রৌদ্র_কুয়াশা,পর্ব ৭,৮,৯

0
1984

#রৌদ্র_কুয়াশা,পর্ব ৭,৮,৯
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ৭

১৭

-আম্মাজান,আম্মাজান।

বিকেল থেকে ইসমাত বেগমের ঘরের দরজা ধাক্কাচ্ছে নিবিড়।এই নিয়ে চতুর্থ বার।

-দরজা কি খুলেছেন মা?

স্ত্রী অনুর কথাতে পেছনে ফিরলো নিবিড়।ক্রুব্ধ দৃষ্টিতে সে তাকালো অনুর দিকে।অনু তো ভয়ে আরো চুপসে গেল।

-আমি কি আবার কোনো ভুল করেছি?
-তুমি কি চোখে কানা অনু?দেখতে পারছো না।আম্মাজান যদি দরজা খুলতেনই আমি কি এখানে দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে কাউয়ার মতো কা কা করতাম!
-ক্ষমা করবেন।আমার ভুল হয়ে গেছে।
-নাটক না করে দূর হও এখান থেকে।

অনু শাড়ির আচলে মুখ গুঁজে দৌড়ে চলে গেল ঘরের দিকে।ঘরে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দেয়ালে পিঠ লাগিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো ।

-আপনি ঠিক বলেছেন নিবিড়।আপনি সত্যি একটা কাউয়া।তার থেকেও অধম।আপনার মতো অধম স্বামী যেন কারোর জীবনে না আসে।আমার জীবনটাকে তছনছ করে দিয়েছেন আপনি।

ডুকরে কেঁদে উঠলো অনু।নিয়তি বড্ড খারাপ খেলা খেললো তার সাথে।

“মানুষ তো গিরগিটির মতো,
তার থেকে ও অধম,
সময় অসময় রঙ পাল্টায়।
কে বলতে পারবে
সুন্দর চামড়ার শান্ত চাহনির মানুষ টির আড়ালে রয়েছে
এক মুখোশধারী শয়তান।”

আপনমনে উদাস দৃষ্টিতে সিলিং এর ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে অনু।তবে কি এবার সত্যি সে নিজের মুক্তির পথ বেছে নেবে!

১৮

-পানিজল,আমি আপনার একাকীত্বের সঙ্গী হতে চেয়েছিলাম।কিন্তু আপনি দেখছি বড্ড স্বার্থ পর।এইটুকু সুযোগ দিতে পারলেন না আমাকে?

কথা বলতে বলে নিজের কোর্ট টা নদীর পাড়ের ভেজা মাটিতে ছুঁড়ে ফেললো মাহির।কাদা মাখা মাটিতেই নির দ্বিধায় বসে পড়লো।

ইলা এতক্ষণে তার উদাস দৃষ্টি থেকে বেরিয়ে আসলো ।মূলত মাহিরের কথাতেই তার ধ্যান ভেঙেছে।

সকালে মায়ের কথা শোনার পর সারাটা দিন এখানে বসে আছে সে।এখন দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চললো।

মাহির কে নিজের পাশে দেখে বেশ অবাক হলো ইলা ।মাহির ইলার দিকে একবার তাকালো।ইলা মাটিতে হাত রেখেছে।মাহির নিজের এক হাত ইলার হাতের ওপর রাখলো।তারপর ইলার নকল করে পা দুটো ভিজিয়ে দিল নদীর পানিতে।

ইলা চুপ চাপ শুধু মাহিরের কাজ দেখছে।কিছু বলতে পারছে না।যেখানে নিজের পরিবার আজ ঠাঁই দিল না সেখানে মাহির আজ তার পাশে।কিন্তু কিভাবে?

-পানি জল, আমিও তো আপনার মতো পা ভিজিয়েছি।বড্ড শান্তি পাচ্ছি।কষ্ট নামক রোগ ছাড়ানোর এই থেরাপি কোথ থেকে শিখলেন আপনি?

মাহির চোখ বুজে মাথাটা উঁচু করে আকাশের দিকে মুখ করে আছে।নদীর কুলে বাতাস বইছে।ইলার চুলগুলো উড়ছে।কিন্তু নিজের অবাধ্য চুলগুলো ছেড়ে ইলার নজর এখন মাহিরের দিকে।একজন পুরুষ মানুষের চুল এতো সিল্কি হয় কি করে এটাই ভেবে পারছে না সে।

-কি হলো বললেন না তো?
-আপনি এখানে?
-সঙ্গ দিতে এসেছি।
-মানে?
-সব তো হারালেন।এখনো যদি আপনাকে বুকে টেনে না নেই বড্ড বেশি অপরাধ করা হয়ে যাবে আপনার প্রতি।এমনিতেই আগে অনেক বড় অপরাধ করে ফেলেছি আপনার ওপর।
-মানে?
-যাবেন আমার সাথে?বিশ্বাস করুন সত্যি বলছি এভাবে হাত ছাড়ব না।পৃথিবীর সবাই মুখ ফিরিয়ে নিলে ও আল্লাহ যেমন তার বান্দাকে থেকে মুখ ফেরাবেন না,দুনিয়াতে আমি একমাত্র ব্যক্তি হব আপনাকে ফেলব না।
-আপনি জানলেন কি করে এতো কিছু?
-আপনি কিভাবে বুঝলেন আমি জানি?
-আপনার কথা।
-যাবেন আমার সাথে?
-কোথায়?
-একটা শুকিয়ে যাওয়া নদীকে পানি দিয়ে পূর্ণ করতে।
-মানে?
-বলেছিলাম তো আমার তৃষ্ণা মেটাতে হবে।
-বুঝেছি।একা মেয়ে পেয়েছেন বলে সুযোগ নিচ্ছেন?
-হা হা।
-হাসলেন কেন?
-একা তো আগেও পেয়েছি।তখন কি নিয়েছি?

মাহিরের কথা শুনে ইলা চুপ হয়ে গেল।

-আমি তৃষ্ণা মেটাতে চাইছি,আমার এক বুক ভরা নিশ্বাস নিতে চাওয়ার জন্য আপনাকে চাইছি আমি।
-হাতটা সরান।
-ছাড়ার জন্য ধরিনি।
-আজব!
-চলুন।
-কোথায়?
-যেখানে আরো আগে যাওয়ার ছিল।চলুন।

মাহির উঠে দাঁড়ালো।আর ইলাকেও হাত ধরে টেনে উঠালো।

-কি করছেন কি আপনি?
-চলো।
-আরে এ!

মাহির ইলাকে টানতে টানতে গাড়ির দিকে নিয়ে গেল।শুরু তে ইলার অনিচ্ছা থাকলেও এখন সে মাহিরের সাথে তাল মিলিয়ে হেটে হেঁটে গাড়ির দিকে যাচ্ছে।না যেয়ে কি করবে।সন্ধ্যা থেকে তো কম ছেলের কু প্রস্তাব পায়নি।যেতে আসতে সব একটু করে এসে যেন টোকা দিয়ে যায়।সারা রাত এখানে থাকলে হয়তো সকালেই নিউজ পেপারে তার ছবি সহ অনেক কিছু ছাপা হতে পারত।তার চেয়ে বরং মাহিরের সাথেই সে যাক।মাহির কি জঘন্য কাজ তার সাথে করবে সেটা জানা নেই।কিন্তু তার যে আর যাওয়ার কোনো জায়গা ও নেই।ফোন ও বাড়িতে।নিপা কে ও ফোন করতে পারবে না।

নিজের ভাগ্যকে ওপর ওয়ালার কাছেই ছেড়ে দিল ইলা।এসব ভাবনা চিন্তা করতে করতে গাড়িতেও উঠে পড়লো।

১৯

না পেরে দরজায় ভেঙে ফেললো নিবিড়।ভেতরে ঢুকে অবাকের চরম পর্যায়ে সে।

ইসমাত বেগম নামাজের পাটিতে বসে কাঁদছেন।পাশে কোরআন শরীফ ও রাখা।

-আপনি জানেন আম্মাজান, কতো টা চিন্তায় ছিলাম আমি!

মোনাজাত শেষ করে নিবিড়ের দিকে তাকালো ইসমাত বেগম।

-আমি আমার ইবাদতের সময় কারোর আনাগনা পছন্দ করিনা।তোমাকে কি বার বার বলতে হয়?

ইসমাত বেগমের কথা শুনে মাথা নিচু করে নিবিড় উওর দিল,

-ক্ষমা করবেন।কিন্তু সেই দুপুর থেকে দরজা বন্ধ।খেতেও আসেননি।
-আমি সোমবার রোজা রাখি।তুমি কি ভুলে গেছো?
– আমার মনে ছিল না।ইফতার করেছেন?
-এক গ্লাস পানি খেয়েছি।এখন যাব খাবার খেতে।
-কেন এ তো কান্নাকাটি করেন আপনি নামাজে?
-নামাজ হলো মহান আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্যে যাওয়ার সবচেয়ে বড় মাধ্যম।যতবার নামাজে সিজদাহ করা হয় ততবার আল্লাহর মহত্ব ঘোষনা করা হয়।সিজদাহর সময় আল্লাহ তার বান্দার দোয়া সবচেয়ে বেশি কবুল করেন।আল্লাহ সিজদাহ সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন।এতো টাই পছন্দ করেন যে আল্লাহর নবীরা যখন বিপদে পড়তো তখনি তারা সিজদাহে চলে যেত।আর আল্লাহ তাদের ঠিক সঠিক পথ দেখাতেন।আর নামাজ এর অন্যতম একটি অর্থ সিজদাহ।আমি নামাজ পড়ি প্রথমত আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য,পরকালের কঠোর শাস্তি থেকে নিজেকে বাঁচনোর জন্য,আর দুনিয়াতে আমার কষ্ট গুলো আমার চাওয়া গুলো তাকে বলার জন্য।
-সব সময় তো শুধু মাহিরের জন্য কান্না করেন।সে তো বড় হয়েছে এখন ।সে কি পারেনা তার মায়ের কাছে আসতে?
-তোমাকে আগেও বলেছি এখনো বলছি।মাহির কে টানবে না।ও জানে না আমি কোথায়।আমি জানি একদিন ঠিক আল্লাহ ওকে আমার কাছে নিয়ে আসবে।যাও এখন।আর শোনো।
-বলুন।
-অনু তোমার স্ত্রী।পুরুষ হয়েছো বলে স্বামী হয়েছো বলে এটা ভেবো না আল্লাহ তোমাকে ছেড়ে দেবেন।নিজের স্ত্রীর ব্যাপারে এখনো সচেতন হও।

নিবিড় আর কিছু না বলে দাত কিড়মিড় করতে করতে বাইরে গেল।

-মাহির!মাহির!কৈ আমার জন্য তো কখনো চোখের পানি ফেলেন না।পড়ে আছেন ঐ এক ছেলেকে নিয়ে।আমাকে তো নিজের ছেলেই ভাবেন না।আর অনু,,,,,মেরেই ফেলব আজ ওকে।

চলবে———–

#রৌদ্র_কুয়াশা
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ৮

২০

পিচ ঢালা রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলছে।মাহির অনেক দূরে এসেছে।পথিমধ্যে হালকা বৃষ্টির সম্মুখীন ও হয়েছিল তারা।

বৃষ্টির পানিতে রাস্তার পিচ গুলো ভেজা ভেজা হয়ে গেছে।অন্ধকারে রাস্তার পিচ গুলো পুরো কালো দেখাচ্ছে।তার ওপর বৃষ্টির পানি।আর রাস্তায় একের পর এক গাড়ি যাচ্ছে আসছে আর গাড়িগুলোর জ্বলন্ত ছোটো লাইটগুলোর আলো রাস্তার ওপর বিচ্ছুরণ হচ্ছে।মূহুর্তে যেই ব্লাক ডায়মন্ডের মতো চকচক করে উঠছে রাস্তাটা।

বন্ধ গ্লাসের এপাশে বসে ভেজা চোখে রাস্তার এই পিচের দৃশ্যটা বেশ মনোরম লাগছে ইলার।আচ্ছা তার জীবনটা যদি এমন হতো।ব্লাক ডায়মন্ডের মতো।অন্ধকারের মাঝেও কোথাও থেকে হুট করে আলো উড়ে এসে জুড়ে বসতো।আর সেও চকচক করত,নিভে যেত তার দুঃখের অগ্নি,সুখের পরশ টা একটু হাতছানি দিত তার মাঝে।আপাতত নিজের জীবনটাকে একটা ঔজ্জ্বল্য হীন ব্লাক ডায়মন্ড (কালো হীরা) এর মতো মনে হচ্ছে ইলার।আদৌ ডায়মন্ড বললে ভুল হবে।কথায় আছে না খাটি হীরে রেখে কাচ ধরেছো।নিজেকে ঠিক সেই রকম একটা টুকরো কাচ ভাবছে ইলা।

-পানিজল,চোখের পানি অতি মূল্যবান।এই পানি সবার জন্য ঝড়াতে নেই।

ড্রাইভিং এর মাঝে আড়চোখে মাহির ইলাকে পর্যবেক্ষণ করছে। মাহিরের কথা শুনে ইলা মাহিরের দিকে মুখ ঘুরালো।

-তাহলে কার জন্য ঝড়াব বলতে পারেন?
-কার জন্য ঝড়াবেন সেটা না হয় আপনি নিজেই ঠিক করবেন।কিন্তু কার জন্য ঝড়াবেন না সেটা বলতে পারি।
-তাহলে সেটাই বলুন।
-যারা আপনার টুকরো টুকরো অনুভূতি গুলোর মূল্য দিতে জানে না তাদের জন্য নয়।যারা নিজের স্বার্থ দেখতে দেখতে এতো টাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে এই ব্যস্ত শহরের ছোট্ট ওলি গোলির মধ্যে ও আপনার নিঃস্বার্থতা তাকে খুঁজে পায়নি।

মাহিরের কথা শুনে বড্ড বেশি কান্না পাচ্ছে ইলার।কি দোষ ছিল তার?নেচে নেচে আয় করা!কিন্তু সবাই তো শুধু তার কাজটাকেই দেখলো কিন্তু কেন কাজটা করে সেটাকে তো কেউ দেখতে গেল না।

-কি ভাবছেন পানি জল?
-কিছু না।
-পানিজল আপনি কি একটা কথা জানেন?
-কি?
-যতোটা বেশি আপনি চোখের পানি খরচ করবেন ততো বেশি সামনের পথগুলো ঝাপসা হয়ে যাবে।
-তবে কি মন খুলে কাদার অধিকার টাও আমার নেই!
-অবশ্য ই আছে।
-তাহলে?
-কাদবেন শুধু আসল জায়গায়।যেখানে চোখের পানির এক ফোঁটাও বৃথা যায় না,যেখানে কেউ আপনার মূল্য দিতে জানে,যেখানে দুনিয়ার সবাই আপনার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে ও তিনি নেবেন না।
-কোথায় সে জায়গা?
-মহান আল্লাহর দরবার।নামাজ পড়েন?

মাহিরের কথা শুনে ইলা চুপ হয়ে গেল।লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে তার।এটা তো হওয়ার ই কথা।নিজে নিজের ধর্ম কে জানলাম না কর্ম কে সঠিক ভাবে করলাম না এটা লজ্জা পাওয়ার ই ব্যাপার।

-জানেন না তাই তো?
-হুম।
-শিখিয়ে দেব।
-আপনি এতো কথা শোনাচ্ছেন তাহলে আপনি মদ কিভাবে খান?
-ওটা মদ ছিল না।আপেল জুস।দেখতে অনেকটা তেমন ই লাগে।
-বারে কেন আসেন?
-আপনার নাচ করাটা মুখ্য নাকি কেন নাচ করেন সেটা মুখ্য?
-অবশ্যই কেন করি সেটা।না হলে আমি কখনোই এরকম নেচে টাকা রোজগারের কথা ভাবিনি।
-আমার বেলাতেও তাই।
-কিভাবে?
-আমি বারে একটা বিশেষ কাজে যাই।
-কি কাজ?
-বলব হয়তো একদিন।
-আর আমার সাথে যেই বাজে কাজ টা করেছিলেন সেটা?
-সত্যি পাপ করেছিলাম।অনেক বড় পাপ।পাপের প্রায়শ্চিত্ত ও করব।
-কিভাবে?
-অনেক বেশি বলে ফেলছি।গাড়ি চালানোর সময় এতো কথা বলতে নেই।আসতে আসতে সব উত্তর পাবেন।এখন বরং আমাকে গাড়ি চালানো তেই মন দিতে দিন।

মাহিরের কথার প্রেক্ষিতে ইলা আর কিছু বললো না।সত্যি বলতে বলার প্রয়োজন ই সে মনে করল না ।

২১

অনুর চুলের মুঠি ধরে অনুর গালে কয়েক থাপ্পড় দিল নিবিড়।অনুর আরো শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।

-শয়তান, শু ”'”” এর বাচ্চা, কুত্তার বাচ্চা গলায় দড়ি দেওয়ার খুব সখ হয়েছে না তোর তাই না।
-আআআ আ,,,,ছেড়ে দিন।আমার বড্ড লাগছে।

অনু কাশতে শুরু করলো আরো।

-এখন বড্ড লাগছে।একটু আগে যে ফ্যানের ঝুলে মরতে গিছিলি তখন বুঝি লাগত না তাই না।কি ভেবেছিস তুই মরে আমার ঘাড়ে দোষ দিয়ে আমাকে জেলে পাঠাবি।আর কুত্তী তোর নাটক সব বুঝি আমি।দরজার ছিটকিনি না লাগিয়ে উনি মরতে যাচ্ছে।এই করে আমার মন পাবি তাই ভেবেছিস তুই?
-আমি এসব কিছু ভাবিনি।ছাড়ুন না।
-তোকে মেরেই ফেলব আজ।

চেচামেচি শুনে ঘর থেকে ডাকতে ডাকতে ছুটে এলেন ইসমাত বেগম। ইসমাত বেগমের আসার শব্দ শুনে নিবিড় অনুকে কোলে তুলে বিছানায় বসিয়ে নিজে দূরে গিয়ে দাড়ালো।

-কি হয়েছে বৌমা?
-মা।

ইসমাত বেগমকে দেখে তার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো অনু।পৃথিবীতে মায়ের বুক যে সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়।হোক সে শ্বাশুড়ি তবু তো সে মা।

-কি হয়েছে সোনা?
-আম্মাজান জানেন ও গলায় ফাঁস দিতে গেছিল!
-কিহ!

অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছেছেন ইসমাত বেগম।

-অনু এটা কি সত্যি!
-ও কি উওর দেবে।এই দেখুন এই যে শাড়ি ফ্যানে ঝুলিয়ে ছিল।

নিবিড় শাড়িটা নিয়ে ইসমাত বেগমের হাতে দিলেন।ইসমাত বেগম অনুকে ছেড়ে শাড়িটা হাতে নিলেন।

-নিবিড় দিয়াশলাই নিয়ে এসো?
-কেন?
-নিয়ে এসো।

নিবিড় ওয়ারড্রবের ওপর থেকে দিয়াশলাই টা নিয়ে আসলো।প্রতিদিন রাত হলে সিগারেটে দুই টান তার দিতে হয়।এটা তো তার নিত্য সঙ্গী।

নিবিড়ের হাত থেকে দিয়াশলাই নিয়ে সেটা ধরিয়ে শাড়ির আঁচলের কিছু অংশ পুড়িয়ে দিলেন ইসমাত বেগম।

-এ আপনি কি করলেন আম্মাজান?
-আত্মহত্যা মারাত্মক কবিরা গুনাহ।একবার এর চেষ্টা করতে গেলে তুমি যদি তাতে ব্যর্থ হও তাতে শয়তান তোমাকে বার বার কুমন্ত্রণা দেবে।মুরুব্বি দের কাছে শুনতাম গলায় দড়ি দিতে গেলে মানুষ যদি না মরে তবে ঐ দড়ি নাকি তাকে ডাকে।এজন্য পুড়িয়ে দিতে হয়।কথাটি সত্য কি না জানিনা।মুরুব্বি দের মুখে শুনেছি।তাই করলাম।
-ওহ।
-আমি তোমার থেকে এটা আশা করিনি অনু।যথেষ্ট বুদ্ধিমতী মেয়ে তুমি।এমন কাজ করো না যেখানে ইহকালে র সামান্য কষ্ট তোমার পরকালের অনন্তকালীন কষ্ট হয়ে দাড়ায়।

অনু শুধু মাথা নাড়লো।ইসমাত বেগম শাড়ি টা হাতে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।

দু ঘন্টা যাবত বিছানায় এক ধ্যানে বসে আছে অনু।ঘরের কোনে দাঁড়িয়ে নিবিড় সিগারেট টানছে।মাঝে মাঝে অনুর কাছে এসে অনুর মুখে ধোয়া উড়াচ্ছে।অনুর কাশিটা আরো বেড়ে যাচ্ছে।অনু সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারে না সেটা বেশ ভালোই জানে নিবিড়।

-এই লোকটা কখনো মায়ের পেটের ছেলে হতে পারে না।আমি বিশ্বাস করি না।মায়ের কোনো গুন এর মধ্যে নেই।হিংসা হিংস্রতা ছাড়া কিছু দেখি না এর চোখে।মা নিশ্চয়ই কিছু লুকিয়ে ছেন আমার থেকে।

অনু চুপচাপ ভেবে যাচ্ছে।এর মধ্যে নিবিড় অনুর একদম মুখোমুখি হাজির।

-কি ভাবছো সুইটহারট?

সুইটহারট কথা শুনে অনু ভেজা চোখে নিবিড়ের দিকে তাকালো।তার বোঝা হয়ে গেছে নিবিড় কি চাইছে।শুধু এই সময় টাতেই তো নিবিড় এর থেকে অবহেলা কম অন্য কিছু বেশি পায় সে।

অতঃপর আরো একটা রাত কাটলো অনুর স্বামী নামক এক পশুর দেওয়া যন্ত্রণা তে।

চলবে————-

#রৌদ্র_কুয়াশা

Suvhan Årag(ছদ্মনাম)

পর্ব ৯

২২

-মা ইলা এখনো এলো না যে?

বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে মিলা।পাশে শায়লা বেগম বসা।

-জাহান্নামে যাক ও।ওর কথা কেন তুলছিস?

-সেই সকালে যে তুমি বের করে দিলে এখন ও অবধি আসার নাম নেই।কোথায় আছে?

-বললাম না তোকে তুই চুপ কর।দেখ গিয়ে যে সব নষ্ট জায়গায় যেয়ে বেড়ায় সেখানে গেছে কি না।ছি ছি ছি।এইরকম মেয়ে আমার পেটে জন্মেছিল!ভাবতেই ঘেন্না লাগছে আমার।কেন যে ওর জন্মের সময় ওকে গলা টিপে মারলাম না।তাহলে আজ আমার এই দিন দেখতে হতো না।

-কিন্তু মা ওর যদি রাস্তায় কোনো বিপদ আপদ হয়?

-ও নিজেই তো একটা বিপদ আমার সংসারের।ওর আর কি হবে নতুন করে!কি শেয়াল কুকুরে ছিড়ে খাবে ।খাক।ওর মুখ দেখতে চাই না আমি।

-ছিহ!আমার ও তো ভাবতেই ঘেন্না লাগছে আমার স্বামীর সাথে ,,,ছিহ।

নাক সিটকে চোখ মুখ খিচে মুখ টাকে ঘুরিয়ে নিল মিলা।ইলার প্রতি ঘেন্নাটা তার যেন শরীরের শিরা উপশিরায় পৌছে গেছে।

-নানুমনি নানুমনি,মামোনি আসছে না কেন?

ছোট্ট আলিশা পুতুল হাতে দৌড়ে এসে শেফালী বেগমের সামনে দাঁড়ালো।

-নানু,তোমার মামোনি ভালো না।পচা হয়ে গেছে।ও আর আসবে না।

-কেন?আমাকে কে খাইয়ে দেবে তাহলে?তুমি মামোনিকে ডেকে আনো।ও নানু নানু।

শায়লা বেগম আলিশাকে উওর দেওয়ার কিছু আর খুজে পেলেন না।আলিশা শায়লা বেগমকে ছেড়ে মিলার মাথার কাছে গেল।

-মা মা।

-কি হয়েছে মামোনি?

-মা মামোনি এখনো আসছে না কেন?আমার খুব খিদে পেয়েছে তো।

-নানু কি বললো শুনলে না।তোমার মামোনি আর আসবে না।যাও নানু তোমাকে খাইয়ে দেবে।

-না আমি মামোনির কাছে খাব।কোথায় মামোনি?ডাকো না।

আলিশা এবার কেঁদেই দিল।মিলার আরো মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে আলিশার কারণে।

-এই কানে কথা যায় না।তোর মামোনি মরে গেছে।খেতে ইচ্ছে হলে খা।নাহলে দূর হ আমার সামনে থেকে।

মিলার বকা শুনে আলিশা ঠোট উল্টে কাঁদতে কাঁদতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

২৩

একটা বিশাল দোতালা বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামালো মাহির।

গাড়ি দাঁড় করাতেই কম বয়সী একটা ছেলে দৌড়ে আসলো গাড়ির কাছে।ছেলেটিকে দেখে মাহির দরজা খুলে বেরিয়ে এলো।

-ভাইজান।

-ইশতিয়াক।

ইশতিয়াককে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো মাহির।

-কেমন আছো ইশতি?

-এই তো আলহামদুলিল্লাহ ভাইজান।আপনি?

-আলহামদুলিল্লাহ।সবকিছু পরিষ্কার করে রেখেছো তো?

-জি ভাইজান।সব কিছু রেডি আছে।আজ কতোদিন পর আপনি এলেন এখানে।

-হ্যাঁ অনেক দিন পর ই এলাম।

-ভাবী কোথায় ভাইজান?

-গাড়ির মধ্যে বসে আছে।তুমি দাঁড়াও আমি ডাকছি।

মাহির ইশতিয়াককে ছেড়ে আবার গাড়ির দিকে গেল।

গাড়ির সামনের গ্লাস থেকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল মাহির আর ইশতিয়াককে।দুজনের আলিঙ্গন দেখে মনে হচ্ছে কতো যুগের আত্মীয় তারা।সিটে বসে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছে ইলা।

এর মধ্যে মাহির ইলার পাশে দরজা টা খুলে দিল।শব্দ পেয়ে ইলা কিছু টা কেঁপে উঠে পাশ ঘুরে তাকালো।

মাহির তার ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে হাত টা ইলার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,

-পানিজল,এবার আসুন আপনার মহলে।আপনার মহল যে আপনার অপেক্ষা করছে।অপেক্ষা করতে করতে তারা তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েছে।এবার তাদের দায়িত্ব আপনাকে নিতে হবে।

ইলা শুধু মাহিরের দিকে তাকিয়ে তার কথা শুনছে।

-পানিজল,নামুন।

-হুম।

মাহিরের হাতটাকে উপেক্ষা করে ইলা নিজেই নেমে পড়লো।বিষয়টি প্রথমে খারাপ লাগলে ও পরে কিছু একটা ভেবে মাহির হাতটা নিজেই সরিয়ে নিল।

-আমার সাথে আসুন।

-হুম।

মাহির সামনে হাটছে।ইলা মাহিরকে অনুসরণ করছে।

-ইশতি,এই যে তোমার ভাবী।

“ভাবী” কথাটা শুনে ইলা অবাক চোখে মাহিরের দিকে তাকালো।মাহিরের সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপই নেই।তার দৃষ্টি আপাতত ইশতিয়াকের দিকে।

-আসসালামু আলাইকুম ভাবীজান।

-জি।ওয়ালাইকুম আসসালাম।

-ইলা।

-জি।

-ও ইশতিয়াক।আমার এই বাড়িটার কেয়ার টেকার।তার চেয়ে কাছের হলো আমার ছোটো ভাই।ভাইয়ের থেকে ওকে আমি কম দেখিনা।

-ওহ।

-ভাইজান ,ভাবীজান হয়তো খুব ক্লান্ত।আপনি ভাবিজানকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে যান।সব কিছু গুছিয়ে রেখেছি আমি।আমি বরং কাল সকাল আসব।

-ঠিকাছে।

-আসসালামু আলাইকুম।

-ওয়ালাইকুম আসসালাম।আল্লাহ হাফেজ।

-আল্লাহ হাফেজ।

মাহিরের থেকে বিদায় নিয়ে ইশতিয়াক বেরিয়ে গেল।

-উনি আমাকে ভাবী বললো কেন?

-পানিজল আপনি এখন আমার সাথে আছেন।কিন্তু আপনার পরিচয় টা কি?

-মানে?

-ভেতরে চলুন।সারাদিন খুব খাটুনি গেছে আপনার ওপর।আসুন।

মাহির ইলাকে রেখে বাড়ির দরজা খুললো গিয়ে।ইলা ও পিছু পিছু গেল।

বাইরে থেকে দোতালা হলেও বাড়ির ভেতর টা কোনো রাজপ্রাসাদের কম নয়।বড়লোকদের ঠাটবাট বোঝা দায়।ইলা ঘুরে ঘুরে দেখছে আর এটাই ভাবছে।

-পানিজল।

মাহিরের ডাকে ইলা পেছনে ঘুরে তাকালো।

-নদীর কিনারার কাদা আপনার জামাতে লেগে আছে।ওপরের ডান দিকের দু নম্বর ঘরটা আপনার।আপনি যান।গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন।

-কিন্তু আমি তো জামাকাপড় আনিনি।

-আলমারিতে কিছু শাড়ি রাখা আছে।শাড়ির সাথে আর যা যা লাগে সব ও আছে।আপনি বরং গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নিন।

-ঠিকাছে।

ইলা সিঁড়ির দিকে পা বাড়াতে গেলেই মাহিরের ডাকে আবার থেমে যায়।

– পানিজল।মনে রাখবেন।শুধু আমার তৃষ্ণা মেটানোর জন্যই আপনাকে এনেছি আমি।আছ থেকে প্রস্তুত থাকবেন।আজ থেকেই আপনার কাজ শুরু।

কথা গুলো বলেই মাহির নিচের দিকে একটা ঘরের দিকে চলে গেল।ইলা এখনো নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।মাহিরের কথা শুনে বুকের ভেতর টা যেন কামড় দিয়ে উঠল ইলার।

তবে কি সে নিজেই নিজের কবর খুঁড়ে ফেললো।কিন্তু কি আর করত সে।

এই শহর যে বড় নিষ্ঠুর।একটা অসহায় মেয়েকে ঠাঁই দেয়না,না বুকে টেনে নেয়।এই শহর যে শুধু খোঁজে তার অসহায়ত্ব, আর লুফে নেয় তার সুযোগটাকে।

২৪

-মাহির কোথায় মা?মাহির কে যে দেখছি না।

খাবার টেবিলে বসে আলফাজ সাহেব বার বার পাশের চেয়ারটা দেখছেন।চেয়ারটা আজ শূন্য।মাহির আজ বাড়িতে নেই।

-বাহ!আলফাজ তুই যে আজ মাহিরের খোঁজ করছিস?

-কেন?খোঁজ করতে পারিনা!খোঁজ করাটাও কি অপরাধ?

-না।অপরাধ হবে কেন?

-তাহলে?

-এতো বছর হয়ে গেল।সব সময় শুধু নিজের কথাই ভেবেছিস।ইসমাত চলে যাওয়ার পর ঐ ছোট্ট বাচ্চাটা কত একা হয়ে গেছিল।সেই খেয়াল রেখেছিস কখনো?বাবা হয়ে কখনো দুটো চকলেট এনে ওর হাতে দিয়ে বলেছিস,এটা তোমার জন্য।

-মানে টা কি?ওর পেছনে ই তো সব খরচ করি আমি?আমিতো সার্ভেন্ট দের দিয়ে ও যা যা খেতে চাইতো সব আনতে বলতাম।

-সার্ভেন্ট দের দেওয়া আর বাবার নিজ হাতে দেওয়া।দুটো কি এক!

আদীবা বেগমের কথা শুনে চুপ হয়ে গেলেন আলফাজ সাহেব।আফরিনকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

-দাড়িয়ে কি দেখছিস?দেখছিস না আমার প্লেটে তরকারি নেই।তরকারি দে।

-জি জি স্যার।

ধমক খেয়ে আফরিন কাপা কাপা হাতে তরকারি তুলে দিল আলফাজ সাহেবের প্লেটে।আলফাজ সাহেব ও রাগে গজগজ করতে করতে খাওয়াতে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

-ছেলেটাকে কখনো পাশে বসিয়ে দু গাল ভাত মেখে ও খাইয়ে দিস নি তুই।আরো কেড়ে নিয়েছিস ওর মাকে।বাপের অধিকার দেখিয়ে ওকে নিজের কাছে রাখলি।বাপের কোন কাজটা করেছিস তুই?ওর জীবনটা নিয়ে শুধু খেলেছিস।বিয়েও দিয়ে দিলি নিজের ইচ্ছে তে।টাকার লোভ এতোই তোর যে ঐ চরিত্র হীন মেয়েটাকে নিজের নিরীহ ছেলেটার গলায় ঝোলাতে তোর বিধলো না।আজ দেখ তোর জন্য না আছে ওর মা,না আছে বাপ,না আছে সংসার।

-শোনো মা।এসব সাফাই আমার সামনে গাইতে আসবে না।টাকা ছাড়া এ জগত চলে না।বুঝেছো?আর টাকা আছে বলেই দেখো আমি আবার মাহিরের বিয়ে দেব।টাকা ছাড়ালেই ওর জন্য মেয়ের অভাব হবে না।

আলফাজ সাহেব ভাতের ওপর ই পানি ঢেলে হাত ধুয়ে উঠে চলে গেলেন।আদীবা বেগম ছেলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছেন।

-তোকে আর নষ্ট করতে দেব না আমার মাহিরের জীবন।ও নিজে যেটা চায় এবার সেটাই করবে ও।

২৫

আয়নার সামনে নিজেকে ঘুরে ঘুরে দেখছে ইলা।খয়েরি রঙের শাড়ি টা তার সাথে বেশ মানিয়েছে।কিন্ত ব্লাউজটা ঠিকমতো ফিট করেনি।অনেক ঢিলা।চুলের থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে।ইলা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে নিজেকে।ব্যস্ত জীবনে অন্যের খেয়াল রাখতে রাখতে এতো টাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল সে যে নিজেকে সেজে দেখার সুযোগটা কখনো তার হয় নি।

দেখতে কি তাকে খুব বেশি খারাপ লাগছে?না তো।বান্ধবীদের কাছে মোটামুটি সুন্দরী হিসেবে পরিচিত ছিল সে।এক কথায় মায়াবিনী।

“তৃষ্ণা” শব্দটা মনে পড়তেই মুখ কালো হয়ে গেল তার।বুক চাপা কান্না আসছে।কিন্ত আজ সে নির্বাক।চাইলে ও কাঁদতে পারছে না।তাকে যে প্রস্তুত হতে হবে মাহিরের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য।আর একজন পুরুষের কাছে এই তৃষ্ণা মেটানোর মানে কি বা হতে পারে?শারীরিক চাহিদা ছাড়া।

ভাবতেই শরীর টা কেঁপে উঠলো ইলার।এর মধ্যে ই দরজা খুলে ঘরে ঢুকলো মাহির।ইলাকে চোখ বুজে থাকতে দেখেই মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো তার।

-পানি জল।

মাহিরের গলা শুনে চোখ খুলে তাকালো ইলা।আয়নার থেকে মুখ সরিয়ে মাহিরের দিকে ফিরলো সে ।ধীর পায়ে এগুতে এগুতে মাহির একদম ইলার মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো।

-আমার তৃষ্ণা মেটাতে প্রস্তুত তো আপনি?

মাহিরের কথা শুনে ইলা চোখ মুখ খিচে দাড়িয়ে আছে।হাত দিয়ে শাড়ি মুঠ করে রেখেছে।হয়তো আজ তার শেষ সম্মান টুকু ও বলি দিতে হবে তার।

কিছুক্ষণ পর।

ইলা এখনো দাঁড়িয়ে আছে।মাহিরের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ইলা চোখ খুলে তাকালো।দেখে মাহির তার বেডে বসে আছে।ছলছল চোখে ইলার দিকে তাকিয়ে আছে।

-পানিজল।জানি আপনার কষ্ট হবে।কিন্তু কি করব বলুন?জানেন সার্ভেন্ট দের হাতের রান্না খেতে খেতে আমার মুখের রুচি নষ্ট হয়ে গেছে।মা তো সে কবেই চলে গেছে।দাদীমা ও অসুস্থ।কেউ আমার জন্য একটু রান্না করে ভাত বেড়ে আমাকে খাইয়ে দেয় না।আপনি কি আমার জন্য একটু রান্না করবেন?অনেক দিন বাড়ির খাবার খাই নি।

চলবে————-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here