লবঙ্গ_লতিকা,পর্ব ২

0
1818

#লবঙ্গ_লতিকা,পর্ব ২
#নুজহাত_আদিবা

সাদের সামনে একটি মেয়ে বসা। সাদ বিরক্ত হয়ে বেশ কয়েকবার মেয়েটার দিকে তাকিয়েছে। তবে, মেয়েটা এখনও একবারও সাদের দিকে তাকায়নি। অনিতা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললো, “নাম কী তোমার? ” মেয়েটি নিচের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো,” তমা”

অনিতা চায়ের কাপটা নিচে রেখে বললো, “কোন ক্লাসে পড়ো যেন তুমি?” তমা আরও আড়ষ্ট হয়ে বললো,” ক্লাস নাইন”

সেদিনকার মতো কথাবার্তার সেখানেই সমাপ্তি। সাদ কিংবা তমা কেউই কারো সাথে কথা বলেনি। তমা তো একবার চোখ তুলে সাদের দিকে তাকায়ওনি।

সাদ বাড়ি ফিরে এসে বেশ বিরক্ত। মেয়েটা খুব ছোট। এত অল্প বয়সের মেয়ের সাথে সংসার কীভাবে করবে? দেখা যাবে, বিয়ের দিন রাতে মায়ের কাছে যাবো বলে মেয়েটা হেঁচকি তুলে কাঁদছে। কী একটা অবস্থা! সাদ না পারছে বলতে না পারছে সইতে। বিয়ের দিন সাধারণত মেয়েরা পালায়। সাদ এবার বিয়ের দিন বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার চিন্তা করলো। মেয়েদের মতো জামাকাপড় পরে পালিয়ে যাবে। তাহলেই কাহিনি খতম! কষ্ট করে এইসব বিয়ে সাদির ঝামেলায় অন্তত জড়াতে হবে না।

পরদিন অনিতা আর মহসিন তোমা-দের বাড়িতে আবার গেলেন। কিন্তু,সঙ্গে সাদকে নিলেন না। বিয়ের পাকাপাকি কথা সেরেই বাড়িতে ফিরলেন। আঙুর বালার শরীরের কথা চিন্তা করে বিয়ের দিনটা এই সপ্তাহেই ফেলা হয়েছে। একেবারে হুটহাট করে বিয়ে আরকি।

সাদ চুপচাপ সব ঘটনাই শুনলো। পরিস্থিতি দেখে যা মনে হচ্ছে বিয়েটা আসলেই করতে হবে। ইতিমধ্যে সাদকে নিয়ে বাড়িতে হাসাহাসি পরে গেছে। এতদিন শুনে এসেছে মেয়েদের বাল্য বিবাহ হয়। এখন সবাই দেখবে ছেলেদেরও বাল্য বিবাহ হয়। সাদ এসব চিন্তা করতে করতে বাড়ি থেকে বের হলো। হাটাহাঁটি করতে করতে বহুদূরে চলে গেল। চারিদিকে আজান দিচ্ছে। সন্ধ্যা প্রায় নেমে এসেছে। সাদ ফের বাড়ির পথের দিকে রওনা হলো। গ্রামে সন্ধ্যা হলেই সবকিছু ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছেয়ে যায়। তখন টর্চ লাইট নিয়ে বের হতে হয়।সন্ধ্যা হয়ে গেলে বাড়ি ফিরতে বেশ কষ্ট হয়ে যাবে সাদের। সাদ দ্রুত গতিতে বাড়ির দিকে অগ্রসর হলো। যাওয়ার পথে সাদ দেখতে পেল একটা মেয়েদের দলবল হাসতে হাসতে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। সবার মাঝখানের মেয়েটাকে সাদের বড্ড চেনা মনে হলো। সাদ ঘুরে তাকালো মেয়েটার দিকে। সাদ ফের তাকাতেই বুঝতে পারলো এই মেয়েটার সাথেই তাঁর বিয়ের কথা হচ্ছে। সাদ মেয়েদের দলটার দিকে এগিয়ে গেল। সবার হাতে পুকুর পার থেকে তোলা শাপলা। সাদ মেয়েদের দিকে এগিয়ে গিয়ে মাঝখানের মেয়েটাকে বললো,” এই তুমি আমার সাথে একটু আসো তো।” মেয়েটা মাথা নিচু করে ঘাড় এদিক ওদিক নাড়ালো। যাঁর অর্থ না। সাদ ধমকের স্বরে বললো,” আসতে বলেছি তোমাকে!” মেয়েটা ভীতগ্রস্ত দৃষ্টিতে প্রথমে সাদের দিকে তাকালো। এরপর ধীর পায়ে এগিয়ে গেল সাদের দিকে। সাদ মেয়েটাকে নিজের দিকে আসতে দেখে বাকি মেয়েদের উদ্দেশ্যে বললো,” তোমরা এবার যাও” মেয়েরা প্রথমে না যেতে চাইলেও সাদের চোখ রাঙানো দেখে ভয়ে দৌড় দিলো। মেয়েটি সাদের পাশে এসে দাঁড়ালো। সাদ মেয়েটির সামনে দাঁড়িয়ে বললো,”তোমার নাম তমা না?” মেয়েটি মাথা ঝাঁকালো। যাঁর অর্থ দাঁড়ায় হ্যাঁ। সাদ বিক্ষিপ্ত কন্ঠে বললো, “তুমি আবার আমার সঙ্গে কী সংসার করবে? কী ছোট বাচ্চাদের মতো দেখতে তুমি। দেখে মনে হচ্ছে ক্লাস টুতে পড়ো। আসলেই ক্লাস নাইনে পড়ো তুমি? না কি এতেও কোনো ঘাপলা আছে?”

তমা রোশারক্ত দৃষ্টিতে সাদের দিকে তাকালো। সাদ বুঝতে পেরে তমাকে আবার বললো,” তুমি একটু সরে দাঁড়াও তো। তোমার মুখ থেকে এখনও দুধের গন্ধ বেরোচ্ছে। ”

তমা রাগান্বিত হয়ে সাদের দিকে তাকালো। তেড়ে এসে সাদকে বললো,” আমাকে কী বাচ্চা মনে হয় আপনি? আমি কিন্তু যথেষ্ট বড়! ক্লাস নাইনে পড়ি!”

সাদ তমার কথায় হালকা হাসলো।তমাকে আরও রাগানোর জন্য বললো,” তুমি আমার হাঁটুর বয়সী! তোমার থেকে আমি কতবড় জানো? নাক টিপলে এখনও দুধ বের হবে। তুমি আবার করবে সংসার! তোমার পুতুল পুতুল খেলা দেখে বিয়ে করার শখ হয়েছে না কি? আমার মতো নিষ্পাপ নিরীহ একটা মানুষের জীবন নিয়ে খেলছো।”

তমা সাদের দিকে আঙুল উঁচিয়ে তেড়ে এলো। আরেকটু হলে সাদ পরেই যেতো। তমা আঙুল নাড়িয়ে নাড়িয়ে বললো,”আপনি কিন্তু অপমান করছেন আমাকে!”

সাদ নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললো, “ওহ, তোমার বোধ শক্তিও আছে? আমি জানতাম না আসলে। এত পিচ্চি মানুষদেরও বোধ শক্তি থাকে এটা আসলে প্রথম শুনলাম।”

তমা সাদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আবার আঙুল নাড়িয়ে নাড়িয়ে বললো,” আপনি কিন্তু এবার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন! আমি আপনার মায়ের কাছে গিয়ে নালিশ করবো কিন্তু! ”

সাদ মায়ের কথা শুনতেই থেমে গেলে। হঠাৎ করে তমার আঙুলে একটা কামড় বসিয়ে দিলো। তমা ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠলো। সাদ থুতনিতে হাত বোলাতে বোলাতে বললো,” আমার সাথে এভাবে আঙুল নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলবে না তমা। আমি কিন্তু তোমার অনেক বড়।”

সাদ এটুকু বলেই ফের উল্টো দিকে হাঁটা ধরলো। তমা পেছন থেকে সাদের চলে যাওয়া দেখলো। হাতের আঙুলটা ধরেই দাঁড়িয়ে রইলো। সাদ তোমার অবস্থান বোঝার জন্য পেছন ফিরে তাকালো। তমা সাদকে পেছন ফিরে তাকাতে দেখে দূর থেকেই ইশারা করে বললো, “কু/ত্তা!”

সাদ চোখ রাঙিয়ে তমার দিকে তাকালো। তমা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে সাদকে জিহ্বা বের করে ভেঙিয়ে দৌড় দিলো। সাদ তমাকে ধরার জন্য তমার পিছু পিছু বেশ ক্ষানিকক্ষন ছুটলো। কিন্তু শেষে তমাকে না ধরতে পেরে ক্লান্ত হয়ে বাড়ির পথের দিকে পা বাড়ালো।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here