রৌদ্র_কুয়াশা,পর্ব ৪৩,৪৪

0
2226

#রৌদ্র_কুয়াশা,পর্ব ৪৩,৪৪
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ৪৩

ইশতিয়াকের কথা শুনে ইলার কিছুক্ষণের জন্য মনে হলো ওখানেই তার পৃথিবীটা থমকে গেছে।শেষবার শব্দ টি ঠিক হজম হলোনা ইলার।তার মধ্যে ইশতিয়াক এর ভেজা দুটো চোখ। ইলার মনের ভেতর অজানা ভয় কাজ করছে।

কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ইলা বললো,

-ককি হয়েছে ইশতিয়াক?তুমি এভাবে বলছো কেন?কি হয়েছে তোমার ভাইয়ার?
-আপনার যদি দশ মিনিট সময় হয় তো বলুন।এমনিতেই যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে আপনি যদি বলেন তো এখন নিয়ে যেতে পারি আপনাকে।আর যদি আপনার অমত থাকতে তো অসুবিধা নেই।এটাই বুঝে নেব,ভাইজান আসলেই অভাগা।তার জীবনের অনেক মূল্যবান সময় আপনাকে দিয়েছে।কিন্তু তার সেই সৌভাগ্য নেই যে আপনার থেকে দশ মিনিট সময় সে পেতে পারে।

ইশতিয়াক আর কিছু বললো না।দরজার থেকে পিছু হটলো।বাড়ির গেটে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।

-ইশতিয়াক দাঁড়াও।

ইলার কন্ঠ শুনে দাড়িয়ে গেল ইশতিয়াক।এটা ভেবে তার ভালো লাগছে যে ইলা একটু সময় হয়তো তার ভাইজান কে দেবে।ইলা দরজা দিয়ে দৌড়ে ছুটে গেল ইশতিয়াক এর কাছে।

-ইশতিয়াক আমি,,,,।
-ভাবিজান গেটের বাইরে গাড়ি দাড়িয়ে আছে।আপনি গিয়ে উঠে পড়ুন।আমিও আসছি।

ইলা আর কথা বাড়ালো না। চট করে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।

“তুমি দু কদম দূরে গেলে আমি তোমার থেকে এত কদম দূরে যাব তুমি তার পরিমাপ ও করতে পারবে না বলে দিলাম”

মাহিরের কথা গুলো বার বার ইলার কানে বাজছে।চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝড়ছে।সে আদৌ জানেনা কি হয়েছে মাহিরের।

সন্ধ্যা নেমে এসেছে।একটা বিশাল বড় বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামলো।ইশতিয়াক গাড়ি থেকে নেমে ইলার সামনের দরজাটা খুলে দিল।কাপা কাপা পায়ে ইলাও নামলো।

-ইশতিয়াক বলোনা কি হয়েছে?
-তেমন কিছু হয়নি হয়তো এটা আপনার কাছে।আমাদের কাছে অনেক বড় কিছু।
-কেন এতো হেয়ালি করছো?বলোনা কি হয়েছে আমার মাহিরের?
-এই আমার কথাটা কাল কি একবার ও আপনার মনে একটু আঘাত করেনি?কিভাবে পারলেন আপনি ভাইজান কে এত বড় আঘাত দিতে?
-ইশতিয়াক বলো কি হয়েছে?আর এটা কোথায় আনলে আমাকে?
-এটা আপনার শ্বশুর বাড়ি।
-মাহিরের কি হয়েছে বলবে তুমি?
-ভাইজান বেশি কষ্ট পেয়েছিলেন ভাবীজান।উনি কাল রাতে ঐ বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যান।প্রচন্ড পরিমাণে ড্রিঙ্কস করেন।ভাইজান আগে কখনো এমন করেনি।নিজের তাল সামলাতে পারেননি উনি।ড্রাঙ্ক অবস্থায় ড্রাইভ করতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করেন।
-কিহ!
-চিন্তা করবেন না।বললাম না আমার ভাইজান অভাগা।এ যাত্রায় জানে বেচে গেছেন ।মরলে তবুও হয়তো তার ভাগ্যের জ্বালাটা কমতো।নিজের কন্ট্রোল না সামলাতে পেরে গাছের সাথে মেরে দেন।এজন্য বেশি কিছু হয়নি।আপনাকে হসপিটালে বার বার দেখতে চেয়েছিলেন।কিছু বলতে চান আপনাকে।এজন্য আপনাকে আনতে বাধ্য হলাম।

১১৬

নিজের চোখের দেখাটা ভুল না সঠিক সেটাও বিশ্বাস করতে পারছে না অনু।আরিয়ান তাকে এমন কিছু উপহার দেবে সে সত্যি কল্পনা করতে পারেনি।

-আরিয়ান সাহেব এটা কিভাবে সম্ভব?
-হ্যাঁ এটাই সম্ভব।আজ থেকে আর কারোর ভয়ে কুঁকড়ে থাকতে হবেনা আপনাকে।নিবিড় নামটা চিরকালের মতো মুছে গেছে আপনার জীবন থেকে।না আপনি তার স্ত্রী না সে আপনার স্বামী।কাল রাতেই খবর টা দিতাম।কিন্তু আপনার আজ পরীক্ষা ছিল।চেয়েছিলাম আপনার দুই ক্লান্তি একসাথে মুক্ত করতে।
-আরিয়ান সাহেব আপনার কাছে ঋনী হয়ে গেলাম।বিশ্বাস করুন আজ অবধি জীবন টাকে এত সুন্দর দেখিনি জানেন তো।না পেয়েছি কারোর কাছে সম্মান।আপনি আমাকে সেই সম্মান টা দিয়েছেন।একটা সুন্দর জীবন দিয়েছেন।
-ভুল বললেন অনু।আমি কিছুই করিনি।সবকিছু মহান আল্লাহ করেছেন।আমি হয়তো মাধ্যম হয়েছি।এছাড়া কিছুই না।
-হুম।
-কিন্তু অনু আপনি প্রস্তুতি নিন।

আরিয়ানের কথায় অনু চোখ মুছে আরিয়ানের দিকে তাকালো।এতক্ষণে আনন্দে কেঁদেই দিয়েছিল সে।

-কিসের প্রস্তুতি?
-আপনি কথা দিয়েছিলেন আপনি আমার ঋণ শোধ করবেন।
-হুম।কিন্তু কি ভাবে করব ?আপনি যা বলবেন সেটা করব আমি।
-অনেক বড় কিছু চাইতে পারি আপনার থেকে অনু।

আরিয়ানের কথায় অনুর কপালে চিন্তার ভাঁজ ফুটে উঠলো।তার কাছে না আছে টাকা পয়সা না আছে অন্য কোনো ধন না আছে দেওয়ার মতো দামি কিছু।কি এ মন জিনিস যেটা অনেক বড় কিছু আর আরিয়ান সেটা তার থেকে চায়।

-কি হলো?মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল কেন আপনার?
-কিছুনা।বলছি আমার কাছে কি এমন জিনিস আছে আরিয়ান সাহেব যেটা অনেক বড়।আমি তো জানিনা।
-খুঁজে দেখুন।আপনার কাছেই আছে।
-আমার কাছে?
-হুম।

অনু কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো।মূলত সে ভাবতে লাগলো কি আছে তার কাছে।এদিক ওদিক তাকালো।তবু ও কিছু পেলনা।

-কিছু পেলেন?
-উহুম।
-অনু।আয়নায় কখনো নিজের মুখ দেখেছেন?
-দেখব না কেন?রোজ দেখি।দিনে তিন চারবার করে দেখি যতবার চুল আচড়াতে যাই।কলেজে যাওয়ার সময় রেডি হই।

অনুর কথা শুনে আরিয়ানের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।

-অনু আপনি বড্ড বেশি সরল?কিন্তু আপনি কি জানেন আপনি একটা ভাগ্য?
-মানে?
-অন্য এক দিন বলব।দু মাস পর আপনার ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা।তার পর আপনার থেকে সেই বিশাল বড় জিনিসটা চেয়ে নেব।এখন এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।আর পড়তে বসুন।
-আচ্ছা।

অনু ডিভোর্সের কাগজ টা ড্রয়ারে রেখে বই নিয়ে চলে গেল অন্য ঘরে।অনু বের হওয়ার পর তুলি এগিয়ে এলো আরিয়ানের দিকে।এতক্ষণ ধরে সে বিছানায় বসে নিরব দর্শকের মতো সব দেখছিল,শুনছিল।

-ভাইয়া শোন।
-বল।
-কি চাস তুই অনুর থেকে?
-এখনো ঠিক করিনি।ওটা মজা করলাম।পরে বলব।
-আয়নায় নিজের মুখ দেখেছিস কখনো?

তুলির প্রশ্ন শুনে আরিয়ানের চোখ বড় বড় হয়ে গেল।ঢোক গিলে সে তুলির দিকে তাকালো।

-ভাইয়া শোন।প্রথম কথা আমি তোর বোন।সেই ছোট্ট থেকে তোকে চিনি।দ্বিতীয় কথা আমি একজন পুলিশ অফিসারের বোন।তৃতীয় কথা আমি একজন বিবাহিত নারী।চতুর্থ কথা এক বাচ্চার মা আমি।
-আরে কি বলতে চাইছিস সোজা সুজি বল না?
-এটাই বলতে চাইছি যে,আমি অনুর মতো ছোটো না।তোর এসব কথার প্যাচ না আমাকে শেখাতে আসবি না খবরদার।ফাজিল ছেলে তলে তলে তুমি টেম্পু চালিয়ে একদম রাস্তার চৌমাথা অবধি পৌছে গেছো।আমাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করিস না?কথা বলতে আসবি না আর আমার সাথে। হুহ।
-আরে তুলি।

আরিয়ান ডাকার আগেই তুলি চলে গেছে ঘরের বাইরে।মুখের হাত দিয়ে আরিয়ান খাটে বসে আছে।

-তুই বুঝে কি হবে বোন?পেয়েছি একটা বলদ,একে কোন হাইব্রিড জাতের ঘাস খাওয়ালে মানুষ হবে আল্লাহ জানে।

১১৭

বন্ধ দরজা।মেঝেতে বসে আছে ইলা।ঘড়ির কাটা জানান দিচ্ছে রাত দুটো ছুইছুই।ইলা হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে।চোখ মুখ ফুলে গেছে কাঁদতে কাঁদতে।ইলার দৃষ্টিতে আপাতত তার সামনে বিছানায় শোয়া ঘুমন্ত মানুষটার দিকে।বিছানার পাশে ছোট্ট একটি টেবিল।সেখানে খাবার ঢেকে রাখা।আদিবা বেগম এসেছিলেন ইলাকে খাওয়াতে।ইলা খেতে নারাজ।সে মাহিরের সাথে কথা বলবে তারপর খাবে।বাড়িতে ঢুকেই মাহিরের ঘরে এসে বসে আছে সে।বের হয়নি।আজহার সাহেব ও জানেন না বাড়িতে ইলা আছে।জানলে এতক্ষণে কি ঘটনা ঘটাতেন সেটা সবার জানা।

ইলার চোখ সরছে না ঘুমন্ত মাহিরের থেকে।চিত হয়ে শুয়ে আছে সে।মাথায় ব্যান্ডেজ।কপালে বেশ গুরুতর আঘাত পেয়েছে।তিন চারটা সেলাই ও লেগেছে।হাতের কনুই এর দিকটা একটু ছিলে গেছে।মুখে ও একটু কেঁটে গেছে।বেশি বড় এক্সিডেন্ট হয়নি তার।এলাকার লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।সকালে জ্ঞান ফিরলে আজহার সাহেব গিয়ে তাকে বাড়িতে আনেন।তার এক কথা বাড়িতেই চিকিৎসা হবে তার ছেলের।বিকেল বেলা ডাক্তার ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে গেছেন মাহিরকে। সেই থেকে এখনো অবধি সে ঘুমিয়ে আছে।এখনো টের পায়নি তার কাঙ্খিত ব্যক্তিটি তার ই ঘরে এসে বসে আছে।

মাহির ক্রমশ ই হাত পা নাড়া চড়া করছে।ইলা গভীর ভাবে দেখছে।মাহির যে এখনি উঠবে বোঝাই যাচ্ছে।এর মধ্যে মাহিরের ঘুম ভাঙলো।হাই তুলে মাহির নিজে নিজে উঠে বসলো।মাথায় হাত দিল।হয়তো ব্যথা করছে।কিছুক্ষণ বসে থেকে ওয়াশরুমে গেল।ডিমলাইটের আলোতে মাহিরের চোখে পড়লো না তার থেকে দূরত্ব রেখে ফ্লোরে কেউ বসে আছে।রমনী তার দৃষ্টি দ্বারা তাকে ভক্ষণ করছে। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ঘরের আলো জ্বালানো মাহির।ঘড়ির দিকে তাকালো।

-দুটো বাজে।মানে গভীর রাত।এতক্ষণ ঘুমিয়েছি আমি!

মাহির বেশ অবাক হলো।বিছানায় গিয়ে আবার খাটের সাথে হেলান দিয়ে শুয়ে রইলো।হঠাৎ মাহির পাশ ফিরে তাকালো।মেঝের দিকে চোখ যেতেই কিছুটা চমকে গেল সে।উশকো খুশকো চুল নিয়ে ইলা বসে আছে।শাড়ির আঁচল টাও ঠিকমতো গায়ে নেই।ফ্লোরে বিছিয়ে রাখা যেন।মাহির চোখ ফিরিয়ে নিল।

-নাহ ভুল ভাবছি।ও এখানে কিভাবে আসবে?আমার স্বপ্ন হয়তো।যেদিকে তাকাচ্ছি মনে হচ্ছে ওকেই দেখছি।শুধু কাছে টানার আগে ছোয়ার আগে সে মিলিয়ে যাচ্ছে।সব কল্পনা আমার।

ইলা ফুঁপিয়ে কেঁদে দিল।কান্নার শব্দ শুনে মাহির আবার পাশ ফিরে তাকালো মেঝের দিকে।এবার তো সে শব্দ শুনেছে।নাকি এটাও তার ভ্রম?

-স্বপ্নেও কি আওয়াজ শোনা যায়?হয়তো যায়।

মাহির এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ইলার দিকে।তার কাছে মনে হচ্ছে সে কল্পনার জগতে আছে।সেখানে তার ইলা রাণী বিচরণ করছে।এক ঝাক চুল নিয়ে সে বসে আছে।মাহির এবার আর ছুতে চাইছে না।

এটা যে কল্পনা।না ছুয়েই থাকা ভালো।ছুলে তো মিলিয়ে যাবে,ভস্ম হয়ে যাবে।তার চেয়ে ভালো চোখের দেখাই হোক।যদি ও তা কল্পনা চোখের তৃষ্ণা তো মিটবে।

ইলা এবার উঠে দাড়ালো।চোখ মুছে নিজের চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করলো।মাহিরের কাবারড খুলে মাহিরের একটা পানজাবি নিল হাতে।মাহিরের দিকে এক নজর তাকিয়ে সেটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।মাহির চুপচাপ তাকিয়ে আছে।তার এবার মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি এটা তার কল্পনা।কল্পনার ইলা তার পানজাবি চুরি করে ভস্ম হয়ে গেছে।

মাহির চোখ বুজে বসে রইলো।

-কেন এতো ভালোবাসি তোকে?দেখ আজ তুই আমার সাথে নেই।তবুও চতুর্দিকে তোকেই দেখি।জানিস বিদেশের ও কটা বছর কিভাবে কাটিয়েছি আমি?ছটফট করেছি কতো?তবুও ফিরে এসে তোকে পাইনি।সে সময় ও আমার তৃষ্ণা টা অপূর্ণ রেখে ছিলি তুই।অনেক সাধনা করে তোকে পেলাম।কিন্তু দেখ সেই তুই আবার আমাকে তৃষ্ণার্ত অবস্থাতেই রেখে চলে গেলি।একবার ভাবিস নি আমার কথা।একবার শুনিস না।বাইরের লোকের কথাই তোর কাছে বড় হয়ে গেল। একটা চরম সত্যি কথা আগে শুনেছি।আজ নিজের জীবন নিয়ে প্রত্যক্ষ করলাম।তৃতীয় ব্যক্তি যে কোন সম্পর্কের ভাঙন ধরায়।

মাহিরের ভাবনার মাঝে মাহিরের মনে হচ্ছে তার মুখের ওপর পানির ফোঁটা পড়ছে।ঠিক বৃষ্টির পানি যেমন তালে তাল মিলিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় ঝড়ে।মাহির চোখ খুললো।অবাক হয়ে গেল মাহির।সবুজ রঙের পানজাবি নিচে পেটিকোট পড়ে তার সামনে দাড়িয়ে আছে ইলা।ইলা একটু ঝুঁকে দাড়িয়ে আছে মাহিরের দিকে।ইলার চুলগুলো ভেজা।আর সেই পানিটা ই মাহিরের মুখে পড়ছে এতক্ষণ।মাহির যেন এবার সজ্ঞানে এলো।পানির ফোটা তো সত্যি।তাহলে কি সে স্বপ্ন দেখেনি?

মাহির মুখ ফসকে বললো,

-এটা কি স্বপ্ন নাকি সত্যি?

ইলা বিছানায় বসে পড়লো।মাহিরের মুখ বরাবর নিজের মুখ উঁচু করে ঝুকে গেল।ইলার গরম নিঃশ্বাস মাহিরের মুখে পড়ছে।মাহির অপলক চেয়ে আছে ইলার দিকে।ইলা আরো এগিয়ে গেল মাহিরের দিকে।

-যদি স্বপ্ন হয় তবে স্বপ্নেই ছুঁয়ে দেব,আর যদি সত্যি হয় একদম ভস্ম করে দেব আজ আপনাকে।আমার আগুনে পুড়ে যাবেন।আমি এক অন্যরকম পানিজল যার ভেতরে আগুনের ফুলকি র ও বসবাস।

ইলা নিজের ওষ্ঠ যুগল দ্বারা মাহিরের ওষ্ঠ স্পর্শ করলো।

চলবে———–

#রৌদ্র_কুয়াশা
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ৪৪

বিদ্যুৎ চমকানোর মতো মাহির ও যেন চমকে গেল।প্রতিটি ধাপে সে নতুন করে অবাক হচ্ছে।তার মানে ইলা সত্যি এসেছে।কিন্তু কেন?আর আসলেও কেন সে মাহিরের সাথে এমন আচরণ করছে?উওর খুঁজে পায়না মাহির।নিজের থেকে ইলাকে একটু দূরে সরিয়ে দিল মাহির।মাহিরের আচরণে ইলা একটুও অবাক হলোনা। হয়তো অভিমান করেছে মাহির।রাগ করার বদলে ইলা মাহির এর সামনা সামনি আসন গেড়ে বসে পড়লো।

-তুমি এখানে সত্যি,,,?
-দেখুন আপনার এই সত্যি স্বপ্ন এসব বন্ধ করুন তো।যত্তসব।এবার বলুন কি বলবেন?
-আমি?
-হ্যা আপনি।আপনার পেয়ারে ইশতিয়াক নিয়ে এসেছে আপনি নাকি কিছু বলতে চান আমাকে।
-ওহ।

ইলার কথা শুনে মাহিরের মুখটা কেমন কালো হয়ে গেল।তার মানে ইলা নিজের ইচ্ছেয় এখানে আসেনি।মাহির যে অসুস্থ সেটা জেনেও ইলা নিজের ইচ্ছেয় এখানে আসেনি।কথাটা ভাবতেই মাহিরের কষ্ট হচ্ছে খুব। কিন্তু তবুও কষ্ট টা আজ মনের ভেতর রেখে দিল মাহির।দোষ তো তারই।ইলার দোষ নেই।

-কি হলো?কোন ভাবনায় ডুবেছেন আপনি?
-ইলা তোমাকে কিছু বলার ছিল আমার।
-বলুন।
-ইলা প্রথমে এটাই বলব,আমি তোমার জীবনটা নষ্ট করেছি।সত্যিই তাই।আসলে কি বলোতো এতোটা কষ্ট পেয়েছি জীবনে বলে বোঝাতে পারব না।তোমাকে আমার সেই কষ্টের কুয়াশার ভিড়ে প্রথম পেয়েছিলাম।আমার কাছে মনে হয়েছিল যাই হয়ে যাক এই রৌদ্রবতী মেয়েটিকে আমার চাই।অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসতে হলেও চাই।কোনো শীতের কুয়াশামাখা সকালে আমার কুয়াশাময় জীবনের রোদ হিসেবেও চাই।সবকিছু এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল।তোমাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম আমি।বাবা দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয় আমাকে।আমি নিরুপায় ছিলাম।ইলা আমি বোঝাতে পারব না আমি ঠিক কতোটা কষ্টে বিদেশের ঐ দিনগুলো পার করেছি।আমি প্রতিদিন সকালে উঠেই ক্যালেন্ডার থেকে একটা একটা করে তারিখ কেটে দিতাম।মনে হতো এই তো আর কটা দিন।আবার তোমাকে পাব।সেটা আর হলো না।দেশে ফেরার পর মাইশার সাথে বাবা আমার বিয়ে দিয়ে দেয়।এতোই দ্রুত হয়েছিল সব।যেদিন দেশে ফিরি তার একদিন পর বিয়ে।মাইশাকে বিয়ে করার পর আমি এটাই ঠিক করেছিলাম তোমাকে ভুলে যাব।কারণ মাইশা তখন আমার স্ত্রী।তাকে সামনে রেখে মনে আরেকজনকে রেখে আমি ওকে ঠকাতে চাইনি।বাসর রাতের আগেই আমি সরিয়ে ফেলি তোমার সব ছবি,সব স্মৃতি।পুড়িয়ে ফেলি সব।এটাই ভাবি যে নিয়তি হয় তো মাইশাকেই আমার জন্য রেখেছে।আমি চেষ্টা করি মাইশাকে ভালোবাসতে।বাসর রাতেই আমি থমকে যাই।আমি যেখানে মনে মনে এটা ভেবে পুড়ছিলাম আমি একটা মেয়েকে ঠকাচ্ছি।সেখানে আমি এটাই প্রমাণ পাই উহুম আমি ঠকাইনি ঠকেছি।মাইশা নিজের বয়ফ্রেন্ড এর ছবি দেখায়।দুবার এবরশন করিয়েছে হাসতে হাসতে সেই কাহিনী বলে।তখন মনে হয়েছিল আমার পাপ তাহলে কিছুটা হলেও কমলো।মাইশা বলে যে ওর বাবাকে ও কথা দিয়েছে ও সুখে সংসার করবে আমার সাথে।কথায় আছে না ভালোবাসা দিয়ে সব সম্ভব।আমি ভেবেছিলাম ঐ ভালোবাসা দিয়ে আমি ওকে আমার মতো করে নেব।ঠিকঠাক চলছিল সব।আমি না প্রচুর বোকা।মাইশা বিয়ের পরেও তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে নিয়মিত সম্পর্ক রেখে চলেছে।এটা বুঝতেই পারিনি।যতবার সন্দেহ হয়েছিল ও বলতো আমি ওকে ভালোবাসলে অবিশ্বাস করি কিভাবে।আমিও তাই ভাবলাম।ভালোবাসার থেকে বিশ্বাস জিনিসটার মূল্য বেশি।অগাধ বিশ্বাস করতাম ওকে।যাকে অন্ধ বিশ্বাস বলতে পারো।হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়ি আমি।পরে বিভিন্ন পরীক্ষার পর জানতে পারি আমি কোনদিন বাবা হতে পারব না।ব্যস মাইশার আসল চেহারাটা সেদিন ই সামনে আসে আমার।ওর বাবা মা অনেক ভালো মানুষ যাই বলো।আমার বাবা তার বিজনেস এর স্বার্থে জেনেশুনে মাইশার সাথে আমার বিয়ে দিল আর মাইশাও সেই এক স্বার্থে।মাইশাকে আগে কখনো দেখিনি আমি বাচ্চার জন্য এত চিন্তিত হতে।উল্টা বিয়ের দু বছরের মাথায় আমি চেয়েছিলাম আমাদের একটা বেবি আসুক।ও বলে এখন না।বেবি আসলে আমি ওকে কম ভালোবাসবো। এরকম অনেক কথা।আমার সমস্যা ধরার পর সব পাল্টে যায়।তখন বুঝি মাইশা আমাকে ইউজ করেছে যাস্ট।আমার সরলতার সুযোগ, বিশ্বাসের সুযোগ নিয়েছে ও।অনেক ঝামেলা হয়।অবশেষে মাইশা বলে ওকে ডিভোর্স দিতে
আর যেহেতু এখানে আমার সমস্যার জন্য এত কিছু ওর মা বাবা ও রাজি হয়ে যায়।

মাহির চুপ করে গেল।ইলা মাহিরের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।মাহিরের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।

-জানো ইলা তোমার সাথে সব সময় দুঃসময়ে দেখা হয় আমার।প্রথম দেখা হয়েছিল সেদিন আমার বাইক খারাপ হয়ে যায়।আর মাইশার সাথে ডিভোর্সের কথা বার্তা চলছে তখন যেদিন দেখা হয় ঐদিন আমার গাড়ি খারাপ হয়ে যায়।ঐ বারের সামনে।আমি ড্রাইভার কে ঠিক করতে বলে বাইরে ঘুরতে থাকি।রাত দশটা বাজে তখন।হঠাৎ চোখ যায় রাস্তার বিপরীত পাশে।বিশ্বাস কর সেদিন আমার ভেতর যে কি ঝড়টা বয়ে গিয়েছিল ঐ টুকু সময়ে সেটা ব্যখা করার ভাষা আমার জানা নেই। তুমি যখন ঐ বারে ঢুকলে আমার বিষয় টা ভালো লাগেনি।পরে আমি তোমাকে ফলো করি।খোঁজ খবর নেই।জানতে পারি আমার সেই ছোট্ট পানিজল অনেক বেশি বড় হয়ে গেছে।তার জীবনটা বদলে গেছে পুরো।তারপর আমি সিদ্ধান্ত নেই যেটা অনেক বছর আগে আমি পাইনি এবার যে কোন ভাবে সেটা আমার চাই।আর মাইশা ও নিজের মতো নিজের লাইফ নিয়ে ভালো ছিল।আমি বেশি দেরী করিনি।তোমাকে প্রস্তাব দিয়েই দেই।মাইশার সাথে ডিভোর্স এর পর নিজেই তোমাদের বাড়িতেও প্রস্তাব পাঠাতাম।কিন্তু তার আগে তোমার জীবনটা আরেকবার এলোমেলো হয়ে গেল।আর তার পর,,,,।
-এই অবধি আজ এসে দাঁড়িয়েছি আমরা।
-ইলা তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কোনো মুখ আমার নেই।আমি কখনো তোমাকে মাতৃত্বের স্বাদ দিতে পারব না।না পারলাম তোমার মনের মতো হতে।অনেক বার ভেবেছিলাম সব বলে দেই তোমাকে।কিন্তু ঐ যে তুমি যেদিন বলেছিলে তুমি প্রথম ও শেষ হতেই রাজি।আমার ভয় হয়েছিল ইলা।তোমাকে হারিয়ে ফেলব এজন্য।আমি চুপ ছিলাম।আর তুমি যতবার বাচ্চার কথা বলতে ততবার আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারতাম না।কষ্ট হতো আমার।আমার নিজের ভালো থাকার স্বার্থে আমি তোমাকে ঠকিয়েছি।একটু সুখ পাওয়ার আশায় স্বামী নামক অধিকার দ্বারা তোমার সবকিছু কেড়ে নিয়েছি।আমার ক্ষমা হয়না।আমি বেশি স্বার্থপর হয়ে গেছি।আমি সব কিছু আড়াল করতে চেয়েছিলাম।কিন্ত সত্যি কখনো চাপা থাকেনা।এটাই সত্যি।ইলা এইটুকুই বলার ছিল আমার।তোমার সামনে দাঁড়ানোর মতো শক্তি ও আমার নেই।তবে সবকিছু সত্যি হলেও একটা বড় সত্যি ইলা আমি তোমাকে ভালোবাসি,অনেক বেশি ভালোবাসি।তুমিই আমার প্রথম ভালোবাসা ছিলে আর তুমিই শেষ।শুধু মাঝের টা আমার দুর্ভাগ্য।যেটা আজ আমার জীবনটাকে আরেকবার শেষ করেছে।ইলা সব সত্যি হতে পারে।কিন্তু যদি কখনো একদিনের জন্য এই স্বার্থপর টাকে ভালোবেসে থাকো বিশ্বাস করো আমার ভালোবাসা তে কোনো ভুল ছিল না।তোমার যা শাস্তি দেওয়ার আমাকে দিতে পারো।আমাকে মেরে ফেলো আমি টু শব্দ করবো না।

মাহির নিজের কথা শেষ করে মাথা নিচু করে বসে রইলো।চোখের পানি যে বাধ মানছে না তার।সে শুধু অপেক্ষা তে আছে ইলা তাকে কি শাস্তি দেয়।ইলা হুট করে মাহিরের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো।ডুকরে কেঁদে উঠলো।মাহির কিছুটা অবাক হলেও সে নিজেও শক্ত করে জড়িয়ে নিল ইলাকে।

-আপনি আসলেই স্বার্থ পর।খুব স্বার্থ পর।কাল রাতে যদি আপনার কিছু হয়ে যেত আমার কি হতো?আমার কথাটা একবার কি ভেবেছেন আপনি?সব সময় শুধু নিজের টা দেখেন।কেন বললেন না আপনিই আমার সেই ঝড়ো হওয়া?তাহলে যতোটা ভালোবেসেছি তার থেকে আরো একটু বেশি বাসতাম।জানেন আজ এতগুলো বছর আমি হাঁটতে গেলে সব সময় একটু পর পর পিছু ফিরে দেখতাম।এই বুঝি আমার ঝড়ো হাওয়া কালো বাইকে করে আমার পিছু পিছু আসছে।কেন বলেননি বলুন?আর রইলো ঐ মাইশার কথা।আপনি জানেন ঐ মেয়েটা যখন বলেছিল সে আপনার স্ত্রী আপনার বাচ্চার মা আমার কেমন লেগেছিল?বোঝেন আপনি?আমি জানতাম মাহিরের অস্তিত্ব শুধু আমি আর আমার সে।তখন যদি কেউ সব কিছু প্রমাণ সহ দেখিয়ে এই কথা বলে কি অবস্থা হয়েছিল আমার।আমার দুনিয়াটা কেমন হয়েছিল?জানেন আপনি?
-তুমিও তো একবার শুনলে না আমার কথা।
-চুপ করুন আপনি।কখনো শুনবো ও না।বড্ড খারাপ আপনি।তখন আপনাকে শুধু মিথ্যাবাদী মনে হয়েছিল আমার। পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের হয়েও অচেনা হয়ে গিয়েছিলেন আপনি।দোষ আপনার।কেন করেছিলেন এমন?আমার বাচ্চা লাগতো না।আমার শুধু মাহির হলেই চলতো।যেখানে মাহিরের অগাধ ভালোবাসা আছে সেখানে কিছু না পাওয়াটা আমাকে কখনো আফসোস করাতো না।আপনি কিভাবে পারলেন কাল এভাবে ড্রাইভ করতে?দেখেছেন নিজের অবস্থা?কিছু যদি হয়ে যেত?
-তোমাকে বলেছিলাম না তুমি কখনো আমার থেকে দু কদম দূরে গেলে আমি তোমার থেকে চিরতরে দূরে চলে যাব।দেখো চেয়েও পারিনি।কিছু হয়নি আমার।এভাবে কেঁদো না ইলা।আমার কষ্ট হয়।
-আমার কষ্ট হয়না।খালি উল্টা পাল্টা কথা বলেন আপনি।আমি আপনাকে কতোটা ভালোবাসি সেটা কখনো বোঝেন না আপনি।আপনি যেমন বলেন পানিজল ছাড়া খাল বিল শুকিয়ে যায়।খরা বয়ে আনে।আপনি কি জানেন এই খালবিল ছাড়া পানিজলের কোথাও দাঁড়ানোর জায়গা নেই।আপনি ছাড়া আমিও অস্তিত্বহীন।
– তুমি এখানে কি করে এলে?
-সকালে দাদিমা গিয়ে সব বলেছে আমাকে।আমি তো ভেবেছিলাম আপনি আমি যত অভিমান করিনা কেন ঠিক আসবেন।অপেক্ষা তে ছিলাম আমি।কিন্তু না।তিনি এখানে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে।আর আমি তার পথ চেয়ে বসে আছি।
-সরি।
-রাখুন আপনার সরি।মাহির আপনি ছাড়া আমার কেউ নেই মাহির।দাদিমা আমাকে এক অভাগা রাজপুত্রের গল্প বলেছিল।কিন্তু আমিও যে এক অভাগা কন্যা।মাহির আপনি আর আমি দুজনেই এক।দেখুন না আমরা সবার স্বার্থে সব করি।অথচ দিন শেষে আমরাই স্বার্থ পর হয়ে যাই। নিয়তি আমাদের হেরে যেতে দেয়।কখনো দেখে না আমাদের কষ্ট টা।মাহির আমার পরিবার নেই,আপনি আছেন।আপনি আমার সব।আপনার কিছু হয়ে গেলে কি করতাম আমি?আপনি শুধু আমার অভিমান দেখলেন আমার কষ্ট টা ভালোবাসা টা বোঝেন নি আপনি।
-ক্ষমা করে দেও।আমি আরো বেশি অপরাধী হয়ে যাচ্ছি।
-আপনার সব কিছুর ক্ষমা হলেও এই জিনিসটার ক্ষমা নেই।একা ফেলে চলে এসেছিলেন আপনি।দূরে যেতে চেয়েছিলেন।কখনো ক্ষমা করবো না আমি।

ইলা কাঁদতে কাঁদতে মাহিরের শার্ট এর কিছু অংশ ও ভিজিয়ে ফেলছে।মাহিরের ও চোখের পানি।তবে আজ কষ্টের না দুজনের চোখে সুখের ঝরণা।মাহির ইলাকে বুকের ওপর থেকে উঠিয়ে চোখ মুছে দিল।

-কান্না ভালো লাগেনা আমার।আর এটা কি করেছো?এই রাতে চুল ভিজিয়েছো?ঠান্ডা লে গে যাবে এখন।
-কি করব?কাল থেকে এখনো অবধি গোসল করিনি।এক কাপড়ে বসে ছিলাম। আর আপনার আলমারিতে একটা কাপড় ও নেই আমার পড়ার মতো।তাই পানজাবি পড়েছি
পেটিকোট টা আর ধুয়ে দেইনি।

মাহির দুষ্টু হাসি দিয়ে ইলার কানের কাছে গিয়ে বললো,

-পানজাবি পড়ে বেশ লাগছে তোমাকে।আমার তো মনে হচ্ছে এখন থেকে তোমার জন্য এগুলোই কিনব।
-বজ্জাত লোক একটা।হুহ।আমার খিদে পেয়েছে।
-এখনো খাওনি ?
-দাদিমা দিয়েগেছিল। আপনার জন্য বসে ছিলাম।
-চলো এক সাথে খাবার খাই।

দুজনে খাওয়া শেষ করলো।ইলা মাহির কে ওষুধ খাইয়ে আলো নিভিয়ে মাহিরের পাশে এসে শুয়ে পড়লো।মাহির জড়িয়ে নিল ইলাকে। ইলার কপালে চুম্বন করলো।

-ভালোবাসি।
-ভালো কথা।
-মানে টাকি?উওর দেও।
-দিলাম তো।ভালো কথা।
-তোমাকে আজ দেখছি আমি।

চলবে———

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here