রোমান্টিক ডাক্তার,পার্ট: ২৭
লেখিকা: সুলতানা তমা
হিয়া: ভাবি কি হয়েছে? (বিছানায় শুয়ে কাঁদছিলাম হঠাৎ হিয়ার কন্ঠ শুনে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলাম। অয়ন আর হিয়া এসেছে)
আমি: তোমরা?
অয়ন: তোমার সাথে আমাদের কথা আছে। ভাইয়া কোথায়? (কাব্য কোথায় জিজ্ঞেস করতেই আবারো চোখ দুটু ভিজে গেলো, কাব্য যে এখন আরশিকে নিয়ে ব্যস্ত)
আমি: কি বলবে বলো।
হিয়া: ও তোমার মামাতো বোন?
আমি: হুম তিন্নি।
অয়ন: কিন্তু ও তো আরশি।
আমি: হুম জানি।
হিয়া: তুমি জানতে এই কথা?
আমি: একটু আগে জেনেছি।
হিয়া: তোমার বোন হয়ে তোমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল এইটা কিভাবে সম্ভব? নাকি ও তখন জানতো না?
আমি: জেনেশুনেই করেছে প্রতিশোধ নিয়েছে।
হিয়া: তোমার প্রতি ওর কিসের রাগ?
আমি: আব্বু আম্মু মারা যাওয়ার পর তো আমি মামার কাছে চলে এসেছিলাম। আপু আর মামি আমাকে সহ্য করতে পারতো না, আমাকে নানাভাবে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতো। তবে মামি কখনো খারাপ কিছু করেনি। একদিন মামা মামি কি কাজে যেন বাইরে গিয়েছিল তখন আপু ওর এক ছেলে বন্ধুকে নিয়ে বাসায় আসে। আমি নামাজ পড়ে জায়নামাজে বসে কাঁদছিলাম কারণ তখনো আব্বু আম্মুকে হারানোর কষ্টটা সয়ে উঠতে পারিনি। আপুর বন্ধু আপুর ইশারায় আমার রুমে এসেছিল, আমি বুঝতে পেরে হাতের কাছে ফুলদানি ছিল সেটা দিয়ে ওর মাথায় আঘাত করি তখনি মামা মামি চলে আসেন। আপু মামা মামিকে ভুল বুঝায় যে আমি নাকি ওই ছেলেকে বাসায় এনেছিলাম আর আপু দেখে ফেলাতে মিথ্যে বলে ছেলেটার মাথায় আঘাত করেছি। সেদিন মামা মামি আপুর কথা বিশ্বাস করেননি আপুকে মামা কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে বলেছিলেন। আপু সেদিন বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল আর বাসায় ফিরে যায়নি পরে অবশ্য আমরা আপুকে অনেক খুঁজেছি। সেদিনের প্রতিশোধ আপু আমার বাচ্চাটাকে খুন করে নিলো। (অয়ন আর হিয়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আর আমি বিছানায় বসে নিশ্চুপে কাঁদছি। এতো কষ্টের পর কাব্য’কে পেয়েছিলাম আর এখন কাব্য’ই কিনা আরশির)
হিয়া: তারমানে সেদিন আরশি রাগ করে ভাইয়ার কাছে চলে এসেছিল।
অয়ন: হ্যাঁ আরশি তো এসে আমাদের বলেছিল ওর বোন নাকি ওকে মিথ্যে কলঙ্ক দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে।
হিয়া: জানো ভাবি ওর কথা গুলো সেদিন ভাইয়া বিশ্বাস করলেও আমরা বিশ্বাস করিনি। আরশিকে প্রথম থেকেই আমাদের ভালো লাগতো না আর বড় ভাবি তো ওকে সহ্যই করতে পারতো না তাইতো…
আমি: তাইতো কি থেমে গেলে কেন?
হিয়া: তখন আমি ছুটিতে দেশে এসেছিলাম। ভাবি একদিন আরশিকে অন্য ছেলের সাথে দেখেছিল, আরশি ভাবিকে নিষেধ করেছিল ভাইয়াকে যেন না বলে কিন্তু ভাবি ভাইয়ার ভালোর জন্য বলে দেয়। তারপর আরশি ভাইয়ার কাছে ক্ষমা চায় ভাবির কাছেও ক্ষমা চেয়েছিল। আরশির তখনকার ভালো মানুষী আচরণ গুলো আমার ভালো লাগতো না আবার ভাইয়াকে কিছু বলতেও পারছিলাম না তাই আমি আবার বাহিরে চলে যেতে চাই। সেদিন আমাকে নিয়ে ভাইয়ারা এয়ারপোর্ট গিয়েছিল তাই বাসায় কেউ ছিল না আর এই সুযোগে আরশি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ভাবির পানির গ্লাসে ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিল যার ফল ভাবি কখনো মা হতে পারবে না। (কথাটা শুনে ভয়ে বুক কেঁপে উঠলো, এতোটা খারাপ কোনো মানুষ হতে পারে)
আমি: এজন্যই ভাবি আপুকে দেখে ভয়ে দৌড়ে রুমে চলে গিয়েছিল?
হিয়া: হুম।
অয়ন: অনেক জ্বালিয়েছে ও আমাদের, আবার বাসায় ঢুকেছে কিনা কি করে বসে প্লিজ ভাবি ওকে পুলিশে দাও।
আমি: হিয়ার বিয়েটা হয়ে যাক এখন এসব জামেলা করা যাবে না।
অয়ন: আরশি কিন্তু খুব ডেঞ্জারাস মেয়ে কখন কার কি ক্ষতি করে বসে ঠিক নেই। (মুচকি হাসলাম, আর কি ক্ষতি করবে আমার সবচেয়ে বড় দুইটা ক্ষতি তো ও অলরেডি করে ফেলেছে। প্রথম তো আমার বাচ্চাটাকে খুন করালো আর এখন কাব্য’কে কেড়ে নিলো)
আমি: হিয়া আগামীকাল তোমার বিয়ে প্লিজ তুমি এসব নিয়ে চিন্তা করোনা।
হিয়া: হুম।
হিয়া আর অয়ন চলে যাচ্ছিল আবারো ডাক দিলাম হিয়াকে, জানতে হবে তো ও প্রথমে আপুকে না চেনার ভান করেছিল কেন।
হিয়া: ভাবি কিছু বলবে?
আমি: তখন তুমি আপুকে না চেনার ভান করেছিলে কেন?
হিয়া: আসলে…
আম: সব তো আস্তে আস্তে জেনেই যাচ্ছি এখন আর চুপ থেকে কি লাভ বলতো?
হিয়া: আর চুপ থাকা ঠিক হবে না ভেবেই তো তোমাকে জানাতে এসেছি। আসলে তখন ভাইয়া ইশারা দিয়ে তোমাকে বলতে নিষেধ করেছিল।
মৃদু হাসলাম কারণ কিছু তো বলার নেই। অয়ন আর হিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেলো।
কাব্য’কে বার বার বুঝানোর পরও কাব্য আমার থেকে কথা লুকাচ্ছে ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। আপুই যে আরশি এইটা আমাকে বললে কি হতো আমি তো জেনেই গেছি, সত্যি তো কখনো লোকানো যায় না। তাহলে কি আমার ভালোবাসায় কোনো কমতি ছিল যে আমি কাব্য’কে বুঝাতে ব্যর্থ হলাম? আচ্ছা আরশি কি আমার থেকেও কাব্য’কে বেশি ভালোবাসে? আমি তো কাব্য’কে অনেক ভালোবাসি ওকে ছাড়া তো আমি…
তিশা: তমা।
আমি: হুম। (তিশা আসাতে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলাম)
তিশা: লাভ নেই বৃথা চেষ্টা করে।
আমি: (নিশ্চুপ)
তিশা: বাড়িতে একটা বিয়ে অথচ যে যার মতো…
আমি: তিশা ভালো লাগছে নারে। (তিশাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলাম, কোনো ভাবেই কাব্য আর আপুকে একসাথে দেখার দৃশ্যটা ভুলতে পারছি না)
তিশা: এভাবে বারান্দায় দাঁড়িয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদলেই তো সব ঠিক হয়ে যাবে না। আরশি কে? কোথায় আছে খুঁজে বের কর, তোকে মারার চেষ্টা করেছিল সেজন্য ওকে জেলে পাঠিয়ে দে তাহলেই তো হয়।
আমি: জানিই তো আরশি কে আর কোথায় আছে কিন্তু…
তিশা: জানিস?
আমি: হুম তিন্নি আপুই আরশি আর এখন ও কাব্য’র বুকে মাথা রেখে প্রেম করছে।
তিশা: মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর পাগলের মতো কিসব বলছিস? কাব্য তো সেই কখন আদনান কে নিয়ে বাইরে গেছে আর তিন্নি যাকে তুই আরশি বলছিস সে তো দেখেছি রুমে পায়চারী করছে আর রাগে পুষছে।
আমি: কিন্তু আমি তো ওদের একসাথে ছাদে দেখে আসলাম।
তিশা: একসাথে দেখেছিস আর তাই নিজের মনের মতো করে ভেবে নিয়েছিস কাব্য আরশিকেই এখনো ভালোবাসে।
আমি: হ্যাঁ বাসেই তো।
তিশা: এভাবে কাঁদবি না বলে দিলাম। আর কাব্য তোকেই শুধু ভালোবাসে বুঝেছিস?
আমি: (নিশ্চুপ)
তিশা: এই তিন্নি না আরশি ও তো সবসময় তোর ক্ষতই চেয়ে এসেছে এবার ওকে শাস্তি দে প্লিজ তাহলে একটু শান্তিতে থাকতে পারবি।
আমি: কোথায় যাচ্ছিস?
তিশা আমার কথার জবাব না দিয়ে রেগে বেরিয়ে গেলো।
কি করবো এখন আমি? কিভাবে শাস্তি দিবো আপু আর শুভ্রাকে?
আপু: দেখ শুভ্রা তোকে আমি বারবার বলছি কাব্য’কে পাওয়ার আশা ছেড়ে দে। হ্যাঁ মানছি আমি তোকে কথা দিয়েছিলাম কাব্য তোর হবে আর ওর সম্পত্তি হবে আমার কিন্তু এখন আমি আমার মত পাল্টে পেলেছি কাব্য আমার ছিল আর আমারই থাকবে। (আপুর রুমের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম হঠাৎ আপু কারো সাথে ফোনে কথা বলছে শুনে থেমে গেলাম। আপুর কথা গুলো তো শুনলাম কিন্তু শুভ্রা কি বলছে সেটা তো শুনতে পাচ্ছি না)
আপু: শুভ্রা বেশি বাড়াবাড়ি করলে কিন্তু এর ফল ভালো হবে না। (সবকিছু নীরব হয়ে গেলো, তারমানে আপু আর শুভ্রার মধ্যে কাব্য’কে নিয়ে জামেলা হচ্ছে। আচ্ছা আমি যদি ছোট্ট একটা ঠোকা দিয়ে ওদের মধ্যে এই জামেলা আরো বাড়িয়ে দেই তাহলে কেমন হবে? আরশি আর শুভ্রা নিজেদের মধ্যে জামেলা করে নিজেরাই মরবে আর আমার ডাক্তারবাবু আমারই থাকবে। হিহিহি তিলোত্তমা কি বুদ্ধিরে তোর)
মামি: কিরে তমা হাসছিস কেন আর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? (খুশিতে কখন যে নিজের অজান্তেই শব্দ করে হেসে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি)
আমি: তুমি কোথায় দেখছিলাম, আপু রুমে তো তাই ভয়ে…
মামি: ভয় কিসের আরে তিন্নি তো এখন ভালো হয়ে গেছে, ও তো এখন আর তোকে শত্রু ভাবে না।
আমি: (মাথা নিচু করে মৃদু হাসলাম)
মামি: কিরে হাসছিস কেন?
আপু: আম্মু আমি একটু আসছি।
মামি: আরে এই সন্ধ্যাবেলায় কোথায় যাচ্ছিস? (আপু মামির প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেল কিন্তু কোথায় গেল? নতুন করে কোনো প্ল্যান করছে নাতো)
মামি: এই মেয়েটা যে কি হুট করে এই সন্ধ্যাবেলায় কোথায় চলে গেলো।
আমি: একটু আগে বলছিলে না আপু ভালো হয়ে গেছে? আসলে তো ভালো হয়নি। আপু আবারো আমার ক্ষতি করার জন্য কোনো একটা প্ল্যান করেছে আর সে প্ল্যান সাকসেস করার জন্যই কোনো একটা কাজে বাইরে গিয়েছে।
মামি: কি বলছিস এসব তিন্নি কেন তোর ক্ষতি করতে যাবে? হ্যাঁ আগে তুই আমাদের বাসায় থাকতি তোকে তোর মামা বেশি ভালোবাসতো তাই তিন্নি এমন করতো কিন্তু এখন…
আমি: এখন যে আমি ওর ভালোবাসার মানুষের স্ত্রী।
মামি: মানে?
আমি: কাব্য’কে আপু ভালোবাসতো, অবশ্য আপু কাব্য’কে ঠকিয়েছিল যার কারণে কাব্য আপুকে জেলে দিয়েছিল। আপু এতোদিন বাহিরে নয় জেলে ছিল। আর জেল থেকে বেরিয়ে এসে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল যার কারণে আমার বাচ্চাটা…
মামি: কি বলছিস এসব?(মামি বিছানায় দফ করে বসে পড়লো, মামি যেন এসব বিশ্বাসই করতে পারছে না)
আমি: শুধু এসব না বড় ভাবিকে ওষুধ খাইয়ে ভাবির বাচ্চা ধারণের ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে।
মামি: আমার মেয়ে এতো খারাপ? ওকে তো এখন আমার মেয়ে বলতেও ঘৃণা হচ্ছে।
আমি: মা যেমন মেয়ে তো তেমন হবেই।
মামি: এভাবে বলিস না মা, হ্যাঁ আমি তোর সাথে খারাপ আচরণ করেছিলাম কিন্তু এখন তো আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আর এখন আমিই তোকে বলছি তিন্নি আমার মেয়ে না ওকে তুই পুলিশে দে।
আমি: পুলিশে তো আমি দিবই।
কাব্য: তিলো একটু রুমে এসো তো। (কাব্য’র কন্ঠ শুনে পিছন ফিরে তাকালাম, দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। ইচ্ছে হচ্ছে না ওর কাছে যেতে)
রুমে এসে দেখি কাব্য চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে হয়তো কারো জন্য অপেক্ষা করছে।
আমি: যার জন্য অপেক্ষা করছ সেতো বাসায় নেই।
কাব্য: মানে?
আমি: কিছুনা। (মুচকি হেসে বিছানায় বসতে চাইলাম, কাব্য আমার হাত ধরে টান দিয়ে ওর বুকের কাছে নিয়ে গেলো)
কাব্য: আমার থেকে এতো দূরে দূরে থাকো কেন? (শব্দ করে হেসে দিলাম। আমি নাকি ওর থেকে দূরে থাকি)
কাব্য: আমাকে কষ্ট দিয়ে হাসছ আবার?
আমি: তো কি করবো? তুমি অন্য কারো হয়ে যাচ্ছ দেখে হাউমাউ করে কাঁদবো?
কাব্য: অন্য কারো হয়ে যাচ্ছি মানে? (কাব্য’র হাতের দিকে চোখ পড়তেই মনে পড়লো ঠিক এভাবেই তো কিছুক্ষণ আগে আরশির হাত ধরে ছিল। এক ঝটকায় ওকে দূরে সরিয়ে দিলাম)
কাব্য: তিলো কোথায় যাচ্ছ? কেন এমন করছ আমার সাথে?
আমি: প্রশ্নটা নিজেকে করো।
রুমের বাইরে চলে এসেছিলাম কাব্য পিছন পিছন এসে আমার হাত ধরে হেছকা টান দিয়ে দেয়ালের সাথে আমাকে চেপে ধরলো। কাব্য আমার কপালের সাথে ওর কপাল ঠেকিয়ে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি: সবাই নিচে আছে দেখবে কেউ ছাড়ো।
কাব্য: কেন করছ এমন কি করেছি আমি কিসের শাস্তি দিচ্ছ?
আমি: কিছুক্ষণ আগে ঠিক এভাবেই দাঁড়িয়ে ছিলে আর আরশি তোমার বুকে মাথা রেখেছিল তাই না? একসাথে দুই মেয়েকে…
কাব্য: চুপ করো প্লিজ।
আমি: আরশির কথা আমার থেকে কেন লুকিয়েছিলে? আপুই যে আরশি সেটা আমাকে যেন না বলে হিয়াকে নিষেধ কেন করেছিলে? ছাদের মধ্যে আরশির হাত ধরে…
কাব্য: প্লিজ এভাবে কেঁদো না আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।
আমি: ছাড়ো আমাকে।
কাব্য’কে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিয়ে নিচে চলে আসলাম। অয়নের সাথে কথা বলতে হবে আমাকে, ওর হেল্প প্রয়োজন আমার।
অয়নের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম, দরজা লাগানোর শব্দ শুনে অয়ন পিছন ফিরে তাকিয়ে আমাকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
অয়ন: ভাবি দরজা বন…
আমি: চুপ বারান্দায় চলো। (অয়নের হাত ধরে টেনে ওকে বারান্দায় নিয়ে আসলাম)
আমি: আরশি আমাদের কথা শুনে ফেলতে পারে তাই…
অয়ন: কি করতে চাইছ?
আমি: আগামীকাল হিয়ার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর এ বাসায় পুলিশ আসবে আর শুভ্রা আরশিকে… (অয়ন আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে দেখে থেমে গেলাম)
আমি: অয়ন কি হলো?
অয়ন: পুলিশ?
আমি: হ্যাঁ আর তুমি সেই ব্যবস্থা করবে।
অয়ন: ওকে। (অয়নের রুম থেকে বেরিয়ে আসছিলাম আবারো পিছন ফিরে তাকালাম। আমি তাকিয়ে আছি দেখে অয়ন ভ্রু কুঁচকিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি)
আমি: এ বাসায় যদি আমি না থাকি তাহলেও যেন আগামীকাল শুভ্রা আর আরশিকে পুলিশে দেওয়া হয়।
অয়ন: মানে? ভাবি শুনো।
অয়নের ডাকে না দাঁড়িয়ে চলে আসলাম। সত্যি এ বাসা থেকে চলে যাবো আর পারছি না। রুমের দরজায় ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেলো ভিতরে তাকিয়ে যা দেখলাম আমার মাথা ঘুরে গেলো, কোনো রকমে দরজাটা চেপে ধরে নিজেকে সামলে নিলাম। আমাকে দেখে আরশি কাব্য দুজনই আলাদা হয়ে গেলো।
আমি: আলাদা হওয়ার তো প্রয়োজন ছিল না দুজনকে একে অপরের বুকে দেখতে ভালোই তো লাগছিল।
কাব্য: তিলো আমার কথা শুনো। (কাব্য এগিয়ে আসছে দেখে কাব্য’র পিছনে তাকালাম আরশি হাতের তালু দিয়ে তাড়াতাড়ি ওর ঠোঁট দুটু মুছে নিচ্ছে)
আমি: আপু ওহ সরি আরশি, হাতের তালু দিয়ে মুছলে হয়তো ঠোঁটের চারপাশে ছড়িয়ে যাওয়া লিপস্টিক মুছে যাবে কিন্তু…
কাব্য: তিলো তুমি যা ভাবছ তা কিন্তু নয়।
আমি: ওহ তাই বুঝি? কিন্তু আমি তো কিছু ভাবিনি সবকিছু তো আমার চোখের সামনেই হলো আর তোমার শার্টে লেগে থাকা লিপস্টিকই তো প্রমাণ। (কাব্য নিজের শার্টের দিকে অবাক হয়ে তাকালো যেন ও কিছু জানেই না)
আমি: তোমার তিলোর ঠোঁটে আজ গোলাপি লিপস্টিক অথচ তোমার শার্টে লাল লিপস্টিক লেগে আছে খুব অদ্ভুত তাই না? আর দেখো আশ্চর্যজনক ভাবে আরশির ঠোঁটে আজ লাল লিপস্টিক…
আরশি: কাব্য আমি আসছি। (আপু রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই কাব্য আমার কাছে আসলো)
কাব্য: তিলো তুমি যা ভাবছ তেমন কিছু…(ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিলাম কাব্য’র গালে, ও গালে হাত দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে)
আমি: তোমার সাহস হয় কি করে আরশিকে আমার রুমে নিয়ে এসে এসব নোংরামি করতে? (কাব্য আমার কথার কোনো জবাব না দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো)
বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাঁদছি আর বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছি কাব্য এখনো রুমে আসছে না। রাতের খাবারও খেলো না। বাসায় এতো মেহমান সবাই তো ওকে খুঁজছে মনে হয়। এভাবে থাপ্পড় দেওয়াতে হয়তো রাগ করে বাসায় আসছে না কিন্তু আমি কি করবো, আমি তো একটা মানুষ এসব সহ্য করবো কিভাবে? কাব্য’কে যে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসি ওকে অন্যকারো সাথে আমি ভাগ করতে পারবো না। হঠাৎ কাব্য’র ফোন বেজে উঠলো, রাগের বশে ফোনটা ফেলে চলে গেলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখি শুভ্রা, রিসিভ করে আমি কথা বলার আগেই ও বলে উঠলো…
শুভ্রা: হোয়াটস এ্যাপস অন করে পিক গুলো দেখে নাও।
শুভ্রা ফোন কেটে দিলো আশ্চর্য তো, কিন্তু ও হোয়াটস এ্যাপসে কি পিক দেখতে বললো? তাড়াতাড়ি হোয়াটস এ্যাপসে ঢুকে পিক গুলো দেখতে লাগলাম। পিকগুলো দেখে আমার মাথা ঘুরতে শুরু করলো হাত কাঁপছে আমার। একটু আগে আমার চোখের সামনে যা ঘটলো তাতো এই পিকের তুলনায় তুচ্ছ। লিপ কিস করাটা তো সামান্য ছিল পিকে তো কাব্য’র বুকে আরশি অর্ধনগ্ন হয়ে ঘুমিয়ে আছে। প্রতিটা পিকে আরশি কাব্য দুজনই অর্ধনগ্ন হয়ে… ছিঃ কাব্য আর আরশির সম্পর্ক এমন ছিল। তাহলে এজন্যই ওরা আমার থেকে আরশির কথা লুকিয়ে রেখেছিল। শুধু কাব্য না সবাই আমাকে এভাবে ঠকালো? হাতটা খুব কাঁপছে চোখ দুটু ঝাপসা হয়ে গেলো, ফোনটা হাত থেকে ফ্লোরে পড়ে গেল। দরজা খুলার শব্দ শুনে সামনে তাকালাম কাব্য ফ্লোরে পরে থাকা ফোনটার দিকে তাকিয়ে আছে আর আমি ঝাপসা চোখে এক দৃষ্টিতে কাব্য’র দিকে তাকিয়ে আছি।
চলবে?