লেডি ডন পার্টঃ১,২

0
1874

লেডি ডন
পার্টঃ১,২
(একটি অন্যরকম মেয়ের গল্প)
writer: Snigda Hossain Mona

আদিত্য,শাওন,মাহির,মনি ও লিজা সবাই ভাবছে কি ঘটে গেলো কিছুক্ষন আগে….কিভাবে সম্ভব এটা?এসব নিয়েই তারা আলোচনা করছিলো হঠাৎ করেই বাড়ির সামনে অনেক গুলি কাল গাড়ি এসে থামলো গাড়ি থেকে হুর হুর করে নেমে এলো প্রায় ২,৩ ডজন কালো পোষাক পরিহিত গার্ডস টাইপের লোক,সবার হাতেই ছিল gun (বন্দুক)। ওরা এসে আদিত্য দের ঘিরে ধরল আর কিছু গার্ডস বাসার বাইরে দাঁড়িয়ে বন্দুক তাক করে দাঁড়িয়ে আছে যাতে কেউ আক্রমন করতে না পাড়ে। ঠিক তখনেই একটি luxury গাড়ি এসে থামলো বাসার সামনে,তা থেকে নেমে আসছে একটি অপুর্ব সুন্দরি মেয়ে গায়ে কালো রং এর লেদার জ্যাকেট হাতাগুলি ভাঁজ করে কুনুই পর্যন্ত তুলা,বাম হাতের কুনুই এর ঠিক নিচে আর ঘাড়ের ট্যাটু ২টা আজ স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে তার ফর্সা শরীরে,পায়ে কালো শো,হাতে চামড়ার গ্লাবস,চোখে কালো সান গ্লাস এ যেনো এক অন্যরকম মেয়ে যার পোষাক আষাক এ আছে পাওয়ারের চাপ আর চেহারায় আছে মুগ্ধতা,মেয়েটা হলো রুহি…!!!
রুহির এই হঠাৎ বদলে যাওয়াটাকে যেনো কেউই সহজ ভাবে নিতে পাড়ছে না….
যে মেয়ে কোনোদিন কারোর মুখের উপড় কথা পর্যন্ত বলে নি, সে মেয়ে আজ বাইরে মারামারি করে এসেছে তাও কোন সাধারন মানুষকে মারে নি
বরং পুলিশদের মেরে এসেছে, তারাও কম চেস্টা করে নি,অনেক চেস্টা করেছে রুহিকে আঘাত করার,কিন্তু ট্রেনিং প্রাপ্ত পুলিশো রুহির সাথে পেড়ে ওঠে নি।
তাতেও রুহির শান্তি হয় নি বাসায় এসে আদিত্যকে চোখ রাঙ্গিয়ে আদিত্যের ক্রেডিড কার্ড নিয়ে গেছে আর তা থেকে বেশ মোটা অংকের টাকা তুলে নিয়েছে এরিমধ্যে,যদিও আদিত্য রুহিকে কার্ডের নাম্বার বলে নি তবু কিভাবে জানি তুলে নিয়েছে,
আদিত্য,রুহি,শাওন,মাহির,মনি ও লিজা এরা সবাই বন্ধু তারা একই বাড়িতে থাকত।
মূলত আদিত্যের বাসায় পেইন গেস্ট হিসেবে থাকতো সবাই।
রুহিও এদের বন্ধবী তবে ও গরীব হওয়ায় এদের সবার সব কাজ করে দিত বিনিময়ে শুধু থাকা খাওয়া এইটুকুই নিত।
এতদিন রুহি কারো সাথে কখনো গলা উচু করে কথা বলে নি কিন্তু আজ কি হলো তার সবকিছুই কেমন বদলে গেছে পোষাক আষাক, আচারন সবকিছুই বদলে গেছে…

রুহি গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথেই গার্ডসদের দল ২ ভাগে ভাগ হয়ে গিয়ে মাঝখানে রাস্তা করে দিলো,
আদিত্য,মাহির,সাওন,মনি,লিজা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রুহির দিকে তাদের সবার মাথায় বন্দুক তাক করে দাঁড়িয়ে আছে গার্ডস।
রুহি হেঁটে এসে আদিত্যের সামনে দাঁড়ালো,
রুহির হাতেও AK47 টাইপের একটি gun আছে,

আদিত্যঃঅবাক হয়ে ভাবতে লাগলো কে এই রুহি…???তবে কি এতদিন রুহি ভালো মানুষির অভিনয় করেছিল? আমাদের সবার ক্ষতি করাই কি ওর উদেশ্য ছিল…???

চলবে…???

#লেডি_ডন
#পার্টঃ২
#writer: Snigda Hossain Mona

রুহি এসে আদিত্য এর সামনে দাঁড়াল,
আদিত্যঃ কি হচ্ছে এসব রুহি,এরা কারা? কি চাও তুমি?
রুহিঃ বেশি কথা আমার ভাল লাগে না।আর আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই।

আদিত্যঃ তোমার এত সাহস হয় কি করে,আমার সাথে এভাবে কথা বলার? তুমি জানো তুমি কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছো?

রুহিঃ হা হা হা…রুহি যেখানে দাঁড়ায় তার চারপাশের সব মানুষকেই চেনে নেয়, আর যার বাসায় ১ বছর থাকলাম তাকে চিনব না হাস্যকর প্রশ্ন করলেন মিঃআদিত্য চৌধুরী….

আদিত্যঃ তুমি এমন ব্যবহার কেন করছো?

রুহিঃ পেন পেন ভাল লাগছে না,এই কে আছিস নিয়ে যা সবাইকে বিরক্তি নিয়ে বলল রুহি।

গার্ডসরা সবাইকে নিয়ে গাড়িতে তুলল।
কিছুক্ষনের মধ্যেই গাড়ি এয়াপোর্ট এর সামনে এসে থামল।আদিত্য সহ অন্যরা সবাই জোরাজোরি করছিল না যাওয়ার জন্য কিন্তু গার্ডসদের সাথে পেড়ে উঠল না।

রুহি গাড়ি থেকে নেমে গার্ডসদের উপড় চোখ গরম করে বলে উঠল,এয়ারপোর্টে আমরা কি করছি?
রুহি টিকিট কেটে প্লেনে চড়ে না যানো না তোমরা? কে কাজে রেখেছে তোমাদের? বলেই চিৎকার করে উঠল রুহি, সবাই ভয় পেয়ে গেল।

একজন গার্ড দোড়ে গিয়ে রুহি কে বলল না ম্যাম টিকিট কাটতে হবে না, আপনার জন্য প্রাইভেট জেট আনা হয়েছে, ভিতরেই আছে আপনি চলুন।

রুহি আর কিছু না বলে হন হন করে চলে গেল, যেমন কথা তেমন কাজ সবাইকে নিয়ে প্রাইভেট জেট বিমানে তুলা হল,
আদিত্য ভাবছে কি হচ্ছে এসব,কিন্ত এখন আদিত্যের ও দেখতে ইচ্ছা করছে, কি ঘটবে এরপর তাই আর বাঁধা দিল না নিজেই গিয়ে নিজের সিটে বসলো।

সাওন,মাহির,মনি, লিজা পাশাপাশি বসেছে তাদের সবার একটাই কথা, কালকে এই রুহি কি ছিল আর আজ কি হয়ে গেল….এরমধ্যে মনি বলে উঠল তোদের মনে আছে সেদিনের কথা যেদিন রুহির সাথে আমাদের প্রথম দেখা হলো…. কত সাধারন একটা মেয়ে ছিল তাই না…???

আদিত্য,সাওন,মাহির,মনি,লিজা এরা সবাই হল বড়লোক বাবার উচ্ছনে যাওয়া ছেলেমেয়ে,একটা ঘ্যাং বলতে পারেন যারা কাওকে পরোয়া করে না,নিজেদের যখন যা মন চাই তাই করে,
আর এদের মাথা হল আদিত্য চৌধুরী…বাবার একমাত্র ছেলে হওয়ায় একটু বেশিই আদুরে,তাই যতই অন্যায় করুক তাকে কেউ কিছু বলার সাহস পায় না তার বাবার ভয়ে।
,
,
,
,
প্রতিবারের মতই বানিজ্য মেলার আয়োজন করা হচ্ছে, মেলার সার্বিক তথ্যাবধনের দায়িত্ব পেয়েছেন আদিত্যদের বাবা, তাই আদিত্যের বাবা আদিত্য আর তার বন্ধুদের দায়িত্ব দিয়েছে সবগুলি স্টল এবং মেলার পরিবেশ ঠিক রাখার।যদিও ওরা কোন কাজ করতে চায় না কিন্তু এ ব্যাপারে
তারাও সহজেই রাজি হয়ে যায় কারন মেলায় অনেক বাদারামি করা যায়, সেই সাথে মেয়েদের টিচ করার মজাই আলাদা,
আসলে,মেয়ে হোক বা ছেলে ওরা সবাইকে অপদস্ত করতে বেশ পছন্দ করে তারা।

এদিকে,মেলায় একটা স্টলে একটি মেয়ে তার কোম্পানির ব্র‍্যান্ড এম্বাছিডর হয়ে এসেছে,মেয়েটার নাম রুহি, দেখতে খুবি সাধারন কিন্তু তার সাধারন সাজগোজ এর সাথে হাতের আর ঘাড়ের ট্যাটু টা একদম বেমানান। সে যাই হোক রুহি মেলায় ডুকার সময় আদিত্যের দলের চোখ পড়ল রুহির উপর,ওদের আজকের টার্গেট রুহি যেই ভাবনা সেই কাজ, লিজা গিয়ে রুহিকে ধাক্কা দিল রুহির হাত থেকে তার ফোন টা পড়ে গেল, আদিত্য গিয়ে ইচ্ছা করে ফোনটার উপর দিয়ে হেঁটে চলে গেল, মেয়েটিও উঠে দাঁড়িয়ে কোন কিছু না ভেবেই আদিত্যকে ঠাস করে একটা থাপ্পর মারল,
আদিত্যের মাথায় রক্ত উঠে গেছে…তার দলের সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রুহির দিকে। রুহির তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই,

আদিত্যঃএই তোর এত বড় সাহস তুই আদিত্য চৌধুরীর গায়ে হাত তুলিস বলে যেই রুহির কাছে যেতে চাইল,
একটা মেয়ে দৌড়ে এসে কাকুতি মিনতি করে বলতে লাগল,
স্যার স্যার ওই বোঝতে পারেনি, স্যার এবারের মত মাফ করে দিন প্লিজ…মেয়েটি রুহির বোন নুরা।

আদিত্য ও বোঝল মেলায় এত মানুষের সামনে ঝামেলা করা ঠিক হবে না,যা করার পরে করবে, তাই ছেড়ে দিল।আর সেখান থেকে চলে গেল।

ওরা চলে যেতেই,
রুহি বলে উঠল তুই ওদের কাছে ক্ষমা চাইলি কেন? আমি কি কিছু অন্যায় করেছি?যা করার ওরা করছে।

নুরাঃতুই জানিস ইনি হল আদিত্য চৌধুরী,
যে আমাদের এখানে কাজ দিয়েছেন তার একমাত্র ছেলে,আর উনি এমনেই যার সাথে যখন যা ইচ্ছা তাই করেন কেউ তার সামনে কথা বলার সাহস পায় না।
রুহিঃতাই বলে আমার ফোনের ডিসপ্লে ভেংগে দিবে?
নুরাঃ তোকে যে ভেংগে দেয় নি এই অনেক,এখন চল এখান থেকে।স্টলে যেতে হবে।

রুহিঃ আচ্ছা বাদ দে, স্টলে চল।

রুহি আর নুরার বাবা আদিত্যদের অফিসে কাজ করেন আর মেলায় আদিত্যদের কোম্পানির প্রোডাক্ট ডিসপ্লে করার জন্য অস্থায়িভাবে কয়েকটা মেয়েকে কাজ দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে রুহি আর নুরাও আছে।
,
,
,
মেলায় রুহি একের পর এক বায়ার কে ইম্প্রেস করে চলেছে অসাধারন তার উপস্থাপনার দক্ষতা, অন্য কোম্পানির সবাই রুহিকে দেখে হিংসা করা শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যে।
আর রুহির এই দক্ষতা দেখে আদিত্যের বাবা আহসান চৌধুরী একদম ইপ্রেস হয়ে গেছে,রুহিকে পারমানেন্ট চাকরি দিবে বলেও ঠিক করে নিয়েছেন।
এদিকে আদিত্যের রাগ একটুও কমে নি,মেলায় এসে আদিত্য রুহির দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে,রুহিকে এখন কিছু করলে, রুহি যদি চলে যায়?রুহি চলে গেলে ওদের ক্ষতি হবে শুধু এই জন্যই কিছু করতে পাড়ছে না আদিত্য।

কিন্তু লিজার টার্গেট সেদিনে জন্য রুহির কাছ থেকে সে প্রতিশোধ নিবে যেকরেই হোক
তাই,
একদিন লিজা স্টলে গিয়ে রুহির সাথে কারন ছাড়াই খারাপ ব্যবহার শুরু করে দেয় রুহিও ছাড়ার পাত্র নয়,একপর্যায় তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়ে যায়,তাদের তর্ক চলা কালিন আদিত্য সেখানে আসে,
কি ঘটেছে কিছুই জানে না আদিত্য স্টলে এসে রুহিকে তর্ক করতে দেখে সে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পাড়ে না, তার রাগ বাড়ে যায় আর সে গিয়ে রুহিকে ঠাস করে চড় মারে,
পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন আহসান সাহেব,এটা দেখে আহসান সাহেবের রাগ উঠে যায় কারন লিজা কি করছে আদিত্য না জানলেও তিনি জানেন অন্য মেয়েরা আহসান সাহেব কে ফোনে সব জানিয়েছে।
আহসান সাহেব এসে আদিত্য কে বকা দিতে শুরু করলেন,
মেয়েদের সাথে কি ভাবে ব্যবহার করতে হয় যানো না? মেয়েদের উপড় রাগ দেখানোটাকে পুরুষত্ব বলে না ।এখনো সময় আছে নিজের জিদ কে সংযত করতে শিখো আদিত্য,
কাউকে কিছু বলার আগে ঠিকমত সব জেনে নিবা বোঝেছো…এখন যাও এখান থেকে
(আহসান সাহেব)

আদিত্য কিছু না বলে সামনে সাজিয়ে রাখা কিছু প্রোডাক্ট কে ছুড়ে ফেলে দিয়ে সেখান থেকে রাগে চলে আসলো।

আহসান সাহেবঃ কিছু মনে করিস না মা,আমার ছেলেটা একটু এমন এই, বেশি আদরে বাদর হয়ে গেছে।তুই মন খারাপ করে থাকিস না মা।

রুহিঃআপনি চিন্তা করবেন না আনংকেল আমি কিছু মনে করি নি।

আদিত্যঃ বাপি আজ প্রথম আমার সাথে এমন ব্যবহার করলো তাও ওই ২ টাকার মেয়ের জন্য,প্রথমে আমাকে চড় মারা তারপর লিজার সাথে খারাপ ব্যবহার আর এখন বাপিকে ফুসলিয়ে আমাকে সবার সামনে অপমান করা, আমি তো তোকে ছাড়ব না দেখে নিব….
শুধু মেলাটা শেষ হোক তারপর দেখি কে তোকে বাঁচায় আমার হাত থেকে?

চলবে….!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here