রোদেলা লেখা: মাহাবুবা মিতু পর্ব- ২৫

0
780

রোদেলা
লেখা: মাহাবুবা মিতু
পর্ব- ২৫

প্রিসিলার এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট বেরিয়েছে। মাশাল্লাহ অনেক ভালো রেজাল্ট করেছে ও । রোদোলা অনেক খুশি ওর এই রেজাল্টে। ফোনে জানার পরই স্টুডেন্টদের বাসা থেকে ফিরবার পথে ওদের এলাকার নামকরা মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি এনেছে পাঁচ কেজি। সেই মিষ্টি নিজ হাতে পাড়া-প্রতিবেশীদের বিলি করেছে।

খালামনিদের বাসায়, আর কৃষ্ণচূড়ায় পৌছে দিয়েছে নোভেলকে দিয়ে। সত্যিই ও ভীষণ খুশি আজ। ওর মা ও খুশি, কিন্তু তিনি খুশিটা প্রকাশ করছেন না, তবে বোনদের সাথে ফোনে কথা বলবার সময় রোদেলা শুনেছে।

এখন ভালোয় ভালোয় একটা কলেজে এডমিশন নিলেই একটু নিশ্চিন্ত হবে ও। কি ভাবছেন জিপিএ ৫ পেয়েছে প্রিসিলা….? নাহ…! ও পেয়েছে ৪.২০….।

আপনারা হয়তো ভাবছেন ৪.২০….! যে যুগে জিপিএ ৫, কিংবা গোল্ডেন জিপিএর ছড়াছড়ি সেখানে ৪.২০ পেয়ে এত আহ্লাদিত হওয়ার কি আছে…?

হুম আপনাদের ভাবনা যৌক্তিক। কিন্তু প্রিসিলা রোদেলাদের জীবণ অন্য আট-দশ জনের মতো না। যে পরিস্থিতির ভিতর দিয়ে ওদের যেতে হয় প্রতিদিন, তাতে একটা মানুষের মানসিক ভাবে স্টেবল থাকা অনেক সংগ্রামের। একটা রোগীর সাথে কিছু দিন একজন সুস্থ মানুষ থাকলে নিজেই নাকি রোগী হয়ে যায়। আর ওদের জন্মাবধি বাস করতে হচ্ছে এমন একজনের সাথে যে মানসিক ভাবে সুস্থ না । যদিও তার সুন্দর একটা সামাজিক পরিচয় আছে, অনেক অনেক বিশেষণও রয়েছে তার ঝুলিতে।

সবাই কত কত প্রশংসা করে- আরেহ্ নাসিমা তুমি শক্ত ছিলে বলে মেয়ে দুটিকে মানুষ করতে পারলা, কেও আবার বলে
তুমি যেই যুদ্ধ করলা মেয়ে দুইটা নিয়ে, ওরা যদি ওদের চামড়া কেটে তোমাকে জুতা বানায়ে দেয় তবুও ওদের ঋণ শোধ করতে পারবে না।

আচ্ছা এই পৃথিবীর কোন সন্তানই কি পারবে তার মায়ের ঋণ শোধ করতে….! যে মা জন্মের পর কোন রোগে ভুগে কিংবা অন্য কোন কারনে মারা যায় নবজাতক শিশুটিকে রেখে, তেমন কিছু না করতে পারা ওই হতভাগ্য মায়ের ঋণ কি পারবে শোধ করতে সেই শিশুটি…
পারবে না, এই ঋণ শোধ করার মতো অর্থ, সামর্থ্য কারোরই নেই এই পৃথিবীতে। সত্যি বলতে এসব অবান্তর কথাবার্তা।

তবুও ওদের কিছু কথা অতিরিক্ত শুনতে হয়। অনেকটা বোনাসের মতো। যারা এসব বলে ওর মায়ের মাথাটা লোড করে দেয় তাদের ছেলেমেয়েরা কি তাদের ঋণ শোধ করে ফেলেছে নাকি তারা এসব হিসেবের উর্ধ্বে।

অথচ এসব মানুষ নাসিমাকে এসব বলে তাকে খুশি করতে, কিংবা সহানুভূতি জানাতে…. কিন্তু তিনি এসবকে পুঁজি করে প্রতিনিয়তই ওদেরকে কথা শুনায়। উনি নিজে কত সুন্দর ভাবে বাঁচতে পারতেন ওরা যদি না থাকতো, উনি ছিলেন বলেই ওদের দুই-বোনের পড়াশুনা হচ্ছে, খেতে পরতে পারছে, মাথার উপর ছাদ আছে
নয়তো রাস্তায়…………………..
কি বুঝতে পারছেন তো কি আছে ঐ শূন্য স্থানটায়……!!?

এটা উৎসবের মতো সিজনাল কথাবার্তা না, যে বছরে দুই-তিন বার বললেন…. এসব কথা ওদের জন্য ডাল-ভাতের মত প্রাত্যহিক ব্যাপার। পান থেকে চুন খসলেই, কিংবা তার মন মতো কিছু না হলেই এসব শুনতে হতো ওদের। তার উপর নোভেল তো আছেই মরার উপর খরার ঘা হিসেবে।

মাঝে মাঝে ভাবতো রোদেলা এভাবে বাঁচার চেয়ে রাস্তায় নামাটাই মনে হয় সহজ হতো । কত কত বার ও ভেবেছে হারিয়ে যাবে কোথাও….

এই ধরনের মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে অনেকেই ভয়ংকর কিছু করে ফেলে, কেউ কেউ হয়তো সুই*সাইড ও করে ফেলে। রোদেলাও যে এমন কিছু ভাবে নি তা কে বলতে পারবে…

রোদেলা বাথরুমে কেঁদে কেঁদে হালকা করতো নিজেকে, শান্ত করতো মনকে, ধৈর্য ধরতো। এ ছাড়া কোন উপায় ওর ছিলো না। কিন্তু ওর ছোট বোন প্রিসিলা একবার একপাতা প্যারাসিটামল পুরো খেয়ে ফেলেছিলো। হাতের কাছে এটাই পেয়েছিল মারণ অস্ত্র হিসেবে।

নাহ্… তেমন কিছু হয়নি ওর…
বেঁচে গিয়েছিল ও সে যাত্রায়…
ওরা মরলে মানুষের কথা কে শুনবে….!?
এখন একদল লোক বলবে বাব্বাহ কি মেয়েরে বাবা…! এইটুকন মেয়ে কি ভয়ংকরী…..!

তাদের উদ্দেশ্যে আমি একটি কথাই বলবো- সবার ধৈর্য ধরার শক্তি এক না….

মাঝে মাঝে কিছু ভুল করে ফেলতো রোদেলাও , বয়সটাই ভুল করে শিখবার ছিলো। কেও ভুল ধরিয়ে সঠিকটা বোঝানোর ছিলো না। এমন ভাবে ওদের দোষ ধরতো যেন ওরা জন্ম থেকেই সব শিখে পড়ে এসেছে। তখন ভয়ে তটস্থ থাকতো ও, না জানি কি আছে কপালে এই ভেবে। মারধর তো পান্তাভাত ওদের জন্য। তার সাথে নোংরা কথা তো আছেই…..

মারলে না ব্যাথা একটা সময় চলে যায়, কিন্তু এমন কিছু কথা তিনি বলতেন যা ভিতরে গাঢ় ক্ষতে দাগ কেটে ফেলতো। রোদেলার ভিতরটা পুরোটাই ঐ ক্ষতে ভরা। একটা ক্ষত না শুকাতেই আরেকটা ক্ষত জায়গা করে নেয় সেখানে। আজকের রোদেলা এই যে অনুভূতিহীন তা এসব এলোমেলো ক্ষতেরই যোগফল।

তাই এই রেজাল্টের জন্য যতটুকু পড়াশোনা করতে হতো অন্যদেরতার চাইতে অনেক বেশী এফোর্ট দিতে হতো ওদেরকে। যার সিংহভাগই খরচ হয় বেঁচে থাকার জ্বালানী রূপে। নিজেকে শক্ত রাখতে, ভেঙে না পরতে। সারা দিনের যন্ত্রণা, কষ্ট সব একপাশে সরিয়ে পড়তে বসতে হতো ওদের।
পড়া নিয়ে অলসতা, কিংবা বাহানা করবার কোন উপায় ছিলো না, না ছিলো কেও পড়তে বসবার জন্য তাগাদা দেবার।

ওরা যত শক্ত করছে নিজেদেরকে টিকে থাকার জন্য, ওদের উপর মানসিক নিপিড়ন তত আপডেট হয়েছে দিনকে দিন। তাঁর কাছে সন্তান মানুষ করার একমাত্র এবং একমাত্র উপায় হচ্ছে টাইটের উপ্রে রাখা। ভয় হয় রোদেলার হায় ইশ্বর প্যাঁচ যেন না কাটে। তিনি ওদেরকে নাট বল্টুর মতোই কিছু একটা বাবতেন হয়তো…

তাদের কাছে মানুষ হওয়ার অর্থ খেয়ে-পরে বেঁচে থাকা, পরবার জন্য কাপড়চোপড় দেয়া, থাকবার জন্য জায়গা আর সাধ্য মতো পড়াশোনা করানো৷

ঠিক এই জায়গাতে কিছু মানুষ বলবে- তোমরা দুই বোন বড্ড অকৃতজ্ঞ। পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে যারা একবেলা খেলো তো অন্য বেলা খাওয়ার ঠিক নাই, মাথার উপর ছাদ নেই, পড়াশোনা তো বিলাসিতা। সে হিসেবে তোমরা যথেষ্ট ভালো আছো।

সুখে আছো তো ভুতে কিলায় তোমাদের। কিন্তু বিশ্বাস করেন ওদের মতো অভাগা এই পৃথিবীতে নাই….

ঐ-যে যাদের কথা বললেন, তাদের ভালোবাসার মানুষ আছে, মায়ের স্নেহ মমতা আছে। টাকা-পয়সার মাপকাঠিতে ওরা দরিদ্র হলেও ওদের যা আছে তার মূল্য ঠিক করবে তেমন কারেন্সি এখন অবধি জন্মায় নি এই পৃথিবীতে। স্নেহ, ভালোবাসা এমন এক জিনিস আপনি তা পেয়ে বিশ্ব জয় করতে পারবেন। তাইতো ওরা প্রতিদিন হেরে যায় এই পৃথিবীর কাছে।

তার মানে এই না নাসিমা তার দুই মেয়েকে ভালোবাসে না…
ভালোবাসে… তবে ভালোবাসার প্রকাশ তার কাছে দূর্বলতার নামান্তর। তিনি ভাবেন ওদের কাছে ভালবাসার প্রকাশ হলে তার দম্ভের দেয়াল চূর্ণ হবে।

ওদের মনে পরে না ওর মা ওদেরে খাইয়ে দিয়েছে, গোসল করিয়ে দিয়েছে, আদর করে কথা বলেছে, বাবাগো সোনাগো বলে ঘুম পাড়িয়েছে…. রোদেলার এমন স্মৃতি নেই। জ্ঞান হওয়ার পর ওর নিজের কাজ নিজেই করে, আর বোন হবার পর বোনের এসব কাজ ও নিজেই করে দিতো।

তাইতো ওদের খুব সুনাম আত্নীয় মহলে, কি লক্ষ্মী দুইটা বাচ্চা কোন আবদার নাই, চাহিদা নাই, কোন কিছু নিয়ে ঝামেলা করে না, যা পায় তাতেই খুশি, আর দেখেন না আমার বাচ্চা গুলোকে, এক্কেবারে নাছোড়বান্দা, যা চাই তা দিতেই হবে না দিলে আর রক্ষা নাই। কত সুন্দর প্রশংসা….! কত মধুর যন্ত্রণা দায়ী প্রশংসা তাই না….. ওদের এসব প্রশংসা অনেক না পাওয়ার দাম দিয়ে কেনা……

মাঝে মাঝে আত্নীয়দের কেও কেও তো নিজেদের ছেলেমেয়েদের শাসন করতো ওদের দু-বোনের উদাহরন দিয়ে। মাঝে মাঝে এসব শুনে প্রশংসা নাকি তাচ্ছিল্য তা আলাদা করা যেতো না। যেন অল্পে তুষ্ট হওয়া খুবই সাধারণ ব্যাপার, আর তাদের ছেলেমেয়েদের অকৃতজ্ঞতা এমন ভাবে জাহির করতো যেন তারা বিশেষ কেও।

রেদেলারা দুই বোন যা পেতো তাই খেতো, বেগুন, পটল, ধুন্দুল, চিচিঙ্গা, সজনেডাঁটা সব…. ওদের বড় করা হয়েছে এই ভাবেই, ওরা কোন কিছু পছন্দ অপছন্দ বুঝবার ফুসরত পেতো না। যদ দিয়েছে তাই খেতে হবে। সময়ের আবর্তনে তাইই অভ্যাস হয়ে গেছে।

যদিও এটা অনেক বড় গুন, অথচ কিছু আত্নীয়রা এটাকে গুন হিসেবে দেখতো তো নাই, উল্টো সব খেতে পারাটাকে হাসির বিষয় হিসেবে ব্যাখ্যা করতো। যেখান সব না খেতে পারাটাই অপূর্ণতা। সেখানে ওদের নিজে হাসাহাসি হতো। ওর মা ওদের ডিফেন্স করতো না কখনোই।

একদিন ছোটমামীর বাবার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল রোদোলা। ছোট মামীর বোন খাবার বেড়ে দেবার সময় রোদেলাকে জিজ্ঞেস করেছিলো- রোদেলা কোন পিসের রোস্ট তোমার পছন্দ লেগ পিস, নাকি চেস্ট পিস…
রোদেলা ছোট্ট এই প্রশ্নটায় ভীষণ চিন্তিত হয়ে পরে, নিজের গভীরে ঢুকে প্রশ্ন করে নিজেকে। কোন পিস ওর পছন্দ….
উত্তর খুঁজবে সেই সময় কই, দ্রুত তাই মৃদু হেসে বলেছিলো দিন আপনার যেটা পছন্দ। তিনি একগাল হেসে দুই রকমের দুইটা রোস্ট-ই দিয়েছিলেন। বলেছিলেন আমার দুইটাই পছন্দ। তাই দুইটাই দিলাম, খাও তুমি…

কেমন ছোটলোকি কথাবার্তা তাই না….
জীবণে কি রোস্ট খায় নি রোদেলা….?

নাহ রোস্ট রোদেলা অবশ্যই খেয়েছে। যা পায়নি তা হচ্ছে ভালোবাসা…. পছন্দ করবার স্বাধীনতা। জীবনে সব কিছু ওদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। কেও ভালোবেসে আদর করে জিজ্ঞেস করেনি, জানতে চায়নি কখনো ওদের কোন পছন্দ রয়েছে কি না….

দুনিয়ার সবাই ওদেরকে ভালোবাসে, ওদের মার্জিত কথাবার্তা, বিনিত ভঙ্গী, অল্পে তুষ্টি ভাব, তার উপর ভালো ছাত্রী এসব কারনে। কিন্তু ওর মায়ের কাছে ওরা নর্দমার কীটের চেয়েও জঘন্য কিছু……

ছোটবেলায় যখন খেলতে গিয়ে কারো মার খেয়ে আসতো, তা শুনে তিনি আবার মারতেন, কোন গিয়েছিল খেলতে সেই অপরাধে, অথচ অনেক বাবা-মাকে দেখা যেতো কোন মারামারি ঝগড়া বাঁধলে সন্তানের পক্ষ নিতে। কিন্তু নাসিমা তা কখনোই করতেন না। উল্টো ওকে মারতেন। তাইতো একসময় ওর সমবয়সীরা এই সুযোগটা নিতো, কারন ওরা জানতো মা নামের যে খুঁটিটা ওর রয়েছে তা বড্ড নড়বড়ে, ভঙ্গুর।

কথা হচ্ছে নদীর স্রোতের মতো, কোত্থেকে কোথায় চলে যায়।
প্রিসিলার রেজাল্ট থেকে কই কই ঘুরে আসলাম আমরা…

তো প্রিসিলার যেদিন রেজাল্ট বের হয় সেদিন নাতাশা আসে ওদের বাসায়, ওদের যাবার কথা ছিলো সেদিন, ওরা যায় নি, তাই ওদেরকে নিতে এসেছে। তাছাড়া প্রিসিলার রেজাল্ট বের হয়েছে, সেই খুশিতো আছেই….

নাসিমা তেমন কিছু বললেন না, কারন যে চাবি তিনি মেরে দিয়েছেন আগেই তাতে তার আর কিছু বলার বা করার নেই। রোদেলা-প্রিসিলা দু’জনেই বললো ওরা যেতে চায় না। নাতাশা কি বুঝলো বোঝা গেলো না, তবে একটু পর কল্লোল আসে ওদের বাসায়। নাসিমাকে খুব করে অনুরোধ করে তার মেয়েদের রাজি করাতে। কি নির্মম হাস্যকর পরিস্থিতি তাই না….

এসব করতে করতে বিকেল হয়ে গেলো, কোন সিদ্ধান্তেই পৌঁছালো না কেও, শেষে সন্ধ্যায় যখন বড় মামী তিনটা শাড়ি নিয়ে এলো রোদেলাদের বাসায় তখন তিনি কি বুঝালেন নাসিমাকে তিনি জানেন, নাসিমা রোদেলাকে বললো লাগেজ গুছাতে, রোদেলা বুঝলো না এটা কি কথার কথা নাকি সত্যিই ওদের যেতে বলছেন তিনি। শেষে যখন বাথরুমের উপরের স্টোররুম থেকে লাগেজ বের করলো তখন ওরা বুঝলো ওর মা ওদেরকে যেতে দিচ্ছে….

সব ঝুট-ঝামেলা শেষ করে একঘন্টা সময়ের মধ্যে ওরা তৈরী হলো, কাপড় গুছালো। তবে নাসিমা যাবেন না…
তাকে অনেক জোর করলো কল্লোল। তিনি অসুস্থতার বাহানায় এড়িয়ে গেলেন।

প্রিসিলার বিশ্বাসই হচ্ছে না যে ওরা শেষ পর্যন্ত সেন্টমার্টিন যাচ্ছে। খুশিতে ওর চোখটা ভিজে যাচ্ছে। ও কাপড় গুছাচ্ছে আর চোখ মুছছে…

চলবে…….

Previous :
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/1510243232770196/

next:
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/1516454925482360/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here