লবঙ্গ_লতিকা,পর্ব ১৭,১৮

0
1309

#লবঙ্গ_লতিকা,পর্ব ১৭,১৮
#নুজহাত_আদিবা
পর্ব ১৭

তমার এখন স্কুলে ক্লাস নেই। রমজানের ছুটি দিয়ে চলছে।ইদের পর আবার যথারীতি ক্লাস শুরু হবে।

আঙুর বালা তমাকে বলেছেন ২০ রোজার পরে আবার সাদ আসবে। কিছুদিন থাকবে এখানে। তমা অতি আগ্রহে দিন গুনছে। ইশ! কেন যে সাদ এখনও আসছে না।

তমা দুপুরে গোসল করে শাড়ি পরে বের হলো। সাধারণত বাড়িতে সেলোয়ার-কামিজ পরে তমা। কিন্তু, আজকের দিনটা একটু বেশিই স্পেশাল! সাদ আসবে!

তমা উঠোনে বসে বেশ অনেকটা সময় অপেক্ষা করলো। সাদ এখনও আসছে না কেন? একটু পরে তো আজান দিয়ে দেবে। সবাই ইফতারি করতে বসে পরবে। সাদ কখন আসবে তাহলে?

আঙুর বালা অনেকক্ষন ধরে তমাকে ডাকাডাকি করছে। তমা বাধ্য হয়ে উঠে দাঁড়ালো। এখন তাঁকে আবার কাজে হাত লাগাতে হবে। তমা লেবুর সরবত বানিয়ে টেবিলে রাখলো। তমা নিজেও রোজা রেখেছে। এখন সরবতের চিনি টেস্ট করবে কে? তমা উঁচু স্বরে রান্নদঘর থেকে নাদিয়াকে ডাক দিলো। নাদিয়া ছোট্ট একটা হিজাব পরে দৌড়ে এলো। সামনের বছর থেকে নাদিয়াও রোজা রাখবে। এখন তো নাদিয়া রোজ তিনটা রোজা রাখে। তিনবেলা খেয়ে তিনটা রোজা। হিহি! তমা একটা গ্লাসে নাদিয়াকে একটু সরবত ঢেলে দিয়ে বললো,” একটু খেয়ে দেখো তো। চিনি হয়েছে কি না।”

নাদিয়া পা উঁচু করে টেবিল থেকে গ্লাসটা নিয়ে ছোট্ট চুমুক দিলো। ঢোক গিলে বললো,” মজা!” তমা মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলো,” মিষ্টি হয়েছে? ” নাদিয়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।

তমা টেবিলে ইফতার রাখতে রাখতে বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে। সাদ যে কখন আসবে! কতদিন দেখেনি সাদকে!

আজান দিলে সবাই বিসমিল্লাহ পরে সরবত মুখে দিলো। বাইরে থেকে কারো আওয়াজ পাওয়া গেল। আঙুর বালা মেইন গেট খুলে বাপজান বাপজান বলে ছুটে গেলেন। তমা প্রথমে কিছুটা ভরকে গেলেও। পরক্ষনে নিজেকে সামলে নিয়ে ছুটে গেল। নিশ্চয়ই সাদ এসেছে।

তমা এদিক ওদিক তাকিয়ে সাদকে খুঁজলো। মহসীন খান একাই এসেছে আর কেউ আসেনি। মহসীন খান ঘরে এসে বসতেই, তমা তাঁকে ইফতারি দিয়ে বললো,” বাকিরা আসেনি? ওনারা কোথায়?”
মহসীন খান কিছু বলার আগেই আঙুর বালা পাশ থেকে বললেন,” বউ তোর শাশুড়ী আর জামাই আরো পরে আইবো। ওর জামাইয়ের পড়ালেখা আছে না? ওয় এত তাড়াতাড়ি আইবো কেমনে? ওরা আইবো সাতাইশ আটাইশ রোজায়।”

তমা অশ্রুসিক্ত নয়নে উঠোনের দিকে তাকালো। এরপর এক ছুটে ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। বিছানায় চুপটি করে শুয়ে নিরবে নিভৃতে অশ্রু বির্সজন দিলো। আর কথা নেই সাদের সঙ্গে। আসুক যেদিন ইচ্ছে সেদিন। তমা আর কথা বলবে না সাদের সঙ্গে!

সাতাশ রোজা খুব ভালো মতোই কেটে গেল। সাদের তবুও কোনো ইয়াত্তা নেই। তমার ছোট্ট হৃদয় ভেবে নিলো। সাদ এবার আর আসবে না।

একদিন কী দুদিন পরে ইদ। আটাইশ রোজা চলছে আজ। সবার অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হচ্ছে না। কবে যে ইদ আসবে। সকালে উঠে তমা কোরআন শরিফ পাঠ করেছে। রোজার মাস সুতরাং নাস্তা করার ঝামেলা নেই।

তমা শুকনো মুখে বাড়ির পেছনের পুকুর ধারে বসে আছে। সাদ আর আসবেই না এবার। আসলে আগেই আসতো৷ তমা পানিতে দু’পা ভেঙ্গে বসলো। ভালো লাগছে না কিছু।

উঠোন থেকে মানুষের আনাগোনা চিৎকার শুনলো তমা। তমা তবুও বসে রইলো। এই দুপুর বেলা অনেকেই আসেন। কেউ খয়রাত নিতে আসে। কেউ ইফতারে খাবার জন্য খাবার চাইতে আসে। এটা রোজকার ব্যাপার। তমা সেখানেই মূর্তির ন্যায় স্থির ভাবে বসে রইলো। বেশ রোদ পরেছে আজ। তমা ঘেমে একাকার। তমা এবার আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো। ঘরে গিয়ে এখন একটু বিশ্রাম নেবে।

তমা উঠে দাঁড়াতেই অনিতার গলার স্বর শুনতে পেল। বাড়ির ভেতর থেকে অনিতার গলা আওয়াজ আসছে। তমা হেসে ছুটে গেল। বেশ জোরে কারো শরীরের সাথে ধাক্কা খেয়ে আঘাত পেল তমা। কাঁধে ব্যাথা পেয়ে তমা ফিরে তাকালো। তমার চক্ষুযুগল বের হয়ে আসার উপক্রম। এটা তো সাদ! তমা মুখ গোমড়া করে ফিরিয়ে নিলো। এত দেরি করে আসলো কেন সাদ? আরেকটু আগে এলে কী হতো?

সাদ এক পা এক পা করে এগিয়ে আসছে। তমা স্থির হয়ে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলো। সাদ হঠাৎ সামনে এসে পরায় চমকে গিয়ে সাদের দিকে তাকালো। সাদ তমাকে আকূল হৃদয়ে জড়িয়ে নিলো বাহুডোরে। তমা কিছু বললো না। চুপটি করে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো।

তমা অনিতার সঙ্গে দেখা করে কুশল বিনিময় করলো। আঙুর বালা তমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বললেন,” তোর জামাই আইসে। ওরে দেখসিলি? কথাবার্তা কিছু কইসোস?”

তমা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝালো। আঙুর বালা তমা আরেকটু কাছে গিয়ে বললো,” ওরে দেইখা চুম্মা/চাটি করোস নাই তো আবার? তোর রোজা কিন্তু হালকা হইয়া যাইবো ”

তমা বিরক্তিমাখা মুখ করে আঙুর বালার দিকে তাকালো। ছি ছি! বেহা/য়া বুড়ির লাজলজ্জা কিচ্ছু নেই!

অনিতা সবার জন্য কেনাকাটা করে এনেছেন। সব রেডিমেড, বানানোর কোনো ঝামেলা নেই। আঙুর বালা আগে থেকেই জামাকাপড় কিনে বানাতে দিয়ে এসেছেন। দর্জি একটু আগে সেগুলো দিয়ে গেছে। তমার জামা নরমাল থাকলেও তমার জামার হাতা একটু টাইট। তাই তমা জামাকাপড় সব এভাবেই বানানো। তমা জামাকাপড়ের হাতা সবসময় একটু টাইটই পরে বলা চলে। আঙুর বালা তমার জামাটা একটু খুঁটিয়ে দেখলেন। নিজেই কিনে দিয়েছেন। তবুও তমার জামার হাতাটা দেখে মুগ্ধ হলেন। একেবারে হাতের সঙ্গে লেগে থাকবে কাপড়। আর জামাটা একটু ঢোলা।

আঙুর বালা দর্জিকে বাসায় ডেকে পাঠালেন। নিজের জামাটা ফেরত দিয়ে বললেন,” ওই, আমারেও এমন চিপা হাতার জামা বানাইয়া দে। হাতাডারে কাই/টা চিপা বানা। আমি এহনও জোয়ানী। আমি এমন ঢিলাঢালা হাতা দিয়া জামা পরুম না। আমারেও ওর মতো চিপা হাতার জামা কইরা দে।”

দর্জি জামা ফেরত নিয়ে গেলেন। বললেন ইদের আগের দিন দিয়ে যাবেন। বাড়িতে ইতিমধ্যে হাসাহাসি পরে গেছে আঙুর বালার করা কাজ নিয়ে। তমার দেখাদেখি এখন তিনিও চিপা হাতার জামা পরবেন। কী একটা অবস্থা!

পুতুল ঘরময় হামাগুড়ি দিয়ে বেড়াচ্ছে। নাদিয়া মেঝেতে বসে বসে খেলনাপাতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে খেলছে।

তমা বেশ কিছুক্ষন যাবত নিজের ফোনটা খুঁজে পাচ্ছে না। অবশেষে খাটের তলায় ফোনটা খুঁজে পেল। কিন্তু, খাটের তলায় ফোনটা ফেলেছে কে?

তমা নাদিয়াকে জিজ্ঞেস করলো। নাদিয়া মাথা নাড়িয়ে না বললো। যাঁর অর্থ সে জানে না কে ফেলেছে। তমা সকালে পুতুলকে খাটের ওপরে রেখে কাজ করছিল। তাই পুতুল ছাড়া এই কাজ আর
কেউ করেনি। তমা ঠোঁট টিপে হেসে পুতুলের দিকে এগিয়ে গেল। আদর করে কোলে তুলে নিলো। গাল টিপে দিয়ে বললো,” আমার ময়না পাখি কে?”

পুতুল গাল ফুলিয়ে বললো,” আমি!” তমা আবার বললো,” আমার টিয়াপাখি কে?” পুতুল হাত পা নাড়াতে নাড়াতে অস্পষ্ট গলায় বললো,” আমি!” তমা পুতুলের গালে চুমু খেয়ে বললো,” আমার হীরামন পাখি কে?” পুতুল হাত নাড়াতে নাড়াতে বললো,” আমি!”

তমা দুষ্টুমির হাসি হেসে বললো,” আমার মোবাইল খাটের নিচে ফেলেছে কে?” পুতুল স্বাভাবিক ভাবে বললো,” আমি!”

তমা এবার গাল ফুলিয়ে বললো, ” তুমি ভাবীর ফোন ফেলে দিয়েছো?” পুতুল এবার ঠোঁট ফোলালো। সে তো ইচ্ছে করে ভাবীমনির ফোন খাটের নিচে ফেলেনি। ওটা নিয়ে খেলতে খেলতে পরে গেছে।

চলবে…

#লবঙ্গ_লতিকা
#নুজহাত_আদিবা
পর্ব ১৮

ইফতারের পর অন্যান্য দিনের তুলনায় সবাই আজ বেশ উত্তেজিত। আজ চাঁদ উঠলে ইদ কাল ইদ। গ্রামের ছোট বড় সবাই উঠোনে চেয়ার পেতে বসে খালি আকাশে চাঁদ খুঁজছে।

” আকাশে চাঁদ দেখা গিয়েছে! কাল উৎযাপিত হচ্ছে পবিত্র ইদ-উল-ফিতর।” টিভিতে এই নিউজ দেখা মাত্রই সবাই একত্রে আনন্দে চিৎকার করে উঠলো। কাল তাহলে আসলেই ইদ! হুররে!

রান্নাঘরে সবাই নিজেদের কাজে ব্যস্ত। আঙুর বালার জামাও দর্জি কিছুক্ষন আগে বাড়ি এসে দিয়ে গেছে। আঙুর বালা এখন বেজায় খুশি।
কাল ইদ, সকালে ঘুম থেকে উঠে এত রান্না করা বেশ ঝামেলার। তাই সকালের জন্য সেমাই, পায়েস, পিঠা এসব বানিয়ে রাখতে হবে। সেমাইয়ে নারকেল কোড়ানো দিতে হবে। হেরা তমাকে ডেকে পাঠালো। সবাই একসঙ্গে হাতে হাতে কাজ করলে কাজ তাড়াতাড়ি শেষ হয়। তমা বেশ দক্ষতার সাথে নারকেল ভাঙলো। তারপর নারকেল কোড়ানো শেষে টেবিলের ওপরে রাখলো।

সাদ টেবিলের আশেপাশে ঘুরাঘুরি করছিল। খুব খুদা পেয়েছে যে! টেবিলের ওপরে নারকেল কোড়ানো দেখতে পেয়ে সাদের চোখ ঝলমল করে উঠলো। দ্রুত মুড়ির টিন আর চিনির কৌটা বের করলো সাদ। বড় একটা বোলে নারকোল কোড়া দিয়ে চিনি দিয়ে মুড়ি মাখিয়ে বসে পরলো। টিভির রিমোট হাতে নিয়ে মুড়ি খেতে খেতে টিভির দিকে তাকালো।

তমা পরে রান্নাঘর থেকে নারকেল কোড়ানো নিতে আসলে, টেবিল পুরো শুন্য দেখতে পেল। হেরাকে বললো,” চাচী আমি না নারকেল রেখেছিলাম ওখানে? কোথায় গেল?” হেরা পায়েস রান্না করছিল। চুলার আঁচ কমাতে কমাতে বললো,” কী জানি! দেখো তুমি কোথায় রেখেছো।”

তমা পেছনের ঘরে গিয়ে দেখলো সাদের হাতে মুড়ির বোল। তমা যা বোঝার বুঝে ফেললো। অনিতার কাছে গিয়ে বললো,” আম্মু, আমি টেবিলের ওপরে নারকেল কোড়ানো রেখেছিলাম। কত কষ্ট করে কুড়িয়ে রেখেছি নারকেলগুলো! সব খেয়ে ফেলেছে! এখন নারকেলও নেই বাসায়। কী হবে এখন?”

অনিতা সাদকে গিয়ে হালকা বকাঝকা করলো। না বলে কয়ে কোনো জিনিস নেওয়া ঠিক নয়। তমা দূরে থেকে হালকা হাসলো। ভালোই হয়েছে বকেছে সাদকে। সবকিছুতে বেশি বেশি বোঝে!

গ্রামে থাকলে সাদ সবসময় পুকুরেই গোসল করে। সকালে ঘুম থেকে সাদ আজ সবার আগে উঠেছে। ইদের দিন কেন যেন সকাল সকালই ঘুমটা ভেঙে যায়। সাদ জামাকাপড় এবং গামছা নিয়ে ঘর থেকে বের হলো। আঙুর বালা ছাড়া এত সকালে ঘুম থেকে কেউ ওঠে না। আঙুর বালার ঘরের সামনে দিয়ে আসার সময় সাদ তমার গলা শুনতে পেল। তমা জেগে আছে ভেবে সাদ দ্রুত পা চালালো। এই মেয়ের সামনে পুকুরে নামলে সে আবার সেদিনের মতো পা টেনে ধরবে পুকুরের নিচ থেকে।

পুরো বাড়ি খুব নিরব, নিস্তব্ধ। সাদ উঠোন মাড়িয়ে পুকুর পাড়ের দিকে এগোলো। পুকুরে সিঁড়িতে জামাকাপড় রেখে পুকুরে গিয়ে একটা ডুব দিলো। সাদ সাঁতার জানে না। কাউকে না জানিয়ে পানিতে নামাটা যে ঠিক হয়নি তা সাদ ভয়াবহ ভাবে উপলব্ধি করতে পারলো। পুকুরের সবচেয়ে বেশ গভীরের সিঁড়িটাতে অবস্থান করছে সাদ। গোসল গা ধুয়ে পুকুর পাড় উঠে আসার পিচ্ছিল সিঁড়িতে পা পিছলে পরলো সাদ। পা ভীষণ ভাবে মচকে গেছে। সাদের শরীর পানিতে ডুবে গেছে বেশ খানিকটা। সাদ হাত পা নাড়িয়ে ওপরে উঠে আসতে চাইলো। কিন্ত পুকুরের পানি প্রচুর ভারী আর ঘোলাটে প্রকৃতির। সাদ যত ওপরে আসতে চাচ্ছিল ভেতরে তত পানির অঁতলে ডুবে যাচ্ছিল। বাড়ির সবাই ঘুম। তাই চিৎকারেও কোনো কাজ হবে না।

তমা সবে ঘুম থেকে উঠেছে। বাড়ির পেছনের পুকুরের সামনে দাঁত মাজতে মাজতে এসে দাঁড়ালো। পুকুরের সামনে সাদের জামাকাপড় দেখে বিস্মিত হলো তমা। সাদের জামাকাপড় এখানে কিন্তু সাদ নেই। ব্যাপারটায় তমা বেশ অবাক হলো। পানির ভেতর থেকে কারো হাত পা নাড়ানোর মতো শব্দ পেল তমা। কিছু বুঝতে আর বাকি রইলো না। তমা দৌড়ে পুকুরে নামলো। দ্রুত পায়ে পুকুরে একেবারে শেষ সিঁড়িতে এসে পৌঁছালো। শেষ সিঁড়িতে খুব একটা কেউ বসে না বিধায় শেওলা জমে পিচ্ছিল হয়ে গেছে। তমা সাদের হাত ধরে ওপরে ওঠালো। সাদের নাক মুখ লাল হয়ে গেছে। পা মচকে গেছে বিধায় হাঁটতেও পারছে না। তমা আস্তে আস্তে সাদকে নিয়ে ওপরে উঠে এলো।

অনেকটা সময় পানিতে থাকার কারণে সাদের পায়ের বুড়ো আঙুল দু’টো পুরো ভাঁজ হয়ে গেছে। সাদ অনেক চেষ্টা করছে পায়ের আঙুলগুলো নাড়াচাড়া করার জন্য কিন্তু হচ্ছে না। পা আরো অবশ হয়ে আসছে। তমা সাদের পাশেই বসে আছে। তমা সাদের কান্ড দেখে সাদের পায়ের বুড়ো আঙুল দু’টো ভরে জোরে টান দিলো। সাদ আর্তনাদের স্বরে তমাকে বললো,” পাগ/ল হয়ে গেছো তমা? আমার পায়ের আঙুরগুলো ভেঙে যাবে। ছাড়ো তমা ছাড়ো! আহ!”

তমা সাদের পায়ের আঙুল দুটো জোরে মচকে দিয়ে বললো,” পাগ/ল আমি না আপনি হয়েছেন। সাঁতার জানেন না তো এই সাত-সকালে পুকুরে একা একা নেমেছিলেন কেন?”

সাদ পায়ের আঙুল চেপে ধরে বললো,” হুম, একা একা না নেমে তোমার আশায় অপেক্ষা করি আর তুমি পানির নিচ থেকে আমার পা চেপে ধরো!”

তমা জোরে জোরে হেসে বললো,” আমার ভয়ে একা একা পানিতে নামতে গিয়ে আজ মর/তে বসেছিলেন! হাহা! আপনি আসলেই বল/দ বাবাজী! একটা মেয়ের ভয়ে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ান! হাহা!”

সাদ নাক মুছতে মুছতে তমাকে বললো,” আমার পায়ের আঙুলগুলো এভাবে মচকে ধরলে কেন? ”

তমা স্থির চিত্তে বললো,” পানিতে বেশিক্ষন সময় হাত পা ডুবিয়ে রাখলে এরকম হয়। জোরে জোরে টান দিলে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়। আপনার তো মাথায় বুদ্ধির অভা/ব তাই এসব জানেন না।”

তমা এবার পুকুর পাড় থেকে উঠে দাঁড়ালো। উল্টো দিকে ঘুরে হাঁটতে শুরু করলো। সাদ পেছন থেকে তমাকে বললো,” বাড়ির কাউকে বলো না এসব। আমাকে গ্রামে নিয়ে আসবে না তাহলে।”

তমা সাদের বলা কথা শুনতে পেল। তবে পেছন ফিরে আর তাকালো না। তমা চলে যেতেই সাদ নাম মুছলো। পানি ঢুকে নাক পুরো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। শ্বাস নিতেই পারছিল না। জীবনে শিক্ষা হয়ে থাকলে সাদ আর জীবনে একা একা পুকুরে নামবে না এটা তো শিওর!

বাড়ির সবাই ঘুম থেকে উঠে পরেছে ইতিমধ্যে। হেরা, অনিতা টেবিলে বানান পদের নাস্তা সাজিয়ে রেখেছে। মহসীন, সাদের ছোট চাচা রাফসীন টেবিলে বসে আছে। সাদ নতুন পাঞ্জাবী পরে সোফায় হাত পা মেলে বসে আছে। তমা নতুন জামা পরে ঘর থেকে বের হলো। একসঙ্গে সবাই এবার টেবিলে নাস্তা করতে বসলো। মহসীন, রাফসীন দুজনেই তমাকে ইদের সালামী দিলো। সাদকেও দিলো তবে তমার সাদের থেকে একটু বেশি। সাদ তমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। সবকিছুতে তমার ঢং বেশি বেশি হুহ!

আঙুর বালা নতুন জামা গায়ে দিয়ে টেবিলে এসে বসলো। সবার সামনে তমার দিকে তাকিয়ে বললো,” আমি এখনও কত জোয়ান। আমি বলে ঢিলাঢোলা জামা পিন্দা ঘুরুম! আইসেরে!আমি বুঝি ফেশান (ফ্যাশন) চিনি না। দেখ ছে/ড়ি তোর চাইতেও আমারে কত সুন্দর লাগে। আয়নায় তোর চেহারাডা দেহিস আর আমারটা দেহিস। এহনও রাস্তা দিয়া গেলে মাইনষে আমার দিকে তাকায়া থাকে!”

মহসীন নিজের মায়ের কথা শুনে হেসে ফেললেন। বয়সের সাথে সাথে মায়ের মাথাটা যাচ্ছে একেবারে! অনিতা আঙুর বালা আর তমাকে নাস্তা বেড়ে দিলো। নিজেও খেতে আসলো। তমা স্বাভাবিক ভাবেই নিজের হাত দিয়ে খেলো। আঙুর বালা নাস্তার প্লেটে হাত দিতেই আওয়াজ করে উঠলেন। তমা চমকে উঠে আঙুর বালার দিকে তাকালো। আঙুর বালা নিজের হাত টানটান করতে করতে তমার দিকে আঙুর দিয়ে জোরে জোরে বললেন,” তোর দেহাদেহি আমি জামার হাতা চিপা দিসি। বেদ্দ/প ছে/ড়ি! আমি এহন হাত লরাইতে পারি না। জামার হাতা খালি টান খায়। তুই আমারে হিংসা করোস। এর লাইগা আমার এত সুন্দর জামাডা নষ্ট করলি। কুট/নি ছে/ড়ি! আমি এহন হাতই লরাইতে পারতাসি না! আমার এত সুন্দর ইদের নতুন জামাডা গেল রে গেল!”

আঙুর বালার কান্ড দেখে সবাই একত্রে হেসে ফেললেন। অনিতা বিভ্রান্ত দৃষ্টিতে শাশুড়ির দিকে তাকালো। নিজেকে জোয়ান প্রমান করতে গিয়ে কী এক অবস্থায় পরেছেন বেচারা! ইদের নতুন জামাটা পুরো গেল। জামার হাতা এতই টাইট হয়েছে যে হাত নাড়ানোটা পুরো অসম্ভব হয়ে গিয়েছে। তমাও বেশ কিছুক্ষন আঙুর বালার দিকে তাকিয়ে থাকলো। এরপর হেসে ফেললো! আহারে বেচারী! বেশি ফ্যাশন করতে গিয়ে ইদের জামাই বরবাদ করে ফেলেছেন!

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here