রিস্টার্ট #পর্ব_৪৫

0
608

#রিস্টার্ট
#পর্ব_৪৫
#পিকলি_পিকু

“আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, ও ও ও
এই চোখ দুটো মাটি খেয়ো না
আমি মরে গেলেও তারে দেখার সাধ মিটবে না গো, মিটবে না
তারে একজনমে ভালোবেসে ভরবে না মন, ভরবে না”

রেডিওতে এই গানটা শুনছে জাহিদ। পাশে আসল ওয়াসি বসে আছে। সে পাজেল মিলাচ্ছে। একই বয়সের দুটো ছেলে। একজন আছে প্রেম বিষাদে, আরেকজন পাজেল বিষাদে। ওয়াসির পাজেল মিলছে না। অনেক চেষ্টা করছে। অবশেষে সে রেগে পাজেল বক্স টা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল। শব্দ শুনে ওয়াজির এলো দেখতে। জাহিদ পাজেল পিস গুলো তুলতে সাহায্য করছে। ওয়াজির ও ওকে সাহায্য করতে এলো। ওদের পাজেল গুলো রাখতে দেখে ওয়াসি এসে জাহিদের পিঠে উদোম কিল ঘুষি দিয়ে বসলো। বেচারার কাটা শরীরে ওয়াসির মুহুর্মুহু মার দেখে ওয়াজির জাহিদ কে বাঁচিয়ে সেখান থেকে উঠে আসলো। ওয়াসি এবার মাটিতে বসেই পাজেল মেলাতে লাগলো।

সোফায় বসে ওয়াজির আর জাহিদ ওয়াসির অবস্থা দেখছে আর আফসোস করছে। এরপর ওয়াজির জাহিদের দিকে তাকিয়ে বলে,

– ওর মুড খারাপ হয়ে গেল কেন?
– জানি না। পাজেল ই তো মেলাচ্ছিল।
– তুমি কী করছিলে?
– গান শুনছিলাম।

হঠাৎই ওয়াজির রেডিওতে আরজে ঐশীর কণ্ঠ শুনতে পেল। তারপর খুবই বিরক্ত হয়ে বলল,

– এটাই কারণ। এই কণ্ঠ শুনলে তো যে কারো ঠান্ডা মাথা গরম হয়ে যাবে।
– সত্যি! তুমি এটা বলছ?
– তো! যত্তসব বিরক্তিকর আরজে। বউয়ের শোকে তার জন্য রেডিও শুনছ। সে তো তোমার সামনে যাচ্ছে তাই বলে দিল।
– আর তুমি? তুমি আরজে ঐশী কে কী কী বলেছিলে? এভাবে ওর মন ভাঙার সময় কষ্ট হয়নি? তোমার আর নাদিয়ার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তাও নাদিয়া রেগে ছিল। ওনার কী দোষ ছিল?

ওয়াজির অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। জাহিদ কী করে জানলো?
– কী দেখছ? আমি দেখেছি। ঐদিন নাদিয়া সহ যে মলে গিয়েছিলাম, সেদিন।
– ওরে বাবা! তুমি তো পুরো গোয়েন্দা।
– একটু আধটু তো আমি পারি। আমি এত সোজাও নই।
– তা তো জানি। তুমি যে কোন চিকন শয়তান।
– তবে তোমাদের কাহিনী কী? মেয়েটা তোমার প্রেমে পড়লো কী করে?
– আরে, এটা অনেক দিন আগের কথা। আমি তখন ও এত কাজ পাইনি। ছোটখাটো বাগ এর কাজ করছিলাম। একদিন বান্দরবানে যেতে বলা হলো। ওখানে নাকি নাশকতাকারীরা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এর আড়ালে একটা বড় কিছু করবে। আমার কাজ ছিল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ। সাধারণ পর্যটকের ছদ্মবেশেই গিয়েছিলাম। সেখানে আমাদের বিপরীতে ছিল ঐশীরা। পুরো একটা মেয়েদের গ্রুপ। দুই তিনজন ছেলে ছিল। প্রথমেই একটা হালকা ভুল বোঝাবুঝির জন্য আমাকে লোফার, ইভটিজার, ছ্যাঁচড়া যা তা বলে দিল। আমার খুব রাগ হচ্ছিল। মন চাচ্ছিল ওকে বলি আমি কী। ওর নাম দিয়েছিলাম ক্যারোলিনা রীপার।
– এর মানে ?
– পৃথিবীর সবচেয়ে ঝাল মরিচ।
– এরপর?
– ঐ যে হামলা হলো। মানে হয়নি। হওয়ার আগে সব সামলে সব পর্যটকদের বাঁচিয়ে ছিলাম।
– তারপর?
– একটু একটু করে মন গলল। আর এরপর সবচেয়ে ফিল্মি জিনিসটা হলো।
– মানে?
– আমি ঐ যে খোঁজ নিতে জঙ্গলের ভিতরে গিয়েছিলাম। আর মিস ক্যারোলিনা রীপার পথ হারিয়ে জঙ্গলে।
– বাহ! বলিউডের স্ক্রিপ্ট যেন।
– উনি কোনো নায়িকা ছিল না। সাক্ষাৎ যমদূত। এত সন্দেহ করলো। কিন্তু আমার ও তো একটা চার্ম আছে। ফেঞ্চ চার্ম। এক রাতে কাবু করে ফেললাম।
– বাহ!

ওরা খেয়াল করলো ওয়াসি ওদের দিকে তাকিয়ে আগ্রহ নিয়ে এই কাহিনী শুনছে। ওয়াজির কথা কাটিয়ে নিতে যাচ্ছিল। জাহিদ বলল,
– আরে বলো। ও বুঝবে না।
– সত্যি?
– হ্যাঁ।
– তো ওর বকবক কেন জানি ভালো লাগছিল। এর আগেও একটা দুইটা ফ্রেঞ্চ গার্লফ্রেন্ড ছিল তবে মাস চলেনি। ওকে দেখে মনে হয়েছিল এভাবে মিষ্টি করে ঝগড়া করলে মন্দ হয় না। আফটার অল অনেক সুন্দর করে কথা বলে। সত্যি বলতে আমার ইচ্ছা ছিল ঢাকা এসে যোগাযোগ করবো। মাঝেমধ্যে প্রেম করবো। কিন্তু …
– কিন্তু কী?
– আমার আরেকটু কাজ ছিল। তাই রয়ে গিয়েছিলাম। ওকে ফোন নাম্বার আর আসল নাম ও বলে দিয়েছিলাম। এত ইমোশনাল ছিলাম আমি। পরে এই ঘটনায় আমার কাজে মুগ্ধ হয়ে আমাকে হেডকোয়ার্টারে ডাকা হলো। কন্ট্রাক্ট সাইন করানো হলো।
– এতদিন কন্ট্রাক্ট ছিল না?
– না। রিটেন ছিল না। এসব কাজ আমার ইন্টারভিউ ছিল বলা যায়। যাই হোক আমার সামনে একটা কন্ট্রাক্ট ছিল যা সাইন করলে আমার লক্ষ্য পূরণ হতো। আর কন্ট্রাক্টে ছিল কারো সাথে যোগাযোগ করা যাবে না। নো ফ্যামিলি নো ফ্রেন্ডস। গার্লফ্রেন্ড তো একদমই না। আমাকে ওয়ান ইয়ার আন্ডারগ্রাউন্ডে যেতে হবে। ওদের জন্য ডিভাইস বানাতে হবে।
– তো?
– আমি সাইন করে দিয়েছিলাম।
– ঐশীর কথা ভাবোনি?
– না। পাঁচদিনের সাক্ষাৎ। কেউ মনে রাখবে না। ও তো ইউনিভার্সিটিতে পড়তো। বয়স কম ছিল, সামনে আরো পাবে। এসব ভেবে আমি আর ওর কথা ভাবিনি। কিন্তু আমি কী জানতাম ও আরজে হয়ে আমাকে গালাগাল করবে। এক বছর পর আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে বের হয়ে রেডিও তে শুনছি ওর কণ্ঠ। আর কি পরিমাণ ভদ্র গালাগাল করলো আমায়। বিশ্বাস ঘাতক, ধোকাবাজ, প্রতারক। শুধু একটা পর্বে না, প্রতিটা এপিসোডে ও আমাকে গালাগাল করে কিন্তু আমার নাম নেয় না। আমার জিহ্বায় কামড় কেন পড়তো তা আমি সেদিন বুঝেছিলাম। ও যে মুভ অন করতে পারেনি।
– আর তুমি মনে হয় পেরেছ?
– আমার ব্যাপার আলাদা। আমি আর কারো সাথে দেখা করিনি। কাজে ছিলাম। কিন্তু ও তো বাইরেই ছিল। ও তো পারার কথা।
– বাহ! এভাবে মুভ অন হয় না। আমি তো অরনীকে দেখিও নি। আমি তো বাসতাম। আর ও তো তোমার সাথে কথা বলেছিল। যতদিন ই হোক। তবে তোমার উচিত হয়নি ঐদিন ওভাবে কথা বলা।
– তো কী করতাম? মেয়েটা যে এত পাগল তা তো ভাবিনি। আমার জন্য ওর সময় নষ্ট করার মানেই হয় না। তাই আমি চেয়েছিলাম একটু রাফ ব্যবহার করলে আমাকে ঘৃণা করে মুভ অন করবে।
– ঘৃণা করলে মুভ অন হয় না। মানুষ ওখানেই আটকে থাকে। তাই প্রমিস মি, এই মিশন শেষ হলে তুমি ওর কাছে যাবে। এরপর ওকে স্যরি বলবে। নইলে ওর লাইফে ও কখনো আগাতে পারবে না।
– ওকে, দেখা যাবে।
– এই ওয়াসির দোহাই।

ওয়াসি তাকিয়ে আছে। ওয়াজির এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। এরপর ওয়াসি এসে ওয়াজিরের হাত ধরে টেনে রেডিওর কাছে নিয়ে যায়। এরপর প্লিজ প্লিজ বলে চেঁচাতে থাকে। ওয়াজির অবাক হয়ে ভাবছে ওয়াসি কী এখন বুঝতে পারছে? জাহিদ এসে ওয়াজির থেকে প্রমিস নিয়ে দিল।

জাহিদ আর ওয়াজির সবার সাথে বসে কেস ঠিক করছে। কাল সকালে ওরা সবাই কেস করতে যাবে। জাহিদকে সব সেখানো হলো। কথামতো ওরা গেল মামলা করতে। ওদের অভিযোগ যাচাই বাছাই করার জন্য রাখা হলো। কিছুদিন পর জাহিদের অভিযোগ খারিজ করা হলো।

“আপনি যে অভিযোগ করেছেন তা ভুয়া। আপনি বলেছেন আপনাকে অত্যাচার করা হতো। কিন্তু এসবের কোনো প্রমাণ নেই। আর এই যে ভিডিও চিত্র, এসব আপনার নয়। আর এরা ম্যাগনেফিসেন্টে কিনা এর কোনো প্রমাণ নেই।”

জাহিদ রেগে বলল, ” আমার বন্ধু ওয়াসি যে পাগল হয়ে গেছে! ওকে আমার সামনে অত্যাচার করা হয়েছে।”

প্রত্যুত্তরে তারা বলে, ” ও ম্যাগনেফিসেন্টে পড়তো এর কোনো প্রমাণ নেই। এই যে আপনি মিথ্যে বলছেন। এমন কোনো স্টুডেন্ট এখানে পড়তোই না। এখন ম্যাগনেফিসেন্ট ট্রাস্ট কিন্তু আপনার উপর কেস করতে পারে। মানহানির মামলা। ”

কী ভেবে যে লড়াই করতে নেমেছিল। এত বড় বড় উকিল নিয়ে ও কেস করতে পারেনি। স্বয়ং রাষ্ট্রপতি ও কিছু করতে পারবে না বোধহয়। হতাশার উপর হতাশা। ওয়াজিরের বাসায় সিকান্দার সাহেব জাহিদের কেস রিভিউ করছেন,

– কেস তো নেওয়ার কথা।
– কিন্তু নিচ্ছে না স্যার। উল্টো দেবে বলছে।
– কী ধরণের কথা!
– ওয়াসি পড়ার কোনো প্রমাণ ই নেই।
– ওর টিসি পেপার?
– সেগুলো ওর পরের স্কুলে জমা ছিল। আর সেখানে সেসব নেই।
– আই সি। আর জাহিদ?
– ও নাকি মিথ্যে বলছে। হয়রানি করছে।
– ওদের চালক আমাদের চেয়ে অনেক চালাক। আমাদের আরো তাগড়া কিছু দরকার। চিন্তা করো না, যুদ্ধ কখনো প্ল্যান মতো আগায় না। যে যুদ্ধ প্ল্যান অনুযায়ী হয় তা হয় নাটক। ভরসা রাখো জাহিদ। আমাদের ওদের আরো দুর্বলতা লাগবে।
– আপাতত অ্যাটেম্পট টু মা*র্ডার?
– দরকার নেই। কেস অন্য দিকে ঘুরে যাবে। তখন সেটা অর্ঘ্যদীপ বনাম জাহিদ হবে। ম্যাগনেফিসেন্ট না। আমরা সবাইকেই একসাথে ধরবো।

এভাবে দিন যেতে থাকে আর জাহিদের মনোবল ভাঙতে থাকে। নামাজে আল্লাহ্কে বলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই ওর কাছে। খবর এসেছে সেই স্কলারশিপ ছাত্ররা স্কুল বদলে নিয়েছে। সবমিলিয়ে জাহিদ ওর চোখের সামনে আরেকটি পরাজয় দেখতে পারছে। হার মেনে নিলেই নাকি আসল হার মানা হয়। কিন্তু সত্যিই ওর ইচ্ছে হচ্ছে এবার হার মেনে নেওয়ার। নিজের ফোন টা ও এখন সুইচ অন করে নিয়েছে। আর লুকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে না। সামনেই একটি ছোট চাকরি জোগাড় করবে। আর কয়দিন এভাবে থাকবে। ওয়াসিদের বাসায় থাকতেও লজ্জা লাগছে। কিছুদিনের জন্য বড় ভাইয়ার বাসায় যাবে কী? হঠাৎ ওর ফোনে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসলো। ফোন টা তুলতেই পরিচিত সেই কণ্ঠ,

– শুদ্ধ, কেমন আছো?
– সারা?
– কণ্ঠ শুনেই চিনতে পারছো?
– কেন চিনবো না?
– কী করছো এখন?
– ঘাস কাটছি।
– মজা করছো?
– মজা তো তোমরা করছো আমার সাথে, এখনো।
– না শুদ্ধ। তোমার উপর কী আসলেই হামলা হয়েছিল?
– তুমি কী আমার সাথে দেখা করবে?
– তুমি দেখা করতে চাও?
– জ্বী। আমার অনেক কথা বলার আছে। জিজ্ঞাসা আছে। তোমার কী সময় হবে?
– আমি আজই দেশে এসেছি। কোথায় দেখা করবে?
– খুবই প্রাইভেট জায়গায়। আমি চাই না ফাইয়াজ আমার আবার ক্ষতি করুক।
– কী করেছিল ও?
– দেখা করে বলি?

জাহিদ সারার সাথে দেখা করতে আসলো। ঢাকার অদূরে একটি রিসোর্টে। মাথায় স্কার্ফ আর চোখে শেড লাগিয়ে সারা এসেছে। জাহিদ ওর চিরাচরিত অবতারে। ওর এই গুড ইমেজটাই সারাকে খুব আকর্ষণ করতো। রিসোর্টে দুজন মুখোমুখি বসে আছে। অনেকক্ষণ ধরে সারা ওকে কিছু বলেনি। জাহিদের সারার চেহারাটা খুবই বিরক্ত লাগছে। তাই ও নীচের দিকে তাকিয়ে আছে,

– আমার দিকে তাকাচ্ছ না কেন?
– এমনি।
– কী কথা বলবে?
– এখানে, এত লোকের সামনে বলব?
– কী এমন গুরুত্বপূর্ণ কথা?
– রুম বুক করেছ?

সারা মুচকি হাসলো। এরপর ওরা একটা রুমের ভেতর ঢুকলো। রুমে ঢুকেই সারা ওরা স্কার্ফ খুলে চুলগুলোকে মুক্ত করলো। এরপর শেড টা খুলে পাশে রেখে জাহিদের দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো। জাহিদ ওর শার্টের বাটন একটা একটা করে খুলতে লাগলো। সারা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এমন ব্যবহার ও জাহিদ থেকে কখনো আশা করেনি।

জাহিদের শার্টের বোতামগুলো খোলা, ভেতর থেকে ওর শরীর উঁকি দিচ্ছে। সারা জাহিদের সেই শরীরের দিকে তাকিয়ে আছে।

– কী করতে চাও?
– তুমি কী করতে চাও সারা?
– শুদ্ধ, অরনী তোমাকে এই অবস্থায় দেখলে,
– ছেড়ে দেবে? দিয়েছে অলরেডি। আমাদের আলাদা হওয়া এখন শুধু কাগজের কাজ।
– তুমি ডিভোর্সী? (তাচ্ছিল্যের সুরে)
– বলতে পারো।
– অনেক দিন বউয়ের থেকে আলাদা?
– জ্বী।
– তো?
– যা ইচ্ছা তা করতে পারো।

সারা আস্তে আস্তে জাহিদের কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে। এভাবেই চেয়েছিল ওকে অনেক বছর আগে। কিন্তু ও কী করে ওকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল? ওর সাহস কী করে হয়? আজ সব শোধ তুলবে। এরপর সারা জাহিদের শার্ট ওর শরীর থেকে খুলতেই দেখে সেই আঘাত গুলো। কিছুক্ষণ অপ্রস্তুত দাঁড়িয়ে ছিল সারা।

– কী হয়েছে?
– কিছু না।
– এই শরীর আশা করোনি?
– তা নয়। এই দাগ?
– তোমার বন্ধুরা কিলার পাঠিয়েছিল। এভাবে আঘাত করেছে। আরো দেখবে।

জাহিদ পেছনে ফিরে গেলো। তারপর সারাকে প্রতিটা আঘাত বর্ণনা করতে লাগলো। কোনটা কত বছর পুরনো এসব। সারা অস্বস্তি বোধ করছিল। এরপর সে খাটে এসে বসে পড়লো। জাহিদ ওর শার্টটা পরে সারার সামনে এসে বসলো,
– মুড নষ্ট হয়ে গেছে?
– হ্যাঁ।
– এরকম আরো আঘাত নিয়ে না আমি বেঁচে আছি। এসব তো শরীরে। মনের আঘাত টা তো দেখাতেও পারিনা।
– তুমি আমাকে এইজন্য ডেকেছ?
– না। বলতে চাইছিলাম আমি কেমন ছিলাম এই কয়দিন। জিজ্ঞেস করেছিলে না?
– ফাইয়াজ করেছে এসব?

সারা জাহিদের দিকে নরম করে তাকালো। জাহিদ সারা হাতটা নিয়ে বলল,

– বোধহয়।
– কোথায় ছিলে?
– হাসপাতালে।
– কেস হয়নি?
– করিনি। পুলিশ তো সব কেনা।
– এখন কী করবে?

জাহিদ সারার হাতটা নিয়ে নিজের বুকে ছোঁয়ায়। সারা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। তবে জাহিদের দিকে তাকিয়ে ভাবে এইতো আমার পায়ের সামনে।

– এই যে আঘাত টা অনুভব করছো?
– কী?
– এখানে তিনটা সেলাই আছে।

সারা সাথে সাথে ওর হাত সরিয়ে বলল,

– তো আমি কী করবো?
– এরকম আঘাত পুরো শরীরে আছে। আরো বড় আছে। এই সব আঘাত তোমার হাত দিয়ে ধরতে হবে।
– তাই নাকি?

সারা মুচকি হাসে। জাহিদকে এভাবে দেখে ওর খুব শান্তি লাগছে। এই এতসব বড় বড় কথা ওর কোথায় গেল?

– এখন কী করবে?
– আমি জানি না। আমার কী করা উচিত আমি জানি না।
– আমি বলবো?
– বলো।
– আমাকে এন্টারটেন করো।
– কী করে?
– যেভাবে খুশি। জাস্ট, ডু ইট।

জাহিদ বসে বসে ভাবলো,

– একটা কথা বলি?
– কী কথা?
– এই কথা শুনলে খুশি হতে পারো।
– বলো।
– প্রিয়ম না আত্ম*হ*ত্যা করেনি। ওর মিসক্যারেজ হয়েছিল আর তাই রক্তক্ষরণের জন্য ও মারা গিয়েছিল।

সারা খুব বিরক্ত হলো।

– এটা এই মুহুর্তে বলার জিনিস? এভাবে এন্টারটেন করতে তুমি অরনীকে?
– না। মানে তোমাদের জন্য তো এটা খুশির খবর। আত্ম*হ*ত্যায় প্ররোচনা ব্যাপারটা আসছে না।
– এজ ইফ আমি জেলে যাচ্ছি! আমি খু*ন করলেও আমাকে জেলে রাখতে পারবে না। আর এত বছর পর ওর বডি ও তো নেই।
– তা ঠিক।
– আমি বুঝতে পেরেছি, তুমি এভাবে এন্টারটেন করতে পারবে না।
– তো?
– ডার্ক রুমের মতো কিছু করি?
– কেমন?
– আমি যা বলবো তা করতে হবে।

জাহিদের খুব অস্বস্তি হচ্ছে। এর মধ্যেই সারা ওর পা এনে জাহিদের সামনে তুললো। জাহিদের চেহারা দেখে সারার হাসি পাচ্ছে।

– কী করতে হবে?
– কিস দিস।
– হাহ?
– তালু থেকে।

খুবই বড় ভুল করেছে জাহিদ এখানে এসে। কেনই বা আসতে গেল। এখন এসব করতে হবে। সারা খুব অট্টহাসি হাসছে। হাসতে হাসতে ও শুয়ে পড়লো,

– ডার্ক রুমে তো এসব করোনি।
– কী বলবো? নাকে খত দাও, নাকি সিগারেটের ছ্যাঁকা? লোক আনিয়ে তোমাকে মারার ইচ্ছেটাও আমার নেই।
– তো? এটা কী ডার্ক রুম হলো?
– কী চাও? প্রিয়মের মতো রে*প করবো? হাহাহাহ! ছেলেদের রে*প করা যায় নাকি?

জাহিদ এসে সারার পাশে শুয়ে পড়লো। সারা হাসতে হাসতে বলল,

– ফ্রি হচ্ছ আমার সাথে?
– না। তোমার সাথে আমি কখনো ফ্রি হতে পারবো না।
– কেন?
– তুমি প্রিয়মের সাথে যা করেছ। এরপর আমি আর তোমার সাথে ফ্রি হতে পারব না।
– ভদ্র ছেলে। আমার ভদ্র ছেলে খুব পছন্দ।

এই বলে সারা জাহিদকে সজোরে জড়িয়ে ধরল। এরপর জাহিদের শার্টের ভেতর হাত ঢুকিয়ে ওর শরীরে হাত বুলাতে লাগলো। সারার ঘনঘন নিঃশ্বাস জাহিদ কে অস্বস্তিতে ফেলছে। খুব বেশি দেরি হওয়ার আগেই জাহিদ সারাকে সরিয়ে দিয়ে অপর পাশে ফিরে গেল। সারা বুঝতে পেরে ওর সামনে এসে রেগে বলল,

– কী হয়েছে? আবার ডিসগাস্ট হচ্ছো? হোয়াট ডু ইউ থিংক আবাউট মি! আমি প্রস্টি*টিউট? আমি নোংরা!
– তা নয়।

জাহিদ উঠে বসলো। সারা খুব রেগে আছে। রাগে ওর চোখ ছলছল করছে। জাহিদ সারাকে সামলাতে নরম সুরে বলল,

– আমি আসলে বুঝতে পারছি না। তুমি না বললে ডার্ক রুম? ডার্ক রুমে তো টর্চার হতো। টর্চার মি।
– সো ইউ ওয়ান্ট টর্চার?
– হ্যাঁ।
– এভাবে ভালোবেসে জড়িয়ে ধরছি, তা ভালো লাগছে না?
– আমি তো স্কলারশিপ স্টুডেন্ট। জেনারেল কোটা। আমাকে এভাবে ভালোবেসে কেন জড়িয়ে ধরবে? তোমার ঘৃণা হবে না?
– ঘৃণা? সেটা তো তোমার হয়। ঐ অরনীই তোমার সব!
– আমার স্ত্রী। তোমার ও তো ফিয়ন্সে আছে।
– আছে, কিন্তু তুমি নেই।
– আমিই কেন?
– কারণ এখন পর্যন্ত কোনো পুরুষের সাহস হয়নি আমাকে রিজেক্ট করার। তোমার সাহস কী করে হয়?
– সেজন্যই?
– হ্যাঁ।
– দেন পানিশ মি।
– কী ধরণের পানিশমেন্ট চাও? সো ইউ ফাইন্ড প্লেজার ফ্রম পেইন? ম্যাসোসিস্ট? কিন্তু এখানে তোমাকে পানিশ করার মতো কিছুই নেই। তোমার এই শক্ত দাড়িওয়ালা গালে আমার নরম হাত দিয়ে থা*প্পড় মারতে ইচ্ছে হচ্ছে না। আর পুরো শরীর তো পুরনো আঘাত ভরা। ফাইয়াজ তো তোমার শরীরে আমার আঘাত করার মতো একটু জায়গাও রাখেনি।
– শারীরিক না, মানসিক। আমাকে মানসিক ভাবে আঘাত করো। এমন কথা বলো যাতে আমার কান্না পায়। আমি এখানে বসে কান্না করি। আর তুমি শান্তি মতো দেখো।
– হোয়াট রাবিশ! আর ইউ আ সাইকোপ্যাথ? আমি তোমাকে আজে বাজে কথা বলার জন্যে এখানে আনিনি।
– শাস্তি দিতে এনেছ। শাস্তি দাও। তা যেমনই হোক।
– ওকে। লুজার!

জাহিদ লুজার শব্দ টা শুনে হাসলো।

– কী হয়েছে?
– নতুন কিছু বলো। পুরনো জিনিস আর আমার গায়ে লাগে না।
– ওকে। তোমাকে একটা মেইল স্লা*ট লাগছে।

জাহিদ আবার ও হাসলো,
– একই কথা প্রিয়মকে ও বলেছিলে। আর কিছু জানো না?
– তোমরা এতো সাধু সাজো কেন? তুমি আর প্রিয়ম। কী ভালো মেয়ে সাজতো, আর ফাইয়াজের কথায় ওর সাথে শুয়ে পড়লো।
– ফাইয়াজকে তো তুমি বলেছিলে।
– হ্যাঁ, বাজি ধরে। ও যদি প্রিয়মকে ওর বেডে নিতে পারে দেন আমিও যাবো। ওর জন্য আমিও ফেঁসে গিয়েছিলাম। আজ এত বছর পর প্রিয়মের মতো তুমি আমার সামনে। সত্যি বলতে ভালোই লাগছে। তোমরা দুজন এত নীচে নেমেছ যে তোমাদের শরীর আমাদের দিয়ে দিচ্ছ। তোমাদের এত নীচে দেখে ভালো লাগছে।
– প্রিয়ম তো ফাইয়াজকে ভালোবেসেছিল। আর বাকি সবাই ,
– রে*প করেছিল। তুমি সেটা দেখেছ, কিছুই করোনি। (তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)
– পারিনি। তোমার তো সাহস হয়নি থাকার। আমি তো বাধ্য ছিলাম দেখতে।
– আজ তো কিন্তু বাধ্য নও। স্বেচ্ছায় এসেছ। লাইক আ মেইল প্রস্টি*টিউট!
– হাসাচ্ছো কেন?
– তো কী শুনতে চাও? তোমার চরিত্র তোমার খুব প্রিয় তাই না? আজকে আমার সামনে সব বিলিয়ে দিচ্ছ।

জাহিদ চুপ করে থাকে। এই মুহুর্তে জাহিদের নিজেকে খুবই নিকৃষ্ট মনে হচ্ছে। সারা জাহিদকে চুমু খেতে ওর খুব কাছে আসতে লাগলো। তখনই জাহিদ ঘাড় সোজা করে বলল,
– আমাকে তোমরা কেন অত্যাচার করতে?
– কারণ তুমি একটা ছোটলোক ছিলে। গরীব! আমাদের স্ট্যাটাসে যাও না।
– তাই?
– মাটিতে গিয়ে বসো।

দাঁতে দাঁত চেপে সারা এই কথা টা বলল জাহিদকে। জাহিদ ও ওর কথা মতো মাটিতে নেমে বসলো। ওকে মাটিতে বসে দেখে সারা ওর সামনে পায়ের উপর পা তুলে বসলো। এরপর ওর উপরের পা টা দোলাতে লাগলো। সারার দুলতে থাকা পা টা জাহিদের মুখে লাগছে। সেজন্য জাহিদ মাথা নিচু করে আছে ,

– এভাবেই। একদম গোলামের মতোই লাগছে।
– ধন্যবাদ।
– তুমি এখানে থাকার ই যোগ্য।
– ইয়েস ম্যাডাম।
– কল মি মাস্টার!
– ইয়েস মাস্টার।

সারা জাহিদের দিকে তাকিয়ে হাসলো। জাহিদ মাথা উঁচু করে বলে,
– ফাইয়াজ আমাকে কেন বাঁচিয়েছিল?
– তোমাকে না, ম্যাগনেফিসেন্ট কে। ম্যাগনেফিসেন্ট কে স্ক্যান্ডাল থেকে বাঁচাতে।
– কেন? আমি মরলে কী হতো?
– মিডিয়া আসতো। দুজন ছাত্র ছাত্রী আত্ম*হ*ত্যা করেছে। এইটা স্কুলের বদনাম না?
– প্রিয়ম তো আত্মহত্যা করেনি।
– তখন তো বলছিল করেছে। আমার তখনই সন্দেহ হয়েছিল। আমি ওর জুসে ঐ পিলটা যথেষ্ট পরিমাণে দিয়েছিলাম।

জাহিদ মাথা উঁচিয়ে তাকালো। কী কথা বলছে সারা? কোন পিল?

– কী হয়েছে?
– কোন পিল?
– মিসক্যারেজের। যেটা সানি তোমাকে দিয়েছিল। আমরা জানতাম তুমি দেবে না। তাই ফাইয়াজ আমাকে বলেছিল। আমি ওর লাঞ্চের সাথের জুসে সেই পিলের পাউডার দিয়েছিলাম। কিন্তু ও খায়নি। এখন বুঝলাম পরে খেয়েছিল হয়তো। ইশশশ! পরিমাণ এদিক ওদিক হয়েছিল তাই বেচারি একদম গেল।

কথা বলতে বলতে সারা জাহিদের দিকে তাকালো। জাহিদের চোখ বেয়ে অঝোরে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। জাহিদ অবাক হয়নি, সারার পক্ষে সম্ভব। তবে এভাবে ওর সামনে সব বলল।

– কী হয়েছে? কাঁদছো? এই তো তুমি কাঁদছো। কষ্ট হচ্ছে?

সারা খুবই তাচ্ছিল্যের সাথে এই কথা গুলো বলল। জাহিদ রেগে গিয়ে সারাকে বিছানায় ঠেকিয়ে ওর গলা চেপে ধরলো। সারা ওর দুই হাত দিয়ে জাহিদ কে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। ওর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। জাহিদের রাগ আজ তুঙ্গে। ও সারাকে আজ এখানেই মেরে ফেলবে। কিন্তু হঠাৎ ই জাহিদের ফোন বেজে উঠলো। জাহিদের জ্ঞান আসলো আর ও সারাকে ছেড়ে দিল। ছাড়া পাওয়ার পর সারা জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো। এরপর পানির বোতল নিয়ে পানি পান করতে লাগলো। জাহিদ ওর শার্টের বোতাম লাগিয়ে ফোনটা নিয়ে সারা ওকে কিছু বলার আগেই দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। বের হওয়ার পর জাহিদ রাগে ক্ষোভ হাঁটতে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে রিসোর্ট থেকে বের হয়ে আসে। অতঃপর একটি গাড়ি আসে ওর সামনে আর ও সেই গাড়িতে উঠে পড়ে। আজ ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। এই মুহুর্তে জাহিদের নাদিয়াকে খুব দরকার ছিল। ওর কোলে মাথা রেখে কাঁদতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে। নাদিয়া যদি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিত, তবে খুব ভালো হতো। এমন একটা পরিস্থিতি থেকে আসার পর ওর নাদিয়াকেই দরকার ছিল।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here