রোমান্টিক ডাক্তার,পার্ট: ১
লেখিকা: সুলতানা তমা
তিশা: ওরে বাবারে আর দৌড়াতে পারছি না তমা দাঁড়া প্লিজ
আমি: হিহিহি দাঁড়াবো না
তিশা: এভাবে দৌড়ালে পড়ে যাবি তো
আমি: উঁহু পড়বো না
তিশা: আমার জন্য অন্তত দাঁড়া আর পারছি না প্লিজ
আমি: ওকে দাঁড়ালাম (তিশা আমার কাছে এসেই বালুতে দফ করে বসে পড়লো)
আমি: হিহিহি
তিশা: হাসছিস কেন
আমি: তোর হাপানো দেখে
তিশা: এমন অচেনা জায়গায় এভাবে কেউ দৌড়য়
আমি: অচেনা জায়গা বলেই তো এমন স্বাধীনভাবে…
তিশা: প্লিজ মন খারাপ করিস না তোকে একটুখানি স্বাধীনতা দেওয়ার জন্যই তো এতো বাহানা দিয়ে কক্সবাজার নিয়ে আসলাম
আমি: হুম এজন্য আপনাকে এত্তোগুলো উম্মম্মম্মম্মাহ
তিশা: পাগলী একটা
আমি: ওই আমি মোটেও পাগলী না
তিশা: এই বালুচরে দৌড়ে তোর যা অবস্থা হয়েছে এখন সত্যি তোকে পাগলী লাগছে
আমি: হুহ
তিশা: এভাবে যে দৌড়াচ্ছিলি পড়ে গিয়ে যদি ব্যথা পেতিস
আমি: ব্যথা সাড়ানোর জন্য তো তুই আছিস
তিশা: আমি তো আর সবসময় থাকবো না তোর বিয়ে হলেই…
আমি: আমি বিয়ে করবো না তোকে কতোদিন বলবো
তিশা: ইসস যখন মনের মানুষের সাথে দেখা হবে তখন এই তিশাকে ভুলেই যাবি
আমি: নারে তোকে কখনো ভুলতে পারবো না তুই তো শুধু আমার বান্ধবী না আমার বোন। তাছাড়া আম্মু আব্বু মারা যাওয়ার পর তুই তো আমাকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছিস নাহলে এতোদিনে মামির অত্যাচারে আমি হয়তো…
তিশা: তমা প্লিজ একটু আনন্দের জন্য এখানে এসেছি আমরা, এসব প্লিজ মনে করিস না
আমি: ঠিক আছে
তিশা: এখন রুমে চল
আমি: ওকে।
রুমে এসে গোসল করে নিলাম। বালুচরে দৌড়ে সত্যি যা অবস্থা হয়েছিল পুরো পাগলী হয়ে গিয়েছিলাম।
গোসল করে রুমে আসতেই ফোন বেজে উঠলো। ‘মামি’ শব্দটা স্কিনে ভেসে উঠেছে দেখেই রাগ উঠে গেলো, ফোনটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি রিসিভ করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। কিন্তু ফোনটা বার বার বেজেই চলেছে। মাত্র দুদিনের জন্য কক্সবাজার এসেছি তাও এই মহিলা আমাকে শান্তি দিচ্ছে না বার বার ফোন করেই যাচ্ছে।
আমি: হ্যাঁ মামি বলো
মামি: ফোন রিসিভ করতে এতো সময় লাগে
আমি: গোসলে ছিলাম
মামি: এই বিকেল বেলায় গোসল কিসের
আমি: সবকিছুর হিসেব তোমাকে দিতে হবে নাকি
মামি: বাব্বাহ্ দূরে গিয়ে তো দেখছি তোর সাহস অনেক বেড়ে গেছে
আমি: হ্যাঁ বেড়েছে দুইটা দিন অন্তত শান্তিতে থাকতে দাও প্লিজ
মামি: একবার বাসায় ফিরে আয় বুঝাবো
আমি: দ্যাত।
ফোনটা কেটে দিলাম, এই মহিলার বকবক আর ভালো লাগে না। আম্মু আব্বু নেই বলে সবসময় আমাকে বকাঝকা করে আর ভাল্লাগেনা। ফোনটা বিছানার উপর ছুড়ে ফেলে দিলাম।
তিশা: তমা (হঠাৎ কাধে তিশার হাতের স্পর্শে পিছনে তাকালাম)
তিশা: রেগে যাচ্ছিস কেন মাথা ঠান্ডা কর
আমি: আর ভালো লাগে নারে
তিশা: অনেক বার বলেছি যেটুকু সম্পত্তি তোর নামে আছে তা দিয়ে তোর চলে যাবে দূরে কোথাও চলে যা, শুনিসনি আমার কথা তাহলে এখন…
আমি: মামা মৃত্যুর সময় কি বলে গেছেন ভুলে গেছিস
তিশা: ভুলিনি তবে দেখিস তোর মামার প্রতি এই ভালোবাসা একদিন তোকে কাঁদাবে। তোর এই ভালোবাসার সুযোগ নিচ্ছে তোর মামি আর….
আমি: থেমে গেলি কেন আর কে বল
তিশা: কেউ না
আমি: হুম
তিশা: মন খারাপ করিস না দেখিস একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে
আমি: হ্যাঁ হবে কিন্তু আমি মরার পর
তিশা: উহু তার আগেই হবে আর খুব শীঘ্রই
আমি: তাই বুঝি
তিশা: হ্যাঁ একটা রাজকুমার আসবে আর তোকে তার রাজ্যে নিয়ে যাবে তোর সব কষ্ট ভুলিয়ে দিবে তার ভালোবাসা দিয়ে আ…
আমি: হিহিহি রাজকুমার আসবে তাও আমার মতো পেত্নীর জন্য
তিশা: হুম আসবে
আমি: যখন আসে দেখা যাবে এখন চল ঘুরতে যাই
তিশা: এইমাত্র তো আসলাম
আমি: তো কি হইছে, তিশা আমরা এখানে ঘুরতে এসেছি রুমে বসে থাকার জন্য না
তিশা: ওকে বাবা চল।
রাস্তা দিয়ে আনমনে হয়ে হাটছি হঠাৎ পাশের দোকানে চিপস চোখে পড়লো।
আমি: তিশা চিপস চিপস চিপস
তিশা: ওরে বাবারে আস্তে মানুষ ভাববে তুই এ জন্মে কখনো চিপস খাসনি
আমি: হ্যাঁ খাইনি তো
তিশা: এ্যাঁ
আমি: অবাক হচ্ছিস কেন
তিশা: তাহলে রোজ আমি যে এনে দেই আব্বু যে এনে দেন এসব চিপস কে খায়
আমি: ওগুলো তো আমি খাই না তিলোত্তমা খায় হিহিহি
তিশা: পাগলী একটা, দাঁড়া আমি চিপস নিয়ে আসছি।
তিশা চিপস আনতে দোকানে গেলো আর আমি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছি। আসলে আমি একটু চিপস পাগলী আরকি।
তিশা: তমা আমি একটা কথা ভাবছি (আমার হাতে চিপস দিতে দিতে বললো)
আমি: কি কথা
তিশা: কক্সবাজার থেকে ফিরে গিয়েই আব্বুকে বলবো তোর জন্য যেন ছেলে দেখেন
আমি: দাঁড়া আগে চিপস গুলো খেয়ে নেই তারপর তোর কথাটার উত্তর দিচ্ছি
তিশা: খা রাক্ষসী কোথাকার।
আমি: তিশা সামনে দেখতো এতো ভীড় কিসের
তিশা: হ্যাঁ তাই তো চল গিয়ে দেখি
আমি: চল।
ভীড়ের কাছে এসে দেখি একটি ছেলে এক্সিডেন্ট করে রাস্তায় পরে আছে প্রচুর রক্ত ঝরছে ওর মাথা থেকে। বাচ্চা একটা ছেলে এভাবে পরে আছে আর সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে এভাবে।
আমি: আচ্ছা আপনারা সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছেন ওকে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছেন না কেন
–আরে ও টোকাই ছেলে কে নিবে ওর দায়িত্ব
–হসপিটালে নিয়ে গিয়ে আবার জামেলায় ঝরাবো নাকি
–এইটা এক্সিডেন্ট পুলিশ কেস হয়ে যাবে (এই মানুষগুলোর কথা শুনে তো ইচ্ছে হচ্ছে সব গুলোর মাথা ফাটিয়ে দেই। শুধুমাত্র ও একজন টোকাই বলে ওর কোনো চিকিৎসা হবে না, এভাবে রাস্তায় পড়ে মারা যাবে)
আমি: তিশা ওকে ধর এক্ষণি হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে
তিশা: হুম তাড়াতাড়ি কর।
একটা সিএনজি ডেকে তাড়াতাড়ি ছেলেটাকে পাশের হসপিটালে নিয়ে আসলাম।
আজব দেশের আজব সব মানুষ, আজব হসপিটাল আর আজব সব ডাক্তার। এতোক্ষণ ধরে বসে আছি ছেলেটি অজ্ঞান হয়ে গেছে অথচ এখনো কোনো ডাক্তার এসে দেখছে না। হয়তো ডাক্তার আসবে কিন্তু ছেলেটি মারা যাওয়ার পর।
তিশা: আচ্ছা সিস্টার ডাক্তার কি ওকে দেখবে না
সিস্টার: আজ ছুটির দিন সব ডাক্তার ছুটিতে আছেন, একজন যিনি আছেন উনি অন্য একটা রোগীকে দেখছেন
আমি: উনাকে গিয়ে বলুন এখানে একটা ইমারজেন্সি আছে
সিস্টার: বলেছি স্যার বলেছেন একটু পর আসছেন
তিশা: কি আজব ছেলেটা মরে যাচ্ছে আর ডাক্তার সাধারণ রোগীদের নিয়ে পরে আছে
সিস্টার: আচ্ছা মানুষ তো আপনারা বললাম তো স্যার একটু পরে আসবেন
আমি: কখন আসবে হ্যাঁ ছেলেটা মারা যাওয়ার পর…? তখন কি জানাজা পড়তে আসবে ছেলেটির…?
তিশা: তমা কি করছিস ছাড় উনাকে
সিস্টার: আজব মেয়েতো আপনি আমার…
ডাক্তার: কি হচ্ছে এখানে (সিস্টারের গলায় চেপে ধরেছিলাম ডাক্তার আসাতে ছেড়ে দিলাম)
তিশা: আসলে ছেলেটির খুব খারাপ অবস্থা প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়েছে এক্ষণি চিকিৎসা শুরু না করলে….
ডাক্তার: সিস্টার ওকে ইমারজেন্সিতে নিয়ে যাও আর জানোই তো কি কি লাগবে (আরে আজব ডাক্তার তো নিজে না গিয়ে সিস্টারকে বলছে কি কি লাগবে জানেই তো, একজন ডাক্তার যা জানে তা একজন সিস্টার কি করে জানবে)
আমি: আজব ডাক্তা…
তিশা: তমা প্লিজ এখন আর মাথা গরম করিস না (হুম তিশা ঠিক বলেছে ডাক্তারের সাথে জামেলা করলে হয়তো আর ছেলেটির চিকিৎসা করাই হবে না)
আমি: আসলে ডাক্তারবাবু ছেলেটির অবস্থা খুব খারাপ তো তাই রেগে গিয়ে… (আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে দেখে আমার কথা আটকে গেলো)
ডাক্তার: বাহ্ এই প্রথম কারো মুখে ডাক্তারবাবু নামটা শুনতে এতো ভালো লাগলো
আমি: এ্যাঁ
ডাক্তার: অবাক হচ্ছ কেন আসলে এক বছর হলো ডাক্তারি করছি এর মধ্যে হাজার হাজার বার এই ডাক্তারবাবু ডাকটা শুনেছি। ডাক্তারবাবু শুনতে শুনতে কান পঁচে গেছে কিন্তু এই প্রথম তোমার মুখে ডাকটা শুনে এতো ভালো লাগলো (ডাক্তারের কথা শুনে তো আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম)
সিস্টার: স্যার O- রক্ত লাগবে কিন্তু এই গ্রুপের রক্ত আমাদের হসপিটালে এই মুহূর্তে নেই
ডাক্তার: ওকে বাকি সব চিকিৎসা শুরু করো
আমি: আজব ডাক্তার তো আপনি নার্সদের দিয়ে সব করাচ্ছেন রক্ত প্রয়োজন অথচ আপনি যাচ্ছেন না
ডাক্তার: আমি গেলে পর যদি তুমি চলে যাও তাহলে তো তোমাকে হারিয়ে ফেলবো আমি
আমি: মানে (নিশ্চুপ হয়ে আছে আর ফোন টিপছে। এখন তো রাগ উঠে যাচ্ছে, না রাগলে হবে না মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে)
আমি: ডাক্তারবাবু প্লিজ বুঝার চেষ্টা করুন আ…
ডাক্তার: উফফস আবার সেই ডাক্তারবাবু, বললাম তো তোমার মুখে এই ডাকটা শুনতে ভালো লাগে আর ডেকো না প্লিজ পাগল হয়ে যাবো (আর রাগ ধরে রাখতে পারছি না এখন ওকে কিছু বলা উচিত)
আমি: আপনি আর নতুন করে পাগল হবেন কি আপনি তো অলরেডি পাগল হয়ে গেছেন। আপনাকে দিয়ে চি…
ডাক্তার: হ্যাঁ পাগল তো হয়ে গেছি তোমাকে দেখার পর থেকে (নিশ্চুপ হয়ে ভাবছি কি বলছে এসব। একজন ডাক্তার এমন একটা ইমারজেন্সি রোগী রেখে এসব পাগলের মতো কথা বলছে তাহলে কি এই ডাক্তারের মাথায় আসলেই কোনো সমস্যা আছে)
ডাক্তার: কি ভাবছ আমার মাথার তার একটা ছিঁড়া
আমি: হ্যাঁ না মানে
“ভাইয়া হঠাৎ হসপিটালে আসার জন্য মেসেজ করলে যে” কথাটা শুনে ডাক্তারের পিছনে তাকালাম, একটি ছেলে এসেছে তারমানে আগে ফোন টিপছিল এই ছেলেকে মেসেজ দেওয়ার জন্য।
ডাক্তার: রক্ত দিতে হবে সিস্টারকে গিয়ে বল (ছেলেটি রক্ত দিতে চলে গেলো। নাহ যতোটা খারাপ ডাক্তার ভেবেছিলাম ততোটা খারাপ না)
ডাক্তার: কি এতোক্ষণ যা যা ভাবলে সব ধারনা পাল্টে গেলো তো (ওরে বাবা যা ভাবছি তাই তো বুজে ফেলছে, জ্যোতিষী নাকি)
“ভাইয়া যাও সিস্টার রক্ত নিয়েছে”
ডাক্তার: হুম এখানে থাক ও যেন কোথাও না যেতে পারে, এইটা তোর মিষ্টি ভাবি আর এইযে ও তোমার দেবর অয়ন (আমাকে দেখিয়ে দিয়ে চলে গেলো। এইটা কি হলো আমি ভাবি হলাম কবে আর এই ছেলেই বা আমার দেবর হলো কিভাবে)
আমি: তিশা এসব কি হচ্ছে বলবি প্লিজ সবকিছু তো আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে
তিশা: আমি কিন্তু বুঝে ফেলেছি
আমি: তুই হাসছিস
অয়ন: ভাবি আমি বলবো বিষয়টা কি
আমি: এই একদম ভাবি ডাকবা না আমি তোমার কোন ভাইয়ের বউ হ্যাঁ যত্তোসব ফাজিল ছেলে
অয়ন: আরে রেগে যাচ্ছ কেন কাব্য ভাইয়া তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছে তাই আমার ভাবি বলেছে (ডাক্তারের স্বভাবটা খারাপ হলেও নামটা খুব কিউট ‘কাব্য’)
আমি: একটু আগে দেখা হলো আর এখনি ভালোবেসে ফেলেছে
ডাক্তার: জ্বী ম্যাডাম আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি আর হ্যাঁ তোমার রোগী এখন বিপদমুক্ত আর চিন্তার কোনো কারণ নেই
আমি: ওকে আমি বিল দিয়ে যাচ্ছি ছেলেটি সুস্থ হলে রিলিজ করে দিবেন
ডাক্তার: মানে কি ছেলেটি তোমার আত্মীয় না নাকি
তিশা: নাতো ও একজন টোকাই রাস্তায় এক্সিডেন্ট করে পরে ছিল তাই তমা হসপিটালে নিয়ে এসেছে
ডাক্তার: বাব্বাহ্ আমার বউটা তো খুব লক্ষী রাস্তার ছেলেদেরও মানু…
আমি: ওই কে আপনার বউ তখন থেকে উউল্টাপাল্টা কথা বলেই যাচ্ছেন মাথায় সমস্যা আছে নাকি
ডাক্তার: আগে ছিল না কিন্তু তোমাকে দেখার পর থেকে মাথায় সমস্যা বুকে ব্যথা আরো অনেক কিছু হচ্ছে
আমি: তিশা চল তো এখান থেকে।
তিশার হাত ধরে চলে আসতে চাইলাম কিন্তু ছেলেটি আমার হাত ধরে টেনে ওর একদম কাছে নিয়ে গেলো কি আজব ডাক্তাররে বাবা। ও আস্তে আস্তে আমার দিকে এগুচ্ছে আর আমি পিছিয়ে যাচ্ছি, পিছাতে পিছাতে দেয়ালে গিয়ে ঠেকলাম। দুপাশে ওর দুইহাত সামনে ও পিছনে দেয়াল আমি এখন যাবো কোন দিকে, আমার তো কান্না করে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে।
ডাক্তার: তোমার চোখে পানি কেন আমি কি তোমাকে মারতেছি, দেখো তোমাকে আমি ভালোবাসি আ…
আমি: আমাকে যেতে দিন
ডাক্তার: তোমার চোখ থেকে যদি এক ফোটা পানি পড়েছে তো আমি কিন্তু রেগে যাবো আর এখানে সবার সামনে তোমাকে আদর করবো (দূর এইটা কেমন ডাক্তার আমার তো মনে হচ্ছে ওর মাথায় সমস্যা আছে নাহলে এতোগুলো মানুষের সামনে কেউ এমন কথা বলে। ইসসস কতোগুলো মানুষ তাকিয়ে আছে এদিকে)
আমি: দেখুন আপনি ডাক্তার আপনার লিমিট ক্রস করবেন না প্লিজ আমি কিন্তু… (আর কিছু বলতে দিলো না আমার মুখে আঙ্গুল দিয়ে আমাকে চুপ করিয়ে দিলো)
ডাক্তার: এসব ডাক্তার ফাক্তার বুঝি না তুমি আমাকে ডাক্তারবাবু অথবা কাব্য বলে ডাকবে বুঝেছ
আমি: ডাক্তারবাবু ডেকেই তো ফেঁসে গেছি
ডাক্তার: এই আস্তে আস্তে কি বলছ
আমি: কিছু নাতো (তিশার দিকে তাকালাম, কোথায় ও আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে উল্টো হাসছে। আর অয়ন এইটাও তো হাসছে দুই ভাই তো দেখি একরকম)
ডাক্তার: এখন ভালোয় ভালোয় তোমার পরিচয় দাও তো নাহলে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো কিভাবে (ডাইরেক্ট বিয়েতে চলে গেলো এ কেমন ছেলে)
ডাক্তার: বলো বলো তোমার নাম বলো নাহলে কিন্তু সবার সামনে কিস করবো (আমার কপালে এলোমেলো হয়ে থাকা চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে দিতে দিতে বললো)
আমি: আমি তিতিতিলো…
কাব্য: কি তিতিতি করছ তাড়াতাড়ি বলো
আমি: তিলোত্তমা আমি এখানে ঘুরতে এসেছি থাকি ঢাকায় মামির কাছে। (যেও ভেবেছিলাম মিথ্যে পরিচয় দিবো ওর ধমকে গড়গড় করে সব সত্যি বলে দিলাম। উফফ এই ধমক যে কেন এতো ভয় পাই আমি)
ডাক্তার: মামির কাছে থাকো কেন আব্বু আম্মু কোথায় (এতোক্ষণ তো কান্না আটকে রেখেছিলাম আব্বু আম্মুর কথা বলতেই কান্না চলে আসলো)
তিশা: আসলে ওর আব্বু আম্মু একটা এক্সিডেন্টে মারা গেছেন
ডাক্তার: উফফস সরি সোনা তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম। চিন্তা করো না আজ থেকে তোমার সব দায়িত্ব আমার (দুহাত দিয়ে আলতো করে আমার চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললো)
আমি: কেন এমন করছেন
ডাক্তার: কারণ আমি তোমাকে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছি যাকে বলে Love At First Sight মানে তোমাকে প্রথম দেখেই আমি ফিদা হয়ে গেছি (বুঝে গেছি এর সাথে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই এখান থেকে তাড়াতাড়ি যাওয়াই মঙ্গল)
আমি: হুম এখন আমাকে যেতে দিন
ডাক্তার: যেতে পারো কিন্তু আমার থেকে ফালানোর চেষ্টা করো না এখন থেকে তোমার উপর আমি সবসময় নজর রাখবো।
হাসতে হাসতে আমার সামনে থেকে সরে গেলো।
তিশাকে রেখেই তাড়াতাড়ি হাটা দিলাম। কিছুতেই বুঝতে পারছি না এই ছেলে আমার মধ্যে দেখলোটা কি, কালো একটা মেয়ে আমি আর এই ডাক্তার তো দেখতে অনেক সুন্দর। ফর্সা লম্বা তাও আবার ডাক্তার এই ছেলে কিনা আমাকে দেখে ফিদা হয়ে গেছে, নির্ঘাত ওর মাথার তার একটা ছিঁড়া। এই ডাক্তার তো… দ্যাত ‘কাব্য’ এতো সুন্দর নাম রেখে ডাক্তার ডাক্তার বলতে ভালো লাগছে না। আনমনে হয়ে হাটছিলাম আর এসব
ভাবছিলাম হুট করে কাব্য এসে আমার সামনে দাঁড়ালো। আমি তো ভয় পেয়ে গেছি আবার কেন আসলো।
কাব্য: আমার মাথায় কোনো সমস্যা নেই আমি সত্যি তোমাকে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছি। তোমার শ্যামবর্ণ চেহারা নাকি তোমার মায়াবী চোখ জোড়া কোনটা দেখে ভালোবেসেছি সঠিক বলতে পারবো না। তবে এটাই সত্যি আমি তোমাকে ভালোবাসি আর খুব শীঘ্রই তুমিও আমাকে ভালোবাসবে।
আমি: দেখুন এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।
আঙ্গুল তুলে কথা গুলো বলছিলাম কাব্য আমার আঙ্গুলটা আস্তে করে নামিয়ে দিয়ে হাসতে হাসতে আমার একদম কাছে চলে আসলো। আমি কিছু বলতে যাবো তখনি আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বললো “I Love U For A Thousand More”
কাব্য আমার চোখের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো কিন্তু আমি যেন বরফের মতো জমে গেলাম। কানের কাছে কাব্য’র গরম নিঃশ্বাস যেন আমার নিঃশ্বাস নেওয়া আটকে দিলো। চোখ দুটু বন্ধ করে আছি এখনো মনে হচ্ছে কাব্য বার বার আমার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলছে I Love U For A Thousand More….
চলবে?