রোমান্টিক ডাক্তার,পার্ট: ১২
লেখিকা: সুলতানা তমা
হঠাৎ মাথায় কারো হাতের স্পর্শে ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম ঘুম চোখে চারদিকে তাকালাম, এখনো তো সকাল হয়নি মনে হয় মধ্যরাত। ডিম লাইটের আলোতে ঘড়িও দেখতে পারছি না। উঠে বসে পাশ ফিরে তাকালাম, কাব্য মাথা নিচু করে বসে আছে।
আমি: ডাক্তারবাবু কি হয়েছে তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন..?
কাব্য: কিছু হয়নি তুমি উঠেছ কেন..?
আমি: ঘুম ভেঙে গেলো।
কাব্য: ওহ, বেডে চলো (রাতে ছাদ থেকে এসে কাব্য ঘুমিয়ে পড়েছে দেখে আমি এসে সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। যে ধমক গুলো দিয়েছিল খুব রাগ হচ্ছিল কিন্তু এখন ওকে এমন অবস্থায় দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে)
কাব্য: তিলো প্লিজ বেডে চলো।
আমি: হুম।
কাব্য: রাগ করেছ হুম (কাব্য আমার এলোমেলো চুল গুলো ঠিক করে দিয়ে ওর বুকের সাথে জরিয়ে ধরলো)
কাব্য: সরি পাগলী আর কখনো এভাবে বকা দিবো না প্লিজ আর রেগে থেকো না (আমি কিছু বলতে যাবো তখনি কাব্য আমার দুগালে আলতো করে ধরে কপালে একটা চুমু দিলো তারপর কোলে করে এনে বিছানায় শুয়ে দিলো)
আমি: ডাক্তারবাবু আ…
কাব্য: এখনো মুখ গোমড়া করে রেখেছ বললাম তো সরি প্লিজ একটু হাসো। (কাব্য একটা হাত দিয়ে আমাকে জরিয়ে ধরে রেখেছে আরেকটা হাত দিয়ে চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে)
আমি: সবসময় কি নিজের কষ্টগুলো আড়াল করে এভাবেই আমাকে হাসিয়ে যাবে..?
কাব্য: আমার তিলো পাগলী হাসলে আমার মনে আর কোনো কষ্ট থাকে না। (আমার নাকের সাথে ওর নাক ঘসে হাসতে হাসতে বললো। সত্যি আজব একটা মানুষ ও নিজের কষ্ট গুলো কতো সুন্দরভাবে আড়াল করে রাখে)
আমি: তিলো পাগলীর সামনে থাকলেই শুধু কষ্ট আড়াল করে হাসো পরে তো ঠিকি আবার কষ্ট পেয়ে কাঁদো।
কাব্য: (নিশ্চুপ)
আমি: ডাক্তারবাবু তুমি এইটা কেন বুঝতে চাও না, তুমি যেমন আমার মুখে হাসি দেখতে চাও তেমনি আমিও তোমার মুখে হাসি দেখতে চাই।
কাব্য: (নিশ্চুপ)
আমি: তুমি আমাকে ভালোবাস এর মানে তো এই নয় যে তুমি শুধু আমাকে হাসিয়ে যাবে আর আমি হেসে যাবো। আমিও তোমাকে ভালোবাসি, আমিও তোমার মুখে হাসি দেখতে চাই সবসময়। তুমি নিজের ভিতরে কষ্ট পুষে রেখে দিনের পর দিন এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদবে আর আমি তা দেখেও মুখ বুজে সহ্য করবো তা তো হতে পারে না।
কাব্য: তাহলে তুমি কি করতে চাও।
আমি: কিছুই করতে চাই না, আমাকে শুধু তোমার কষ্ট গুলো বলো। কষ্ট মনের মধ্যে পুষে রাখতে নেই শেয়ার করতে হয়, আমাকে বলো দেখবে নিজের মন হালকা লাগবে। (আমাকে ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়লো, কাব্য’র গলায় জরিয়ে ধরে ওর ঠোঁটে আলতো করে একটা চুমু খেলাম)
আমি: বলো প্লিজ।
কাব্য: হুমায়রা চৌধুরী আর…(কাব্য’র ঠোঁটে একটা আঙ্গুল রেখে ওকে আটকে দিলাম)
আমি: নাম ধরে নয় আব্বু আম্মু বলো।
কাব্য: তিলো…
আমি: বলো বলছি।
কাব্য: আব্বু আম্মু হিয়া আর আমি, এটাই ছিল আমাদের ছোট্র পরিবার। প্রথম আমাদের পরিবারে সুখ শান্তি থাকলেও সেটা আস্তে আস্তে কমে যায়। আব্বু একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করতেন আর আম্মু ছিলেন ডক্টর। হিয়া আর আমি ছোটবেলা থেকেই একাকীত্বের মধ্যে বড় হয়েছি কারণ আব্বু আম্মুর আমাদের জন্য সময় ছিল না। মাঝে মাঝে কষ্ট হতো আব্বু আম্মুকে বললে উনারা বলতেন “এখন হয়তো সময় দিচ্ছি না তোমাদের কিন্তু সবকিছু তো তোমাদের দুজনের ভবিষ্যৎ এর জন্যই করছি” জানো তিলো খুব করে উনাদের বুঝাতে চাইতাম আমাদের এতোকিছু চাই না কম হলেও চলবে তাও যেন আমাদের একটু সময় দেন একটু ভালোবাসা দেন। কিন্তু আব্বু আম্মু তাদের কাজে এতোটাই ডুবে গিয়েছিলেন যে কিছুই বুঝতে চাইতেন না। বুঝেছেন কিন্তু অনেক দেরিতে, তখন আমার পনেরো বছর আর হিয়া সাত বছরের। বিয়ের ষোলো বছর পর আমার আব্বু আম্মু বুঝতে পারেন যে উনারা একে অন্যের জন্য পারফেক্ট না। কারণ কি জানো, উনারা একে অপরকে সময় দিতে পারেন না তাই নাকি একে অপরের জন্য পারফেক্ট না। শেষ পর্যন্ত উনারা আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মানে ডিভোর্স। হিয়া নাহয় তখন ছোট ছিল কিন্তু আমি তো অনেক কিছু বুঝতাম, কি করে উনাদের এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিতাম। কিন্তু তাও উনারা আমাকে বুঝিয়েছেন যে এটাই আমাদের ভাই বোনকে মানতে হবে। আব্বু আম্মুকে ছাড়া থাকতে হবে এইটা মন বুঝতে চাইতো না তাও মন কে বুঝিয়ে ছিলাম যে যারা সম্পর্ক রাখতে চায় না তাদের সম্পর্ক তো জোর করে টিকিয়ে রাখা সম্ভব না। যখন আমি নিজের মন কে শক্ত করে ফেলি তখন আব্বু আম্মুর মধ্যে আরেক জামেলা শুরু হয়, আমরা ভাই বোন কার কাছে যাবো। আব্বু বলেন আব্বুর কাছে আম্মু বলেন আম্মুর কাছে, রোজ রোজ এই অশান্তি দেখতে দেখতে অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু আব্বু আম্মুকে কিছু বলিনি, এতোটুকু রাগ পর্যন্ত দেখাইনি। কিন্তু আব্বু আম্মু শেষ মুহূর্তে এমন সিদ্ধান্ত নেন যে আর রাগ না দেখিয়ে থাকতে পারিনি। আমি আম্মুর কাছে আর হিয়া আব্বুর কাছে নাহয় আমি আব্বুর কাছে আর হিয়া আম্মুর কাছে থাকবে উনারা এই সিদ্ধান্ত নেন। যখন উনারা আমাদের এতোটুকু সময় দিতে পারতেন না তখন আমি হিয়ার দেখাশোনা করেছি, ওকে খাওয়ানো ঘুম পাড়ানো সব আমি করেছি। কি করে পারতাম আব্বু আম্মুর ভুলের জন্য ভাই বোন আলাদা হয়ে যেতে। হিয়া তো তখন কিছু বুঝতো না আব্বু আম্মু ঝগড়া করলে ও আমার হাতটা জরিয়ে ধরে ড্যাবড্যাব করে আব্বু আম্মুর দিকে তাকিয়ে থাকতো। আমার এসব ভালো লাগতো না, আব্বু আম্মুকে অনেক বুঝিয়েছিলাম যে আরো একবার ভাবো। ওরা শুনেনি আমার কথা উল্টো আমাদের ভাই বোন কে আলাদা করে দিতে চেয়েছিল। যারা বিয়ের ষোলো বছর পর বুঝতে পারে একে অন্যের জন্য পারফেক্ট না তারা আমাদের ভাই বোনের দায়িত্ব আবার কি নিবে। একদিন রাতে আব্বু আম্মুর মধ্যে অনেক ঝগড়া শুরু হয় এক পর্যায়ে আম্মু ঘুমন্ত হিয়াকে কোলে তুলে নেন বাসা থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য আর আব্বু তখন আম্মুর গালে কয়েকটা থাপ্পড় বসিয়ে দেন। এসব দেখতে আর ভালো লাগছিল না তাই বাধ্য হয়ে আম্মুর থেকে হিয়াকে কেড়ে এনে বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। আসার সময় আব্বু আম্মুকে দুটু কথা বলে এসেছিলাম “তোমরা কোনো সন্তানের বাবা মা হওয়ার যোগ্য না, তোমাদের আমি ঘৃণা করি।
কাব্য নিশ্চুপ হয়ে কাঁদছে আর আমি পাশে বোবার মতো বসে আছি। কি বলবো কি বলে শান্তনা দিবো ওকে ভেবে পাচ্ছি না।
কাব্য: তিলো হিয়াকে এসব বলোনা, ও জানে আমি আব্বু আম্মুর সাথে ঝগড়া করে ওকে নিয়ে বাসা থেকে চলে এসেছিলাম।
আমি: হিয়াকে সব কিছু বলোনি কেন..?
কাব্য: আমার মতো হিয়াও নিজের আব্বু আম্মুকে ঘৃণা করুক এইটা আমি চাইনি তাই মিথ্যে বলেছি এখনো বলি। হিয়া আব্বু আম্মুকে খুঁজে এইটা আমি জানতাম তাই ওকে পড়াশোনার জন্য বাহিরে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।
আমি: ফারাবী ভাইয়া আর অয়ন..?
কাব্য: ওদের সাথে আমার ভাগ্য আমাকে দেখা করিয়ে দিয়েছিল। সেদিন রাতে ঘুমন্ত হিয়াকে নিয়ে কোথায় যাবো ভেবে পাচ্ছিলাম না তখন ফারাবীর সাথে রাস্তায় দেখা হয় সেই থেকে একসাথে আছি। দুর্ভাগ্যক্রমে ওদেরও বাবা মা ছিল না, অয়ন তখন হিয়ার মতোই ছোট ছিল। ফারাবীর ছোট একটা চায়ের দোকান ছিল সেটা থেকে আজ আমাদের এতোকিছু। অনেক কষ্ট করেছি ফারাবী আর আমি। একদিকে অয়ন আর হিয়ার দেখাশোনা অন্যদিকে নিজেদের পড়াশোনা সাথে এই ছোট্র ব্যবসা। ফারাবী এখন যে ব্যবসা করছে এইটা সেই ছোট্র ব্যবসা থেকেই বড় করেছি। ফারাবী সবসময় আমাকে একটা কথা বলতো “সৎ পথে উপার্জন করলে আল্লাহ্ও সাহায্য করেন” সত্যি আল্লাহ্ আমাদের সাহায্য করেছেন নাহলে তো আমরা ভেসে যেতাম আজ এতোকিছু হতো না।
আমি: স্যালুট বস তোমাদের দুজনকে, তোমরা তো পেরেছ আমি হলে তো…
কাব্য: কোন কিছুতে ভয় পেতে নেই শুধু নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হয়। আমি ব্যবসা ছেড়ে ডক্টর কেন হয়েছি জানো..? জীবনে যদি কখনো আম্মুর সাথে দেখা হয় তাহলে যেন একটা কথা বলতে পারি “আমিও একজন ডক্টর আর আমি আমার পরিবারকে সময় দেই”
আমি: আচ্ছা আব্বু আম্মু এখন কোথায় আছেন জানো..?
কাব্য: না সেদিনের পর রাগে আর বাসায় যাইনি, এক বছর পর গিয়েছিলাম কিন্তু বাসায় কেউ ছিল না। আব্বু আম্মুর কি ডিভোর্স হয়েছে বা কোথায় আছেন কিচ্ছু জানিনা। (কাব্য’র এই কথাটা বলতে ওর গলাটা ধরে আসলো তারমানে ও মিথ্যে বলছে। তাহলে কি ও আব্বু আম্মু কোথায় আছেন সেটা জানে)
আমি: সত্যি জানোনা (কাব্য কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো)
কাব্য: বাদ দাওনা ঘুমিয়ে পড়ো ভোর হয়ে আসছে।
আমি শুয়ে পড়তেই কাব্য এসে আমার বুকে মাথা রাখলো। কাব্য কাঁদছে বুঝতে পারছি কিন্তু বাধা দিতে ইচ্ছে হচ্ছে না, কাঁদুক কাঁদলে হয়তো কষ্টটা কিছু হলেও কমবে।
ঘর গুছাচ্ছিলাম হঠাৎ কাব্য কোথা থেকে তড়িঘড়ি করে আসলো। ফোনটা বিছানায় রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ফোন দেখে মনে হলো তিশাকে একটা ফোন দেই। ফোন হাতে নিতেই কাব্য চেঁচিয়ে উঠলো।
কাব্য: ফোন দিয়ে কি করবে..?
আমি: তিশাকে ফোন দিবো (আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিলো)
কাব্য: তোমার ফোন থেকে দাও।
আমি: আশ্চর্য তোমার ফোন থেকে দিলে সমস্যা কোথায় আর তুমি ফোনটা এভাবে কেড়ে নিলে কেন..? (আমার কথার উত্তর না দিয়ে ফোনটা টেবিলের উপর রেখে দিলো। বিছানায় বসে বসে ওর কাজ দেখছি তাড়াহুড়ো করে রেডি হচ্ছে)
আমি: এই দুপুর বেলায় কোথায় যাওয়া হচ্ছে..?
কাব্য: হসপিটালে।
আমি: কিন্তু তুমি তো এক সপ্তাহের ছুটি নিয়েছ।
কাব্য: ইমারজেন্সি পরে গেছে তাই যেতে হচ্ছে।
আমি: ডাক্তারবাবু… (আমার কথা না শুনেই তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলো)
কাব্য এমন করছে কেন ভেবে পাচ্ছি না, কখনো তো আমার থেকে ফোন কেড়ে নেয়নি কিন্তু আজ ওর কি হলো। জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলাম হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো, তাকিয়ে দেখি কাব্য’র ফোন। খুব হাসি পাচ্ছে যে ফোন আমার থেকে কেড়ে নিলো সে ফোনই ভুলে ফেলে গেছে। ফোন হাতে নিতেই চমকে উঠলাম শুভ্রা ফোন দিয়েছে। রিসিভ করতেই শুভ্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
শুভ্রা: কাব্য তুমি কি দেখা করতে আসবে না (তারমানে কাব্য হসপিটালে যায়নি শুভ্রার সাথে দেখা করতে গেছে। কাব্য আমাকে এতো বড় মিথ্যে কথা বলতে পারলো)
শুভ্রা: চুপ হয়ে আছ কেন, দেখো তুমি যদি আমার কথা না শুনো তাহলে আমি কিন্তু তোমার বউ কে সব সত্যি বলে দিবো (কোন সত্যির কথা বলছে শুভ্রা)
শুভ্রা: কাব্য কথা বলো নাহলে আমি তিলোত্তমাকে সব বলে দিবো।
আমি: কাব্য নয় আমি ফোন রিসিভ করেছি।
শুভ্রা: কাব্য’র ফোন তুমি রিসিভ করেছ কেন..?
আমি: বউ তার স্বামীর ফোন রিসিভ করেছে কেন সে কৈফিয়ত কি একটা বাইরের মেয়েকে দিতে হবে..?
শুভ্রা: কাব্য কোথায় ওকে ফোনটা দাও।
আমি: কাব্য আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমুচ্ছে, গভীর ঘুমে আছে তো ডাকা যাবে না।
শুভ্রা: ছাড়াচ্ছি ওর গভীর ঘুম, তুমি একটা সত্যি কথা জানলে ওকে বুকে কেন পায়ের নিচেও জায়গা দিবে না (আমি তো চাইছিলাম তুমি রেগে গিয়ে সত্যিটা বলো তাই তো মিথ্যে কথা বললাম)
শুভ্রা: কি হলো তুমি সত্যিটা জানতে চাও না।
আমি: হুম বলো।
শুভ্রা: তুমি কি ভেবেছ কাব্য তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে..? তোমার মামি দুজন লোকের কাছে তোমাকে বিক্রি করে দিয়েছিল তারপর থেকে তুমি হাওয়া, তোমার মামি তোমাকে খুঁজেনি কেন..? এর আগে কখনো তোমাকে বিক্রি করার কথা ভেবেছে তোমার মামি..? আসলে সেই দুজন লোক কাব্য’র লোক ছিল। তোমাকে কাব্য টাকা দিয়ে কিনে এনেছে (মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে কি বলছে ও এসব)
শুভ্রা: বিশ্বাস নাহলে কাব্য’কে জিজ্ঞেস করে দেখো। কাব্য যদি সত্যি তোমাকে ভালোবাসতো তাহলে টাকা দিয়ে কিনে আনলো কেন আসলে কাব্য তোমাকে সেই মেয়েদের মতো দেখে যাদের টাকা দিয়ে কিনে এনে…
আমি: চুপ করো শুভ্রা চুপ করো।
ফোনটা আছাড় দিয়ে ভেঙে ফ্লোরে বসে পড়লাম। কখনো এমন একটা সত্যের মুখোমুখি হতে হবে ভাবিনি। কাব্য বলেছিল মামিকে রাজি করাবে কিন্তু ও রাজি করানোর চেষ্টা না করে উল্টো আমাকে টাকা দিয়ে কিনে আনলো। দরজা খুলার শব্দ শুনে সামনে তাকালাম, কাব্য ভাঙা ফোনটার দিকে তাকিয়েই ভয়ে দাঁড়িয়ে গেছে ওখানে।
কাব্য: তিলো ফ্লোরে বসে আছ কে…
আমি: তোমার ওই নোংরা মুখে আমার নাম শুনতে চাই না।
কাব্য: কেঁদো না প্লিজ আমার কথা শুনো।
আমি: তোমার থেকে তো আমার একটা কথাই শুধু শোনার আছে বলো কতো টাকা দিয়ে কিনে এনেছ আমাকে। আমি জানতে চাই তোমার কাছে আমার মূল্য কত টাকা।
কাব্য: কান্না থামাও প্লিজ।
আমি: সেদিন রাতে আমার জ্ঞান ফেরার পর এমন ভাব করেছিলে যে তুমি কিছুই জানোনা। আমি মামির চরিত্র ঢাকার জন্য তোমাকে এসব বলিনি আর তুমিই কিনা এমন…
কাব্য: আমার কথা তো শুনবে।
আমি: কি শুনবো হ্যাঁ, আমি তো তোমাকে ভালোবেসেছিলাম তাহলে কেন আমাকে কিনে এনেছ..? জানো শুভ্রা কি বলেছে, তুমি নাকি আমাকে ওইসব মেয়েদের মতো ভাবো তাই কিনে এনে… ছিঃ এসব ভাবতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে।
কাব্য: সত্যিটা কি সেটা তো শুনবে।
আমি: সব সত্যি তো শুভ্রা আমাকে বলেই দিয়েছে, আর আমি সত্যিটা জেনে যাবো এই ভয়েই তো তুমি ফোন কেড়ে নিয়েছিলে।
কাব্য: তিলো…
আমি: একদম আমার কাছে আসবে না তোমার ওই নোংরা হাতে আমাকে টাচ করো আমি চাইনা।
কাব্য: প্লিজ আমার কথা শুনো।
আমি: কিচ্ছু শুনতে চাইনা বেড়িয়ে যাও তুমি এই রুম থেকে।
কাব্য: তিলো…
আমি: বেড়িয়ে যাও।
কাব্য বেড়িয়ে যেতেই দরজা লাগিয়ে দিলাম। হাটতে পারছি না মাথা খুব ঘুরছে দরজার পাশেই বসে পড়লাম। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে, আমি তো কাব্য’কে ভালোবেসেছিলাম আর ও আমার সাথে এমনটা করতে পারলো…
চলবে?