লেডি_ডন পার্টঃ১৯

0
849

লেডি_ডন
পার্টঃ১৯
#লেখিকাঃ Snigda Hossain Mona

মনি,সাওন মাহির তাকিয়ে দেখলো
সামনেই হাঁটু ঘেরে আদি বসে আছে,
আদির অবস্থা দেখে মাহির,সাওন মনি সবাই অবাক।
আদি বসে বসে কাঁদছে,
মনি এগিয়ে গিয়ে আদি……

আদিঃ চমকে উঠে চোখ মুছতে মুছতে তোরা এখানে…???কিভাবে জানলি আমি এখানে?

মনিঃ হয়ত জয়ের আর রুহির মত বন্ধু হতে পাড়িনি কিন্তু ছোট থেকে ত একসাথেই বড় হয়েছি তাই না?একটু হলেও ত চিনি তোকে।
আদি মনিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল,

মাহিরঃ এতদিন ধরে তোর সাথে আছি কখনো তোকে কাঁদতে দেখি নি আদি….তুই কি সত্যিই সেই আদি যে কিনা কথায় কথায় জেদ দেখাতো?

মনিঃ তোরা অনেক কিছুই জানিস না আমি সবটা আগে থেকেই জানতাম তাই আমি অনুমান করেছিলাম আদি নিজের চোখের জল লুকাতে কোথাও গিয়েছে…!! আর যেহেতু ও এখানে তেমন কিছু চিনে না তাই এই নীরব জায়গাটায় আসবে সেটা বোঝতে বাকি রইল না।এখানেই আমরা বিকালে এসেছিলাম

সাওনঃ তুই এমন কি জানিস যা আমরা জানি না?

মনিঃঅনেক কিছুই তবে শোন, আদি রুহিকে ভালবাসে হয়ত একটু বেশিই ভালবাসে।

মাহিরঃকি বলিস আমাদের কাউকে তো কোনদিন বলে নি।

মনিঃ আমাকে বলেছিল,আদি প্রথমদিনেই রুহিকে ভালবেসে ফেলেছিল যেদিন মেলায় রুহি আদিকে চড় মেরেছিল সেদিনেই। আদি সবসময় এমন একটা মেয়েই চেয়েছিল যার মধ্যে সাহস থাকবে।

একদিন আদিও সবার মত এক গুচ্ছ ফুল নিয়ে রাস্তায় হাঁটু ঘেরে বসে রুহির কাছে ভালবাসার প্রার্থনা করেছিল। কিন্তু বিনিময়ে পেয়েছিল অপমান।
যেখানে আদিকে সবাই চিনে সেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে রুহি আদিকে থাপ্পড় মেরেছিল তাও সেটা শুধু তাকে ভালবাসার নিবেদন করার জন্য।
সেদিন রাস্তায় সবাই হেসেছিল
প্রথমবার আদি মানুষের হাসির খোরাক হয়েছিল,আদির পরিচিত অনেকে সেদিন আদিকে কথা শুনানোর সুযোগ পেয়েছিল। আদি তবুও সব সহ্য করে নিয়েছিল,
আদি বারবার রুহিকে বোঝানোর চেস্টা করেছিল সারারাত ধরে রুহির বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল কিন্তু রুহি আদির কোনো কথা শুনে নি। পরদিন অফিসে এসে রিজাইন দিয়ে দেয় রুহি

তোরাই বল এরপরেও কি আদির উচিত ছিল রুহিকে আটকানো?

রুহি হয়ত আগে থেকেই জয়কে ভালবাসতো তাই আদিকে ফিরিয়ে দিয়েছিল কিন্তু সেটা বলে দিলেই তো পাড়ত, এতটা অপমান করার কি প্র‍য়োজন ছিল?
তারপর আদি যখন সুযোগ পেল তখনি ওকে বাসায় নিয়ে আসলো কিন্তু সেটা প্রতিশোধের জন্য না ভালবাসাটা বোঝানোর জন্য।প্রতিদিন রুহির হাতে খেত চাইত, একটা বউ যা যা করে সব রুহিকে দিয়ে করাত আদি।এটা যে অত্যাচার না ভালবাসা ছিল সেটা রুহি বোঝল না। আদি শুধু এইটুকুই চেয়েছিল রুহি যেন নিজের মুখে ওকে এসে বলে যে,সে আদিকে ভালবাসে তাই আমাকে রিকুয়েষ্ট করেছিল যাতে আমি আসি আর আদির সাথে একটু ঘনিষ্টতার অভিনয় করি যাতে রুহি রেগে গিয়ে আদিকে ভালবাসার কথা বলে কিন্তু সেটাও হল না।

তখন আদি রুহির সাথে খারাপ ব্যবহার করলো রুহি সেই খারাপ ব্যবহার টাই দেখল। এর আগের ২ মাসের ভালবাসাটা দেখলো না।

রুহি বলেছিল সে নাকি আদিকে ভালবাসে ফেলছিল কিন্তু পরীক্ষা করার জন্য আদিকে রিজেক্ট করে ছিল।

যদি আদি বারবার অপমানিত হওয়ার পরেও ওকে গিয়ে ভালবাসার কথা বলত তাহলে নাকি ও রাজি হত।কিন্তু আদির নাকি ইগু বেশি তাই সে রাজি হয় নি।
আচ্ছা তোদের কি মনে হয় রুহিকে যদি এভাবে এখানে কেউ অপমান করে,রুহিকি তাঁকে বাঁচতে দিবে আমার ত মনে হয় না।তাহলে আদি কতটা সহ্য করেছে সেটা ও কিভাবে বোঝল না?

আসলে রুহির পরিক্ষা করার পদ্ধতিটা ভুল ছিল আর আদির ভালবাসা বোঝানোর পদ্ধতিটা…তাই আজ এই অবস্থা।

আদিঃ তুই চুপ কর মনি।

মাহিরঃ এতদিন আমাদের কেন বলিস নি এসব? আমরা জয়ের মত মাফিয়া হতে না পাড়ি বন্ধুকে খুশি রাখতে রুহিকে এখান থেকে নিয়ে যেতেতো পাড়ব।জয়ের সাথে মারামারি করতে না পাড়ি ভিক্ষা ত চাইতে পারব।

সাওনঃ ঠিকি বলেছিস দরকার হলে জয়ের হাতে জীবন দিব তবু রুহিকে আদি ছাড়া অন্য কারোর হতে দিব না। চল এক্ষুনি।

আদিঃ না যাস না তোরা, জয় অনেক ভাল একটা ছেলে ও যদি জানে আমি রুহিকে ভালবাসি ও রুহিকে বিয়ে করবে না, কিন্তু রুহি ওকে ভালবাসে আর রুহিকে এই পৃথবীতে যদি কেউ সুখে রাখতে পারে সেটা শুধুই জয়।

মনিঃ আর তোর কি হবে?জীবনে কখনো কাওকে রুহির জায়গাটা দিতে পাড়বি? জানি পাড়বি না।
যে আদিকে বাবা মা একটা কথা বল্লেও জবাব দিত সেই আদি একটা মেয়ের করা এত অপমান সহ্য করেছে…..সেই মেয়েকে আদি কতটা ভালবাসে আর কেউ না বোঝক আমরা চারজন অন্তত বোঝি।

আদিঃ ভালবাসা এক তরফা হয় না রে…. বোঝানোর কম তো চেষ্টা ত করি নি কিন্তু…..
আমি সেদিন হসপিটালে রুহির মা মানে নুরার মাকে কথা দিয়ে এসেছিলাম আমি রুহি কে বিয়ে করব। সেই জন্যই তিনি রুহিকে আমার বাসায় থাকতে দিতে রাজি হয়েছিল। সবকিছুই ঠিক করেই রেখেছিলাম আংকেল সুস্থ হয়ে গেলেই বিয়ে করে ফেলব বাবা মাকেও বিয়ের কথা বলে দিয়েছিলাম,
যানিস রুহির জন্য লাল টুকুটুকে একটা শাড়ি কিনেছিলাম আদির চোখ থেকে অনবরত অশ্রু ঝড়ছে। আর আদি বলছে
প্রতিদিন কল্পনা করতাম একদিন লাল টুকটুকে শাড়িটা পড়ে রুহি গুটি গুটি পায়ে আমার জীবনে আসবে কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস আজকেও রুহি লাল শাড়ি পড়বে কিন্তু সেটা আমার দেওয়া না জয়ের দেওয়া।

মাহিরঃ আদি তুই আর বলিস না আমার ভিতরটা ফেটে যাচ্ছে। সহ্য করতে পাড়ছি না রে।

আদিঃ আমি এখানে এসেছিলাম সুসাইড করার জন্য যেন লাশ টা খুঁজে না পাওয়া যায় তাই এখানে আসা কিন্তু পড়ে ভাবলাম আমি হারিয়ে গেলে জয় আমাকে খুঁজতে ব্যস্থ হয়ে পড়বে তখন ওদের বিয়েটা হবে না।

আমি সব মেনে নিয়েছি।
আমি জয়কেও ভালবাসি,জয় রুহিকে ছাড়া থাকতে পাড়বে না আর আমি জয়কে কস্ট দিতে পারব না।
তাই আমি হাসিমুখেই ওদের বিয়েতে উপস্থিত থাকব এখানে যা যা হল সব ভুলে যা…..
রুহি আর জয়ের খুশিতেই আমি খুশি
তোরা আমার জন্য হলেও চুপ থাকিস প্লিজ।
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি এখান থেকে চলে যাব….চোখ মুছতে মুছতে বলল আদি।

তারপর,হয়ত কখনো আর আমার জীবনে আসা এই লেডি ডন কে আমার দেখা হবে না। আমি না হয় ২ মাসের স্মৃতি নিয়েই বেঁচে থাকব। এই ২ মাস তো ও আমার বউএর মতই ছিল।

চোখের পানি মুছে ….জোর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল চল ফিরে যাই, কাল আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটার বিয়ে আমি যদি কাজ না করি কে করবে বল তো…???
,
,
,
চলবে….!!!
(আদি অথবা জয় কাউকে তো বাদ দিতেই হবে আমার যাকে ভাল মনে হল তাকেই বাদ দিলাম।গল্পটা লিখতে গিয়ে নিজেই ইমোশনাল হয়ে গেছি,

তাই জয় আর রুহির বিয়েটা দিয়ে তাড়াতাড়ি গল্পটার ইতি টানতে চাচ্ছি।
যারা জয়কে মানতে পাড়ছেন তো পাড়ছেন আর যারা পাড়েন নি তাদের জন্য না হয় সিজন ২ তে আদির নায়কার ব্যবস্থা করব।

আর এতদিন যেহেতু গল্পটা পড়ছেন তখন ভাল লাগুক আত খারাপেই লাগুক কাল জয় আর রুহির বিয়ে তাই প্লিজ
রুহি আর জয়ের বিয়েতে সবাই আসবেন আমার পক্ষ থেকে দাওয়াত রইল।

বিয়ের স্থানঃ সাহিত্যের ছোঁয়া/ নীল ক্যাফের ডায়রী।
সময়ঃআগামিকাল, সন্ধ্যা ৬ টা)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here