#রৌদ্র_কুয়াশা,পর্ব ৩৫,৩৬
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ৩৫
সময় ও স্রোত কারোর জন্য অপেক্ষা করে না।কিছু সময় গুলো মনে হয় অতীত হলেই ভালো,আর কিছু সময় অতীতে ফিরতে চায়।
মাহিরের জন্য হয়তো অতীতের সময় এর চেয়ে বর্তমান টাই বেশি প্রধান্য পেয়েছে।
বিছানায় শুয়ে আছে মাহির।তার বুকের ওপর মাথা রেখে মাহিরকে কোলবালিশের মতো জড়িয়ে দিব্যি ঘুমিয়ে আছে ইলা।শীতকালের আগমন অতি শীঘ্রই ঘটতে চলেছে।বাইরে থেকে জানালার থাই গ্লাসটাও ঝাপসা হয়ে গেছে।বিন্দু বিন্দু শিশির জমেছে জানালার কাছে।কখনো বা কয়েক ফোটা শিশির ধীরে ধীরে কাচ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে তালে তালে।সকালের সূর্য টাও যেন দেরী করেই উঠলো।সূর্য মহাশয় ও হয়তো শীতের হিম পড়া রাতের আঁধারে ঘুমোতে খুব ভালোবাসে।আচ্ছা সূর্য মহাশয়ের ও কি কেউ টা আছে?যার জন্য তাকে দেরিতে উঠতে হয়?নাকি সূর্য মহাশয় কোনো মহাশয় নন একজন রমনী।শীত হোক বা গ্রীষ্ম প্রভাত তার ভেজা চুল নিয়েই কাটাতে হয়।চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ে।আর সেই পানিটা শুষে নেওয়ার জন্য ও একটা কেউ থাকে।
আনমনে মাহির ভেবে চলেছে অনেক কথা।জানালার কাচ দিয়ে তার মনে হচ্ছে সূর্যের আলো যেন কুয়াশায় স্নান করে পবিত্র হয়ে তাদের ঘরে ঢুকে পড়েছে।কুয়াশার স্নান মনে পড়তেই মাহিরের মনে পড়লো বেলা হয়েছে তাকে উঠতে হবে।ফ্রেশ হতে হবে।
মাহির উঠতে গিয়ে ও পারলো না।ওঠার আগেই একটা ভার তাকে আটকে দিল।তাকে আরো শক্ত করে জাপটে ধরলো।যেন মাহির তাকে ছেড়ে না যায়।মাহির ও থেমে গেল।মুখে এক অদ্ভুত তৃপ্তির হাসি।ইলা মাহিরের বুকের ওপর মাথা রেখে শুয়ে আছে।মাহিরের উন্মুক্ত বুকে ইলার চুলগুলো ও যেন ছড়িয়ে আছে একদম লতা পাতার মতোন।ইলা মাহিরকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।ইলার ঘুমন্ত মুখটা মাহিরের কাছে আরো বেশি ভালো লাগে।ঘুমালে মানুষের মুখ এমনিতেই একটু ফোলা লাগে।মাহির কোথাও পড়েছিল ঘুমন্ত মেয়েদের নাকি দেখতে পরীর মতো লাগে।তাদের মায়াবতী মনে হয়।কিন্ত মাহির এটা মানতে নারাজ।তার কাছে ঘুমন্ত ইলাকে মনে হয় রসগোল্লা এক হাড়ি রসগোল্লা।তাকে দেখলে মায়া লাগে না।উল্টা মাহিরের মন চায় রসগোল্লা টাকে খেয়েই ফেলে সে।
-পানিজল।ওঠো।অনেক বেলা হয়ে গেছে।তোমার ওঠার নাম নেই।আমাকে অফিসে যেতে হবে তো।
ইলা ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো,
-উহুম ছাড়বো না।যা পারেন করুন।
-ছাড়ো।অফিস এর দেরী হয়ে গেছে এমনিতেই।
-উহুম।আরেকটু থাকুন না প্লিজ।
-ইলা এতো ভারী ছোটো খাটো হাতি আমার বুকের ওপর থাকলে আমি কিভাবে শুয়ে থাকব!হায় আল্লাহ রক্ষা করো।সারাটা রাত ধরে এই রকম একটা আস্ত হাতি আমার বুকে র ওপর হামলা করে শুয়েছে।
মাহিরের কথা শুনে রেগে গেলো ইলা।এক লাফে উঠে বসলো।ইলা উঠতে মাহির ও উঠে বসলো।
-এই আপনি কি বললেন?আমি হাতি?আমি?
-হ্যা অবশ্যই।সন্দেহ আছে?
-অবশ্য ই আছে।আমি না বরং আপনি হাতি।আমি কি এমন করেছি হ্যা?শুধু একটু মাথাটা আপনার বুকের ওপর রেখেছি।আর আপনি যে পুরো,,,,,,,,,,,,,তার বেলায়।
-কথাটা অর্ধেক বললে কেন?পুরোটা বলো।
মাহিরের কথা শুনে ইলার চোখ বড় বড় হয়ে গেল।সে বেশ বুঝতে পারছে মাহির তাকে ইচ্ছে করে লজ্জায় ফেলতে চাইছে।
মাহির দুষ্টু হাসি দিয়ে আবার বললো,
-কি হলো?বলো?
-কিছু না।
-আরে!কিছু তো আছেই।বলে ফেলো।আমিই তো।
-হ্যা আপনিই তো।
-আমি আবার কি করলাম?
-লুইচ্যা ঢেড়শ কোথাকার।নিজের তো লজ্জা শরমের ল শ কিচ্ছু নেই আমাকে ও বেহায়া বানাতে চাইছে।ফাজিল লোক একটা।আমি ও আজ আপনার অফিসে যাব।গিয়ে সবাইকে বলে দেব।
মাহির ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
-কি বলে দেবে শুনি?
-এই যে।আপনি দেখতে যতোটা ভদ্র সভ্য একজন মহান ব্যক্তি আপনি মোটে ও তা নন।আপনি আসলে,,,।
– কি আসলে?
-লুচ্চু কোম্পানির এমডি।
-ও হ্যা।তাই তো।আর তুমি সেই এমডির বউ।সুন্দর না!
মাহির হো হো করে হেসে দিল।ইলা লজ্জা পাচ্ছে এদিকে তার রাগ ও হচ্ছে।মাহিরের সাথে সে কখনোই কথায় পেরে ওঠে না।রেগে ইলা মাহিরের গায়ে বালিশ ছুড়ে মেরে ওয়াশরুমে চলে গেল।
মাহির বালিশ কোলে নিয়ে বসে চেঁচিয়ে বললো,
-ডিয়ার লুচ্চু কোম্পানীর এমডির বউ,আপনার যদি সমস্যা হয় তো বলুন আমি ও ওয়াশরুমে আসি আপনাকে একটু হেল্প করতে।
ভেতর থেকে ইলা জবাব দিল,
-কখনো না।ফাজিল বজ্জাত বেশরম লোক একটা।হুহ।
৯৭
ছয় মাসে অনেক কিছুই বদলেছে।অনু পড়াশোনার পাশাপাশি একটা লেডিস কসমেটিক্স এর দোকানে পার্ট টাইম জব করে।যদিও দোকানটা আরিয়ানের ই।আরিয়ান কিছু মেয়েদের সাহায্য করার জন্য দোকানটা ভারা নিয়েছিল।অনু পার্ট টাইম সেখানেই বসে।অন্য সবার মতো আরিয়ান অনুকে ও মাসের বেতন মাসেই বুঝিয়ে দেয়।
এর মধ্যে তুলির ও ছোট্ট একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে।তুলির বর দেশের বাইরে আছে।আরো অনু এই বাড়িতে।তাই তুলিও মেয়েকে নিয়ে এখানেই আছে।
-অনু,অনু কোথায় আপনি?আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।আমার খাবার টা দিন প্লিজ।
আরিয়ান ইউনিফর্ম পড়ে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে ডাইনিং টেবিলে এসে বসলো।সকাল থেকে একবার ও দেখা হয়নি তার অনুর সাথে।টেবিলে বসেই চমকে গেল আরিয়ান।সব খাবার রাখা।
-আরে!অনুকে তো দেখলাম না।খাবার কে রাখলো?
-আমি রেখেছি ভাইয়া।
আরিয়ান পেছনে ঘুরে দেখে তুলি দাড়িয়ে আছে।
-ও তুই।
-হ্যাঁ।আগে তো আমিই রাখতাম।অসুস্থ ছিলাম তারপর আবার অনু ছিল।তাই ওতো দেখতাম না।
-হ্যাঁ।আসলেই মেয়েটা অনেক ভালো।কদিনেই আমাদের সবার খেয়াল রাখে।
-আসলেই।
-বাবু কে একা রেখে এসেছিস?
-না ও ঘুমাচ্ছে।উঠেছিল।খাইয়ে আবার ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি।তুই খেয়ে নে।দেরী হয়ে যাচ্ছে তো তোর।
-হুম।
আরিয়ান এদিক ওদিক আবার দেখছে খাওয়ার মাঝে।
-কি হলো ভাইয়া?কি খুজছিস?
-অনুকে তো সকাল থেকে একবার ও দেখলাম না।
-আর বলিস না।কাল রাতে বাবু বড্ড জালিয়েছে।অনু সারা রাত ওকে নিয়ে ঘুরেছে।আমার মাথা ব্যথা করছিল।বাবুকে নিতে পারিনি।তাই অনু ঘুমিয়েছে ওকে আর ডাকিনি।
-যাক ভালো করেছিস।
আরিয়ানের ভেতর টা যেন খচখচ করছে।অনুকে চোখের দেখা দেখে যেতে পারলো না সে।
-ভাইয়া।
-কিছু বলবি?
-তুই না বলেছিলি দুদিন আগে অনুর শ্বশুরবাড়িতে ডিভোর্সের নোটিশ পাঠিয়েছিস।কি খবর সেটার?
-আর বলিস না।
-কেন কি হয়েছে?
-যেই ঠিকানা অনু দিয়েছে সেখানে বাড়িতে তালা ঝুলানো।কেউ নেই।
-তাহলে ওর শ্বাশুড়ি স্বামী কি অন্য কোথাও চলে গেছে?
-জানিনা।অনু তো বলেছিল ওনারা ওখানে স্থানীয়।কি জানি?ঐ আরেক ঝামেলা।ডিভোর্স টা শেষ হয়ে গেলে আমি অনেক নিশ্চিন্ত হতাম।
-তুই আবার নিশ্চিন্ত হতিস কিভাবে?
-ঐ না মানে।অনুর থেকে একটা ঝামেলা নামতো।মেয়েটা এখনো পুরো স্বাভাবিক না।এখনো স্বামীর নাম শুনলেই ভয়ে কাপে।
-হুম।আচ্ছা তুই খাওয়া শেষ কর।আমি একটু দেখে আসি বাবু কে।
তুলি ভেতরে চলে গেল।আরিয়ান আনমনে বসে আছে।সে নিজেই জানে কেন সে নিশ্চিন্ত হতো অনুর ডিভোর্স টা হয়ে গেলে।
৯৮
-তুমি সব সময় নিজের জেদে চলেছো মাইশা।কখনো আমার কোনো কথা শোনোনি।এতোটাই উচ্ছৃঙ্খল হয়েছো তুমি আমার মান সম্মান নষ্ট হয় এমন কাজ করতেও তোমার বাধে নি।
মাইশা নিজের বাবাকে জড়িয়ে কেঁদেই দিল।
-বাবা আমি বুঝতে পারিনি।আমি তো রিদন কে খুব ভালোবাসতাম।
-এটা ভালোবাসা?তুমি মাহিরের সাথে বিয়ের আগেও রিদনের সাথে,,,ছিহ।আজ দেখো ঐ ছেলেটা কি ভাবে তোমাকে ধোঁকা দিল।তুমি তাকে ভালোবাসতে পারো।সে না।তুমি জানো তোমার কপাল যে মাহিরের মতো একটা ছেলেকে তুমি স্বামী হিসেবে পেয়েছিলে।না হলে তোমার মতো ওরকম ছেলে ডিজারব করে না।এতো বড় ঘরের ছেলে হয়েও ছেলেটা র মধ্যে বিন্দু মাত্র উচ্চাভিলাষ নেই।নেই চরিত্রের দোষ।তাকে তুমি এভাবে ঠকিয়েছো দিনের পর দিন।তবুও ও মেনে নিয়েছে।মানলাম ওর সমস্যা ছিল।কিন্তু তুমি দুধে ধোয়া নও মাইশা।চিকিৎসা করলে মাহির এর সমস্যা র সমাধান ঠিক ই হতো।কিন্তু তুমি কি করেছো ওর সাথে?ছিহ মাইশা।তোমাকে নিজের মেয়ে বলতে আমার ঘৃনা লাগছে।
মাইশার বাবা মাইশা কে নিজের থেকে সরিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন।মাইশা ফ্লোরে বসে পড়লো।আজ কান্না ছাড়া মাইশার কাছে কিছুই নেই।
রিদন মাইশার সাথে সম্পর্ক থাকার আগে পরে ও অনেক মেয়ের সাথেই সম্পর্ক এ জড়িয়েছে।মাইশার থেকে অনেক টাকা নিয়েছে।শেষ মেশ মাইশার ভিডিও বানিয়ে তাকে ব্লাকমেইল করে আরো বড় অংকের টাকা হাতিয়েছে।আজ মাইশা বুঝেছে যে সম্পর্ক শারীরিক চাহিদা তেই পরিণত হয় সেটা ভালো বাসা হতে পারে না।রিদন বিয়ে করে দেশের বাইরে চলে গেছে।তার বদলে মাইশার ঘাড়ে চাপিয়েছে এক গাদা বদনাম।
-আমি তোমাকে ভুল বুঝেছি মাহির।আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি মাহির।আমি পেয়েও তোমাকে হারিয়েছি।না মাহির আমি তোমার কাছে যেতে চাই।আমি ক্ষমা চাইব।আমি জানি মাহির তুমি কখনো তোমার মাইশা র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারবে না।আমি জানি তুমি এখনো আমার অপেক্ষা তে আছো।না হলে আলফাজ আংকেল তো বলতেন না যে তুমি আজো একা আছো।আমি প্রমিস করছি মাহির যাই হয়ে যাক আমি আর তোমাকে ছাড়ব না।তোমার সাথেই ভালোবাসার ঘর বাধবো।আমি তোমার কাছে যাব মাহির।
চলবে————-
#রৌদ্র_কুয়াশা
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ৩৬
প্রকৃতির প্রতিশোধ বলে একটা কথা আছে।কথার কথা চেয়ে বেশি অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃতি নিজেই যেন তার প্রমাণ দিয়েছে।আজ মাইশা র ও মনে হচ্ছে প্রকৃতি তাকে এমনি এমনি ছাড়েনি।মাহিরের সাথে সে বেশিই অন্যায় করেছিল।আজ প্রকৃতির পাল্টা ধাক্কায় সে নিজেই ক্ষত বিক্ষত।
-আই এম রিয়েলি সরি মাহির।আমি জানি আমার ভুলের ক্ষমা নেই।কিন্তু আমার বিশ্বাস তুমি আমাকে ফেরাবে না।আমি তো জানি তুমি আমাকেও কতোটা ভালো বাসো।তুমি আজো নিশ্চয়ই আমার অপেক্ষা তেই আছো।আমি আজ তোমার কাছে যাব মাহির।
৯৯
-নিবিড়,তুমি ওষুধ খেয়েছো?
ঘরে ঢুকতে ঢুকতে নিবিড়কে প্রশ্ন করলেন ইসমাত বেগম।নিবিড় দ্রুত অনুর ছবিটা আড়াল করে নিল।চোখের কোনটা মুছে নিল।
-জি আম্মাজান।
-তুমি অফিসে যাবে না?
-আম্মাজান আমার জয়েন পরশু থেকে।
-ওহ হো।
-আম্মাজান।
-বলো।
-একটু আমার পাশে এসে বসবেন?
নিবিড় এর নিরীহ চাহনি আবদার শুনে ইসমাত বেগম মুচকি হাসলেন।এগিয়ে গিয়ে খাটের ওপর নিবিড়ের পাশে বসলেন।
-এদিকে এসো।আমার কোলে শুয়ে পড়ো তো।কতদিন তুমি আমার কোলে মাথা রাখো না নিবিড়।
নিবিড় এক ছুটে এসে ইসমাত বেগমের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।ইসমাত বেগম আলতো করে নিবিড়ের মাথার চুলের ভেতর আঙুল ঢুকিয়ে ধীরে ধীরে মালিশ করে দিচ্ছেন।
-আম্মাজান।
-বলো।
-আমি খুব খারাপ তাই না?
নিবিড়ের কথা শুনে চুপ করে গেলেন ইসমাত বেগম।কি বলবেন তিনি?নিবিড় যে তার সন্তান থেকে কম তার ওয়াদা বেশি।তাকে কোনো ভাবেই ফেলতে পারবেন না তিনি।
-আম্মাজান কিছু বললেন না যে?
-কিছু উওর নিরাবতাতেই উওম বাবা।
নিবিড়ের মুখে খুশির ঝলকানি।সে জানে নীরবতা সম্মতির লক্ষণ।আর তার অর্থ এটাই নিবিড় ইসমাত বেগমের কাছে কোনো খারাপ মানুষ না।ইসমাত বেগমের মুখে এক রহস্যময় হাসি।কিছু সময় নীরবতা অপর পক্ষকে প্রতিহত করেই ছাড়ে।তার কাছে যেটা সম্মতি অন্য পক্ষের সেটা অসম্মতি হলেও মনঃতুষ্ট ই যেন বড় হয়ে যায়।
-আম্মাজান।
-বলো।
-ঢাকায় এসে আপনার খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না?নতুন জায়গা।
-না বাবা।তুমি আছো না?তোমার জন্য এটুকু করতেই পারি আমি।
-জানি তো।
-শোনো।কাল তুমি বাজার করে রাখবে এই সপ্তাহের।নাহলে অফিস শুরু হলে এর মধ্যে তোমাকে কষ্ট করতে হবে।
-আচ্ছা।আম্মাজান আমি বিকেল বেলা একটু বের হব।
-কেন?
-এমনি।বদ্ধ শহরে ঘরে থাকতে আরো বদ্ধ লাগে যে।
-আচ্ছা ঠিকাছে।তুমি বিকেল বেলা কি নাস্তা খাবে বলে দিও।করে রাখব।
-আলুর চপ,পেয়াজু খেতে মন চাইছে।
-ঠিকাছে বানিয়ে রাখব।
-অনু এগুলো খুব পছন্দ করতো তাই না আম্মাজান।
-হুম।
ইসমাত বেগমের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।
-নিবিড় তুমি থাকো।আমি ভাত বসাতে ভুলে গেছি।
-আচ্ছা।
নিবিড় উঠে বসতেই ইসমাত বেগম চলে গেলেন।অনুর ছবিটা বালিশের নিচ থেকে বের করে হাতে নিল নিবিড়।দু ফোটা পানি ছবির ওপর পড়লো।
-অনু।তুই আমাকে এতো কষ্ট দিলি কেন?তোকে না আমি খুব ভালোবাসি।তুই দেখিস এই অজানা বদ্ধ শহরের অলিগলি থেকে ঠিক খুঁজে নিয়ে আসব তোকে।আমার খাঁচায় বন্দী করব।তোর ডানা ছেঁটে রেখে দেব।আর যেন কখনো আমার থেকে চলে যেতে না পারিস।
দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে চোখের চশমা টা খুলে বিছানায় বসলেন ইসমাত বেগম।
-তুমি এখানে আমাকে না আনলেও পারতে নিবিড়।আমার মাহির কোথায় আছে কে জানে?এতো গুলো বছর কষ্ট পেয়েছি।এবার আমি আর সহ্য করতে পারছিনা নিবিড়।আমার যে মাহিরকে দেখতে মন চাইছে।আমার ছোট্ট সোনা ও নিশ্চয়ই অনেক বড় হয়ে গেছে।অনেক।
১০০
বিকেল হয়েছে।অনু কলেজ থেকে ফিরেই দোকানে বসেছে।এটা ওটা দেখছে।সারাদিন কি কেনা বেচা হয়েছে সব দেখছে সে।
-ম্যাডাম।
বিথীর কথায় পিছু ঘুরলো অনু।বিথী দোকানের ই একজন কর্মচারী।
-আরে বিথী আপু বলো।
-ম্যাডাম একটা কথা বলবেন?
-কি?
-ম্যাডাম কিছু মনে করবেন না।
-কি হয়েছে?
-আরিয়ান স্যারের সাথে আপনার কিসের সম্পর্ক?
বিথীর কথা শুনে অনুর চোখ বড় বড় হয়ে গেল।
-মানে?কিসের সম্পর্ক এর কথা বলছো তুমি?
-দেখুন ম্যাডাম আপনি তো ছোটো বাচ্চা নন যে কিছু বুঝবেন না।আপনি একটা মেয়ে।স্যারের বাড়িতে থাকেন।এই দোকানের মালিক ও ধরতে গেলে আপনি।স্যারের সাথে নিশ্চয়ই কোনো সম্পর্ক না থাকলে আপনি বাইরের লোক হয়ে এতো কিছু পাবেন না?তাই বলছিলাম আর কি।আরিয়ান স্যার তো নিশ্চয়ই দেনা পাওনা ছাড়া কিছু করবেন না।তাই কৌতুহল হলো।আপনাকে এতো কিছু দেওয়ার বদলে আরিয়ান স্যার আপনার থেকে কি নিচ্ছেন,,,,মানে বেড,,,,,।
বিথী কথা শেষ করতে পারলো না।তার আগেই কেউ থাপ্পড় বসিয়ে দিল বিথীর গালে।অনু তো কেঁদেই দিয়েছে এসব শুনে।সে কখনো ভাবেনি কেউ এভাবে তাকে কথা শোনাবে।অনু পাশ ফিরে দেখে তুলি দাড়িয়ে।তুলি ই থাপ্পড় মেরেছে বিথীকে।পাশে আরিয়ান কোলে তুলির বাচ্চাকে নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
-অসভ্য মেয়ে।তুমি নিজে খারাপ জায়গার মেয়ে বলে সবাইকে কি সেটা মনে করো?ভাইয়া দেখ।কথায় আছে না কয়লা ধুলে ময়লা যায় না।দেখ এদের স্বভাব।ভাষা দেখেছিস।
তুলি আর আরিয়ানকে থেকে বিথী তো ভয়ে শেষ।আরিয়ানের চোখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে।
-বিথী।আর এক মুহূর্ত তুমি এ দোকানে থাকবে না।বেরিয়ে যাও এখান থেকে।
-স্যার আমার ভুল হয়ে গেছে।স্যার মাফ করে দিন।আমি কোথায় যাব?আপনি তো জানেন এই ছাড়া আমার কাজের কোনো উপায় নেই।
বিথী আরিয়ানের পা ধরে বসেই পড়লো।
-ছাড়ুন বলছি।আপনার মতো মেয়েকে কাজ দেওয়াই ভুল হয়েছিল আমার।আসলে কি বলুন তো ঘি সবার পেটে সহ্য হয়না।
-স্যার মাফ করে দিন।আর কোন দিন এমন বলবো না।
-আপনি,,,,,।
-ওকে মাফ করে দিন আরিয়ান সাহেব।
অনুর কথায় চমকে গেল আরিয়ান আর তুলি।
-অনু তোমার মাথা ঠিকাছে?
-তুলি আপু।কেউ কিছু বললেই তো সেটা সত্যি হবে না।আমি জানি আরিয়ান সাহেব আমাকে কতোটা সম্মান দেন।তাই কেউ কিছু বললেই আমি খারাপ হয়ে যাবো না।আপু লোকে তো অনেক কথাই বলে কিন্ত সব সময় কি লোকের কথা শুনলে হয়?আমিও তো লোকের কথার ভয়ে সংসার করেছিলাম মুখ বুজে।কই কেউ তো কখনো আসেনি আমার চোখের পানির দাম দিতে।আজ যখন লোকের কথা গায়ে না লাগিয়ে আমি চলছি আমি ভালো আছি।আর আরিয়ান সাহেব ই তো আমাকে এতো কিছু বুঝিয়ে ছেন।
অনুর কথা শুনে আরিয়ানের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।বরাবরের মতো আজ ও অনুর কথার মধ্যে এলকোহলের ঝাঝ পাচ্ছে সে।বরাবরের মতোই নেশা ধরার।
-এক্সকিউজ মি।আচ্ছা এখানে বয়স্ক মহিলাদের জন্য কোনো বোরখার কালেকশন আছে?
সবার কথার মধ্যে ই হুট করে পেছন থেকে একটা আওয়াজ ভেসে আসলো।আওয়াজ শুনে অনু চমকে গেল।এই আওয়াজ তার যে ভোলার নয়।অনু রীতিমতোসাড়া কাঁপতে শুরু করলো।
১০১
এই নিয়ে চারবার কলিংবেলের আওয়াজ।ঘড়ির দিকে তাকালো ইলা।সন্ধ্যা হওয়ার ও অনেক দেরী আছে।
-এতো তাড়াতাড়ি তো মাহির আসেনা। আর দরজা তো লক করা।আমাকে না পেলে নিজেই তো ডুপ্লিকেট চাবি নিয়ে দরজা খোলে।কে এলো তাহলে?
এর মধ্যে আরো একবার কলিংবেলের আওয়াজ।ইলা বই খাতা রেখে উঠে দাড়ালো
নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
দরজা খুলেই ইলার চোখ বড় বড় হয়ে গেল।
-আপনি?
-কি রে শালিকা আমাকে ভুলে গেছো দেখছি?
কামরুল মুখে একটা বিশ্রী হাসির রেখা টানলো।কাচা হলুদ রঙের শাড়ি পড়েছে ইলা।কামরুল ইলার মাথা থেকে পা অবধি খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে ইলাকে সরিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লো।
-আরে আরে।আপনি ভেতরে ঢুকলেন কেন?বের হন বলছি।
কামরুল পুরো বাড়ি মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে।একটু দেখে সোফায় গিয়ে বসলো কামরুল।
-বাহ!তুই তো দেখছি বড় সড় ঘর হাতিয়েছিস ইলা।তা রাত প্রতি কত দেয় তোকে?যে এতো রাজার হালে আছিস?
কামরুলের কথা শুনে ইলার মাথায় রক্ত উঠে গেল।
-একদম বাজে কথা বলবেন না।নোংরা লোক একটা।মাহির আমার স্বামী হয়।এটা আমার স্বামী র বাড়ি বুঝেছেন?
-রাত কাটালে তো সবাই স্বামী হয়।এই ধর এখন যদি আমি তোর সাথে কাটাই আমিও তোর স্বামী হব।সেই তো একি হলো।
-দুলাভাই।লজ্জা শরম নেই আপনার।বের হন এখান থেকে।কে আপনাকে এখানে আসতে বলেছে?
-কে আসতে বলবে।নিজেই এসেছি।আগের দিন দেখেছিলাম তো তোর ঐ নাগরের সাথে বড় মলে কেনাকাটা করছিস।ঐ দিন ই ফলো করেছি।আর আজ চলে এসেছি।চল তোর বর তো মনে হয় বাড়ি নেই।চল আমরা মজা করব।আর এই তোর ঐ বোন কোথায় রে?মরেছে নাকি?মরলো একটু খবর তো দিতি?অন্তত কেদে কেটে নাটক করতাম।
-অসভ্য শয়তানের বাচ্চা বের হ বলছি।তোর খবর আছে বলে দিলাম।ইশতিয়াক ইশতিয়াক,,,,।
ইলা চেঁচাতে লাগলো।দরজার দিকে যেতেই তার আগে কামরুল এসে ইলার মুখ চেপে ধরলো।
-শালি অনেক জ্বালিয়েছিস তুই।তোকে ভালো কথা বলেছিলাম আমার বউ হয়ে যা তোর বোন বোনঝি সব দেখব।শুনলি না।আজ তো তোকে শেষ করেই ছাড়ব।কারোর সামনে মুখ দেখাতে পারবি না তুই।
১০২
মাহির ল্যাপটপ অন করে আবার অফ করে দিল।মাথায় হাত রেখে বসে আছে।
-স্যার কি হয়েছে?আপনার কি শরীর খারাপ?
-নীল মনটা ভালো লাগছে না।
-কেন স্যার?
-ইলা বাড়িতে কি করছে কে জানে?
-ম্যাম কে ফোন দেননি?
-সকালে কথা হয়েছে।দুপুরের পর এতো বার ফোন করছি ও ফোন তুলছে না।বাড়ির ল্যান্ডলাইন নাম্বার এ ও কল করলাম।সেটাও ধরলো না।
-স্যার ইশতিয়াক কে ফোন করে দেখুন।
-ইশতিয়াক এর আজ পরীক্ষা আছে।বাড়িতে গেটে দারোয়ান ছাড়া কেউ নেই।দারোয়ান তো আর বাড়ির ভিতরে যায় না।
-আসলেই চিন্তার বিষয়।ম্যাম আবার ঘুমাতে ও পারেন।
-তাও হতে পারে।ও যা ঘুম কাতরে।
-স্যার এতো চিন্তা করবেন না।আল্লাহ ভরসা।
-ফি আমানিল্লাহ।নীল চলো তো একটু কফি খেয়ে আসি বাইরে থেকে।ভালো লাগছে না।
-চলুন স্যার।
মাহির ব্লেজার টা গায়ে পড়ে নিয়ে উঠে দাড়ালো।বেরোনোর আগেই কেউ দরজা খুলে মাহিরকে এসে জাপটে ধরলো।এতোটাই জোরে মাহির টাল সামলাতে না পেরে একটু পিছিয়ে গেল।
-আমাকে এতোটা ভালোবাসো তুমি।আজ ও আমার পছন্দের চকলেট ফ্রেভারের পারফিউম ই ব্যবহার করো।গন্ধ টা তো আজ ও আমাকেপরিচিতি পাগল করছে মাহির।
মাহির অবাকের চরম সীমায়।মাহিরের ভেতরটা তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে।সেই পুরানো অনুভূতি আবার!
চলবে————