রোবট প্রেম
পর্ব : ২
লেখক : শিশির আহমেদ (নীল)
– তারপর আস্তে আস্তে শিশির মারিয়াকে সব কিছু চিনিয়ে দিচ্ছিলো। কোন কাজটা কিভাবে করতে হবে! কখন কি করা উচিত। কোন কাজ গুলা করতে পারবে না। ২-১ দিনে মারিয়াকে সব বলতে গেলে শিখিয়ে দিলো। আর শিশির দেখলো মারিয়া এত্তো প্রশ্ন করে যে না হেসে পারলো না। প্রথমে তো কথাই বলতো না। সব কিছু শিখে নেয়ার পর মারিয়া কাজগুলো নিজেই করা শুরু করে দিলো। যদিও সব ঠিক ভাবে হয় না। শিশিরকে কফি বানিয়ে দেয়!অগুছালো কোনো কিছু গুছিয়ে রাখে। ইলেকট্রনিক এর সাহায্যে রান্না করতে পারে আর শিশিরকে তো প্রশ্নের বিরক্তিতে রাখেই। কিন্তুু এগুলোতে শিশিরের বিরক্তি লাগে না। অদ্ভুত প্রশ্নগুলা শিশিরের নিংসঙ্গতা দূর করে। এর মাঝে শিশিরের কাছে চিঠি আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক পদটি নিতে রাজি আছে কি না। সিদ্ধান্ত নিতে পারে না শিশির। ও সারাদিন মারিয়াকে নিয়েই পরে থাকতে চায়। কিন্তুু একেবারে কিছু না করলে ও হয় না। এদিক দিয়ে মারিয়া কে প্রতিদিন অনেক কিছু শুনায়। এই পৃথিবী, পৃথিবীর সৃষ্টির রহস্য, পৃথিবীর মানুষ এমনকি ওর নিজের কথা। মারিয়া ও মনযোগী শ্রোতার মতো শুনতে থাকে। একদিন মারিয়া ওর নিজের সমন্ধে অদ্ভুত প্রশ্ন করে ফেলে। শিশির ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বলে ‘তুমি হচ্ছো অন্য সবার থেকে ভিন্ন। আর এসব নিয়ে না প্রশ্ন করলেই বেশি খুশি হবো। মারিয়া মন খারাপ হয়ে যাওয়ার মতো করে থাকে। শিশির তখন রেগেমেগে, চিৎকার করে বলে ‘বললাম না তুমি ভিন্ন, আমার কাছে সবচেয়ে সুন্দর, এখানে মন খারাপের কি হলো!! একথা শুনে মারিয়া হেসে দেয়ার মতো শব্দ করলো। শিশির : আচ্ছা তোমার মন খারাপ যখন হয় তখন কেমন লাগে? মারিয়া : মনে হয় আমার মাথায় কি জানি উঠানামা করছে!! শিশির : হুম,জানতাম। আর হাসির ব্যাপারটা? মারিয়া : আমার ভিতরে তরঙ্গ সঞ্চার হচ্ছে মনে হয় তখনি আমার হাসতে ইচ্ছে হয়। শিশির: একটু বেশি তোমার মধ্যে তরঙ্গ সঞ্চারিত হয়। আর কান্নার ভয়েস মানে কান্না করার সময় কি মনে হয়? মারিয়া : তখন ভিতরে অসহ্য….একটা চাপ অনুভব হয়। শিশির: এর মানে হচ্ছে তোমার মস্তিষ্কে একটা কম্পন অনুভব করো,আর তখনি তোমার মনে হয় তুমি অনেক কষ্ট পাচ্ছো। মারিয়া: আমার কেন এমন হয়? শিশির: কি বলো এইগুলা তো অনুভূতি, এসব তোমার আমার সবারই হবে। মারিয়া : ওহ বুঝতে পারছি।
শিশির কিছুদিনের মধ্যে গবেষক এর কাজটি করতে রাজি হয়ে যায়। সেটা মারিয়াকে ও জানায়। তখন অবাক হওয়ার মতো করে বলে: কেনো করবে? শিশির: বেঁচে থাকার জন্য তো আমার কিছু না কিছু করতে হবে।
মারিয়া : না করলে কি মরে যাবা? শিশির : দূর বোকা মেয়ে!! কিছু বুঝে না! আমি বলতে চেয়েছি এই যে তুমি আর আমি যে একসাথে থাকছি আমি যদি কিছু না করি আমার টাকা তো সব শেষ হয়ে যাবে। তখন তো আমার পথে বসতে হবে। মারিয়া: এখন বুঝতে পারলাম। শিশির: আর তুমি মারা যাওয়া নিয়ে জানলে কি করে? মারিয়া : সেদিন দেখেছি। শিশির: দেখেছো মানে? তারপর মারিয়া একটা বই বের করে দেখালো। শিশির: এটা দেখা না তুমি বই পড়েছো সেটা বলবা। মারিয়া : ওহ হ্যা! আমি বইতে পড়েছি। শিশির: আর কি কি বই পড়ো আমাকে তো কিছুই বলো না। এত পঁচা কিভাবে হলে তুমি!! মারিয়া: আমি পঁচা না, আচ্ছা দেখাচ্ছি আমি কি কি বই পরেছি।
– তারপর মারিয়া একটা বই খুলে শিশিরকে একটা অদ্ভুত জিনিস দেখালো আর বললো , শুধু তোমার মরার বিষয়টা না আমার মৃত্যুর বিষয়ে ও সব জানি আমি। শিশির, লক্ষ্য করে দেখলো মারিয়ার দেখানো বইটা হলো, রোবট তৈরীর জন্য বিভিন্ন উপাদান সমূহ এবং কিভাবে নষ্ট করা হয় ঐ ছবিগুলোকে উদ্দেশ্যে করছে মারিয়া। তার চোঁখে মুখে হঠাৎ হতাশার ছাঁয়া নেমে আসলো। শিশির বুঝে উঠতে পারছিলো না কি বলা উচিত তাঁর। তারপর হঠাৎ, মারিয়া তাঁর হাতটা ধরে শিশিরের সামনে বসে যায়। যন্ত্র মানবী সেইজন্য হয়তো চোঁখ থেকে পানি ঝরছেনা কিন্তু শিশির ঠিকই বুঝতে পেরেছে কষ্টকর কিছু বলতে চলেছে।
মারিয়া : আমি যদি তোমার কোন প্রয়োজনে না লাগি আমাকে মেরে ফেলবে না তো?
শিশির কথাটা শুনে অবাক হলো! মারিয়ার বুদ্ধিমত্তার উন্নতি দেখে। একটু হেঁসে বলল, নাহ সেটা কখনো করবোনা ভয় পেয়োনা। কথাটা শুনার পর, মারিয়া উঠে দাড়িয়ে শিশিরকে কিছু বলতে যাবে তখনি একটা ওয়ার্নিংয়ের সাথে সাথে কথা বলা বন্ধ হয়ে গেলো। তারপর, শিশির মারিয়ার প্রব্লেমটা খুজতে গিয়ে দেখে মেমোরিটা একটু…
চলবে