#রোদেলা
লেখা: #মাহাবুবা_মিতু
পর্ব: ১২
সকাল সকাল বাড়ির মধ্যে একটা হুলুস্থুল শুরু হয়ে গেলো। গত রাতে নোভেল বাড়ি ফিরে নি। রাতে না ফেরা নতুন কিছু না ওর জন্য, হুলুস্থুল হওয়ার কারন হচ্ছে নতুন বাইক। সকাল সাড়ে পাঁচটায় ও একটা নতুন বাইক নিয়ে এসেছে। তার উপর ওকে কার বাইক জিজ্ঞেস করায় ও উত্তরে বলেছে এটা নাকি ওর বাইক, ওর নিজের টাকায় কেনা। কিছু টাকা বাকী রয়েছে, তা মাসে মাসে কিস্তিতে শোধ করতে হবে।
যে বাইক ও এনেছে তার দাম কম করে হলেও আড়াই লক্ষ টাকা….! ছোট মামা ওকে ধমকে বললো এত টাকা তুই কোথায় পেলি আর বাকী টাকা তুই কিভাবে শোধ করবি, কি এমন কাজ করিস তুই…!
ছোট মামাকে দেখা গেলো ওকে তেড়ে গিয়েছে মারতে, এই চিৎকার চেচামেচির শব্দে ঘুম ভাঙলো রোদেলার। হুড়মুড় করে ডাইনিং রুমে গেলো ও । বিশ্রী একটা পরিস্থিতি। বড় মামা ছাড়তে চেষ্টা করছেন, রোদেলার মাও পাশে দাড়িয়ে, কথা বলতে চেষ্টা করছে, ছোট মামা তাঁকে ধমক দিয়ে বললো, আপা তুই যা এখান থেকে, এখন আাবর বলিস না, যে টাকাটা তুই দিয়েছিস ওকে….. যা করবার তা করে ফেলেছিস ওকে, ও এখন বাতিল খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলেছে। এর উত্তরে উত্তপ্ত গলায় নোভেল বলে-
ফুফু টাকা দিবে কেন, কথা কি কান দিয়ে যায় না কারো, যে আমি নিজের টাকায় কিনেছি…
এ কথাটায় মামার ধৈর্যের বাঁধ যেন ভেঙে গেলো, সবাইকে সরিয়ে উনি নোভেলকে মারতে তেড়ে গেলেন। বড় মামা ওকে ঘরের ভিতর চলে যেতে বললেন, কিন্তু ও ঘাড়ত্যাড়ামি করে দাঁড়িয়েই রইলো। ছোট মামা যখন ওকে মারতে হাত তুললো, নোভেল তার হাত ধরে ফেলে, আর বলে জোড় কিন্তু আমার গায়েও আছে, আমার সাথে কেও যেন শক্তি না দেখায়, নোভেলের এই আচরণটাই করা ছিলো বাকি, এসব দেখে রোদেলার মা নোভেলের গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দেন। এসব দেখে বাড়ির সকলে স্তম্ভিত। যত যাই হোক লোকটা ওর বাবা, ওকে শাসন করতেই পারো, তাই বলে এমন আচরণ করবে…..?
হাত ছড়িয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় ও, নিচে গিয়ে দেখে রাগের মাথায় বাইকের চাবি নিতে ভুলে গেছে। অগত্যা ফোন করে রোদেলাকে, আপা তোর বারান্দা দিয়ে বাইকের চাবিটা দে তো….
রোদেলা ভেবে পায় না কি করবে, বড় মামাকে কথাটা বলেন। বড় মামা বলে দিয়ে দে চাবি, ছোট মামা বলে না চাবি দিবি না, ও কোথায় কোন ঝামেলা করে আসছে, ওর কত বড় সাহস। বড় মামা পরে ছোট জনকে বুঝিয়ে চাবি রোদেলাকে দিয়ে পাঠায়। নোভেল চলে যায় বাইক নিয়ে।
রোদেলা এসব ব্যাপারে অবাক হয় না, কিছু কিছু ব্যাপারে ভবিষ্যৎ দেখতে পায় ও, এটা কেন সুপার পাওয়ার না, কিছুটা হিসাব নিকাশের ব্যাপার। যে কেউ একটু চোখকান খোলা রাখলেই এসব হিসাব সহজেই করতে পারে।
সামনে কি হতে পারে তার একটা খসড়া তৈরী হয়ে গেছে ওর মনে। আজ রাতে নোভেল বাসায় ফিরবে না, যেদিনই আসে সেদিনই একটা বিচার বসবে রাতে, নোভেলকে বাইক ফিরিয়ে দিতে বলা হবে, নাহলে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলবে। এবং নোভেল বাসা থেকে বের হয়ে যাবে।
ছোটমামা মুখ এক হাতের উপর রেখে ঢেকে রেখেছে। পুরুষরা তো কাঁদতে পারে না। একটা বিগড়ে যাওয়া সন্তান বাবা-মায়ের যে কি যন্ত্রণার কারন হতে পারে তা তাদের না দেখলে মানুষ বুঝতে পারবে না। তিনি বড় মামাকে আর্দ্র কন্ঠে বললেন – আমার এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত ছিলো, অনেক বড় ভুল করেছি আমি, এই ভুলের পরিনামেই আজ নোভেল এই জায়গায় পৌঁছে গেছে। অনক বড় ভুল হয়ে গেছে….!
কথাটা একে একে তিনবার বললেন তিনি।
রোদেলার মা ধীর পায়ে তার ঘরে চলে গেলেন। পরোক্ষভাবে তাকেই দোষী করে কথাগুলো বলছেন তিনি তা খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছেন। একেক জনের অভিযোগে আজ তিনি বড্ড ভারী অনুভব করছেন হয়তো, তাই তার পদক্ষেপ এত ধীর, এত শান্ত। প্রতিবাদ করার অস্ত্রটা এই প্রথম তিনি ব্যাবহার না করেই ঘরে ফিরে যাচ্ছেন।
বড় মামী স্বান্তনা দিলেন ওকে। বললেন সব দায়িত্ব ছেড়েছু্রে, ছেলের সাথে দূরত্ব বাড়িয়ে এখন এসব কথা বলছিস….?
এ বয়সে সন্তানদেরকে বাড়তি নজরদারিতে রাখতে হয়, আর তুই…!? কোন খেয়ালই রাখিস নি, টাকার পেছনে ছুটেছিস, যাদের ভবিষ্যৎ ভেবে এই ছুটাছুটি, এই ব্যস্ততা, এই হাড়ভাঙা খাটুনি দিনশেষে তারা অনেক দূরে চলে গিয়েছে, তুই একটু টেরও পাস নি। তুই ছোট হওয়া স্বত্ত্বেও তোর বড় ভাইয়ের চেয়ে বেশী সম্পদের মালিক। কত পরিশ্রম, আর ত্যাগে, এ সম্পদ, এই প্রতিপত্তি এনে দিয়েছে তোকে তা আমরাও জানি।
কিন্তু যে সম্মান, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আমরা সন্তানকে দিয়েছি আর ওরা আমাদের করে তার দাম কি অর্থে মাপা যাবে…..
গড়পড়তায় তুই রোদেলার মাকে দোষ দিচ্ছিস, হয়তো তার ভালোবাসার পদ্ধতি ভুল ছিলো, কিন্তু উনি তোর নোভেলের প্রতি অবহেলা, অনাদর গুলোকে বেশী ভালোবাসা দিয়ে পূরণ করতে চেয়েছে। নিজের সন্তানদের চেয়েও ওকে বেশী ভালোবেসেছে। এত লাঞ্চনা, অপমান শুনেও মাটি কামড়ে পরে আছে, কারন উনি চলে গেলে নোভেলকে কে আগলে রাখবে এই ভয়ে, বিনিময়ে কি পেয়েছে তোর আর তোর বৌর অপমান….. দিনশেষে উনি দোষী। নিজের সন্তানদের কাছে, তোদেরও কাছে…
তুই যখন বুঝেই ছিলি ছেলে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে তখন কেন শক্ত হাতে ছেলের দায়িত্ব নিলি না, শুধু কি খরচের টাকা আর স্কুলের বেতন দিলেই দায়িত্ব শেষ…?
আজ পর্যন্ত যে এক পাতিলের ভাত সবাই খাচ্ছে, এক ছাদের নিচে সবাই থাকছে একটু ভেবে দেখ কার জন্য, আর তাতে তার কি লাভ….
ছোট মামা একটাও কথা বললেন না, ছোট মামী বাড়িতে থাকলে হয়তো তিনি কিছু বলতেন মামার পক্ষ হয়ে, আজ তিনি একা, এত বড় দুনিয়ায় তার বড্ড একালা আর নিঃস্ব লাগলো তার নিজেকে…..
তিনি কোন কথা না বলেই তার ঘরে চলে গেলেন। ভাগ্য ভালো ছোটমামী বাড়ি নেই, তার বাবা অসুস্থ হওয়ায় গতকাল রাতে তার বাবার বাড়িতে গিয়েছেন। মামা রাতে ফিরে এসেছেন। তিনি রয়ে গেছেন। তা না হলে এই কথাগুলো হয়তো বড় মামী বলতে পারতেন না।
রোদেলা ওর মায়ের ঘরে গেলো। দেখলো ওর মা হাপুস নয়নে কাঁদছে । রোদেলা দাঁড়িয়ে দেখলো, নতুন কিছু আবিষ্কার হলে যেরকম অবাক দৃষ্টিতে দেখে ঠিক সেরকম করে।
এই প্রথম ও ওর মাকে কাঁদতে দেখল। ওর মাকে এর আগে কখনো কেও কাঁদতে দেখেছে কিনা সন্দেহ। কান্নাই যদি জানে তাহলে ভিতরটা এত ভারী কেন ওর মায়ের…..
কেন এই ঘৃণা পৃথিবীর প্রতি, মানুষের প্রতি। কান্না জানা মানুষ তো ভালোবাসতে জানে… ভালোবাসা যখন ফুরিয়ে যায় কান্নাও হয়তো তখন শেষ হয়ে যায়। তাহলে কেন ওদের ভালোবাসে না…
ছোট মামার ঐদিনকার ব্যাবহারে তিনি মুষড়ে পরেছিলেন, আজ তাই আগ বাড়িয়ে নোভেলকে বাঁচাতে চান নি, তাছাড়া হয়তো তিনি তার ভুল বুঝতে পেরেছেন। হয়তো এই ধাক্কা তাকে শুধরাতে সাহায্য করবে। যা করেন আল্লাহ ভালোর জন্যই…
বাড়িটা কেমন মরা বাড়ির মতো হয়ে আছে, রোদেলা আজ আর কলেজে গেলো না। স্টুডেন্ট গুলোকে সকালে আসতে বললো ফোন করে। একটু ব্যাস্ত থাকলে মন ভালো হবে।
রাতের কথা রোদেলা বেমালুম ভুলে গেছে, এসব বিতিকিচ্ছিরি ব্যাপার ঘটলে মনে না থাকাই স্বাভাবিক। রোদেলার মা তার ঘরে শুয়ে আছেন। কিছু না খেয়ে। রোদেলা ওর মায়ের ঘরে খাবার দিয়ে এলো। ডেকে বললো খেতে। তার প্রেশার হাই তাই নিয়মিত ঔষধ খেতে হয়। রোদেলা বললো উঠে কিছু খেয়ে ঔষধটা খাও। নাহলে আবার অসুস্থ হয়ে পরবে।
তিনি কোন উত্তর দিলেন না, না শোনার ভান করে উল্টো পাশ হয়ে শুয়ে রইলেন। তার শরীর মৃদু কাঁপছে। রোদেলা বুঝতে পারছে ওর মা এখনো কাঁদছে। রোদেলা ওর মায়ের শরীরে হাত দিলো, তার সাথে লেপ্টে গিয়ে তার মুখের কাছে মুখ নিয়ে বললো
: লক্ষী মা আমার উঠো…. শরীর খারাপ হলে বাড়ির কি অবস্থা হবে…
তিনি এবারও উত্তর দিলেন না। ওকে হাত দিয়ে সরিয়ে উঠে বসলেন। রুটির এক কোণা মুখে দিয়ে পানি নিয়ে ঔষধ হাতে নিলেন, রোদেলা বললো একটুতে কি হবে, একটা রুটি অন্ততঃ খাও। রোদেলা আরেকটু রুটি ছিড়ে সবজি দিয়ে
খাইয়ে দিলেন। তারপর আর খেতে চাইলেন না তিনি, ধমক দিয়ে বললেন ঔষধ দে…
ঔষধ মুখে দিয়ে পানি নিয়ে আবার শুয়ে পরলেন।
রোদেলা ঘরের পর্দা গুলো দিয়ে দিলো, দড়জা ভিড়িয়ে দিলো। থাকুক কিছুক্ষণ একা। নিজেকে চিনতে একা থাকার দরকার আছে।
রোদেলাকে বড় মামী নাশতা নিয়ে পাঠালো ছোট মামার ঘরে। তিনি রাতেও কিছু খান নি, রোদলা ছোট মামার ঘরে গিয়ে মামাকে নাশতা দিলো। অনেক জোরাজুরির পর তিনি নাশতা খেলেন। এ বাড়িতে যত সমস্যা সব কিছুর সমাধান রোদেলা। ও কিভাবে যেন সব সমাধান করে ফেলে। অথচ ওর জীবণের সমস্যা সমাধান করার কেও নেই।
বিকেলে সবাই মিলে ছাদে গেলো ওরা। ছোট মামী দুপুরে বাসায় এসেছেন। তিনি এসবের কিছুই জানেন না। এ ব্যাপারে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রেখেছেন সবাই। মামাও হয়তো কিছু বলেন নি। তিনি সেন্টমার্টিন সম্পর্কে আলাপ করছেন। ছোট মামী বললো-
: ভাবী তারা থ্রিপিস পাঠালো সবার জন্য, আমাদের ও তো উচিত সবার জন্য কিছু দেয়া, কি বলো রোদেলা,
রোদেলা হ্যা সূচক মাথা নাড়ালো,
বড় মামী বললেন-
: বুদ্ধি মন্দ না,
: শাড়ি দিলে কেমন হয় ভাবী, নীল সমুদ্র নীল শাড়ি…
: সবাইকে নীল রঙে মানাবে…?
রোদেলা বললো –
মামী নীল মানে তো গাঢ় নীল না, হ্যান্ড পেইন্টের শাড়ি পাওয়া যায় বুটিক হাউজ গুলোতে, ওদেরকে বললে ওরা কাস্টোমাইজ করে তৈরী করে দিবে।
ছোট মামী বললেন-
: বাহ…! তোমার বান্ধবীর মায়ের না বুটিক শপ আছে, চলো আমরা শাড়ি গুলো অর্ডার করে আসি,
: মামী এতে খরচ বেশী পরবে, তারচেয়ে বরং গজ কাপড় পছন্দ মতো কিনে ব্লকের দোকানে দিয়ে আসি, তাতে মন মতো কাপড়ও হবে, ওদের কাপড়গুলো বেশীরভাগই পাতলা হয়।
বড় মামী বললো-
এটাই ভালো হবে রোদেলা, আনিসকে গাড়ি বের করতে বল, আমরা মাগরিবের নামাজের পরেই রওনা হই।
যেই কথা সেই কাজ। ওরা গাড়ি নিয়ে রওনা দিলো ইসলামপুরের উদ্দেশ্যে। ছোট মামীর ভাইয়ের দোকান আছে গুলশানআরা মার্কেটে। সে সুবাদে ওদের আর ঘুরাঘুরি করা লাগলো না। নীল রঙের কাপড়ের রোল দিয়ে দোকান ভরে ফেললো স্টাফরা । অনেক বাছবিচার করার পর মিহি একটা কাপড় নীলো স্নিগ্ধ একটা নীল রঙের। নীল রঙ এত সুন্দর কাপড়টা না দেখলে বুঝা মুশকিল। দুই বাড়ি মিলিয়ে সতেরো জন মেয়ে। সেই হিসেব করে কাপড় কেনা হলো। এত কাপড় ওরা নিবে কিভাবে তাই তাদের দোকানেই রাখা হলো, পরদিন দোকানের কোন স্টাফকে দিয়ে সরাসরি ব্লকের দোকানে পাঠিয়ে দিবে বললেন ছোটমামীর ভাই। ফিরবার সময় তিনি নিজে সাথে এসে পুরান ঢাকার বিখ্যাত কাচ্চি খাওয়ালেন। বিউটির লাচ্ছিও আনালেন। তিনি খুবই আন্তরিকতা দেখালেন। ছোটমামীর পরিবারের সবাই ভীষণ ভালো মানুষ।
তারা সবাই অনেক সুন্দর, আরো সুন্দর তাদের মন। মানুষকে কিভাবে ভালোবসতে হয়, আপন করে নিতে হয় তাদের চেয়ে ভালো কেউ জানে কিনা সন্দেহ।
ফিরতে ফিরতে রাত সাড়ে নয়টা বাজলো, ফিরবার পথে একটু জ্যাম পরেছিলো। বাড়ি ঢুকেই ওরা দেখলো আবু সুফিয়ান অর্থাৎ নোভেলের বড় ভাই ড্রাইং রুমে বসা, খুব সম্ভবতঃ বিচার হচ্ছে নোভেলের, তিনি এসেছেন সুপারিশ করতে।
তাকে দেখে রোদেলা চমকে গেলো। বিস্তর ফারাক ঐদিনের আর আজকের মানুষের মধ্যে। এই ফারাক তার বয়স দশবছর কমিয়ে দিয়েছে। কাপড়চোপড় বেশ পরিপাটি, ক্যাজুয়াল ড্রেসআপ। হাতে দামী ঘড়ি। সবচেয়ে চোখে পরা বিষয়টি হচ্ছে তার পান খেয়ে কালো করে ফেলা দাঁত আজকে চকচক করছে। রোদেলাকে দেখে উঠে দাড়ালেন তিনি। রোদেলা কোন সম্মানীয় ব্যক্তি নন যে ওকে দেখে উঠে দাঁড়াতে হবে। ও ফিক করে হেসে বললো-
: আরে আবু সুফিয়ান ভাই, কেমন আছেন….?
: আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি,
: বসেন বসেন, আপনাকে এখনো চা দেয়া হয়নি…!!!
: ব্যাস্ত হয়ো না, আমি এইতো কিছুক্ষণ আগেই এসেছি।
কথাবার্তায় ও বিশাল পরিবর্তন। তিনি শুদ্ধ ভাবে উচ্চারণ করেছেন প্রতিটি শব্দ। মনে মনে রোদেলা বললো-
বাহ…! আবু সুফিয়ান, এবার তোমার পেটটা কমাও, তাহলেই পারফেক্ট।
রোদেলা ওর ঘরে গেল ফ্রেশ হতে, মামীরা কেও চিনলো না,
রোদেলা বলল এই সেই নোভেলের বড় ভাই দ্যা বস…! বলেই হেসে চলে গেলো ওর ঘরে।
নিচে কথাবার্তা কি হলো বোঝা গেলো না। একবার খবার বেরে দিতে গিয়ে রোদেলা ছোটমামাকে বলতে শুনলো-
: দেখুন আপনি কেন ওকে এত দামী গাড়ি কিনে দিবেন, আমার কি ওকে কিনে দেবার সামর্থ্য নেই,
: দেখুন মামা ও গাড়িটা কিনে ফেলেছে। সেটা আপনাদের সম্মতিতে হোক কিংবা অসম্মতিতে হোক কিনেছে। আমিও আপনাদের সাথে একমত যে ও কাজটা ঠিক করে নি। কিন্তু মামা কিছু ব্যাপার থাকে যা ঘটে যাবার পর মেনে নেয়াটাই শান্তিপূর্ণ হয়। আপনি এটা নিয়ে ওকে শাসন করলে ব্যাপারটা বড় হতে থাকবে, পরে দেখা গেলো হিতে বিপরীত হলো। আপনাকে ও বলেছিলো গাড়ি কিনে দেবার কথা, আপনি শুনেন নি, বয়স বিবেচনা করেই শুনেন নি। কিন্তু এখন যদি টাকাটা আপনি দেন তাহলে ওর অন্যায় আবদার মেনে নেয়া হবে। আমি টাকাটা দিলে ওকে বোঝাবো যে টাকাটা আমি তোকে ধার হিসেবে দিলাম, তখন ওর একটা তাড়না থাকবে টাকা আয় রোজগারের দিকে। পড়াশুনা তো কিছুই হলো না। অন্তত এটার মধ্যে দিয়ে ও কাজে মন দিক।
বড় মামা সায় দিলেন। ছোটমামা বললেন দেখুন আমি ওকে কেন দিক দিয়েই ভরসা করি না। আমার কারখানায় দেড়শো স্টাফ কাজ করে। আজ পর্যন্ত ওকে নিতেই পারলাম না সেখানে। ও কি কাজ করবে….?
মামা আপনি একদমই চিন্তা করবেন না, আমি ঠিক ওকে একটা কাজের ব্যাবস্থা করে দিবো। আপনি শুধু আমার উপর ভরসা রাখুন।
রোদেলার কথাগুলো ভালো লাগলো। কিন্তু কথা কাজে মিল থাকলেই হলো… তার এত কেন দায় নোভেলের প্রতি সেটাই একটু খটকা লাগলো। ছোট মামা তার উপর ভরসা করলো বটে, অন্য কোন উপায় নেই তাই হয়তো…..
যাবার সময় আবু সুফিয়ান ভাই রোদেলার মায়ের খোঁজ করেন। রোদেলা বললো ওর মা একটু অসুস্থ। তিনি আগ বাড়িয়ে রোদেলার মায়ের ঘরে গিয়ে তাকে দেখে আসেন। মামীদের সাথে পরিচিত হলেন। খুব বোঝা গেলো তিনি এ বাড়ির একজন হতে চাচ্ছেন। এটা কোন সমস্যা না৷ এত উপকারী ভালো মনের মানুষ পাশে থাকা ভালো।
রোদেলার মা রাত দশটায় তার ঘর থেকে বের হলেন। স্বাভাবিক ভাবে ঘরের কাজ করতে লাগলেন। রাতে খাবার সময় বড় মামীকে বললেন। ভাবী আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি…
বড় মামী খাওয়া বাদ দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললেন
: কোন ব্যাপারে…?
: আমি বাসা ঠিক করে চলে যাবো সামনের মাসে। বড় ভাইকে বলবেন, নতুন বাসার জন্য কিছু কেনাকাটা করতে হবে। টাকাপয়সা দরকার। তিনি যেন আমাকে সব কিছু বুঝিয়ে দেন।
বড় মামী কিছু বললেন না, ছোট মামী ও তাকিয়ে আছেন রোদেলার মায়ের দিকে। কিন্তু তিনি কারো দিকে তাকাচ্ছেন না। কথা গুলো বলে ভাতের প্লেট হাতে করে তার ঘরে আলে গেলো। রোদেলা আর প্রিসিলা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে রইলো, ছোট মামী আর খেলো না, উঠে বেসিনে হাত ধুয়ে রান্নাঘরে গেলেন। বড় মামী ওদের ধমক দিয়ে বললেন তোরা খাচ্ছিস না কেন, খাবার শেষ কর….
ওরা খাওয়া শুরু করলো। সবাই চলে গেলে দুবোন কথা বলা শুরু করলো
: কিরে আপা কি হলো আজ মায়ের,
: কি জানি…!
: খুব জব্দ হয়েছে এবার, এতে শিক্ষা না হলে তার জীবণেও শিক্ষা হবে না। আচ্ছা আপা আমরা একা বাসা নিয়ে তিনজনে থাকতে পারবে না….?
: হুম খুব পারবো…
: মাকে বল না, বাবার কাছে চলে যাই আমরা….!
রোদেলা স্তম্ভিত চোখে তাকিয়ে থেকে বললো-
: এ কথা আর কক্ষনো বলবি না….
চলবে….
Previous :
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/1491806677947185/
Next:
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/1494590951002091/