রুম নাম্বার ২২২,৪ শেষ পর্ব
লেখা -ঃ হিমু জামান
আমি শুধু আম্মুকে বলেছিলাম আম্মু আমি অনু।আমাকে এখানে একটা রুমে বন্দী করে রেখেছে। আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও।তারপর থেকে শুরু হলো আমার জীবনের আরেকটা কালো অধ্যায়।
আমি বাথরুম থেকে বের হয়ে আম্মুর নম্বর টা কল লিস্ট থেকে ডিলিট করে মোবাইলটা আগে যেখানে ছিলো সেখানে রেখে দেই।তারপর অপেক্ষা করতে থাকি কখন ঘুম থেকে জাগ্রত হবেন উনি।
প্রায় ঘন্টা খানেক পর উনি ঘুম থেকে জাগ্রত হলেন।আমাকে বলছে আজ শরীরটা খুব ক্লান্ত। বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না।এখানেই থেকে যাবো।তোর ও ভালো হবে একা একা ভয় পাবি না।আমি চুপ করে থাকলাম কিছুক্ষণ। লোকটা বললো থাক তুই এখানে। আমি বাহিরে থেকে আসছি।তোর জন্য আরেক সেট জামা নিয়ে আসি।এইগুলো ময়লা হয়ে গেসে।তারপর উনি তালা লাগিয়ে বের হয়ে গেলেন।
আমি শুধু ভাবছি এখান থেকে কখন বের হবো।সন্ধ্যায় উনি আসলেন রুমে।এক সেট নতুন জামা দিয়ে বললেন এগুলো পড়ে নে।আমি পড়তে চাইলাম না।উনি একটা থাপ্পড় দিয়ে বললেন দেখছিস না এগুলো ময়লা হয়ে গেসে।দুইদিন পর তো তোর কাছে আসতেই ঘেন্না লাগবে।আমি বাথরুমে যেয়ে জামাটা পড়ে নিলাম।বাহিরে আসার পর উনি বলছেন বাহ তোকে তো এই জামাটায় বেশ লাগছে।আজ তোর সাথে ফুর্তি ও ভালো জমবে।এই কথা বলার পর বাহির থেকে কে যেনো দড়জা সজোরে ধাক্কা দিচ্ছে। মনে হয় কেউ এসেছে।
লোকটা দরজা খুলতে চাইলো না। আর আমাকেও খুলতে দেয় নি।উল্টো আমার হাত পা খাটের সাথে বেঁধে দিলো।
দরজা অনেক ধাক্কাধাক্কি করার পর ভেঙে ভেতরে কয়েকজন পুলিশ প্রবেশ করলো। এবং সাথে সাথেই জানোয়ারটাকে ধরে ফেললো। আর একজন মহিলা পুলিশ এসে আমার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিলো।আর আমাকে হাতে ধরে বাহিরে নিয়ে আসলো মহিলা পুলিশ টি।বাহিরে বের হওয়ার সময় রুমের দিকে পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলাম রুমের নাম্বারটি ছিলো ২২২।
তারপর আমাকে থানায় নিয়ে আসা হলো।একদিন রেস্ট দিলো আমাকে।পরের দিন ভোর হতেই দেখলাম সূর্যের আলো রুমে এসেছে। অনেকদিন পর সূর্যের আলো দেখতে পেলাম। সকাল দশটার দিকে পুলিশ জিজ্ঞাসা শুরু করলো আমায়।অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে।কিছু কিছু বিষয় যেগুলো বলার নয় সেগুলো ও বলতে হয়েছে। কিছু করার ছিলো না আমার। জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে আমায় হসপিটালে ভর্তি করা হলো।সেখানেও ডাক্তাররা অনেক কিছু জিজ্ঞেস করলো।আর কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করলো।হসপিটালে কিছু ট্রিটমেন্ট ও করেছিলো আমার।কারণ শরীর অনেক দূর্বল ছিলো।যেখানে আগে আমার ওজন ছিলো ৫০ কেজি সেখানে জানোয়ারটার অত্যাচারে ওজন এসেছে ৩৮ কেজিতে।কয়েকদিন হসপিটালে থাকার পর আবার আমাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হলো।আবারও সব কিছু জিজ্ঞেস করে অবশেষে আমার আব্বু আম্মুকে বললো আমাকে বাসায় নিয়ে যেতে।
বাসায় যাওয়ার পর অনেকেই আমাকে দেখতে আসে।অনেকে অনেকরকম কথা বলতে থাকে।কিছুই যে বলার ছিলো না আমার। সব কিছু শুধু শুনেই যাচ্ছিলাম।আর সবার দিকে তাকিয়ে থাকি।কোনো কথা বলি না।আজ আমার কয়েকজন স্কুল ফ্রেন্ড এসেছে। ওরাও আমাকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করছে।কিছুই বলতে পারছিলাম না।
এইদিকে আমার এই সর্বনাশের পেছনে আসল লোকটা আকাশ ভাই পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আর যে আমায় এতো অত্যাচার করলো ওই জানোয়ারটার যাবৎ জীবন জেল হলো।
আম্মুর কাছে শুধু জিজ্ঞেস করেছিলাম যেখানে আমাকে বন্দী করে রেখেছিলো সেখানে পুলিশ পৌঁছালো কি করে।আম্মু বলেছিলো ওই লোকের মোবাইল নাম্বার ট্র্যাক করে লোকেশন এ গেসিলো।
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।
.
একটা জীবন্ত লাশের মতো চলে যাচ্ছে আমার জীবন। কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না।সারাদিন রুমেই থাকি। খাওয়ার সময় হলে কিছু খেতাম।এলাকায় কোনো বিয়ের অনুষ্ঠান হলেও আমি যাই না।কারণ আশেপাশের লোকজন বলতো আমার কোনোদিন বিয়ে হবে না।সত্যিই তো কে করবে আমাকে বিয়ে।সবকিছু জেনে আমাকে বিয়ে করবে এমন পুরুষ কি আছে।
সমাপ্তি
বিশেষ দ্রষ্টব্য -[এই অনুর মতো অনেক অনু রয়েছে আমাদের আশেপাশে । হয়তো আমরা তাদের জীবনের গল্পটা জানি না। সকল বাবা মায়ের প্রতি আমার একটা অনুরোধ দয়া করে আপনারা আপনাদের ছেলেমেয়েদের উপর এতোটা কঠোর হবেন না যতটা কঠোর হইলে ছেলেমেয়েরা ভয়ে একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবে।]