লেডি ডন
সিজন_২
পার্টঃ১,২
লেখিকাঃ Snigda Hossain Mona
পার্টঃ১
আজ প্রায় ২ বছর হয়ে গেছে রুহির বিয়ে হয়ে গেছে….
রুহি আদির সাথে ভালই আছে, হয়ত একটু বেশিই ভাল আছে তাই এখন আর জয়কে তার দরকার হয় না তাই না?
শেষ তোকে কবে দেখেছিলাম রুহি?
হুম আমার ঠিকি মনে আছে সেই তোর মা বাবার মৃত্যুর দিন।
রুহির বিয়ের ২ মাস পড়েই কার এক্সিডেন্ট এ রুহির বাবা মা ২ জনেই মারা যায় হয়ত সে জন্যই রুহি আর কখনো এখানে আসে নি।
তার বাবা মা ছাড়াও যে এখানে তার একটা প্রিয় মানুষ ছিল রুহি ভুলে গেছে সেটা।
আসলে রুহিরএখন আর জয়ের কথা মনে পড়ে না,
সেজন্যই আমার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখে নি রুহি।
লিজাও চায় নি আমি রুহির সাথে যোগাযোগ করি তাই আর করা হয়ে উঠেনি।রুহি আর আদির বাসাটা যে কোথায় আমি সেটাও জানি না।লিজা চিনত আদির বাসা কিন্তু সে আমাকে বলে নি।
মনিকে নিয়ে বেহানও পাড়ি জমিয়েছে বিদেশে তাই আর কোন মতেই যোগাযোগ করে উঠতে পাড়িনি রুহির সাথে।
আচ্ছ হ্যারে রুহি,আমি নাহয় তোর বাসা চিনি না তুই তো চিনতি আমার বাসা তবু কেন একবারো আর আসলি না।
তুই কি আমায় সত্যিই ভুলে গেছিস?একবারো কি মনে পড়ে না আমার কথা?
বসে বসে এই কথাগুলিই ভাবছিল জয়।
জয় লিজাকে বিয়ে করেছিল সেদিনেই, যেদিন রুহি আর আদির বিয়ে হয়েছিল,
লিজাকে জয় অপছন্দ করে না স্রীর দায়িত্ব সে ভাল মতই পালন করে,
কিন্তু রুহির জায়গাটা জয় আর কাউকে দিতে পাড়েনি।
কিভাবেই বা দিবে যে মেয়েকে না খাইয়ে জয় খেত না। যে ঘুমালে জয় জেগে পাহাড়া দিত,তাকে ভুলে কি আর অন্য কারো দিকে মন দেওয়া যায়?
আচ্ছা আমি কি রুহিকে সত্যিই ভালবাসতাম না?ও কি শুধুই আমার বন্ধু ছিল? যদি তাই হবে তাহলে আমি ওর এনগেইজমেন্ট টা মানতে পাড়লেও বিয়েটা কেন মেনে নিতে পাড়িনি?
কেনই বা এখুনো রুহির জায়গায় কাওকে বসাতে পাড়িনি?
এটা কি শুধুই মায়া নাকি ভালবাসাও ছিল?
আমারটা ভালবাসা বা মায়া যাই ছিল রুহি তো আমায় ভালবাসত না ও আদিকে ভালবাসত এতই ভালবাসত যে আদিকে পেয়ে আমাকে একদমি ভুলে গেল।
আমি চাইলেও হয়ত তোকে আটকে রাখতে পাড়তাম না তাই তো রুহির এক কথাতেই লিজাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে ছিলাম কিন্তু ভাল আমি লিজাকে বাসতাম না। যাকে বাসতাম তাকে খুশি করতেই বিয়েটা করেছিলাম।কিন্তু কে জানত এই বিয়েই তোকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিবে।
আমি তো তোকে কখনো খারাপ চোখে দেখি নি।তর কথার অবাধ্য হইনি কোনদিন, তাহলে কেন ছেড়ে চলে গেলি আমায় প্রিতিদিন না হোক সপ্তাহে একদিন।সপ্তাহ না হোক মাসে একটা দিন তো খোঁজ নিতে পারতি আমার। বদলে গেছিস তুই…..
কিন্তু তুই কি জানিস রুহি, আমি আজও অন্ধকারে তোকে খুঁজি তুই একা থাকতে পাড়বি না বলে।আজও মাঝ রাতে আমার ঘুম ভাংগে তুই ভয় পাচ্ছিস কিনা জানতে।
সকালে আদো ঘুমে চোখ খোলে তোর নামটাই প্রথম আসে মুখে।
জয় নামের ছেলেটা আজও প্রতিদিন নীরবে তোর জন্য চোখের জল ফেলে তুই কি জানিস সেটা?
না জানিস না জানলে হয়ত এভাবে চুপ থাকতে পাড়তি না……!!
চলবে
#লেডি_ডন
#সিজনঃ২
#পার্টঃ২
#লেখিকাঃ Snigda Hossain Mona
(প্রথমেই বলতে চাই আমার গল্পের সাথে বাস্তবতার কোন মিল নাই আর গল্পে হয়ত অনেক ভুল ত্রুটি অনেক থাকবে। তাই আমি চাই না আমার গল্পটা পড়ে আপনার মন খারাপ হোক। তাই যদি উল্টা পাল্টা কাহিনি মানতে পাড়েন তবেই পড়ুন)
জয় শুয়ে শুয়ে রুহির কথা ভাবছিল। ভাবতে ভাবতে জয় ভাবনার জগতে হারিয়ে গেল।
২ বছর আগে,
হটাৎ করেই একদিন রুহি এসে আদিদের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিল ও আমায় বিয়ে করতে চায় আর সেটাও আবার একদিনের মধ্যেই।
শুনে অনেক অবাক হয়েছিলাম কারন রুহির সাথে আমার তেমন কোন সম্পর্ক ছিল না।
আর তাছাড়া এর আগেও মামা, আমার মা সবাই আমাদের বিয়ে দিতে চেয়েছিল আমি বা রুহি কেউ এই রাজি ছিলাম না তাই বিয়ে হয়নি।
কিন্তু এবারের বিষয়টা আলাদা,সবার সামনে যখন বেশ অধিকার নিয়ে রুহি বলল আমাকে বিয়ে করতে চায় তখন আর মানা করতে পাড়লাম না রাজি হয়ে গেলাম।
রুহি আর রুহির সব বন্ধুদের নিয়ে শপিং করতে গেলাম। শপিং করে যখন বাসায় ফিরব তখন দেখি আদি সেখানে নেই। সবাই মিলে আদিকে খুঁজতে শুরু করলাম। মনি মাহির সাওন তিনজনেই আদি কে খুঁজতে চলে গেল।
আমিও আদিকে খুঁজতে যাব কিন্তু তার আগে রুহিকে বাসায় দিতে গেলাম যখন রুহিকে রেখে ফিরে আসছিলাম রুহি দৌড়ে এসে আমায় জড়িয়ে ধরল আর কেঁদে কেঁদে বলল খুব ভালবাসি।
আমি অবাক হয়ে বল্লাম কাকে…???
রুহিঃ আদিকে।
আমিঃ হুম জানিতো….
রুহিঃ তুই কি করে জানলি?
জয়ঃ তর মনের কথা আমি বোঝব না ভাবলি কি করে….কিন্তু কাঁদছিস কেন?
রুহিঃ ওর কিছু হয় নি তো?
জয়ঃ নারে পাগলি কিচ্ছু হয়নি।জয় থাকতে তোর প্রিয় জিনিস কে কখনো হারাতে দিবে না। তুই নিশ্চিন্তে থাক, আমি এক্ষুনি ওকে নিয়ে আসছি।
আসলে বেচারা আদিটাকে তুই একটু বেশিই কস্ট দিয়ে ফেলছিস।
রুহি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলল আমাকেও তো দিয়েছিল।
জয়ঃ হুম বোঝলাম, কিন্তু অন্য একজন কে বিয়ে করার মত শাস্তি দেয় নি। এভাবে শাস্তি না দিলেও পাড়তি।তুই বিয়ে করছিস এটা আদি মানতে পাড়ে নি।
রুহিঃ তুই একটুও অবাক হচ্ছিস না কেন?আমি তো তোকে আদির ব্যাপারে কিছুই বলি নি।
জয়ঃ যখন বল্লি আমায় বিয়ে করবি তখনি বোঝেছিলাম গন্ডগোল আছে।
রুহিঃ আরো জোরে কেঁদে দিয়ে বলল তোর মত করে আমার কেউ বোঝে না।
জয়ঃ বোঝবে রুহি একটু সময় দে আদিও তোকে খুব ভালবাসবে।আদি ছেলে হিসেবে খুবি ভাল।
আমার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে রুহি তুই থাক আমি আদিকে নিয়ে আসছি।
অনেক খোঁজার পর জানতে পাড়লাম মনি আদি মাহির সাওন সবাই একসাথে আছে তাড়াতাড়ি করে ওদের কাছে পৌছালাম আর সবাইকে নিয়ে এসে দেখি রুহি বাসায় নেই,তিনি রাত ১ টা বাজে বাসায় ফিরলেন তাও মারামারি করে।
মনে ভয় ঢুকল রুহির উপড় কেউ যদি আক্রমন করে তাই পরদিন সকালেই চলে আসলাম রুহির বাসায়।
রুহি আমায় দেখে বলল জয় চল রিসোর্ট বুক করতে হবে।
জয়ঃ আরে যেতে হবে কেন আমি অর্ডার দিয়ে দিচ্ছি সব হয়ে যাবে তুই তোর সাজগুজে নজর দে।বাকি সব আমি দেখছি।
রুহিঃ এত কথা বলিস কেন ফাউল?
কথা আছে বল্লাম না?
জয়ঃ যাক বাবা কথা বলবি কখন বল্লি?
রুহিঃ মার খেতে চাস?
জয়ঃ না না ম্যাডাম চলেন।
রুহি আমাকে নিয়ে সেই জায়গাটায় গেল যেখানে সবাই মিলে কাল গেলাম সেখানে।
জায়গাটা আসলে খুব সুন্দর আর নিরব।
জয়ঃ এই মেয়ে তোর মাথায় কি ঘুরছে? আমাকে খুন করবি নাকি এখানে আনলি কেন?
রুহিঃ হুম ইচ্ছা অনেকটা তেমনেই।
জয়ঃ তাই নাকি মেরি বেবি ডল…??/
রুহিঃ একটা কথা বলব রাখবি?
জয়ঃ কোন কথাটা রাখিনি বল তো?
রুহিঃ বিষয়টা সিরিয়াস
জয়ঃ তর কথায় মরে যেতেও পাড়ি।
রুহিঃ বিয়ে করবি?
জয়ঃ হা হা হা…. মাথা ঠিক আছে? একটু পর তর বিয়ে পাগলি, তুই সেটা নিয়ে ভাব তার ছিড়া কোথাকার।
রুহিঃ তর কি মনে হচ্ছে এত দূর এসে আমি ফাযলামি করছি?
জয়ঃ তা নয়ত কি?
রুহিঃ এত কথা বোঝিনা তুই লিজাকে আজ বিয়ে করবি।
জয়ঃ আরে রুহি বিয়ে কি ছেলে খেলা নাকি?লিজাকে আমি কতটুক চিনি?
রুহিঃ তোকে একা করে দিয়ে চলে যেতে পাড়ব না তোকে কারও হাতে তুলে দিয়ে যেতে চাই।আর তার জন্য উপযুক্ত লিজা।
জয়ঃ আচ্ছা ভেবে বলব,
রুহিঃ ভাবাভাবির কিছু নাই আমি যা বল্লাম তাই।
জয়ঃ মেয়েটা খারাপ না আর তুইও যখন চাস ওকে আমি রাজি।
রুহিঃইয়া হু…. আমি জানতাম জয় আমার কথা ফেলতেই পাড়ে না।
জয়ঃ পাগলি একটা…
রুহিঃ এখন আমায় প্রোপজ করা শিখা কেমনে আদিকে প্রপোজ করব?
জয়ঃ আমি জীবনে কাউকে করছিলাম নাকি?
রুহিঃতাহলে আজ লিজাকে কিভাবে করবি?
জয়ঃগিয়ে বলব বিয়ে করব। তুমি রাজি থাকলেও করব না থাকলেও করব তাই তর্ক করে লাভ নাই।
রুহিঃ মেয়ে পালাবে ফাউল… সুন্দর করে শিখে নিবি রাতে আমরা ২ জন একসাথে প্রপোজ করব।
জয়ঃ আপনি যেমনটা চাইবেন ম্যাডাম
যেমন কথা তেমন কাজ সবাই রুহি আর জয়ের বিয়েতে আসলেও রুহি আদিকে আর জয় লিজাকে প্রপোজ করল।
আমার আর লিজার বিয়ে পড়ে হয়েছিল রুহি আর আদির টা আগে।
সব ঠিকঠাক ছিল,অনেক আনন্দে আদির সাথে রুহির বিয়ে দিয়েছিলাম।বিয়েতে আমিই সবচেয়ে বেশি আনন্দ করেছিলাম।
রুহিকে বিয়ে করব এমন ইচ্ছা আমার কখনই ছিল না আমি ত শুধু চেয়েছিলাম আমাদের বন্ধুত্ব টা থাকুক।
বিশ্বাস করুন আদি আর রুহির বিয়ে নিয়ে আমার মনে কোনো খারাপ লাগা ছিল না।
কিন্তু যখন বিয়ে শেষ হল রুহিকে বিদায় দিতে গেলাম আমার অসম্ভব খারাপ লাগছিল তাও স্ট্রং থাকার চেষ্টা করতে ব্যস্ত,সবার পিছনে দড়িয়ে নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছি তখনি রুহি সবাই ঠেলে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল আমি যাব না জয়।তুই আদিকে এখানে থাকতে বল।
জয়ঃ এটা কি করে হয় রুহি? একটু বোঝার চেস্টা কর আদির বাবা মা আছে তাদের কাছে ওর যেতে হবে। তোর এখন বিয়ে হয়ে গেছে তোর ও যেতে হবে।
রুহিঃ তুই আমায় পড় করে দিলি জয় বলে রুহি জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে থাকল।
জয়ঃ বোঝলাম রুহির দম নিতে কস্ট হচ্ছে।রুহি কাঁদলেই অসুস্থ হয়ে পড়ে।সেটা আমার জানা।কিছু একটা করতে হবে। এমন করছিস কেন কি হয়েছে রুহি?
রুহি অস্থির হয়ে গেল আমাকে জোড়ে আখঁরে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল আমার শ্বাস নিতে কস্ট হচ্ছে জয়….
জয়ঃবোঝতে বাকি রইল না ও আমাকে ছেড়ে যেতে রাজি না। ওর শ্বাস নিতে কস্ট হচ্ছে কারন ও কাঁদছে রুহির অবস্থা দেখে আমার আর সহ্য হল না আমি রুহিকে ছাড়িয়ে দিয়ে, জোরে একটা থাপ্পড় মারলাম।
আদিকে ডেকে রুহিকে ওর কাছে দিলাম,একটু সামলে নাও প্লিজ ও শুধু দেখতেই বড়ই হয়েছে মনটা এখনো বাচ্চার মতই আছে।
আদিঃ জয় এটা আমার কাজ না আমার যতটুকু মনে হয় রুহি এভাবে শান্ত হবে না তুমি চল আমাদের সাথে ওকে দিয়ে আসবে।
জয়ঃ আমি আসার সময় একই ঘটনা ঘটবে তুমি ওকে নিয়ে যাও।
রুহি, হাঁপাতে হাঁপাতে বলল জজজজ জয় তুই আমাকে মারলি?এভাবে পর করে দিলি?আমাকে এভাবে পর করে দিস না জয় প্লিজ।আমি সহ্য করতে পাড়ছি না আমার খুব কস্ট হচ্ছে।
আমি কিছু না বলে সেখান থেকে চলে এসেছিলাম কারন আমার চোখের পানি বাঁধ মানতেছিল না।
তারপর রুহি আমার সাথে রাগ করে চলে গেল।
আমি জানতাম রুহিকে না মারলে ও যেত না তাই বাধ্য হয়েই মেরেছিলাম।
,
,
,
চলবে….!!!