রৌদ্র_কুয়াশা ,৪৯ (শেষ পর্ব প্রথম খন্ড),৪৯ (শেষ পর্ব প্রথম খন্ড)

7
5419

#রৌদ্র_কুয়াশা ,৪৯ (শেষ পর্ব প্রথম খন্ড),৪৯ (শেষ পর্ব প্রথম খন্ড)
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)

মাহির এমন কিছু দেখবে সে নিজেও কল্পনা করতে পারেনি।সবকিছু কেমন ধোঁয়াশা হয়ে যাচ্ছে মাহিরের কাছে।আরিয়ান ছোট থেকেই তাঁর সবচেয়ে কাছের বন্ধু।ভাইয়ের মতোই থাকে দু জন।আজ কি তাকেও হারিয়ে ফেলবে সে?মাহিরের হাত থেকে রিপোর্ট টা পড়ে গেল।মাহির যেন পাথর হয়ে গেছে।

-জানিস মাহির সেদিন কত খুশি ছিলাম আমি।দুদিন আগে থেকে দোকানে ফুলের অর্ডার করেছিলাম।আমার পুরো গোলাপের তোড়া চাই।বিশাল বড় তোড়া।আর আমি সেটা নিয়ে আমার অনুর সামনে দাড়াব।এটাই বলব তাকে কতোটা ভালোবাসি আমি।আজ থেকে তার সব ভয় দূর করার দায়িত্ব আমার।কিন্তু সব এলোমেলো হয়ে গেলরে।অনেক দিন ধরেই শরীর ভালো যাচ্ছে না আমার।থানার মধ্যে ও কয়েকবার জ্ঞান হারিয়েছি।প্রচন্ড মাথা ব্যথা করত।বমি আসতো শুধু।ডাক্তার দেখিয়েছিলাম।আমাকে টেস্ট করাতে বলেছিলেন।কিন্তু ওনার কথা গ্রাহ্য করিনি আমি।সামান্য মাথা ব্যথাতে এতো টেস্ট কেন করব।এই তিন চার দিন যাবত বেশি খারাপ লাগে।অবশেষে টেস্ট করালাম।সেদিন রিপোর্ট দেওয়ার কথা।আমি ঠিক করেছিলাম ডাক্তারের ওখান থেকে রিপোর্ট নিয়ে ফুল নিয়ে তার পর বাসায় যাব।কিন্তু ডাক্তার যখন রিপোর্ট দিল মাহির আমি না সত্যি এই প্রথম বার জীবনকে গালি দিয়েছিলাম।কেন রে?আমার বেলাতেই কেন এমন হতে হলো।রিপোর্ট এ স্পষ্ট করে লেখা আছে তুই তো দেখলি আমার ব্রেন টিউমার।আর কনডিশন ও ভালো না।যে কোন সময় যা কিছু হয়ে যেতে পারে। আমি না দিশেহারা হয়ে গেছিলাম।ফুলের দোকানে গেলাম।এত কষ্ট করে অনুর জন্য ফুলের অর্ডার করেছি।আমার বেশি কষ্ট হচ্ছিল এটিই ভেবে যে আমি অনুর জীবনটা সাজাতে পারলাম না।না তাকে সাজানোর মতো কারোর কাছে তুলে দিয়ে গেলাম।ফুলের দোকানে যাওয়ার পথে নীলের সাথে দেখা হয় আমার।ও ওখানে কি কাজে গেছিল।প্রতিদিনের মতো ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করলো।কিন্তু নীল অনু কে দেখার পর থেকে সব সময় অনুর কথাও জিজ্ঞাসা করতো।আগে কখনো আমি ওকে এই বিষয় এ প্রশ্ন করিনি।কিন্তু সেদিন করি।অনেক জোড়াজুড়ির পর ও উওর দেয় ও অনুকে পছন্দ করে।আমি জিজ্ঞেস করি কেমন ধরনের পছন্দ।ওর কথা শুনে জানতে পারি ও অনুকে বিয়ে করতে চায়।যেহেতু এখন আমার বাড়িতে থাকে অনু তাই আমাকেই ও বলতো পরে।ও শুধু সুযোগের অপেক্ষায় ছিল।আমি ওর থেকে সব শুনি ওকেও সব বলি।ও নিজেই বলে একটা মেয়ের জীবনে এ মন দুর্ঘটনা থাকতেই পারে।আর এখানে তো অনুর দোষ না।অনুকে ও বিয়ে করতে চায়।আর তুই তো জানিস নীল আমার জন্য অনেক কিছুই করেছে।ও আমাকে বলেই ফেলে সব কিছুর জন্য ওর অনুকে স্ত্রী হিসেবে চায়।অনেক কষ্ট হচ্ছিল আমার জানিস মাহির।কিন্তু এটা ভেবে শান্তি পেয়েছিলাম ঠিক যে জায়গা থেকে আমাকে সরে আসতে হলো সে জায়গাতে ই আল্লাহ সাথে সাথে অন্য কাউকে পাঠিয়ে দিলেন। আমিও রাজি হয়ে যাই।

চুপ হয়ে গেল আরিয়ান।চোখ ভিজে আসছে তার।নিজেকে আর কত শক্ত করবে সে।এপাশে দাঁড়িয়ে মাহির কিছুই বলছেনা। নিরবে দাঁড়িয়ে আছে।মাহিরের চোখ থেকেও পানি চুয়ে পড়ছে।

অনেকক্ষণ ধরে দুজনেই নিরব।নীরবতা কাটিয়ে মাহির বললো,

-এর কি কোনো চিকিৎসা নেই?পৃথিবীতে তো এতো ডাক্তার আছেন কেউ কি এর চিকিৎসা জানেন না।

চিৎকার দিয়ে বললো মাহির।আরিয়ান মাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।সে জানে মাহির কষ্ট পাচ্ছে। তাদের সম্পর্ক টা রক্তের না হলেও এটা যে আত্মার সম্পর্ক।

-টিউমার টা বেশি বড় হয়ে গেছে।অপারেশন করতে গেলে আমার বাঁচার চান্স ১০%।তার চেয়ে এভাবে যতদিন আছি তাও তো থাকতে পারব তোদের মাঝে।শেষ কটাদিন না হয় তোকে বেশি করে জ্বালিয়ে যাব।

মাহির আরিয়ানের কাছে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো আরিয়ানকে।কান্নায় ভেঙে পড়লো দুই বন্ধু।

-আমাকে ছেড়ে যাস না তুই।
-কে যেতে চায় বলতো।আমিও তো চাই বাচতে।নীল বেনারসি পড়ে আমার বউ হয়ে অনুকে দেখতে।সব শেষ হয়ে গেল মাহির।মাহির আমিও যে বাঁচতে চাই।
-কিছু শেষ হয়নি।তোর চিকিৎসা আমি করাব। যত টাকা লাগে আমি দিতে রাজি।তোকে দেশের বাইরে নিয়ে যাব আমি।তোকে আমাদের সাথে থাকতে হবে।
-মাহির।পৃথিবীর কোনো চিকিৎসা আমাকে ভালো করতে পারবে না রে।এই বিশ্বজগতের মালিক যতক্ষণ না আমাকে সুস্থ করবেন কারোর ক্ষমতা নেই আমাকে সুস্থ করার।আমি আর সুস্থ হব না রে।যে কটা দিন আছি তোদের জ্বালিয়ে যাব।আমার অনুর সাথে নীলের বিয়েটাও এই সপ্তাহ এ দেব।ও সুখি থাকবে আমি দেখে যেতে চাই।থাক না সে না আমার না হলো,তবুও তার ঠোঁটের কোনে হাসিটা ও থাকবে।
-আরিয়ান এসব বলিস না।নিয়তি কেন এমন হয় রে?তুই আমাকে ছেড়ে যাস না।
-আমিও যে ছেড়ে যেতে চাইনা মাহির। আমি আজ নিরুপায়।

নদীর পানির স্রোতের মতো দুই বন্ধুর চোখের পানির স্রোত ও মিশে এক হয়ে যাচ্ছে।অন্ধকার রাত টাও সাক্ষী হচ্ছে তাদের অদ্ভুত নিয়তির।

১২৬

সকাল নয়টা বাজে।

মাহিরের ফোন বেজেই চলেছে।কাল রাতে অনেক রাত করে বাড়ি ফিরেছিল মাহির।গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে সে।ইলা না পেরে নিজেই মাহিরের ফোন রিসিভ করলো।স্ক্রিনের ওপর নাম ভেসে আসছে আরিয়ান।

-হ্যালো।
-হ্যালো।মাহির ভাই আমি তুলি।
-আমি মাহিরের ওয়াইফ।ও তো ঘুমিয়ে আছে।
-ভাবী আমি আরিয়ানের বোন তুলি। আপনি মাহির ভাই কে নিয়ে তাড়াতাড়ি হসপিটালে আসুন।
-কেন?কি হয়েছে তুলি?
– ভাবি কাল রাত থেকে ভাইয়া বাড়ি এসে দরজা খুলেনি।সকাল থেকেও ডেকে সারা পাইনি।লোক ডেকে দরজা ভাঙতে হয়।গিয়ে দেখি ভাইয়া মেঝেতে সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে।এতো ডাকছি পানি ছিটাচ্ছি মুখে তবুও ভাইয়ার সাড়া নেই ।এখন হসপিটালে এনেছি।স্কোয়ার হাসপাতালে।
-তুমি কেদোনা তুলি।আমি মাহিরকে নিয়ে আসছি।
-আচ্ছা।

ইলা ফোন কেটে দিয়ে মাহিরের দিকে এগিয়ে গেল মাহিরকে ডাকতে।

-মাহির, মাহির উঠুন না।
-ইলা।আরেকটু ঘুমাই।প্লিজ।
-মাহির আপনার বন্ধু আরিয়ান ভাইকে হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে।ওনার বোন ফোন করে কাদছে।

ইলার কথা শুনে মাহির এক লাফে বিছানা থেকে উঠে গেলো।

-কি বলছো কি তুমি ইলা?
-হ্যা।উনি নাকি সেন্সলেস অবস্থায় ঘরে ছিলেন।এখনো অবধি জ্ঞান ফেরেনি।

মাহিরের যে ভয়টা হচ্ছিল সেটাই হলো।মাহির ডুকরে কেঁদে উঠলো।

-ও বলেছিল ও চলে যাবে।কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি কেন?
-কি বলছেন আপনি?কাঁদছেন কেন মাহির?আমাকে বলুন কি হয়েছে।
-ইলা আরিয়ানের ব্রেন টিউমার হয়েছে।
-কিহ!

১২৭

রাত বারোটা।হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে আরিয়ান।মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো।পাশে স্যালাইন চলছে।সকাল থেকে এখনো অবধি জ্ঞান ফেরেনি আরিয়ানের।

কেবিনের ভেতর মাহির,ইলা,নীল,তুলি,অনু সবাই আছে।কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে তুলি।তুলির শ্বশুর বাড়ি র লোকজন এসে বাচ্চাটাকে নিয়ে গেছে।এই অবস্থায় বাচ্চার খেয়াল রাখার মতো অবস্থা ও তার নেই।অনু টুলে বসে চুপচাপ আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।সে ও অনেক কেদেছে আজ।আরিয়ান মানুষটাকে অনেক বেশি সম্মান করে সে।এরকম একটা সুস্থ মানুষ হুট করে এভাবে অসুস্থ হয়ে যাওয়া মেনে নিতেও কষ্ট হচ্ছে অনুর।

দেখতে দেখতে আরিয়ান চোখ খুলতে লাগলো।তুলি দাড়িয়ে গেল।ছুটে গেল আরিয়ানের কাছে।ভাইয়া বলে ডাকতে লাগলো।মাহির নীলকে পাঠালো ডাক্তারকে ডাকতে।

ডাক্তার আসতেই সবাইকে কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতে বললো।মানুষ বলতে আরিয়ানের কাছে মাহির আর তুলি আছে।

-ডাক্তার।কি দেখলেন ওর অবস্থা?
-মাহির সাহেব।আপনি আমার সাথে বাইরে আসুন একটু।
-আচ্ছা চলুন।

ডাক্তারকে থামিয়ে দিল আরিয়ান।অক্সিজেন মাস্ক টা মুখ থেকে খুলে বললো,

-ডাক্তার যা বলার আমার সামনে বলুন।আমি জানি আমি বাচব না।আপনার যা বলার হয় আমার সামনেই বলুন।
-ঠিকাছে।আপনি মাস্কটা খুলবেন না।

অক্সিজেন মাস্কটা আবার পড়ে নিল আরিয়ান।

-দেখুন,আরিয়ান সাহেব।আপনার মাথার টিউমার টা অস্বাভাবিক বড় হয়ে গেছে।এখন আমরা অপারেশন করতে পারি।কিন্ত আপনার বাচার চান্স খুবই কম।আর আপনার যে কন্ডিশন অপারেশন না করলেও হয়তো আপনাকে হসপিটালেই থাকতে সবে।আপনার মস্তিষ্কে অক্সিজেন এর সার্কুলেশন ঠিক মতো হচ্ছে না।এজন্য এভাবে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলেন আপনি।এখন এই ছাড়া কিছুই বলার নেই আমাদের।আপনারা চাইলে আমরা আজই অপারেশন করব।হায়াত আল্লাহর হাতে।উনি যদি চান তো আপনি সুস্থ হয়ে ফেরত আসবেন না হলে,,,।

ডাক্তার চুপ হয়ে গেলেন।

-আপনারা যেটা ডিসিশন নেবেন আমাদের জানাবেন।

ডাক্তার উঠে চলে গেল।তুলি আরিয়ানের বুকের ওপর মাথা রেখে কান্নায় ভেঙে পড়লো।

-আরে পাগল কাঁদছিস কেন?
-ভাইয়া তুই আমাকে একবার জানালি না।এতোই পর হয়ে ছিলাম আমি।ভাইয়া তুই ছাড়া আমার কে আছে।বাবা মা ও নেই।তুই এভাবে আমাকে ছেড়ে যেতে পারিস না।

মাহির গিয়ে তুলিকে সরিয়ে নিল আরিয়ানের থেকে।আরিয়ানের চোখের কোন দিয়ে পানি বেয়ে পড়ছে।

-তুলি আরিয়ানের কষ্ট হবে আরো।এভাবে কেঁদো না।
-মাহির ভাই আমি কি করব?আমার ভাইয়া ছাড়া আমি কিভাবে বাচব।

আরিয়ান জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।আধো আধো কন্ঠে বললো,

-পাগলি তোর একটা ছোট্ট প্রিন্সেস আছে, আমার ভগ্নিপতি আছে।ওরা আছে তো।
-ভাইয়া আমার তোকে চাই।আল্লাহ কেন এমন করলো তোর সাথে। তুই তো আজ অবধি কারোর ক্ষতি করিস নি।
-আল্লাহর পরীক্ষা বোন।

মাহির গিয়ে আরিয়ানের পাশে বসলো।

-আরিয়ান।
-বল।
-আমি চাই তোর অপারেশন করাতে।
-না ভাই।এটা করিস না।
-এটাই করব আমি।কোন কথা বলবি না তুই।দেখবি অপারেশন এর পর তুই সুস্হ হয়ে যাবি।
-হ্যা।যাবোই তো।চিরকালের মতো সুস্থ হয়ে ঘুমিয়ে যাব।
-কিছু হবে না তোর।আমি একজন সাহসী পুলিশ অফিসার কে এভাবে হসপিটালের বেডে শুয়ে থাকতে দেখতে পারব না।তোকে সুস্হ হতেই হবে।
-আমি বাচব না মাহির।
-তুই না বলেছিলি এই বিশ্বজগতের মালিক চাইলে তুই সুস্হ হবি।তিনি যদি চান তুই সুস্হ হবি।
-মিথ্যা আশা দিসনা মাহির।আমি নিজে জানি কি অবস্থা আমার। ডাক্তার রা ও অনেক কিছু লুকিয়ে যায় মাহির।আমি একদিন বা দুদিন থাকি কিন্তু তোদের মাঝে বেচে থাকব।আমি অপারেশন করাব না মাহির।এই কথা বলিস না আমাকে।

আরিয়ানের হাত ধরে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছে মাহির।আরিয়ান মুখে ম্লান হাসি দিয়ে রেখেছে।

-একটা কথা শুনবি বন্ধু।
-বল।
-আমার একটা শেষ ইচ্ছা পূরণ করবি?
-থাম তুই।একটাও বাজে কথা বলবি না।
-অনু আর নীলকে একটু এখানে আনবি।ওদের দুজনের সাথে একা কথা বলতে চাই আমি।
-ঠিকাছে।
-আর শোন?
-কি?
-আমি যদি না থাকি তুলিকে দেখে রাখিস।ওর ভাই ছাড়া যে বাবার কুলে আর কেউ নেই ওর।তুই ওকে দেখে রাখিস।
-তোকে এসব ভাবতে হবে না।তুই তো আছিস।
-থাকব না রে।আছি কিন্তু থাকব না।
-আবার,,,,।
-অনুকে একটু পাঠিয়ে দে।শেষবারের মতো দেখতে চাই।

মাহির মাথা নাড়িয়ে আরিয়ানের হাত ছেড়ে উঠে দাড়ালো।তুলিকে নিয়ে বাইরে চলে গেল।বেডে শুয়ে শুয়ে আরিয়ান শুধু ঘড়ির কাটা দেখছে।সে কি পারবে এই সময় এর কাটা থেকে বাচতে।আরো কিছুদিন প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে।

দরজা খোলার শব্দে দরজার দিকে তাকালো আরিয়ান।অনু এসেছে।পেছনে নীল।দুজনকে দেখে মুচকি হেসে ইশারায় পাশে বসতে বললো আরিয়ান।নিল আরিয়ানের বেডের পাশে গিয়ে বসলো।অনু দাড়িয়ে আছে।

-নীল। কাঁদছিস কেন?
-স্যার।এটা কি হলো?এই তো দুদিন আগেও আপনার সাথে মজা করলাম আমি।আর আজ আপনি ,,,,,।স্যার কিছু হবে না আপনার।
-নীল।তুমি অনুকে বিয়ে করে ওকে সুখি রেখো।অনেক ইচ্ছে ছিল তোমাদের বিয়ে খাওয়ার।কিন্তু দেখ সেটা বোধ হয় হবে না।আজ ই হয়তো শেষ কথা তোমাদের সাথে।
-না স্যার।আপনার কিছু হবে না।আবার আমাদের মাঝে ফিরবেন আপনি।
-একটা ওয়াদা করো নীল।
-কি স্যার?
-অনু জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে।যেদিন ওর দায়িত্ব নেবে এরপর থেকে ওর চোখে আর কখনো পানি আসতে দেবে না।মনে থাকবে তো।আমি কিন্তু জানি নীল অনেক দায়িত্বশীল একজন ছেলে।যেখানেই থাকি আমি দেখব তুমি আসলেই দায়িত্বশীল কিনা?
-স্যার আপনি এভাবে বলবেন না।আপনি সুস্হ হবেন।
-নীল আমি অনুর সাথে একা একটু কথা বলতে চাই।তুমি একটু বাইরে যাবে।
-আচ্ছা।

নীল উঠে বাইরে বেরিয়ে গেল।অনু গুটিশুটি মেরে এখনো দাঁড়িয়ে আছে।

-অনু।

আরিয়ানের ডাক শুনে অনু মাথা তুলে তাকালো। আরিয়ান ইশারায় অনুকে টুল টেনে নিজের পাশে বসতে বললো।অনু আরিয়ানের কথা মতো পাশে গিয়ে বসলো।

-কেমন আছেন অনু?
-আপনাকে এভাবে দেখতে ভালো নেই আরিয়ান সাহেব।
-চোখ মুখ ফোলা কেন?এখনো দেখি পানি আছে চোখে।কেদেছেন নাকি অনেক?
-হুম।আপনার মতো একটা ভালো মানুষের সাথে কেন এমন হলো আরিয়ান সাহেব।
-কিছু হয়নি।এ আর তেমন কি।এমনিতেই তো একদিন মরে যেতে হতো।আমি না হয় একটু আগেই যাব।
-এসব বলবেন না আরিয়ান সাহেব।
-অনু একটা কথা বলব।
-বলুন।
-কিছু মনে করবেন না তো?
-আপনি বলুন।

অনু নিজের হাত দুটো এক সাথে করে কোলের ওপর রেখেছে।আরিয়ান অনুর হাতের ওপর নিজের হাত রাখলো।চমকে গেল অনু।অবাক চোখে আরিয়ানের দিকে তাকালো।আরিয়ান ফিরতিতে মুচকি হাসি দিল।অনু একবার হাতের দিকে তাকাচ্ছে একবার আরিয়ানের দিকে।আজ অবধি কখনো আরিয়ান এমন কাজ করেনি।

-অনু আজ না বললে হয়তো আর কোনদিন বলতে পারব না।বলা হবে না।ভেবেছিলাম বলব না।পরে ভাবলাম চলেই তো যাব না হয় বলেই যাই।
-কি কথা?
-অনু,
কখনো ভালবেসেছিলাম ,নিকাবের আড়ালে থাকা ঐ চোখ দুটোকে,যার বাম চোখের নিচে ছোট্ট একটা তিল আছে,কখনো ভালবেসেছিলাম সব সময় ঘোমটার আড়ালে থাকা গুটিশুটি মেরে দাড়িয়ে থাকা একটা ছোট্ট বউ পুতুলকে, তাকে কতবার নীল বেনারসি পড়ে বউ সেজে স্বপ্নে দেখেছিলাম, আমার বাসনা স্বপ্ন অবধি থেকে গেল।জানেন খুব ভালোবাসতাম কারোর মুখের হাসি, সামান্য কিছু তে যে কেউ এতো আত্মহারা হয় জানা ছিলনা, খুব ইচ্ছে করতো তাকে আমার বুকে জড়িয়ে রাখি আর বলি, কোনো ভয় পেতে দেব না আর।খুব ভালো লাগতো তার সাথে কাটানো ছোট্ট ছোট্ট মূহূর্ত গুলোকে।সে যখন আমার ছোট্ট ভাগ্নি কে কোলে নিয়ে আদর করতো,আমি তখন কল্পনা করতাম তার পেছনে আমি দাড়িয়ে আর আমাদের মাঝখানে আমাদের তিন নম্বর জন।তার ঘুম ভাঙার পর ফোলা ফোলা চেহারা টাও বড্ড ভালোবাসি।মনে হতো একটা ছোট্ট রসগোল্লা।আমি শুধু তাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনেছি।যেদিন চেয়েছিলাম স্বপ্নের কথা বলতে তার আগেই নিয়তি আমাকে তার থেকে সারা জীবনের মতো দূর করে দিল।আমি চাই সে আমার না হোক ,যেখানেই থাকি তার মুখের হাসিটা যেন দেখি।

হাতের ওপর গরম কিছু অনুভব হতেই থেমে গেল আরিয়ান।অনু কাদছে।আর তার চোখের পানি এসে আরিয়ানের হাতের ওপর পড়ছে।আরিয়ানের চোখেও পানি।আজ নিরুপায় সে।সবচেয়ে বেশি অসহায়।

-অনু,আপনাকে ভালবেসেছিলাম।

শেষ কথাটা যেন আরো কাপিয়ে তুললো অনুকে।অনু পাথর হয়ে যাচ্ছে।সে কান্না বন্ধ করতে পারছে না।আরিয়ানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল অনু।আরিয়ান হাত বাড়িয়ে ডাকতে গিয়েও থেমে গেল।

মাঝরাত।হাসপাতালে সবাই আছে।কারোর চোখে ঘুম নেই।

হঠাৎ করে নীল এসে অনু কে ডাক দিল,

-অনু।
-বলুন।
-মাহির স্যার ফোন করেছিলেন।আরিয়ান স্যার আ,,,,,,।

চলবে————

7 COMMENTS

  1. গল্প টি তো খুব সুন্দর হয়েছে শেষ পবের 2য় খন্ড তাড়াতাড়ি দিলে আর ও ভালো হয় প্লিজ প্লিজ

  2. গল্পটা খুব সুন্দর হয়েছে । কিন্তু শেষের পাটের বাকি অংশগুলো দিলে ভালো হতো

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here