রোমান্টিক ডাক্তার,পার্ট: ২৫
লেখিকা: সুলতানা তমা
কাব্য আব্বুর কাঁধে মাথা রেখে আব্বুকে একটা হাত দিয়ে জরিয়ে ধরে বসে আছে। আব্বু ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন, মনে হচ্ছে কাব্য একটা ছোট বাচ্চা। সত্যি বাবা মায়ের কাছে সন্তান কখনো বড় হয় না, সেই ছোট্ট শিশুই থেকে যায়। আমার যদি ক্ষমতা থাকতো তাহলে আজকের এই দৃশ্যটাকে এই সময়টাকে এখানেই আটকে রাখতাম।
আব্বু: বৌমা তোমার চোখে পানি কেন? (আব্বুর কথা শুনে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলাম। ওদের ভালোবাসা দেখে আব্বু আম্মুর কথা মনে পড়ে গেলো, সেদিনের এক্সিডেন্ট যদি আব্বু আম্মুকে আমার থেকে কেড়ে না নিতো তাহলে তো আমিও এমন ভালোবাসা পেতাম)
কাব্য: তিলো কি হয়েছে?
আমি: কিছু নাতো।
কাব্য: হুম বুঝেছি, আব্বু তিলোর বাবা মা তো মারা গেছেন তাই হয়তো ও কাঁদছে।
আব্বু: এক বাবা মারা গেছে তো কি হয়েছে আর এক বাবা তো বেঁচে আছে। (উনার কথা শুনে অবাক হয়ে তাকালাম, প্রথম দেখায় কেউ এতোটা আপন করে নিতে পারে)
আব্বু: এদিকে এসো মা। (আব্বু হাত বাড়িয়ে আমাকে ডাকছেন দেখে উনার পাশে গিয়ে বসলাম)
আব্বু: আজ থেকে তুমিও আমার মেয়ে।
আমি: আপনার আরেক মেয়ে যে আপনার জন্য অপেক্ষায় আছে তার কাছে যাবেন না?
আব্বু: যাবো তো।
কাব্য: আব্বু হিয়ার বিয়ে ঠিক করেছি দুই সপ্তাহ পর বিয়ে, তুমি বাসায় চলো হিয়া খুব খুশি হবে।
আব্বু: এতো বছর পর আমার ছেলে মেয়েকে খুঁজে পেয়েছি তাদের কাছে না গিয়ে থাকবো কিভাবে? সে রাতের পর তোদের অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিলাম কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। আচ্ছা তুই আমাকে খুঁজে পেলি কিভাবে?
কাব্য: এক বছর আগে ফারাবীর ব্যবসার একটা কাজে এদিকে এসেছিলাম, তখন তোমাকে রাস্তায় দেখতে পাই। তারপর তোমাকে ফলো করে বাসা অব্দি আসি।
আমি: তারপর থেকে মাঝে মাঝেই এখানে লুকিয়ে এসে আব্বুকে দেখে যাও তাইতো? (কাব্য মাথা নিচু করে বসে আছে)
আব্বু: চল বাবা পুরনো কথা গুলো সব ভুলে যাই নতুন করে আবার সবকিছু শুরু করি।
কাব্য: হুম।
আব্বু: এবার আমাকে আমার হিয়ার কাছে নিয়ে চল।
কাব্য: চলো।
বাসায় এসে কলিংবেল চাপতেই হিয়া দরজা খুলে দিলো, মনে হচ্ছে ও এতোক্ষণ অপেক্ষা করছিল কখন কলিংবেল বেজে উঠবে।
হিয়া: ভাবি আমার সারপ্রাইজ কোথা…(আব্বুকে দেখে হিয়া থেমে গেলো, অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আব্বুর দিকে)
কাব্য: আব্বু ও তোমার সেই ছোট্ট হিয়া।
আব্বু: আমার মা তো অনেক বড় হয়ে গেছে। (হিয়া ছোট বাচ্চার মতো দুহাত দিয়ে আব্বুর গলা জরিয়ে ধরলো। আব্বু দুহাত দিয়ে কাব্য আর হিয়াকে জরিয়ে ধরলেন)
ভাবি: তিলোত্তমা কে উনি?
আমি: শশুড় মশাই, বলেছিলাম না ফিরিয়ে আনবো। (ভাবিকে চোখ টিপ দিলাম)
ভাবি: তুই না পারিসও বটে। (ভাবি গিয়ে আব্বুকে সালাম করলো)
আব্বু: ও…
কাব্য: তোমার আর একটা বৌমা। তোমাদের ছেড়ে চলে আসার পর ফারাবী আমাকে আপন করে নিয়েছিল, ও ফারাবীর স্ত্রী। ফারাবী তো এখন অফিসে রাতে আলাপ করিয়ে দিবো।
আব্বু: ঠিক আছে।
আমি: আব্বু এখন যান তো ফ্রেশ হয়ে নিন দুপুরে সবাই একসাথে খাবো।
আব্বু: ঠিক আছে মা।
হিয়া: আজকে আমি আব্বুর জন্য রান্না করবো। (হিয়ার কথা শুনে তো সবাই অবাক)
ভাবি: তোর জীবনে কখনো রান্নাঘরে গিয়েছিস?
অয়ন: আরে ওকে শিখতে দাও আকাশ কি ওকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবে নাকি, কাজের বুয়ার মতো সবসময় কাজ করাবে।
হিয়া: ছোট ভাইয়া ভালো হবে না কিন্তু।
আমি: অয়ন দেখে নিও আকাশ হিয়াকে একদম রানীর মতো করে রাখবে যেমনটা এতোদিন তোমরা তিনভাই ওকে রাজকন্যার মতো রেখেছ।
কাব্য: আব্বু ও অয়ন ফারাবীর ছোট ভাই।
অয়ন: কি বললে?
কাব্য: না না ফারাবী আর আমার ভাই।
হিয়া: আর আমার শত্রু।
অয়ন: দাঁড়া। (অয়ন হিয়াকে দৌড়িয়ে নিয়ে গেলো, এতোদিনে পরিবারটা সম্পূর্ণ লাগছে। এখন শুধু আম্মুকে খুঁজতে হবে কিন্তু কোথায় খুঁজবো সেটাই তো বুঝতে পারছি না। আব্বুর ঠিকানা কাব্য জানতো তাই সহজেই আব্বুকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি কিন্তু আম্মু…)
কাব্য: তিলো রুমে চলো।
আমি: হুম।
রুমে আসতেই কাব্য আমাকে জরিয়ে ধরলো।
আমি: এইযে হঠাৎ কি হলো?
কাব্য: তোমার কাছে আমি ঋণী হয়ে গেলাম, এই ঋণ কখনো শোধ করতে পারবো না।
আমি: মানে?
কাব্য: তুমি না চাইলে আব্বুকে কখনো আমি ফিরে পেতাম না, সারাজীবন নিজের মনের মধ্যে আব্বু আম্মুর প্রতি ঘৃণাটাই জমিয়ে রাখতাম।
আমি: শুধু কি তোমাদের জন্য আব্বুকে ফিরিয়ে এনেছি নাকি? আমার আব্বুকে তো আর ফিরে পাওয়া সম্ভব না, আমারও তো আব্বুর ভালোবাসা পেতে ইচ্ছে হয় তা…
কাব্য: অনেক ভাগ্য করে তোমার মতো জীবনসঙ্গিনী পেয়েছি। (কাব্য আমার কপালে ওর কপাল ঠেকিয়ে খুব কাঁদছে)
আমি: দূর পাগল এভাবে কেঁদো না এখন আম্মুকে খুঁজে বের করার উপায় বের করো।
কাব্য: কোথায় পাবো বুঝতে পারছি না কিছু।
আমি: হতাশ হচ্ছ কেন, আমরা আম্মুকে ঠিক খুঁজে পাবো দেখো।
কাব্য: তোমার কথাটাই যেন সত্যি হয়।
আমি: হুম এখন যাই রান্না করতে হবে।
খাওয়াদাওয়া করে সবাই একসাথে বসে গল্প করছে কিন্তু কাব্য কোথায় গেলো? কখন যে এখান থেকে চলে গেলো দেখতেই পাইনি। রুমে হয়তো আছে, তাড়াতাড়ি রুমে আসলাম।
যা ভেবেছিলাম তাই কাব্য রুমেই আছে, জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। কিন্তু ওকে হঠাৎ এতো নিশ্চুপ লাগছে কেন?
আমি: ডাক্তারবাবু। (আমার ডাক শুনে যেন চমকে উঠলো ও)
কাব্য: হুম।
আমি: কি হয়েছে, সবাই আড্ডা দিচ্ছে আর তুমি একা একা রুমে আর এখানে এভাবে নীরব হয়ে দাঁড়িয়ে আছ কেন?
কাব্য: কিছু হয়নি।
আমি: তুমি আবার আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছ।
কাব্য: আরে না কি লোকাবো? আসলে আমি শুভ্রা আর আরশির কথা ভাবছিলাম। ওরা দুজন অনেক দূর এগিয়ে গেছে এবার ওদের শাস্তি প্রয়োজন। ওদের পুলিশে না দিলে ওরা আমাদের আরো ক্ষতি করবে।
আমি: এখন জামেলা করার প্রয়োজন নেই আগে হিয়ার বিয়েটা হয়ে যাক তারপর ওদের ব্যবস্থা করবো। আমার সব চিন্তাই তো হিয়াকে নিয়ে।
কাব্য: হিয়াকে নিয়ে কি চিন্তা আরশি হিয়ার ক্ষতি করবে নাকি, ওর রাগ তো আমার উপর।
আমি: একবার তো ক্ষতি করেই ফেলেছে, সেদিন ছিনতাইকারী হিয়ার হাত কাটেনি ওরা আরশির লোক ছিল।
কাব্য: কি বলছ এসব, আগে বলনি কেন?
আমি: হিয়া শুনলে ভয় পেয়ে যেতো তাছাড়া তোমার প্রতি হিয়া এমনিতে রেগে আছে, তোমার জন্য ও বিপদে আছে এইটা জানতে পারলে ও তোমাকে আরো বেশি ভুল বুঝতো।
কাব্য: সব দোষ আমার আসলে আমি একটা…
আমি: নিজেকে কেন অযতা দোষ দিচ্ছ, আরশি ওর পাপের শাস্তি হিসেবে জেলে গিয়েছিল। এখন যদি ও এসবের প্রতিশোধ নেয় সেটা কি তোমার দোষ?
কাব্য: আমি তো…
আমি: হয়েছে আর নিজেকে দোষ দিতে হবে না। তুমি থাকো আমি দেখে আসি আব্বু কি করছেন কিছু লাগবে কিনা।
কাব্য: শুনো। (চলে আসছিলাম কাব্য হাত ধরে টান দিয়ে ওর একদম কাছে নিয়ে গেলো। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে)
আমি: কি?
কাব্য: ভালোবাসি।
আমি: জানি তো।
কাব্য: উঁহু ভুল জানো।
আমি: মানে?
কাব্য: মানে আমি তোমাকে ভালোবাসি এইটা তুমি ভুল জানো কারণ আমিতো তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।
আমি: পাগল কোথাকার ছাড়ো। (কাব্য’কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম)
আব্বু: এসব তোকে কে বলেছে, এসবে তো কাব্য’র কোনো দোষ ছিল না।
হিয়া: মানে?
আব্বু: আমি আর তোর আম্মু একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমরা আলাদা হয়ে যাবো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আর তুই আমার কাছে কাব্য তোর মায়ের কাছে থাকবে এই সিদ্ধান্তও আমরা নিয়েছিলাম। কিন্তু কাব্য আমাদের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি, আমাদের ভুলের জন্য ও তোকে ছাড়তে পারবে না এই কথা আমাদের জানিয়ে দেয়। আর শেষমেশ কাব্য তোকে ওর থেকে দূরে সরাতে চায়না বলে তোকে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে আসে। (এতোক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে ওদের বাবা মেয়ের কথা শুনছিলাম। হিয়ার কান্না দেখে ভিতরে এসে হিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম)
হিয়া: এসব তুমি কি বলছ আব্বু, ভাইয়া আমাকে এতো ভালোবাসে আর আমি কিনা এই ভাইয়াকে…
আমি: তোমার ভাইয়া এই মিথ্যেটা বলেছিল শুধুমাত্র তোমার মনে যেন আব্বু আম্মুর প্রতি কোনো ঘৃণা জন্ম না নেয় এজন্য।
আব্বু: সব দোষ আমাদের।
আমি: আব্বু যা হবার তাতো হয়েই গেছে এখন এসব ভুলে যান। এখন আম্মুকে খুঁজে বের করতে হবে তবেই আমাদের পরিবার সম্পূর্ণ হবে।
আব্বু: আমি জানি বৌমা তোমার শাশুড়ি মা কোথায়। (আব্বুর মুখে এই কথা শুনে হিয়া আমি দুজনই চমকে উঠলাম। কিভাবে কোথায় আম্মুকে খুঁজবো সেটা আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না আর আব্বু কিনা জানেন আম্মু কোথায়)
আব্বু: কয়েকদিন আগে ওকে আমি একটা হসপিটালে দেখতে পাই, বাসা কোথায় জানিনা। সেদিন ওকে অনেক বুঝিয়েছিলাম কিন্তু ওর একটাই কথা ছিল, নিজেদের ভুলের জন্য যখন সন্তানদের হারিয়ে ফেলেছি তখন আর এক হবো না, নিজের ভুলের শাস্তি এভাবে দূরে থেকেই পাবো।
আমি: আপনি জানেন সেটা আগে বলবেন না?
আব্বু: আমি তো ওর বাসার ঠিকানা জানিনা শুধু হসপিটালে একবার দেখা হয়েছিল, পরে অবশ্য আর একদিন ওর সাথে দেখা করতে সেই হসপিটালে গিয়েছিলাম কিন্তু সে ইচ্ছে করেই আমার সাথে দেখা করেনি।
আমি: আপনি হসপিটালের নামটা বলুন। (আব্বু হসপিটালের নাম বলতেই দৌড়ে চলে আসছিলাম তখন পিছন থেকে আব্বু আবার ডাক দিলেন)
আব্বু: সে কি আসবে? (আব্বু মুখটা মলিন করে প্রশ্নটা করলেন, এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই তাই মৃদু হেসে বেরিয়ে আসলাম)
কাব্য বিছানায় বসে ফোন টিপছে, ওর হাত ধরে টেনে বাসার বাইরে নিয়ে আসলাম।
কাব্য: আরে তিলো আমরা কোথায় যাচ্ছি?
আমি: গাড়িতে উঠো, গাড়ি স্টার্ট দাও আগে তারপর বলছি।
কাব্য: কোথায় যাবো সেটা না বললে গাড়ি স্ট…
আমি: হসপিটালে যাবো।
কাব্য: কোন হসপিটালে? (কাব্য’কে হসপিটালের নাম বলতেই ও গাড়ি স্টার্ট দিলো। জানিনা আম্মুকে ওখানে পাবো কিনা)
কাব্য: তিলো আমরা ওই হসপিটালে কেন যাচ্ছি?
আমি: আম্মু আছেন ওখানে।
কাব্য: কি? (কাব্য চমকে উঠে তাকালো আমার দিকে)
আমি: আব্বু বলেছেন আম্মু ওই হসপিটালে চাকরি করেন। হসপিটালে যদি না পাই তাহলে অবশ্যই হসপিটাল থেকে উনার বাসার ঠিকানা পাবো।
কাব্য: যদি না পাই?
আমি: দ্যাত সবসময় এতো নেগেটিভ ভাবো কেন চুপচাপ গাড়ি চালাও।
কাব্য: হুম।
হসপিটালে পৌঁছে কিছুক্ষণ এদিকওদিক আম্মুকে খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না। তাহলে কি আম্মু আজ আসেননি? একজন নার্সকে দেখে তাকে ডাক দিলাম।
নার্স: জ্বী বলুন।
আমি: এখানে তো হুমায়রা চৌধুরী নামে একজন ডক্টর আছেন উনি কি আজ আসেননি?
নার্স: উনি তো এক সপ্তাহ আগে এখান থেকে ট্রান্সপার হয়ে গেছেন।
আমি: এখন কোন হসপিটালে আছেন একটু বলতে পারবেন।
নার্স: তাতো জানিনা। (নার্স এর কথা শুনে কাব্য পাশে রাখা চেয়ারটায় দফ করে বসে পড়লো। এখন কি করবো)
কাব্য: আর আম্মুকে খুঁজে পাবো না।
আমি: পাবো তো দেখো আমরা ঠিক আম্মুকে খুঁজে পাবো, তুমি কেঁদো না প্লিজ।
কাব্য: তুমি এখনো…
আমি: হুম বলছি কারণ আল্লাহর উপর ভরসা রাখলে সব সম্ভব হয়, উনি কোনো না কোনো উচিলায় বান্ধার মনের আশা পূরন করেন। দেখো একদিন আমরা ঠিক আম্মুকে খুঁজে পাবো, শুধু আল্লাহর উপর ভরসা রাখো।
কাব্য: হুম বাসায় চলো।
বাসায় এসে দেখি দরজা খোলা, আব্বু আর হিয়া ড্রয়িংরুমে বসে আছেন। হিয়া আমাদের দেখেই দৌড়ে আসলো কিন্তু শুধু আমাদের দুজনকে দেখে ওর মুখটা মলিন হয়ে গেলো।
হিয়া: আম্মুকে পাওনি তাই না?
আমি: চিন্তা করোনা পেয়ে যাবো। (হিয়া চুপচাপ রুমে চলে গেলো। আব্বুও উঠে রুমে চলে গেলেন। কাব্য’র দিকে তাকালাম ও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কি যে করবো এখন ভেবে পাচ্ছি না)
রান্নাঘরে কাজ করছিলাম হঠাৎ কাব্য’র ডাক শুনে তাড়াতাড়ি রুমে চলে আসলাম।
আমি: কি?
কাব্য: আরশি ফোন করেছে কথা বলো।
আমি: ওর সাথে আবার কিসের কথা? (কাব্য ফোনটা এগিয়ে দিয়েছে দেখে ফোনটা হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে আসলাম)
আমি: আরশি কেন আমাদের পিছনে পরে আছ? আমাদের একটু শান্তিতে থাকতে দাও প্লিজ।
আরশি: বাব্বাহ্ কাব্য’র বউ দেখি আজ শান্তভাবে কথা বলছে।
আমি: আমাদের কারো মন ভালো নেই প্লিজ ফোনটা রাখো।
আরশি: আমি তোমাদের শান্তিতে থাকতে দিবো তবে একটা শর্ত আছে।
আমি: কি শর্ত?
আরশি: কাব্য’র নামের সমস্ত সম্পত্তি আমার নামে দানপত্র করে দিতে হবে। অবশ্য ফারাবীর যা যা আছে তা দিয়ে তোমরা সবাই খুব ভালো থাকতে পারবে।
আমি: আর যদি না দেই?
আরশি: ওইযে আবারো অশান্তি হবে।
আমি: তোর যা মন চায় করেনে খুব তাড়াতাড়ি আমি তোকে আর শুভ্রাকে পুলিশে দিবো।
আরশি: আমি কোথায় আছি সেটা আগে জানার চেষ্টা কর তারপর নাহয় পুলিশে… (ফোন কেটে দিলাম, ওর এসব বকবকানি আর ভালো লাগছে না)
রুমে এসে দেখি কাব্য ঘুমিয়ে পড়েছে। মাত্র আটটা বাজে এখনি ঘুমিয়ে পড়লো। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে কিছুক্ষণ ডাকলাম কিন্তু উঠলো না। কাব্য উঠছে না দেখে আমিও চুপচাপ ওর পাশে শুয়ে পড়লাম।
মনে হচ্ছে আমি কোনো ফুলের বাগানের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি। চারপাশে নানানরকম এর ফুল। কিন্তু আমি এখানে কেন এইটা কোন জায়গা? চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখছি হঠাৎ একটা বাচ্চার দিকে চোখ পড়লো। বাচ্চাটা বাগানের মধ্যে একা একা কি করছে আর ও আমার দিকে তাকিয়ে এভাবে হাসছে কেন? ছোট্ট একটি বাচ্চা কিন্তু কতো সুন্দর একটা হাত দিয়ে আমাকে ওর কাছে ডাকছে মনে হচ্ছে ও সবকিছু বুঝে আর আমি যেন ওর মা। দৌড়ে বাচ্চাটার কাছে আসলাম কিন্তু বাচ্চাটা কোথায় চলে গেলো, এমন হুট করে কোথায় হারিয়ে গেলো ও? বাগানের চারপাশে ওকে পাগলের মতো খুঁজছি কিন্তু কোথাও তো নেই, কোথায় হারিয়ে গেলো ও?
হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো, তারমানে আমি এতোক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম। এই শীতের রাতেও আমার শরীর প্রচুর ঘামছে, কাব্য’র দিকে তাকালাম ও ঘুমে বিভোর। তাড়াতাড়ি উঠে বারান্দায় চলে আসলাম।
দূর থেকে ফজরের আযান ভেসে আসছে, জানিনা এই ভোরবেলা এমন স্বপ্ন কেন দেখেছি। খুব কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে চিৎকার করে আল্লাহ্ কে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে “কেন দেখালে এমন স্বপ্ন? আমি তো সব ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম তাহলে হঠাৎ কেন এই স্বপ্ন দেখালে”
চলবে?