#লবঙ্গ_লতিকা,পর্ব ২৩
#নুজহাত_আদিবা
খাওয়া দাওয়া শেষ করে বড় রুমে গিয়ে বসেছে সবাই। সাদ নিজের ঘরে চলে গিয়েছে। অনিতা,মহসীন আর আঙুর বালা কী নিয়ে যেন আলাপ আলোচনা করছে। তমা গিয়েছিল একবার তবে, ঢোকার সাথে সাথেই অনিতা বলে দিয়েছে,” একটা দরকারী বিষয়ে কথা বলছি আমরা। তুমি অন্য ঘরে গিয়ে বসো।”
তমা সেকারণে সরে গিয়েছে। ভালো লাগছে না কিছু তমার। কেমন একটা আঁটকা জায়গা। দম বন্ধ হয়ে আসে বারবার। অনিতা জোরেশোরে তমাকে ডাক দিলো। তমা দৌড়ে যেতেই অনিতা বললো,” সাদকে একটু ডেকে নিয়ে আসো তো। ওর সাথে একটা জরুরি কথা আছে।”
তমা সাদকে ডাকতে আলতো পায়ে সাদের ঘরের দিকে এগোলো। দরজাটা হালকা করে লাগানো। তমা দরজাটা ছুঁতেই দরজাটা খুলে গেল। সাদ ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আছে গভীর মনোযোগে। তমা হালকা করে একটা কাশি দিলো। সাদ ল্যাপটপের দিক থেকে মনোযোগ সরিয়ে তমাকে বললো,” কী খবর থমম্মা! এত গুটিসুটি মেরে বসে আছো কেন?”
তমা কিছুটা নিস্তব্ধ হয়ে গেল। নিরব কন্ঠে বললো,” আম্মু ডাকছে আপনাকে।” সাদ তমার পাশ ঘেঁষে বললো, শুধু আম্মুই? না কি আরো কেউ ডাকছে?” তমা কিছুটা অস্বস্তিতে পরে গেল। কিছু বলার আগেই অনিতা জোরে জোরে সাদ বলে ডাক দিলো। সাদ ল্যাপটপ ফেলে দৌড়ে ছুটে গেল। তমা সাদের ঘরের এপাশ ওপাশ ঘুরে দেখলো। সুন্দর!
সবাই কী নিয়ে কথা বলছে সেটা তমা জানে না। কেউ তমাকে ওখানে যাওয়ার অনুমতিই দেয়নি। সাদকে ডেকে পাঠিয়েছে। একটু পরে হয়তোবা তাঁকেও ডেকে পাঠাবে। একটু পরে সত্যি সত্যিই অনিতা তমাকে ডেকে পাঠালো। তমা ভয়ে ভয়ে সে ঘরে গেল। মহসীন সোফায় গুরুগম্ভীর ভাবে বসে আছে। মহসীনের পাশে সাদ। আঙুর বালা পাশের চেয়ারে বসা। আর অনিতা দেয়াল বরাবর দাঁড়িয়ে আছে।
অনিতা তমাকে প্রশস্ত ভঙ্গিতে বললেন,” তমা তুমি আর সাদ দুজনেই এখন যথেষ্ট বড়। এখন তোমাদের আর আলাদা থাকার বয়স নেই।আমরা ঠিক করেছি সামনের মাসের পাঁচ তারিখে বড় করে তোমাদের রিসিপশনের অনুষ্ঠান করবো। সবাইকে দাওয়াত করে পেট ভরে খাওয়াবো। তুমি আর সাদ এই বাড়িতে একসাথে থাকবে। এখন বলো তোমার কী কোনো আপত্তি আছে? জীবনটা তোমার আর সাদ দুজনেরই। আমি মনে করি তোমাদের দুজনেরই মতামত নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। সাদ ইতিমধ্যেই নিজের মতামত প্রদান করেছে। এখন তুমি তোমার মতামত জানাও।”
তমা কিছুটা স্তব্ধ হয়ে গেল। উৎকন্ঠা যুক্ত কন্ঠে বললো,” আপনারা যা ভালো বুঝবেন তাই করবেন। আমার কোনো আপত্তি নেই। ”
অনিতা তমার কথা শুনে মুচকি হাসলেন। সাদ পাশ থেকে বললো,” উফ! কী ঢং! যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানে না!” অনিতা অগ্নিদৃষ্টিতে সাদের দিকে তাকাতেই সাদ চুপ হয়ে গেল। তমা লজ্জা পেয়ে তখনো মাথা নিচু করে বসে আছে। প্রচন্ড লজ্জা লাগছে তাঁর!
আঙুর বালা অনিতাকে বলেছিল আজকে থেকেই সাদ আর তমাকে একসঙ্গে ঘুমোতে দিতে৷ কিন্তু অনিতা নারাজ। একেবারে রিসিপশনের অনুষ্ঠান শেষ করেই ঘর সাজিয়ে ফুলসজ্জার খাট সাজিয়ে দেবে। তখন ওরা একত্রে ঘুমোবে। আঙুর বালাও চুপ হয়ে গেছেন। প্রস্তাবটা মন্দ নয়।
তমা আঙুর বালার সঙ্গে টেবিলে বসে আছে। আঙুর বালা চুন ভিজাচ্ছেন পানিতে। সাদও একই টেবিলে বসে আছে। তমা আর সাদ পুরো মুখোমুখি বসে আছে। তমা সেকারণে লজ্জায় সামনে তাকাচ্ছে না। সাদ দুষ্টুমি করে তমার পায়ে পা দিয়ে খোঁচা দিলো। তমা বুঝতে পেরে পা সরিয়ে নিলো। সাদ আবারও তমার পায়ে খোঁচা দিতে গেল। কিন্তু, তমা পা পেছনে রাখার ফলে আঙুর বালার পায়ে খোঁচা লাগলো। আঙুর বালা সাদের দিকে তাকিয়ে বললো, ” ভুল নম্বরে ডায়াল করসো নাতি! পা-ডা সরাও। এই পা তোমার বউয়ের না।”
তমা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো। সাদও লজ্জায় লাল হয়ে আমতাআমতা করতে লাগলো।
সাদ একটা পিৎজার অর্ডার দিয়েছিল। অনিতা ঘুমাতে যাওয়ার আগে বলে গেছে তমাকেও পিৎজা ভাগ করে দিতে। সাদ তমার জন্য প্লেটে পিৎজা রেখে তমার দিকে বাড়িয়ে দিলো। তমা প্লেটে হাত দেওয়া মাত্রই আঙুর বালা তমার হাত থেকে প্লেট কেড়ে নিলো। সাদকে পিৎজার ওপরে থাকা মাশরুম দেখিয়ে বললো,” এডি কী ব্যাঙের ছাতা না?” সাদ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝালো। আঙুর বালা জোরে শোরে টেবিলের ওপরে প্লেটটা রেখে বললো,” ঢাকা শহরে থাকতে থাকতে তোরা খাচ্চ/র হইয়া গেসোস! খাইচ্চ/রা খানাদানা লইয়া পইরা থাকোস! ব্যাঙের ছাতাডা শুদ্ধা খাস! ছি ছি ছি ছি! খানার কী অভাব পরসে দেশে? না কি দেশে দুর্বিক্ষ লাগসে?”
তমা আর সাদ দুজনেই বোকার মতো তাকিয়ে আছে। কী হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না কেউ।
চলবে…