কয় দিন বা মাস তা নয়। মেয়ে বড়। ওরা এক বছরের বড় ছোট।
– তো! মেয়ে বড় ছেলে ছোট আজকাল ব্যাপার না। বি প্রগ্রেসিভ আপু!

রাহু একদম সামনে এসে বলল,
– ঠিক! ঠিক! মেয়ে বড় হলে কোনো সমস্যা নেই।
– এই যে, রাহুর মতো লোকের মাথায় ও ঢুকলো।

অরনীর খুব হাসি পাচ্ছে। কারণ ও জানে রাহু এমন কেন করছে। মিঠাই প্রিয়মের কাছে গিয়ে বলল,
– এই প্রগ্রেসিভ হতে পারবো। কিন্তু কাজিন কাজিন বিয়ে? এটা তো রিগ্রেসিভ!
– তাও ঠিক। ওরা তো বুঝবে না।

অংশু ভেতরে আসতেই প্রিয়ম ওর কাছে গিয়ে বলল,

– অংশু ভাইয়া! অংশু ভাইয়া ! জানো, মিষ্টি আপু আর মিশান ভাইয়ার মধ্যে কিছু চলছে।
– কী!!!

অংশুর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। ও তো মিশান কে খু*ন করবে। সেখানে মিষ্টি আর মিশানের আগমন।

– দুধ কলা দিয়ে সাপ পুষেছি। মিশান! তুই পারলি!
– কী?
– মিষ্টির সাথে প্রেম করতে?
– কই না তো!
– মিষ্টি!

মিষ্টি কাছে গিয়ে বলল,

– জ্বী অংশু ভাইয়া?
– তুমি ওকে পছন্দ করো?
– ও আমার ছোট ভাই।
– প্রিয়ম?

প্রিয়ম বিপদে,

– হাত ধরলে যে? “ভালোবাসি তো, বলতে ভয় পাই?”
– অন্য কারো কথা বলেছে। আমি না। আমি তো কাউকেই ভালোবাসি না।

অংশুর প্রাণে পানি আসলো। মিষ্টি তবে সিঙ্গেল। মিষ্টি ও মিশান আর অরনীকে মেলাতে বদ্ধপরিকর। তাই যাওয়ার আগে প্রিয়মকে একটি আলাদা জায়গায় নিয়ে সব বলল। প্রিয়ম যেহেতু বেস্টফ্রেন্ড ওর সাহায্য ও চাইলো। কিন্তু প্রিয়ম তো জাহিদ কেই ঠিক করেছে। আর মিশান কে অরনী কখনো পছন্দ করবে না। পরদিন স্কুলে,
– তুই বসে থাক! আর এদিকে ওকে অন্য কেউ নিয়ে যাক!
– কী হয়েছে?
– অরনী, ওকে ওর ফুফাতো ভাই মিশান পছন্দ করে।
– আর অরনী????
– ও কাজিনদের এই প্রেম বিয়ে পছন্দ করে না। আর এই মিশান ভাইয়া, পুরাই সাইকো। অরনী তো রাগী। ও আরো ভয়ানক। ওদের দুজনের এমনিতেই এক ঘরে না থাকাই ভালো। এইটা কেউই মানবে না। তবে খেয়াল কর, ও এখনো ইউনিভার্সিটি তে যায় নি। গার্লস কলেজ। তাও বাসার ভেতরের লোক ওর উপর সব ফিদা। যখন বের হবে তখন কত লোক পাগল হবে! তোর তো হিউজ কম্পিটিশন। তখন তোর চান্স থাকবে?
– এখনো কোথায় আছে?
– আছে। এখন গিয়ে ফ্রেন্ডশিপ কর। ইম্প্রেশন তৈরী কর একটা। পরে দেরী না হয়ে যায়।
– আচ্ছা, আমি কী ওনার যোগ্য ?

.
.
.
.

নাদিয়া আর জাহিদ নতুন টাস্ক নিতে পিপির কাছে।

– আপনার ট্রিপ কেমন গেল স্যার?
– ভালো। তবে আমি কোথায় গিয়েছি জানো?
– কোথায়?
– শ্বশুরবাড়িতে।
– জামাই আদর কেমন হলো?
– ভালোই। আসলে শ্বশুর বাড়ি হলো একটা প্রতিকূল অবস্থা। সেখানে সবাই অন্য পক্ষের থাকে, অচেনা। শুধু একজনই থাকে চেনা। তার উপর ভরসা করেই মানুষ এত সব অচেনা মানুষের সাথে থাকে। এটা একটা পরীক্ষার মতো। তাই আমি ভাবছি, পরের টাস্কে, তোমরা শ্বশুরবাড়ি যাবে।
– হাহাহ! আমার তো শ্বশুর বাড়ি নেই।

জাহিদ নাদিয়ার দিকে তাকায়। নাদিয়া হাসিটা বন্ধ করে দেয়। মন খারাপ করলো নাকি? নাদিয়া ওভাবে বলতে চায়নি।

– জাহিদ যাবে। জাহিদের শ্বশুরবাড়ি তো অনেক বড় বোধহয়, নাদিয়াদের বাড়ি।
– আমি আমার বাড়িতে যাব না।
– কেন? কী সমস্যা?
– আমার অসহ্য লাগে সেই বাড়ি । হ্যাঁ, হয়তো সেটা একসময় আমার বাড়ি ছিল, কিন্তু এখন সেটা বাবার বাড়ি।
– এভাবে বলছ কেন?
– আমি বলিনি। এটা আমাকে বলা হয়েছে। অত্যন্ত লজ্জার বিষয়, যে বাড়ি থেকে আমাকে এতটা অপমান করে অসহায় অবস্থায় বের করে দিয়েছে। আমি আর সেখানে যাচ্ছি না। রাহেলা খালা ও যায় নি।
– রাহেলা খালা কে?
– আমাদের কাজ করেন। ওনাকেও আমার মতো বের করে দেওয়া হয়, কিন্তু উনি নিজের পায়ে দাঁড়ান। আর পেছনে ফিরে দেখেননি।
– তাই তুমি তোমার বাড়ি যাবে না?
– না। আত্মসম্মানবোধ, এটা আমার আছে।

নাদিয়ার মন খারাপ দেখে জাহিদ পিপিকে ইশারায় বলল আর জোর না করতে। পিপি ও জাহিদ কে ইশারায় বলল ও কী চায়? জাহিদ ইশারায় পিপি কে আশ্বস্ত করে বলল,

– আমরা ফুপুর বাসায় যাব। একদিন চলুন।
– আপনার ফ্রি আছে নাকি?
– শুক্রবার?
– এখন দেখি আপনার ছুটি আর ছুটি। আপনিও তো আমায় কম অপমান করেননি! কেন যে এসেছি!
– কাজ ছিল। ডিল ফাইনাল হয়েছে। এখন তো ফ্রী।
– ওটা কী শ্বশুরবাড়ি?
– হুম।
– ফুফু শাশুড়ির বাড়ি।

পিপি চুপ করে মুচকি মুচকি হাসছে। কনভারসেশন হচ্ছে তাহলে। এটাই তো চায়। ওরা ওরাই এখন নিজ থেকে সব ঠিক করবে। এটাই তো ওনার কাজ ছিল। দোষ গুণ দুই পক্ষেই থাকবে। আলোচনার মাধ্যমে সব সামলানো, আর নিজের পার্টনারকে মেনে নেওয়া টা ওরা আস্তে আস্তে শুরু করেছে। এভাবে জাহিদ ও একদিন ওর কথা বলবে আর ওরা ওদের সমস্যা গুলোর সমাধান করবে।

– তো পিপি স্যার, অন্য টাস্ক হবে না?
– এটাই করতে হবে। ফুফু শাশুড়ির কাছে যাও আর স্বামীর ছোটবেলার গল্প শুনে আসো। আমার যখন বিয়ে হয়েছিল আমার শ্বশুর বাড়ির সবাই আমাকে আমার বিবির ছোটবেলার কাহিনী শোনাতো। আমার বাড়ির লোকেরা ও ওকে বলত। এর মাধ্যমে অনেক সিকরেট জানা যায়, আর পরবর্তীতে ব্ল্যাক মেইল ও করা যায়।

“সিক্রেট ” এই শব্দ টা একটা কোড ছিল। পিপির ইশারা। নাদিয়া পুরোপুরি ধরতে পেরেছে। জাহিদের সিকরেট।

– ওকে। তাহলে আমরা যাচ্ছি। ফুফু আমাকে অনেক পছন্দ করেন। অনেক খুশি হবেন।

জাহিদের ফুপুর বাসায় গিয়ে নাদিয়া একদম ফুপুর সাথে মিশে গেল। জাহিদের কাজিনেরা ওর থেকে নাদিয়া কে বেশি পছন্দ করে। দেখে মনে হচ্ছে জাহিদ অপরিচিত জায়গায় এসেছে। ওরা নাদিয়ার ই পরিচিত।

– জাহিদ কী সবসময় এমন? এমনি এমনি?
– জাদু ছোটবেলায় ও এমন ছিল। লক্ষ্মী বাচ্চা।
– জাদু, মানে জাহিদ? হাহাহাহ!
– জাহিদ থেকে জাদু। ওর ডাক নাম ডাকা মানা।

নাদিয়া মনে মনে ভাবছে জাদু যদি কারো ডাক নাম হয়, তো যে কেউ এই নাম ডাকতে মানা করবে। জাদু বললেই মনে পড়ে কোয়ি মিল গ্যায়ার জাদু।

– বাবা মারা যাওয়ার পর কেমন ছিল?
– ঐ চুপচাপ। তবে মায়ের অনেক সেবা করতো। আমার জাদু একা থাকতো মা নিয়ে। মায়ের সেবা, রান্না সব মোটামুটি ও নিজেই করতো। অনেক ছোট বয়সে অনেক বড় হয়ে গেছে। ভাবি চোখে ভালো দেখতে পেত না তো। সব ওকেই করতে হতো।
– বাকিরা কোথায় ছিল?
– মুগ্ধ রুদ্র তো বাইরে ছিল। মুগ্ধের পোস্টিং, আর রুদ্রের রাজশাহীতে পড়া। মায়ের কাছে শুধুই আমার জাদু।
– মুগ্ধ রুদ্র কে?
– সালাম আর সাহিদ। ওদেরও ডাক নাম ডাকা মানা। বড় হয়েছে, বড় মানুষ। ডাক নামে নাকি গাম্ভীর্য নেই। বাচ্চাদের মতো ওদের ডাক নাম। আমার নাম যে খুকি, এই বুড়ি বয়সে আমি খুকিই বলি। এদের যে কী ঢং। কিন্তু আমি জাহিদকে তো আগে থেকেই জাদু ডাকি।
– ওনার কী আরেকটা নাম আছে।

” নাদিয়া!!! আপনাকে ভাবি ডাকছে!” জাহিদ সেখানে হাজির। ফুফু আবার সব বলে দেয় নি তো? নাদিয়া ভাবির কাছে যেতেই,

– ফুফু আপনি কী কী বললেন?
– মুগ্ধ রুদ্রের কথা।
– সালাম সাহিদ। ওনাদের ডাক নাম ডাকা,
– জানি, ওরা এখন বড় অফিসার। ওদের ডাকনাম ওদের কাজের সাথে যায় না। কিন্তু জাদু, শুদ্ধতে কী সমস্যা? তুই তো এখনো ইয়ং।
– নামটা আমার পছন্দ না। জাদু বলেছেন, কিন্তু এর কথা ওনাকে বলবেন না।

বাড়ি ফেরার সময় নাদিয়া জাহিদের দিকে তাকিয়ে শুধু মুচকি মুচকি হাসছে। জাহিদের খুব অস্বস্তি লাগছে। গাড়ি চালাতে সমস্যা হচ্ছে।

– সমস্যা কী?
– জাদু! হাহাহ! সোনা জাদু!

নাদিয়া খিলখিল করে হাসতে লাগলো। জাহিদের খুব লজ্জা লাগছে। কিন্তু নাদিয়া গান গাইতে লাগলো।

– জাদু! জাদু! জাদু! জাঁদু! আইলা জাদু! হাহাহাহ!
– চুপ করুন! (বিব্রত হয়ে)
– জাদুউউউউ তেরি নাজার!
– থামুন না! (আহ্লাদে)
– কী জাদু করিলা, পিরিতি শিখাইলা!
– আর না। ব্যাস! (হাসতে হাসতে)
– তুনে ও রাঙ্গিলে ক্যায়সা জাদু কিয়া?
– পিয়া পিয়া বোলে মাতওয়ালা জিয়া!
– হাআআআ, তুনে!

নাদিয়া থেমে গেল। জাহিদ গান গাইলো! ও কী ভুল শুনছিল? কল্পনা?
– আপনি গান গাইতে পারেন?
– না।
– এই মাত্র গাইলেন!
– ভুল করে। বাবার প্রিয় গান, মায়ের জন্যে গাইতো।
– আমার বাবার ও!

নাদিয়া রেডিওটা চালিয়ে দিলো। 99.6 আরজে ঐশীর শো চলছে। তার মানে জাহিদ এটা শোনে। নাদিয়া ওর দিকে আড়চোখে তাকায়, জাহিদ সোজা তাকায়। এখন তো ওর আর প্রিয়মের প্রিয় গান হচ্ছে। নাদিয়া খুব উত্তেজিত হয়ে বলল,

– আমরা প্লিজ গানটা একসাথে গাইবো।
– আমি পারব না।
– লজ্জা পাবেন না। প্লিজ! প্লিজ! প্লিজ!
– ওকে

“Tell me why” – জাহিদ
“Ain’t nothin’ but a heartache”- নাদিয়া
“Tell me why”- জাহিদ
“Ain’t nothin’ but a mistake”- নাদিয়া
“Tell me why”- জাহিদ
“I never wanna hear you say” – নাদিয়া
“I want it that way” – দুজনে একসাথে

গান শেষে ওরা হাসতে লাগলো। গাড়ি চালানোর সময় ও কখনো কথাও বলেনি, আজ গান গাইলো।

– ভালো লাগছে , তাই না?
– হুম।
– এই গানটা আমার আর প্রিয়মের প্রিয় গান। আমরা দুজন একসাথে রেডিও শুনতাম। লুকিয়ে এইটা প্লে করার রিকোয়েস্ট করতাম। এরপর একসাথে গাইতাম। পরে আমরা কম্পিউটারে এইটা প্লে করতাম। কত মজার দিন ছিলো।

নাদিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে জাহিদের দিকে তাকায়। ও আবার আগের মতো হয়ে গেছে। একটু আগের হাসিটা আর নেই। নাদিয়া ভাবছে ও কত কিছু সহ্য করেছে ছোটবেলায়। এত ছোট বয়সে একা মায়ের সেবা করেছে। তখনই কী কিছু হয়েছিল, যে কারণে কাউকে কিছু বলতে পারেনি। বাসায় ফেরার পর নাদিয়ার বাবার ফোন এলো।

– তুমি অবনীর জন্মদিনে আসছো।
– পারব না। ব্যস্ত।
– তোমার স্কুলে ছুটি চলছে। আমি জানি।
– রেস্ট নিচ্ছি।
– মিঠাই ও আসছে।
– আমি চাচ্চুর বাসায় যাবো না। চাচ্চু আমাকে পছন্দ করেন না।
– আমাদের বাসায় হচ্ছে। অবনী মন খারাপ করবে। তোমার চাচ্চু কোনোদিনও ওর জন্মদিন পালন করেনি।
– ওকে। উপহার কী দেব?
– ওকেই জিজ্ঞেস করো। আর হ্যাঁ, জামাইকে রেখে এসো না।
– ওটা আমার হাতে না। ওনার পার্সোনাল প্ল্যান থাকতে পারে।
– এসব কী হাবিজাবি বলো। তোমাদের মধ্যে সব ঠিক না এখন? তোমাদের ছবিও তো দেখলাম।

নাদিয়া লজ্জা পেয়ে গেল। বাবাও দেখেছে! রাহুর কাজ।

– ঠিক। কিন্তু অফিসের কাজ থাকলে। উনি না আসলে আমিও কিন্তু আসব না। চাচ্চু আবার অন্য কিছু বলবে।
– তুমি জামাইকে ফোন দাও।

নাদিয়া জাহিদকে ফোন দিয়ে হাত দিয়ে ইশারায় বলল না করে দিতে।

– জ্বী বাবা।
– তুমি আগামী মঙ্গল বার আসতে পারবে? ফ্যামিলি প্রোগ্রাম আছে। তোমরা অনেকদিন আসো না।
– জ্বী! কিন্তু,
– আমি জানি নাদিয়া ওপাশ থেকে তোমাকে মানা করে দিতে বলছে। প্লিজ তুমি ওকে নিয়ে বাড়ি এসো। ও একটু রাগ করবে তবুও ওকে রাজি করিয়ে নাও।
– ওকে। আমরা আসবো।

নাদিয়া রাগ করে ভেতরে চলে গেল। জাহিদ ওর পেছনে পেছনে গেল।

– স্যরি, আসলে বাবা এত করে বলল।
– আপনি না বলতে পারেন না কেন! এভাবে কী চলবে?
– অবনীর জন্য কী গিফ্ট?
– আমি রাগ করেছি! বুঝতে পারছেন?
– স্যরি। আচ্ছা, আপনার ফোনে এটা কী করছেন?
– কী?
– লক স্ক্রিনে এটা কী ছবি দিলেন?
– জাদু।
– কীহ!
– কোয়ি মিল গ্যায়ার জাদু।
– এটা কেন?
– পিপি স্যার বলল না আপনার ছবি ওয়ালপেপার দিতে।
– এই এইটা আমি!
– হ্যাঁ এটা জাদু। আর আপনার নাম জাদু। একই কথা।
– ডিলিট করুন!
– আমার ফোন আমার ইচ্ছা।

নাদিয়া আর জাহিদ ওদের মতো ঝগড়া করছে আর অবনীর জন্য উপহার ঠিক করেছে। এদিকে মিশান ও তৈরী হচ্ছে, অরনীকে এতদিন পর দেখতে। একটা কাজ অসম্পূর্ণ ছিল ওর সাথে। কোনো কাজ অসম্পূর্ণ থাকলে ওর ভালো লাগে না।

(চলবে)

#রিস্টার্ট
#পিকলি_পিকু
#পার্ট_২০

অরনী শুধু অবনীর জন্যই না, মিঠাইয়ের জন্য ও উপহার কিনেছে। তবে অবনীর উপহার এখনো আসেনি। মিঠাইয়ের উপহার টা ও নিজে মলাট করছে। জাহিদ ল্যাপটপে কাজ করতে করতে লুকিয়ে লুকিয়ে আড়চোখে নাদিয়া কে ও দেখছে। কিন্তু একটু পর নাদিয়ার কাছে ধরা পড়ে গেল।

– কী দেখছেন ?
– আসলে, পিপি স্যারের কাছে কখন যাব? আপনি তো আর গেলেন না।
– জন্মদিনের পর যাব। আমার শ্বশুরবাড়ি গেলাম, আপনার শ্বশুরবাড়ি ও যাই।
– মেইল করেছেন?
– হ্যাঁ। উনিই বললেন দুটো কাজ সেরে আসতে।

জাহিদ আবার কাজ করছে। কিন্তু ওর মনে প্রশ্ন জাগে কে কে আসছে? অতিরিক্ত কথা বলার যখন এখন স্বভাব হয়েই গেছে, আরেকটু বলাই যায়।

– কে কে থাকবে অনুষ্ঠানে?
– সবাই। বাবার দিকের সবাই।
– কারা কারা ?
– ওহ! আপনি তো জানেন না। আমাদের মতো বাবারাও দুই ভাই এক বোন। মানে চাচ্চু ফুপ্পি আর ওনাদের বাচ্চারা। এবার তো মিঠাই আপু ও আসবে।
– কে?
– ফুফাতো বোন।
– বিয়েতে এসেছিল?
– না। ওর বিয়ের পর দেশ ছাড়া। ও কানাডায় থাকতো। পড়তে গিয়ে ওখানে ওর সাথে দেখা করেছি যে আর দেখা করিনি। অনেক মিস করি।
– আচ্ছা, মিশান, ভাইয়া আসবে?

নাদিয়া থেমে গেল। উনি কী করে জানেন মিশান ভাইয়ার কথা? রাহু বলেছে? না মিষ্টি ভাবি?

– ওকে কী করে চেনেন?
– ইয়ে মানে।
– রাহু না মিষ্টি ভাবি?

জাহিদ এখন আফসোস করছে। বলতেই বা গেল কেন? প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলা উচিত না। কী করে বলবে সব প্রিয়ম বলেছে। ওর মিশান ভাইয়া কে দেখার খুবই ইচ্ছা।

– মনে নেই।
– ও বিদেশে।
– ওহ!
– তো, অবনীর জন্য কী উপহার নিচ্ছেন?
– এখনো আসেনি। অর্ডার করেছি। দেরি হবে।
– কী জিনিস?
– একটা স্কেচ পেন সেট। অনেক দাম। লিমিটেড ইডিশন। ও না অনেক ভালো ছবি আঁকে। আমার থেকেও ভালো। ওর খুব ইচ্ছে একটা স্কেচ পেন সেটের। খুব অর্ডিনারি টা চেয়েছিল। কিন্তু, চাচ্চু ছবি আঁকা পছন্দ করে না। পড়া লেখার বাইরে কিছুই না। শুধুমাত্র আমার কাছেই মুখ ফুটে কিছু চায় ও।
– আপনি ওকে খুব আদর করেন, তাই না?
– হ্যাঁ। খুব। ছোট বোন আমার। ফাইভে আর এইবার এইটেও বৃত্তি পেয়েছে। তাও চাচ্চু কোনো উপহার দেয় না। দেখুন না, একটু জন্মদিন ই করতে চাইছে। একটা কেক ও কাটে না। উপহার তো দূর।
– আচ্ছা, আমার কী দেওয়া উচিত?
– আমি দিচ্ছি তো।
– আমার ও দেওয়া উচিত। আমি তো দুলাভাই হই।
– একসাথে দেই? আপনি আবার কী কিনবেন।
– স্কেচবুক? স্কেচবুক ছাড়া স্কেচ পেন ভালো লাগবে? জোড়ায় জোড়ায় না সুন্দর।
– আপনার ইচ্ছা।

নাদিয়া ভাবছে, কখনো তো ওকে কোনো উপহার দেয় না। আজ একদম ওর বোনের জন্য উপহার কিনছে। কিন্তু একটা কথা খারাপ বলেনি, জোড়ায় জোড়ায় সুন্দর। জন্মদিনের দিন নাদিয়া আর জাহিদ তৈরী হচ্ছে। জাহিদ আজ হাফডে করেছে। শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছে, একটু তৈরী হতে হবে। নাদিয়া কে একা পাঠিয়ে পরে গেলেও একটা ঝামেলা বাঁধিয়ে বসবে।

– এই সাদা পাঞ্জাবিটা পরুন।
– শাড়ি পাঞ্জাবি জন্মদিনে?
– এইটা বেশি ফ্যামিলি গেট টুগেদার। আর মিঠাই আপু আমাদের প্রথম এভাবে একসাথে দেখবে। আর শাড়ির সাথে পাঞ্জাবিই যায়।
– ওহ!

নাদিয়া কে হালকা গোলাপি শাড়ি আর সাদা পাফড ব্লাউজে অনেক সুন্দর লাগছে। যেন পরী একটা, অপ্সরী। নাদিয়া রূপার ঝুমকো পড়ছে। চোখে কাজল ও দিয়েছে। জাহিদ ওর থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না। মোহিত নয়নে অপলক তাকিয়ে আছে। জাহিদ নামক ঋষির তপস্যা ভেঙে গেছে। নাদিয়া নেকলেস টা পড়ার সময় একটু সমস্যা হচ্ছিল। জাহিদ ভাবছে গিয়ে সাহায্য করবে। হাত বাড়াতেই নাদিয়া সমস্যার সমাধান নিজেই করে ফেলল। জাহিদ বোকার মতো পাঞ্জাবি হাতে অন্য দিকে চলে গেল। পাঞ্জাবি পড়ে সে হাতা ভাজ করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পারফিউম লাগাচ্ছে। নাদিয়া তখন বসার ঘর থেকে ওকে কী যেন বলল। ও ভালো করে শোনেনি। বাইরে আসতেই নাদিয়া বলল,

– অবনীর গিফ্টটা নিয়েছেন?
– জ্বী।
– তো চলি?

ওরা গাড়িতে উঠল। নাদিয়ার একটু মন খারাপ। এত সুন্দর করে সাজল আর একটুও প্রশংসা করল না। পিপি স্যারের টাস্ক হলে ঠিক ই করত। এরপর ওরা নাদিয়াদের বাসায় পৌঁছায়। সবাই ওদের প্রশংসা করতে থাকে। একটু পর মিঠাই আর ওর বর ও আসে। অনেকদিন পর দুইবোন এক হয়ে ওদের ছাঁদে চলে যায় আগের মতো। রাহু, মিঠাই, মিষ্টি, অরনী। শুধু প্রিয়ম আর মিশান নেই। কিন্তু এখন অবনী আছে, অর্ষা আছে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে আর ওরা এখনো গল্প করছে। জাহিদ নীচে শ্বশুর আর ফুফা শ্বশুরের কাছে বন্দি। নাদিয়া যেন ওকে ভুলেই গেছে। ও সব পিপিকে বলবে। এই প্রতিকূল অবস্থায় এভাবে একা রেখে যাওয়াটা ঠিক হয়নি।

– জাহিদ কে ওপরে ডাক।
– উনি বাবার সাথেই ঠিক আছে।
– আরে ও তোর দুলাভাইয়ের সাথে দেশের ইকোনোমি নিয়ে কথা শুনতে শুনতে পাগল হয়ে যাবে। তোর দুলাভাই যা বোরিং।
– ওনার তো ওটাই ভালো লাগবে। উনি ও অনেক বোরিং।
– তোদের এডজাস্ট হচ্ছে তো?
– না , ডিভোর্স নিচ্ছিলাম।

মিঠাই চমকে উঠল। এভাবে অবনীর সামনে এসব না বললেও পারতো। ওরা শোনেনি তো আবার। ও ই বা কেন জিজ্ঞেস করলো।

– কী? যেটা সত্যি। আমরা এখন কাপল কাউন্সিলিং এ যাচ্ছি। এজ ইফ তোমরা জানো না।
– এই, চুপ কর। বেচারা কী করছে গিয়ে দেখে আয়। এক তুই ওর বউ, অন্যদিকে বাবা, মামা, আর তোর দুলাভাই ওর পাশে বসে কী কী বলছে কে জানে। বেচারার জন্য খারাপ লাগছে। গিয়ে দেখে আয়।

মিষ্টি আর রাহু ও বলল যেতে। ও তাই নীচে গিয়ে জাহিদ কে দেখে আসলো। বরাবরের মতোই ওর কোনো সমস্যা নেই বলে চলে যেতে বলল। কিন্তু ও এইসব পলিটিক্যাল আর ইকোনোমিক্যাল ক্রাইসিস নিয়ে আর কিছু শুনতে পারছে না। তাই ও একটু পানি খেতে ডাইনিং এর দিকে আসলো। নাদিয়া ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ভ্রু উঁচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করল কী হয়েছে?
– জ্বী, পানি খাব।
– আপনি চাইলে উপরে আসতে পারেন।
– না থাক।
– আচ্ছা পানি খেতে হলে এদিকে আসুন।

পানি খেতে খেতে ওর চোখ গেল টেবিলে রাখা কেকের দিকে। চকলেট কেক! অনেকদিন পর।

– কী?
– কিছু না।
– ও নো! চকলেট ফ্লেভার। থাক। আপনাকে খেতে হবে না।
– সমস্যা নেই।
– জোর করার কিছু নেই। আপনি না বলতে পারেন না আমি জানি।

নাদিয়া অংশুকে খুঁজছে। ওর মা বলল বাইরের দিকে। ও বাইরে গিয়ে ভ্যানিলা ফ্লেভারের ছোট একটা কেক আনতে বলবে অংশুকে। যারা চকলেট খাবে না তাদের জন্য। মানে তার পরম প্রিয় স্বামী। অমনি কেউ যেন পেছন থেকে ওর হাত ধরে ফেলল। জাহিদ তো না,

– মিশান ভাইয়া!
– জ্বী আমি।

আজ কত বছর পর দেখছে ওর অরনী কে। এখনো সেই রাগী রাগী চোখ। এখনো কত সুন্দর। অরনীকে শেষ বার দেখেছিল আইসিইউ তে। ওর অ্যাক্সিডেন্টের খবর শুনে কাঁদতে কাঁদতে ঢাকা এসেছিল। ওর বারণ ছিল অরনীর সাথে দেখা করা। মামা হয়তো ওকে দেখতে দেবে না। তাই বাইরে বসেই কেঁদেছিল পুরো রাত। তবুও মামার রাগ কমেনি। আজ এত বছর পর এলো মামাবাড়িতে।

– হাত ছাড়ুন !
– আপনি করে বলছ কেন?
– কারণ তুমি বলার সম্পর্ক টা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।
– ওদিকে গিয়ে কথা বলি।
– আমি কোনো কথা বলতে চাই না।
– প্লিজ, এখনো রাগ করে আছ?
– আপনার উপর রাগ করার মতো আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
– যদি কথা না বলো তবে ভাববো রাগ করেছ। আর এখনই ভেতরে গিয়ে সবাইকে বলব তুমি আমাকে চলে যেতে বলছ। আমাকে কিন্তু দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। আমরা দুজনেই অতিথি।

নাদিয়া খুবই বিরক্ত হয়ে ওর কথায় রাজি হলো। রাস্তার উপর এভাবে হাত টানাটানি করছে। সাইকো একটা। আবার যদি আগের বারের মতো কিছু করে। ওকে কে ডেকেছে এখানে। আজ যদি এখান থেকে চলে যায় তো সবাই আবার ওকেই দোষ দেবে। তাই নাদিয়া আর মিশান বাড়ির গেটের ভেতরে একটি কর্নারে কথা বলছে।

– কী বলবেন তাড়াতাড়ি বলুন।
– বিয়ে করেছ দেখছি।
– হুম।
– ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছিল শুনলাম।
– কী করে জানলে?
– শুনেছি।
– মিষ্টি ভাবি? তোমার গুপ্তচর?
– ওকে কিছু বলবে না। ডিভোর্স কবে দিচ্ছ? তাড়াতাড়ি ফাইনাল করো।
– কেন?
– আমার আর তর সইছে না।
– ডিভোর্স দিচ্ছি না। (তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে)
– এই জড়বস্তু নিয়ে সংসার করবে?
– হ্যাঁ। আর উনি জড় বস্তু না।
– তোমাকে তো জোর করা হয়েছিল। বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পর বাধ্য হয়ে গিয়েছ ওখানে!
– চুপ! একদম কথা বলবে না!
– আমার কাছে আসতে পারতে। আমি এখনো আছি। ডিভোর্স যখন দিচ্ছ, শোনো, আমার কাছে তুমি সবসময় অরনী। ওখানে এত কষ্ট করার দরকার নেই। এডজাস্ট করো না। আমার সাথে জার্মান চলো। আবার শুরু করব।
– তুমি দেখছি আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছ। এত বাজে কথা বলার সাহস তোমাকে কে দিয়েছে? নির্লজ্জ!

নাদিয়ার কথা শুনে মিশান রেগে ওর বাম হাতের কব্জি কে সজোরে ধরল। নাদিয়া ওর হাতে ব্যথা পাচ্ছে। ওর মনে হচ্ছে যেন ওর হাতের কব্জি ভেঙে যাবে। এরপর মিশান ওর মুখটা অরনীর কানের কাছে এনে ফিসফিসিয়ে বলে,
– সেদিন যে কিসটা বাকি ছিল , শেষ করবো? শুনেছি সে তোমায় টাচ ও করে না। কিস করেছে?
– ছাড়ো! ছাড়ো বলছি। নইলে,
– নইলে কী করবে? ঐদিনের মতো চিৎকার করবে? করো। তোমার স্বামী ও দেখবে, জানবে। আবার ঝামেলা হবে। জানে ও? আমার কথা জানে? ভালো, এখন শুনবে। চেঁচাও ! দেখুক!

মিশান তাচ্ছিল্যের হাসি হাসতে থাকে। নাদিয়ার খুব ভয় হতে থাকে। ও জাহিদ কে এখনো বলেনি এই শয়তানটার কথা। এভাবে জানতে পারলে না জানি কী ভাববে ওর ব্যাপারে। এখন আবার ঝামেলা হলে সবাই আবার ওকেই দোষ দেবে। এখান থেকে বের হতে হবে তাড়াতাড়ি। ওকে পরে দেখে নিবে। কোনোভাবে মিশানকে ছাড়িয়ে ও সেখান থেকে বের হয়ে এসে রাহুর ঘর অর্থাৎ নিজের প্রাক্তন ঘরে যায়। নাদিয়া কে মিশানের সাথে এই অবস্থায় চাচা দেখে ফেলে। তিনি এমনিতেও নাদিয়া কে পছন্দ করেন না, তার উপর এটাও উনি ভালো চোখে দেখেননি। মিশান নাদিয়ার হাত ধরে এত কাছাকাছি। একজন পুরুষ না হয় অনেক কিছুই করতে পারে। কিন্তু একজন নারীর তো খেয়াল রাখা উচিত। বিশেষ করে সে যখন বিবাহিত। কিছুক্ষণ পর নাদিয়া আবার ছাঁদে যায়। সেখানে মিঠাই, মিষ্টি আর রাহু অবনীকে উপহার দিচ্ছে। অবনী অরনীকে দেখে ওর কাছে দৌঁড়ে এসে বলে,

– আমার গিফ্ট কোথায়?
– এখুনি আনছি।

নীচে এসে ও গিফ্ট চেক করতে গিয়ে দেখে জাহিদ শুধু স্কেচবুক ই এনেছে। পেন এর সেট টা যে সাথে নিতে বলেছিল তা নেয়নি। সাথে সাথে জাহিদ কে বাড়ির বাইরের সেই একই জায়গায় ডাকলো।

– আপনাকে একটা কাজ বলেছিলাম।
– কী?
– অবনীর গিফ্ট টা নিতে।
– নিয়েছি তো।
– শুধু স্কেচবুক! আমি যে আপনাকে বললাম পেন সেট টা ও নিতে শুনতে পাননি!

নাদিয়া একটু চিৎকার করেই বলল। আর ওর রাগ খুবই স্পষ্ট। হাত পা নাড়ানো হতে চোখ। জাহিদ একটু ভয় পেয়ে গেল। ও তখন ভালো করে শুনতে পায়নি। কিন্তু এতে এত রাগ করার কী আছে। আসলে ও মিশানের রাগটা ও জাহিদের উপর ঝাড়ছে। জাহিদ অনবরত মাথা নেড়ে ওকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করছে। দূর থেকে নাদিয়ার চাচা পুরো ঘটনা খেয়াল করছে। কিন্তু কিছুই শুনতে পারছে না।

– স্যরি। আমার ভুল হয়ে গেছে। শান্ত হন। কেউ শুনতে পাবে।
– এখন আমি কী ওকে শুধু এই স্কেচবুক গিফ্ট করব! ও আমার কাছে স্কেচ পেন চেয়েছিল! (চিৎকার করে)
– আমি কিছু একটা করছি, থামুন। প্লিজ!

নাদিয়ার হাত নাড়ানো রাগ আর জাহিদের বারবার ক্ষমা চাওয়া দেখে নাদিয়ার চাচার রাগ হলো। তিনি শেষটা দেখতে চাচ্ছেন।
– আপনি, এখন এই মুহূর্তে বাসায় গিয়ে গিফ্ট টা নিয়ে আসবেন।
– ওকে।
– নয়টার মধ্যে আসবেন।
– এখন প্রায় সাড়ে আটটা! কী করে সম্ভব?
– আমি কিছু জানি না। ভুল করেছেন আপনি, শুধরাবেন ও আপনি। আপনার প্রতিটা ভুল আমি মেনে নিচ্ছি বলে প্রতি টা দিন ভুল করে যাচ্ছেন। আজকে আপনার শাস্তি পেতে হবে। আপনার কারণে আমি সবার সামনে লজ্জা পেতে চাই না। আপনি একটা আস্ত ঝামেলা! আপনাকে বিয়ে করা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল!
– স্যরি। আমি এখনই যাচ্ছি।
– শুনুন! কেউ যাতে না বুঝে আপনি বাইরে গেছেন।
– জ্বী?
– যদি কেউ যদি ঘুণাক্ষরেও টের পায় আপনি বাইরে গেছেন তো আজ আপনি শেষ!
– ওকে। কীপ কাম!

জাহিদ সেখান থেকে দৌঁড়ে বাইরে যায়। নাদিয়ার চাচা ও ওর পিছু নেয়। গিয়ে দেখে ও গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যাচ্ছে। নাদিয়া এত বেয়াদব! ও এভাবে জামাইকে বের করে দিল! নিশ্চয়ই মিশানের সাথে আবার কিছু করেছে। এখন মান সম্মানের বিষয়। স্বামী কে ডিভোর্স দিয়ে ও যদি মিশান কে বিয়ে করে তো সোসাইটি তে মুখ দেখাতে পারবে না কেউ। তিনি আছেন এক দুশ্চিন্তায়। আজ নাদিয়ার একটা শিক্ষা হওয়া উচিত। এসব ভাবতে ভাবতে ওনার প্রেসার ও নেমে গেছে। উনি কোনোমতে বাড়ি এলেন।

নাদিয়া ছাঁদে গিয়ে বসল,
– আমার গিফ্ট কোথায়? (অবনী)
– কেক কাটার পর পাবি। অনেক স্পেশাল তো।
– এখনই কাটবো কেক।
– অংশু ভাইয়া আসুক। তারপর।
– অংশু ভাইয়া কোথায়?
– বাইরে থেকে কী যেন আনতে গেছে।

এরপর ওরা সবাই আবার গল্প করছে। নাদিয়ার মন একটু ভালো হয়েছে। কিন্তু অংশু আসতেই চাচা সব ওকে বলে দিলো। কীভাবে নাদিয়া জাহিদকে ছেড়ে মিশানের কাছে যাওয়ার কথা ভাবছে। মিশান কে দেখে ওর মন বদলে গেছে। আর তাই জাহিদকে অপমান করে বের করে দিয়েছে। এসব শুনে অংশুর মাথা গরম হয়ে গিয়েছে। প্রথমে ও চাচ্চু কে বিশ্বাস করতে চায়নি। কিন্তু যখন দেখল জাহিদ সত্যিই নেই, আর ওর গাড়ি ও নেই তখন আর বোঝার কিছু বাকি ছিল না। অংশুর আফসোস হচ্ছে, মিষ্টির কথায় মিশান আসার অনুমতি না দিলেও পারতো। মিষ্টি ওর পরিবারের এত বড় ক্ষতি করলো! এদিকে ছাঁদে,

– রাহু, তুই বিসিএস কবে করছিস?
– আমি বিসিএস করব না মিঠাই আপু।
– আমাদের ফ্যামিলি তে সব আছে, শুধু বিসিএস নেই।
– অরনী ডাক্তার হলে আমি বিসিএস দিতাম। ওর জন্য আমার ডাক্তার হতে হলো। ওকে বলো হতে।
– অরনী, আমি বিশ্বাস করি, তুই চাইলেই পারবি।

অরনী মুখ ভেঙচি দিয়ে বলে,
– বলেছে!
– পারবি তো।
– অনেক পড়া।
– ছুটি নিয়ে পড়। আর আমাদের ফ্যামিলি তে প্রথম ফাইভ আর এইটে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি তুই। তুই না থাকলে জানতাম ই না এস এস সি আর এইচ এস সি তে বৃত্তি দেয়। আমাদের ফ্যামিলির অনেক কৃতিত্ব প্রথম তোর।
– তাই প্রথম ডিভোর্সী হতে চাইলাম, তা তো কেউ দিলে না।
– এই যে আবার শুরু।
– কী বলিস, রাহু। আমি যদি ডিভোর্স নিতাম তো ফাঁকা হতাম। সারাদিন পড়তাম আর মনের দুঃখে বিসিএস ক্যাডার হতে পারতাম। এক ঢিলে দুই পাখি।

রাহু আর মিঠাই হতাশ। মিষ্টি বিরক্ত হয়ে বলল,
– কী তুমি বাচ্চাদের সামনে ডিভোর্স ডিভোর্স করেই যাচ্ছ।
– ডিভোর্স কী খারাপ? শোনো বাচ্চারা, এটা নরমাল। কেউ সুখী না থাকলে ডিভোর্স নিতে পারে। এটা এত খারাপ জিনিস না।

অবনী মন খারাপ করে বলল,
– তুমি কী ডিভোর্স নিচ্ছ? দুলাভাই কী ভালো না?

তখনই মিশান ছাঁদে এলো। মিষ্টি ছাড়া বাকি সবাই বিরক্ত। ওর বোন মিঠাই ও।

– কী অরনী, ডিভোর্স নিচ্ছ? আহারে!
– না নিচ্ছি না। তোমার আফসোস করা লাগবে না।
– বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে, তাই আফসোস হচ্ছিল আর কী।
– যার বিয়েই হয়নি, তার আবার বিয়ে ভাঙা নিয়ে আফসোস।

মিষ্টি ছাড়া সবাই হাসতে লাগলো। অংশু খুব রাগান্বিত অবস্থায় ছাঁদে উঠে দেখল নাদিয়া হাসছে, আর মিশান ওর সামনে। ওর মেজাজ আরো বিগড়ে গেল। ওকে দেখে মিশান দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। অংশু রেগে আছে বোঝা যাচ্ছে।

– অরনী, জাহিদ কোথায়?
– উনি কোথায় আবার, নীচে হবে।
– নীচে নেই।
– ওয়াশরুম? ওখানে দেখো।
– আরেকবার প্রশ্ন করবো। ঠিক ঠিক উত্তর চাই। জাহিদ কোথায়?
– জানিনা।
– তুই ওকে কী বলেছিস?

নাদিয়া একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেল। এখন নয়টা পাঁচ বাজে এখনো আসছে না কেন? সবার সামনে বলবে গিফ্ট ভুলে গেছে? লজ্জার বিষয়। অন্য জায়গায় গিয়ে বলতে হবে।

– কিছু না। ভাইয়া অন্যখানে কথা বলি।
– যা বলার এখানে বল। নির্লজ্জ! বেহায়া!
– মুখ সামলে কথা বলো!
– থাপড়ে তোর গালের দাঁত ফেলে দেব। এই বদমাশ মিশান কে দেখে মন বদলে গেছে, তাই না!

মিষ্টি রেগে গিয়ে বলল,

– অংশু! এখানে অর্ষা আর অবনী আছে। ভদ্রভাবে কথা বলো।
– তুমি চুপ! তুমি কে? তুমি তো চাও অরনী জাহিদ কে ডিভোর্স দিয়ে মিশানের কাছে যাক! তোমার মতলব আমার জানা আছে।
– আশ্চর্য! আমি কী করলাম?
– আমার পরিবারের সম্মান নষ্ট করছ তোমরা। এই সম্মান কী করে বাঁচাতে হয় আমি জানি!

নাদিয়া রেগে গিয়ে বলল,

– তুমি জানো না! জানলে ভাবির সাথে সবার সামনে এভাবে কথা বলতে না।
– তুই কোনো কথা বলবি না। আরেকটা কথা বললে,
– আরেকটা কথা বললে কী? (চিৎকার করে)

অংশু ঠাস করে নাদিয়ার গালে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দিল। সবাই উঠে দাঁড়ালো। এটা কী হয়ে গেল? রাহু গিয়ে অংশুকে আটকালো। নাদিয়া ওর গাল ধরে আছে। অংশু ওকে থাপ্পড় দিল! অর্ষা ভয়ে কেঁদে উঠল। মিষ্টি অর্ষা কে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নীচে চলে যাচ্ছে। নামার সময় ও জাহিদ কে দেখে থেমে যায়। জাহিদ অপ্রস্তুত সেই গিফ্ট টা নিয়ে ছাঁদে উঠে দরজার বাইরে থেকে দেখে নাদিয়া ওর গাল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ও কিছুই বুঝতে পারছে না। ভেতরে যাবে কিনা ভাবছে। নাদিয়ার চোখ জাহিদের দিকে পড়তেই ও জাহিদের কাছে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই বলল,

– গিফট এনেছেন?
– জ্বী। এই যে।

নাদিয়া গিফ্ট টি নিয়ে অবনীর হাতে দিয়ে বলল,

– এইটা তোর বার্থডে গিফ্ট। তোর দুলাভাই ভুলে এইটা রেখে চলে আসে। এখন এটাই আনতে গিয়েছিল। স্কেচবুক টা নীচে আছে। দুটো একসাথে দিতে চেয়েছিলাম। হ্যাপি বার্থডে!
– আপু!!!

অবনী ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। মিঠাই অবনীকে ধরে। অংশুর উপর সবার খুব রাগ হচ্ছে। অংশু বুঝতে পারল না ও কী করলো। জাহিদ তবে গিফ্ট আনতে গিয়েছিল। নাদিয়া সেখান থেকে হেঁটে চলে আসে। জাহিদ ওর পেছনে পেছনে ছুটে। মিশান দূরেই দাঁড়িয়ে রইলো। অরনীর স্বামী টা কে ছিল? দেখতে পায়নি।

নাদিয়া হাঁটতে হাঁটতে বেরিয়ে ওদের গাড়িতে এসে বসে। জাহিদ ভেতরে ঢুকে ওর সিট বেল্ট বাঁধে, আর কিছু বলছে না। নাদিয়া আস্তে আস্তে বলল, ” একটানে বাসায় চলে যাবেন।” জাহিদ গাড়ি স্টার্ট নেয়। গাড়ির পেছনে রাহু পাগলের মতো ছুটতে থাকে। আজকে ও এভাবে গেলে আর কখনো বাড়ি আসবে না। কথাও বলবে না কারো সাথে।

পুরোটা রাস্তায় নাদিয়া আর কিছু বলল না। মূর্তির মতো বসে রইলো। জাহিদ খুব ভয় পাচ্ছে। এভাবে বসে থাকাটাও ঠিক না। কান্না করা উচিত। ইমোশন বের করতে হবে। নইলে আবার কিছু একটা করে বসবে। আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ তো হবেই। সব জমে থাকা অগ্ন্যুৎপাতকে বের হতে হবে। গাড়ি থামার পর নাদিয়া গাড়ি থেকে নেমে স্বাভাবিকভাবেই বাসায় ঢুকল। জাহিদ নাদিয়ার পেছনে ছুটছে। সুন্দর করে আলো জ্বালিয়ে পরিবেশ টা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। নাদিয়া নিজের ঘরে ঢুকলো। জাহিদ কী জিজ্ঞেস করবে বুঝতে পারছে না। কোনো কথাই তো বলছে না।

– পানি খাবেন?
– হুহ?
– পানি?
– জ্বী।

জাহিদ রান্নাঘরে গিয়ে গ্লাস নিয়ে পানি আনতেই খুব জোরে কাঁচ ভাঙার শব্দ পেল। সেই বিকট শব্দে ওর হাত থেকে পানির গ্লাসটিও পড়ে গেল। ভয়ে জাহিদ ভেতরে গিয়ে শুনল নাদিয়ার চিৎকার। ও ওর ড্রেসিং টেবিলের আয়নাটা কিছু একটা দিয়ে ভেঙে ফেলেছে। আর নীচে পড়ে থাকা সেই ভাঙা কাঁচগুলো দিয়ে নিজের দুই হাত ইচ্ছেমতো কাঁটছে আর চিৎকার করছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই যেন জাহিদের পুরো দুনিয়াটা ওর চোখের সামনে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ও তাড়াতাড়ি ওর সামনে গিয়ে বলল, ” নাদিয়া ! নাদিয়া ! থামুন!” ওর সামনে রক্তাক্ত নাদিয়া। কী সুন্দর লাল টুকটুকে! একটু আগে বিকেলের হালকা গোলাপি শাড়িটা এখন পুরোই রক্তাক্ত। নাদিয়ার কী কষ্ট হচ্ছে না? এইভাবে নিজের হাতকে ক্ষত বিক্ষত করছে, তবুও থামছে না! ওর হাত থেকে কাঁচ গুলো ছাড়াতে জাহিদের হাত ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেছে। কিন্তু ও কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না। জাহিদ নিজেও চিৎকার করতে লাগলো। নাদিয়া কে কোনো ভাবে থামানো যাচ্ছে না। ওর রক্ত ক্ষরণ হয়েই যাচ্ছে। এভাবে চললে আরো রক্ত ঝড়বে। নাদিয়ার ভেতরে যে কষ্ট হচ্ছে ও তা কমানোর জন্য নিজেকে বাহিরে কষ্ট দিচ্ছে। কিন্তু সেই কষ্ট কিছুতেই থামছে না। জাহিদ নাদিয়া কে না থামাতে পেরে ওকে সজোরে জড়িয়ে ধরলো। ওকে শান্ত করতে নানা কথা বলতে লাগলো। কিন্তু ও জাহিদকেই আঘাত করছে। নাদিয়ার আঘাত গুলো ওর লাগছে না। কারণ ওকে শান্ত করতে হবে। খুব খারাপ কিছু হওয়ার আগে ওকে শান্ত করতে হবে। জাহিদ ওকে আটকে রাখলো। নিজের ক্ষত বিক্ষত হাত দিয়ে ওকে জড়িয়ে রাখলো। এবং একটা সময় পর নাদিয়া শান্ত হয়ে যায়। জাহিদ ওকে তাও ধরে রাখে। মুহূর্তেই নাদিয়া ঢলে পড়ে ওর সামনে। ওর সামনে এখন নিথর নাদিয়া। জাহিদ বুঝতে পারছে না কী হয়েছে। ও নাদিয়াকে নাড়িয়ে দেখে। ওর হৃদস্পন্দন শোনা যাচ্ছে না। “নাদিয়া! নাদিয়া! আমাকে ছেড়ে যেও না! আমি বাঁচব না।” বলে চিৎকার করতে থাকে। কিছুক্ষণ জাহিদ ও চুপ হয়ে যায়।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here