রৌদ্র_কুয়াশা,পর্ব ৩১,৩২

0
1482

#রৌদ্র_কুয়াশা,পর্ব ৩১,৩২
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ৩১

ফোন রেখে নীল আবার অন্য জগতে ডুব দিল।টানা টানা চোখের প্রেমে।ঘন কালো পাপড়ির দেশে।

-মা তো কতদিন ধরে বললো বিয়ে করতে।ভেবেছিলাম করব না।মনের মানুষ নেই।আজ আমি কাউকে পেয়েছি।উহুম মনের মানুষ না ।মনে ধরেছে।সেখানে আরেক বাধা।সে স্বামী পরিত্যক্তা বললেই চলে।কিছুতেই কিছু সম্ভব না।না আছে সম্ভাবনা।তবুও দেখি রাত জেগে যাই।যদি কখনো মেলে।দুঃস্বপ্ন ও যে সত্যি হয়,অসম্ভব ও সম্ভব হয়।

নিজের সাথে নিজ আলাপনে ব্যস্ত নীল।এর মধ্যে আরেকবার তার ফোনের বাতি জ্বলে উঠলো।

-উহ!এখন আবার কে?মানুষ বলে ব্যাচেলার লাইফ সব চেয়ে আনন্দের।আর গার্ল ফ্রেন্ড না থাকলে তো হলোই।কেউ বিরক্ত করার নেই।আমি বেচারা অদ্ভুত কপাল পোড়া প্রাণী।আমার গার্ল ফ্রেন্ড নেই,কিন্তু কাজ নামক গার্ল ফ্রেন্ড এর অভাব নেই।আমার খোঁজ নেওয়ার লোক নেই তাতে কি?অমুক তমুক কোম্পানির লোকের হ্যান ত্যান প্রজেক্ট এর ফোনের অভাব নেই।আহা কি কষ্ট।

নিজের মনে হাজারো কষ্ট নিয়ে নীল ফোন হাতে নিল।ততক্ষণে কল কেটে গেছে।কল লিস্ট চেক করে দেখে মাহির ফোন করেছে।নীল এক লাফে উঠে বসলো শোয়া থেকে।

-ওহ নো!মাহির স্যার!

নীল নিজে কল করতে যাবে তার আগেই মাহির আবার কল করলো।নীল সাথে সাথে রিসিভ করলো।

-আসসালামু আলাইকুম স্যার।স্যার আসলে হয়েছে কি আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।ও সরি।না ঘুমাইনি।সবে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।চোখ দুটো একটু এটে আসছিল।স্যার এজন্য ফোন ধরতে দেরি হয়েছে।

নীল এক দমে সম্পূর্ণ কথা গুলো বলে ফেললো।ওপাশ থেকে মাহির উওর দিলো,

-ওয়ালাইকুম আসসালাম।রিল্যাক্স নীল।এতো দ্রুত বলার কি আছে?আমি কি তোর কাছে কৈফিয়ত চেয়েছি?

নীল একটু দম নিয়ে বললো,

-না স্যার সেটা তো আপনি কখনো ই নেননি।
-তাহলে?এতো সিরিয়াস হতে হবে না নীল।
-স্যার আপনি কি কোনো দরকারে ফোন করেছিলেন?
-হুম।তোমাকে যেই বাজারের লিস্ট দিয়েছিলাম আজ মনে আছে ?
-হ্যাঁ স্যার।সকাল সকাল ই সব পৌছে যাবে আপনার ওখানে।
-এটাই জানার ছিল।তুই ঘুমা তাহলে।আমিও না।এতো রাতে তোকে ফোন দিলাম।
-স্যার সমস্যা নেই।আমি তো জেগেই ছিলাম।
-আচ্ছা এখন ঘুমা।কাল ও আমি অফিসে যাব না।কাল ইলা আর আলিশা কে নিয়ে বের হব।তুই আলিশার ঐ টিচারকে সকাল সকাল পাঠিয়ে দিস।আর কাল ডাক্তার কেও বলিস যেন অনেকক্ষণ ধরে মিলা আপার চেকাপ করান।
-আচ্ছা স্যার।
-আল্লাহ হাফেজ।
-আল্লাহ হাফেজ।

নীল ফোন কেটে দিয়ে বালিশের পাশে ফোন রেখে দিয়ে চোখ বুজলো।

মাহির ফোন রেখে দিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে ইলা তার অনেক কাছেই চলে এসেছে।এটা নতুন না।ইলা রাতে ঘুমের মধ্যে যেন বিছানায় যুদ্ধ করে।হাত পা ছুড়তেই থাকে।মাহির প্রতিবার ইলাকে বুকের ভেতর টেনে নেয়।ইলা জানেও না সে প্রতি রাতে মাহিরের বুকে ঘুমায়। এতোটাই গভীর ঘুম ইলার।আজ ও ব্যতিক্রম না।মাহির ইলার কপালে চুমু দিয়ে ইলাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিল।ইলা ও মাহিরকে পেয়ে শুরশুর করে ঘুমের ভেতর জড়িয়ে ধরলো।

৮৮

-দেখুন মিস আপনি আমার মেয়েকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
-ম্যাম আলিশাকে তো স্কুলে ভর্তি করতে হবে।ওর ছবি লাগবে।কতদিন হয়ে গেল।আপনি চিন্তা করবেন না।মাহির সাহেব এমনি এমনি আমাকে ওকে নিয়ে যেতে দেবেন না।বাইরে গার্ড আছে।

মিলা মানতেই পারছে না।একে তো আলিশার নতুন মিস উনি।আজকাল তো যা অবস্থা নিজের মা বাবাকেই মানুষ বিশ্বাস করতে ভয় পায়।সেটা তো বাদ।কথায় আছে না জীবনের কোনো বিশ্বাস নেই।না বলে চলে যায়।আর দাঁত সেও সুযোগ পেলে গালে কামড় দেওয়ার চেষ্টা করে।

মিলার ভাবনার মাঝেই শায়লা বেগম বলে উঠলেন,

-মিলা চিন্তা করার তো কিছুই নেই।এখানে আছি।ভেতরে রান্না করে খাওয়া ছাড়া আর কিছুই করা লাগে না আমাদের।ছোটো জামাই এর গাড়ি ওকে নিয়ে যাবে তাতে সমস্যা কি? আর আজ ওর জন্মদিন।ও মন খারাপ করে আছে।নিজেও তো একটু ডেকে মেয়েটাকে আদর করলিনা।বাইরে গেলে ছোটো বাচ্চা যদি মনটা ভালো হয়।
-রাখো তোমার জন্মদিন।ওই তো আমার আরেক কাটা।বাপের জ্বালিয়েছে।এখন মেয়ে।যত্তসব।

মিলা আলিশার টিচারের দিকে তাকালো।

-দেখুন মিস মুক্তা আমার মেয়েকে ভরসা করে আপনার সাথে পাঠাচ্ছি।তাড়াতাড়ি আসবেন।
-আচ্ছা ম্যাম আপনি চিন্তা করবেন না।আলিশা কোথায়?

শায়লা বেগম মুক্তা কে অন্য ঘর দেখিয়ে দিলেন।

-ও বোধ হয় জামা পড়ছে।আপনি ও ঘরে যান।
-আচ্ছা।

৮৯

সকাল থেকে এতো এতো রান্না।ইলা হিমশিম খাচ্ছে।মাহির ইশতিয়াক যদিও তাকে সাহায্য করছে।ইলা আজ অনেক খুশি ।মাহির তাকে কথা দিয়েছে আলিশাকে সে আজ এ বাড়িতে আনবে।অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ইলা।রান্নার ফাঁকে ফাঁকে সদর দরজা খুলে একটু বাইরে উকি দিচ্ছে একটু পর পর।মাহির বিষয়গুলো বেশ লক্ষ্য করছে।মাহিরের নিজের ও খুব ভালো লাগছে ইলাকে খুশি দেখে।সে তো এটাই চায় সব সময়।

বাইরে গাড়ির হর্ন এর আওয়াজ।ইলা চুলা বন্ধ করে ছুট দিল দরজার দিকে।

ইলার আগেই মাহির দরজা খুলে দাড়িয়ে আছে।একটা ছোট হাত মাহির নিজের হাতে ধরে রেখেছে।খুশিতে কেঁদেই দিল ইলা।মাহিরের পাশে আলিশা দাঁড়ানো।

-আলিশা।

ইলা দৌড়ে গিয়ে আলিশাকে জাপটে ধরলো।আলিশা ও মামোনি বলে কেঁদেই দিল ইলাকে জড়িয়ে।

-মামোনি মামোনি তুমি কি আমাকে ভুলে গেছো?তুমি একটুও ভালো বাসো না আমাকে।তোমার একটু ও মনে পড়ে না আমার কথা।

ইলা মাথা উঠিয়ে আলিশার চোখ মুছে দিল।কোলে তুলে নিল আলিশাকে।আলিশার গালে মুখে চুমু খেল ইলা।আলিশাকে সোফায় নিয়ে গিয়ে বসালো।

-Happy Birthday my আলু পাখি।
-Thank you.তোমার মনে আছে?
-ভুলবো কেন?আমার ছোট্ট মা টার জন্মদিন আজ।

ইলা আবার ও আলিশাকে মন ভরে চুমু খাচ্ছে।কতদিন পর ইলা দেখছে আলিশা কে।মেয়েদের ক্ষেত্রে এটা প্রায় ই ঘটে।নিজে মা হওয়ার আগেই তারা মা হয়ে যায় বোনের সন্তানের।

মাহির পেছন থেকে একটু শব্দ করে কাশি দিল।ইলা আলিশাকে ছেড়ে পেছনের দিকে ঘুরলো।

মাহির বলে উঠলো,

-আমাকে তো সবাই ভুলেই গেছে।
-আপনি এদিকে আসুন ।

মাহির এগিয়ে গেল আলিশা কে কোলে তুলে নিল।

-Happy Birthday মামোনি।
-Thank you.মামোনি এই আংকেল টা কে?

আলিশা ইলার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো।মাহির ও ইলার দিকে তাকালো।সে ও জানতে চায় কি উওর দেয় ইলা।

-আলু পাখি তুমি বলতে না আমার একটা লাল টুকটুকে বর পুতুলের সাথে বিয়ে দেবে।এই সেই বর পুতুল।
-এই আংকেল টা?
-হুম।
-কিন্ত মামোনি তোমাকে তো আমি বউ পুতুলের মতো সাজতে দেখিনি।একটা বড় গাড়িও আসেনি তোমাকে নিতে।
-মা সব সময় বউ সাজতে হয় নাকি?আমিও সেজেছিলাম।তোমাকে ছবি দেখাব।
-চলো চলো আমি ছবি দেখব।

ইলা মাহিরের কোল থেকে নেমে আলিশার দিকে ছুট দিল।

৯০

ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে নিবিড়।অনেক চেষ্টার পর সে আশার আলো দেখতে পেয়েছে।

একটু আগেই অনুর বাবা তাকে ফোন করেছিল।একে তো অফিসের কাজ তার পর অনুর চিন্তা।নিবিড় তো শুরু তে ই কয়েকটা গালিও দিয়েছিল তাকে।কিন্তু পরে সে যা শুনলো তাতে পারলে রমজান সাহেব কে নিয়ে মাথায় তুলে নাচতো সে।

আজ আরিয়ান অনুর গ্রামে গিয়েছিল।তার স্কুল থেকে তার সার্টিফিকেট নিয়ে অনুর সেই প্রতিবেশী বান্ধবীর বাড়ির খোঁজে বেড়িয়েছিল।অবশেষে তাকে পেয়েও যায় সে।তার থেকে অনুর কাগজ পত্র যা ছিল নিয়ে আবার ঢাকাতে ফিরে যায় সে।

কথা বাতাসের আগে ছোটে কথায় আছে।রমজান সাহেবের কানেও ঠিক এভাবেই কথাটা যায়।তিনি নিশ্চিত যে অনু ঢাকাতে ই আছে তাও একটা পুলিশের কাছে।এক মুহূর্ত দেরি না করে নিবিড়কেই খবর দেন তিনি।

-অনু রানি অনেক কষ্ট দিয়েছো।এবার দেখো কি করি আমি।তোমাকে পাই একবার।তোমার ছাল ছাড়িয়ে তাতে লবণ মরিচের গুঁড়া ঢালব তবেই আমার শান্তি।

চলবে————-

#রৌদ্র_কুয়াশা
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ৩২

দাঁত কিড়মিড় করতে করতে নিবিড় হাতে থাকা রুটি ছিড়ে টুকরো টুকরো করে নিচে ফেলছে।

-আরে আরে নিবিড় ভাই।কি করছেন টাকি?নোংরা করছেন কেন?

কলিগের কথাতে ধ্যান ভাঙলো নিবিড়ের।কলিগের দিকে তাকালো সে।অন্যরা নিবিড়কে রুটি ছিড়তে দেখলেও নিবিড় জানে সে রুটি না মনে মনে অনুকে কেটে পিসপিস করে মসলা মাখাচ্ছিল।অনু ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠছিল।সেই দৃশ্য কল্পনা করতেই নিবিড়ের জিভ টা এখনি ভিজে এলো।মুখে এক পৈশাচিক হাসি ফুটে উঠলো নিবিড়ের।

-আরে নিবিড় ভাই।খাবার তো নষ্ট করে ফেললেন আপনি?
-সামাদ ভাই এতো চিন্তা করার কিছুই নেই।আপনি জানেন অপরাধী কে শাস্তি দিতে হলে তাকে কখনো ভরাপেট কোনো বাঘের সামনে রাখতে নেই।বাঘের যে খিদেই থাকবে না।তাকে রাখতে হয় ক্ষুধার্ত বাঘের সামনে।ক্ষুধাতে যার পেটের চামড়া ঝুলে পড়েছে।গায়ের সাথে লেগে গেছে।জিভ দিয়ে টপটপ করে লালা পড়ছে।এতে কি হবে জানেন?বাঘটা ঝাঁপিয়ে পড়বে।একদম খুবলে খাবে অপরাধী কে।
-আপনি এই কথা কেন বলছেন?হঠাৎ?বুঝলাম না।
-আমি ও না খেয়ে থাকব আজ থেকে।নিজেকে ক্ষুধার্ত করতে হবে অনেক ক্ষুধার্ত।অনেক বড় অপরাধী কে শাস্তি দেব আমি।যেন জীবনে নিবিড় নামের ন শুনলেই গা কেপে ওঠে তার।

নিবিড় উঠে দাড়ালো।বাকি খাবারটাও ফ্লোরে ফেলে পা দিয়ে পিষলো।আয়াকে ডাক দিয়ে পরিষ্কার করতে বলে চলে গেল।

সামাদ সাহেব নিজের খাওয়া বন্ধ করে নিবিড়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছেন।

-আসলেই এ মানুষ না।জানোয়ার একটা।খাবার কেউ এভাবে ফেলে পা দিয়ে পিষে!আপনার কপালে ভাত জুটবে না দেখে নিয়েন।মানুষ না খেয়ে মরে।আর এ,,,ছিহ ছিহ।

নিবিড়কে মনে মনে থুথু দিয়ে আবার নিজের খাওয়াতে মনোযোগ দিলেন সামাদ সাহেব।

অফিসের বসের কেবিনের বাইরে দাড়িয়ে আছে নিবিড়।দরজায় টোকা দিতেই বস তাকে ভেতরে যেতে বললো।

-স্যার।
-বলুন মি,নিবিড়।
-স্যার আপনি না বলেছিলেন আমাকে ঢাকাতে পোস্টিং করবেন?
-হুম।বলেছিলাম তো।আর করেও ছাড়ব।
-স্যার আমি কবে ঢাকা যেতে পারব।মানে কবে পোস্টিং?
-একি মি,নিবিড়!সেদিন না আপনি না করছিলেন।আজ এতো তাড়া।
-আসলে স্যার তেমন কিছু না।আমার আম্মাজান অসুস্থ।অনেকদিন ধরেই ভাবছি ঢাকা নিয়ে যাব ডাক্তার দেখাতে।এখানে তো তেমন ভালো ডাক্তার নেই।
-ওহ।কিন্তু আপনার পোস্টিং এর জন্য আরো চার পাঁচ মাস অপেক্ষা করতে হবে মি,নিবিড়।
-এতো দিন!
-হুম।
-স্যার তাড়াতাড়ি করা যায়না?
-না।ওখানে পোস্ট খালি হলে তবেই তো আপনাকে পাঠাব।
-ওহ।
-আর কিছু বলবেন?
-না স্যার।
-ঠিকাছে আসতে পারেন আপনি।
-জি স্যার।

বসের কেবিন থেকে মুখ গোমড়া করে বের হলো নিবিড়।মনে মনে বসকে ও যে কতবার কুত্তার বাচ্চা বলেছে সে নিজেই ভালো জানে।

নিজের কেবিনে এসে নিবিড় গভীর চিন্তায় মগ্ন।হুট করেই নিবিড়ের মুখে পৈশাচিক হাসি ফুটে উঠলো।

-আর যাই হোক।আম্মাজান কে ছেড়ে তো আমি তোমার খোঁজে যেতে পারব না অনু রানী।এতো বড় শহর।কোথায় বা খুঁজতাম তোমাকে।ভালোই হলো।কয়েক মাসে তুমিও একটু নিবিড় নাম ভুলে যাবে।আর তারপর হুট করে সারপ্রাইজ পাবে।এমন সারপ্রাইজ যে নিবিড় নাম তোমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে যাবে।হাহা। আমি তোমার সেই ভয়ার্ত চেহারা দেখার জন্য বসে আছি অনু রানী।ইশ কতদিন তোকে রাতে কাছে পাওয়া হয়না।থাক একটু সবুর করি।সবুরে নাকি মেওয়া ফলে।

অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো নিবিড়।

৯১

খাট জুড়ে শপিং ব্যাগ ছড়িয় আছে।তুলি একেক টা করে জামা বোরখা বের করছে আর অনুর গায়ে ধরে দেখছে।অনু চুপটি করে বসে আছে।

-অনু সব গুলোতেই তোমাকে খুব মানাবে ।কাল থেকে তোমার নতুন জীবন শুরু।তুমি কলেজ যাবে।

তুলির কথাতে অনুর কোনো অনুভূতি নেই।সে চুপ করে আছে।

-কি হয়েছে অনু?
-তুলি আপু আমার ভয় করছে।উনি যদি আমার খোঁজ নেন।উনি আমাকে নিয়ে যাবেন এখান থেকে।আমি আবার মরে যাব বেচে থেকেও।

আরিয়ান ঘরে ঢুকতে অনুর কথা শুনতে পেলো।

-এরকম কিছু হবে না।

আরিয়ানের গলা পেয়ে অনু আরো জড়সড় হয়ে বসলো।আরিয়ান ঘরের কোন থেকে চেয়ার টেনে এনে বিছানার সামনে বসলো।বিছানায় অনু আর তুলি বসা।আরিয়ান স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে অনুর চেহারায় ভয়ের ছাপ।

-অনু।
-হুম।
-এদিকে তাকান।ভয় কেন পাচ্ছেন আপনি?আপনি আমার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ আপনি জানেন কি?

আরিয়ানের কথা শুনে অনু অবাক এর চরম পর্যায়ে পৌছালো ।

-আমিই!
-হ্যা আপনি।অনু আমি নিজে আজ অবধি যত বিপদগ্রস্ত মেয়ে পেয়েছি সকলকে সাহায্য করেছি।আপনি জানেন কি পতিতা মেয়েদের ও আমি কর্মের ব্যবস্থা করেছি।কেন জানেন?আমি কখনোই তাদের পতিতা মনেই করিনা।কারণ তারা কেউ ই সেচ্ছায় আসেনি।এই সমাজ তাদের এই পেশায় পতিত করেছে।অথচ পতিতা তারা হয়েছে।তারা প্রত্যেকে বিপর্যস্ত ।কেউ তাদের জন্য একটা কাজের ব্যবস্থা করে দেয়নি।উল্টা তাদের সুযোগ নিয়েছে।বিক্রি করেছে তাদের।আমি যাদের কাজের সন্ধান দিয়েছি তাদের জীবনের অতীতের কাছে আপনার অতীত কিছুই নয়।তারা যদি পারে সমাজের সবার অপমান সহ্য করে ঘুরে দাঁড়াতে পারে আপনি কেন পারবেন না?অনু আপনাকেও ঘুরে দাঁড়াতে হবে।আমি আজ অব্দি কোন চ্যালেঞ্জ এ হার মানিনি।আজ ও মানব না।আপনার জন্য আজ আমি আপনার গ্রামে গিয়ে সবকিছু নিয়ে এসেছি যত কাগজ পত্র ছিল আপনার।আমি আপনাকে একটা সুন্দর জীবন দিতে চাই ছি অনু।আপনি যদি এভাবে ভয় পেয়ে থাকেন তো একবার ভাবুন আমি ও দুর্বল হয়ে পড়ব।আপনি বলুন আপনি কি চাননা নিজের একটা ঠিকানা বানাতে?যাতে কেউ আর কখনো বাপের বাড়ি স্বামী র বাড়ি এই কথা গুলো আপনাকে বলতে না পারে।

অনু ছলছল চোখে আরিয়ানের দিকে তাকালো।

-আমি চাই আরিয়ান সাহেব।কিন্তু আমি কিভাবে পারব?উনি যদি একবার জানতে পারেন।
-কিছু করতে পারবে না।অনু আল্লাহ আছেন।তাকে ডাকুন।আমি আছি আপনাকে সাহায্য করতে।আল্লাহ আমাকে যা সামর্থ দিয়েছেন সেটা দিয়ে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।আপনি পিছু হটবেন না।
-কিন্তু আরিয়ান সাহেব আমার পড়াশোনা শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে যে অনেক দেরী।এমনিতেই পড়াশোনার গ্যাপ গেছে।আমি এতো দিন কিভাবে ধৈর্য ধরব।

অনুর কথায় আরিয়ান ও চিন্তায় পড়লো।আসলেই অনু ঠিক বলছে।অনুকে আরো দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।কিন্তু পড়াশোনা করে সেই অবধি যেতে অনেক সময় লাগবে।

-অনু সেই ব্যবস্থা ও আমি করে দিতে পারি।
-কিভাবে?
-সেটা পরে বলব।কিন্ত আপনাকে কিন্ত পড়াশোনা ছাড়লে হবে না।সেটা ভালো করতেই হবে।
-আমি করব।
-ঠিকাছে।এখন মন খারাপ না করে কাল সকালের জন্য প্রস্তুত হন।আপনাকে নতুন করে সব কিছু শুরু করতে হবে।

আরিয়ানের কথাতে অনেক টা মনোবল পেলো অনু।মাথা নাড়িয়ে আরিয়ানকে সম্মতি জানালো।

-এই তো।গুড গার্ল।আপনাকে আরেকটা কথা বলার ছিল।
-কি?
-অনু এটা বলা ঠিক হবে কিনা আমি নিজেও বুঝতে পারছি না।
-কি কথা?
-অনু আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় কাটা আপনার অতীত।সেটাকে আপনাকে উপড়ে ফেলতে হবে।তাহলেই চোখ বুজে সামনে আগাতে পারবেন আপনি।না হলে এভাবে বার বার মনোবল হারাবেন।
-মানে?
-আপনি আপনার স্বামীকে ডিভোর্স দেবেন।
-ডিভোর্স!

অনু শব্দটা শুনে যেন কেঁপে উঠলো।তুলি অনুর হাতটা শক্ত করে ধরলো।

-অনু কি হলো উওর দেও?
-কি বলছেন টাকি আপনারা?এটা আমি পারব না।কিছুতেই না।

অনু কেঁদেই দিয়েছে ভয়ে।আরিয়ান যেন অনুর উওর টা ঠিক হজম করতে পারলো না।বুকের ভেতর একটা চিনচিন ব্যথা অনুভব হচ্ছে তার।রেগে দাঁড়িয়ে গেল আরিয়ান।

-কেন?কেন পারবেন না আপনি?ঐ স্বামীর পরিচয় নিয়ে থাকবেন?যে দিনের পর দিন আপনাকে জানোয়ারের মতো পিটিয়েছে।ঐ অমানুষ টার পরিচয় দিতে খুব ভালো লাগবে তাই না?

অনু আরিয়ানের চিৎকার শুনে আরো জোরে কেঁদে দিল।

-হচ্ছে টাকি ভাইয়া?তুই কেন এতো রাগছিস?অনুর সিদ্ধান্ত ওকে নিতে দে।
-আমি রাগছি কি এমনি?ঐ জানোয়ারটাকে ডিভোর্স দিতে গিয়ে এতবার ভাবতে হবে।না বলতে হবে!

অনু চোখু মুছে জবাব দিল,

-দেখুন আরিয়ান সাহেব।আপনাদের পুরুষ মানুষের কাছে না বিয়ের মূল্য নাই থাকতে পারে।আপনারা তো দেনমোহর দিয়ে বিয়ে করেন।বউকে তিন বেলা খাইয়ে পড়িয়ে দেন।দুদিন পড় ছাড়তে গেলে একটু বাধে না।কিন্ত মেয়েদের এমন নয়।একটা মেয়েই জানে বিয়ের পর সে তার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ টাই হারিয়ে ফেলে।যেটা গেলে কখনো ফেরত পাওয়া যায়না।সেটার মূল্য না টাকা দিয়ে কেনা যায়না।আপনি ঐ যে পতিতা কথাটা বললেন না।তাদের কে মানুষ টাকা দিয়ে ওজন করে।কিন্তু তারাও জানে সবকিছু টাকা দিয়ে ওজন করা যায়না।আর বিয়ে তো একটা পবিত্র সম্পর্ক।আমি তো কখনো এটা কে অসম্মান করিনি।আমি তো ওনাকে কখনো নিচু চোখে দেখিনি।তাকে আমি ভালো ও বেসেছি।আমার জীবনের প্র থম পুরুষ সে।

অনুর কথা শুনে আরিয়ান ঠান্ডা গলায় জবাব দিল,

-তাহলে কেন ছেড়ে আসলেন আপনার স্বামীকে?তার কাছেই ফিরে যান।
-কেন এসেছি সেটা আপনিও জানেন।সব মেয়ের কি আর আমার মতো কপাল পোড়া হয়।আর ফিরে যাওয়ার জন্য আসিনি।আপনাদের সমস্যা হলে বলুন আমি চলে যাব।
-কোথায় যাবেন?

আরিয়ানের কথা শুনে অনুর মাথা নিচু হয়ে গেল।আরিয়ান রেগে বললো,

-খুব এতক্ষণ এটা ওটা সাফাই দিচ্ছিলেন।আরে সব কিছু সবার জন্য না।পাখির জন্য যেমন খোলা আকাশ মানায় খাচা না।তেমনি যেসব স্বামী মানুষ তাদের জন্য সব কিছু ত্যাগ করা যায়।কিন্তু জানোয়ারদের জন্য না।আর ঐ যে মেয়েদের কথা বললেন না।আসলেই আমরা ছেলেরা খারাপ।কিন্ত আপনারা মেয়েরা ও খারাপ।এতো বেশি আবেগী কে হতে বলেছে? চোখ খুলে দেখেছেন এই দুনিয়া?কোনো আবেগের স্থান নেই।আবেগ টাকে মানুষ এখন দুর্বল জায়াগা হিসেবে ধরে।যাতে বার বার আঘাত করা যায়।আর কি বললেন যাবেন?এই বাড়ি কেন ঘরে থেকে যাওয়ার জন্য একটা পা বাড়িয়ে দেখুন আপনার পা কেটে ফেলবো আমি।আমি আপনার ভালো করতেই এসেছিলাম।কিন্তু কি বলুন তো সবার ভালো করতে নেই।একদম করতে নেই।পারলে ক্ষমা করবেন।আপনার শ্রদ্ধেয় গুনধর গুনের বাগান স্বামী কে ডিভোর্স দিতে বলেছি আমি।ছি ছি।আমার জিভ তো খসে পড়া উচিত।

রেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল আরিয়ান।অনু মাথা নিচু করে বসে আছে।

-অনু।
-তুলি আপু আরিয়ান সাহেব এতো রাগলেন কেন?
-অনু ভাইয়া ভাইয়ার দিক থেকে সঠিক ভুল বিচার করছে।আর তুমি তোমার দিক থেকে।যাই হোক।বাদ দেও।এরপর যদি কখনো মনে হয় ভাইয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নেবে তো জানিও।না হলে না হয় থাক।ঘুমিয়ে পড়ো এগুলো গুছিয়ে।
-হুম।

ঘরের মধ্যে পায়চারি করছে আরিয়ান।অনুর ঐ না উওর এখনো তার কানে বাজছে।হজম করতে পারছে না সে।বদ হজম হয়ে গেছে।পারলে উগলে দিত সব।

৯২

রাতের বেলা মাহির বেলকনিতে দাড়িয়ে ফোনে কথা বলছে।ইলা পা টিপে টিপে গিয়ে মাহির কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।মাহির যেন বড়সড় শক খেলো।রাখছি বলে ফোন কেটে দিয়ে ইলার হাত দুটি সরিয়ে পেছনে ঘুরলো।পেছনে ঘুরেই আরেক ধাক্কা।ইলা জোরে জাপটে ধরলো মাহির কে।

-thank you মাহির।আপনি জানেন না আমি আজ কত খুশি আমি।আমি সত্যি আশা করিনি আমি এতোদিন পর আমার আলু পাখিকে দেখতে পারব।thank you so much.

মাহির ও আলতো করে ইলাকে জড়িয়ে নিল।

-তুমি খুশি হয়েছো?
-অনননেক।
-তোমার খুশি দেখার জন্য আমি সব করতে পারি পানিজল।
-জানেন আজ আপনার জন্য আমার আলু পাখিও কততো মজা করেছে।ও বলেছে ,,,,।
-কি বলেছে?
-মামোনি তোমার লাল টুকটুকে বরকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।ভালো আংকেল।
-তাই?
-হুম।
-আলিশা ভারি কিউট।ওকে আমাদের এখানে রাখতে পারলে ভালো হতো।আমার ও ছাড়তে মন চাইছিল না।
-হুম।
-শোনো।
-কি?
-তোমার আলু পাখির তো আমাকে পছন্দ হয়েছে।কিন্তু।
-কিন্তু কি?
-তোমার কি পছন্দ হয়েছে?

ইলা মাথা উঠালো মাহিরের বুক থেকে।মাহিরের চোখের দিকে তাকালো।

-আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি পানিজল। I love you.
-আমিও,,,,,,।
-থাক।

ইলা কিছু বলতে যাবে তার আগেই মাহির আটকে দিল।

– কি হলো?
-তুমি সময় নেও।আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করতে রাজি।
-কিন্তু আমি সত্যি,,,,।
-তোমার জন্য একটা গিফট আছে।
-আমার জন্য!
-হুম।ভেতরে চলো।

মাহির ইলাকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসিয়ে আলমারি থেকে বড় একটা কাটুন বের করে বিছানার ওপর রাখলো।

-নেও খুলে দেখো।

ইলা তো বেশ উৎসুক।ইলা দ্রুত খুলে ফেললো কাটুন না।ইলার মুখটা মুহূর্তেই ফ্যাকাশে হয়ে গেল।ইলা কল্পনা ও করতে পারেনি মাহির তাকে এমন কিছু দেবে। ইলার যেন কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে।মাহির তার সাথে এমন করতে পারে সে বিশ্বাস করতে পারছে না।

চলবে————-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here