রোবট প্রেম পর্ব : ৯,১০

0
705

রোবট প্রেম
পর্ব : ৯,১০
লেখক : শিশির আহমেদ ( নীল)
০৯

– সেদিন সন্ধ্যায় শিশির মাইশা কে আনতে যায়। মাইশা দেখে ও অবাক হয়ে যায়। চেহারাটা শুকনা হয়ে একদম ছোট হয়ে গেছে।
মাইশা কে বাসায় আনার পর মারিয়া একভাবে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষন পর ও মাইশার গাল আর হাত ধরা টানাটানি শুরু করলো।
শিশির : এই কি করো!! ও ব্যাথা পাবে তো!!
মারিয়া : পাবে না । আমি তো ওকে আদর করতাছি।
শিশির : পরে আদর করবা। এখন ওকে খাওয়াতে হবে।
মারিয়া : ওহ!!আচ্ছা । আমি খাইয়ে দিবো?
শিশির : না তুমি পারবে না, আমি দিবো।
মারিয়া : কিন্তু আমি গল্পে পড়েছি, সবসময় আম্মুরা খাইয়ে দেয়। তো আমি তো ওর আম্মু, আমিই খাইয়ে দিব।
শিশির : মাঝে মাঝে বাবারা ও খাইয়ে দেয়। আর আমি জানি তুমি পারবে না, তবে পরে শিখে নিবে।
মারিয়া : তাহলে তুমিই দাও, আমি দেখি কিভাবে খাওয়াতে হয়।
– পরের দিন শিশির মাইশা কে ঘুরতে নিয়ে গেলো। আসার সময় মাইশার জন্য জামাকাপড়, জুতো কিনে দিলো। বাসায় আনার পর মারিয়া এসবে বেশি তদারকি করছে। মারিয়া জামা ঠিক করে পরিয়ে দিলেও জুতো উল্টো করে পরিয়ে দিয়েছে। শিশির ঠিক করে পরালেও মারিয়া আবার উল্টো করে পরিয়ে দেয়। ওদের এরকম কাজকর্মে মাইশা হা করে দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে।
– মারিয়া অনেক চেষ্টা করে মাইশা কে খাইয়ে দিতে। কিন্তুু ওর চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ও একদমই পারে না। তখন মাইশা ওকে অনেক ভয় পায়। কিন্তু সারাদিন ওর সাথে দুষ্টামি করে। এসব দেখে শিশির চিন্তা করে ওর ইউনিভার্সিটির টাইমে একজন পরিচারিকা রাখবে। যে মাইশাকে এসে দুপুরে খাবার খাইয়ে দিবে আর গোসল করিয়ে দিবে। মারিয়াকে বলায় এই ব্যাপারে কিছুই বলল না। অবশেষে একটা পরিচারিকা রেখেই ফেলল। পরিচারিকাটার নাম আয়রা। এখনো পড়াশোনা শেষ হয় নি আয়রার। শিশির ওকে বলে দিল প্রতিদিন মাইশা কে ২-৩ ঘন্টা সময় দিবে। আর নির্দেশনা অনুযায়ী সব কাজ করবে। তবে মারিয়া কে যাতে কাছ থেকে যাতে না দেখে শিশির সেই ব্যবস্থা করে রেখেছে।
কিছুদিন পর মারিয়া আয়রা মেয়েটিকে একদমই সহ্য করতে পারে না। ও সবসময় এই ব্যাপারে শিশিরের উপর বিরক্ত হয়ে থাকে। মারিয়া : এই মেয়েটাকে রাখার কি দরকার ছিলো!!???
শিশির : কেনো?.. কিছু হয়েছে??….
মারিয়া : না,এই মেয়ে টাকে আমার ভালো লাগে না।
শিশির : কেনো লাগে না??..!!
মারিয়া : জানি না, তবে সহ্য করতে পারছি না।
শিশির : তাহলে কি করবো?
মারিয়া : সেটাও জানি না … মাইশা আমার সাথে সময় কাটাবে…!! আর তুমি ওই মেয়েটার সাথে কথা বলো কেনো ??
শিশির : আচ্ছা কথা বলব না আর বাদ দিয়ে দিব!! শিশির বুঝতে পারছে ওর মধ্যে একটা হিংসা মনোভাব তৈরি হয়েছে যার জন্য আয়রা মেয়েটাকে দেখতে পারে না।
মারিয়া : সত্যি!! কবে বাদ দিবে? কালকেই দিলে ভালো হয়!!
শিশির : না,কিছুদিন পর।….মাইশা নিজের কাজগুলো টুকটাক শিখুক তারপর…।
মারিয়া : এখন বাদ দিলে কি হয়???
শিশির : আমরা মাইশাকে শিখাতে পারছি না কোন কাজ সেজন্য রাখছি।
মারিয়া : তারমানে ততদিন মেয়েটাকে আমার সহ্য করতে হবে।
শিশির : প্রমিস, আমি অনেক তাড়াতাড়ি মেয়েটাকে বিদায় করব।
মারিয়া : দেরি হলে আমিই থাপ্পড় দিয়ে বাইরে ফেলে দিব।
শিশির : হাহাহা, গুড আইডিয়া। কিন্তু ভুলে ও এরকম করতে যেয়ো না।
মারিয়া : হুহ করলাম না
– শিশির বুঝতে পারে মারিয়ার এসব আচরনগুলা। কিন্তু ওর কিছু করার ছিলো না বলে বাধ্য হয়ে পরিচারিকা রেখেছে। দিন যত বাড়তে থাকে মারিয়া তত বেশি অসহনীয় মনে করতে লাগলো আয়রা কে। মাইশা যদি আয়রার ব্যাপারে কিছু বলে মারিয়া সবসময় রেগে যেতো।
মারিয়া : তুমি খেয়েছো, মাইশা???
মাইশাঃ জানো আজকে আয়রা মিসি আমাকে অনেকগুলা করে খাইয়ে দিছে।
মারিয়া : খাইয়ে দিলেই কি আর না দিলেই কি!!?? বিড়বিড় করে বলছে -“মেয়েটা অসভ্য,বেয়াদব। জংলীদের মতো থাকে। একটা আফ্রিকান বাঁদর গলায় ঝুলিয়ে রাখা উচিত। শেওড়া গাছের ডাইনী একটা। আসে প্রতিদিন চেহারা দেখাতে। ”
মাইশা: আম্মু কি বলছো একা একা!!??…
মারিয়া : কিছু না বেবি,কাজ করছি।
মাইশা : আম্মু আমি এখন চকোলেট খাবো।
মারিয়া : ওই মেয়েটা থাকতে বলো নি কেনো?
মাইশা: তখন তো ইচ্ছে করে নি। আর চকোলেট তো তোমার কাছেই।
মারিয়া : হুম আসো দিচ্ছি, একা একা খেতে পারবে?
মাইশা: হ্যা পারব।
মারিয়া চকোলেট দিয়ে বলল- এই নাও.. আর শিশির আসলে বিচার দিতে হবে ওই মেয়েটার নামে। ও তোমাকে চকোলেট না খাইয়ে চলে গেছে। ওর থাকা আর না থাকা এক রকম।
মাইশা: আম্মু আমিও বিচার দিব বাবার কাছে। আমাকে জোর করে খাইয়েছে আর বকা দিয়েছে।
মাইশা এখন শিশির ও মারিয়া কে আব্বু-আম্মু বলে ডাকে। আর শিশির বাসায় আসলেই দুজনেই বিচারের ঝুড়ি নিয়ে বসেছে। শিশির ও খেতে খেতে সেসব কথা কথা শুনতে থাকে।

চলবে ….?

রোবট প্রেম ..
পর্ব : ১০
লেখক : শিশির আহমেদ ( নীল)
– একদিন শিশিরের কিছু আত্মীয়স্বজন বাসায় আসলো। যদিও শিশির এই ব্যাপারে কিছু জানত না। তারা কিভাবে যেনো জানতে পেরেছিল শিশির একটা ছোট মেয়েকে খুজে পেয়েছে। সেটা দেখার জন্যই ওর বাসায় আসছে। শিশিরের সাথে না দেখা করে চলে গেলো। মারিয়া শিশিরকে কল দিয়ে সব জানিয়ে দিয়েছে।এবাসায় এসে তো শিশির রেগেমেগে আগুন। এসেই মারিয়াকে বকা দিতে লাগল। কেনো দরজা খুলেছে, আসতে দেয়া হলো কেনো।
মারিয়া : আমি তো খুলি নি। আর যারা আসছে তারা অনেক পচাঁ ছিলো।
শিশির : কি তোমাকে দেখেছে!!!
মারিয়া : হুম উনারা সব রুমে গিয়েছে বলতে গেলে। আমি তখন লাইব্রেরি রুমে ছিলাম।
শিশির : উনাদের কে ভিতরে আসতে দিয়েছে!!?
মাইশা : আয়রা মিসি আসতে দিয়েছে
শিশির : মেজাজটা এতো খারাপ হচ্ছে। এতবড় সাহস কী করে হয়!!
ওর রাগ দেখে মারিয়াও আর কিছু বলল না। পরের দিন শিশির আয়রা কে আগে আসতে বলে। আসার পর শিশির বলল: আপনার সাহসের প্রশংসা করতে হয়।
আয়রা: কেনো?
শিশির : কালকে যে কাজটা করেছেন সেটা করার অধিকার কোথায় পেলেন? আপনাকে এসবের জন্যে রেখেছি!!????
আয়রা: আমি এমন কিছু করেনি যেটা খারাপ কিছুর মধ্যে পরে।
শিশির : আপনাকে ভালো খারাপ বুঝানোর দরকার নেই আমার। আপনার পেমেন্ট দিয়ে দিচ্ছি। আপনি আর আসছেন না। আয়রা : কিন্তু আমি কি করেছি??
শিশির : আমার প্রাইভেসি নষ্ট করেছেন।
আয়রা: ওহ,আপনার রোবট দেখে ফেলছে আপনার গেস্টরা.. সেজন্য আপনি আমার সাথে এমন করলেন!??
শিশির : চুপ থাকেন। আমার অনুমতি ছাড়া আপনি কাজ করছেন। আপনার সাথে ভালোভাবে কথা বলছি এই বেশি। আর রোবট!!অন্যের কথা কান না দিয়ে নিজের কাজে মনোযোগী হোন। নেক্সট ম্যানার শিখে কাজে জয়েন করবেন।
সেদিনই আয়রার কাহিনি শেষ হয়ে যায়। এতে মারিয়ার খুশি হওয়ারই কথা। কিন্তু ও সবসময় মনমরার মতো চুপ করে থাকে। শিশির জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয় না। একদিন শিশির ওকে ডাকছিল কিন্তু ও শুনে ও কিছু বলছে না।
শিশির. : কি হলো?… তোমার কি হয়েছে?…. মন খারাপ?….
মারিয়া : না আমার আবার কিসের মন খারাপ হবে!!
শিশির : কেনো হতে পারে না?
মারিয়া : আমি তো রোবট, আমার কেনো মন খারাপ হবে?
শিশির : কে বলেছে তুমি রোবট?
মারিয়া : সেদিন তো অনেকেই আসলো তারাই বলেছে।
শিশির : আজাইরা কথা বলছে। যে বলছে তাকে থাপ্পড় দেয়া উচিত। জানেই না, রোবট কী!!?..
মারিয়া : কিন্তু আমি জানি শিশির রোবট কী!!!
শিশির : কী সেটা!!?..
কান্না করার মতো করে মারিয়া বলল: একটা সক্রিয় যন্ত্র। ইলেকট্রনিক সার্কিট কতৃক নিয়ন্ত্রিত মানুষের তৈরি যন্ত্র। আমিও সেরকম। আমাকেও প্রোগ্রাম অনুসারে সব কাজ করতে হয়। আমার মস্তিষ্ক কে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। যেগুলো তুমি আমাকে কখনো বলো নি।
শিশির দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল: এগুলো বলার মতো কোন কথা ছিল না, তাই বলি নি। খুব ভালো করে রোবটের সংজ্ঞা দিলে,সেটার সাথে নিজেকে তুলনা করে ফেললে। আমার কথা একবার ও ভাবলে না।
মারিয়া : আমি কি করেছি!! আমাকে তুমি নিয়ন্ত্রণ করো না বলো?
শিশির : আমি তোমাকে নিয়ন্ত্রণ করলে তুমি আজকে আমাকে এগুলো বলার সুযোগ পেতে না। আর তোমাকে যে মেমোরি দেয়া হয়েছে এর উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তোমার সব আচরণ আগেই সেটআপ দেওয়া হয়েছে। তুমি আমার সাথে কখন কী বলো অথবা কী করো তোমার কাজগুলো আমি কিছু জানি না আর বুঝিও না।
মারিয়া : ওহ তাহলে আমি নিজেকে কি মনে করব?
শিশির : রোবট কে কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। স্পেশাল রোবট একটি ক্যারেক্টার মধ্যে থাকে। যা রোবটের বৈশিষ্ট্য কে পরিচালনা করা হয়।এনির্দেশনার বাইরে কোনো কিছু করার ক্ষমতা থাকে না। কিন্তু তোমার মধ্যে অনেক ক্যারেক্টার দিয়েছি। যেগুলো একজন মানুষের মধ্যেই থাকে। তুমি নিজেই অনেক ভাবেই নিজেকে উপস্থাপন করো। আমার মতো হয়তো রক্ত-মাংস তোমার মধ্যে নেই। কিন্তু ভাব আচরণ এক। এজন্য তোমাকে আমি ভিন্ন বলি।জানি বিশ্বাস করছো না।
মারিয়া : না, আমি বিশ্বাস করছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here