লবঙ্গ_লতিকা,পর্ব ২২

0
1824

#লবঙ্গ_লতিকা,পর্ব ২২
#নুজহাত_আদিবা

তমা বিনয়ের স্বরে লোকটাকে বললো,”মাফ করবেন। বাসায় বুড়ো মানুষ আছে তো। তাই বুঝতে পারেনি। ইচ্ছে করে করেনি আসলে। আর হবে না কখনো। আমি নিষেধ করে নিবো। আপনি একটু কষ্ট করে মাথাটা পরিস্কার করে নেবেন।”

লোকটা রাগে খিটমিট করতে করতে চলে গেল। তমা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। অচেনা অজানা শহর। তারমধ্যে আবার এই নালিশ!

তমা আঙুর বালা আর অনিতার সামনে গিয়ে বসলো। মুখটা বেশ শুকনো। অনিতা আদুরে ভঙ্গিতে তমাকে বললেন,” কী হয়েছে? মুখ এত খই ভাজার মতো শুকনো কেন? কে এসেছিল তখন?”

তমা লম্বা শ্বাস নিয়ে অনিতাকে সবটা খুলে বললো। অনিতার তো হেসে লুটোপুটি খাওয়ার মতো অবস্থা। আঙুর বালা আমতা আমতা করে বললো,” হাসোস ক্যা তোমরা? বুইড়া হইয়া গেসি ভুল তো হইতে পারে। এইডা লইয়া তোমরা এমনে ভেটকাইবা?”

শাশুড়ির মুখ থেকে এহেন কথা শুনে অনিতা চুপ হয়ে গেলেন। পানের পিক ফেলার জন্য একটা ছোট্ট স্টিলের কৌটা খুঁজে দিলেন। যে-ই কয়দিন আঙুর বালা এখানে থাকবে। এই পিকদানিতেই পানের পিক ফেলবে।

তমা মহা সংকোচে পরেছে। সংকোচ এড়িয়ে কাউকে কিছু বলতেও পারছে না। এখানে আসার পর থেকে পুরো বাড়িতে বেশ কয়েকবার ঘুরপাক খেয়েছে। কিন্তু একবারও সাদকে দেখলো না যে? আচ্ছা, সাদ কোথায়? সাদ কী জানে না? আজ যে তমা আসছে? সাদের সাথে ২ বছরের বেশি সময় ধরে দেখা হয় না তমার। আগে ঘনঘন গ্রামে আসতো। কিন্তু, এখন না কি চাকরি বাকরির চাপে আসতে পারে না। অনিতা আর মহসীন কিছুদিন পরপরই গ্রামে যেতো। তখনই তাদের মুখ থেকেই তমা এসব শুনেছে। কিন্তু, সাদ কী জানে? তমা যে তাঁর অপেক্ষা করছে? নাহ! সাদ জানবে কী করে? সাদের সাথে তো কথাও হয় না বেশি। সাদের সেক্ষেত্রে জানার কথাও না।

অনিতা গরম গরম পাকোঁড়া ভাজছে। তমাও টুকটাক সাহায্য করছে। গরমের মধ্যে রান্নাঘরের কাজ যত জলদি শেষ করা যায় তত ভালো। আঙুর বালা পান চিবুতে চিবুতে অনিতাকে বললেন,” হুনো, একটা সময় আহেই। যহন পোলাপানের বুঝ জ্ঞান আহে। তমারে দেখসো তুমি? আগের তমারে দেহো আর এহনকার তমারে দেহো। আগে কী লাফালাফি, ঝাঁপাঝাপি করতো। আর এহন দেখসো? পানি লরে তাও অয় লরে না। আমি ওর দুষ্টামির লাইগা ওরে কোনোদিন কিছু কইনাই। আমি জানি পোলাপান মানুষ এমনই। এত জ্ঞান থাকলে কী আর দুষ্টামী, ফাইজ/লামি করতো? আর অয় তো তোমগো সাদের মতো শহরে বড় হয় নাই। গ্রামের পোলাপান কেমন হয় বুঝো না তুমি?”

অনিতা শাশুড়ির কথার প্রত্ত্যুতরে টু শব্দও করলো না। মুরব্বি মানুষ বাড়িতে থাকলে অনেক কথাই বলবে। অনেক উপদেশই দেবে। এসব নিয়ে মনে কষ্ট পাওয়াটা এক ধরনের বোকামী।

পাকোড়া ভাজা শেষ করে তমা সব টেবিলে তুলে রাখলো। অনিতা পাশ থেকে বললেন,” সাদের জন্য অল্প কয়েকটা আলাদা করে রেখে দাও। একটু পরে অফিস থেকে আসবে ছেলেটা।”

তমা অগোচরে মুচকি হাসলো। সে বেমালুম ভুলে গিয়েছিল সাদের যে এখন অফিস আছে। কী ভুলোমনা হয়ে যাচ্ছে দিন দিন তমা!

সোফায় পা উঠিয়ে বসে একটু পরে পরে ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকাচ্ছে তমা। সাতটা পয়তাল্লিশ বেজে গেল। সাদ আসছে না কেন?

তমা মাথা নিচু করে পা দুলাচ্ছে। আঙুর বালা পাশে বসে বসে সুপারি কাটছে। অনিতা হঠাৎ ঘরে ঢুকে আঙুর বালা আর তমাকে বললো,” আম্মা, খেতে চলুন। আপনার নাতি আপনার ছেলে সবাই বাড়ি ফিরেছে। আমি টেবিলে খাবার বাড়ছি। আপনারা বসে পড়ুন। এই তমা! তুমিও এসো।!”

তমা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পরলো। এতক্ষন সাদের অপেক্ষায় ছিল সে। তাহলে এখন সাদের সামনে যেতে এত আড়ষ্টতা গ্রাস করছে কেন তাঁকে?

আঙুর বালা তমাকে একটা চিমটি কেটে বললো,” এই উঠোস না ক্যা? খাইতে লো!”

তমা আঙুর বালার সঙ্গে খাবার টেবিলে গিয়ে বসলো। সাদ তমাকে দেখে ভ্রুগুলো কিছুটা উঁচু করে বললো,” আরে থমাস আলভা এডিসন যে! কী খবর? গবেষণা কেমন চলছে?”

তমা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করলো এবারে। কথা নেই বার্তা নেই। পুরনো কথা নিয়ে এখন খোঁচাখুচি করছে! অনিতা পাশ থেকে হেসে সাদকে বললো,” উফ সাদ! মেয়েটাকে শান্তি দেবে না না কি? কবে কী বলতে গিয়ে কী বলে ফেলেছে। এটা নিয়ে এখনও এত খোঁচা দিচ্ছো।”

সাদ দুষ্টুমির ভঙ্গিতে একবার তমার দিকে তাকিয়ে আবার খাবারের প্লেটের দিকে মনোযোগ দিলো। তমা আবার স্মৃতিতে ফিরে গেল।

তখন তমা ক্লাস টেনে পড়ছে। পরিবারের সবার সামনে সাদ তমাকে জিজ্ঞেস করেছিল,”তুমি পড়াশোনা করে কী হতে চাও তমা?” তমা হচ্ছে বিশ্ব ফাঁকিবাজ সমিতির সদস্য। পড়াশোনারই ইচ্ছে নেই আবার বড় হওয়া। নিজেকে সবার সামনে বড় ভাবে উপস্থাপন করার জন্য সে মুহূর্তে তমা বলেছিল সে বড় হয়ে বিজ্ঞানী হতে চায়। কিন্তু মজার বিষয় তমা ব্যবসায়ী শিক্ষা বিভাগের ছাত্রী। তখন এটা নিয়ে পরিবারের সকলে হাসাহাসি করেছিল। তমা বেখেয়ালি মনে কথাটা বলেছিল। নিজের ভুল বুঝতে পেরে জিহ্বা কামড়ে ধরেছিল সে। কিন্তু আর কী করার? সাদ আজ অবধি সে কথাটা ভোলেনি। তমাকে দেখা মাত্রই থমাস বলে ডেকে তমাকে বিরক্ত করে।

পুরনো কথা মনে হতেই তমা মিটমিট করে হেসে ফেললো। দুরন্ত শৈশব যেন বারবার হাত ছানিয়ে ডেকে ওঠে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here