রৌদ্র_কুয়াশা,পর্ব ৩৭,৩৮

0
1607

#রৌদ্র_কুয়াশা,পর্ব ৩৭,৩৮
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ৩৭

সামনের মানুষটিকে দেখে মাহিরের ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছে।মাহিরের ইচ্ছে করছে শীতল হাত দুটো বাড়িয়ে তাকে জড়িয়ে নিতে।আজ কতোদিন পর তার সেই পুরানো অনুভূতি টা আবার তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।

মাইশা মাহিরের বুকে মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠলো।

-আই এম রিয়েলি সরি মাহির।আমি বুঝতে পেরেছি আমি কতো অন্যায় করেছি তোমার সাথে।মাহির আমাকে ক্ষমা করে দেও।আর কখনো তোমাকে ছেড়ে যাব না আমি।

মাহির কিছুটা দমে গেল।তার শীতল হাত দুটো অগ্রসর করলো।কিন্তু মাইশাকে জড়িয়ে ধরতে নয়।মাইশার থেকে নিজেকে ছাড়াতে।মাইশার বাহু ধরে মাহির নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিল মাইশাকে।এক প্রকার ধাক্কা দিল বলা যায়।মাইশা কয়েক কদম পিছিয়ে গেল।অবাক হয়ে তাকালো মাহিরের দিকে।

-মাহির!
-এসব কি মিস,মাইশা?আপনার সাহস তো কম নয় আমার কেবিনে নক না করে ঢুকেছেন!তারপর আবার আমাকে জড়িয়ে ধরেছেন।কোন ধরনের অসভ্যতা এগুলো?পুরুষ মানুষ দেখলেই বুঝি আপনার গায়ে পড়া রোগ জেগে ওঠে?আমার অফিসে আমার কেবিনে নক না করে ঢুকেছেন এবার কি সিকিউরিটি ডেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে আপনাকে ম্যানারস শেখাতে হবে!
-মাহির!

মাইশা চোখ মুছে মাহিরের দিকে এগিয়ে গেল।সে ভুল করেছে।আজ যতোই মাহির তাকে কথা শোনাক সে যাবে না।

-মাহির।আমি বুঝতে পেরেছি তুমি আমার প্রতি রেগে আছো।অনেক বেশি রেগে আছো।আমাকে ক্ষমা করে দেও মাহির।আমরা আবার সংসার শুরু করব মাহির।
-সংসার!আপনার সাথে?আর ইউ ম্যাড?
-মাহির তুমি এভাবে কেন কথা বলছো আমার সাথে?

মাইশা মাহিরের হাত ধরতে গেলে মাহির দু কদম পিছিয়ে গেল।

-মিস,মাইশা আপনি আপনার লিমিট ক্রস করছেন।লজ্জা করেনা আপনার দিন দুপুরে পর পুরুষের হাত ধরতে আসছেন বার বার।
-মাহির!আমি তোমার স্ত্রী।তুমি কি ভুলে যাচ্ছো?
-উহুম।আমি না।মিস,মাইশা আমার মনে হয় আপনি কিছু ভুলে যাচ্ছেন।প্রথমে মনে করিয়ে দেই।আপনি ঠিকই বলেছেন যে আপনি আমার স্ত্রী।আমিও অস্বীকার করব না।কিন্ত এখানে একটা ছোট্ট ভুল আছে।আপনি আমার স্ত্রী ছিলেন কোনো এক সময়ে।কিন্তু এখন নেই।আর কিছুদিন আগে ধর্মীয় বলুন কি আইনত সব ভাবেই আপনার সাথে আমার বিচ্ছেদ হয়ে গেছে।তাই বলছি ছিল,আছি,থাকব এই শব্দ গুলো ব্যবহার টা একটু শিখুন।আরেকঁ টা কথা।কি যেন বল লেন আপনার পছন্দের পারফিউম।ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন মিস মাইশা আমি সেই ছোট্ট বেলা থেকে চকলেট ফ্রেভারের পারফিউম পছন্দ করি।আর আপনি যখন আমার জীবনে ছিলেন না তখন ও এটা ব্যবহার ই করতাম।আর সত্যি বলতে এখন যদি বলি আমার বাড়ির কাজের বুয়াও চকলেট ফ্রেভারের পারফিউম পছন্দ করে তার মানে কি এটা আমি আমার বাড়ির কাজের বুয়ার পছন্দ মতো চলি?দয়া করে এসব অযৌক্তিক কথা আমার সামনে বলবেন না।আমার প্রচন্ড পরিমাণে হাসি পায়।আপনার থাকা বা থাকার সাথে না আমার পারফিউম এর কোনো কানেকশন নেই।

মাইশা দাড়িয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে।মাহির নামের মানুষ টা আজ তার কাছে বড্ড অচেনা লাগছে।

-আচ্ছা আপনার সেই সো কলড বিএফ রিদন কোথায়?তাকে যে দেখছি না।

মাহিরের কথাতে চোখ তুলে তাকালো মাইশা।

-কেন?আরো অপমান করার বাকি আছে?এখন ওকেও টানবে।মাহির কেন এমন ব্যবহার করছো তুমি আমার সাথে?

মাহির নীলের সাথে চোখাচোখি করলো আর দুজনেই একসাথে হেসে উঠলো।

-আসলেই মিস,মাইশা আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আপনি দুধে ধোয়া তুলসী পাতা।যাই হোক।আপনার সাথে কথা বলার মতো এতো ফালতু সময় আমার কাছে নেই।আমার মূল্যবান সময় গুলো শুধু আমার স্ত্রীর জন্য।
-স্ত্রি!
-হ্যাঁ।আমার স্ত্রী।ইশ সেই কোন সকালে আমার বউটার মুখটা দেখেছি।সারাদিন দেখতে পাইনি।তাড়াতাড়ি যেতে হবে।
-এটা কিভাবে সম্ভব?তোমার বাবা যে বললো তুমি আমার অপেক্ষাতে আছো?
-আমার বাবা আলফাজ আশহাব অনেক কথাই বলবে।তিনি তো নিজের ছেলের জীবন নিয়ে শুধু খেলতে জানেন গড়তে না।তার কথাতে আমার কিছু যায় আসেনা।আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে আমার বাড়িতে থাকি।

মাহির বের হতে গেলে মাইশা মাহিরের হাত ধরে বসে।মাহির সাথে সাথে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল।

-মিস,মাইশা আমার হাত ধরার অধিকার শুধু একজন নারীর সে আমার স্ত্রী।
-তুমি ই না বলতে ভালো শুধু একজনকেই বাসা যায়।মনে শুধু একজনকেই জায়গা দেওয়া যায়।তুমি কিভাবে বিয়ে করতে পারলে মাহির?
-ঠিকই বলেছো।ভালো শুধু একজনকেই বাসা যায় কিন্তু ভুল মানুষ কে নয়।আমি ভুল কাউকে ভালবেসেছিলাম।আমি আমার ভুল শুধরে নিয়েছি।আমি এখন শুধু আমার স্ত্রীকে ই ভালো বাসি।সে কোনো ভুল মানুষ টা।

“আমি তাকে খুঁজে গিয়েছি এতোদিন,
যার ভেতরটা হবে আমার আমিতে পরিপূর্ণ ,
যার ভেতরটা হবে একটা খোলাজানালা।
যাতে কোনো কাচ থাকবে না,
কাচ ধুলো ময়লা লেগে ও ঝাপসা হয়ে যায়।
তার ভেতরটা হবে এমন খোলাজানালা
যার ভেতর বাহির আমি নামক বাতাসে পরিপূর্ণ,
তার কষ্ট হলে বাতাসটার বেগ বেড়ে যাবে,
ঝড়ো হাওয়া উঠবে,
তার শীতলতা ও আরেকবার জাগ্রত করবে সেই ঝড়ো হাওয়াকে।
আর আমি পেয়েছি সেই বদ্ধ মনের বদ্ধ ঘরের আমি নামক খোলা জানালা।”

মাইশা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মাহিরের দিকে।না মাহিরের চোখে সে কোনো মাইশাকে দেখতে পারছেনা।দেখতে পারছে এক অদ্ভুত ছায়া মানবীকে।মাইশা র কাছে সে দানবীয় হাসিতে মেতে উঠেছে,কেড়ে নিয়েছে তার মাহিরকে।কিন্তু তার মুখটা মাইশা দেখেনি।

-আল্লাহ্ হাফেজ।আর কখনো আপনার উপস্থিতি এখানে আশা করছিনা মিস,মাইশা।সুন্দর ফুল বাগানে হুট করে শুয়ো পোকার উপদ্রব মেনে নেওয়া যায়না।

মাহির বেরিয়ে গেল।পিছু পিছু নীল ও বেরিয়ে গেল।মাইশা পাথর হয়ে দাড়িয়ে আছে।মনে মনে সে শপথ নিয়েছে সে দেখবে সেই দানবীয় চেহারা।সেই ছায়া মানবীর জীবনে সে ঝড়ো হাওয়া তুলবে এবার।

১০৩

দোকানের চারপাশে আয়না দিয়ে সাজানো।অনু নিজের সামনের আয়নায় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সেই কন্ঠের মালিককে।তার মুখের এক পাশ থেকে দেখা যাচ্ছে।সাদা শার্ট পরিহিত মানবকে দেখে অনুর কাঁপুনি টা আরো বেড়ে যাচ্ছে।গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।যার থেকে পালানোর জন্য সে এতদূর এসেছে সেই মানুষটা আজ তার সামনে।এই বদ্ধ শহরেও কি সে তাকে এক দন্ড স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দেবেনা?সামাজিক কঠোর নিয়মের বেড়াজালে ফেলে তাকে আবার নিজের কাছে আটকে রাখবে?

-সরি স্যার।বয়স্কদের কালেকশন ছিল।আপাতত স্টকে নেই।সামনের মাসে আসবে।
-ওহ হো।ঠিকাছে তাহলে সামনের মাসেই না হয় আসব।
-স্যার আর কিছু নেবেন না?মানে ম্যাডামের জন্য কিছু।

ম্যাডাম কথাটা শুনে নিবিড় থমকে গেল।দোকানি যে ম্যাডাম বলতে মিসেস নিবিড়কে সম্বোধন করছে সেটা নিবিড়ের বুঝতে অসুবিধা হলো না।

নিবিড় মুখে ম্লান হাসি টেনে বললো,

-জি নিবো।কিন্তু আজ না।তবে খুব শিগগিরই।আসছি।
-ধন্যবাদ স্যার।আবার আসবেন।

নিবিড় দরজা টেনে বেরিয়ে গেল।অনু এখনো কাঁপছে দাড়িয়ে।নিবিড় কেন বললো সে খুব শিগগিরই আসবে?তবে কি সে জেনে গেছে অনুর খোঁজ?অনুর ভয়টা আরো বেড়ে গেল।এসির মধ্যেও বসে ঘেমে যাচ্ছে অনু।কাঁপতে কাঁপতে অনু ঢলে পড়লো তুলির গায়ে।

-অনুউউ,,,।

১০৪

কামরুল মুখে বিশ্রী হাসি টেনে ইলাকে চেপে ধরেছে।ইলা ছাড়ানোর জন্য ছটফট করছে।

-শালি আজ তো তোকে আমি খাব।ভালো করেই খাব।কতদিন ধরে অপেক্ষা করিয়েছিস তুই।
-কে কাকে খায় দেখাব তোকে।

ইলা বলতে বলতেই কামরুলের হাতে জোরে কামড় বসিয়ে দিল।কামরুল সাথে সাথে ইলাকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে গেল।ব্যথায় আর্তনাদ করতে লাগলো।

-কুত্তার বাচ্চা।কুত্তার মতো কামড়ে দিলি আমাকে।তোকে আজ কি হাল করব তুই কল্পনাও করতে পারবি না।

কামরুল ইলার দিকে এগিয়ে আসতে গেলে ইলা নিজের এক পা একটু এগিয়ে দিয়ে কামরুলের এক পায়ে বেশ জোরে ল্যাং মারলো।সাথে সাথে কামরুল হোঁচট খেয়ে কার্পেটের ওপর মুখ থুবড়ে পড়লো।

-আআআআ।
-কি?আমাকে ধরতে এসেছিস তুই?আজ বুঝবি ইলা কি জিনিস।
-তুই আমার সাথে পারবি?এতো সহজ।
-দাঁড়া সহজ না কঠিন করে দেখাচ্ছি।

কামরুল উঠতে যাবে তার আগেই ইলা কামরুলের গায়ে পিঠে ইচ্ছে মতো লাথি মারতে লাগলো।কামরুল সাপের মতো মুড়াতে লাগলো ব্যথায়।সব শেষ লাথিটা গিয়ে লাগলো কামরুলের অন্ডকোষ বরবার।কামরুল এর চিৎকার যেন এবার আর চার দেয়াল না বরং তার বাইরে চলে গেল।কেঁদেই ফেললো কামরুল।

-ও মাগো।ও বাবাগো।আমার ভবিষ্যত অন্ধকার করে দিল গো।
-ভবিষ্যত!তোর ভবিষ্যত নিয়ে এতো চিন্তা।দাড়া আজ তোর এমন অবস্থা করবো না তোর ভবিষ্যতে সূর্যের আলো তো দূরে থাক টর্চ লাইটের আলো কি মোমবাতি জ্বালিয়ে কোনো টা দিয়ে ই আর আলো জ্বলবে না।

মাহিরের ফোন পেয়ে ছুটছে ইশতিয়াক।বাড়ির কাছে আসতেই ভেতর থেকে চিৎকার এর শব্দ।ইশতিয়াক প্রানপনে ছুটে গেল দরজার দিকে।ইলা তখন দরজা ও লাগাতে ভুলে গেছিল।ইশতিয়াক এর আর ভেতরে ঢুকতে অসুবিধা হলো না।ইশতিয়াক দরজা খুলে ভিতরে চলে গেল।

-ভাবীজান!

ফ্লোরে কামরুল শুয়ে ছটফট করছে।ইশতিয়াক এর গলা পেয়ে ইলা পেছনে ঘুরে তাকালো।ইশতিয়াক এখনো স্কুল ইউনিফর্ম পড়ে আছে।সে বাড়ি না গিয়ে সোজা এখানে এসেছে বোঝাই যাচ্ছে।

-ইশতিয়াক তুমি এসেছো?
-হ্যা ভাবীজান।এই লোকটা কে?
-আমার সাথে অসভ্যতামি করতে এসেছিল ও।
-আপনি ঠিকাছেন তো ভাবীজান?
-হুম।তুমি দরজা লাগিয়ে দেও।আজ ওকে উচিত শিক্ষা দেব আমি।মেয়েদের সম্মান নষ্ট করার চিন্তা করতেও যেন ভয় পায়।

ইশতিয়াক আর দেরী না করে ইলার কথা মতো দরজা লাগিয়ে দিল।

-ভাবীজান চলুন এটাকে মারি আচ্ছামতো।
-না ইশতিয়াক।এভাবে না।তোমার ভাইজান না কদিন আগে কয়েক গজ দড়ি কিনেছিল বাড়িতে নাকি এগুলো রাখা উচিত।কখন লেগে বসে।আজ লেগে যাবে।তুমি যাও
দেখো তো রান্না ঘরের নিচের তাকে দড়ি আছে।ওটা এনে এটাকে বাধো।

ইশতিয়াক ইলার কথামতো দেরী না করে রান্না ঘর থেকে দড়ি এনে কামরুল কে বেধে ফেললো দুজনে।কামরুল যেন শব্দ টা করতে পারে তার জন্য ইলা রান্না ঘরের ময়লা মোছা একটা ন্যাকড়া ঢুকিয়ে দিল কামরুলের মুখে।

-ভাবীজান তাহলে শুরু করি।
-আরে না।দাড়াও।আমি আসছি।

ইলা ছুটে গেল রান্না ঘরে।রান্না ঘর থেকে খুন্তি, রুটির বেলন,মুড়ো ঝাটা,বটি,শুকনো মরিচ গুড়ো, লবণ,হলুদ সব আনলো।

-ভাবীজান এগুলো দিয়ে কি হবে?
-এগুলো দিয়ে এটাকে রোস্ট করব আচ্ছামতো।কিন্তু তোমার কিপ্টা ভাই ফ্রিজে টক দই এনে রাখেনি।তাতে কি এটা দিয়েই কাজ হবে।

ইলা কথা বলতে বলতেই বেলন হাতে নিয়ে কামরুল কে মারা শুরূ করলো।কামরুলের চোখে মরিচ গুড়ো ছিটিয়ে দিল।হুট করে থেমে গেল।

-কি হলো ভাবীজান?থেমে গেলেন কেন?
-ইশতিয়াক অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে।
-কি?
-তোমার ঐ বজ্জাত ভাইজান না আমাকে সব সময় ভীতু বলে।ও যদি বিশ্বাস না করে এটা কে আমি রোস্ট করেছি।তাই আমি ভিডিও করে রাখব।আমার ফোন না ঘরে আছে।তুমি দাঁড়াও আমি নিয়ে আসছি।

বলতে দেরী তো ইলার উপরে দৌড়ে যেতে দেরী নেই।ইশতিয়াক বেচারা বোকার মতো দাড়িয়ে ইলার কান্ড দেখছে।একটু পর ইলা ফোন নিয়ে চলে এলো।

-ইশতিয়াক নেও ভিডিও অন করেছি।খুব সুন্দর করে ভিডিও করবে হ্যাঁ।আমার লুকটা যেন ভালো আসে।বঙ্গ বীর রমনী শত্রু নিধন করছে।কিন্তু।
-আবার কি হলো ভাবীজান?
-ইশতিয়াক একে মারার আগেই যদি শক্তি কম পড়ে যায় তখন?আমি বরং যাই দু কাপ হরলিক্স গুলিয়ে আনি।তোমার ভাইনা দিনে দুবার করে খালি খেতে বলে।এতে নাকি পড়াশোনা ভালো হবে।ধুর।কচু হবে।কিন্ত এখন দুধ গরম করব কিভাবে?না থাক।এখন না হয় ঠান্ডা পানিতে হরলিক্স গুলিয়ে আনি।শক্তি পেলেই হলো।

ইলা হাত থেকে মুড়ো ঝাটা ফেলে দৌড়ে আবার রান্না ঘরে গেল।ইশতিয়াক বেচারা বোকার মতো দাড়িয়ে দেখছে ইলার কার্যকলাপ।একটু পর ইলা দুটো কাপ হাতে নিয়ে আসলো।একটা ইশতিয়াক কে দিয়ে আরেকঁ টা নিজে নিল।

-ইশতিয়াক তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।এনার্জি পেয়ে আচ্ছামতো এটাকে ধোলাই দেব।

ইলা এক টানে পুরো মগ খালি করে ফেললো।তার পর হাতে মুড়ো ঝাটা নিয়ে নিল।

-নে শয়তান বজ্জাত ব্যাটা।লাইভ ক্যামেরা একশন, তোর ভবিষ্যতের বংশ আজ করব ধ্বংস।এই ইশতিয়াক হরলিক্স খেলে যেন কয়টা শক্তি পাওয়া যায়?
-কিসের শক্তি ভাবীজান?
-ঐ যে বলেনা টলার,স্ট্রংগার, শারপার ঐ রকম কি।তিনটা নাকি পাচটা নাকি আরো আছে?
-এই রে।মনে নেই ভাবীজান।
-আচ্ছা যাই হোক হরলিক্স খেয়ে ওর চোদ্দ গোষ্ঠীর শক্তি নিয়ে আমি ইলা টিকটিকির বাচ্চা কামরুল তোকে মারতে উদ্যত হলাম।

ইশতিয়াক ইলা দুজনে মিলে আচ্ছামতো পেটাতে লাগলো কামরুল কে।কামরুল শুধু ছটফট করছে।ময়লা ন্যাকড়া মুখের ভেতর।পচা গন্ধে কামরুলের অবস্থা আরো খারাপ।

চলবে‌———-

#রৌদ্র_কুয়াশা
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ৩৮

১০৫

চোখ খুলেই অনু নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলো।পাশে তাকিয়ে দেখে তুলি বাবু কোলে নিয়ে বসে আছে।অনু নড়েচড়ে উঠে বসতে গেলে তুলি বাধা দিল।

-থাক অনু।শুয়ে থাকো।
-আপু আমি ঠিকাছি। একটু উঠে বসি।
-আচ্ছা।একা পারবে?
-হুম।

অনু একটা মাথার বালিশ খাটের সাথে লাগিয়ে পেছনে হেলান দিয়ে বসলো।

-আমাকে কে এনেছে আপু?
-ভাইয়া এনেছে।আচ্ছা অনু কি হয়েছিল হঠাৎ বলোতো।ডাক্তার বললো তুমি হয়তো ভয় পেয়েছো কোনো কিছুতে।

ভয়ের কথা শুনে অনুর গলা শুকিয়ে আসছে।বিছানার চাদর হাত দিয়ে খামচে ধরলো অনু।আবার কাঁপতে শুরু করলো।এর মধ্যে আরিয়ান ঘরে এলো।

-তুলি আসব?
-আয় ভাইয়া।

আরিয়ান ঘরে ঢুকে বিছানায় এক নজর চোখ বুলিয়ে নিল।অনু কে বসে থাকতে দেখে আরিয়ানের ভেতর থেকে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস বেড়িয়ে আসলো।আরিয়ান এগিয়ে গিয়ে চেয়ার টেনে খাটের সাথে বসলো।

-অনু।
-হুম।
-কি হয়েছিল আপনার?শরীর খারাপ লাগছিল?
-উহুম।
-তাহলে?

আরিয়ানের কথা শুনে অনু ছলছল চোখে আরিয়ানের দিকে তাকালো।অনু ছলছল চোখ গুলো আরিয়ানের ভেতর টাতে যেন আগুন জ্বালিয়ে দিল।

-আরিয়ান সাহেব আপনি আমাকে একটু আশ্রয় দিন।আমাকে বের করে দেবেন না।আমি ওখানে যাব না।

অনু কথা বলতে বলতে কেঁদেই দিল।অনুর আচরণ অবাক করে দিল তুলি আর আরিয়ান কে।

-অনু কি হয়েছে?বলুন আমাকে?আমি কেন আপনাকে বের করে দিতে যাব?কি হয়েছে বলুন?
-আরিয়ান সাহেব উনি এখানে ও চলে এসেছেন।আমার খোঁজ ও পেয়ে গেছেন।আমাকে আবার নিয়ে যাবেন ওনার কাছে।আমি যাব না।আমি যাব না আরিয়ান সাহেব।
-আপনি কার কথা বলছেন অনু?
-নিবিড়।

অনুর কথা শুনে আরিয়ান চমকে গেল।তুলির ও চোখ বড় বড় হয়ে গেল।

-কিহ!কি বলছেন আপনি?আপনার স্বামী এখানে!
-হ্যা।আজ দোকানে আপনারা তখন যাওয়ার পর যেই লোকটা এসেছিল বয়স্কদের কালেকশন দেখতে উনি নিবিড় ছিল আরিয়ান সাহেব।
-অনু আপনার হয়তো ভুল হয়েছে।
-না আরিয়ান সাহেব।কখনো না।এই মানুষটাকে দেখতে আমি ভুল করব?এর গলা চিনতে পারব না!আরিয়ান সাহেব ওনার প্রত্যেকটি মারের দাগ আজ ও কালশিটে হয়ে আছে।আমাকে মনে করিয়ে দিতে তার দেওয়া কষ্ট গুলো।আরিয়ান সাহেব উনি নিয়ে যাবে আমাকে।আমি যাব না।
-অনু শান্ত হোন।আমি দেখছি।আপনি এতো চিন্তা করবেন না।আমি আছি তো?কি আমাকে ভরসা করেন না?

অনু চোখ মুছে আরিয়ানের দিকে তাকালো।কিন্তু মুখে কিছু বললো না।অনুর চোখের ভাষায় আরিয়ানের কাছে যথেষ্ট ছিল।অনুর চোখে ভরসার আরেক নাম আরিয়ান এটা আরিয়ান এতদিনে বুঝে গেছে।তবে এই ভরসা তে কোনো আকাঙ্ক্ষা, ভালোবাসা নেই।আছে বিশ্বাস,সম্মান।

-তুলি আমি টেবিলে খাবার রেডি করছি।তোরা দুজন খেতে আয়।
-আরে তুই কেন রেডি করবি?আমি করছি।
-না।এ কদিন করলে আহামরি কিছু হবে না।
-ভাইয়া আমি তো ভাত বসাতে ভুলে গেছি।
-আমি বসিয়েছিলাম।চল।
-হুম।তুই যা আমরা আসছি।

আরিয়ান উঠে দাড়িয়ে দরজার কাছে গিয়ে থেমে গেল।

-অনু।আপনাকে যেতে দেওয়ার হলে কবেই দিতাম,মিছি মিছি একটা বিশেষ খাঁচায় বন্দী করতাম না।এই খাচাটা এই চারটা দেওয়াল না।অদৃশ্য দেওয়াল।অদৃশ্য খাচা।সেটাকে চোখ দিয়ে দেখা যায়না।মন থেকে অনুভব করতে হয়।আপনি চেষ্টা করলেও এখান থেকে মুক্তি পাবেন না।

আরিয়ান দরজা লাগিয়ে চলে গেল।অনু আরিয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।এ কেমন খাচা যার থেকে অনু মুক্তি পাবে না?অনু ভেবেই পারছে না।

তুলি আরিয়ানের কথা শুনে অনুর দিকে এক পলক তাকালো।

-আমার ধারনা তাহলে ঠিক।ভাইয়ার আচরণ সুবিধার না।কিন্ত ভাইয়া অনুর ইচ্ছে থাকলেও ওকে মুক্ত হতে দেবেনা এমন কেন বললো?ভাইয়া বেশি গভীরে ভেবে ফেলছে।এমন না হয় ভাইয়ার এই গভীর চিন্তার অপূর্ণতা ওকেই শেষ করে দেয়।

তুলি মনে মনে কথা গুলো ভেবে গেলো।কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তুলির।

১০৬

মাহির সোফায় বসে আছে।দু হাঁটুর পর দু হাতের কনুই ভর করে মুখে হাত রেখে ইলার দিকে তাকিয়ে আছে। ইলা মাহিরের সামনে অপরাধীর মতো দাড়িয়ে আছে।মাথা নিচু করে দাড়িয়ে কখনো শাড়ির আঁচল নিয়ে খেলছে।কখনো নখ কাটছে।আবার মাহিরের এতো বকাবকির মাঝে পিটপিট করে একটু তাকিয়ে নিচ্ছে।

-কি হলো?উওর দেও?
-,,,,,,।
-ইলা!

মাহির বেশ জোরেই ইলার নাম ধরে ডাকলো। ইলা একটু কেঁপে উঠলো।

-কি হয়েছে?
-আমি কিছু জিজ্ঞাসা করছি?
-শুনছি তো।
-শুনছো তো উওর দেও?
-ভুল হয়ে গেছে।সরি।
-ইলা সব সময় তোমার এই ছেলেমানুষি গুলো ভালো লাগেনা।কি শুরু করেছো তুমি?তোমাকে বার বার বলেছি কেউ কলিংবেল বাজালেই দরজা খুলবে না।দরজায় সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে।আমি আসলে তো নিজেই না হয় ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে ভেতরে আসতাম।আর ওটা কি আমার আসার সময়?কতো করে বলেছি তোমাকে না হয় একটু কষ্ট করে ঘরে গিয়ে সিসি টিভির ফুটেজ দেখবে কে এসেছে।তুমি এতোটা কেয়ারলেস কি করে হও ইলা?
-সরি।
-আবার সরি?কিসের সরি হ্যাঁ?আজ যদি তোমার কোনো ক্ষতি হয়ে যেত?তুমি একা একটা লোককে কতক্ষণ ট্যাকেল করতে।ইশতিয়াক না আসলে?
-পারতাম ও না আসলেও।
-পারতে?কিভাবে?রুটির বেলন নিয়ে?তুমি আনতে যেতে যেতে ঐ লোকটা যদি তোমাকেই ধরে ফেলতো?
-আর এমন হবে না।
-তুমি কখনোই আমাকে বোঝার চেষ্টা করোনা ইলা।কখনো না।এত করে বোঝাই তোমাকে।না পড়াশোনা ঠিক মতো করছো না সংসার!
-করছি তো।একটা বাচ্চা এনে দিলে মন দিয়ে সংসার করতাম।
-কি করছো?এই রকম ছেলে মানুষি?আর কি বাচ্চা বাচ্চা করো সব সময়?

মাহির রেগে দাঁড়িয়েই গেল।তেড়ে গিয়ে ইলার দুই বাহু ধরলো।

-মাহির লাগছে আমার।ছাড়ুন।
-কেন এই এক কথা বার বার কানের কাছে বলিস তুই?এই আমি থাক লে তোর হচ্ছে না।সব সময় বাচ্চা বাচ্চা করিস।
-মাহির আপনি এভাবে কেন ব্যবহার করছেন আমার সাথে?
-তাহলে কি করব?ছেলে মানুষির সীমা থাকা দরকার ইলা।তুমি মেরেছো ঐ লোকটাকে।ভালো কথা।সেটা নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই আমার।তুমি নিজেই উচিত শিক্ষা দিয়েছো।কিন্তু আমি যে বার বার তোমাকে সাবধানে থাকতে বলি কানে যায়না কথা?
-মাহির বললাম তো ভুল হয়ে গেছে।
-আবার সেই এক কথা।ভুল হয়ে গেছে।আরে আজ যদি তোর কিছু হয়ে যেত না আমার ই যেত সব।ঐ লোকটার কিছুই হতো না।সর্বোচ্চ গেলে জেল খাটতো।আমি কি করতাম?তোকে পেতাম?তোকে যদি মেরে দিত ও?তোর কিছু হলে না তোর মায়ের কিছু যায় আসবে না তোর ঐ স্বার্থপর বোনের।কি না করছিস তুই ওদের জন্য। দেখেছিস একটা খোঁজ নিতে?আজ তোর কিছু হয়ে গেলে আমি শেষ হয়ে যেতাম।আমি মরে যেতাম।আর কারোর কিছু হতো না।বুঝিস না তুই?সব সময় ছেলে মানুষী!

মাহির বেশ শক্ত করে ইলার হাত চেপে ধরেছে।ইলা ব্যথায় কেঁদেই দিয়েছে।ইলা চোখ তুলে তাকালো মাহিরের দিকে।ফর্সা মানুষটা রেগে পুরো লাল হয়ে গেছে।কথা বলতে বলতে কেঁদেই দিয়েছে মাহির।ইলা নিজেও বুঝতে পারছে আজ সত্যি কিছু হলে মাহির ই কষ্ট পেত।সে নিজের দোষে সব সময় মাহিরকে কষ্ট দিয়ে যায়।

-মাহির আর কখনো এমন ভুল করব না।আপনি কাদবেন না।আমাকে এবারের মতো ক্ষমা করে দিন।

ইলা মাহিরকে জড়িয়ে ধরলো।মাহির ও নিজের হাত বাড়িয়ে আকড়ে ধরলো ইলাকে।

-সরি।
-আপনি কেন সরি বলছেন?ভুল আমি করেছি।
-তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি।ক্ষমা করে দেও।রাগ করোনা।
-উহুম।কথায় আছেনা শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে।আপনি কিছু ভুল করেন নি।
-ইলা আমার খুব ভয় হয়।খুব।আমার শুধু মনে হচ্ছে তোমাকে হারিয়ে ফেলব আমি।ইলা আমাকে ছেড়ে যেওনা। অনেক বেশি ভালোবাসি তোমাকে।তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না ঠিক কতটা সাধনা করতে হয় একটা মানুষ কে শুধু ভালোবাসার মানুষটিকে পাওয়ার জন্য।ইলা যাই হয়ে যাক কখনো আমাকে ছেড়ে যেও না।
-কি বলছেন আপনি?আমি কেন ছেড়ে যাব?কোথাও যাব না আমার লাল টুকটুকে বরকে ছেড়ে।
-যদি কখনো যাও না দেখতে পাবে তোমাকে ছাড়া দুটো মিনিট আমাকে কোথায় নিয়ে গেছে।দেখবে তুমি আমাকে দেখতে পাবে ঠিকই কিন্ত আমার মাঝে প্রাণ থাকবে না।

মাহিরের কথা শুনে বুকটা ধক করে কেঁপে উঠলো ইলার।মাহিরের বুক থেকে মাথা উঠালো সে।

-মাহির!কি সব কথা বলছেন আপনি?আপনাকে কতবার বলেছি না এসব বলবেন না আমাকে?
-পানিজল একটু তুমি করে বলোনা।খুব কাছের লাগে।আপনি টা যেন দূরে ঠেলে দেয়।
-আজ না।আমার সময় লাগবে।অভ্যাস হয়ে গেছে তো।অন্য এ কদিন বলে বলে চেষ্টা করব।
-এমন না হয় তুমি তুমি করে বলার আগেই আমার থেকে আমি টা ফুরিয়ে যায় চিরতরে।

ইলার বুকের ভেতর যেন ছ্যাত করে উঠলো।ইলা সাথে সাথে জড়িয়ে ধরলো মাহির কে।

-কি হলো?
-মাহির কেন এসব বলেন আপনি?কেন একা হওয়ার কথা বলেন?কষ্ট হয় আমার।
-ইলা।একা থাকার অভ্যেস করে নাও।দেখবে কষ্ট হবেনা।হলেও কম।কাদবে কিন্তু পাথর হবে না।

১০৭

আলমারি থেকে একটার পর একটা শার্ট বের করে আয়নার সামনে নিজেকে দেখছে নিবিড়।

-না এটাও না।এটাও না।এমন একটা শার্ট পড়ে যাব না অনু আমার থেকে চোখ ফেরাতে পারবে না।

সবশেষে সব কিছু ওলট পালট করে নিবিড় ক্রিম কালারের একটা শার্ট ধরলো।

-হ্যাঁ এটাই।গত ঈদে অনু এই শার্ট টা কেনার সময় পছন্দ করেছিল।এটাই পড়ে যাব আমি কাল আমার অনুর কাছে।

“প্রিয়তমা,
এবার মানিব্যাগ থেকে উঠিয়ে বুক পকেটে রাখব তোমায়।প্রস্তুতি নেও।”

চলবে———–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here