“রূপগঞ্জের রূপসী”
পর্ব- ৮
(নূর নাফিসা)
উৎসর্গে – Imran Mahmudul
.
.
রূপগঞ্জ এসে যা দেখলো সে, তা কখনোই প্রত্যাশিত ছিল না। ভাবতেও পারেনি, এখানে এসে এমন কিছু দেখতে হবে তাকে! রূপগঞ্জের পরিবেশ একেবারে পালটে গেছে। এখানে কোনো গ্রাম নেই। সম্পূর্ণ জমিজমা বালুতে ভড়াট হয়ে গেছে। কলকারখানা, বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ চলছে। আশেপাশে কোনো বাড়িঘর নেই। শুধু নামটাই আছে “রূপগঞ্জ”। সেখানকার একজন ব্যাক্তিকে জিজ্ঞেস করলে, তিনি বললেন এই অঞ্চল সিটি করপোরেশন কিনে নিয়েছে। এখানকার মানুষজন জমি বিক্রি করে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে চলে গেছে।
ব্যাপারটা খুবই ব্যথিত করলো ইমরানকে! সেখানে থেকেই সে রিসাদকে কল করলো তার খালার সন্ধানের জন্য, কিন্তু খালাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ নেই বিধায় রিসাদ বললো তার জানা নেই। মনটা খারাপ হয়ে গেল। কিছুক্ষণ রূপগঞ্জের অন্যান্য জায়গা গুলোতে ঘুরে বিকেলে বাসায় ফিরে এলো। বাসায় পা রাখতেই নীলার প্রশ্ন,
” তোর ফোন অফ কেন? সারাদিন কোথায় ছিলি?”
” ঘুরতে গিয়েছি।”
“রূপসীর এলাকায়?”
“হুম।”
নীলা কিছুটা বিরক্তিকরভাবে বললো,
“তোর মতো নিশ্চয়ই সে বসে থাকেনি। সবাই নিজের জীবন এগিয়ে নিয়েছে, শুধু মাত্র তুই ছাড়া।”
আপুর মুখে রূপসীর ব্যাপারে কিছু শুনতে ভালো লাগছে না বিধায় ইমরান কথায় বাঁক নিয়ে বললো,
“ভাইয়ারা কোথায়?”
“লাঞ্চ করে বাইরে বেরিয়েছে।”
ইমরান নিশ্চুপ মায়ের রুমের দিকে এসে দেখলো আরোহী মায়ের সাথে খাটে বসে নানান কথা বলছে। ইমরান রুমে এসে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। মিসেস হক ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“খেয়েছিস?”
“না, ভালো লাগছে না।”
” না খেলে তো শরীর খারাপ করবে।”
“পরে খাবো।”
“কাল সুমিদের বাসায় যাবো। শান্তার একটা বোন আছে। ভারী মিষ্টি দেখতে মেয়েটা। সকলের খুব যত্ন করে, আচার-আচরণও খুব ভালো।”
“শান্তা কে?”
“পাবেলের বউয়ের নাম শান্তা। দুইটা বোন একটা ভাই। দুই বোনই খুব ভালো। তাদের পরিবার ও খুব ভদ্র একটি পরিবার।”
“আচ্ছা, ভালো। এখন আর কোনো কথা বলো না তো। আমি এখন ঘুমাবো।”
মায়ের কোলে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়লো ইমরান।
পরদিন সকালে নাস্তা করার কিছুক্ষণ পর ইমরান, তার মা, নীলা আপু, আরোহী, সুমন ভাইয়াসহ সবাই একসাথে সুমি আপুর বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা দিলো। সুমি সকালে কল করে বলেছিলো যেন সকালের নাস্তা তারা সেখানে গিয়ে করে। কিন্তু কিছু কাজ থাকায় এতো সকালে যায়নি৷ সকাল এগারোটায় বেইলি রোড থেকে মতিঝিল আপুর বাসায় এসেছে। আপু সবাইকে দেখে অনেক খুশি হয়েছে। কতদিন পর ভাইবোনকে দেখতে পেলো সে!
সবাই ভেতরে এসে ড্রয়িং রুমে বসলো। ড্রয়িং রুমে আরোশী আর পাবেলের ছেলে আয়াশ বসে খেলছিলো। এখন ইমরান আর আরোহীও যোগ দিলো তাদের সাথে।
আর এদিকে বাকিরা কথা বলছে।
শান্তা তাদের সাথে কুশলাদি বিনিময় করে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করছে।
ইমরান সুমির উদ্দেশ্যে বললো,
“ভাইয়া কোথায়?”
এদিকে নীলাও সুমির উদ্দেশ্যে বললো,
” সুমি এতো হৈচৈ কিসের?”
সুমি হাসিমুখে জবাব দিলো, “তারা তিন ভাই-বোন আজ রান্না করছে কিচেনে। শুক্রবার আমার আর শান্তার ছুটি থাকে।”
নীলা একটু বিস্ময়ের সাথে বললো,
“তিন ভাইবোন কে? পারভেজের আবার বোন আছে নাকি!”
“আছে তো। শান্তার বোন নাফিসা ই তাদের বোন। আপন বোনের চেয়ে কম নয় তাদের জন্য।”
“ওহ! নাফিসা এখানেই থাকে?”
“হুম। নাফিসার পড়াশোনা এখান থেকে সুবিধাজনক হওয়ায় এখানেই রেখেছি। তার সাথে আমাদেরও সময় কাটে ভালো। তাছাড়া দুই ভাই একদমই যেতে দেয়না তাদের বাসায়। গেলেও দুতিন দিনের বেশি থাকতে পারে না, আরোশির বাবা কিংবা পাবেল সময় করে ছুটে যায় নিয়ে আসার জন্য। মাঝে মাঝে আংকেল আন্টি শান্তাকে বলে, ‘আমার মেয়েকে কি আমার বাসায় যেতে দিবি না! বিয়ের পর তো শশুর বাড়ি চলে যাবে, এখন আমাদের কাছে থাকবে না নাকি!’
তখন শান্তার উক্তি হয় এমন, ‘নিয়ে যাও, কে ধরে রেখেছে!’
আর পারভেজ, পাবেলের উক্তি হয় এমন, ‘বিয়ের পর তো শশুর বাড়ি চলে যাবে, তাই এখন ভাইয়ের বাড়ি থাকুক!’ আন্টির আর জোর থাকে না!”
নীলা হেসে বললো,
“ভালোই তো ভাইবোনের জুটি।”
শান্তা সবাইকে হালকা নাস্তা দিতে দিতে, সুমিকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“দেখেছো আপু, বাসায় যে মেহমান এসেছে তার কোনো খেয়াল ই নেই! সেই কখন থেকে হৈচৈ করেই যাচ্ছে! আমার কথা তো শুনেই না! তুমি কিছু একটা বলে এসো। আমি, তুমি রান্না করতে গেলে কি এমন করি!”
“থাক না, ওরা এমন করার জন্য গিয়েছেই রান্না করতে।”
“দেখে এসো একবার, কিচেনের কি অবস্থা করেছে….!”
সুমন দাড়িয়ে বললো,
“আমিই যাই, দেখে আসি আমার ভায়রা কি রান্না করছে।”
সুমি আর উঠতে গিয়েও উঠলো না বসা থেকে। তারা আবার কথাবার্তায় জমে গেল।
সুমন কিচেনে যাওয়াতে সেদিকে হৈচৈ বন্ধ হয়ে গেছে। একটু পর সুমন, পারভেজ আর পাবেল বেরিয়ে এসে বাকিদের সাথে কথা বলতে লাগলো, তারপর নাফিসাও বের হয়ে এলো। সুমি সোফা থেকে উঠে নাফিসার দিকে এগিয়ে গেলো এবং নিচু শব্দে বললো,
“রান্না শেষ হয়েছে?”
নাফিসা মিষ্টি হেসে বললো,
“হুম, রান্নাও শেষ, তোমার কিচেন ও ক্লিন।”
” আচ্ছা, নিজের অবস্থা তো হলুদ লাগিয়ে একেবারে হুলোবেড়াল বানিয়েছিস।”
নাফিসা মুখভঙ্গি বিকৃত করে বললো,
“ভাইয়ারা ইচ্ছে করে আমার ফেস এ লাগিয়েছে।”
“আচ্ছা যা এবার, দ্রুত গোসল করে আয়। তারপর বড় আপুর সাথে দেখা করবি।”
“আচ্ছা।”
কিছুক্ষণ পর নাফিসা গোসল করে ড্রয়িং রুমে সবার সাথে দেখা করতে এলো।
মিসেস হকের উদ্দেশ্যে সে বললো,
“আসসালামু আলাইকুম আন্টি। কেমন আছেন?”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি কেমন আছো নাফিসা মনি?”
” আলহামদুলিল্লাহ, ভালো।”
সুমি নাফিসাকে ডাকলে নাফিসা পেছনে ফিরে যেই নাফিসা সুমি আপুর কাছে যাবে এমনি ইমরান আরোশীকে কোলে নিয়ে অপর দিক থেকে আসছিলো। এখন দুজনেই সামনাসামনি হয়ে গেল। সাথে সাথে ইমরানের দুষ্টুমি মাখা হাসি মুখটা মলিন হয়ে গেল। কয়েক সেকেন্ড নিষ্পলক তাকিয়ে রইলো তার দিকে।
নাফিসার চোখে চিকন ফ্রেমের চশমা, পড়নে লং কটি, সাথে জিন্স আর ওড়না, হাতে কালো বেল্টের ঘড়ি। নাফিসা ঘড়ি পড়তে খুব ভালোবাসে। এমনকি সবসময়ই ঘড়ি পড়ে থাকে।
ইমরানকে দেখে নাফিসা কিছুটা উৎফুল্লতার সাথে বললো,
“আরে, ইমরান মাহমুদুল যে!কেমন আছেন?”
ইমরান কুশলাদি বিনিময়ে ঠোঁটের কোনে সামান্য হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো,
“আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন ?”
“আলহামদুলিল্লাহ।”
অত:পর পাশ কেটে নাফিসা সুমি আপুর কাছে চলে গেলো। সুমির সাথে নীলা বসে আছে।
নাফিসা সালাম দিয়ে কথা বললো। নীলা তার পাশে বসতে বললে নাফিসা পাশে বসলো। ইমরান ও আরোশীকে নিয়ে বিপরীত সোফায় বসেছে।
অপরিচিত লোকদের সামনে যথেষ্ট স্বাভাবিক হয়ে কথা বলার চেষ্টা করছে মেয়েটা, তবুও ভেতরে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছে। তার অস্বস্তি হয়তো সুমি একটু হলেও বুঝতে পেরেছে তাই বললো,
“নাফিসা, তোকে আপু কিছু প্রশ্ন করবে, তুই শুধু উত্তর দিবি।”
নাফিসা নিজেকে আরেকটু কনফিডেন্সের সাথে উপস্থাপন করতে বললো,
” আমার ভাইবা নিবে?”
তার কথা শুনে সুমি ও নীলা দুজনেই হাসলো। এবং নীলা উত্তরে বললো,
” হুম, তোমার ভাইবা।”
“আচ্ছা? কি জব এর জন্য?”
“আগে ভাইবা দাও, পরে না হয় জবের কথা জানলে!”
“ওকে।”
“তুমি পড়াশোনায় কোন পর্যায়ে আছো?”
“দুবছর হলো আমি ডিএমসিতে অধ্যায়নরত।”
“ওহ! ভালো। তোমাদের বাসা কোথায়?”
“সাভার।”
“তোমার বাবা কি করে?”
“বাবা একজন ব্যবসায়ী।”
“একমালিকানা, তাই না?”
“হুম।”
“তোমরা তো দুই বোন আর এক ভাই, তাই না?”
“না, আমরা তিন বোন আর তিন ভাই। হিসেবটা সম্পূর্ণ আমার দিক থেকে।”
ইমরান আরোহী এবং আরোশির সাথে দুষ্টুমি করছে আর নাফিসার চঞ্চলতা দেখছিলো। কিন্তু এবার নাফিসার এমন হিসাবী উত্তরে নীলা ও ইমরান দুজনেই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। আর সুমি ফিক করে হেসে বললো,
” কনফিউজড করে দিয়েছিস তো। আপু, আরোশির আব্বু, পাবেল ও আমাকে হিসেব করে বলেছে সে।”
নীলা মৃদু হেসে বললো,
“ওহ, আচ্ছা। ইমরানও হাসলো, কিন্তু তা বাইরে প্রকাশিত হলো না। সে নিরবে কিছুক্ষণ পরপরই তাকাচ্ছে শুধু নাফিসার দিকে। নাফিসার এমন চঞ্চলতা দেখতে ভালোই লাগছে তার কাছে। একটু পর পারভেজ, পাবেল চলে এলে সব ছেলেরা একসাথে জুমুয়ার নামাজ পড়তে চলে গেলো।
এদিকে বাসায় মেয়েরা ও সবাই নামাজ পড়ে নিলো। ছেলেরা সবাই বাসায় ফিরলে একসাথে সবাই লাঞ্চ করলো। আর ভাইবোনের রান্নার প্রশংসার তো সীমাই নেই! সবাই দিনটি আনন্দের সাথেই কাটালো, কিন্তু নাফিসা আর ইমরান একে অপরের থেকে একটু দূরে দূরেই থেকেছে। এর মাঝে নাফিসা একবার নীলা, সুমি ও শান্তাকে নাফিসা আর ইমরানের বিয়ে নিয়ে কথা বলতে শুনেছে। এতেই নাফিসার মনটা খারাপ হয়ে গেল। কয়েকদিন নীলা আপুরা এ বাসায়ই থাকবে।
পরেরদিন সকালে নাফিসা ড্রয়িং রুমে বসে আরোহী, আরোশী আর আয়াশের সাথে দুষ্টুমি করছে। এমন সময় ইমরান এসেও ড্রয়িং রুমে বসলো। আর নাফিসা কিছু একটা ভেবে তারাহুরো করেই উঠে রুমে চলে গেলো। তারপর রেডি হয়ে কিচেনে গেলো। সেখানে নীলা, সুমি ও শান্তা ছিলো। নীলা তাকে বললো,
“নাফিসা কোথাও যাচ্ছো মনে হচ্ছে।”
“হুম, ল্যাবে যাবো আপু। ক্লাস আছে….।”
” তোমার এক্সাম না শেষ হলো মাত্র? এতো তারাতাড়ি ক্লাস!”
“হুম, এটা এক্সট্রা ক্লাস।”
“ও আচ্ছা।”
নাফিসা শান্তাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“আপু তোমার এই পার্সটা আমি নিয়ে যাই।আমার টা ওবাড়িতে রেখে এসেছি।”
“তুই না ল্যাবে যাবি, তো এই পার্স নিয়ে কি করবি?”
“প্রয়োজন আছে।”
“কি প্রয়োজন তা আমার খুব ভালো করেই জানা আছে! কোথায় ঘুরতে যাবি আজ?”
নাফিসা ভাজাবেড়াল ন্যায় চুপসে গেছে ধরা পড়ে। অত:পর মলিন মুখে বললো,
“ক্লাস শেষে একটু বোটানিক্যাল গার্ডেনে যাবো।”
শান্তা নাফিসার হাত থেকে পার্স নিয়ে কড়া কণ্ঠে বললো,
“কোথাও যাবি না। ক্লাস শেষে সোজা বাসায় ফিরবি। যা।”
“প্লিজ দাও না, সবাই যাবে আমার কি ইচ্ছে হয় না যেতে!”
“নাফিসা, দিন দিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস! বড় দের কথা একদম শুনিস না!”
সুমি এবার নাফিসার সাপোর্টার হয়ে বললো,
“শান্তা, পার্স দিয়ে দে।”
“আপু, সবসময় সাপোর্টার হওয়া ভালো না। ওকে চিনোনা তুমি। যেখানে যাবে কিছু একটা ঘটিয়ে আসবে।”
সুমি এবার একটু কড়া কণ্ঠে বললো,
“তুই ও তো দিন দিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস। আমার কথা শুনছিস না! পার্স দে।”
শান্তা পার্স দিয়ে দিলে নাফিসা খুশিতে সুমিকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ সো মাচ। আমি যাই, আল্লাহ হাফেজ।”
“এই, নাস্তা করে যা।”
“আজ বাইরে করবো।”
পারভেজ পাবেল অফিসে, মেয়েরা সবাই বাসায়, ইমরান সুমন ও নাস্তা করে বেরিয়েছে।
এদিকে দুপুর শেষে বিকেল হয়ে এলো,কিন্তু নাফিসা এখনো বাসায় ফিরেনি! শান্তা টেনশন করছে!
সুমি নাফিসার কথা জিজ্ঞেস করতে শান্তা বললো,
“আপু দেখেছো কতো দেড়ি করছে মেয়েটা! এজন্যই কোথাও যেতে দেই না। তার উপর আবার ফোন রিসিভ করছে না।”
“আমি সাপোর্ট করেও তো ভুল করে ফেললাম!”
নীলা তাদের দুশ্চিন্তা করতে দেখে বললো,
“ফ্রেন্ডদের ফোনে কল করে দেখো।”
“তার ফ্রেন্ড ই তো চিনি না! ফোন নং তো দূরে থাক! কখনো ফ্রেন্ডের গল্পও করে না, করবেই কিভাবে! ওর নিজের গল্প বলতে বলতেই দিন শেষ হয়ে যায়।”
তারা কথা বলতে বলতেই এদিকে নাফিসা কল করলো,
” আপু আমি আমাদের বাসায় চলে এসেছি।”
শান্তা রেগে বললো,
” থাপ্পড় দিয়ে সব দাত ফেলে দিবো, ফাজিল কোথাকার! তুই কার কাছে বলে গিয়েছিস বাসায়!”
“তোমার বকা শুনার টাইম নেই। যাতে টেনশন না করো তাই জানিয়ে দিলাম। আল্লাহ হাফেজ।”
ফোন কেটে দিলো নাফিসা।শান্তা সুমির উদ্দেশ্যে বললো,
“দেখেছো আপু, কতো বড়ো ফাজিল! না জানিয়ে বাসায় চলে গেছে। এতোক্ষণ পর জানিয়ে বলে টেনশন করো না!”
সুমি নাফিসার উপর কিছুটা বিরক্ত হয়ে আবার শান্তাকে বললো,
“সমস্যা নেই, কাল তো আমরা ও বাড়িতে যাবোই। তখন আবার কান ধরে নিয়ে আসবো! এভাবে না বলে একা একা চলে যাওয়া কি উচিত হয়েছে তার!”
নাফিসার কর্মকাণ্ডে রাগান্বিত হয়ে সাথে সাথেই শান্তা মায়ের কাছে কল করে এক গাদা বিচার দিলো।
।
রাতে ডিনার করে সাঈদ এর সাথে কিছুক্ষণ দুষ্টুমি মারামারি করে ঘুমাতে গেলো নাফিসা। আজ আরোশি, আয়াশকে মিস করছে খুব। আরোশির বয়স এখন চার বছর আর আয়াশের বয়স দেড় বছর। আয়াশ কিছু কিছু শব্দ উচ্চারণ করতে পারে মাত্র, আর সারা বাড়ি দৌড়ে বেড়ায়। প্রতিদিন তাদের দুজনের সাথে দুষ্টুমি করে ঘুমাতে যায় নাফিসা। আজ হয়তো তারা আরোহী আর ইমরানের সাথে দুষ্টুমি করছে।
তখন রাগারাগির পর আবার শান্তা কল করে জানিয়েছে তারা কাল বাড়িতে আসবে, তাই সে যেন ল্যাবে না যায়। কিন্তু নাফিসা যাবেই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে উল্টো পথে চলতে তার খুব ভালো লাগে। শান্তার বিপরীতে তো সে প্রায়ই উল্টো পথেই চলে! খুব কমই তাদের মত মিলে!
চোখের পাতা বন্ধ করার পূর্বে ফেসবুকে লগইন করে কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করলো নাফিসা। তারপর লগআউট করে ফোন রাখতে যাবে এমন সময় অচেনা নম্বর থেকে একটা মেসেজ এলো, “ইউ উইল বি কিডন্যাপড টুমরো, ডিয়ার!”
নাফিসা কিছুটা ভরকে গেল! এটা কে হতে পারে! তার তো তেমন কোনো শত্রুও নেই! পত্রিকা খুললেই দেখা যায় নিখোঁজ শিরোনাম! তাহলে কি সে-ও অতি শীঘ্রই পত্রিকায় শিরোনাম হয়ে ছেপে যাবে! তা ভাবতেই ভয়ে হাত পা কাপা শুরু করেছে!
অত:পর বানোয়াট ভেবে নিজেকে সাহস দিতে লাগলো, কিডন্যাপ করলে আবার পূর্বাভাস দিয়ে জানিয়ে দেয় নাকি! আযব ব্যাপার! নিশ্চয়ই তার কোনো ফ্রেন্ড তাকে ভয় দেখানোর জন্য এমনটা করছে! নতুবা অন্য কেউ কাউকে ভয় দেখানোর জন্য এমনটা করছে। হয়তো অন্য কাউকে সেন্ট করতে গিয়ে ভুলে তার ফোনে সেন্ট করে ফেলেছে!
তা ভেবে চোখ বুজে রইলো নাফিসা। কিন্তু ভয় যে কাটছে না! মনে হচ্ছে এই বুঝি ঘুমের মধ্যে তাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাবে!
বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টা করেও চোখে ঘুম নামাতে পারলো না। একটা দুশ্চিন্তা আর ভয় কাজ করছে মনে। তাই সে উঠে সাঈদের রুমে চলে গেলো। চুপচাপ একপাশে তার বিছানায় শুয়ে পড়লে সাঈদ বিস্মিত হয়ে বললো,
“তুমি এখানে কেন?”
“এমনি।”
“ভূতে ভয় দেখাইছে নাকি!”
নাফিসা কিছুটা কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
“সাঈদ, আমার রুমে কি ভূত আছে?”
সাঈদ তার কণ্ঠে ভয়ার্ত ভাব এনে বললো,
” হ্যাঁ, তুমি তো বাসায় থাকো না। তাই তোমার রুমে প্রতিদিন রাতে ভূত এসে ঘুমায়।”
কথাটা বলেই সাঈদ হেসে উঠলো। নাফিসা রেগে বললো,
“শয়তান, দূর হ এখান থেকে!”
“এহ! আমার রুমে এসে আমাকেই বলে দূর হতে!”
“চুপচাপ ঘুমা, না হয় এখান থেকে যা। একটা শব্দ ও করবি না।”
সাঈদ ভেংচি কেটে ঘুমিয়ে পড়লো।