#লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
পর্ব ৫,০৬,০৭,০৮
০৫
** মেহমান যখন বিদায় নিলো তখন রাত ১১ টা। আসমাত শিকদার চৈতালীকে নিয়ে দোতালায় এলেন। দোয়ায় ইউনুস পড়তে শুরু করলেন তিনি। আল্লাহ জানেন রাফসান এখন কি করবে। রাফসানের মায়ের অবশ্য কোন ভাবান্তর নেই। যা হবার হবে। তবে তার ধারণা রাফসান বেশি কিছু করবে না। বরং আগের থেকে একটু বেশি গম্ভীর হয়ে যাবে।তাদেরকে যা খুশি বলুক শুধু এই মেয়েটার সাথে একটু ভালো ব্যবহার করলেই হবে।
– বড় মা ঘুম পাচ্ছে কোথায় ঘুমাবো?
-রাফসানের রুমে ঘুমাবি কোথায় আবার।
– আচ্ছা ঠিক আছে। বলেই রাফসানের রুমে হাটা দিলো চৈতালী। কিন্তু দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। সে কয়েকবার নক করলো। কিন্তু ভিতর থেকে কোন সাড়া পেলো না। বাধ্য হয়ে ফিরে গেলো।
– বড় মা রাফসান ভাই তো দরজা খুলছে না।
আয়শা বেগম একটু চিন্তুিত বোধ করলেন। স্বামীর দিকে তাকিয়ে দেখলেন তিনি সোফাতেই ঘুমিয়ে গেছেন। তাকে না ঘাটিয়ে রাফসানের রুমের দিকে এগুলেন তিনি। দরজার কাছে গিয়ে কড়াঘাত করলেন। কয়েকবার ডাকলেন- রাফসান দরজা খোল চৈতালী ঘুমাবে।
ভিতর থেকে কোন সাড়াশব্দ এলো না। বাধ্য হয়ে তিনি চৈতালীকে বললেন – মা রে ও বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছে। তুই অন্য রুমে ঘুমাবি??
চৈতালী মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো। আয়শা বেগম একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেের কাজে গেল।
**নিজের রুমে রিডিং টেবিলের উপর মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে রাফসান। তার বাজে কোন নেশা নেই তা না হলে এখন একটা সিগারেট খেত সে। মন মেজাজ বিহ্মিপ্ত তার। এই মা বাবা গুলো এমন কেন হয়। ধরে বেধে হাটুর বয়সী একটা মেয়ের সাথে তার বিয়ে দিয়ে দিলো? এই সেদিনের মেয়ে, গুনে গুনে তার থেকে ১৬ বছরের ছোট। চিন্তা করেই আর একবার মেজাজ হারালো সে। চৈতালী যখন জন্ম নিলো তখন সে কলেজে ভর্তি হয়েছে। বলতে গেলে ঐ সময় যদি সে বিয়ে করতো তাহলে চৈতির বয়সী একটা মেয়ে থাকতো তার। তার উপর চাচাতো বোন। আপন বোন আর চাচাতো বোনের কোন তফাৎ নেই তার কাছে। আর হাটুর বয়সী চাচাতো বোন কে তার বিয়ে করতে হলো? ভাবতেই গা গুলিয়ে উঠলো তার। ওয়াশরুমের বেসিং এ গিয়ে হরহর করে বমি করে দিলো। মানুষ খালাতো,মামাতো, ফুফাতো বোন বিয়ে করে ঠিক আছে। তবে সে এটা মেলাতে পারলো না চাচাতো বোন আর আপন বোনের মধ্যে পার্থক্য কোথায়। তবে আশার আলো ছিলো চৈতি হয়তোবা রাজি হবে না। তা না মেয়ে নাচতে নাচতে রাজি হয়ে গেলো? কেন যে ঢাকা থেকে আসতে গেলো। রাগে নিজের মাথার চুল নিজের ছিড়তে ইচ্ছা করলো। নিজেকে কন্ট্রোল করার আর কোন উপায় না দেখে ঔষধের পাতা থেকে একটা ঘুমের ঔষধ খেয়ে শুয়ে পড়লো সে
ঘুমের কথা বলে শুয়ে পড়লেও ঘুম নেই চৈতালীর চোখে। চোখ বুঝলেই সে আশরাফের চেহারা দেখতে পাচ্ছে। যাবারই যখন ছিলো তখন চৈতালীকে এত স্বপ্ন কেন দেখালো। তার তো কোন পাপ ছিলো না। তবে সেই কেন প্রতারণার স্বীকার হলো? আবার কত সুন্দর করে বলেছে মাফ করে দিও। বললেই কি মাফ করা যায়?? ছোটবেলা থেকেই সে শক্ত ধাঁচের মেয়ে। ন্যাকামি, লুতুপুতু ভাব তার মধ্যে নেই। তাইতো ১৭ বছর বয়সেই তার মধ্যে ম্যাচুরিটি এসেছে। তবে শক্ত ধাঁচের মেয়েটাও আজ প্রথমবার কাউকে ভালবেসে না পাওয়ার কষ্টে বালিশে….
(ক্রমশ)
# সামিরা আক্তার
লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
*পর্ব ৬
*সামিরা আক্তার
—-বালিশে মুখ গুজে কাঁদছে চৈতালী। দরজার ওপাশে পৌছালো না তার চিৎকার। জানলো না কেউ তার কষ্টের কথা।
নিজের রুমে সোফায় চুপচাপ বসে আছে আসলাম শিকদার। মেয়ের অমতে বিয়ে দিয়ে রুমে আসার পরই সে চুপচাপ। সে এরকমটা চায় নি। বড়ভাই যখন তার সামনে ছেলের জন্য হাতজোড় করে দাড়ালো তখন তার কিছুই করার ছিলো না। এছাড়া তার জীবনের সবচেয়ে বড় সত্যটা তার ভাই জানে। সে চায় না এই সত্য আর কেউ জানুক। বাকি আর যেন জানতো সে নেই। আসলাম শিকদার কে বাঁচিয়ে দেবার জন্যই হয়তো সে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেছে। আর কিছু ভাবতে পারলো না। স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে দেখলো নিঃশব্দে কাঁদছে সে। মেয়েকে রাফসানের সাথে বিয়ে দেবার কোন ইচ্ছা ছিলো না রেবেকার। একে তো বয়স বেশি তার উপর ডিভোর্সি। কিন্তু স্বামীর মুখের উপর কিছু বলতে পারে নি।
**রাফসানের যখন ঘুম ভাঙলো তখন ১০টা বাজে। বেলা করে ঘুমানোর অভ্যাস তার নেই।আজ ঘুমানোর কারণ কালকের ঘুমের ঔষধ বুঝতে পারলো। আর ঘুমের ঔষধের কথা মনে পড়তেই কালকের পুরো ঘটনা মনে পড়ে গেলো। সাথে সাথে মেজাজ আবার খারাপ হয়ে গেলো। বসে বসে নিজের মাথার চুল সে নিজেই টানলো কিছুহ্মণ। তারপর সিদ্ধান্ত নিলো আর থাকবে না এখানে। একটু পরই ঢাকা রওনা দিবে। ভাবতেই উঠে ফ্রেশ হতে গেলো সে। যত তাড়াতাড়ি বের হতে পারবে ততোই মঙ্গল।
রাফসান ফ্রেশ হয়ে বের হতেই প্রথমে ডাইনিং এ দেখলো চৈতালী কে। সোফায় শুয়ে আপেল খাচ্ছে আর টম এন্ড জেরি দেখছে। মাঝে মাঝে হাঁসতে হাঁসতে সোফা থেকে পড়ে যাচ্ছে। পড়ে গিয়ে উঠে আবার দ্বিগুণ উৎসাহে হাঁসছে। রাফসান কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো। চৈতালীর সাথে তার কথা বার্তা কম। চৈতালী ভালমত দুনিয়া দারি বুঝে ওঠার আগেই সে বাড়ি ছেড়েছে। তাই সেও জানে না চৈতি আসলে কেমন। ভাবনার প্রহর থেকে বের হয়ে মাকে ডাকলো সে- মা নাস্তা দাও আমি বের হবো।
রাফসানের কথায় ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকালো চৈতালী। রাফসানকে সে কাল সকালে শেষ দেখেছিলো। তারপর আজ দেখলো। সে জানে রাফসান তাকে বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছে। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে তার খিদে পাওয়ায় সে বড়মাকে ডাকতে গিয়েছিলো সেখান থেকেই সবটা শুনেছে সে। তখন তার আশরাফের বলা কথা মনে পড়েছে যে আমাদের বাবা মা আর কিছু না পাড়ুক আমাদের ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে খুব ভালো পারে। আহারে বেচারা রাফসান ভাই তোমার মত স্বাধীনচেতা মানুষ ও ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলের স্বীকার হলে? মুখ দিয়ে আফসোসের একটা শব্দ করলো চৈতালী।
চৈতালী কে মিটিমিটি হাঁসতে দেখে একটু অবাক হলো রাফসান। এই মেয়ে এত স্বাভাবিক কি করে?? ওর কি মনে নেই ওর একটা আধবুড়ো লোকের সাথে বিয়ে হয়েছে। ভাবতেই খুশি হয়ে গেলো রাফসান। ভুলে যা চৈতি। সব ভুলে যা। তাহলে তুইও বাঁচিস আমিও বাঁচি।কিন্তু আসলেই কি ভুলে গেছে? মনে মনে ভাবলো রাফসান। একটু টেষ্ট করার উদ্দেশ্যে ডাকলো চৈতালীকে- চৈতি মা কোথায় রে?
রাফসান তাকে ডাকবে এটা ওর ভাবনার বাহিরে ছিলো। আসলেই ডাকছে? না কি ভুল শুনলো। চৈতালী পুরো কনফিউজড হয়ে গেলো। ওর ভাবনার সুতো ছিড়লো ওকে যখন আবার রাফসান চৈতী বলে ডেকে উঠলো….
(ক্রমশ)
লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
* পর্ব ৭
সামিরা আক্তার
** চৈতী ডাক শুনে চৈতালী বুঝলো রাফসান আগেও ওকে ডেকেছে। কারণ রাফসান ছাড়া আর কেউ ওকে চৈতী বলে না। সবাই পুরো নাম ধরে ডাকে।
– কথা কানে যায় না? কতক্ষণ ধরে ডাকছি? দাঁতে দাঁত চেপে বলল রাফসান।
চৈতালী একটু থতমত খেলো। পরহ্মণেই বলে উঠলো – বড়মা এখানে নেই। বোধহয় তোমার শ্বশুর বাড়ি গেছে।
– শ্বশুর বাড়ি মানে??
– শ্বশুর বাড়ি মানে শ্বশুর বাড়ি। আমাদের বাসায় আরকি।
চৈতালীর সব মনে আছে দেখে রাফসান হতাশ হলো। পরহ্মণেই নিজেকে বকলো যে মনে না থাকার কি হলো?? এটা তো সিনেমা নয়। চৈতী ও মাথায় বাড়ি খায় নি। তাহলে ভোলার কোন প্রশ্নই আসে না।
নিজের ভাবনা দেখে নিজেই অবাক হলো সে। ওর কি মাথায় সমস্যা দেখা দিচ্ছে?? হতেই পারে, যা ঘটে চলেছে একের পর এক। দুহাতে কপাল চেপে ধরে নিজেকে শান্ত করলো সে। তারপর চৈতালী কে বললো- যা মাকে ডেকে আন। বলবি আমার যেতে হবে।
বলেই নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো সে। রাফসান যেতেই তাকে ভেংচি দিলো চৈতালী। তারপর নিজেদের বাসার দিকে গেলো।
আয়শা বেগম চৈতালীর মায়ের সাথে কথা বলছিল। চৈতালী ঢুকে ডানে বায়ে না তাকিয়ে বলল- বড়মা রাফসান ভাই তোমাকে ডাকে।
বলেই আবার বেরিয়ে গেলো সে। মেয়ের এইরকম আচরণে এবার কেঁদেই উঠলেন রেবেকা। মেয়েটা তার এত অভিমান করেছে। কেন স্বামীর বিপক্ষে গেলেন না তিনি? তাহলে অন্তত মেয়েটা ভালো থাকতো।
আয়শা বেগম চৈতালীর আচরণে রেবেকার সামনে অসহায় বোধ করলেন। কি বলে রেবেকাকে শান্তণা দিবে বুঝে উঠলেন না। তাই নিঃশব্দে দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন।
রাফসান তার মায়ের জন্য অপেক্ষা করছিলো। আয়শা বেগম ঘরে ঢুকতেই বললো – মা আমি চলে যাচ্ছি। বাবার সাথে ফোনে কথা বলে নিবো।
আয়শা ছেলেকে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই রাফসান বলে উঠলো – একদম ড্রামা করে কিছু বলবে না মা। কাল দুজন মিলে অনেক ড্রামা করেছ।
আয়শা বেগম ছেলেকে আর কিছু বললেন না। রাফসান বেরিয়ে গেলে তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। এখন ওনার মনে হচ্ছে ওনারা চৈতালীর জীবনটা নষ্ট করেছেন। এভাবে দুরে থাকলে ওদের সম্পর্ক এগুবে কিভাবে তিনি বুঝলেন না।
চৈতালী যখন শুনলো রাফসান চলে গেছে তখন কাজের মেয়ে ময়ূরী কে দিয়ে ওপর থেকে নিজের সব জিনিস এনে রাফসানের রুমে শিপট হয়ে গেলো। আগে থেকেই এই রুমটা তার পছন্দ। কারণ খুব সুন্দর আর বড় একটা বেলকনি আছে। বেলকনিতে দোলনা আছে। তবে খুব বেশি এই রুমে তার আসা হয় নি।
চৈতালীর বয়স যখন আট কি নয় তখন হঠাৎ একদিন ওর রাফসান ভাই বউ নিয়ে হাজির হলো। চৈতালীই বোধহয় সেদিন বেশি খুশি হয়েছিল। তার নতুন ভাবি হয়েছে ভেবে সে খুশিতে আটখানা। বাকি সবার মুখ ছিলো থমথমে। নিচতলার আড্ডাখানায় সেদিন বাবা চাচারা অনেকহ্মণ কথা বলেছিল। চৈতালী তখন তার নতুন ভাবি আফরিনের কাছে বসে।
তারপর এই ঘরটায় রাফসান ভাই আর আফরিন ভাবী থাকতো। রাফসান ভাই তখন ডুমুরের ফুল হয়ে গেলো। বাইরে থাকার সময়টুকু বাদ দিয়ে বাকি সময় ভাবির আঁচল ধরে ঘুরতো বলা চলে।
রাফিয়া আপু আর ওর দুই ফুফাতো বোন আলিয়া আর ডালিয়া তিনজনে হাঁসাহাঁসি করতো। এরকম বউ পাগল দেখে…..
(ক্রমশ)
লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
*পর্ব ৮
সামিরা আক্তার
রাফসানের এরকম বউ পাগলা ভাব দেখে মা চাচিরাও আড়ালে মুখ টিপে হাঁসতেন। মাঝে মাঝে এই বিষয় নিয়ে রাফসান ভাইয়ের সাথে মজাও করতো রাফিয়া আপুরা। তখন রাফসান ভাই লাজুক হেঁসে মাথা চুলকাতো। সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু বছর না ঘুরতেই দুজনে আলাদা হয়ে গেল।
ঠিক কি হয়েছিল আজও জানে না চৈতালী। এ বাড়িতে এই ব্যাপারে বা আফরিন প্রসঙ্গে আর কোন কথা হয় নি।
তবে তারপর থেকেই রাফসান আমূল বদলে গেলো। হাঁসি খুশি মানুষটা কেমন সব বিষয়ে সিরিয়াস হয়ে গেলো। ভোরে ঘুম থেকে উঠে জিমে যেতে শুরু করলো।
এমনকি ভোজন রসিক রাফসান ভাইয়ের খাদ্য তালিকাও বদলে গেল। বাবার বিজনেসে মনোযোগ দিলো। একা থাকতে শুরু করলো।ফলে ভাই বোনের সাথে দুরুত্ব বাড়ল। একসময় বাড়ি ছেড়ে বিজনেসের কারণে ঢাকা থাকতে শুরু করলো। এরপর তাকে কদাচিৎ বাড়িতে দেখেছে চৈতালী। দেখা হলেও কেম আছিস ছাড়া আর কোন কথা বলেছে কি না সন্দেহ আছে চৈতালীর।
অথচ আগে রাফসান সকাল ১১ পর্যন্ত ঘুমাতে পছন্দ করতো। জিমে তো যেতেই চাইতো না। তার না কি বিরক্ত লাগতো। বিশেষ করে তার মায়ের হাতের রান্না কব্জি ডুবিয়ে খেতো। আর বিজনেসে বসার কথা বললেই শরীর খারাপ হতো।
**আসমাত সাহেবের স্ত্রীর উপর বেজায় মেজাজ খারাপ হচ্ছে। ছেলেকে আটকাতে পারলো না?? তবে তিনি নিজেকে ঠান্ডা রেখেছেন। এখন আয়শাকে কিছু বলা যাবে না। এই মহিলা ভীষণ অভিমানী। অভিমান ভাঙাতে সময় লাগে। তার এখন আয়শা কে দরকার। তার চিন্তা ছেলে আর ছেলের বউকে একসাথে রাখার। যার জন্য আয়শার হেল্প লাগবে।
– কি ভাবছো?? আয়শা বলে উঠলো।
– ভাবছি রাফসানের মা ভাবছি।
– সেটাই তো জানতে চাইছি ভাবছো কি??
– আচ্ছা তোমার ছেলে যে চৈতালী কে রেখে চলে গেলো এটা কি ঠিক হলো?? ওরা একসাথে না থাকলে ওদের সম্পর্ক টা এগিয়ে যাবে কি ভাবে বলোতো??
আয়শা বেগম একটু ভাবলেন। তার হঠাৎ খুশি মনে বলে উঠলেন -একটা উপায় আছে ওদের একসাথে রাখার।
– কি উপায়??
– দেখো রাফসান তো এমনিতেই এখানে থাকে না। আর চৈতালীর জন্য থাকবে এটাও আশা করা ভুল। আবার চৈতালী কেও ওর কাছে রাখতে দিবে না। ঝামেলা করবে। তাই আমাদের চৈতালীকে বুঝাতে হবে। ওকে কনভিন্স করাতে পারলেই কাজ হবে। তাছাড়া ও তো ইউনিভার্সিটি ভর্তি হবে। সেটাও একটা কারণ।
আয়শা বেগমের উপায় শুনে আসমাত শিকদারের হতাশ হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকলো না। বলে কি না চৈতালী কে কনভিন্স করবে। ওনার মনে হলো এর চেয়ে আশ্চর্য কথা উনি আর জীবনে শুনেন নি। কিন্তু মুখে বললেন- বলা সহজ করা কঠিন। চৈতালী রাফসানের কাছে যাবে না।
– সেটা তুমি আমার উপর ছেড়ে দাও।
– দেখো। বলেই আবার চুপ হয়ে গেলেন। এখন বয়স হয়েছে কোথায় ছেলে ওনাদের চিন্তা করবে তা না ওনারা ছেলের চিন্তা করছে। বুড়ো বয়সে ছেলের সংসার গুছাচ্ছে।একেই বলে কপাল।
রাফসান যখন ঢাকা পৌছালো তখন বিকাল হয়েছে। আরও আগে পৌছাতে পারতো। কারণ ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের দুরুত্ব বেশি না। যদিও তাদের বাড়ি টাঙ্গাইলের থানা শহরে তারপরও এত দেরি লাগে না। আজ সে আশুলিয়ায় মারাত্মক জ্যামে পড়েছিল। যার কারণে এত দেরি।
সে গুলশান ২ এর একটা ডুপ্লেক্স বাড়িতে থাকে। এই জায়গাটা তার বাবা অনেক আগে কিনে ফেলে রেখেছিলেন। সে যখন ঢাকা এলো তখন প্রথমে ভাড়া থাকতো। তারপর এই বাড়ির কাজ শেষ করে এখানে উঠে গেলো।
এই পুরো বাড়িতে সে একা থাকে। অবশ্য নিচে দাড়োয়ান আছে। একজন মালি ও আছে। প্রতিদিন কাজের বুয়া এসে কাজ করে দিয়ে যায়। এভাবেই চলছে। মাঝে মাঝে তার মনে হয় সে যদি এখানে মরেও যায় তাহলেও বোধ কেউ জানবে না। এতে অবশ্য কারো দোষ নেই কারণ এমন জীবন সে নিজে বেছে নিয়েছে।
একটা সময় হাসিখুশী সহজ সরল একটা জীবন তারও ছিলো। কিন্ত সেই জীবন তাকে অপমান, অসম্মান আর বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া কিছু দেয় নি।
চৈতালী একা থাকতে পারছে না। তার কান্না পাচ্ছে। হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু এখানে সেটা সম্ভব না। তার সাথেই কেন এমন হলো? তার মা বাবাও তাকে বোঝে নি। কেউ বোঝে নি। জীবনের পাওয়া না পাওয়ার খাতা হিসাব করলে এ পর্যন্ত তার পাওয়ার খাতা শূন্য।
চৈতালী ওয়াশরুমে গিয়ে ঝরণা টা ছেড়ে কাঁদতে শুরু করলো। সে আজ খুব কাঁদবে। আজকেই তার শেষ কান্না। এরপর আর ঐ বিশ্বাসঘাতকের জন্য কাঁদবে না।
(ক্রমশ)