গল্পঃ- রুম নাম্বার ১০১,পর্বঃ- ০৪
লেখা:- Rafsan Sydul
মহিমার বিছানার চারপাশে রক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। রক্তের রহস্য খোঁজে নিজের পারসোনাল সমস্যার কথা চিন্তা করে তার ও সময় হয়নি। কিছু তো চলছে এ বাড়িতে। জানতে হবে এ রহস্য।
বিছানা ছেড়ে উঠে বাথরুমে গিয়ে নিজেকে পরিষ্কার করে নেয় মহিমা। প্রতিদিনের মত আজও নাস্তা রাখা আছে টেবিলের উপরে দুটো রুটি একটি ডিম, আর গ্লাস ভর্তি রক্ত। মহিমা ওটার দিকে চোখ বন্ধ করেও তাকায় না। মনের ভিতর কি সকল উদ্ভট ভ্রান্তি চলছে। মাঝে মাঝে মনের খেয়ালে সে ভাবে অদৃশ্য কোনো শক্তি তার যৌনতা নিয়ে খেলছে। পরে সে নিজেই ভাবে অদৃশ্য কোনো শক্তি জীবন নিয়ে খেলবে নিশ্চয়ই যৌনতা নয়। তাদের এ আসক্ত নেই। তাদের অনুভূতি নেই। মানুষের মাঝে যে ফিলিংস তৈরি হয় তা তাদের মাঝে নেই।
কিন্তু তারা? তারা কি নিজেকে কখনো মৃত মনে করে?
“না! তারা এটা কখনো মানতে চায় না যে তারা মরে গেছে। তারা ভাবে হয়তো কোনো দুঃস্বপ্নের মাঝে আছে। নেহাৎ সত্য জেনেও তারা বিশ্বাস করতে পারে না।”
মহিমা নিজেকে গুছিয়ে রুম থেকে বাহির হয়ে যখন রমিজ চাচার রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল তখন কারো কণ্ঠ শুনতে পায় মহিমা। চুপটি করে দেয়ালের এপাশে কান পেতে শুনতে থাকে কথাগুলো। একটু শুনেই স্তব্ধ মহিমা। রমিজ চাচার রক্ত চুষে নিচ্ছিল ছায়াটা, আর রমিজ মিয়া করুন কণ্ঠে বলতে ছিল। “হুজুর আমার সমস্ত রক্ত নিয়ে হলেও মুক্তি দিন এ মানুষের খোলস থেকে”
“তোর মুক্তি নেই। আমার অস্তিত্ব জানা মানুষ শুধু তুই আছিস। তোকে মুক্তি দিলে আমিও যে হারিয়ে যাব।”
কথাগুলো শুনেই মহিমা পিছু হাটে। ছুটে যায় গেইটের কাছে। কিন্তু হঠাৎ থমকে দাঁড়ায়। নিজের মনকে স্থির করে। এ মহলে অলৌকিক কিছু ঘটছে জানতে হবে আমার। এ ভাবনা ভেবেই মহিমা আটকে যায়। কিন্তু মহিমা কি জানে তার রক্তের নেশা বেঁধে গেছে? রোজ রাতেই তার রক্ত সারা বিছানায় ছিটানো থাকে কেনো? এগুলো তার অগোচরে বেড়ে উঠছে। তার মনকে অন্য কেউ নিয়ন্ত্রণ করছে।
গেইটের বাহিরে সেই বিদেশি ছেলেটাকে ঘুরঘুর করতে দেখা যাচ্ছে কিছুদিন থেকেই। মহিমা টার্গেট করেছে তাকে। তবুও কিছু বলেনি, হয়তো ভুতুড়ে গল্পের প্রধান কাহিনি এ বাড়িটাকে নিয়ে। তাকে লেখক মনে হচ্ছে মহিমার। তাই সে এ বাড়িটার আসেপাশে ঘুরে, সমস্ত কিছু অনুভব করার জন্য, গভীর থেকে চিন্তা করে লেখার জন্য।
মহিমা এখন প্রায়ই ঘরের ভিতরে থাকে। অন্তুর সাথে ততোটাও কথা বলতে সময় পাচ্ছে না। কিছু খুঁজতে থাকে সারাদিন। পায়না সে। একশো এক নাম্বার রুমের রহস্য। যদিও সম্পূর্ণ বাড়িটায় পনেরোটি রুম আছে দোতলায় দশটি নিচতলায় বড় বড় পাঁচটি, এ পনেরোটি রুমের মধ্যে এ রুমের দরজায় একশো এক লেখা থাকলেও বাকিগুলো সারিবদ্ধভাবে এক থেকে চোদ্দ নাম্বার। প্রথম ফ্লোরের একশো এক নাম্বার রুমের পাশেই চারটে রুম, তালাবদ্ধ করা। বাহিরের দেয়ালগুলো এখনো প্রথমের মত, কোনো শেওলা জন্মায়নি। না জানি কতশত বছর এ মহলের এসব রুমে কেউ প্রবেশ করেনাই।
মহিমা আজ সম্পূর্ণ মহলটা ঘুরে ঘুরে দেখছে কোথাও কিছু নেই। কয়েকটি রুমে তালা ঝুলানো আর কয়েকটি রুম খোলা। খোলা রুম গুলো একদম ফাকা, ভিতরে কোনো কিছুই নেই। মহিমা খুঁজতেছিল এ মহলের রহস্য, গল্পের মত সেইসব বই যেগুলোতে এ মহলের আত্মকাহিনী লেখা থাকবে। থাকবে অজস্র মানুষের কষ্টের কথা। কিন্তু এসবের কিছুই মিললো না এসব রুমে। তার কৌতূহলী মন উদ্বিগ্ন হয়ে ঘুরে সারা রুম। যদি কিছু মিলে সেই আসায়। ভয় করছে না ওর। অর্ধ নগ্ন শরীরে ঘুরছে। যদিও কোনো মায়াবী শক্তির ছোয়া থাকে তার নগ্ন দেহের মোহে পড়বেই। যেমনটা শুরু থেকেই হয়ে আসছে। মহিমা নিজেকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করছে, মহিমা জানে তারা ভাবে তারা স্বপ্ন দেখছে, তাদের অনুভূতি ও আছে তারা মনে করে, সেই ভাবনায় মহিমা ঘুরছে।
অন্তু দিশাহারা মহিমার খোঁজ না পেয়ে। যান্ত্রিক শহরে মহিমা অচল, মোবাইলের সুইচ অফ করে রেখেছে। অন্তু অন্য কোনো উপায় না পেয়ে ছুটে আসে মহলের সামনে। গেইটের কাছ থেকেই দেখা যায় মহিমার ছায়া দেয়ালে হাঁটছে, অন্তু এর আগে এ মহলে আসতে সাহস করত না, শহরে প্রচলিত কথাগুলোর জন্য, তবে আজ সে বাঁধা অতিক্রম করে বুক ফুলিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে ফেলে অন্তু। দৌড়ে নিজের ভয়কে জয় করে মহলের ভিতরে প্রবেশ করতেই সামনে পড়ে মহিমা, চোখে চোখ মিলে গেছে দুজনের, আতংকিত মহিমা অন্তুর চোখে তৃপ্তির অশ্রু। সামনে দাঁড়িয়ে এক যুবতী অর্ধনগ্ন হয়ে, ভেঙে পড়ছে অন্তু, নিজেকে সপে দিয়েছে মহিমার দিকে, মাতাল চোখে মহিমার দিকে এগোচ্ছে অন্তু আতংকিত মহিমা যৌনতার পাগল হয়েও ভয় পাচ্ছে, দূরে সরে যাচ্ছিল কোমড় হাত দিয়ে নিজের বাহুর সাথে জড়িয়েই কপালে ঠোঁটের স্পর্শে চোখ বুঝে ফেলে মহিমা।
কেঁপে ওঠে সম্পূর্ণ মহল। ধর্ষিত হতে যাচ্ছে আরও একটি দেহ। যে রোজ ধর্ষিত হয়েও সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ সে আবারও কলঙ্ক জড়াতে যাচ্ছে নিজ দেহে স্ব-ইচ্ছায়। এ মহলে যে একশো একটি ধর্ষিতা নিজ কলঙ্ক নিয়ে অপেক্ষা করছে……!
“চলবে”
(ভুল বানান গুলো সংশোধন করে নিবেন)