লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি ,পর্ব ৯,১০,১১

0
762

লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
পর্ব ৯,১০,১১
সামিরা আক্তার
০৯

আয়শা বেগম অনেকহ্মণ ধরে রাফসানের রুমে বসে আছে। উদ্দেশ্য চৈতালীর সাথে কথা বলা। এসেই দেখেছে চৈতালী ওয়াশরুমে। এখনও আছে। কি করছে আল্লাহ জানে। ভালই হয়েছে এই ফাঁকে তিনি কথা গুছিয়ে নিচ্ছেন।
চৈতালী ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে আয়শা বেগমকে বিছানায় বসে থাকতে দেখে অপ্রস্তুত বোধ করলো। এতহ্মণ সে কেঁদেছে। বড়মার সন্দেহ হলেই হাজারটা প্রশ্ন করবে।
বারান্দায় কাপড় মেলে দিয়ে আয়শা বেগমের কাছে বসলো চৈতালী। বললো- বড়মা কিছু বলবে??

আয়শা বেগম তার ধ্যান থেকে বেরোলেন। চৈতালীর মুখের দিকে তাকিয়ে তার বুকটা হু হু করে উঠলো। ছেলের ভালো করতে গিয়ে এই মেয়েটার সাথে তারা অন্যায় করে ফেলেছেন।
যদিও তার ছেলে লাখে একটা তবুও রাফসানের তুলনায় চৈতালী বাচ্চা। রাফসান কে অবশ্য দেখে বোঝা যায় না বয়স ৩৩ হয়েছে। লোকে তো বলে ২৭-২৮। এখনও মেয়েরা হা করে তাকিয়ে থাকে তার ছেলের দিকে।
শুধু ওই কালনাগিনী বুঝলো না। তার হাঁসি খুশি ছেলেটাকে পাথর বানিয়ে চলে গেলো। না হলে আজ এত কিছু ঘটতোই না।
চৈতালীর দিকে ভালো করে তাকালেন তিনি। কি মিষ্টি মেয়ে। যে কারো নজর কাড়তে বাধ্য। রাফিয়ার বিয়ে হলো, রাফসান চলে গেলো, আরিয়ান আবির ও গেলো, তখন এই মেয়েটাই দোতলা থেকে চারতলা সবাই কে মাতিয়ে রাখতো।
আচ্ছা ও কি রাফসান কে ভালবাসবে?? না কি বয়স বেশি বলে দূরে সরিয়ে রাখবে?

আয়শা বেগম কে এবার ধাক্কা দিলো চৈতালী। -বড়মা কখন থেকে ডাকছি। কি ভাবছো এতো??
– কিছু না মা। তোর সাথে গল্প করতে এসেছি। বলেই পা ছাড়িয়ে বসলেন তিনি।
চৈতালী এবার ওনার পায়ের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো। আয়শা বেগম এবার চৈতালীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে চৈতালীকে ডাকলেন- চৈতালী
– হুম
তুই আমাদের উপর রেগে আছিস না মা??
– রাগবো কেন??
– এই যে তোকে আমরা ধরে বেঁধে রাফসানের সাথে বিয়ে দিয়ে দিলাম।
চৈতালী এবার উঠে বসলো। তারপর বলল – তোমরা কি নিজেদের দোষী ভাবছো বড়মা??
আয়শা বেগম চুপ করে রইলেন। চৈতালী এবার ওনার হাত ধরে বললো- আশরাফের সাথেও কিন্তু আমার বয়সের গ্যাপ ৮ বছরের ছিলো বড়মা। এটাও এই বর্তমান সময়ে অনেক বেশী।
আয়শা বেগম বললেন – তবুও
– তবুও কি বড়মা? রাফসান ভাইয়ের বয়স আর একটু বেশি তাই?? দেখো বড়মা আমি এতটাও ছোট বা অবুঝ নই। তোমরা আমাকে যখন ১৭ বছরেই বিয়ে দিতে চাইছিলে তখন আমি প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু তোমরা আমাকে হাজার টা বুঝ দিলে। রাগের কথা যদি বলো তখন রাগ করেছিলাম। তারপর আশরাফের সাথে দেখা হওয়ার পর আমি নিজেই বিয়েতে মত দিয়েছিলাম।

আয়শা বেগম চৈতালীর দিকে এগিয়ে আসলেন। বললেন -ঐ ছেলেটা কে খুব ভালবেসে ফেলেছিস না?? এই জন্য চোখ মুখের এই হাল?
– আমি কেঁদেছি বড়মা আজই শেষ কাঁদলাম। কোন বিশ্বাস ঘাতকের জন্য আর কাঁদবো না বড়মা। প্রমিজ।তোমাদের উপর রাগ নেই বড়মা। তবে অভিমান আছে।ওটাও চলে যাবে।

বলেই আয়শা বেগম কে জরিয়ে ধরলো চৈতালী। তারপর বললো – এক হিসাবে বরং ভালই হয়েছে বলো। কোথায় না কোথায় বিয়ে হতো। হয়তো দজ্জাল শাশুড়ী না হয়তো দু চারটে কুচুটে ননদ থাকতো। তার চেয়ে বরং এটাই ভালো হয়েছে। তোমার মত একটা সুইট শাশুড়ী পেয়েছি।
আয়শা বেগম মলিন হাঁসলেন। তাই দেখে চৈতালী বললো- বড়মা এত সেন্টি খেয়ো না তো। আমি ভালো থাকবো দেখে নিও।
– আমি জানি তুই ভালো থাকবি মা। আমার রাফসান ভালো ছেলে। তোকে একটা কথা বলি চৈতালী?
– আবার জানতে চাইছো? বলো কি বলবে?
– তুই কি ভাবলি?
– মানে? বুঝলাম না বড়মা বুঝিয়ে বলো।
– তুই এখানে থাকবি? না কি সব মেনে নিয়ে রাফসানের কাছে গিয়ে সংসার করবি?

চৈতালী কোন জবাব দিলো না। আসলে এই প্রশ্নের জবাব এই মুহুর্তে তার কাছে নেই। চৈতালী কে চুপ করে থাকতে দেখে আয়শা বেগম বললেন- তোদের এই সম্পর্ক টা রাফসানের দিক থেকে এগুবে না চৈতালী। যা করার তকেই করতে হবে।
-আমাকে আজকের রাতটা সময় দাও বড়মা। আমি ভেবে কাল তোমাকে জানাবো। বললো চৈতালী।
– তোর যে কয়দিন ইচ্ছে সময় নে মা। শুধু আমার ছেলেটাকে আবার আগের মত করে দে চৈতালী। ওই কাল নাগনী মেয়েটা আমার ছেলেটাকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে গেছে। শেষ করে দিয়ে গেছে।

চৈতালীর একটু কৌতুহল হলো। পরহ্মণেই বলে উঠলো
– সিনেমার মত ডায়লগ কেন দাও বড় মা?? তোমার কি আমাকে দেখে মনে হয়েছে এই মেয়েই পারবে আমার ছেলেকে হাসিখুশি করতে। এই মেয়ে ছাড়া কেউ পারবে না। এরকম কিছু??
চৈতালীর কথা বলার ঢং দেখে হেঁসে ফেললেন আয়শা বেগম। বললেন- ফাজিল মেয়ে। সব সময় মজা না??
চৈতালী সাথে তাল মিলিয়ে হাসলো। তারপর বললো
– কাল তোমাকে জানাবো বড়মা এখন ঘুমাবো। যাও।

রাফসান বিছানায় শুয়ে আছে। তার কাছে এই বিয়ে টা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত ছিলো। এমন না যে আফরিন তাকে ঠকিয়েছে বলে সে কোন মেয়েদেরই পছন্দ করে না। সে জানে সব ছেলেরা যেমন এক না মেয়েরাও এক না। সবাই তো আর আফরিনের মত বিশ্বাসঘাতক নয়।
আফরিনের কথা ভাবতেই চেয়াল শক্ত হয়ে এলো তার।
বুঝতে পারলো রেগে যাচ্ছে। হাত টা মুট করে রাগ কন্টোল করলো সে।
ভাবতে হবে তার। যেমন করেই হোক চৈতীকে মুক্ত করতে হবে। বাচ্চা মেয়েটার জীবন নষ্ট করা যাবে না। দরকার পরে রাফসান তার বয়সের কাছাকাছি কাউকে বিয়ে করে বাবা মা কে শান্ত করবে তাও চৈতীর জীবনটা নষ্ট করতে দেবে না।
(ক্রমশ)

লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
* পর্ব ১০
সামিরা আক্তার

চৈতালী ভাবনায় ডুবে আছে। আজীবনই সিনেমার ন্যাকা কাহিনী তার অপছন্দ ছিলো। কিন্তু তার জীবনটাই বাংলা সিনেমার মত হয়ে গেলো। আর খুবই দুঃখজনক ভাবে সে এখানে শাবানার ভূমিকায় আছে।
চৈতালী একটা জিনিস বুঝলো না এই বড়মা এটা কেন ভাবছে সে সব কিছু ঠিক করে দিতে পারবে। আশ্চর্য সে কি ম্যাজিক জানে না কি??
কিন্তু এগুলো বলা যাবে না। কষ্ট পাবে। সেই বা কি করতে পারে। কেন যে বিয়েটা করতে গেছিলো। নিজেকে জুতা দিয়ে পিটাতে মন চাইছে। অবশ্য তখন কি জানতো এই কাহিনী হবে।
তার বাবা তার বিয়ে দিয়ে হজ্বে যেতে চাইলো। সে প্রথমে আপত্তি করলেও পরে করেনি। কারণ আজ বা কাল বিয়ে করতেই হতো।
কিন্তু এখন সে করবেটা কি?? সিধান্ত নিতেই পারছে না। অনেক ভেবে সে তার কয়েকজন বান্ধবী, বড় আপু দের সাথে কথা বললো।
তাতে লাভের লাভ কিছু হলো না। কারণ বেশির ভাগই বলেছে ডিসিশন চৈতালীকেই নিতে হবে। কারণ জীবনটা চৈতালীর।

রাফসান একটা ফাইলে মুখ গুজে বসে ছিলো। এর মাঝে ফোন বেজে উঠলো। তাকিয়ে দেখলো রাফিয়া কল করেছে। বুঝলো তার বোনের কাছে গতকালের সব ঘটনা পৌছে গেছে। যেহেতু তখন জানানোর মত সিচুয়েশন ছিলো না।
রাফসান ফাইলের কাজ শেষ করে আস্তে ধীরে বোন কে ফোন করলো। ওপাশ থেকে এক প্রকার চিৎকার করে ভাইয়া বলে ডেকে উঠলো রাফিয়া। বোনের উচ্ছ্বাস দেখে হাজার মন খারাপের মধ্যে ও মন ভাল হয়ে গেলো রাফসানের।
– ভাইয়া আমি খুব বেশি খুশি হইছি। এত খুশি শেষ কবে হয়েছিলাম আমার মনে নেই।
রাফসান বুঝলো কিসের জন্য খুশি হয়েছে তার পরও বললো – এত খুশির কারণ কি??
একটু দমে গেলো রাফিয়া। নিজের উপরই রাগ হলো।গাঁধা না কি সে? একটা পাথরের কাছে খুশির কথা বলতেছে। পরহ্মণেই বললো – ভাইয়া এবার সিরিয়াস হও প্লিজ। নিজের জীবনটা গোছাও।
– তোর কি মনে হয় আমি অগোছালো লাইফ লিড করছি??
– তুমি যে জীবন পার করছো সেটাকে জীবন বলে না। তুমি যে দিন দিন সমাজের বাইরে চলে যাচ্ছ বুঝতে পারছো??
হেঁসে ফেললো রাফসান। তার বললো -তোকে এই বড়দের মত কথা কে বলতে বলেছে?? মা?
– মা বলবে কেন?? তোমার কি ধারণা আমি বড় হই নি?? ভাইয়া চৈতালী ভালো মেয়ে। তোমাকে ভাল রাখবে।
– চৈতী আমার থেকে ১৬ বছরেরে ছোট রাফু। একটা বাচ্চা মেয়ে। ওর যখন জন্ম হইছে আমি তখন কলেজে পড়ি। ঐ সময় বিয়ে করলে আমি চৈতীর বয়সী একটা মেয়ে থাকতো আমার।
– শোনো ভাইয়া ১৭ বছরে কেউ বাচ্চা থাকে না। মেয়েরা ১৩-১৪ বছর হলেই দুনিয়াদারী চিনে যায়। সব কিছুই বুঝে। দেখো এখনকার ১৪-১৫ বছরের মেয়ে গুলো কেমন পালিয়ে যায়। মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় তাড়াতাড়ি বাড়ে বুঝছো?? তাছাড়া চৈতালীর সমস্যা না হলে তোমার সমস্যা হবে কেন?
– তুই কি একটু পানি খাবি রাফু,?? জুনায়েদ কে বল তোকে একটু পানি দিতে। এত কথা কিভাবে বলিস তুই? আহারে আমার বন্ধুটার কান বোধহয় ঝালাপালা করে দিস তুই।
রাফিয়া বুঝলো তার ভাই কথা ঘুরাতে চাইছে। এজন্য তার সাথে মজা করছে। তাই সেও আর কথা এগুলো না। আজ যেটুকু বলেছে এনাফ। বাকি কথা চৈতালীর সাথে কথা বলার পর বলবে। এমনিতেই তার শরীর ভাল না। প্রেগনেন্সির সময় চলছে।
তারপর বললো- তোমার বন্ধু আমার কান বেশি ঝালাপালা করে। এসব কথা বাদ দাও। জীবনটাকে নিয়ে সিরিয়াস হও।
– আচ্ছা এখন রাখ। নিজের খেয়াল রাখিস। এত স্ট্রেস নিস না। তোর জন্য হ্মতিকর।

রাফিয়ার সাথে কথা বলার পর রাফসান বুঝলো তার মা দায়িত্ব নিয়ে সবাইকে তার বিয়ের খবরটা দিয়ে দিয়েছে। এখন ফোন আসতেই থাকবে। সে ফোনটা সাইলেন্ট করে দিলো।
একটা বিষয় শান্তুি দেয় তাকে তার জীবনে যাই হোক রাফু ভালো আছে। জুনায়েদ তার বহু পুরোনো বন্ধু। মধ্যবিত্ত ছেলে। বাবা অনেক আগেই মারা গেছিলো। কলেজ পাস করার পর মাও মারা গেলো।
রাফসানের সাথে ঘনিষ্ঠতা থাকায় তাদের বাড়িতে আসা যাওয়া ছিলো। সেখান থেকেই রাফুকে দেখে। না ওরা প্রেম করে নি। বরং জুনায়েদ পড়ালেখা শেষ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেই তার কাছে তার বোনকে চেয়েছিলো।
ততদিনে রাফসান নিজেও বিয়ে করে সম্পর্কের টানাপোড়েনে ছিলো। ঐ অবস্থাতেই ওদের বিয়ে দেয়। বিয়ের পর রাফিয়া কে নিয়ে জুনায়েদ উড়াল দেয় ইউরোপে।
এর মাঝে রাফসানের ডিভোর্স হয়ে গেলো। রাফিয়া তখন ফোনে ভাইয়ের জন্য ছটফট করতো। তারপর প্রতি বছর দেশে এসে ভাইয়ের অবস্থা দেখে মিইয়ে গিয়েছিল সে। রাফসানের সাথে এত উচ্ছ্বাস নিয়ে অনেকদিন পর কথা বললো সে।
রাফসান একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো তার ফুফু ফোন করছে।
এইবার ফোনটা বন্ধ করে দিল সে। তার এখন কারো সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না।

এর মাঝে ২ দিন কেটে গেলো। চৈতালী এখন ও আয়শা বেগম কে কিছু জানায় নি। আয়শা বেগম চৈতালীর উত্তরের আশায় বসে আছে। আজ হঠাৎ চৈতালী এসে বললো – বড়মা আমি সিধান্ত নিছি আমি ঢাকা যাব। রাফসান ভাইয়ের সাথে সংসার করবো। তবে তোমার কাছ থেকে আমার কিছু জানার আছে। আশা করি বলবে।
আয়শা বেগম খুশিতে কেঁদে ফেললেন। বললেন – সব বলবো মা যা জানতে চাইবি।

(ক্রমশ)

লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
*পর্ব ১১
সামিরা আক্তার

রাফসান যেদিন বিয়ে করে নিয়ে আসে সেদিন স্বভাবতই সবাই চমকে গেছিলো। রাফসানের থেকে এরকমটা কেউ আশা করে নি। রাফসানের বাবার ইচ্ছে ছিলো বোনের মেয়ে আলিয়া কে পুত্রবধু করে আনার। নিজের ইচ্ছার কথা তিনি নিজের কাছেই রেখেছিলেন। কাউকে বলেন নি। বললে হয়তো গল্পটা অন্যরকম হতে পারতো।

আফরিন কে রাফসানের বাবার প্রথমে পছন্দ হয় নি। রাফসান বৌ নিয়ে আসলো যেদিন সেদিন নিচ তলার হল রুমে বসে আসমাত শিকদার প্রথম কথা বলেছিলেন -দাদার আমলের ব্যবসা আমাদের রাফসান। আমরা মানুষ চড়িয়ে খাই। এই মেয়ের মধ্যে আমি তোমার জন্য ভালবাসা দেখছি না। আমার খুবই দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে তুমি মানুষ চিনতে ভুল করেছো।
– বাবা তুমি ভুল করছো আফরিন ভাল মেয়ে। ও শুধু আমাকে না তোমাদের সবাইকে ভালবাসবে।
– দেখো রাফসান তুমি আমার ছেলে তুমি জীবনে সুখী হও আমি চাই। বিয়ে যখন করেই ফেলেছো তখন আর কিছু করার নেই। তবে…
– তবে কি বাবা??
– তুমি কাল থেকে অফিসে যাবে। তোমার যোগ্যতা অনুযায়ী একটা পদ তোমাকে দেওয়া হবে। সাধারণ কর্মচারীর মত বেতন ও পাবে। এবং তোমার বৌয়ের সব দায়িত্ব তোমাকে নিতে হবে। অন্তত এক বছর। মনে করো এটা তোমাদের পরীহ্মা। তবে এই কথা তুমি তোমার বউকে বলতে পারবে না।

রাফসান সেদিন তার বাবার সব কথা মেনে নিয়েছিলো। মূলত আসমাত শিকদারের চিন্তা ছিলো তার পুত্রবধু কতটা খাটি তা পরীহ্মা করা। তা না হলে তিনি এরকম উদ্ভট শর্ত দিতেন না।
তারপর থেকে রাফসান অফিসে যেতে শুরু করলো। আর বাকি সময় বৌ। ভালই চলছিলো। কয়েক মাস যেতেই ওদের রুম থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনতেন তিনি। তারপর…
– তারপর কি বড়মা??
আয়শা বেগম চুপ করে আছেন। আজ তার কাছে এই বিষয় গুলোই জানতে চেয়েছে চৈতালী।
– কি হলো বড়মা বলো? দেখো এই বিষয় গুলো না জানলে আমি রাফসান ভাইয়ের ওখানে গিয়ে কিছু করতে পারবো না।

ওদের ঝামেলা বাড়ছিলো। কি নিয়ে তা আয়শা জানেন না। এরপর একদিন আফরিন এসে আসমাত শিকদারের কাছে বললো সে মডেলিং করতে চায়। কি ভেবে যেন আসমাত শিকদার অনুমতি দিলেন। এরপর থেকে শুরু হলো আফরিনের অযাচিত চলাফেরা। অনেক রাত করে বাসায় ফিরতো। এতদিনের ঝামেলা এবার বিস্ফোরেণে রুপ নিলো।
তারপর একদিন ব্যাগপত্র গুছিয়ে আফরিন চলে গেলো। রাফসান ফিরিয়ে আনতে গিয়েছিলো। কিন্তু ফিরে এলো খালি হাতে। বাড়ি এসে পুরো একদিন নিজের রুমে বন্দি ছিলো। তার রুম থেকে বেরিয়ে আসমাত শিকদারের কাছে গেলো। আসমাত শিকদার কাছ থেকে এসে আফরিনের সমস্ত জিনিস বাগানে নিয়ে আগুন ধরিয়ে পুরিয়ে দেয়।
তারপর দিন থেকে রাফসান পুরো বদলে গেলো। যা এখন পর্যন্ত চলছে। এর বেশি আয়শা বেগম কিছু জানেন না। এমনকি আফরিন কে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে ওদের মধ্যে কি কথা হয়েছিল তাও রাফসান কাউকে বলেনি।

চৈতালী একটু ভাবনায় পরে গেলো। তার বয়স তখন না হলেও ৮-৯ ছিলো। অথচ সে এসব ঘটনার কিছুই জানতে বা বুঝতে পারে নি। একটু চিন্তা করে সে বললো
– বড়মা আমি কালই যেতে চাই। বড়আব্বু কে ব্যবস্থা করতে বল।

রাফসানের দিন কাটছে ব্যাস্ততায়। বিয়ের কথা সে এই তিন চার দিনে ভুলেই গেছে বলা চলে। তার হয়তো মনেই পড়তো না যদি বাসায় ফিরে ডাইনিংয়ের সোফায় শুয়ে চৈতালী কে কার্টুন দেখতে না দেখতো।

রাফসান যেন অবাকের শীর্ষ স্থানে পৌছে গেছে চৈতালী কে দেখে। একবার মনে হলো ভুল দেখছে?? না কি ও গাড়ি চালাতে চালাতে বাড়ি চলে আসছে। কিন্ত আশে পাশে তাকালে তো এটা ওর নিজের বাসাই মনে হচ্ছে।
তাহলে চৈতী এখানে কি করে এলো??
ঘাড় ঘুড়িয়ে রাফসান কে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে চৈতালী বললো- ওতো অবাক হবার কিছু নেই। আমি সত্যিই এসেছি।
– তোকে কে নিয়ে এলো?? থমথমে গলায় বললো রাফসান।
– বড়মা আর বড়আব্বু দুজনেই এসেছে। একটু বাইরে গেছে। কি কি যেন কেনাকাটা করার আছে।
রাফসান রাগে দপদপ করতে লাগলো। তার বাবা মাযের এখানে চৈতী কে নিয়ে আাসার উদ্দেশ্য তার কাছে পরিষ্কার। রুমে ঢুকে সে বিষ্ময়ে কথা বলতে ভুলে গেলো। কারণ ডেসিংটেবিল, আলমারি, সব জায়গাতে চৈতী নিজের জিনিস দিয়ে ভরে ফেলেছে।
কপালে হাত দিয়ে বসে পড়লো রাফসান। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। বুঝাই যাচ্ছে তার বাবা মা হাত ধুয়ে তার পিছনে পড়েছে। এখন একমাত্র ভরসা এখন চৈতী। চৈতীর সাথেই খোলাখুলি কথা বলতে হবে।

রাতে খাবার টেবিলে কথা তুললেন আসমাত শিকদার। বললেন- তাহলে আমি আর তোর মা কাল চলে যাচ্ছি বুঝছিস। চৈতালীকে দেখে শুনে রাখিস।
যদিও মা বাবার উদ্দেশ্য আগেই জানতো রাফসান তারপরও বললো – চৈতী কে দেখে রাখবো মানে?? ও যাচ্ছে না তোমাদের সাথে?
– না। এতহ্মণে মুখ খুললেন আয়শা বেগম।
– না মানে??
– না মানে চৈতালী এখন থেকে এখানেই থাকবে। বলে উঠলেন আসমাত শিকদার।
– এটা কিন্তু অতিরিক্ত হচ্ছে বাবা।
– কোন কিছুই অতিরিক্ত হচ্ছে না। তোমার বউ তোমার কাছে থাকবে এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। বরং তুমি ব্যাপারটা জটিল করে তুলছো। তাছাড়া চৈতালী নিজের ইচ্ছায় এখানে এসেছে।

বাবার কথায় রাফসান এবার প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে চৈতালীর দিকে তাকালো। চৈতালী চুপচাপ খাচ্ছিলো আর বাবা ছেলের কথা শুনছিলো। রাফসান কে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো- আমি এখানে ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হবো। তাছাড়া তুমি আমাকে বিয়ে করে ফেলে চলে আসছো শুনলে লোকজন ছি ছি করবে না?? তাই আমি দায়িত্ব নিয়ে চলে আসছি। আমি তো কোন দোষ করি নাই। আমি কেন আমার জামাই থেকে দুরে থাকবো?? তাই না বড়আব্বু?
– একদম তাই। বলে উঠলেন আসমাত শিকদার।
রাফসান হতভম্ব হয়ে গেলো। ভেবেছিলো চৈতীর সাথে কথা বলে বিষয়টার সমাধান করবে। কিন্তু এই মেয়ে তো উল্টো সুর গাইছে।
(ক্রমশ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here