লঙ্কাবতী পর্বঃ০৪এবং শেষ

0
3928

লঙ্কাবতী
পর্বঃ০৪এবং শেষ
#Arshi_Ayat

সাদের ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে।মেয়েটা প্রভার খালাতো বোন।এদিকে সাদ আর প্রভার প্রেম তো চলছেই তবে এটা ওরা দু’জন আর আদি,সাদিয়া ছাড়া কেউ জানে না।যখন পরিবারের সাথে থাকে তখন দু’জনে এমন ভাব ধরে যেনো দুজনের কেউ কাউকে চিনে না।

একটু আগে সাদ আর সাদের ভাই শান এসেছে বিয়ের শপিং দিয়ে যেতে।সাদ চোরের মতো এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছে প্রভা আছে কি না!কিন্তু না আশেপাশে প্রভা নেই।সাদ পকেট থেকে ফোনটা বের করে প্রভাকে টেক্সট করলো বাইরে আসতে।প্রভা বসে বসে মেহেদী দিচ্ছিলো।মেসেজের টোন শুনেও দেখতে পারলো না মেহেদী দেওয়ার জন্য।ম্যাসেজ দেওয়ার পরও প্রভা না আসায় সাদ ভাবলো ব্যাস্ত হয়তো সেজন্য আসে নি।তাই আর মাথা ঘামায় নি।শপিং এর ব্যাগপত্র দিয়ে বাসায় চলে এলো।কাল গায়ে হলুদ।এমনিতেই দেখা হবে।আর রাতে তো কথা হচ্ছেই।
————-
এদিকে আদি সাদিয়ার ওপর খুব রেগে আছে।কারণ আজকে আদির জন্মদিন ছিলো কিন্তু সাদিয়া একবারও উইশ করে নি।আদি চেয়েছিলো মনে করিয়ে দিবে কিন্তু সাদিয়া কথা বলার সুযোগও দেয় নি।আদির মন খারাপ তবুও কিছু জিগ্যেস করে নি।এখন রাত ১১.৫৮। আদি নিজের বেডের ওপর বসে ফোন সামনে নিয়ে অপেক্ষা করছে একটা বার সাদিয়া ফোন করে উইশ করুক।কিন্তু না ফোন করছে না।১১.৫৯ এ হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো আদি ফোন রিসিভ করে কানে দিতেই অপর পাশ থেকে সাদিয়া বলল”শুভ জন্মদিন প্রিয়।নিজের খাটের তলায় দেখো কিছু একটা রেখেছি।”

আদি কোনো কথা না বলে লাইনে থাকা অবস্থায় খাটের নিচে দেখলো একটা ছোটো গিফট বক্স।আদি বক্সটা খুলে দেখলো।একটা স্বর্ণের লকেট।লকেট টা খুলে দেখলো একপাশে আদির ছবি আরেকপাশে সাদিয়ার।আদি মুচকি হেসে বলল”এটা তো তোমার গলায় ছিলো কিন্তু আমার ছবি ছিলো না তখন।”

“হ্যাঁ,সেইজন্যই তো লকেট টা পূর্ণ করে তোমায় দিলাম।এটা সবসময় তোমার কাছে রাখবে।”
সাদিয়া আদির ছোটো বোনকে দিয়ে এই লকেট টা ওর খাটের নিচে রেখেছিলো।আদির ছোটোবোনের সাথে আবার সাদিয়ার ভালো সম্পর্ক।বয়সে একবছরের ছোটো আদির বোন।

“আচ্ছা,কিন্তু উইশ দেরি করে করলে কেনো?আমার রাগ হয়েছিলো।”

“আহারে!কিন্তু আমি চেয়েছিলাম সবার শেষে আমি উইশ করবো।”

“ও এইজন্যই আজকে এত ঢং করলে।”

“ঢং মেয়েরাই করে।আর ছেলেরা মেয়েদের ঢং সহ্য করে।আর হ্যাঁ আমার ট্রিট কই?”

“ট্রিট চাও তাই না?আচ্ছা দিবো।তবে কিছুদিন সময় লাগবে।তারপর দিবো।”

“কেনো?”

“স্পেশাল পার্সনের জন্য স্পেশাল ট্রিটতো তাই!”

“আচ্ছা তা নাহয় কিছুদিন অপেক্ষা করলামই।”
আদি হাসলো।তারপর তাদের মধ্যে প্রেমালাপ চলতে লাগলো।
————-
আগের দিন গায়ে হলুদ ছিলো আজকে বিয়ে।বরপক্ষও চলে এসেছে।সবাই বিয়ের আসরে।আর এদিকে সাদ প্রভাকে খুঁজছে।আশেপাশে না পেয়ে কল দিলো।প্রভা সাদের কল পেয়ে সাদের থেকে একটু দূরে এসে দাড়ালো।সাদ মুচকি হাসলো।বিয়ের পুরোটা সময় সাদ আর প্রভা একজন একজনের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাডছিলো।

সবশেষে বিদায়ের পালা চলে এলো।মুনের সাথে প্রভাও গেলো।আর সাদ সুযোগে প্রভাকে বলল”গিয়ে নিজের হবু শ্বশুর বাড়ি আর হবু বরের ঘরটা দেখে এসো।”

প্রভা কিছু না বলে শুধু হাসলো।
————
কিছুদিন পর আদি ওর বাবা মা নিয়ে সাদিয়ার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায় আচমকাই।সাদিয়ার চোখ গোলআলুর মতো বড় হয়ে গেছে আদিকে আর ওর পরিবারের সবাইকে দেখে।আদি ইশারায় চোখ মারলো।আর সাদিয়া ইশারায় বলল”আপনি এখানে আসছেন কেনো?”

আদি দাঁত বের করে হসে ইশারায় বোঝালো “ইয়ে তো ট্রেলার হ্যায়।আগে আগে হোতা কেয়া হ্যায় দেখো।”

সেদিনই আদি আর সাদিয়ার ঘরোয়া বিয়ে হয়ে গেলো।সাদিয়ার সব স্বপ্ন লাগছে।সাদিয়া বসে বসে গান শুনছিলো ঘরে হঠাৎ ওর মা এসে বলল শাড়ি পড়ে নিতে কারা যেনো এসেছে ওকে দেখতে।সাদিয়া আদিকে একটা ম্যাসেজ দিয়ে শাড়ি পড়ে নিলো।তারপর ওর মা এসে ওর হাতে চায়ের ট্রে দিয়ে ওদের সামনে নিয়ে গেলো।সাদিয়া মুখ তুলে তাকাতেই শক খেলো।আর এরপর থেকে শক খেয়েই যাচ্ছে।ওরা সাদিয়াকে পছন্দ করার পর প্রস্তাব রাখলো আজই যেন বিয়ে হয়।সাদিয়ার পরীক্ষার পর অনুষ্ঠান হবে।তো সেইকথা মতো আজই বিয়ে হয়ে গেলো।এখন একটা সোফায় সাদিয়া আর আদিকে একসাথে বসানো হলো।সাদিয়া ফিসফিসিয়ে বলল”এগুলো কি?”

“কি আবার!আমাদের বিয়ে।”

“এভাবে হুট করে!”

“সারপ্রাইজ দিলাম।”

“এই সারপ্রাইজটা সারাজীবন মনে থাকবে।”

তারপর আদি মুচকি একটু হেসে সবার অগোচরে একটা লকেট সাদিয়ার হাতে দিয়ে বলল”এই লকেট টা আমার ছিলো।আজ আমারটা পূর্ণ হলো।তাই তোমায় দিলাম।”

সাদিয়ার চেহারায় একটা খুশীর ঝলক খেলে গেলো।তারপর একসাথে খাওয়া দাওয়া হলো।রাত ১১ টার সময় আদি’রা বিদায় নিলো।
————–
এভাবে সময়গুলো ভালোই কাটছে ওদের।কখনো,কখনো কলেজ ছুটির পর আদি আর সাদিয়া ঘুরতে যায় আবার কখনো সাদ আর প্রভা।তবে সাদ আর প্রভার কথা এখনো কেউ জানে না।যেদিন সাদ আর প্রভা ঘুরতে যায় সেদিন আদি’রা যায় না।

এইতো আজকে সাদ আর প্রভার প্ল্যান আছে কলেজ ছুটির পর ঘুরতে যাবে।তাই প্রভার কলেজের সামনে সাদ এসে দাড়িয়ে আছে।ছুটি হবে আর দুই মিনিট পর।

কলেজ ছুটি হওয়ার পর সাদ আর আদি বেরিয়ে গেলো একসাথে।

অনেক্ক্ষণ ঘোরাঘুরির পর এবার বাসায় ফেরার পালা।কিন্তু রিকশায় উঠতে না উঠতেই জ্যাম লেগে গেলো।এদিকে বাসা থেকেও ফোন দিচ্ছে কিন্তু প্রভার ফোনে চার্জ না থাকায় ফোন বন্ধ হয়ে গেছে।তাই প্রভার মা সাদিয়া কে কল দিলো।সাদিয়া আদির সাথে কথা বলছিলো হঠাৎ প্রভার মায়ের কল পেয়ে আদির কল কেটে ওই কল টা রিসিভ করলো।প্রভার মা বলল”সাদিয়া প্রভা কোথায়?তোমাদের ছুটিতো একসাথে হয়েছিলো।”

সাদিয়া প্রভার মায়ের কথা শুনে বুঝে গেছে প্রভা এখনো ফেরে নি তাই বলল”আন্টি প্রভা তো আমাদের বাসায়।ওর আসতে একটু লেট হবে।ও নোট করছে তো তাই।”

“আচ্ছা প্রভাকে ফোন টা একটু দাও তো।”

সাদিয়া মনে মনে বলল’সর্বনাশ’।কিন্তু পরিস্থিতি সামলানোর জন্য বলল”আন্টি প্রভাতো ওয়াশরুমে।ও বের হলে আপনাকে কল করবো।”

“আচ্ছা।”

সাদিয়া কল কেটে সাদকে কল দিলো।সাদ রিসিভ করতেই সাদিয়া বলল”ভাইয়া আপনারা কই?”

“এইতো জ্যামে বসে আছি।”

“তাড়াতাড়ি প্রভাকে বাসায় দিয়ে আসেন।প্রভার মা আমাকে ফোন দিচ্ছে।”

“আচ্ছা,আচ্ছা দেখছি।”

সাদিয়া ফোন কেটে দিলো।সাদ প্রভাকে নিয়ে অনেকটা হেটে গিয়ে আবার রিকশা নিলো।তারপর কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় পৌঁছে গেলো।
প্রভা বাসায় আসতেই ওর মা বলল”তোর নোট করা শেষ?”

“হ্যাঁ মা শেষ।”

“আচ্ছা যা ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে।”

প্রভা নিজের ঘরে গিয়ে হাফ ছাড়ালো।তারপর সাদ আর সাদিয়াকে কল দিয়ে জানালো সব ঠিক আছে।

আর এভাবেই চারজনের সম্পর্ক মধুর হয়ে উঠছে।ভালো থাকুক তাদের ভালোবাসা।

সমাপ্ত

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।নতুন গল্প ১/২ পরে পাবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here