“রূপগঞ্জের রূপসী”
পর্ব- ১৯
(নূর নাফিসা)
উৎসর্গে – Imran Mahmudul
.
.
পরদিন নাফিসা সাভার চলে এসেছে। বিয়ের দুতিনদিন আগে শান্তা আপু ও পাবেল ভাইয়া নাফিসার বাসায় চলে আসবে। সুমি আপু, পারভেজ ভাইয়া ইমরানের পরিবারের হয়ে বেইলি রোডে চলে যাবে। আংকেল না থাকায় আরোশীর দাদা-দাদিও বেইলি রোড চলে যাবে। সেখানেও তো একজন মুরুব্বির প্রয়োজন আছে তাই।
বিয়ের দুদিন আগে,
এমনিতে ইমরান প্রতিদিন ই ফোন করতো। নাফিসা মাঝে মাঝে রিসিভ করে অল্প কথা বলে, আবার মাঝে মাঝে দুষ্টুমির ছলে কেটে দেয়। কিন্তু আজ সারাদিন একবারও কল করেনি। সারাদিন অপেক্ষার পর বিকেল থেকে সব কাজের ফাঁকে ফাঁকে সে ট্রাই করে যাচ্ছে। কিন্তু রিসিভ করছেই না। ইশার নামাজ পড়ে আবার কল করলো কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না! মেসেজও দিলো কিন্তু রিপ্লাই নেই। ব্যাপারটা অস্বাভাবিক লাগলো নাফিসার কাছে। কি এমন করেছে সে যার কারণে ইমরান এমন বিহেভ করছে! তারপর সে সুমি আপুর কাছে কল করে ভিডিও কলে আরোহী, আরোশীর সাথে কথা বলছিলো। আর বাচ্চাদের সাথে কৌশলে কথা বলে জানতে পারলো ইমরান বাসায়ই আছে। আশ্চর্য! তাও তার ফোন কেন ধরছে না! ডিনারের পর ঘুমানোর জন্য রুমে এসে খাটে শুয়ে আবার কল করলো, এবার শুধু কেটে দিচ্ছে। তারমানে এখন ফোন তার হাতেই আছে। নাফিসা এবার ভিডিও কল করলো আর সাথে সাথেই রিসিভ হলো। দেখলো ইমরান তার রুমে শুয়ে ফোন সামনে রেখে তাকিয়ে আছে ফোনের স্ক্রিনে কিন্তু কোন কথা বলছে না। নাফিসা রেগে বললো,
“কখন থেকে কল করছি রিসিভ করছেন না কেন? মেসেজ ও দিচ্ছি রিপ্লাই দিচ্ছেন না কেন?”
ইমরান নিশ্চুপ!
“আশ্চর্য! কথা বলছেন না কেন!”
ইমরান এবারও নিশ্চুপ! নাফিসার এবার খুব রাগ হচ্ছে তার উপর। কিছু বলছেও না কোনো রিয়েকশনও দেখাচ্ছে না। নাফিসা কোনোমতে রাগ কন্ট্রোল করে মোবাইল একপাশে রেখে কাত হয়ে শুয়ে তারপর শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো,
“কি হয়েছে? মন খারাপ? আমি কি কোনো অপরাধ করেছি?”
ইমরান এবারও নিশ্চুপ! নাফিসা একটা কৌশল বের করলো। এবার যদি কাজ না হয় তো বড় ধরনের ঝগড়া হবে! নাফিসা নিচু স্বরে কবিতার মতো সুর টেনে গান ধরলো,
“তোর মন খারাপের দেশে, যাবো প্রেমের খেয়ায় ভেসে।
তোর মনটা ভালো করে, দেবো অনেক…!”
এইটুকু গাওয়ার পর থেমে গেলো। কেননা ইমরানের চেহারায় একটু হাসিভাব ফুটে উঠেছে।
তা দেখে নাফিসা অভিমানী সুরে বললো,
“কথা না বললে আমি কিন্তু এবার কল কেটে দিবো।”
“এখন কল কাটলে মেরে একেবারে আলুর ভর্তা বানিয়ে ফেলবো।”
“তাহলে কথা বলছেন না কেন! কতবার ফোন দিয়েছি, খেয়াল আছে আপনার!”
“৩৭বার।”
“কাউন্ট ও করে রেখেছেন অথচ রিসিভ করেননি।”
“অবহেলা খুব খারাপ জিনিস তাই না, রূপসী! তুমি যখন আমাকে অবহেলা করো আমার কতটুকু খারাপ লাগে তা কি একটু ও আন্দাজ করতে পারো?”
“ফোনে এতো কথা বলতে আমার ভালো লাগে না। তাই আমি অল্প সময় নিয়ে কথা বলি, তাই বলে এমন শাস্তি দিবেন! সারাদিনে একবার ও না! সরি।”
“এই পাগলী, তাকাও আমার দিকে। আমি তোমার রিয়েকশন দেখার জন্য এমনটা করেছি। আর করবো না, আমিই সরি। আর একটু ব্যস্তও ছিলাম বটে। বাদ দাও, রাত তো হয়ে এসেছে। এখনো ঘুমাওনি কেন! ঘুমাবে না?”
“না। ঘুমাবো না। আজ অনেক্ক্ষণ গল্প করবো। পারবেন না?”
ইমরান হেসে বললো,
“আমার সারারাত জেগে থাকলেও প্রব্লেম নেই, তুমি পারবে তো? বিয়ের দিন আবার তোমার চোখের নিচে কালি পড়ে যাবে!”
“কতোক্ষন পরে হাসলেন।”
“আচ্ছা! গানটার বাকি অংশটুকু গাইলে না কেন? তোর মনটা ভালো করে দিবো অনেক ভালোবেসে। বাকিটা গাও।”
” হুহ্! আমি কি আর্টিস্ট নাকি! আপনার গান, আপনিই গেয়ে যান।।
“ওকে জান।”
নাফিসা হিহি করে হেসে উঠলো সাথে লজ্জাও পেল। অত:পর গল্পগুজব শেষ করে রাত ১টার দিকে ঘুমিয়েছে নাফিসা।
বিয়ে বাড়ির ব্যস্ততার মাঝে সময় যেন দৌড়ে যাচ্ছে! অবশেষে বিয়েটা সম্পন্ন হয়ে গেলো।
বউ সেজে সজ্জিত কামরায় বসে আছে নাফিসা। মহা ধুমধামে সম্পন্ন হয়েছে বিয়ে। এখন প্রায় রাত ১২টা বাজতে চলেছে। ইমরান এখনো রুমে প্রবেশ করেনি। সারাদিনের ক্লান্তিতে চোখে ঘুম এসে পড়েছে নাফিসার। সময় কাটাতে বসে বসে গতদিনের কথা মনে করছে সে। গায়ে হলুদের রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেনি কাজিনদের জন্য। কাজিনগুলো এক হয়ে সারারাত গল্প করেছে। মাত্র দু’ঘন্টা ঘুমিয়েছিলো। ইমরানের সাথে কথাও হয়নি গতকাল। হয়তো সে-ও ব্যস্ত ছিলো তাই কল করেনি। শুধু রাতে দুইটা মেসেজ দিয়েছিলো, তাও ঠিকমতো রিপ্লাই দিতে পারেনি । সাঈদ তার ফোন নিয়ে নিয়েছে ছবি তোলার জন্য। মেসেজ গুলো ছিল,
( রাত ১০ টায়)
“মানুষের সৌন্দর্য সবচেয়ে ভিন্নভাবে কিভাবে প্রকাশ করা যায় বলোতো, রূপসী?”
পনেরো মিনিট পর নাফিসা রিপ্লাই করেছে,
“মাশাল্লাহ বলে।”
রাত ১:৩৫ এ ইমরানের দ্বিতীয় মেসেজ,
“মাশাল্লাহ তোমাকে গায়ে হলুদের সাজে অনেক সুন্দর লাগছে❤ কাল বিয়ের সাজে দেখলে আমার অবস্থা না জানি কি হয়!?”
তারপর নাফিসা আর রিপ্লাই দেয়নি। এসব মনে করে অজান্তেই তার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। আর এদিকে ঘুমে চোখ ছোট হয় আসছে। এমনি ইমরান রুমে প্রবেশ করলো। নাফিসা তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেল। নাফিসা সালাম দিলে সে সালামের জবাব দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। অত:পর চুপচাপ বারান্দায় চলে গেলো। নাফিসা তার আচরণ কিছুই বুঝতে পারলো না! হয়েছে কি! তার কি মন খারাপ! প্রায় এক মিনিট পর ইমরান বললো,
“রূপসী, এখানে এসো।”
নাফিসা ঘুম কাটাতে চোখ বড় বড় করে পাকালো। অত:পর বারান্দায় তার পাশে এসে দাড়ালো। ইমরান তার মুখোমুখি দাড়িয়ে প্রশ্ন করলো,
“আমাদের বিয়ে হয়েছে?”
এমন প্রশ্নে নাফিসা চরম আশ্চর্য! এ আবার কোন ঢং! সে কি জানে না বিয়ে হয়েছে নাকি হয়নি! নাফিসা বিস্ময়ের সাথে বলে উঠলো,
” মানে কি! আপনি জানেন না বিয়ে হয়েছে কি না?”
“হ্যাঁ কিংবা না তে উত্তর দাও। আমাদের বিয়ে হয়েছে?”
“অস্বীকার করি কিভাবে! হ্যাঁ, হয়েছে আমাদের বিয়ে।”
উত্তর দেয়ার পর সে এক সেকেন্ডও দেরি না করে নাফিসাকে তার সাথে একদম পিষিয়ে ফেলেছে। আচমকা এমন করবে নাফিসা ভাবতেও পারেনি! মুহুর্তেই নাফিসার চোখে অশ্রু এসে ভীড় জমিয়েছে! ভেতরটায় খুব কষ্ট হচ্ছে এই ভেবে যে ইমরান কি কোনো কারণে খুব ব্যাথিত? নতুবা এমন আচরণ কেন করছে! এতো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে যে এদিকে তার শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। কোন কথাও বলতে পারছে না! ধাধানো কন্ঠে কোনোভাবে বলার চেষ্টা করলো,
” কি হয়েছে আপনার?”
ইমরানের কোনো জবাব নেই! নাফিসা আবার বললো,
“আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।”
যদিও কথাটা অস্পষ্ট ছিল, কিন্তু সে বুঝতে পেরেছে তাই আগের চেয়ে কিছুটা হালকা করলো হাতের বাধন। অত:পর সামান্য জিদ্দি গলায় বললো,
“হোক কষ্ট, মেরে ফেলবো একেবারে। আমাকে যা কষ্ট দিয়েছো তার কাছে তো এটা কিছুই না।”
“কি কষ্ট দিয়েছি?”
“আবার জিজ্ঞেস করছো! জানোনা তুমি? তিনটা বছর যে আমাকে তিলে তিলে শেষ করে ফেলেছো।”
নাফিসা নিরব হয়ে আছে। ইমরান শান্ত গলায় বললো,
“আর কি কি রুলস আছে তোমার, বলো শুনি?”
নাফিসা দু’হাত ইমরানের পিঠে রেখে পরম আবেশে বললো,
“ঘুম পেয়েছে খুব। ঘুমাবো আমি।”
“ইশ! তিন বছর আমার ঘুম কেড়ে নিয়ে আজ তোমার ঘুম পায়! কোনো ঘুম নেই। আজ ঘুমালে মেরে ফেলবো একেবারে!”
“পারবেন মেরে ফেলতে?”
“পারবো না কেন! ভালোবাসার জোর কতটুকু তা কি তোমার জানা নেই। ভালো বাসতে বাসতে মেরে ফেলবো একেবারে।”
“সত্যিই আমার ঘুম পেয়েছে।”
“আচ্ছা? দেখি ঘুম কোথায় পায়!”
নাফিসা ইমরানের বুকে মুখ লুকিয়ে হেসে উঠলো। চোখে ভীড় জমানো পানিও গড়িয়ে পড়লো। বহুদিনের প্রত্যাশা যে পূরণ হয়েছে আজ! রেজিস্ট্রি করে পাওয়া হয়ে গেছে একে অপরকে।
ইমরান তাকে ঝাকিয়ে বললো,
“কোথায়, দেখি?”
“স্টুপিড একটা।”
“সব মেয়েরা আমাকে ক্রাশ বলে আর তুমি বলছো স্টুপিড!”
“সব মেয়েরা নিশ্চয়ই রূপসী না।”
ইমরান তাকে ছাড়িয়ে সোজা করে দাড় করিয়ে এক হাতে নাফিসার থুতনি ধরে মুখ উপরে তুললো এবং বললো,
“না। রূপসীর মতো কেউ হতেই পারে না। রূপসী একটাই, যে শুধু আমার।”
নাফিসা লজ্জায় দৃষ্টি নামিয়ে ফেললো। আর ইমরান মন ভরে দেখতে লাগলো তার রূপসীকে। এভাবে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করায় খুবই অস্বস্তি লাগছে নাফিসার। কিন্তু যত লজ্জাই সৃষ্টি হোক তার মাঝে, আজ ইমরানের কর্মে সে বাধা দিবে না। দেখুক না আজীবন এভাবেই। হয়তো অস্বস্তিই বিরক্ত হয়ে একসময় নাশ হয়ে যাবে। নাফিসার অস্বস্তি ইমরানের কাছেও দৃশ্যমান। এটাও লক্ষ্য করেছে নাফিসা আজ নিজের অস্বস্তি নয়, বরং ইমরানের আকাঙ্খাকে প্রাধান্য দিয়েছে। নাফিসার অস্বস্তি কাটাতে ইমরান বললো,
“শাড়িটা কেমন হয়েছে?”
“অনেক সুন্দর। ইচ্ছে তো করছিলো অন্য শাড়ি পড়ে এটা শুধু সামনে রেখে দেখি। কিন্তু পার্লারে তো আর অন্য শাড়ি নেই নি।”
“হা হা হা… শাড়ি হাতে রাখলে সুন্দর লাগে না, পড়লে সুন্দর লাগে।”
“আচ্ছা! তো বলুন, এখন আমাকে কেমন লাগছে?”
ইমরান নাফিসার কপালে আলতোভাবে কোমল স্পর্শ দিয়ে বললো,
“মাশাল্লাহ, অনেক সুন্দর লাগছে আমার রূপসীকে।”
নাফিসা মুখে লজ্জাময়ী হাসি ফুটিয়ে বললো,
“মাশাল্লাহ, তোমাকেও।”
“তুমি কি জানো, তোমার সারপ্রাইজ গুলো যে আমাকে প্রকটভাবে সারপ্রাইজড করে! আমি তো ভেবেছিলাম তোমাকে দিয়ে তুমি করে বলাতেই পারবো না!”
নাফিসা কথার মোড় ঘুরিয়ে বললো,
“আমাদের ড্রেস কালার টা কিন্তু খুব ম্যাচ হয়েছে। তুমি গোল্ডেন আর আমি লাল।”
“হুম, কাল রিসিপশনে তুমি গোল্ডেন আর আমি নীল।”
অত:পর নাফিসার এক হাতের আঙুলের ফাঁকে আঙুল রাখতে রাখতে বললো,
“রূপসী?”
“হুম?”
“ভালোবাসি তোমায়।”
“আমিও।”
“তুমিও কি?”
“ভালোবাসি।”
“কাকে?”
“আমাকে।”
” আমাকে ভালোবাসো না?”
“না।”
“কেন?”
“ভালোবাসলেই তো দূরে চলে যাও।”
“আমি যাইনি তো। তুমি দূরে সরিয়ে দিয়েছো।”
“বাধ্য হয়েছি।”
“আচ্ছা ওসব বাদ। এখন তো কাছে আছি। এখন ভালোবাসো।”
নাফিসা লজ্জায় দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলো। ইমরান তার লজ্জার উপর মুচকি হেসে বললো,
” আমার প্রশ্নের উত্তর কিন্তু দাও নি।”
“কোনটা?
” তিন বছরে আমাকে কতবার মনে করেছো?”
“তোমার জানা নেই?”
“আমি প্রশ্ন করেছি, তুমি উত্তর দিবে।”
“কতবার মনে করেছি জানিনা।কিন্তু এটা জানি, এক মুহুর্তেও ভুলিনি।”
“তোমার কথার স্টাইল আমাকে বারবার প্রেমে পড়তে বাধ্য করে।”
“আরেকটা উত্তর বাকি আছে।”
“কি?”
“আমি কেন তোমাকে এতো বেশি অবহেলা করি জানো?”
“কেন?”
“সবার থেকে আলাদা ভাবে খুব বেশি ভালোবাসি তাই।”
ইমরান প্রশান্তির হাসি হেসে বললো,
“জানি। আর জানি বলেই আমি এতো অবহেলা সহ্য করে এখনো অনেক বেশি ভালোবাসি। ”
“সবসময় এভাবে ভালোবাসবে তো?”
“ইনশাআল্লাহ, জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত। ওহ্, একটা কথা। তোমাকে কিডন্যাপিং মেসেজটা আমি দিয়েছিলাম যাতে সেদিন বাসা থেকে না বের হতে পারো।”
নাফিসা ব্রু কুচকে বললো,
“আমি এদিকে কত ভয় পেয়েছিলাম! কোনো ধারণা আছে!”
“হা হা হা। ভয় দেখানোর জন্যই তো মেসেজ করলাম। আরেকটা কথা, ভাইয়ারা গিফট দিয়ে দিছে।”
“কোথায়? কি দিয়েছে?”
“হানিমুনের টিকেট।”
“ধুর! এটা কোন গিফট হলো! ভাবছি এমন কিছু দিবে যা সারাজীবন রেখে দিবো।”
“তা ই তো দিলো। হানিমুনে যাবে আর তার স্মৃতি সারাজীবন মনে বেধে রাখবে। কোনো বস্তু দিলে তো তা নষ্ট কিংবা ভেঙে যাওয়ার ভয় থাকবে! আমরা কিন্তু কক্সবাজার থেকে ফিরে হানিমুনে যাবো। জানতে চাইবে না কোথায়?”
“কোথায় আবার!যেখানকার টিকেট দিয়েছে সেখানেই যাবে।”
“সেটা ছাড়া ই… রূপগঞ্জ যাবো।”
নাফিসা মুখটা মলিন করে বললো,
“বাবা সেখানকার সব জমি বিক্রি করে দিয়েছে। তাছাড়া দেখার মতোও কিছু নেই।”
“কে বলেছে নেই! জমিদার বাড়ি আছে, দিঘির পাড় আছে, শীতলক্ষ্যা নদী ও নৌকা আছে। আমারা সেখানে ঘুরবো আর জোলাবাতি খেলবো।”
নাফিসা মৃদু হেসে বললো,
“জোলাবাতির সঙ্গীরা যে নেই!”
ইমরান তার মাথায় মাথা ঠুকে বললো,
“আমরাই তো একে অপরের সঙ্গী। ভালো কথা মনে পড়ছে, তোমার কিচেনে রান্না করা চুরচুরি আর শুটকির ভর্তা কবে খাবো?”
“এখন বললে এখনই করে দিতে পারবো।”
“বাবাহ! ঘুম চলে গেছে!”
শেরওয়ানীর বোতাম নেড়ে খেলা করতে করতে নাফিসা মুচকি হাসলো শুধু। ইমরান বললো,
“চলো, আর ঘুম নষ্ট করছি না। এই ক’দিন পড়াশোনায় অনেক ডিস্টার্ব হয়েছে। সামনে আরও কিছুদিন হবে। এরপর ক্লাস শুরু হলে ঠিকমতো পড়া শুরু করবে। এতিমখানার স্বপ্নটা পূরণ করতে হবে তো। চাইলে আমার সাহায্যে আগেও শুরু করতে পারো। আমি তোমাকে সবরকম সাপোর্ট করবো।”
“ওকে৷ এতিমখানা বাবার নামে দিলে কেমন হয়? ‘মোজাম্মেল হক ইসলামিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা’।”
ইমরান অবাক হয়ে নাফিসাকে দু’হাতের বাধনে নিজের সাথে আরও জড়ো করে বললো,
“এতো অদ্ভুত স্বপ্ন কেন তোমার! বাবার নামে এতিমখানা দিবে, আর যিনি তোমাকে ছোট থেকে লালন পালন করে প্রতিষ্ঠিত করতে সবসময় চেষ্টা করছেন সেই পিতার নামে কিছু করবে না! এটা কেমন হলো!”
“কখন বললাম কিছু করবো না! আমি সেটা অনেক আগেই ভেবে রেখেছি, আল্লাহর রহমতে লক্ষ্যে পৌছাতে পারলে বাবার নামে একটা হসপিটাল দিবো। যেখানে ধনীদের টাকা দিয়ে আর, দরিদ্রদের ফ্রী তে চিকিৎসা হবে। আল্লাহর রহমত ও বাবার সাপোর্টেই তো মেডিকেলে পড়তে পারছি।”
“আল্লাহ তোমার সব ইচ্ছে পূরণ করুক।”