লেডি_ডন
পার্টঃ১১,১২
লেখিকাঃ Snigda Hossain Mona
১১
আদি রুহিকে নিয়ে বাসায় ফিরল।
সবাই এসে জিজ্ঞাস করতে লাগল রুহি কি হয়েছিল ওখানে? তুমি এসব কেন করলে?
রুহিঃ আমি খুব ক্লান্ত আমার এখন কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। প্লিজ আমাকে যেতে দাও বলে রুহি উপড়ে গিয়ে আদির রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।
আদি সহ সবাই নিচে বসে আলোচনা করছে কি কি হয়েছে।
এরি মধ্যে হোটেল থেকে একজন লোক এসে রুহির চেইন টা দিয়ে গেল।
আদি ম্যানেজারকে বলেছিল যেন চেইনটা পাঠিয়ে দেয়।আদি লোকটার কাছ থেকে চেইন টা নিল আর লোকটাকে সেই ভাংগার জন্য ৫০০০ টাকা দিয়ে বিদায় করলো।
চেইন টা হাতে নিয়ে আদি চমকে উঠল এটা কোন সাধারন মেয়ের কাছে থাকতেই পারে না কারন বেলি চেইন পড়লে বেশির ভাগ সময়েই দেখা যায় না কখনো শাড়ি বা শর্টস পড়লে দেখা যায় তাই এত expensive চেইন সহজে কেউ পড়ে না। সর্বোচ্চ সোনার পড়ে কিন্তু এটা প্লাটিনামের তারমধ্যে ডায়মন্ড।
হোটেলে ঘটনা শুধু আদি জানত আর কেউ জানে না তাই সবাই প্রশ্ন করতে শুরু করল,
লিজাঃএটা কার আদি?
আদিঃ রূহির….
সবাই অবাক হয়ে যায় বিশেষ করে মনি।
আদি হোটেলের ঘটনা সবাইকে বলে।
সাওনঃ কিন্তু রুহির কাছে এটাত কখনো দেখি নি।
মনিঃ আরে দূর ছাড়তো এটা ওর না। কার কাছ থেকে চুরি করে এনেছে খোজ নিয়ে দেখ। ভিখারি আবার লোভিও….
লিজাঃ না এটা রুহিরেই আমি যখন ওর পুড়া জায়গায় মলম লাগাচ্ছিলাম তখন এটা আমার হাতে লেগেছিল কিন্তু রুহি এটা কিছু না বলে এড়িয়ে যায় তাই আমিও আর দেখতে চাইনি।
মনিঃ চুরির জিনিস ত তাই লুকিয়ে রেখেছিল।
পিছন থেকে আদির হাত থেকে চেইনটা একটানে নিয়ে রুহি সামনে এসে দাঁড়াল। এটা এখানে কি করে আসলো?
আর মনি, এটা বেলি চেইন মাথার মুকুট নয় যে সবাইকে দেখানোর জন্য মাথায় পড়ব।
মনি আদির কাছে গিয়ে আদির হাত জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বলতে লাগলো এই ভিখারি টা আমাকে কথা শুনাছে তুমি কিছু বলবে না বেবি?
মনির কথা শেষ হওয়ার আগেই ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল,
,
,
,
,
না আদি মনি কে বা রুহি মনিকে থাপ্পড় মারে নি। বরং থাপ্পড় টা রুহি আদিকে মেরেছে।
সবাই অবাকের শেষ সীমায় পৌছে গেছে।
মনিঃ তোর এত সাহস তুই আদির গায়ে হাত তুলিস?আজ আমি তোকে….বলে রুহির দিকে এগিয়ে আসতেই রুহি মনিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বলল,
রুহিঃ আমি শুধু আদির সাথে কথা বলব কোন ৩য় ব্যাক্তি ঢুকবা না আমাদের মাঝে। যদি ঢুক তাহলে ২য় বার কথা বলার মত অবস্থা রাখব না তার।
আদির রাগ হচ্ছে না মুগ্ধতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রুহির দিকে।
রুহিঃ সেদিন তো তোমার অনেক রাগ হয়েছিল যেদিন আমি চাকরি ছেড়ে চলে গেছিলাম তাই না?
বলেই আবারো থাপ্পড় মারল আদিকে।
সাওনঃ রুহি তুমি কি করছো?
আদি ইশারায় সাওন কে চুপ করতে বলল।
রুহিঃআরপর কি যেন বলছিলাম….
হুম মনে পড়েছে সেদিন তুমি বলেছিলে তুমি আমায় ভালবাসো আমাকে বিয়ে করতে চাও আর সেই জন্যই আমি চাকরি ছেড়েছিলাম কারন আমি সেদিনেই জানতাম এটা তোমার ভালবাসা ছিল না। ভাললাগা ছিল,যদি ভালবাসা হত আমি চাকরি ছেড়ে যাওয়ায় তোমাকে রিজেক্ট করায় তুমার ইগোতে লাগত না বরং তুমি আমাকে ফিরিয়ে আনতে কিন্তু তোমাকে রিজেক্ট করার কারনে তুমি আমার কাছ থেকে প্রতিশোধ নিলে।
আরে,আমিত চাকরিটা ছেড়ে ছিলাম তুমি আমায় কতটা ভালবাসো সেটা দেখার জন্য তোমাকে রিজেক্ট করার জন্য না। কিন্তু আফসোস…!!!
আর সবাই শোন, আমাকে নিয়ে গবেষনা করা সবাই এখানেই বন্ধ করো।
বলে আদির ওয়ালেট থেকে আদির ক্রেডিট কার্ড টা নিয়ে বাইরে যেতে চাইলে আদি পিছন থেকে বলল কার্ডের পিন….???
রুহিঃ হা হা হা…..রুহি কাঁচা খেলা খেলে না। শুধু এটা না তোমার সবকটা কার্ডের পিন আমার জানা আছে।আর এটাতে সবচেয়ে বেশি ক্রেডিট আছে সেটাও আমি জানি
মনিঃ আদি তুমি এই মেয়েটাকে নিজের কার্ড দিয়ে দিচ্ছো? এই তোর সাহস হয় কি করে আদির কার্ডে হাত দেওয়ার বলে কার্ড নিতে গেলে আদি মনির হাত ধরে ফেলে।
রুহি চলে যায়…..
আদিঃ আমি আমার লেডি ডনকে পেয়ে গেছি….এতদিন ধরে আমি রুহিকে যেমন ভাবে দেখতে চেয়েছিলাম আজ তা পেয়ে গেছি।আমি আমার লেডি ডনের জন্য কার্ড কেন হাসতে হাসতে জীবনো দিয়ে দিতে পারি।
মনিঃ মানে কি?
আদিঃআদিত্য চৌধুরী কে চড় মারার সাহস সব মেয়ের হবে না। আমি সারাজীবন এমন মেয়েই চেয়েছিলাম যে আমার লেডি ডন হবে।
হ্যা এটা ঠিক আমি ভুল করেছিলাম ও আমাকে রিজেক্ট করায় আমার জেদ চেপেছিল তাই ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিলাম কিন্ত আর না এবার আমি ওকে বিয়ে করব।
মনি বাদে সবাই খুশি হয়েছে কিন্তু রুহি কোথায় গেল? বাকি কাহিনি কি হয়েছিল ১ম পার্ট টা পড়লে জানতে পাড়বেন
,
,
,
চলবে….!!!
#লেডি_ডন
#পার্টঃ১২
#লেখিকাঃ Snigda Hossain Mona
আদিত্য,শাওন,মাহির,মনি ও লিজা সবাই ভাবছে কি ঘটে গেলো কিছুক্ষন আগে….কিভাবে সম্ভব এটা?
এসব নিয়েই তারা আলোচনা করছিলো হঠাৎ করেই বাড়ির সামনে অনেক গুলি কাল গাড়ি এসে থামলো গাড়ি থেকে হুর হুর করে নেমে এলো প্রায় ২,৩ ডজন কালো পোষাক পরিহিত গার্ডস টাইপের লোক,সবার হাতেই ছিল gun (বন্দুক)। ওরা এসে আদিত্য দের ঘিরে ধরল আর কিছু গার্ডস বাসার বাইরে দাঁড়িয়ে বন্দুক তাক করে দাঁড়িয়ে আছে যাতে কেউ আক্রমন করতে না পাড়ে।
ঠিক তখনেই একটি luxury গাড়ি এসে থামলো বাসার সামনে,তা থেকে নেমে আসছে একটি অপুর্ব সুন্দরি মেয়ে গায়ে কালো রং এর লেদার জ্যাকেট হাতাগুলি ভাঁজ করে কুনুই পর্যন্ত তুলা,বাম হাতের কুনুই এর ঠিক নিচে আর ঘাড়ের ট্যাটু ২টা আজ স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে তার ফর্সা শরীরে,পায়ে কালো শো,হাতে গ্লাবস,চোখে কালো সান গ্লাস এ যেনো এক অন্যরকম মেয়ে যার পোষাক আষাক এ আছে পাওয়ারের চাপ আর চেহারায় আছে মুগ্ধতা,
মেয়েটা হলো রুহি…!!!
রুহির এই হঠাৎ বদলে যাওয়াটাকে যেনো কেউই সহজ ভাবে নিতে পাড়ছে না….
যে মেয়ে কোনোদিন কারোর মুখের উপড় কথা পর্যন্ত বলে নি, সে মেয়ে আজ বাইরে মারামারি করে এসেছে তাও কোন সাধারন মানুষকে মারে নি
বরং পুলিশদের মেরে এসেছে,
তাতেও রুহির শান্তি হয় নি বাসায় এসে আদিত্যকে থাপ্পড় মেরে আদিত্যের ক্রেডিড কার্ড নিয়ে গেছে আর তা থেকে বেশ মোটা অংকের টাকা তুলে নিয়েছে এরিমধ্যে।
এতদিন রুহি কারো সাথে কখনো গলা উচু করে কথা বলে নি কিন্তু আজ কি হলো তার সবকিছুই কেমন বদলে গেছে পোষাক আষাক, আচারন সবকিছুই বদলে গেছে…
রুহি গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথেই গার্ডসদের দল ২ ভাগে ভাগ হয়ে গিয়ে মাঝখানে রাস্তা করে দিলো,
আদিত্য,মাহির,সাওন,মনি,লিজা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রুহির দিকে।
রুহি দেখতে সুন্দরী হলেও এত ফর্সা ছিল না আজ হঠাৎ করে ফর্সা হয়ে গেছে এর রহস্য কি?
,
,
,
রুহি এসে গার্ডসদের বলল সবাইকে নিয়ে যেতে। সবাইকে নিয়ে প্লেনে তুলা হল।প্রায় ৩ ঘন্টা পর
রুহির প্রাইভেট জেট টি ল্যান্ড করতেই কিছু লোক এসে রুহি আর সবাইকে অভিন্দন জানালো।
সারি সারি লাক্সারি কার দাঁড়িয়েছিল রুহি কে বাড়ি পৌছে দেওয়ার জন্য।
রুহি ধমক দিয়ে বলল আমি এত বিলাশিতা পছন্দ করি না জানো না?
গার্ডসঃ ম্যাম,জয় স্যার বলেছেন আপনার যদি একটুও অসুবিধা হয় তাহলে আমাদের সবাইকে গুলি করে মারবেন তাই এই ব্যবস্থা।
রুহিঃ হুম বোঝলাম কিন্তু এই কয়েকজনের জন্য এত গুলি কার নিয়ে রোড ব্লক করে যাওয়ার মানেই হয় না।
সবাইকে নিয়ে একটা গাড়িতে যাও বাকিগুলি এখানেই থাক আর আমার বাইক কোথায়?চাবি দাও।
একজন গার্ডস এসে চাবি দিল আর বলল ম্যাম সিকিউরিটির জন্য আজ অন্তত যদি গাড়িতে যেতেন অথবা সাথে যদি কাওকে….
রুহিঃ হা হা হা….. রুহি এতদিন লুকিয়ে ছিল মানে এই না যে সে দুর্বল হয়ে গেছে….
কতদিন নিজের শহরকে দেখি নি গাড়িতে গেলে কি করে হবে।
ওদের সাবধানে নিয়ে যাও কারো গায়ে যেন একটা আছরও না লাগে।
বলে রুহি আদির হাত ধরে টানতে টানতে বাইকের কাছে নিয়ে গিয়ে বলল পিছনে বসো শহরটা দেখতে দেখতে বাসায় যাই।
রুহি একজনের হাত থেকে একটা রিভেলবার নিয়ে আদির হাতে দিয়ে বলল এটা নাও,
আদি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে সে।
আরে আমাকে মারতে দেই নি।রাস্তায় দরকার হতে পাড়ে এটা সবসময় নিজের সাথে রাখবা আর এটা তোমার শহর না তাই এত বোঝে চলার দরকার নাই কিছু এদিক ওদিক দেখলেই গুলি চালাবে।কে মারা গেল আর কি হয়ে গেল এসব ভাবার দরকার নাই।
আদির মনে হচ্ছে সে যেন স্বপ্নে আছে,
কি হচ্ছে কিছুই বোঝতে পাড়ছে না।
আদি বাধ্য ছেলের মত রুহির পিছনে বসলো।
সাওন,মাহির,লিজা,মনি সবাই রুহির দিকে তাকিয়ে আছে।ওদের চোখের পলক পড়ার আগেই রুহির বাইক যেন উধাও হয়ে গেল।
সাওন, মাহির,লিজা মনি একে অপরের মুখ দেখছে আরে ম্যাজিকের মত ওরা কোথায় ভেলিস হয়ে গেল?
একজন গার্ড বলল এসব ভেবে লাভ নাই স্যার, ম্যাডাম এভাবেই ড্রাইভ করেন।জয় স্যার ম্যাডামকে ফুল স্পীডে ড্রাইভ করা শিখিয়েছেন। আশ্চর্যের বিষয় হল এত স্পীডে ড্রাইভ করেও উনি বা জয় স্যার কেউই কখনো এক্সিডেন্ট করেন না।
এসব না ভেবে আপনারা এখন চলুন।তা না হলে ম্যাডাম রাগ করবেন হয়ত রাগে আমাদের গুলি করে দিবেন।
আসলে ম্যাডামের বরাবরেই মুখ চলে কম, হাত চলে বেশি….উনি অনেক ভাল মনের মানুষ হলেও নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারেন না।
,
,
,
চলবে….!!!