রৌদ্র_কুয়াশা,পর্ব ৪,৫,৬

0
2158

#রৌদ্র_কুয়াশা,পর্ব ৪,৫,৬
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ৪

ইলা ফোনটা হাতে নিয়ে বসেই আছে।তার মনে অন্য ভয় জেকে বসেছে।মাহির সত্যি তার কোনো ক্ষতি করে দেবে না তো।

-আল্লাহ এমনিতেই নিজের ঝামেলায় বাঁচি না।এর মধ্যে কোথ থেকে যে এই মাহির লোকটা উদয় হলো কে জানে।বিপদ বিপদ শুধু বিপদ।বিপদ আমার বর,ওর সাথে করি ঘর।

ইলা ফোনটা খাটের ওপর ছুড়ে মেরে উঠে পড়লো।

১০

-স্যার আপনি ঠিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তো?
-নীল তুমি ভুল সিদ্ধান্তের কি দেখছো?

মাহির ল্যাপটপ টা বন্ধ করে নীলের দিকে মনোযোগ দিল।নীল বেশ কাঁচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে।

-স্যার উনি একজন বার ড্যান্সার।ওনার ফ্যামিলি তো আপনার কাছে কিছুই নয়!
-ফ্যামিলি! হাহ।নীল খুব তো বিয়ে করেছিলাম হাই সট্যাটাস ওয়ালা ধনী পরিবারের মেয়েকে।কি পেলাম বলতে পারো?

মাহিরের কথা শুনে নীলের মাথা নিচু হয়ে গেল।

-সরি স্যার।
-নীল ধন সম্পদ ফ্যামিলি স্ট্যাটাস এগুলো দিয়ে মানুষের বিচার করতে যেও না।মানুষকে তার চরিত্র, তার মানুষত্য দিয়ে বিচার করতে শিখো।ইলা বার ড্যান্সার।কিন্তু কখনো কি এটা ভেবে দেখেছো কেন সে বার ড্যান্সার?কেন সে আর পাঁচটা মেয়ের মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে না?

মাহিরের একটার পর একটা যুক্তি বুলেটের মতো নীলকে বিদ্ধ করে দিচ্ছে ,মেরে ফেলছে প্রতিটি পর্দা কে,পর্দার আড়ালের সত্য যে উতলে উঠছে।

-স্যার আমার ভুল হয়ে গেছে।
-মানুষ মাত্রই ভুল।তুমি ও তার ব্যতিক্রম নও।
-স্যার বড় স্যার মেনে নেবেন তো?
-অনেক তো বাবার কথা ভেবেছি।বাবার সম্মানের কথা ভেবেছি।আর কতো।আমিতো মানুষ নীল।নিজের টা এবার ভাবতে চাই।যাও।ফাইল গুলো চেক করে আমাকে পাঠাও।
-জি স্যার।
-তোমাকে যেটা খোঁজ নিতে বলেছিলাম নিয়েছো?
-জি স্যার।নেওয়া শুরু করেছি।
-খবরদার।বাবা যেন টের না পায়।আমি কিন্তু বিশ্বাস ঘাতকতা একদম পছন্দ করি না নীল।বিশ্বাস করে যে ঠকতে ঠকতে আমার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।
-আমি বুঝি স্যার।আসছি।

নীল ফাইল হাতে নিয়ে কেবিনের দরজা লক করে বেরিয়ে গেল।

মাহির চেয়ারে গা এলিয়ে বসে আছে।চোখ বুজে গভীর ভাবে কল্পনা করছে ইলার মুখটা।

-আমার বড্ড তেষ্টা পাচ্ছে পানিজল।তুমি কবে মেটাতে আসবে?বেশি দেরী করো না।দেরী করলে যে আমি আগুন জ্বালিয়ে দেব।তুমি পুড়তে থাকবে তাতে।হবে দগ্ধ জলকনা।

“নিজেকে না চিনলে,নিজেকে না ভালোবাসলে,
তুমি অন্যকে কিভাবে ভালোবাসবে।
তোমার নেই প্রাণের মায়া,
তুমি কার জন্য প্রাণ দেবে?
আদৌ কি তুমি তাকে ভালোবাসো?”

১১

আলমারি খুলে সব স্বর্ণের গহনা গুলোতে হাত বুলিয়ে দেখছেন আদীবা বেগম।

-বুঝলি আফরিন,আমার প্রিন্স এর রাজ্যের রানীর জন্য সব রেখে দিয়েছি।এখন এগুলো পালিশ করানোর সময় এসেছে।
-কিন্তু দাদী আপনি মাইশা ম্যাডাম কে তো কখনো এগুলো দেন নি!
-সবার কি সব সাজে?ওকে কখনোই পছন্দ করিনি আমি।এই গহনা গুলো আমি মাহিরের মাকে দিয়েছিলাম।জানিস ও যেদিন চলে গেছিল খুব কেঁদে ছিল।বার বার বলেছিল ,”মা আমি চলে যাচ্ছি।কিন্তু আমার কলিজা এখানেই থাকবে।ওকে আপনি দেখবেন।”

সেদিনের কথা মনে পড়তেই আদীবা বেগমের চোখের কোনে পানি চলে আসলো।

-আলফাজ এতো টাই নিষ্ঠুর শেষ বারের মতো মাহির কে তার মায়ের সাথে সাক্ষাত ও করতে দেয়নি।পুড়িয়ে ফেলেছে ওর সব ছবি।নে এগুলো আজ দোকানে দিয়ে আসবি।পালিশ করাতে হবে।

আদীবা বেগম আফরিনের হাতে একটি লাল কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায় গহনা গুলো দিল।

-দাদী শাশুমা,আপনি তো দেখছি শিয়ালের থেকেও চালাক।আমার শাশুড়ি র গহনা আপনি লুকিয়ে রেখেছিলেন এতোদিন !

মাইশা র গলা শুনে দরজার দিকে তাকালেন আদীবা বেগম।মাইশা কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সবে বাড়িতে এসেছে।

-কিসের শাশুড়ি মা করছো তুমি!আর দু তিন দিন পর তো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তোমাকে বের করে দেব।
-হেই বুড়ি!ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আমাকে ঘাড় ধাক্কা দেওয়ার আপনি কে?আর ডিভোর্স!আরে নিজের নাতির কথা ভাবুন।ইশ বেচারা।শুধু ঐ মাকাল ফলের মতো চেহারায় আছে।আর কি আছে ওর!
-দেখো একদিন ও খুব সুখী হবে।
-ও আবার বিয়ে দেবেন বুঝি!
-যার জিনিস তাকে দেব।অবশ্য তার ই হওয়ার কথা ছিল এই বাড়ির নাতবউ।মাঝখান থেকে তুমি আবর্জনা উড়ে এসে জুড়ে বসলে।বের হও এখান থেকে।আফরিন দরজা লাগিয়ে দে।এর মুখ দেখতে চাই না আমি।

আফরিন মাইশার মুখের ওপর গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।

১২

-পানিজল আপনার ওষ্ঠা যুগল এতো মাদকতা ভরা কেন?আপনি কি এলকোহল মিশিয়েছেন?নাকি আপনি নিজেই এলকোহলের দোকান।সরি ফ্যাক্টরি।

ইলার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে।মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে সে।নিজের ঠোট দুটো তার ছিড়ে ফেলতে মন চাইছে।এমন কিছু হবে সে কল্পনা ও করতে পারেনি।

সামনের বিছানায় মাহির আধ শোয়া হয়ে ড্রিংকস হাতে নিয়ে চোখ মুখ লাল করে ইলার দিকে তাকিয়ে আছে।আজ ইলাকে মেরেই ফেলবে সে।

চলবে———

#রৌদ্র_কুয়াশা
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ৫

“শূন্যতা অদ্ভুত ভাবে গ্রাস করেছে আমাকে,
এখনো তোমায় পেলাম না,
তবে কি আজ ও অপেক্ষা করে যাব!
অপেক্ষার প্রহর কি শেষ হবে না!”

ইলার দিকে তাকিয়ে এক নাগাড়ে লাইন গুলো বিড়বিড় করে গেল মাহির।মাহিরের রক্তচক্ষু দৃষ্টিতে মাতাল করা কথাগুলো ইলাকে আরো কাঁপিয়ে তুলছে।

কি এমন করেছিল সে।যার জন্য মাহির এরকম শাস্তি দিল মাহির তাকে।

সে তো শুধু নাচ করছিল অন্যদিনের মতো।কিন্তু সে কি এটা জানতো যে কোথ থেকে একটা লোক এসে তার হাত ধরে টান মারবে আর তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে ঢলাঢলি শুরু করবে।সে তো এটা না কল্পনা করতে পেরেছিল না সহ্য।কিন্তু মাহির তাকে একটুও সুযোগ দিল না।টেনে হিচড়ে বারের ওপর তলার রুমে এনে দরজা বন্ধ করে দিল।আর করবি তো কর একদম ঠোঁটের ওপর হামলা করার কি দরকার ছিল।

-আপনার সাহস কি করে হয় মাহির আশহাব!আপনি আমার সাথে এতো বড় নোংরা কাজ করলেন!
-সাহস!তোমার সাহস কি করে হয় একটা মাতালের সাথে ঢলাঢলি করে নাচার।বাহ!তাহলে বুঝি নাচের সাথে এই কাজ ও করো?ভাগ্যিস আমি ঠিক সেই সময় টাতে বারে ঢুকেছিলাম নাহলে তো বুঝতেই পারতাম না ,”ইলা রাণী,তারা রঙ্গ লীলা নিয়ে মেতে আছে!”

ইলার চোখ বেয়ে টুপটুপ করে পানি পড়ছে।এতো বড় অপবাদ তাও তার চরিত্র নিয়ে।

-আপনি কি জানেন মাহির আশহাব, চোখের দেখা সব সময় সত্যি নয়।
-মানে!

ক্রিং ক্রিং ক্রিং

এমন একটা সময়ে রিংটনের শব্দ পেয়ে আরো বিরক্ত হলো মাহির।ফোনটা হাতে নিয়ে কল কাটতে যাবে তার আগে সে আটকে গেল।”নীল” এই নামটাই ভেসে উঠেছে।ফোনটা রিসিভ করল মাহির।

-হ্যালো।
-স্যার আপনার একটা বড় ভুল হয়ে গেছে।
-মানে?
-স্যার ঐ মাতাল লোকটা এর আগেও ইলা ম্যাডামের ওপর কু নজর দিত।আজ বারে লোক কম দেখে সে হুট করে গিয়েই ইলা ম্যামের থেকে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছে।ইলা ম্যামের কোন দোষ নেই।দুর্ভাগ্য এটা যে আপনি শুধু ঐ টুকু দেখেছেন তার আগের দৃশ্য আপনার অজানা ।
-তুমি কিভাবে জানলে?
-স্যার সিসি টিভি ফুটেজ।
-আচ্ছা রাখো।পরে কথা হবে।
-ওকে স্যার।

ফোনটা কেটে হাতে থাকা ড্রিংকসের গ্লাস টা রেগে ফ্লোরে ছুড়ে মারলো মাহির।মূহুর্তে ই ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল গ্লাসটা।মাহির উঠে বসে হাঁটুর উপর ভর করে মাথার দুপাশে হাত দিয়ে বসে আছে।

-আমাকে ক্ষমা করবেন পানিজল।আপনি ঠিক বলেছিলেন চোখের দেখা সব সময় সত্যি হয় না।আমি মারাত্মক অপরাধ করে ফেলেছি আপনাকে ভুল বুঝে।

মাহিরের কথা শুনে ইলা ক্রোধে ফেটে পড়লো।

-জুতো মেরে গরু দান করতে এসেছেন?
-মানে?
-আপনার বাড়িতে মা বোন নেই?লজ্জা করলো না একটা মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করতে যাচ্ছিলেন আপনি।এখন মাফ চাইছেন।

মা বোনের কথা শুনে চোখ ছলছল করে উঠলো মাহিরের।মাহির উঠে গিয়ে ইলার মুখোমুখি দাঁড়ালো।মাহির কে দেখে ইলা মুখ ঘুরিয়ে নিল।

-আমার অনেক কিছুই নেই পানিজল।তাই তো ছুটে এসেছি আপনার কাছে।একটু তৃষ্ণা মেটাতে।
-পানি জল?কি শুরু করেছেন আপনি?
-হ্যাঁ পানি জল।একই শব্দের সমার্থক।ঠিক আপনার মতো।আপনি এক দিক দিয়ে তৃষ্ণা নিবারন করবেন,অন্যদিক দিয়ে ওষুধ লাগাবেন।আমি যে বড্ড ক্ষত বিক্ষত হয়ে আছি।

মাহির নিজের চোখের কোনের পানিটা মুছে নিল।ইলা অদ্ভুত ভাবে লক্ষ্য করছে মাহির কে।সে তো বিশ্বাস করতে পারছে না এই লোকটাই কি একটু আগে তার সাথে এমন কাজ করেছিল।মাহিরের মায়াবী মুখটা দেখে কেন যেন ইলা চুপ হয়ে গেল।মুখের কথা মনে থেকে গেল,মুখ আর ফুটলো না।

-আমাকে ক্ষমা করবেন পানিজল।খুব খারাপ কাজ করে ফেলেছি আপনার সাথে।চিন্তা করবেন না আপনাকে নিয়ে শুধু আমার শুকানো পুকুরটাতে ঢেলে দেব।আপনি আর কাউকে পরিপূর্ণ করতে পারবেন না।

মাহির কথা গুলো শেষ করে বেরিয়ে গেল।ইলা এখনো নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।

-বড্ড রহস্যময় আপনি মাহির আশহাব।এই আগুনের মতো জ্বলে উঠেন,এই মোমের মতো,গলে যান।কেন?

ইলার নিজের প্রশ্নের মাঝে ডুবে আছে।

১৩

-আম্মাজান,আপনি এখনো ঘুমান নি?
-তুমি চলে এসেছো নিবিড়?

ইসমাত বেগম জানালা থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিবিড়ের দিকে তাকালো।

-এসেছি অনেকক্ষণ।
-ওহ।খেয়েছো?
-জি।আপনি খেয়েছেন?
-খেয়েছি।
-অনেক রাত হয়েছে।
-দু টো বাজে।
-ঘুমাবেন না?
-ঘুম আসে না।
-আপনি কেন এতো অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেন আম্মাজান?
-নিবিড়।
-জি।
-কখনো মা হয়েছো?
-অসম্ভব।আমি পুরুষ তো।
-তাহলে ঘুমোতে যাও।
-একথা কেন জিজ্ঞাসা করলেন?
-আমি কেন ঘুমায়নি সেটা বুঝবে না।

ইসমাত বেগমের কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো নিবিড়ের মুখ থেকে।

-আসছি।আর রাত জাগবেন না।
-শুয়ে পড়ো যাও।

নিবিড় দরজা টা বাইরে থেকে টেনে দিয়ে চলে গেল।

-একটা ছোট্ট দোলনা।আর দোলনায় ছিল আমার রাজপুত্র।আমি কিভাবে ভুলতে পারি।আমার চোখে যে ঘুম আসে না।

হঠাৎ করেই ডুকরে কেঁদে উঠলেন ইসমাত বেগম।

-হে আল্লাহ!কেন এ তো অবলা করলে তুমি আমাকে?আমার কলিজা টাকে ফেলে এসেছি ঐ বাঘের মুখে।আমি পারলাম না নয় মাস দশ দিন গর্ভে ধারন করেও তার অধিকার ফলাতে।পিতৃব্যের পুরুষত্ব হারিয়ে দিল আমাকে।

১৪

সকাল বেলা।

বসার ঘরে বসে আছে কামরুল হোসেন।আজ বহু দিন পর নিজের শ্বশুর বাড়িতে পা রেখেছেন তিনি।কিন্তু মিলা আর আলিশাকে দেখতে নয়।

-আমি ইলাকে বিয়ে করতে চাই আম্মা।তাছাড়া আমাদের ভেতর ভালোবাসা টা তো অনেক দিনের।শুধু মিলাই যেন,,,,,,।
-পথের কাটা হলো এই তো!

শায়লা বেগমের কথায় মাথা নাড়িয়ে সায় দিল কামরুল।

চলবে———-

#রৌদ্র_কুয়াশা
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ৬

-আপনি তো তাহলে বুঝেই গেছেন শাশুড়ি মা।এবার বলুন আমাকে আর ইলাকে এভাবে আর কি দূরে রাখার মানে হয়?আর ইলা তো আলিশার খালা।আর যাই করুক বোনের মেয়ে কে তো আর ফেলবে না।আর ইলা আমার স্ত্রী হলে মিলাকে আর ফেলে রাখব না।না হয় আমার ঘরের এক কোনে রেখে দেব।

কামরুল চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বসার ঘর থেকে কথা বলছে।আর ওপাশে মিলা শুয়ে শুয়ে সব শুনছে আর কাঁদছে।

“বিধি আমি তোমার সুখের কাঙাল হতে চেয়েছিলাম,
তুমি তো আমাকে দুঃখের অভাগিনী বানিয়ে দিলে।”

মিলার বড্ড আসহায় মনে হচ্ছে নিজেকে।পাশে বসে ইলা এবার উঠে দাঁড়ালো।অনেকক্ষণ ধরে সে চুপ করে বোনের পাশে বসে ছিল।কিন্তু এখন যে আর সম্ভব না।

-আপু তুই কাঁদছিস কেন?তুই জানিস তো তোকে সব বলতাম আমি।তোর ঐ বর কখনো ভালো ছিল না।যতবার তুই এ বাড়িতে আসতি কতো ভয়ে ভয়ে থাকতে হতো আমাকে।
-তুই কি ফিডারে দুধ খাস ইলা!
-আপু!

মিলার বিস্ফারিত চোখ বজ্রের মতো বলা কথা গুলো ইলাকে চরম বিস্মিত করছে।

-হ্যাঁ তাই।এক হাতে তালি বাজে?এটা বোঝাতে চাইছিস তুই আমাকে!
-আপু আমি তোর বোন।তুই এরকম একটা কথা বলতে পারলি আমাকে!
-এখন পিরিত শুরু করেছিস না?না হলে এতোদিন পর ও কেন এখানে আসবে?বউ বাচ্চা কেমন আছে সে খেয়াল নেই।উনি শালী প্রেমের লীলা শোনাতে এসেছেন।ছিহ!হে আল্লাহ এই দিন দেখালে তুমি আমাকে!

মিলা ডুকরে কেঁদে উঠলো।ইলার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে।যার জন্য যাদের জন্য এতো কষ্ট করে সে আজ সামান্য একটা বিষয়ে একটু বিশ্বাস মিলা তাকে করতে পারল না!

-আপু আমি সত্যি বলছি।বরকে ভালোবাসিস ভালো কথা।এতোটাও অন্ধ হোস না যে চোখের সামনে খুন হতে দেখেও এটা বলিস তুই কানা।

ইলা চোখ মুছে বসার ঘরের দিকে গেল।

১৫

-আজ এক সপ্তাহ পূরণ হয়ে গেছে জান।তোমাকে আর এই নরকে থাকতে হবে না।

রিদন মাইশার কোমড় ধরে টেনে কাছে এনে মাহিরের সামনে দাঁড়িয়েই মাইশার ঠোঁটে গভীর চুম্বন করলো।মাইশা ও সাথে একটু তাল মেলালো।

মাহির চুপ চাপ দাড়িয়ে সব দেখছে।বুকের ভেতরের গর্ত টা যেন আরো গভীর হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু আজ আর মাহিরের চোখের কোনে পানির ছিটেফোঁটাও নেই।সব যে শুকিয়ে গেছে।

মাইশাকে ছেড়ে রিদন মাইশার হাত থেকে লাগেজটা নিল।

-জান তুমি সব নিয়েছো তো?
-হ্যাঁ।আমার সব জিনিস তো কবেই নিয়ে গিয়েছি বাড়ি থেকে।একদিনের জন্য যা জামা কাপড় রেখেছিলাম।
-যাই বলো আজ লাল রঙের টপসে তোমাকে প্রচন্ড আবেদনাময়ী লাগছে।
-উহ!তুমি ও না রিদ।কার সামনে যে কি বলছো?মাহিরের তো জ্বলে যাচ্ছে বোঝো না।

মাইশা রিদনের হাত ধরে গিয়ে মাহিরের সামনে গেল।

-কিছুই দিতে পারলে না বিয়ে করে।না শারীরিক ভাবে না মানসিকভাবে।তুমি কি জানো তুমি কতোটা অপদার্থ?

মাহির মাথা নিচু করে উওর দিল,

-তোমার দেন মোহরের ২৬ লাখ টাকা তোমার একাউন্টে ট্রান্সফার করে দিয়েছি।
-ওহ!তাই নাকি।আপনি আমার জানকে এতোদিন অপবিত্র করেছেন এখন এই সামান্য টাকাতে বুঝি সব ফেরত আসবে?

রিদনের কথা শুনে মাহির তাচ্ছিল্যের হাসি দিল।

-আপনার জান কবে পবিত্র ছিল এক টু বলবেন প্লিজ?
-মাহির!
-আসতে মাইশা।এখন আর গলা বাড়িয়ে কথা বলার অধিকার কোথ থেকে পাও?তুমি এখন আর আমার স্ত্রী নও।আর মি.রিদ আমি না বরং আপনার জান আমাকে অপবিত্র করেছে সেটা বলুন।
-খুব তেজ হয়েছে না।এখন আর তেজ বাড়িয়ে কি হবে?তোমার টাকার লোভে দুদিন পর পর একটার পর একটা মেয়ে ঠিক আসবে।কিন্তু তুমি যখন তাদের স্যাটিসফাই করতে পারবে না তারা যাস্ট এভাবেই আমার মতো চলে যাবে।রিদ চলো।

মাইশা রিদ কে নিয়ে মাহির কে ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে গেল।

“আমি পুরুষ,
জোর করে স্ত্রীর অধিকার চাইলে আমি ধর্ষক ,
আমার দিন শেষের ক্লান্ত শরীর তোমার মন যোগাতে না পারলে আমি ব্যর্থ প্রেমিক,
তোমার সন্তানের বাবা না হতে পারলে আমি অক্ষম অপদার্থ!
সব কি দেহের সমীকরণেই মেলানো যায়?
আমার মন কি তুমি কখনো বুঝেছো?
শুধু কি একতরফা মন আমিই বুঝে যাব?”

মাইশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে মাহির।

১৬

-আমি আপনাকে কবে ভালোবাসলাম দুলাভাই?বলতে পারেন?নিজেই তো সব সময় আমার ওপর খারাপ নজর দিতেন।আর সিরিয়াসলি আপনার মতো একটা বুড়ো চরিত্রহীন লোককে আমার মতো মেয়ে পছন্দ করবে!আপনি ভাবলেন কি করে?
-ইলা।
-একদম গলা নামিয়ে কথা বলবেন।এখনি এখান থেকে বের হন।নাহলে ঝাটা এনে পুরো রাস্তা দিয়ে আপনাকে পেটাতে পেটাতে যাব।বউ বাচ্চার খোঁজ নেই।লজ্জা করে না বোনের মতো শালিকাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে।তোর মতো লোকের মুখে জুতো মারি।

ইলা র কথা শুনে আর কোনো কথা না বলে কামরুল একপ্রকার উঠে দৌড়েই বেরিয়ে গেল।

-এটা দেখিয়ে কি প্রমান করতে চাইলি তুই খুব মহৎ?

শায়লা বেগমের কথায় আরো অবাক হলো ইলা।

-মানে?
-রাত বিরেতে কোথ থেকে আসিস তুই?তোর লজ্জা করে না এসব কাজ করে তুই আবার তোর টাকাতে আমাদের খাওয়াস।এতোই যদি তোর শখ ছিল এসবের বলতি বিয়ে দিয়ে দিতাম।তা না নষ্টা মেয়ে।
-মা কি বলছো কি তুমি ?
-মজিদ কাকা সকালে এসে সব বলেছে আমাকে।
-মা আমি নাচ করে টাকা আয় করি।অন্য কিছু না।
-চুপ কর নষ্ট মেয়ে।তোর মুখ দেখতে চাই না আমি।বেরিয়ে যা।আমার মুখে চুনাকালি মাখালি।

শায়লা বেগম ইলার হাত ধরে টেনে দরজার বাইরে এনে ঘরে গিয়ে দরজা দিয়ে দিলেন।

ইলা পাথর হয়ে দাড়িয়ে আছে।কাঁদতে ও পারছে না।

“যার জন্য করলাম চুরি,সেই বলে চোর”

চলবে————–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here