রুম নাম্বার ১০১,পর্বঃ- ০৩

0
789

গল্পঃ- রুম নাম্বার ১০১,পর্বঃ- ০৩
লেখাঃ- Rafsan Sydul

“আমার অস্তিত্ব নেই, নেই কোন ক্ষমতা। আমার গঠন আকৃতিও ভুলে গেছি তবুও আমার নিকট ভিক্ষা চাইছিস কেনো?”
রমিজ মিয়া শুনতে পায় কথাগুলো দেয়ালের আবছা আলোয়।
রমিজ মিয়া বলে “আমি বিভ্রান্ত! আপনার মায়াজালে বন্দি। এ মায়াজাল তো এ মহলেই। আমি মুক্তি চাইছি।”
বিভৎস শব্দের তরে উত্তর খুঁজে পায় রমিজ “আমি নিঃসঙ্গ নিঃসন্দেহে আমার একজন দাস দরকার, আর সেটা তোর চাইতে ভালো কেউ হবে না।”
“আমার মুক্তি না হলে আমার মৃত্যু দিন। এ যন্ত্রণা সহ্য করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি।”
“তোর রক্তে আমার পিপাসা মিটে না এখন আর। একটু তাজা রক্ত চাই, কুসুম গরম রক্ত”
“হুজুর! মহিমা… রমিজ মিয়া কথাটা বলার আগেই ওর কণ্ঠ আটকে যায় ছিটকে পারে দেয়ালের উপর। হাত-পা ছুটোছুটি করছে সে, নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। ঠিক তখনি গলায় হাত দিয়ে বসে বড় বড় নিশ্বাস ফেলে ফাঁপা কণ্ঠে বললো.. ” ক্ষমা করে দিন,”

“রমিজ চাচা এই রমিজ চাচা বাহিরে আসেন”
ধমকের সুরে ডাকছে মহিমা। রমিজ মিয়া যেন মুহূর্তেই স্বভাবিক। দরজা খুলে নরম কণ্ঠে বলল. “কি হয়েছে মামনী?”
“আমার সাথে ফাজলামো করছেন কি?”
রমিজ মিয়া কিছুই বুঝছে না, তবুও বললো “কি হয়েছে মামনী, আমার কি কিছু ভুল হয়েছে?”
“ভুল মানে? মশকরা করছেন? আমার নাস্তার মাঝে রক্তের পানিও দিয়েছে কে?”
“রক্ত?”
“হ্যাঁ! রক্ত”
“না মামনি এমনটা হতে পারে না, আমি তো জুস দিয়েছি।”
“আপনার কি মনে হয় আমি মজা করছি?”
” না তো। চলো তো দেখি কি আলব তাবল বকছো”
আমি আবল তাবল বকছি না চলেন আমার সাথে দেখাচ্ছি আমি বলেই হাঁটছে মহিমা। পিছে পিছে রমিজ মিয়া। সে জানে মহিমা দ্বিতীয় বার রক্তের চিহ্ন ও পাবে না। রমিজ মিয়া যার গোলাম সে চাইছে মহিমাও রক্তে আসক্ত হোক, নিস্তব্ধ অন্ধকারের সঙ্গী হোক। সে এ পৃথিবীর বুকের সমস্ত মায়া ত্যাগ করে একমাত্র রক্তের নেশায় ডুবে থাকুক।

মহিমা নিজের রুমে এসে দেখে সবকিছু ঠিক আছে রক্তের গ্লাসটাও আগের জায়গায় আছে কিন্তু রক্ত নেই। অর্ধেক গ্লাস জুস পড়ে আছে। মাথা চুলকাচ্ছে এখন। কি বলবে মহিমা রমিজ চাচাকে? রমিজ চাচা বুঝতে পারে তাই কিছু না বলে চলে যায় সেখান থেকে।

মহিমা গ্লাসের দিকে একনজর তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ আগেও যে এ গ্লাসটাতে রক্ত ছিল কিন্তু কীভাবে? আমি নিশ্চিত এটাতে রক্তই ছিল। নাহ্ মাথাটা ঘুরাচ্ছে, আর একটু বিশ্রাম নিলে ততোটা ক্ষতি হবে না। দরজা জানালা সবকিছু বন্ধ করে ঘুমিয়ে আছে, ঘুমায়নি ঘুমের মত চোখ বুঝে আছে। ভাবছে এ একশো এক নাম্বার রুমের নাম করন নিয়ে। সম্পূর্ণ বাড়িতে তো সাতটা না আটটা রুম হবে। বাকিগুলো কোথায়? হুট করেই তো এ রুমের নাম একশো এক হয়ে যায়নি, আর এ নীলচে রঙের পাথরগুলো পাগলের মত ডাকছে। অস্বস্তি লাগছে তবুও খারাপ লাগেনি এ রুমটা। রাতের ঘুমটা সবচেয়ে ভালো কাটছে। অল্পতে তৃপ্তি আসে।

ঠিক তখনি নিজের চিন্তা ভাবনায় তালা পড়েছে। মন মস্তিষ্ক থমকে গেছে, গেছে সমস্ত শরীরের নড়াচড়ার ক্ষমতা। কথা বলতে চেষ্টা করেও কথা বলতে পারছে না মহিমা। অনুভব হচ্ছে কোমরে কারো ঠোঁটের স্পর্শ, শীতল স্পর্শে নারীর সম্পৃক্ততা নড়ে উঠছে। মহিমা বুঝতে পারছে না শরীরের এমন অনুভূতি। হৃদয়ের গভীরে স্পর্শ করছে এ অনুভব।

দুপুর গড়িয়ে আসছে হঠাৎ করেই সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে, মহিমা কত পুরুষের সাথে মিশেছে তা সবকিছু মনে থাকলেও এ অনুভূতি অদৃশ্য। কেউ নেই এ রুমে আলোবাতাস সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মনের ভ্রান্তি ভেবে ভুলে যাচ্ছে।

তারপর কেটে যায় দুদিন। এ বাড়ির প্রতি কোনো মনযোগ নেই তার। সারাদিন স্কুলে আর অন্তুর স্পর্শে সময় যায় মহিমার। রাতে ঘুমানোর পরে কি হয় সেটা নিয়ে ভাবছে না মহিমা। এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। সেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বুকের উপর থেকে রক্ত অনুভব করে। বিছানার চারপাশে রক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। রক্তের রহস্য খোঁজে নিজের পারসোনাল সমস্যার কথা চিন্তা করে তার ও সময় হয়নি। কিছু তো চলছে এ বাড়িতে।
জানতে হবে।….

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here