রুম নাম্বার ২২২,দ্বিতীয় পর্ব
লেখা – হিমু জামান
ভাইয়া বাবা মা আমাকে সন্ধ্যার পর কখনো বাহিরে থাকতে দেন নি।চলো চলে যাই।এই কথা বলার পর ভাইয়া আমার সাথে যে ব্যাবহার টা করলো যেটা আমি কখনো কল্পনা করতে পারি নি।
ভাইয়া আমার বুকের নরম মাংসপিণ্ডতে হাত দেয়ার চেষ্টা করলো।আমি জোরাজোরি করে কোনোভাবে ছুটে একটা রিকশা নিয়ে বাড়িতে চলে যাই।বাড়িতে যেয়ে দড়জা লাগিয়ে কান্না করছিলাম। এমন সময় আম্মু এসে ডাক দিলেন। আমি চোখ মুছে দড়জা খুলে আম্মুকে ভেতরে আসতে বললাম। আম্মুকে সব খুলে বললাম। আম্মু কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাচ্ছিলো না।আম্মু বলে আকাশ এমন ছেলে হতেই পারে না।
আমি কিছু না বলে রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে গেলাম।
রাত যখন প্রায় ২ টা বাজে তখন দড়জায় কে যেনো নক করছে।আমি ভয় পেয়ে গেলাম।এতো রাতে কে আসলো আবার।দরজা খোলা মাত্রই দেখি আকাশ ভাইয়া।আর সাথে সাথে ভেতরে ঢুকে আমার কাছে হাত জোর করে বলে যেনো চিল্লাচিল্লি না করি।আমি আকাশ ভাইয়াকে বলি চিল্লাচিল্লি করবো না যদি এই মূহুর্তে আমার রুম থেকে বের হয়ে যাও।
আকাশ ভাইয়া কোনো কথা না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
পরের দিন আম্মুকে বললাম চলো আম্মু আজকেই চলে চাই।আম্মু ভেবে বললো আচ্ছা ঠিক আছে তর আব্বুকে বলি।আজকেই যাওয়া যাক।আজ বাসায় চলে আসলাম। মন ভালো করার জন্য যেখানে গেসিলাম, সেখানে দেখি মন আরও খারাপ হয়ে আসলো।কিছুদিন এভাবেই চলে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে রেজাল্ট দেয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে।যতই সময় ঘনিয়ে আসছে মনের মধ্যে একটা ভয় কাজ করছে।আমার মা বাবা যদি জানেন যে, আমি এক বিষয়ে ফেইল করেছি।তাহলে আমার বাবা মা আমাকে মেরেই ফেলবে।আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।আসলে আমার জীবনে এমন মূহুর্ত কখনো আসে নি।
আজ এস,এস,সি পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে।বাবা মা খুব টেনশনে আছেন।যদি গোল্ডেন না আসে।তাহলে সমাজে মুখ দেখাবে কি করে।আর আমি টেনশনে আছি যদি সত্যিই ফেইল করি এক বিষয়ে তাহলে কি করবো।
অবশেষে আমার রেজাল্ট আমি জানলাম। আমি এক বিষয়ে এ ফেইল করেছি।অনেক কান্নাকাটি করে আব্বু আম্মুর সামনে হাসিমুখে যেয়ে বললাম আমি গোল্ডেন জি,পি,এ,ফাইভ পেয়েছি।আব্বু আম্মু খুশি হলেন খুব।আশেপাশের বাসার সবাইকে মিষ্টি খাওয়ালেন।কিন্তু আমি যে কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিলাম না।সবসময় মনে একটা অশান্তি ভয় কাজ করতো।আমি তো ফেইল করেছি। এইদিকে ভর্তি হওয়ার সময় এসে গেছে। কিভাবে ভর্তি হবো।আমার বান্ধবীরা সবাই ভর্তি হয়ে যাচ্ছে।আমাকেও তো কোথাও না কোথাও ভর্তি হতে হবে।নইলে আমার আব্বু আম্মু সত্যি টা জেনে যাবেন।আর আমাকে মেরেই ফেলবে।
অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম।আমার মামাতো ভাই আকাশ ভাইয়ার সাথে ব্যাপারটা শেয়ার করি।যদিও কিছুদিন আগে সে আমার সাথে একটা খারাপ ব্যাবহার করেছে।কিন্তু এখন আমাকে অপারগ হয়ে তার সাহায্য নিতেই হবে।
আকাশ ভাইয়াকে সব খুলে বললাম। বললাম আমাকে কোথাও না কোথাও ভর্তি হতেই হবে।প্লিজ ভাইয়া তুমি ব্যাবস্থা করে দাও।
ভাইয়া আমাকে বললো আমার সকল কাগজ পত্র নিয়ে নারায়ণগঞ্জ চলে যেতে।উনার পরিচিত একজন বড় ভাই আছে যিনি একটা নার্সিং কলেজে ভর্তি করিয়ে দিতে পারবেন।
আমি ৩ দিন পরেই সকল কাগজ পত্র নিয়ে চলে যাই আকাশ ভাইয়ার কাছে।ভাইয়া আমাকে দেখে বললো আজ তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
আমি ভাইয়াকে বললাম ভাইয়া প্লিজ আমি যেটার জন্য এসেছি সেটা করো।আমাকে ওই লোকটার কাছে নিয়ে চলো।ভাইয়া বলছেন এতো অস্হির কেনো যাবো নিয়ে যাবো।একটু ধৈর্য ধরো।ভাইয়া কাকে যেনো কল দিয়ে বললো ভাই চলে এসেছে নিয়ে আসবো।কিছুক্ষণ পর আমাকে বললো চলো বোন যাই।আমার সাথে আসবে।কোনো কথা বলবা না।যে ভাইয়ের কথা বলছিলাম উনার বাসায় যাবো।আমি বললাম ভাইয়া বাসায় যেতে হবে কেনো।একটা রেস্টুরেন্টে উনার সাথে কথা বললেই হয়।ভাইয়া বললো আরে নাহ এইসব কথাবার্তা রেস্টুরেন্টে বলা চলে না।আসো আমার সাথে।
আমি ভাইয়ার পিছু পিছু যাচ্ছি। ভাইয়া একটা সি,এন,জি ভাড়া নিলো।সি,এন জি দিয়ে কিছুক্ষণ যাওয়ার পর ভাইয়া নামতে বললো। মেইন রাস্তার পাশ দিয়ে একটা ছোট রাস্তা ভেতরে চলে গেসে।রাস্তাটা খুব নির্জন নিরিবিলি। ভাইয়া আমাকে বললো আমার পিছু পিছু আসো। কোনো কথা বলবে না।আমি ভাইয়ার পিছু পিছু যাচ্ছি।প্রায় ৭-৮ মিনিট হাটার পর একটা বিল্ডিং দেখতে পেলাম।খুব নির্জন জায়গায় বিল্ডিং টা।আশেপাশে আর কোনো বিল্ডিং নেই।চারতলা বিশিষ্ট বিল্ডিং। আমাকে নিয়ে ভেতরে গেলো।ভেতরে একটা লোক চেয়ারে বসে আছে।সামনে একটা টেবিল। লোকটা আমাকে বললো বসো বোন।বলো কি করতে হবে তোমার জন্য।
আমি বললাম ভাইয়া আপনার নামটা জানতে পারি।লোকটা বললো নাম জানতে হবে না।মানুষের উপকার করে থাকি আমি।এবার তোমার জন্যও কিছু করতে চাই বোন।এই বলে লোকটা আমার কাগজ পত্র নিয়ে বললো আমি কাগজগুলো দেখছি।তুমি টেবিলে রাখা খাবার থেকে খেয়ে নাও।আমি না করলাম। কিন্তু লোকটা বললো আরে খাও বোন। জার্নি করে এসেছো।নিশ্চয়ই ক্ষুধা পেয়েছে। খেয়ে নাও বোন।
এবার আর না করতে পারলাম না।অল্প কিছু খাওয়ার পর দেখলাম চোখ কেমন ঝাপসা হয়ে আসছে।আমি উনাদের ঝাপসা দেখতে পাচ্ছি।বারবার ভালো করে উনাদের দেখার চেষ্টা করছি।কিন্তু আরও ঝাপসা হয়ে আসছে। তারপর আর কিছু বলতে পারি নি।
হঠাৎ চোখ খুলে যা দেখতে পেলাম তা কল্পনার বাহিরে ছিলো।
চলবে……..