গল্পঃ- রুম নাম্বার ১০১,পর্ব-০১
লেখাঃ- Rafsan Sydul
একশো এক নাম্বার মেয়েকে ধর্ষন করে জমিদার মহলের গুপ্ত কোঠায় ফেলে আসা হয়। রক্তাক্ত শরীরে একশো একটি মেয়ে। আঁশটে গন্ধ বের হচ্ছে তাদের শরীর থেকে। সেই পনেরো দিন আগে ছিয়াশি জন যুবতী মেয়েকে একসাথে গোসল করানো হয়েছিল, আর আজ শায়লাকে মিলিয়ে একশো এক। শেষ গোসলের সময়। সবকয়টি মেয়েকে একসঙ্গে গোসল করিয়ে তোলা হবে জমিদারের মরণ কোঠায়। যে কোঠায় জমিদার রুশা একশো এক বছর থেকে মৃত শুয়ে আছে, সে কোঠায়। তার ধারনা জমিদারের আত্মা এ যুবতীদের যৌনতায় মুগ্ধ হয়ে আমৃত্যু দান করবে তাকে। সে তখনকার শ্বাশত আমলের জমিদার ‘বাহাদুর’সাহ্ ছিলেন। তারপর কি হয়েছে কেউ জানেনি আজও, বাহাদুর জীবিত কিংবা মৃত কেউ জানেনা। মাঝে মাঝে এ মহলের চারদিকে ঘন অন্ধকারে ছেয়ে আসে, তখন মৃত্যুরা ভর করে এ গ্রামে। আপনি যেহেতু এ জমিদার মহলে থাকতে এসেছেন তাই এতটুকু বলা আমরা কর্তব্য।
‘তারপর কি হয়েছে কেউ কি জানেনি?’ উৎসুক কণ্ঠে জিগ্যেস করে মহিমা। মহিমা সাইকোলজি বিভাগের ছাত্রী। প্রবল ঝোঁক তার উত্তেজিত জীবনের প্রতি। সবসময় একটা উত্তেজনা পূর্ণ জীবন চাইছিল সে। যার জন্য সে বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়াচ্ছে কিছু খোঁজার জন্য। বাবার অঢেল টাকা আছে উড়াচ্ছে সে। তবে একেবারে বেকার নয়, সে এখানে এসে একটা চাকরিও পেয়েছে স্কুলে। চার-পাঁচ বছরের ছোট ছোট মেয়েদের দেখাশোনার। বেশ পছন্দের ছিল কাজটি। মহিমার মনে সংকোচ সৃষ্টি হয়নি দারোয়ান রমিজ মিয়ার কথায়। কেননা সে এ মহলের দারোয়ান, সে থাকতে পারলে মহিমা কেনো পারবে না? পাশেই আরও দালানকোঠা নির্মাণ হয়েছে। তাতেও লোকজনে ভরপুর এ শহর। তবে মহলের পিছনের দিকটা ফাঁকা রয়েছে বহুবছর ধরে। কেউ সে জায়গায় আসা যাওয়া করেনা বললেই চলে। মহিমা আর কিছু জানতে পারল না রমিজ মিয়ার কাছ থেকে। তাড়াহুড়ো করে মহিমার লাগেজ প্রধান চৌকাঠের ভিতরের তৃতীয় সারির একশো এক নাম্বার রুমে তাকে দেওয়া হয়। প্রধান দরজার কাছেই এ রুম। সহজেই বাহিরে আসা-যাওয়া করা যায় এ রুম থেকে। এ মহলের সবচেয়ে সাজানো গুছানো এ রুম। একসময় এটা জমিদারের জলসা ঘর হিসাবে ব্যবহৃত হত। এখন সেটাকে ইটের দেয়ালে একটি রুম করা হয়েছে। মার্বেল পাথরে সৃষ্টি করেছে এক নক্ষত্র। একশো এক বিচিত্র নক্ষত্র। মাহিমার কাছে তাই মনে হলো।
মার্বেল পাথরগুলো একেকটা জীবন্ত নক্ষত্র মনে হচ্ছিল। তাছাড়া কিছুই নয়।
নিজের লাগেজ থেকে একে একে জামাকাপড় সব বের করে গুছিয়ে রাখে। জামাকাপড় গুছানোর সময় চোখে বাঁধে গোলাপি শর্ট গেঞ্জিটার দিকে। গেঞ্জিটায় মহিমাকে অতি সুন্দরী যৌন আবেদনময়ী মনে হয়। যে কোনো পুরুষের নজর মহিমার দিকে আকৃষ্ট করার জন্য এতটুকু পোশাক ই যথেষ্ট। দেহে নতুন যৌবন। বয়ত মাত্র পঁচিশ। মহিমার চিন্তাধারা অন্যান্য মেয়েদের থেকে আলাদা। তাই সে একা।
বিলম্ব না করে মাহিমা ওয়াশরুমের ভিতরে ঢুকে গেঞ্জি আর জিন্স পড়ে বাহির হয় রাস্তায়। সমস্ত রুম এলোমেলো করে এসেছে মহিমা। বাহিরের মলিন বাতাস নিজ অঙ্গে প্রাণপণে মেখে নিতে। কিন্তু ও কি জানতো ওর এলোমেলো রুমের মাঝে অন্য কেউ আছে যে এলোমেলো রুমকে সুন্দর করে গুছিয়ে দিবে? কখনো তা কল্পনাও করেনি মহিমা।
শহরের মাঝেই এ মহল। চারদিকে উচু ইমারত চোখ ফিরে মহলকে দেখে। ততোটাও বড় নয় এ মহল। কংক্রিটের বাঁধা দোতলা বাড়িটি মহল ছিল তখনকার সময় থেকেই। সামনের দিকে অনেকটা জায়গা খালি যেখানে বাগান করার পরিকল্পনা করে রাখছে মহিমা।
এক রেস্তরাঁয় বসে আছে মহিমা। খাবারের অর্ডার করে তাকিয়ে আছে সামনে থাকা ছেলেটার দিকে। সাদা চামড়ার এক বিদেশি এ দেশে এসেও রেস্তোরাঁয় কাজ করছে? বেশ অদ্ভুত! অদ্ভুত তার পোশাক। একটা তোয়ালের মত কিছু একটা পেচিয়ে কাজ করছে সে। কৌতূহল ছিল তাকে ডাক দিয়ে কথা বলার। সব কৌতূহল প্রশ্রয় দিতে নেই। কৌতূহল দামিয়ে রেখে খাবার খেয়ে চলে আসে মহিমা। বুকের দিকে তাকিয়ে থাকে রাস্তার যুবক থেকে দাঁত পড়ে যাওয়া বুড়ো ও তাকিয়ে আছে মহিমার দিকে। সামনেই দাঁড়িয়ে আছে অন্তু। মহিমার সদ্য তৈরি হওয়া ভালোবাসার মানুষ। প্রতিটি নতুন শহরে নতুন নতুন ভালোবাসার মানুষ তৈরি করা তাদের সাথে মজা নেওয়া এটা মহিমার একটা নেশায় পরিনত হয়েছে। অন্তু কাছে আসতেই মহিমা তার মোহ ভরা ঠোঁটের সমস্ত কৌতূহল কালো ঠোঁটের স্পর্শে মিশিয়ে দিয়েছে।…
“নতুন বাসা কেমন লাগলো মহিমা?”
“বেশ এক্সাইটিং একটা বাসা জানো? কেউ নেই সে রুমে। রুম বলতে ভুল হবে সমস্ত বাসাটাই ফাঁকা। শুধু আমার। তবে তুমি চাইলে তোমার ও হতে পারে।”
“আমার হবে কীভাবে? ”
“চলে এসো আমার কাছে, দুজনে একসাথে।”
“বিয়ের আগেই?”
“আমরা তো বিয়ে করবোই”
মাথা চুলকাচ্ছে অন্তু। এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করার সখ নেই তার। বুঝতে পারে মহিমা। অন্তুর দিকে তাকিয়ে মহিমা আবার বললো.
“আরে বাবা এত ভয় পাচ্ছ কেনো? থাক আসতে হবে না। তবে মাঝে মাঝে এসো বন্ধুর বাসার নাম করে।”
অন্তুর মনে অনন্দের জোয়ার। না চাইতেই অনেক কিছু। এ সুযোগে অন্তুও ব্যবহার করছে, কোমড়ে হাত দিয়ে হাঁটছে এ শহর।
ক্লান্ত হয়ে রাতে যখন বাসায় ফিরে মহিমা, বিদ্যুৎ ছিলোনা তখন। চারদিকে অন্ধকার প্রধান দরজার সামনে অনেকগুলো মোমবাতি জ্বালিয়ে দিয়েছে রমিজ মিয়া। আজ চল্লিশ বছর এখানে কাজ করছে। প্রায়য়ই তাকে এ দরজার সামনে মোমবাতি জ্বালাতে হয় নাহয় সে রাতে নিজের রুমে থাকতে পারে না। অদৃশ্য কেউ একজন তার শরীরে প্রচন্ড পরিমানে আঘাত করে। রক্তাক্ত হয়ে যায় শরীরের বিভিন্ন জায়গা সকাল হতেই সব শেষ হয়ে যায়। এর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনেকবার চেয়েছে এ শহর ছেড়ে চলে যাবে। যতবার ই চেয়েছে ততোবারই ব্যার্থ হয়েছে। তাই আর চেষ্টা করে না রমিজ মিয়া।
মহিমা প্রধান দরজার ভিতরে প্রবেশ করতেই কিছু একটা ঠান্ডা বাতাস ছুয়ে গেছে তাকে। হাঁটুর একটু উপরে শীতল কিছু অনুভব করছে উপরের দিকে উঠছে। সমস্ত শরীরের পশমগুলো কাটা দিয়ে ফুটছে এমন সময়…
(চলবে)