লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি ,পর্ব ১২,১৩,১৪

0
861

লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
পর্ব ১২,১৩,১৪
সামিরা আক্তার
১২

রাফসানের গুলশানের বাড়িটা ২ ইউনিটের। ২ টা ফ্ল্যাট। নিচতলায় গ্যারেজ আর দারোয়ান ও ড্রাইভারের থাকার জন্য রুম আছে। দোতালার এক একটা ফ্ল্যাটে দুটো রুম, দুটো বাথরুম, একটা ডাইনিং আর একটা কিচেন।
একটা ফ্ল্যাট সে বাসায় থাকলে অফিস রুম হিসাবে ব্যবহার করে, ওখানে অফিসের দরকারি জিনিস দিয়ে ঠাসা। আর সেখানে আছে তার পার্সোনাল জিম। আর এই ফ্ল্যাটটায় রাফসান থাকে।

কে জানতো আজকের মত শোচনীয় অবস্থা তার হবে। তাহলে জীবনেও ঐ ফ্ল্যাটের ওমন অবস্থা করে রাখতো না। এখন যদি চৈতী তার রুমে ঘুমায়? তাহলে সে কোথায় ঘুমাবে? ফ্লোরে?? অসম্ভব তার শরীর ব্যাথা হয়ে যায়। তাহলে কি সোফায়?? তাও না হাত পা না ছড়িয়ে শুলে তার জীবনেও ঘুম আসবে না।
আবার ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে যে ওর মাঝেই ঘুমাবে তাও সম্ভব না তার মা দেখলেই নায়িকা শাবানার মত ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে কাঁদবে। রাফসানের সব রাগ চৈতালীর উপর গিয়ে পড়লো।

রাফসান কে বাঁচাতেই বোধ হয় চৈতালী আয়শা বেগম কে নিয়ে রাফসানের রুমে ঘুমালো। আর আসমাত শিকদার ও রাফসান কে এক রুমে দিলো। রাফসান মনে মনে আল্লাহ কে ধন্যবাদ দিলো। চৈতালীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেও ভুললো না।
রাফসানের মুখ দেখে চৈতালী মৃদু হাসলো। মনে মনে বললো আজই তোমার শেষ শান্তির ঘুম রাফসান ভাই। কাল থেকে বুঝবা আমি কি জিনিস।

পরদিন সকালে আয়শা বেগম আর আসমাত শিকদার চলে গেলেন। যাওয়ার আগে চৈতালীর মন খারাপ ছিলো। ওনারা বলে গেছেন পনের দিন পর পর এসে চৈতালী কে দেখে যাবেন।
রাফসান ও ওনাদের সাথে একবারে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেছে।
ওনারা বেরিয়ে যাবার পর চৈতালী পুরো বাসা ঘুরে দেখলো। ছিমছাম বাসা। পরিষ্কার। আর প্রচন্ড নিরিবিলি। রাফসানের রুমটা বেশ বড়। একপাশে একটা বইয়ের ছোট খাট তাক। বেডরুমে বইয়ের তাক দেখে চৈতালী একটু অবাক হলো। সেখানে বেশ অনেক গুলো বই। বেশির ভাগই হুমায়ূন আহমেদের লেখা।বই দেখে মনে হচ্ছে না কেউ পড়েছে। একদম নতুন।

চৈতালীর ঘুম পাচ্ছে। সারারাত তেমন ঘুমায় নাই। শুয়ে শুয়ে রাফসান কে বাগে আনার প্লান করেছে। সে জানে এই সম্পর্ক থেকে সে বের হতে পারবে না। কারণ এর সাথে পরিবারের আবেগ, ভালবাসা, সম্মান জরিয়ে আছে। একমাত্র রাফসান ছাড়া কেউ চাইবে না সে এই সম্পর্ক থেকে বের হোক।
তাই সে ভেবে নিয়েছে এই এক জীবন সে বাংলা সিনেমার নায়িকা হয়ে কাটিয়ে দেবে। সবার ভালোর জন্য নিজে একটু খারাপ থাকলে কিছু হয় না।

রাফসান ফিরলো বিকেল বেলা। অভ্যাসবসত নিজের রুমে ঢুকে গেলো। আর ঢুকেই থমকে গেলো। বিছানায় চৈতী শুয়ে আছে। গাঁয়ে একটা গেন্জি আর প্লাজু। কোলবালিশ কে জরিয়ে ঘুমিয়ে আছে স্বাভাবিক ভাবে।
রাফসান একটু হ্মুব্ধ হলো এই মেয়ে এই রুমেই কেন ঘুমালো? আবার নিজের জিনিস দিয়ে রুম ভরিয়ে ফেলেছে।
ভাবখানা দেখে তো মনে হচ্ছে না এই রুম ছাড়বে। ফাজিল মেয়ে। বেঁছে বেছে ওর পছন্দের রুমটাই দখল করেছে। মনে হচ্ছে ওরই এই রুম ছাড়তে হবে।
রাফসান একটা দীর্ঘ শ্বাস নিলো। চৈতীর সম্পর্কে ওর ধারণা কম। এই মেয়েটা বলতে গেলে ওর আড়ালেই বড় হয়েছে। তাই ওর কি করা উচিত বুঝতেছে না।

চৈতালীর যখন ঘুম ভাঙলো তখন আসর আজান দিয়েছে। উঠে অজু করে নামাজ টা পড়ে বাইরে বেরিয়ে দেখলো রাফসান মনোযোগ দিয়ে নিউজ দেখছে আর কফি খাচ্ছে। চৈতালী ধপ করে রাফসানের পাশে বসে পড়লো।
রাফসান একটু সরে বসলো। চৈতালী হঠাৎ রাফসানের হাত থেকে কফি নিয়ে চুমুক দিলো।
হাত থেকে কফি নেওয়াতে রাফসান একটু হকচকিয়ে গেল। তার চেয়ে বেশি অবাক হলো যখন ওকে কফি খেতে দেখলো।
এই মেয়ে কি পাগল। অন্যের মুখের জিনিস মানুষ কিভাবে খায় ও ভেবে পেলো না।

চৈতালী কফি মুখে নিয়ে মুখ কুঁচকে ফেললো। এইটা কোন খাওয়ার জিনিস হলো। মুখে বললো- তুমি এরকম আলতু ফালতু জিনিস খাও?
– এটা ফালতু না। ব্ল্যাক কফি। গমগমে স্বরে উত্তর দিলো রাফসান।
– ওই একই হলো। আর এসব কি দেখো নিউজ ফিউজ। নিউজ দেখে তোমার লাভ কি?
– লাভের জন্য কেউ নিউজ দেখে না। দেশ- বিদেশের পরিস্থিতি জানার দেখে।
– চৈতালী হেঁসে ফেললো। বললো- দেশ বিদেশের পরিস্থিতি জেনে তুমি কি করবা?? দেশরে উদ্ধার করবা??
রাফসান কোন জবাব দিলো না। বরং এবার নিউজে এমন মনোযোগ দিলো যেন সে নিউজের মধ্যে ঢুকে যাবে।
– এই টিভিতে ওয়াইফাই কানেক্ট?? জানতে চাইলো চৈতালী??
– হুম।
চৈতালী কি যেন একটু ভাবলো। তারপর রাফসানের পায়ের উপর পা দিয়ে উল্টো দিকে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো।তারপর পাশ থেকে রিমোট নিয়ে সার্চ অপশনে গিয়ে গান খুজতে লাগলো।
চৈতালীর এমন কাজে রাফসানের কথা বন্ধ হয়ে গেছে। চেষ্টা করেও কথা বলতে পারছে না। হাঁসফাঁস লাগছে। কি সাংঘাতিক মেয়ে। মুরুব্বি মানে না। কেমন পায়ের উপর পা দিয়ে শুয়ে আছে। তার এখন কি করা উচিত?
রাফসান ঘামতে শুরু করলো।
রাফসানের এই করুন অবস্থার বিস্ফোরণ ঘটলো যখন টিভিতে আশিক বানায়া গান বেজে উঠলো। রাফসান এই মুহুর্তে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মানুষ হিসাবে আখ্যায়িত করলো। কি অসভ্য মেয়ে। ফাজিলের ফাজিল।
চৈতালী আড়চোখে রাফসানের অবস্থা পর্যবেহ্মণ করছে। রাফসানের অবস্থা দেখে তার হাঁসিতে পেট ফেটে যাচ্ছে কিন্তু সে বহু কষ্টে হাঁসি চেপে আছে। এখন হাঁসলে পুরো ঘেঁটে ঘ হয়ে যাবে। সে ভাল করে পা দিয়ে পা চেপে ধরলো।

ঘরে এসি চলছে। তার মধ্যে ও রাফসান ঘেমে চলেছে। এমনিতে এই চৈতীর পা তার উপর এই গান। বহু কষ্টে সে গলা দিয়ে আওয়াজ বের করে বললো- চৈতী পা সরা। আমি রুমে যাবো।
– এতহ্মণ তো এখানে দিব্যি বসে ছিলে।এখন রুমে যাবে মানে? আমি পা টা সরাতে পারবো না।একটা রোমান্টিক গান দেখছি। দেখতে দাও
-এটা রোমান্টিক গান?
– অবশ্যই! তোমার কি মনে হয়??
-অসভ্য গান। ফালতু। এসমস্ত গান দেখিস তুই??
চৈতালী এবার উঠে আয়েশ করে বসলো। তারপর রাফসানের দিকে ঝুকে বললো- তার মানে তুমি গানটা দেখেছো? এখন আমার সামনে সাধু সাজছো??

রাফসান পুরোই বোকা বনে গেলো। চৈতালী কথাটা এভাবে পেঁচিয়ে নিবে সে বুঝতে পারে নি। গানটা ইউনিভার্সিটি তে পড়াকালীন বন্ধুরা মিলে দেখেছিলো। ভাগ্যিস দেখেছিল। দেখেছিলো বলেই আগেই বুঝতে পেরেছে। না হলে আজ চৈতীর সাথে বসে এই গান তার দেখতে হতো। ভেবেই ভিতরে ভিতরে আর একবার ঘেমে গেলো সে। দ্রুত পায়ে ওখান থেকে চলে গেলো সে।
রাফসান যেতেই ঘর কাঁপিয়ে হেঁসে উঠলো চৈতালী। বাংলা ছবির নায়িকা যখন সে হয়েই গেছে তখন এই ছবি সুপার ডুপার হিট করানোর দায়িত্ব ও তার
(ক্রমশ)

লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
* পর্ব ১৩
সামিরা আক্তার

রাতে ঘুমানোর সময় চৈতালী যখন বুঝলো রাফসান অন্য রুমে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন সে বলে উঠলো -আমি একা ঘুমাতে পারবো না।
– মানে?? তুই বাড়িতে একা ঘুমাতি না?
– না। আমার সাথে ময়ূরী আপা থাকতো। আমার ভয় লাগে।
যদিও এটা ডাহা মিথ্যা কথা। চৈতালী একা থাকতে পছন্দ করে। ওর রুমে কেউ না বলে ঢুকলেও ওর রাগ হয়। আর অন্য কারো সাথে বেড শেয়ার করার কথা চিন্তা করলেই ওর মাথা ঘুরায়। কিন্তু এখন মিথ্যা কথা বলা ছাড়া উপায় নাই।
– আমি ফ্লোরে ঘুমাতে পারি না আমার শরীর ব্যাথা হয়ে যায়। আর সোফাতেও কম্ফোর্ট ফিল করি না। বলে উঠলো রাফসান।
– তোমাকে কেউ ফ্লোরে বা সোফায় ঘুমাতে বলেছে??
– তাহলে কি তুই ঘুমাবি??
– কি!! এক প্রকার চেঁচিয়ে উঠলো চৈতালী। তোমার কি মনে হয় এখানে ইন্ডিয়ান সিরিয়াল চলছে??
-তাহলে??
– আমরা দুজনেই খাটে ঘুমাবো।
লাফিয়ে তিন হাত পিছিয়ে গেলো রাফসান। এই মেয়ের আসলেই মাথা খারাপ। এর সাথে কথা বলাই বেকার। মুখে বললো- অসম্ভব তুই একাই ঘুমাবি।
তেঁতে উঠলো চৈতালী। বললো – আর রাতে যদি আমি ভয়ে হার্ট এট্যাক করি? তার দায়ভার কে নিবে? তুমি?জানো না আমার বাবা মায়ের আমি একটাই মেয়ে।

রাফসান হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিলো। তার ঠিক কি করা উচিত সে বুঝতে পারছে না। এই মুহুর্তে তার হাঁত পা ছাড়িয়ে কাঁদতে মন চাইছে।
অন্যদিকে রাফসান কে নাস্তানাবুদ করতে পেরে খুশিতে আটখানা চৈতালী। কিন্ত মুখখানা স্বাভাবিক করে বললো- আরে তুমি এত হাইপার কেন হচ্ছো বলো তো?? নিজের বিয়ে করা বউয়ের পাশেই তো ঘুমাবে।

এতহ্মণে সামলে রাখা মেজাজটা এবার আর সামলাতে পাড়লো না রাফসান। দাঁতে দাঁত চেপে বললল- একদম বউ বউ করবি না।
– কেন?? বউ বউ করলে কি হবে? তোমার সাথে তো আমার বিয়ে হয়েছে। আমি তো তোমার বউই হই। তাহলে বউ বউ করবো না কেন?
– একদম থাপ্পড় দিয়ে গাল লাল করে দেবো। আমার বয়স জানিস??
– থাপ্পড় দিয়েই দেখো? একদম গুলশান থানায় গিয়ে তোমার নামে বধু নির্যাতনের মামলা ঠুকে দিবো।

রাফসান হতভম্ব হয়ে গেলো। এইটা কি মেয়ে না বিচ্ছু। এইরকম সাংঘাতিক মেয়ে তাদের বংশে আছে ভাবতেই মাথা ঘুরালো তার। হতাশ হয়ে খাটে বসে পড়লো সে।তারপর ঠান্ডা গলায় বললো- চৈতী তোর বয়স আর আমার বয়স জানিস?
– জানি। না জানার কি হলো? আর কথা হচ্ছে খাঁটে শোয়া নিয়ে। এখানে বয়সের হিসাব এলো কেন??
– তুই কি চাইছিস চৈতী??
-আপাতত এটাই যে এখানে ঘুমাও।
– তারপর??
– তারপর মানে??
– তারপর তুই সারাজীবন আমার সাথেই থাকবি??
চৈতালী বুঝলো রাফসান সিরিয়াস প্রসঙ্গে চলে গেছে। সাবধানে কথা বলতে হবে।বললো
– তো কোথায় যাব? তুমি আমার স্বামী। তোমার কাছেই তো থাকবো।
– চৈতী তুই বাচ্চা মেয়ে। তোর বয়স এখনও আঠারো হয় নাই। আমার মত একটা আধবুড়ো লোকের সাথে তোর বিয়ে হয়েছে তোর খারাপ লাগছে না?

এবার মেজাজ হারালো চৈতালী। বললো-বাচ্চা মেয়ে মানে? ১৭ বছরে কেউ বাচ্চা থাকে না। তাছাড়া আর ৫ মাস পড়েই আমার বয়স ১৮ হবে। আর..
-আর কি?? বলে উঠলো রাফসান।
চৈতালী একটু লজ্জা পাওয়ার ভান করলো। তারপর বললো- আর আমার আধবুড়ো বর পছন্দ। আমার এই আধবুড়ো বর রাজি থাকলে সামনের বছরই আমি তাকে বাচ্চার বাবা বানিয়ে দেবো।

রাফসান এবার কাঁশতে শুরু করলো। কাঁশতে কাঁশতে চোখমুখ লাল হয়ে গেলো। চৈতালী দৌড়ে পানির বোতল এনে এগিয়ে দিলো। রাফসান পানি খেয়ে একটু শান্ত হলো। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বললো- আমার চোখের সামনে থেকে যা।

চৈতালী তখন ও লজ্জা পাওয়ার ভান ধরে আছে। তাই লাজুক স্বরে বললো- যাচ্ছি না। তবে শুয়ে পড়ছি। তুমিও শুয়ে পড়ো। আর শোনো বলেই রাফসান কে ডাকলো চৈতালী।
রাফসান তাকাতেই চৈতালী বললো- আমার কিন্তু অনেক গুলো বাচ্চার শখ। তাই আমরা বছর বছর বাচ্চা নিবো। এই ধরো একটা হেটে বেড়াবে, একটা কোলে থাকবে, একটা পেটে থাকবে। বলেই মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়লো সে।
বিস্ফারিত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো রাফসান। এবার ও কাশতেও ভুলে গেছে।

(ক্রমশ)

লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
*পর্ব ১৪
সামিরা আক্তার

রাফসান দুহাতে কপাল চেপে ধরে জিমে বসে আছে। কাল রাতে তার একটুও ঘুম হয় নাই। চৈতালী বার বার তাকে জরিয়ে ধরেছে। গায়ের উপর পা তুলে দিয়েছে। মোট কথা সারা রাত জ্বালিয়েছে।
রাফসান বেশ বুঝতে পারছে এসব চৈতালীর ইচ্ছাকৃত কাজ। কাল রাতের কথা শোনার পর ও বুঝে গেছে চৈতালী এত সহজে তার ঘাড় থেকে নামবে না।
রাফসান এটা বুঝতে পারছে না চৈতী কেন নিজের ভালো টা বুঝতে পারছে না। তার অন্যকিছু ভাবতে হবে।

চৈতালী আজ রাফসানের পছন্দের নাস্তা বানাচ্ছে। আজ সকালে সে বড়মার থেকে ফোন দিয়ে রাফসানের পছন্দ জেনে নিয়েছে। রান্নাটা সে ভালই পারে। চৈতালী ঠিক করেছে এখন থেকে রাফসান কে আর লতাপাতা খেতে দিবে না। এজন্য বুয়া কে রাফসানের জন্য আলাদা নাস্তা বানাতে দেয় নি।

রাফসান যখন বাসায় আসলো চৈতালী তখন টেবিলে নাস্তা দিচ্ছে। রাফসান কে ডেকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বললো।
রাফসান একবার চৈতালীর দিকে তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নিলো। কি আশ্চর্য মেয়ে টি-শার্ট, প্লাজু পড়বি ভালো কথা ওড়না পড়বি না কেন?? অসভ্য মেয়ে।

পরহ্মণেই ভাবলো চৈতী ওড়না না পড়লে রাফসানের কি?? রাফসান এত কিছু দেখবে কেন?? তাহলে কি রাফসান চৈতীকে অন্য নজরে দেখতে শুরু করেছে??
ভেবেই আতকে উঠলো। তারপর বললো- চৈতী আমার কাজিন আর কিছু না।

নাস্তার টেবিলে একটু অবাক হলো রাফসান। নাস্তায় লুচি, চিকেন কষা, সুজির হালুয়া আর জুস। রাফসান অবাক হলেও প্রকাশ করলো না। বললো- আমার নাস্তা বানায় নি বুয়া??
– আমি নিষেধ করেছি। বলে উঠলো চৈতালী।
-কেন??
– কারণ তুমি এইগুলা খাবে।
রাফসান একটু চুপ করে শান্ত গলায় বললো- আমি এত ভারী খাবার দিয়ে ব্রেকফাস্ট করি না চৈতী।
বলেই উঠে যাচ্ছিলো। চৈতালী বুঝলো রাফসান ওর সাথে কথা বাড়াতে চাইছে না। আর খাবে ও না। এখন ওর করা উচিত। এইভাবে ফেল মারলে তো হবে না।
আচমকা চৈতালী কেঁদে দিলো। ও জানে এটাই ওর এই মুহুর্তে শেষ অস্ত্র।

রাফসান চৈতালী কে কাঁদতে দেখে পুরোই বোকা বনে গেল। এই বিচ্ছু মেয়ে আবার কাঁদেও। কিন্তু মুখে বললো- কি হলো?? কাঁদছিস কেন?
– কাঁদবো না তো কি করবো?? তুমি আমাকে অপমান করেছো।
– আমি!!!!?? কিভাবে??
– আমি এত কষ্ট করে রান্না করলাম আর তুমি খেলে না। এটা অপমান ছাড়া আর কি?
আমি এখন বড় আব্বু কে ফোন করে বলবো তুমি আমাকে থাপ্পড় মেরেছো।
– মিথ্যা কেন বলবি??
– না খেলে মিথ্যাই বলবো।

রাফসান হাত মুঠ করে ধরে রাগ কন্ট্রোল করলো। তারপর খেতে বসলো। এতহ্মণে চৈতালী জয়ের একটা হাঁসি দিলো।
রাফসান খাচ্ছিলো। হঠাৎ চৈতালী বলে উঠলো – তুমি এত আনরোমান্টিক কেন??
রাফসান কেঁশে উঠলো। এই মেয়ে এখন আবার কি রোমান্টিক কথা বলবে কে জানে।
রাফসানের কাছ থেকে জবাব না পেয়ে চৈতালী হতাশ হলো। এই লোক আজ এত কম কথা বলছে কেন??

তারপর আবার বললো- রাফসান ভাই
-হু
– রান্না কেমন হয়েছে??
– ভালো।
চৈতালী পুনরায় হতাশ হলো। এই লোক কথা না বললে কথা আগাবে কি ভাবে? কাল রাতে কি ও বেশি বেশি করে ফেলেছে? কিন্তু কাল তো এই লোক ওর সাথে কোমড় বেঁধে ঝগড়া করলো। চৈতালি এক মুহূর্ত ভাবলো তারপর বললো- তুমি একাই খাচ্ছো আমাকে তো বললেও না।
রাফসান একটু গিল্টি ফিল করলো। আসলেই তো। তারপর বললো- তোকে কে বসে থাকতে বলেছে? তুই ও খা।
– তুমি আমাকে খাইয়ে দাও।
রাফসান একটু হকচকিয়ে গেল। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললো- তোর হাতে কি সমস্যা? নিজে হাতে খা।
– না আমি তোমার হাতেই খাব। আমি তোমার একটামাত্র বউ। তুমি আমাকে কোথায় নিজ থেকে খাইয়ে দেবে তা না। তুমি আমাকে না খাইয়ে দিলে আমি আজ খাবই না।
রাফসান চৈতালীর কথার উত্তর না দিয়ে খাবার এনে চৈতালীর মুখের সামনে ধরলো। ও বুঝে গেছে এই মেয়ের সাথে জোরাজুরি করে লাভ নেই। শুধু শুধু সময় নষ্ট। বলেছে যখন তখন খাবেই।

চৈতালী হাঁ হয়ে আছে। এত তাড়াতাড়ি কাজ হয়ে যাবে সে ভাবে নি। সেও কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেয়ে নিলো।
খাওয়ার শেষে চৈতালী একটা অভাবনীয় কাজ করে বসলো। ঠাস করে রাফসানের গালে একটা চুমু দিয়ে দৌড় দিলো।
রাফসান একদম ফ্রিজ হয়ে গেলো। পানি খাবার জন্য গ্লাস হাতে নিয়েছিলো সে সেটা হাত থেকে পড়ে খন্ড খন্ড হয়ে গেলো।

রাফসান কে জ্বালিয়ে চৈতালীর দিন বেশ কেটে যাচ্ছিলো। এর মধ্যে সে রাফসান কে নিয়ে গিয়ে অনার্সে ভর্তির আবেদন করে এসেছে। যদিও রাফসান যেতে চায় নি। ড্রাইভার নিয়ে যেতে বলেছে। কিন্তু চৈতালী কান্না কাটি করার কারণে রাফসান নিজেই ওর সাথে গিয়েছিল।
বলা বাহুল্য রাফসান কিছু না শুনলেই চৈতালী মরা কান্না শুরু করে। যার কারণে রাফসানের সেই কাজ করতেই হয়। এমনকি তেল মসলা যুক্ত খাবারও খায় মাঝে মাঝে।
খাওয়ার ব্যাপারে সে চৈতালীর সাথে খুব একটা আপোষ করে না।
এভাবেই খুনসুটি আর কথা কাটাকাটির মধ্য দিয়ে ১৫ দিন চলে গেলো।

রাতে রাফসান শুয়ে পরার পর চৈতালী কে বললো
– কাল মা আসছে।
চৈতালী কিছু একটা ভাবছিল। রাফসানের কথা কানে আসতেই সে রাফসান কে জরিয়ে ধরে বললো – সত্যি?
– হুম। বলে একটা দীর্ঘ শ্বাস নিলো রাফসান।

চৈতালীর করা সবচেয়ে বিরক্তিকর কাজ হলো জরিয়ে ধরা। কিন্তু রাফসান জানে ওকে বলে কোন লাভ নেই।
বললে আরও বেশি করবে।
বরং আজকাল যখন তখন জ্বরিয়ে ধরে। আর হুটহাট চুমু খায়।
এই জায়গা রাফসান নির্যাতিত পুরুষ। কিছু বলার নেই। বললেই কেঁদে কেটে একশেষ।

কিছু একটা ভেবে বললো – চৈতী
– হুম।
– তুই এবার মা বাবার সাথে চলে যাবি।
-দেখি।
রাফসান জানে চৈতালী যাবে না। শুধু শুধু বলা।
(ক্রমশ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here