লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি ,পর্ব ১৫,১৬,১৭

0
760

লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
পর্ব ১৫,১৬,১৭
সামিরা আক্তার
১৫

ভিডিও কলে হা হা করে হাঁসছে জুনায়েদ। রাফসান বিরক্তি নিয়ে ল্যাপটপের দিকে তাকালো। অফিসে কাজের ফাঁকে বন্ধুকে কল দিয়ে একটু দুঃখের কথা শেয়ার করছিল সে।
কোথায় বন্ধুর দুঃখে দুঃখিত হবে তা না হাঁসছে। দাঁতে দাঁত চেপে বললো- শালা হাঁসবি না। সেদিনের মেয়ে শুক্রবারে শুক্রবারে যার বয়স ৮ দিন। সেই মেয়ে আমাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাচ্ছে আর তুই হাঁসিস??

জুনায়েদ এবার দ্বিগুণ জোরে হাঁসতে শুরু করলো। রাফসান রক্তচহ্মু নিয়ে জুনায়েদের দিকে তাকালো।জুনায়েদ নিজেকে সামলে নিয়ে বললো – আচ্ছা হাঁসতেছি না। এবার বল।
– বলবো মানে?? এতহ্মণ কি বললাম??
– আমি তো কোন সমস্যা দেখি না। চৈতালী ভালো মেয়ে। তাছাড়া ও যদি মানতে পারে তোর সমস্যা কোথায়? বলে উঠলো জুনায়েদ।

জুনায়েদের কথার উত্তর না দিয়ে রাফসান বললো- আজ বিকেলে মা বাবা আসবে। ওদের সাথে চৈতালীকে যেভাবেই হোক পাঠাতে হবে। একটা বুদ্ধি দে।
– অসম্ভব।
– কেন?? রাফসান জানতে চাইল।

-আমি তোকে বৌ তাড়ানোর বুদ্ধি দিয়ে নিজে বৌ ছাড়া হবো না কি? তোকে বুদ্ধি দিয়েছি শুনলে রাফিয়া আমাকে ডিভোর্স দিতে এক সেকেন্ড চিন্তা করবে না।তাছাড়া এই বদবুদ্ধি আমি তোকে দেবোই কেন??

-যাহ তোদের কাউকে লাগবে না। আমার সমস্যা আমি সমাধান করবো।

– জীবন সবাইকে দ্বিতীয় বার সুযোগ দেয় না রাফসান। তোকে দিয়েছে। কাজে লাগা। হেলায় হারাস না।
জুনায়েদের সাথে অন্যান্য কথা বলে কল কাটলো রাফসান। বাসায় যেতে হবে। এতহ্মণে নিশ্চয়ই মা-বাবা চলে এসেছে।

**আয়শা বেগমের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে চৈতালী। এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো। চৈতালী বললো
– বড়মা তোমার ছেলে এসেছে বোধহয়। বলেই দৌড়ে গেল।
আয়শা একটু অবাক হলেন। রাফসানের প্রতি চৈতালীর উদাসীনতা নেই বললেই চলে। বরং রাফসান ঘরে আসায় চোখমুখ চকচক করছে। মাত্র ১৫ দিনে এত পরিবর্তন তিনি আশা করেন নি। তার বুক থেকে একটা পাথর নেমে গেলো মনে হলো।
চৈতালীর এখন কম বয়স। রাফসান তাকে ভালবাসা দিয়ে যেভাবে গড়ে তুলবে সে ওভাবেই গড়ে উঠবে। এবয়সী মেয়েরা যে ভালবাসার কাঙাল।
এখন রাফসানের দিকটা কি রকম তাই দেখার বিষয়।

আয়শার ভাবনার মাঝখানে রাফসান এসে তাকে জরিয়ে ধরলো। তিনি ছেলের মুখের দিকে তাকালেন। কি রাজপুত্রের মত ছেলে তার। এখন দিন দিন যেন বেশী সুন্দর হচ্ছে। কারো নজর না লাগুক।

– মা কেমন আছ? বলে উঠলো রাফসান।
– ভালো আছি। তোরা ভাল থাকলে আরও ভাল থাকবো।
– বাবাকে দেখছি না।
– বড়আব্বুর কাজ আছে। তাই বড়মা কে দিয়ে চলে গেছে। আবার নিতে আসবে। উত্তর দিলো চৈতালী।
-ওহ। বলেই মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো রাফসান। পরম মমতায় ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন আয়শা।

-উঃ ঢং দেখলে বাঁচি না। ভেংচি দিলো চৈতালী। এরকম দামড়া ছেলেকে মাথায় হাত বুলানোর কি হলো?

রাফসান কোন জবাব দিলো না। আায়শা হেঁসে বললেন- আয় তোকেও দেই।
চৈতালী ও গিয়ে রাফসানের পাশে শুয়ে পরলো। দুজনের দিকে তাকিয়ে খুশিতে চোখে পানি এসে গেল আয়শা বেগমের।

রাতে খাবার টেবিলে রাফসান কে স্বাভাবিক খাবার খেতে দেখে কেঁদে ফেললো আয়শা। তিনি ভুনা খিচুড়ি আর গরুর মাংস রান্না করে নিয়ে এসেছিলেন। রাফসান খাবে জানলে আরও অনেক কিছু বানাতেন। তবে কাল এই ভুল করবেন না। সারাদিন ছেলের পছন্দের খাবার বানাবেন।
ছেলেকে কতদিন মন মত খাওয়ান না।

**রাতে শোয়ার সময় আয়শা কে নিয়ে অন্য রুমে চলে গেলো চৈতালী। রাফসান আজ একা ঘুমাবে। ভিতরে ভিতরে খুশিতে ডগমগ করতে লাগলো সে। আজ অনেকদিন পর সে শান্তির ঘুম দেবে। একয়দিন তো এক প্রকার আতঙ্কে ছিলো যে এই বুঝি জরিয়ে ধরলো, এই বুঝি চুমো দিলো।

তবে রাফসানের এই খুশি বেশিহ্মন স্থায়ী হলো না। এপাশ ওপাশ করলে ঘুম আসলো না। মনে হলো কিছু একটা মিসিং। আড়চোখে চৈতালীর ফাঁকা জায়গাটা দেখে বুকের ভিতর কেমন ধক করে উঠলো।
তবে কি সে চৈতালী কেই মিস করছে??
না না এ হতে পারে না। বলে নিজেকে শাসালো সে।
তারপর আরও দুই ঘন্ট ঘুমানোর চেষ্টা করলো। না পেরে উঠে বসলো। নিজেকে কেমন অসহায় লাগলো।
এই ফাজিল মেয়ে ১৫ দিনেই তার অভ্যাস বদলে দিয়েছে।
টেবিলে পানি খাওয়ার জন্য জগ হাতে নিতেই দেখলো পানি নেই।
রাফসান হতাশ হলো। আজকাল তার সব কাজ চৈতালীই করে৷ তাই সে এসবে নজর দেয় না। তাই পানির জগে পানি আনার কথাও মনে নেই। অথচ আগে সব দিকে খেয়াল থাকতো তার।

রাফসান গুটি গুটি পায়ে আয়শা বেগমের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। কতহ্মণ দাঁড়িয়ে থাকলো দরজার সামনে। তারপর মনের সাথে যুদ্ধ করেই নক করলো দরজায়।
চৈতালী ঘুমিয়ে গেছে। আয়শা দরজা খুলে ছেলেকে দেখে অবাক হলেন। বললেন- ঘুমাস নি??
রাফসান ইতস্তত বোধ করলো। কি বলবে মাকে সে?? চৈতালী কে মিস করছে? ধুর কেন যে এলো।
তারপর বললো- না মানে এমনি এসেছিলাম।
বলেই সোফায় বসলো সে। আড়চোখে তাকাল চৈতালীর দিকে। ফাজিল মেয়ে। তার অভ্যাস বদলে দিয়ে নিজে তো ঠিকই ঘুমাচ্ছে।

আয়শা ছেলেকে লহ্ম করছিলেন। বললেন – অনেক রাত হয়েছে বাবা। ঘুমা গিয়ে।
– চৈতী এখানেই থাকবে? আনমনে বলে ফেললো রাফসান।
– কি বললি??
– না কিছু না। ওই চৈতী আমার ল্যাপটপের চার্জার কই রাখছে তাই জানতে এসেছিলাম।বলেই দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বের হলো সে।

ছেলে বের হতেই হেঁসে ফেললেন আয়শা। পরিবর্তন শুধু চৈতালীর না রাফসানের ও হয়েছে। এজন্যই বলে মেয়ে মানুষ সব পারে। রাফসানের বাবাও বলেছিলো আগুন আর মোম পাশাপাশি থাকলে এমনি গলবে।
(ক্রমশ)

লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
*পর্ব ১৬
সামিরা আক্তার

রাফসান চুপচাপ শুয়ে আছে। কালও চৈতালী এঘরে ছিলো। সে ল্যাপটপে কি যেন করছিলো। হঠাৎই ল্যাপটপ বন্ধ করে দিয়ে চৈতী বললো- তুমি এমন কেন?
– কেমন?? জিজ্ঞাসু চোখে ওর দিকে চাইলো রাফসান।
– আনরোমান্টিক ঢেরস।
– মানে?
– মানে কই আমাকে ধরে ফটাফট কয়েকটা চুমু খাবে, আদর করবে তা না..
– চৈতী,,,ধমকের স্বরে বলে উঠলো রাফসান।

– একদম ধমকাবে না আর উপদেশ দিবে না। আমি তো বলেছি তোমাকে নিয়ে আমার সমস্যা নেই। আর আমার বয়স কয়দিন পরে আঠারো হবে।
– তো আমি কি করবো?? ঝাঁঝের সাথে বলে ওঠে রাফসান।
– তো তুমি আমাকে এখন আদর করবে। আমি এখানে এসেছি ১৫ দিন। তার ও ১ সপ্তাহ আগে আমাদের বিয়ে হয়েছে। অথচ তুমি আমার সাথে ঠিক করে কথাও বলো না।
– কথা না বললেও তো জোর করে বলতে বাধ্য করিস আবার বলিস কথা বলি না।
– আমার কি মনে হয় জান??
– কি??
– তোমার সমস্যা আছে। তাই আমাকে আদর করতে ভয় পাও। বলেই দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায় চৈতী।

কাল চৈতীর কথায় আহাম্মক হয়ে গেলেও আজ সে কথা মনে পড়তেই হেঁসে ফেললো রাফসান। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো দুইটা বেজে গেছে।
রাফসান আজ অনুভব করলো চৈতালী ১৫ দিনেই তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এরপর কি হবে???

**সকাল বেলা রাফসান অফিসে যাওয়ার পরই আয়শা চৈতালী কে শপিং করতে যাওয়ার জন্য বের হলেন। উদ্দেশ্য চৈতালী কে শাড়ি কিনে দেওয়া।
এই মেয়ে কিসব পড়ে থাকে। এভাবে কি আর পুরুষ মানুষের মন জয় করা যায়?? শাড়ি পড়ে স্বামীর সামনে একটু এলোমেলো হয়ে ঘুরে বেড়াবে তাহলেই না স্বামীর নজরে বেশি বেশি পড়বে।
এইকথা তিনি শাশুড়ি হয়ে কি ভাবে বলবেন বুঝতে পারছেন না। এই মেয়ে তো শাড়ি কেনার কথা শুনেই মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।
বলে না কি শাড়ির কথা শুনলে তার অস্থির লাগে। অনেক ভেবে তিনি রাফিয়া কে এসএমএস করলেন গাড়িতে বসে।
মেয়েকেও অতো ভেঙ্গে বলতে পারলেন না। শুধু বললেন চৈতালীকে শাড়ি কিনতে রাজি করা। তার মেয়ে বুদ্ধিমতী। বুঝে যাবে কি বলতে চাইছে তার মা।

** চৈতালী মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। শাড়ি জিনিসটা তার অপছন্দের। অথচ বড়মা বলেছে তাকে এখন থেকে শাড়ি পড়তে হবে।
এর মাঝে চৈতালীর ফোন বেজে উঠলো। আয়শা বেগম আঁড়চোখে তাকালেন। চৈতালী কিছুহ্মণ কথা বললো রাফিয়ার সাথে। ফোন রাখতেই চৈতালী বললো- বড়মা রাফসান ভাইয়ের পছন্দের রং কি কি??
আয়শা বেগম মৃদু হাসলেন। যাক কাজ হয়েছে তবে।

**সন্ধ্যাবেলা রাফসান বাসায় এসে আয়শা বেগমের কাছে পানি চাইলো। আয়শা রান্না ঘরে কাজ করছিলো। চৈতালী কে ডেকে পানি দিতে বললো।
রাফসান নিচু হয়ে একটা ফাইল দেখছিলো। চৈতালী পানি এগিয়ে দিলো। ওর দিকে না তাকিয়েই পানির গ্লাস হাতে নিলো সে। পানি খেয়ে গ্লাস দেওয়ার জন্য চৈতালীর দিকে তাকাতেই গ্লাস হাত থেকে পড়ে গেলো তার।
চৈতালী শাড়ি পড়েছে। তার সাথে হাতাকাটা ব্লাউজ। তলাপেটের একটু উপরের জায়গাটা সে শাড়ি দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করেছে বলেছে বলে মনে হয় না। ফলে জায়গাটা দেখা যাচ্ছে।
একটু আগে পানি খেলেও রাফসান অনুভব করলো তার আবার তেষ্টা পেয়ে যাচ্ছে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে৷ এক প্রকার দৌড়ে পালালো সে ওখান থেকে।

চৈতালী রাফসান কে পানি দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলো। তার বলতে গেলে লজ্জা লাগছিল। রাফসানের পানির গ্লাস ভাঙ্গার শব্দে সে মাথা তুলে তাকিয়েছে। তাকিয়ে রাফসান কে ওরকম হাঁসফাঁস করতে দেখে তার এখন আরও লজ্জা লাগছে।
তার এরকম হাতা কাটা কাপড় পরার অভ্যাস নেই। এরকম পেট বের করে শাড়ি পরার কথা সে চিন্তাও করতে পারে না।
শাড়িটা তাকে আয়শা বেগম পড়িয়ে দিয়েছেন। আর ব্লাউজ রাফিয়ার কথামত কেনা। এজন্যই বোধ হয় রাফিয়া আপু বলছিলো শাড়ি পড়লেই দেখবা ভাইয়া কেমন তুমি ছাড়া কিছু বুঝবে না।
মনে পড়তেই চৈতালী আর এক দফা লজ্জা পেল।

** রাতে খাওয়া দাওয়ার পর আয়শা বেগম তড়িঘড়ি করে ভেতর থেকে দরজা দিয়ে শুয়ে পড়লেন। চৈতালী কে আজ তিনি তার কাছে রাখতে চান না। ওরা যত কাছাকাছি থাকে তত ভালো। বরং তিনি কালই চলে যাবেন বলে ঠিক করলেন।

রাফসান কাল রাতে চৈতালী কে মিস করলেও আজ মনে প্রানে চাইছিলো আজ যেন চৈতালী মায়ের কাছেই ঘুমায়। এমনকি চৈতালী বোধহয় নিজেও চাইছিলো আয়শার কাছে ঘুমাতে। কিন্তু আয়শার ওরকম দরজা দিয়ে শুয়ে পড়া দেখে দুজনেই হতাশ হলো।
বাধ্য হয়ে দুজনেই ঘুমাতে গেলো। ঘরে গিয়েই চৈতালী গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়লো।
রাফসান আড়চোখে চৈতালী কে দেখছিলো। কথা বলে কান ঝালাপালা করে দেওয়া মেয়েটা কেমন চুপচাপ। লজ্জা যে পাচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে।
লজ্জাই যখন পাবি তখন শাড়ি পড়লি কেন?? আর আমাকেই অস্বস্তিতে ফেললি কেন?? ফাজিল মেয়ে।
বিরবির করলো রাফসান।

কথায় বলে নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেশি। রাফসান ও চৈতালী কে তার জন্য নিষিদ্ধ মনে করেছিল। অথচ আজ চৈতালীর এই সর্বনাশা রুপ রাফসানের মনে অন্যরকম চিন্তা ভাবনার জন্ম দিচ্ছে।

রাফসান নিজেই নিজের মন কে শাসালো। কিন্তু ভিতর থেকে মন আর মস্তিক একসাথে বলে উঠলো তুমি কোন মহাপুরুষ নও রাফসান যে নারী দেখে তোমার কামনা বাসনা জাগবে না। এই মেয়ের কাছে যাওয়ার অধিকার তোমার আছে। সে তোমার স্ত্রী।

হাত মুঠ করে নিজেকে সামলিয়ে চৈতালীর পাশে শুয়ে পড়লো রাফসান। চৈতালী ততহ্মণে ঘুমিয়ে গেছে। তাকিয়ে দেখলো শোবার কারণে পেটের কাছের শাড়ি সরে গেছে, আঁচল সরে গেছে। রাফসান সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলো।
সে অনুভব করলো এই মেয়ে এইভাবে তার আশে পাশে থাকলে তার বিপদ। ঘোর বিপদ। তখনই অভ্যাসবসত চৈতালী জরিয়ে ধরলো তাকে। রাফসান একটা ঢোক গিললো। আজ তার একি পরীক্ষা নিচ্ছে চৈতী।

(ক্রমশ)

লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
*পর্ব ১৭
সামিরা আক্তার

রাফসান আজকাল একটা যন্ত্রনার মধ্যে আছে। সেটা হলো চৈতালী। আজকাল তার চৈতালী কে দেখতে ইচ্ছা করে, আদর করতে ইচ্ছা করে। এমন কি রাতের বেলা চৈতালী কে দেখে নিজে নির্ঘুম কাটিয়ে দেয়। বাসায় গেলে চৈতালীর বকবক শোনে। আশ্চর্যের বিষয় তার আজকাল চৈতালীর বকবক শুনতেও ভাল লাগে।
এই যন্ত্রনার নাম দিয়েছে সে মিষ্টি যন্ত্রণা।
আর এই কথা সে কাউকে বলতে পারছে না। কি হচ্ছে তার সাথে??
মনকে জিজ্ঞেস করলে মন যেন উত্তর দেয় তুমি আবার কাউকে ভালবেসে ফেলেছো রাফসান।
পরহ্মণেই আঁতকে ওঠে সে। এট কি ভাবে হতে পারে? সে তো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো জীবনে আর কোন রমনীর মায়ায় আকৃষ্ট হবে না।
তাও কেন হলো? তাও চৈতালীর মত একটা বাচ্চা মেয়ের কাছে। ভেবে পায় না রাফসান।
সবচেয়ে যন্ত্রণার এই মেয়ে আজকাল শাড়ি পড়ে। শাড়ি তো সামলাতেই জানে না। মাঝখান থেকে রাফসান বেসামাল হয়ে যায়।

চৈতালীর দিনকাল বেশ ভাল যাচ্ছে। রাফসান বাসায় না থাকলে সে শাড়ি পড়ে না। আসার আগে পড়ে। এটা রাফিয়ার বুদ্ধি। তারও কেন জানি আজকাল রাফসানের জন্য অপেক্ষা করতে ভাল লাগে, রাফসান কে দেখতে ভালো লাগে, রাফসানের জন্য নিজেকে সাজাতে ভালো লাগে।
এখন মনে হয় কেউ না বললেও সে রাফসানের সাথে থাকতে পারবে সারাজীবন।
আশ্চর্যের কথা তার আর এখন আশরাফের কথা মনে পড়ে না।
চৈতালী লহ্ম করছে রাফসানও বদলাচ্ছে। তার খেয়াল রাখছে।
এইতো সেদিন নুডলস রান্নার জন্য পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে চৈতালী কতটা হাত কেটে ফেললো। রাফসান দৌড়ে এসে তার হাতটা চেঁপে ধরে মাতবরি করার জন্য বকা দিলো। তারপর হাত ব্যান্ডেজ করে দিয়ে নিজেই নুডুলস রান্না করে তাকে খাইয়ে দিলো।
ভাবতেও যেন ভালো লাগে চৈতালীর। বেশিহ্মন গোসল করলে বকে ঠান্ডা লাগবে বলে, আজকাল অফিস থেকে আসার পথে ফুসকা,আইসক্রিম এগুলো আনতে দেখা যায় তাকে।
চৈতালী একদিন জানতে চেয়েছিল – তুমি কি করে জানলে এগুলো আমার পছন্দ?
– শুধু তুই না সব মেয়েদেরই এগুলো পছন্দ। উত্তর দিয়েছিলো রাফসান।
চৈতালীর হেঁসে ফেললো। তার আজকাল রাফসানের সব কর্মকান্ডই ভালো লাগছে।

** চৈতালী ঢাকার একটা ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি তে ইতিহাসে চান্স পেয়েছে। সে ছাত্রী হিসাবে মোটামুটি। ভালও না খারাপও না। তাই বলে ইতিহাসে পড়ার কোন ইচ্ছা তার ছিলো না। কি আর করার।

আয়শা বেগম যাওয়ার দু মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি আর আসেন নি। এর মাঝে চৈতালী কে নিয়ে রাফসান বাড়িতে গিয়েছিল।
এবার বাড়ি গিয়ে চৈতালী সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলেছে। রাফসানের সাথে বিয়ে দেওয়া নিয়ে মা বাবার প্রতি যে অভিমান জন্মেছিলো তা কোথায় হাওয়া হয়ে গেছে।
মেয়ের হাসিমুখ দেখে অনেকটা স্বস্তি অনুভব করেছে আসলাম শিকদার ও রেবেকা।
মেয়ে যে ভালো আছে তা বুঝতে পেরেছেন তারা।
চৈতালীর বাড়িতে কয়দিন থাকার ইচ্ছা থাকলেও তাকে রেখে আসেনি রাফসান।
কেন তা সে জানে না। বরং এই কারণে আয়শা মিটিমিটি হেসেছে। এমনকি রাফিয়াও ফোন দিয়ে মজা করছে।
এভাবেই দুষ্টুমিষ্টি ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাদের সম্পর্ক।

**রাফসানের আজ বাসায় ফিরতে দেরি হয়েছে। অফিসের কাজে তাকে যেতে হয়েছিল গাজীপুর। সেখান থেকে আসতেই দেরি হয়ে গেলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত ১০ টা।
বড্ড দেরি হয়ে গেছে। চৈতী কে যদি একটা ফোন করে দিতো। ভাবতে ভাবতে কলিংবেল দিলো রাফসান। ভিতরে কোন সাড়াশব্দ নেই।
এমন তো হয়না। বরং একবার দেওয়ার সাথে সাথে দরজা খুলে চৈতী। বেশ কয়েকবার বেল বাজিয়ে না পেয়ে চাবি দিয়ে দরজা খুললো রাফসান।
দরজা খুলেই দেখতে পেলো ডাইনিংয়ের সোফায় গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে চৈতী। টিভিতে কার্টুন চলছে। রাফসান মৃদু হাসলো। তারপর চৈতালী কে কোলে তুলে নিয়ে বেডরুমের দিকে গেলো।

চৈতালী কে শুইয়ে দিয়ে তার দিকে কতহ্মণ তাকিয়ে থাকলো রাফসান। মেয়েটা আজ শাড়ি পড়ে নি। কেন? শাড়ি পড়লে দেখতে বেশি সুন্দর লাগে। অবশ্য টি-শার্ট আর প্লাজু তেও ভাল লাগছে।
রাফসান একটা জিনিস খেয়াল করেছে চৈতালীর চেহারা বা ব্যবহারে বাচ্চামির ছাপ নেই।
বরং বয়স অনুযায়ী একটু বেশি চটপটে।
আলগোছে চৈতালীর কপালে একটা চুমু দিলো রাফসান। স্ত্রী হিসাবে চৈতালীর প্রথম ছোয়া। অথচ
কিছুই জানলো না চৈতালী।
অথচ জেগে থাকলে বলতো আমাকে ফটাফট একটা চুমু খাও তো।
ভাবতেই হেঁসে ফেললো সে। তারপর ওয়াশরুমে গেলো।ফ্রেশ হওয়াটা জরুরি।

রাফসান ওয়াশরুমে যেতেই চোখ খুললো চৈতালি। রাফসান কোলে নেওয়ার সাথে সাথে ঘুমে ছুটে গেছে তার। কিন্তু নিজেকে রাফসানের কোলে আবিষ্কার করার পর আর চোখ খোলেনি সে।
এখন তো আরও চোখ খুলবে না সে। চুমুর কথা মনে পড়তেই দুহাতে মুখ ঢাকলো সে।

**চৈতালীর ক্লাস শুরু হয়েছে। রেগুলার ক্লাস করছে সে। যদিও তার ইচ্ছে ছিলো না ক্লাস করার। কিন্ত রাফসান বলেছে ক্লাস না করলে বাড়িতে রেখে আসবে। বাসায় এমন কোন কাজ নেই যার জন্য সে ক্লাস করতে পারবে না। অগত্যা চৈতালী কে মেনে নিতে হয়েছে।
বলা বাহুল্য এখন রাফসান কথা বার্তায় চৈতালীর সাথে স্বাভাবিক। তাদের বিয়ে সাঁড়ে চার মাস হয়ে গেছে যদিও।
কয়দিন পরই চৈতালীর জন্মদিন। তার ১৮ বছর হবে। ইনিয়ে বিনিয়ে রোজই রাফসান কে মনে করায় সে কথা।
চৈতালীর জন্মদিন নিয়ে কোন মাথাব্যাথা নেই এমনিতে। তবে এবার সে দেখতে চায় রাফসান কি করে তার জন্মদিনে।
না কি আবার ভুলে যাবে কে জানে।
চৈতালী ক্যান্টিনে বসে এসব কথা ভাবছিলো। তার ভাবনার মাঝে তার পাশে এসে বসলো সাব্বির, উর্মি, শাপলা,আর পলাশ।
ওরা চৈতালীর নতুন বন্ধু। কয়েকদিনেই ওদের সাথে ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছে।
যদিও ওরা জানে না চৈতালী বিবাহিত।

সাব্বির এসেই বললো – ধুর শালা।
চৈতালী ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকালো। বললো- কি হলো?
– শালার দুনিয়াতে এত সাবজেক্ট থাকতে এই ইতিহাস পড়লো আমার কপালে? কোন সালে কোন রাজা, কে যুদ্ধ করছে এইগুলো পড়ে কি বা*ডা ফেলামু আমি??
– এই তুই ভাষা ঠিক কর। বলে উঠলো উর্মি।
-এহ আইছে আমার ভাষাবীদ।

ওরা সব গুলো একই কলেজের। ঢাকা তেই। ওদের মাঝে চৈতালী কি ভাবে যেন ঢুকে গেছে। চৈতালী কিছু বলতে চাইছিল এর মাঝে ওর ফোন বেজে উঠলো। রাফসান ফোন করেছে
(ক্রমশ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here