রেড কেইস-২০২,পর্বঃ ০৩(শেষ পর্ব)

0
817

#রেড কেইস-২০২,পর্বঃ ০৩(শেষ পর্ব)
লেখকঃ আবির খান

সকাল ৪ঃ৪৫ মিনিট বাজে। বাইরে থেকে আযানের ধ্বনি ভেসে আসছে। আবিরের ঘুম ভাঙে৷ উঠে ফ্রেশ হয়ে ওজু করে ফজরের নামাজটা পড়ে নেয়৷ তারপর ট্রেনিং করতে ওর জিমে চলে যায়। ওর বাসার মধ্যেই পুরো একটা জিম ছিল। তাই ওর নিজের জিমে গিয়ে ট্রেনিং শুরু করে। টানা দুই ঘন্টা ট্রেনিং শেষ করে কিচেনে এসে এনার্জি ড্রিংক বানিয়ে খেয়ে নেয়৷ সত্যি বলতে আবির খুব চিন্তায় আছে। বিশাল বড়ো একটা দায়িত্ব ওর কাঁধে। কোন ভাবেই ফেইল করা যাবে না। সামান্য একটু ভুল হলে নিমিষেই সব শেষ হয়ে যাবে৷ আজকে ওর টিমের সবাইকে বিদায় দেওয়ার পালা। একটু পরেই রাহাত, রুনা, মিশিতা আর রাহুল আসবে। যেহেতু কাল রাতেই ওদের নিজস্ব টিম আবির বুঝিয়ে দিয়েছে তাই আর দেরি নয়। ঝটপট মিশনটা শুরু করতে হবে৷

সকাল ১০ টা বাজে। আবিরের সামনে ওর টিম মেম্বাররা বসে আছে। আবির একে একে সবাইকে তাদের টিমে মোট ৩০০ জন করে সিক্রেট সোর্স কালেক্টরদের ঠিক করে দেয়। আর সবাইকে দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে গিয়ে কাজ শুরু করতে বলে। আসলে আবির একটা বুদ্ধিমানের মতো কাজ করেছে। সেটা কিভাবে? বলছি। গতকাল রাতে যখন ১২০০ জনের ফুল টিমের ডিটেইলস দেওয়া হয় তখন আবির এমন ভাবে এই ১২০০ জনকে চার ভাগ করেছে যাতে তাদের সুবিধা হয়। যেমন, যাদের দেশের পূর্ব দিকে গ্রামের বাড়ি বা সেখানে থাকে তাদেরকে রাহাতের আন্ডারে দিয়েছে। কারণ আবির জানে, তারা যদি তাদের পরিচিত জায়গায় কাজ করতে পারে তাহলে খুব ভালো ভাবে কাজটা করতে পারবে। কারণ তাদের কাছে জায়গাগুলো পরিচিত। ঠিক এভাবে যথাক্রমে রুনা, মিশিতা এবং রাহুলের টিমও সাজিয়ে দিয়েছে। সবাই অনেক খুশি। এবার শুধু কাজের পালা।

এরপর আবিরের প্ল্যান মতো রাহাত, রুনা, মিশিতা আর রাহুল কাজে নেমে যায়। আবির এই মিশনের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা একটা হেড কোয়াটার বানিয়েছে। যাতে এত গুলো মানুষের ইনফরমেশন সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করা যায়। এবং তা বিশ্লেষণ করা যায়। ওর এই হেড কোয়াটারে ও ছাড়া অন্যান্য বড়ো মাপের অফিসাররাও অংশ নিবে৷ যাতে খুব দ্রুত মিশনটা শেষ করে যায়। এখন শুধু অপেক্ষা। আবির নিজে ৫০ জনের একটি টিম বানিয়েছে। যারা ঢাকার আনাচে কানাচে অলরেডি পৌঁছে গিয়েছে এবং কাজ শুরু করেছে। আবির এখন শুধু অপেক্ষা করছে ইনফরমেশনের। অধিকাংশ সোর্স কালেক্টররা ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গার যাচ্ছে। তাই আজ হয়তো কোন ইনফরমেশন আসবে না। কিন্তু কালকে থেকেই আসল কাজ শুরু হবে। আবির ওদের ডাটাবেইজ থেকে বিভিন্ন ধরনের ডাটা কালেক্ট করছে। যেমন দেশের কোন জায়গায় কয়টা বার, হোটেল, মোটেল এবং রেস্টুরেন্ট আছে। এছাড়া মাদক রিলেটেড আরও অনেক তথ্য বের করছে। যাতে কাজ করার গতি বাড়ে। সেদিনটা ওভাবেই শেষ হয়৷ পরদিন আবিরের প্ল্যান মতো ফুল স্পিডে কাজ শুরু হয়। সকাল থেকেই ওদের এই মিশনের জন্য নতুন যে সার্ভার বানানো হয়েছে তাতে একের পর এক ছবি, ভিডিও, অডিও এবং ইনফরমেশন আসছেই। সেগুলোকে ঠিক ভাবে সংরক্ষণ করছে আবির এবং ওর হেড কোয়াটারে থাকা অন্যান্য অফিসাররা। আবিরের এই অভিনব বুদ্ধি দেখে কমান্ডার আশরাফুল ইসলামসহ অন্যান্য বড়ো পদের অফিসাররা আশার আলো দেখছেন। হয়তো এবার কিছু একটা হলেও হতে পারে। দেখতে দেখতে একমাস চলে যায়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অলরেডি এসে গিয়েছে আবিরের কাছে। তবে আরও এক মাস বাকি এখনো। প্রতিদিন একের পর এক ইনফরমেশন আসছেই। যা আবির আর ওর পুরো হেড কোয়াটারকে বিচলিত করছে। কারণ গত একমাসের ইনফরমেশনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, দেশের অনেক নামকরা নেতারা এই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। আবির শুধু অপেক্ষা করছে সেই বিদেশি মাফিয়ার আসল পরিচয়টা জানার জন্য।

একদিন রাত ২ টা ৩৪ মিনিটে রাহুল আবিরকে কল দেয়। আবির ফোন রিসিভ করতেই রাহুল বলে,

— স্যার আপনার ধারণাই ঠিক। আমরা এখানে গত ১০ দিন ধরে আছি। গভীর রাতে আনুমানিক ২/৩ টার দিকে একটা ছোট্ট ইঞ্জিন চালিত বোর্ট ডকে আসে। বোর্টটা সমুদ্রের দিক থেকে আসে। মাল ডেলিভারি দিয়ে আবার সমুদ্রের দিকে চলে যায়। মাল গুলো কয়েকটা কালো কালারের মাইক্রো নিয়ে যায়। যেগুলোতে কোন নাম্বার প্লেট নেই।
— গুড জব রাহুল। তুমি দ্রুত প্রমাণ গুলো নিয়ে নেও। আর গাড়ি গুলো কোথায় যাচ্ছে খুব সাবধানে ফলো করে আমাকে জানাও।
— ওকে স্যার।

এভাবে রাহুলের মতো রাহাত, রুনা আর মিশিতা একের পর এক ইনফরমেশন দিয়েই যাচ্ছে। দেখতে দেখতে আরও একমাস চলে যায়। আবিরের যে যে ইনফরমেশন দরকার ছিল তা অলরেডি পেয়ে গিয়েছে প্রমাণ সহ। এবং সব হিসাব মেলানোও শেষ। কালকে সকালে আবার সেই মিটিং হবে। যেখানে আবির সব কিছুর খোলাসা করবে। আবিরের টিম মেম্বাররাও ঢাকাতে চলে এসেছে।

পরদিন সকালে আবির সব ইনফরমেশন নিয়ে মিটিং এ পৌঁছায়। কমান্ডার আশরাফুল ইসলাম সহ বাকি সবাই উত্তেজিত হয়ে আছেন আবির কি বলবে তা শোনার জন্য। আবির এসেই সবাইকে সম্মান জানায়৷ আশরাফুল ইসলাম আবিরকে বলে,

— আবির তাড়াতাড়ি বলো কে সেই মাফিয়া। আমরা সবাই অপেক্ষা করছি।
— বলছি স্যার।

আবির ল্যাপটপে পেন্ড্রাইভ লাগিয়ে প্রোজেক্টরটা অন করে রেড কেইস ২০২ নং ফাইলটা ওপেন করে। আর বলে,

— স্যার প্রথমেই আপনাদের সবাইকে একটু আশ্চর্য করতে চাই৷ আর সেটা হলো, আমাদের দেশে কোন প্রকার মাফিয়ার আধিপত্য নেই। এবং বিদেশি কোন মাফিয়া আমাদের দেশে মাদক আনছে না।

আবিরের কথা শুনে সবাই সকড। আশরাফুল ইসলাম অবাক কণ্ঠে বলেন,

— মানে! কি বলো?
— জি স্যার। আমাদের দেশে মাদক ডিলারের সবচেয়ে বড়ো বাদশা হলেন উনি।

প্রোজেক্টরে একজন নামকরা বড়ো নেতাকে দেখিয়ে আবির বলল। সাথে আরও বলল,

— সে বিদেশি মাফিয়ার কথাটা ছড়িয়ে দিয়েছে যাতে আমরা দেশের কাউকে সন্দেহ না করি। কিন্তু আমার পুরো টিম তাকে প্রমাণসহ সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। এই নেতার সাথে যারা যারা জড়িয়ে সছে তাদের সবার প্রমাণসহ ডিটেইলস এই পেন্ড্রাইভে আছে।

আবির পেনড্রাইভটা আশরাফুল ইসলাম এর কাছে এগিয়ে দেয়৷ তারপর আবার বলে,

— স্যার এই নেতা প্রতিটি বিভাগে তার একজন করে আত্নীয় সেট করেছে। সেই আত্নীয় আবার ওখানকার বড়ো নেতা। তারা পুরো বিভাকটাকে শাসন করে। তাই কেউ কোন ভাবে তাদের ধরতে পারে না। কিন্তু যখন দেশের সব জায়গায় একসাথে আমরা অভিযান চালাই তখন একটার সাথে আরেকটা সূত্র মিলে একে একে এগারো হয়ে গেল। এখন আপনি চাইলে তাদের সবাইকে গ্রেফতার করতে পারেন৷
— সাব্বাশ আবির সাব্বাশ। আমরা তোমাকে নিয়ে গর্ববোধ করছি। আমরা জানতাম তুমিই পারবে ওদের ধরতে। আমরা কালই ওদের সবাইকে এ্যারেস্ট করবো। দেখি কে বাঁচায় ওদের।
— অসংখ্য ধন্যবাদ স্যার। দেশের জন্য আমি সব করতে পারি। আর এই মিশনের ফুল ক্রেডিট আমার পুরো ১২০০ জন টিম মেম্বারের। তাদের পরিশ্রমেই আমরা ওদের খুঁজে বের করতে সফল হয়েছি।
— হ্যাঁ ঠিক বলেছো। আমি ওদের সবাইকে পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা করবো। সেই সাথে তোমার রেংকও বৃদ্ধি পাবে৷

আবির সবাইকে আবার ধন্যবাদ জানায়৷ আর সেই সাথে রেড কেইস-২০২ সলভ হয়ে যায়৷

— সমাপ্ত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here