রৌদ্র কুয়াশা,পর্ব ১,২,৩

0
4415

#রৌদ্র কুয়াশা,পর্ব ১,২,৩
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ১

-আমি একজন বার ড্যান্সার।আপনার মতো এতো নামকরা বিজনেসম্যান এটা জেনেও কেন আমাকে বিয়ে করতে চাইছেন?
-সেটা জেনে তুমি কি করবে?তোমার প্রয়োজন টাকার।আর আমার প্রয়োজন অন্য কিছুর।
-কি সেই প্রয়োজন?

সিগারেটে শেষ টান দিয়ে সেটাকে দু ঠোটের মাঝখান থেকে নামিয়ে টাইলসের ফ্লোরে ফেলে নিজের জুতো দিয়ে পিষে দিল লোকটা।তারপর মাথা তুলে তাকালো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লেহেঙ্গা পরিহিত মেয়েটির দিকে।

-আপনার নাম কি?
-নুসাইবা নুর ইলা।
-ইলা নামের অর্থ জানেন?
-পানি।পানির সমার্থক শব্দ।
-পানির কাজ কি জানেন?তৃষ্ণা মেটানো।আমার তৃষ্ণা মেটানোর জন্য আমার আপনাকে প্রয়োজন।তার জন্য যতো টাকা দরকার আমি দেব আপনাকে।টাকার চাদরে মুড়িয়ে রাখব।
-আপনি এতো টা নিশ্চিত কিভাবে হচ্ছেন যে আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজী হব!
-টাকার কাছে সবাই হেরে যায়।আর হ্যাঁ শুনেছি আপনার পরিবারে আপনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি বারে বারে ড্যান্স করে টাকা রোজগার করেন।
-আপনি কিভাবে জানলেন?
-বারের মালিক বলেছে।আর হ্যাঁ আপনার পরিবার তো এটাও জানেনা আপনি কোথ থেকে টাকা রোজগার করেন।আর তারা জানুক এটাও নিশ্চয়ই আপনি চাইবেন না।

লোকটার ঠান্ডা গলার এই কথাতে ইলা আরো ভয় পেয়ে গেল।এ যেন ঝড়ের পূর্বাভাস।সরারসরি থ্রেট যেটাকে বলে।

-শুনুন,আমি এক কথার মানুষ।বেশি কথা পেচাতে পছন্দ করিনা।মাহির আশহাব সোজা আঙুলে ঘি ওঠানোর থেকে আঙুল বেকিয়ে কাজ করতে বেশি পছন্দ করে।

মুখে বাকা হাসির রেখা টেনে কোর্ট টা কাঁধের ওপর নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো মাহির।

ইলা এখনো নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।

পরিবারের ছোট মেয়ে ইলা।বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে পুরো পরিবারের দায়িত্ব না চাইতেও কাধে তুলে নিতে হয়েছে তাকে।তারপর আবার কাটা গায়ে নুনের ছিটে।ইলার বড় বোন মিলা হঠাৎ করেই এক্সিডেন্ট করে।তার শরীরের ডান সাইড প্যারালাইজড।বোনের স্বামী ও তাকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছে।বোনের পাঁচ বছরের মেয়ে,অসুস্থ বোন তার ওপর অসুস্থ মা তিনজনের দায়ভার কাঁধে তার।

এতোদিন বারে বারে ড্যান্স করে রোজগার করে সংসার চালাতো।কিন্তু হুট করে আজ নামকরা শিল্পপতির এমন প্রস্তাবে যথেষ্ট চমকে গেছে ইলা।

-দাদীমা আমি কোনো ভুল করছি নাতো?

বৃদ্ধা আদীবা বেগমের কোলে মাথা রেখে তার হুইলচেয়ারের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছে মাহির।

-দাদীমা আমি সুখ খুঁজতে বেরিয়ে পড়েছি।আমি আর পারছি না দাদীমা।আমি যে বড্ড অসহায় হয়ে পড়েছি।
-আমার প্রিন্স এসব বললে কি আমার ভালো লাগে।তুমি কোনো ভুল করোনি সোনা।আর কে বলেছে তুমি অসহায়!আমি আছি তো ।
-বাবার জেদে সব শেষ হয়ে গেল আমার।আজ আমার মা ও আমার কাছে নেই।তার সংসারে সে এতোটাই ব্যস্ত একবার ও তার মনে পড়ে না আমার কথা।
-দোষ তার নয় মাহির।তালাক তোমার বাবা ওকে দিয়েছিল।ও তো নিরুপায় ছিল।তোর মায়ের মতো মেয়ের সাথেই বনিয়ে খেতে পারলো না আলফাজ।এসব কথা বাদ দেও।ঘরে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে এসো।আমি আফরিনকে খাবার দিতে বলছি।
-মাইশা কি এখনো জেগে আছে?
-আছে হয়তো।দেখ আবার এই রাত বিরেতে কোথায় যায়।কবে যে ও যাবে বাড়ি থেকে!
-তুমি টেবিলে বসো।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
-আচ্ছা সোনা।

হুইলচেয়ারের চাকা ঘুরিয়ে ডাইনিং টেবিলের দিকে গেলেন আদীবা বেগম।

-আজকাল তুমি বড্ড বেশি সাজগোজ করো।ফোন নিয়েই পড়ে থাকো।আমাকে তো তোমার চোখেই পড়ে না।

ড্রেসিং টেবিলের দিকে তাকিয়ে মাহিরকে দেখে মুচকি হাসি দিল মাইশা।কানের দুলটা রেখে টুল ছেড়ে উঠে দাড়ালো।

-ওহ মাই ডিয়ার হাসবেন্ড।তুমি চলে এসেছো!আচ্ছা দেখোতো আমাকে কেমন লাগছে?
-তুমি যেমন সুন্দর তার থেকে আরো বেশী সুন্দর লাগছে।
-থ্যাংক ইউ।
-এতো কার জন্য সেজেছো?

মাহিরের কথা শুনে মাহিরের দিকে এগিয়ে গিয়ে মাহিরের গলাতে নিজের দু হাত রাখলো মাইশা।

-আজ এতো রোম্যান্টিক মুডে আছো যে?
-থাকবো না।আমার একমাত্র হাসবেন্ড এর জন্য তো আর সাজিনি।হাহ।পুরুষত্ব হীন লোক কোথাকার।নিজের স্ত্রী কে বাচ্চা দেওয়ার ক্ষমতা নেই তার জন্য আবার সাজতে যাব!এসব আলগা পিরিত আমার দেখাবার সময় নেই।

মাহির কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে নিজের মতো বেরিয়ে গেল মাইশা।

এদিকে মাহিরের চোখের কোনে পানি টলমল করছে।

চলবে,,,,,,,,,,,

#রৌদ্র_কুয়াশা
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ২

-ব্যর্থ পুরুষ আমি।নিজের স্ত্রী কে সন্তুষ্ট করতে পারলাম না।আল্লাহ কেন আমার জীবন টা এমন করে দিলে।কেন?

চোখের কোনে পানি রেখে নিজেকেই নিজের কথা ছুড়ে মারলো মাহির।গা থেকে কোর্ট টা খুলে খাটের ওপর ছুড়ে মারলো।বিছানায় ধরাম দিয়ে ছিটকে পড়লো।এলিয়ে দিল নিজের শরীরটাকে।

-কথায় আছে পুরুষ মানুষের কাঁদতে নেই।কিন্তু কি করব আমি।আমি ও তো মাটি দিয়ে গড়া মানুষ।কি করতে পারি আমি।আমার যে মা থেকে ও নেই।না আছে কারোর কোলে মুখ গোঁজার স্থান।কোথায় গিয়ে নিজের চোখের পানি ফেলব।কোথায়?একটু তৃপ্তির নেশায় ঘুরছি।কোথাও যে শান্তি পাই না।

বালিশে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে কাঁদছে মাহির।তার নিত্যদিনের কাজ এটা।আজ ও যে এর ব্যতিক্রম হবে না।এ যে বিধি বাম।

নিজের পাশের বালিশটাতে বিছানায় হাত বুলাচ্ছে মাহির।এই জায়গা টায় এক সময় মাইশা তার পাশে শুয়ে থাকতো।আর আজ কতোদিন হয়ে গেল দুজনে এক খাটে শোয়া তো দূরে থাক এক ছাদের নিচের থেকে কেউ কারোর মুখ দেখাদেখি ও করে না।

-সন্তান ই কি সব!আমার ভালোবাসার কি কোনো মূল্য ছিল না।আমার ভালোবাসাটা কি এতোটাই ঠুনকো ছিল যে আজ আমার অক্ষমতা তোমার আমার মাঝে দেয়াল গেঁথে দিয়েছে।

চারপাশে রঙ বেরঙের আলো জ্বলছে।জোরে সাউন্ডে মিউজিক বাজছে।মাইশা হাতে ড্রিংকস নিয়ে অন্যদের সাথে তালে তালে নাচছে।আর সব কিছু উপভোগ করছে।

-তোমাকে আজ বড্ড বেশি সুন্দর লাগছে মাইশু।

রিদন পেছন থেকে এসে মাইশার কোমড় জড়িয়ে ধরলো।চুল সরিয়ে ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিল।

-কি হচ্ছে কি রিদ?আশে পাশে অনেকে আছে।
-তাতে কি?আমি তো আমার ফিওনসি কেই জড়িয়ে ধরেছি।ওদের কি তাতে?
-তুমি পারো ও বটে।
-তারপর বলো তোমার স্বামীর কি খবর?
-বাদ দেও তো।কেন ওর কথা মনে করিয়ে দেও আমাকে?অপদার্থ একটা।কোনো দিক থেকে আমি স্যাটিসফাই করতে পারেনা।না ফিজিক্যালি না মেন্টালি।
-তুমি আর কতোদিন ওখানে থাকবে?
-আমার কি থাকতে ভালো লাগে নাকি।আর এক সপ্তাহ।ডিভোর্সের তো এই শর্ত দিয়েছিল।ব্যস এক সপ্তাহ পর তিন মাস পুরে যাবে আর আমি ও রিল্যাক্সড হব।ওর মতো অপদার্থ তো জীবন থেকে যাবে।
-আমি তোমাকে নিয়ে খুব টেনশনে থাকি।
-কেন?
-তুমি ঐ বাড়ি তে থাকো।ও যদি আমার মাইশুর সাথে কিছু করে।
-তুমি কি পাগল!আমার ধারে কাছে ঘেঁষতে দেই না ওকে।
-আচ্ছা বাদ দেও।আমরা আমাদের মতো এনজয় করি।

মাইশা ও ঘুরে রিদনের কাঁধের ওপর দুহাত রাখলো।নাচের সাথে তালে তালে তাদের অশ্লীলতা চলতেই আছে।

-এতো রাত্তিরে কই থেকে আসো প্রতিদিন?

ইলা বাড়ি ফিরছিল।পথিমধ্যে মজিদ জোমাদ্দার পথ আটকে দাঁড়ালো।বয়স্ক লোক।বউ মরেছে পাঁচ বছর হতে চললো।চারটে বড় বড় ছেলে তাদের আবার ছেলে মেয়ে আছে।

মজিদ বুড়োকে দেখেই ইলার মাথা বিগড়ে গেল।দেখতে সাদাসিধে হলেও ইলার থেকে ভালো কেউ জানে না এই বুড়োর চরিত্র ।

-সেটা আপনি জেনে কি করবেন কাকা?
-কিছু না।বলছিলাম কি আমার প্রস্তাবে রাজী হয়ে যাও।
-মানে?
-বাইরের মানুষকে ঠান্ডা না করে নিজের এলাকার মানুষ কে ঠান্ডা করো।তোমার যা টাকা লাগবে আমি বাড়ি বয়ে গিয়ে দিয়ে আসব।আর তোমার কষ্ট করে কোথাও যেতে হবে না।আমিই তোমার ঘরে যাব।
-আপনি বুড়ো মানুষ লজ্জা করেনা নিজের মেয়ের বয়সী মেয়েকে এরকম প্রস্তাব দেন।
-মেয়ের বয়সী মেয়ে তো না।
-আর শুনুন আমি নেচে টাকা রোজগার করি।ঐসব নোংরা কাজ করে না।
-কি করো সেটা তুমি বললেই মনে হচ্ছে আমি বিশ্বাস করব।
-তোর মতো শয়তানের বিশ্বাস করা না করাতে কিছু আসে যায়না।
-এই তুই তোকারি করছো কেন?
-এখন তুই তোকারি করছি।এবার জুতো ধরবো।

বলতে দেরী নেই ইলা এক পায়ের চটি খুলে হাতে নিয়ে বুড়োর মুখের সামনে ধরলো।বুড়ো ভয় পেয়ে একটু পিছিয়ে গেল।

-ভাগ এখান থেকে।নাইলে জুতোর বাড়ি খেয়ে মরবি অসভ্য বেয়াদব একটা।

বুড়ো এক প্রকার দৌড়ে ওখান থেকে সরে গেল।

-আর ফের যদি আসিস না দশ টাকার ছুরি কিনে তোর খৎনা দিয়ে দেব জানোয়ার একটা।

ব্যাগে ভাইব্রেটের শব্দ শুনে ইলা জুতো পায়ে পড়ে ব্যাগ থেকে ফোন বের করলো।

-হ্যালো নিপা ,বল।
-কি রে সেই কখন থেকে ফোন করে যাচ্ছি।ধরিস না কেন।তোর কাজ শেষ হয়নি।
-হয়েছে।কি করব বল ।বাড়ি ফিরছি আর ঐ মজিদ শয়তান টা একদম হাজির।
-তোকে নিয়ে এই ভয়টাই পাই।রাত বেরাতে বাইরে থাকিস।
-কি করব বল?ভয় পেয়ে কি ঘরে বসে থাকব?পেট চলবে না তো।আর এরা রাতের বেলা কাজ করি সেটা নিয়ে কথা শোনাতে পারে অথচ কাজ খুঁজলে কাজ দেয়না।না একবেলা খোঁজ নেয় অন্তত নুন পান্তা জুটেছে কি না।পেটের দায় আমার।তাই তো কাজে যাই।
-বুঝিরে বোন।
-শোন।
-বল।
-মাহির আশহাব কে চিনিস?
-হ্যাঁ।নামকরা বিজনেসম্যান ।
-উনি আমাকে আজ বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।
-কিহ!
-হ্যাঁ সত্যি।
-তুই কি বললি?
-আমি কিছু বলিনি ।কিন্তু লোকটা বলেছে সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা করবে।
-এতো আরেক বিপদ রে ভাই ।
-সব আমার কপাল।শুধু বিপদ নিয়েই থাকি।বিপদ আমার বর আর আমি করি ওর ঘর।
-হা হা।পারিস ও বটে।
-হাসিস না।
-আচ্ছা তুই বাড়ি যা।এতক্ষণ বাইরে থাকিস না।পরে কথা হবে।
-আচ্ছা।

নিপার ফোন কেটে দিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিল ইলা।

ক্রিং ক্রিং ক্রিং

ফোনের রিংটোন বাজতেই ফোন হাতে নিল মাহির।নীলের নাম দেখে চোখ দুটো মুছে নিল মাহির।ফোনটা তুললো।

-হ্যাঁ নীল বলো।
-স্যার আজকেও ঐ সেই বুড়ো ম্যাডামের পথ আটকে ছিল।
-আজকেও?

শোয়া থেকে উঠে বসলো মাহির।চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে তার কথাটা শুনে।পারলে হয় তো মজিদ কে এখনি পুঁতে ফেলতো সামনে পেলে।

-হ্যাঁ স্যার।
-তুমি কিছু বলোনি?
-স্যার বলার প্রয়োজন হয়নি।
-মানে?
-ম্যাডাম তো চটি দেখিয়ে বুড়োকে আচ্ছা দৌড় দিয়েছে।
– কিহ!
-হ্যাঁ স্যার।
-আচ্ছা ঠিকাছে ।তুমি বাসায় যাও।আর সময় মতো খবর দিও আমাকে।
-ওকে স্যার।

মাহির ফোন কেটে দিল।ইলার কান্ড শুনে নিজেই হেসে উঠলো।

চলবে———–

#রৌদ্র_কুয়াশা
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ৩
-ইলা রানী তুমি সেই দুষ্টুটিই আছো।একদম বাঘা তেতুল।শুধু একটু বুনো ওলের ছোঁয়া দিলেই হয়।
মাহির ফোন হাতে নিয়ে গভীর চিন্তায় ডুব দিল।
মানুষের জীবন বড্ড অদ্ভুত।কখন কোন দিকে মোড় নেয় কেউ বুঝতে পারে না।অতীত টাকে ভুলে গিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করতে যাই,কিন্তু কে জানে ঐ অতীতটাতেই আবার ফিরতে হবে সুখের হাতছানি দেওয়ার জন্য।

-মামানি।
শায়লা বেগম দরজা খুলতেই আলিশা দৌড়ে এসে ইলাকে জড়িয়ে ধরলো।
-পাখিটা তুমি ঘুমাও নি?
-উহুম।
আলিশা দুদিকে মাথা নাড়িয়ে জবাব দিল।ইলা শায়লা বেগমের হাতে ব্যাগ দিয়ে আলিশাকে কোলে তুলে নিয়ে গালে চুমু খেল।আলিশা ও পরম আবেশে খালামনির গলা জড়িয়ে ধরে গালে চুমু একে দিল।
-মা ব্যাগে তোমার আর আপুর ওষুধ আছে।ওগুলো বের কর।আর আলিশা পাখির জন্য দেখ চকলেট এনেছি। খুলে ওকে দেও।
-তুই এতো কষ্ট করিস।
-আমি ছাড়া কে করবে?আর প্রতিদিন তুমি কেন এই এক কথা বলো।আপু শুনলে কষ্ট পায় না।
-আচ্ছা আর বলব না।আল্লাহ যেন তোর খুব ভালো করেন রে মা।নিজের জীবন নষ্ট করে আমাদের জন্য পড়ে আছিস।কতো ভালো সম্বন্ধ এসেছিল তোর।এতোদিনে বিয়ে করে সুখে সংসার করতি।তা না আমাদের জন্য,,,,,।
আঁচলে মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠলেন শায়লা বেগম।
-মা আবার শুরু করলে।চলো ভেতরে চলো।আমার খিদে পেয়েছে।
-চল আয়।
ইলা আলিশাকে কোলে নিয়ে ভেতরে চলে গেল।শায়লা বেগম দরজায় তালা ঝুলিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলেন খাবার গরম করতে।
-মাম পাখিটা তুমি খেয়েছো?
-হ্যাঁ আমি তো কখন মায়ের পাশে বসে খেয়েছি।
-তাহলে ঘুমাও নি কেন?
-ঘুম আসছে না।তুমি আমাকে মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে না?
-নিশ্চয়ই দেব।সোনা তুমি বরং নানুর কাছে যাও।খালামনি ফ্রেশ হয়ে নিক।
-আচ্ছা।
আলিশা ইলার কোল থেকে নেমে শায়লা বেগমের কাছে যাওয়ার জন্য ছুট দিল।
ইলা আসতে করে দরজা খুলে মিলার ঘরে ঢুকলো।লাইট জ্বালিয়ে চোখ বুজে শুয়ে আছে মিলা।ইলা লাইট অফ করতে গেলেই মিলা বলে উঠলো,
-কখন আসলি?
-তুই জেগে আছিস আপু!
-হ্যাঁ রে।আলিশা টা ঘুমায়নি।মাকে জ্বালাবে। তাই আমার পাশে বসে ও খেলছিল।
-ওহ।খেয়েছিস?
-হ্যাঁ।
-ওষুধ খেয়েছিস?
-হ্যাঁ রে।ওটা না খেয়ে কি আর উপায় আছে!
মিলা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কথা টা বললো।ইলা বোনের পাশে গিয়ে বসে মিলার মাথায় হাত রাখলো।মিলার চোখের কোন দিয়ে পানি বেয়ে পড়ছে।
-তুই আবার কাঁদছিস?জানিস আপু স্কুলে সবার বেস্টফ্রেন্ড থাকত।শুধু আমার বাদে।আমার বেস্টফ্রেন্ড সব সময় যে শুধু তুই।
-কষ্ট হয় রে।আমার জন্য তুই নিজের জীবনটা অগোছালো করে রেখেছিস।
-কি অগোছালো করেছি?বিয়ে করিনি এই তো!আচ্ছা তুই তো বিয়ে করেছিলি।তোর জীবন বুঝি খুব গোছালো আছে!একটা কথা কি জানিস আপু,বিয়ে মানে শুধু দুটো পরিবার,দুটো মানুষ,দুটো মন আর দুটো দেহের মিলন নয়।বিয়ে মানে একে অপরের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি।আর এই প্রতিশ্রুতি টা কিসের জানিস? জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ে নিজের পাশে সেই মানুষ টাকে পাওয়া যাকে তুই এই পবিত্র বন্ধন দ্বারা নিজের সাথে আবদ্ধ করেছিলি।
-জানি রে বোন।
-জেনে কি হলো?দুলাভাই তোকে এই অবস্থায় একা ফেলে চলে গেল।তোর কথা না হয় বাদ দিলাম।আলিশা!আলিশা তো তার মেয়ে।একদিন ও খোঁজ নিয়েছে?
-সবাই কি এক হয় রে বোন!
-আপু আমার বিয়ে নামক সম্পর্ক টা নিয়ে বড্ড ভয় হয়।আমি নিজেকে এটার সাথে জড়াতে চাই না রে।সত্যি চাই না!আচ্ছা তুই থাক।আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
ইলা মিলার পাশ থেকে উঠে নিজের ঘরের দিকে গেল।

-তোমার জন্য আজ আমার বিজনেসের এতো বড় লস হতে চলেছে।এখন কি করব আমি?আমার এতোদিনে র নাম ডাক এতো সহজে শেষ হয়ে যাবে।তুমি কতটা অপদার্থ তুমি কি ভেবে দেখেছো মাহির?
সকাল সকাল আলফাজ সাহেবের চেচামেচিতে মুখরিত হয়ে গেছে আহমাদ ভিলা।
মাহির গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।এতো বড় ছেলেকেও বাড়ির কাজের লোকদের সামনে চড় মারতে বাধলো না আলফাজ সাহেবের।
-তুই কি পাগল হয়েছিস আলফাজ?তোর কাছে কি শুধু নিজের ব্যবসা ধন-দৌলত,নামডাক এসব বড়।নিজের ছেলের জীবনটাকে নিয়ে কিভাবে খেলেছিস সেটা ভেবে দেখেছিস!
-চুপ কর মা।আমার আর আমার ছেলের মধ্যে কেউ কথা বলতে আসবে না।
আদীবা বেগমকে ধমকিয়ে চুপ করিয়ে দিলেন আলফাজ সাহেব।
-তোমার জন্য মাইশার বাবা আমাদের বিজনেসের পার্টনার শিপ খতম করতে চাইছেন।তুমি বুঝতে পারছো কি হতে পারে?উহ আমি তো কল্পনাই করতে পারছি না।কতো কষ্ট করে ওনার সাথে আত্মীয়তা করতে হয়েছিল আমার।কতো কষ্ট করে এই পার্টনার শিপ তৈরী করেছিলাম।আর আজ!উহ আমি সহ্য করতে পারছি না।
আলফাজ সাহেব ঘেমে একাকার হয়ে গেছেন।তিনি তাড়াতাড়ি সোফায় বসে পড়লেন।গলার টাইটা একটু ঢিলা করে দিলেন।তারপর আফরিনকে হুংকার দিলেন,
-দাড়িয়ে কি দেখছিস?যা আমার জন্য পানি নিয়ে আয়।অর্ধেক নরমাল পানি আর এক তৃতীয়াংশ ফ্রিজের পানি।মনে থাকে যেন।
-যাচ্ছি স্যার।
আফরিন দৌড়ে রান্না ঘরের দিকে গেল।মাহির ইশারায় সব সার্ভেন্টসদের ভেতরে যেতে বললো।তার পর নিজে বলতে শুরু করলো,
-বাবা তোমার কাছে কি আমার কোনো মূল্য নেই।তোমার ব্যবসার জন্য তুমি মাইশার মতো বড়লোকের বিগড়ে যাওয়া চরিত্র হীন মেয়ে কে আমার জীবনে আনলে।তাও এমন একটা মেয়ে যে কিনা বিয়ের আগেই দু বার এবরশন করিয়েছে।আর সেই কথা বাসর রাতে নিজের বিয়ে করা স্বামী কে গর্ব করে বলতে আসে।লাইক সিরিয়াসলি। তবুও আমি মেনে নিয়েছিলাম।ওকে ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম।শুধু এটা ভেবে যে ও আমার বিয়ে করা বউ।ও যদি খারাপ হয় তাহলে ওকে ভালো করার দায়িত্ব আমার।কিন্তু কি হলো?বিয়ের পরেও রাত বেরাতে নাইট ক্লাবে যাওয়া অন্য ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি করা কিছুই ওর কমেনি।যখনি আমি কিছু বলতে গেছি তুমি আটকে দিয়েছো।কারণ কি ওর বাবা যদি তোমার সাথে পার্টনার শিপ শেষ করে দেয়।তুমি তো আমার জীবন টা শেষ করে দিয়েছো বাবা।
মাহিরের কথাতে আরো রেগে গেলেন আলফাজ সাহেব।
-যাস্ট শাট আপ।নিজে একটা পুরুষত্ব হীন ছেলে সেটা বলো।ছিহ আমি তো ভাবতেই পারছি না তুমি আমার ছেলে!
-আলফাজ মাহির তোর ছেলে।নিজের ছেলেকে এটা বলতে পারলি!
-না বলার তো কিছু নেই।এর ঐ গাইয়া মা আমার জীবনটা শেষ করেছে।এখন এ।উহ কেন যে তখন ওকে আমার কাছে রাখতে গিয়েছিলাম।উহ!অসহ্য।
আলফাজ সাহেব রেগে নিজের ঘরে চলে গেলেন।আদীবা বেগম মাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।মাথা নিচু করে নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে মাহির।
“টাকা থাকলেই সুখ থাকে না”
মাহিরের জীবনের এক বড় উদাহরণ সেটা।

“আমি কিন্তু আমার উওর টা পাইনি পানিজল।আপনি কি প্রস্তুত আছেন আমার তৃষ্ণা মেটাতে?আমার পিপাসা টা বড্ড বেশি। বড্ড।অল্প কিছু তে কাজ হবে না”।
-মাহির আশহাব
সকাল সকাল ফোনে মেসেজটা দেখে চমকে গেল ইলা।আরো চমকে গেছে এটা দেখে রাত ২ টা ৩৭ মিনিটে মেসেজ টা পাঠানো হয়েছে।ইলা টের পায়নি।
-এতো রাত জেগে এই লোকটা আমাকে মেসেজ দিয়েছে!অদ্ভুত তো!

চলবে———–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here