লেডি_ডন পার্টঃ৬

0
1241

লেডি_ডন
পার্টঃ৬
#লেখিকাঃ গাজি স্নিগ্ধা হোসেন

অবশেষে আদির অপেক্ষার শেষ হলো,
দেখতে দেখতে ভোর হল,
আদি সকাল সকালে উঠেই অফিসের জন্য রেডি হয়ে গেল,
রুহিকে দেখার জন্য আদির যেন আর তর সইছে না….
এদিকে রুহিও আজ বেশ তাড়াতাড়ি অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেছে কারন, আদি আসার আগে গিয়ে সে সবার সাথে পরিচিত হতে চায়….
আদি চলে আসলে সে কারো সাথে কথা বলতে পাড়ে না, তাই আজ তাড়াতাড়ি অফিসে চলে এসেছে সে…

রুহিঃ যে করেই হোক সবার ভুল ভাংগাতে হবে।
কিন্তু এখনোত কেউ আসে নি তাহলে….
রুহি এসে ডেস্কে বসলো,

এরিমধ্যে মিঃ আদিত্য চৌধুরী এসে হাজির

রুহিঃ যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই দেখি সন্ধ্যা হয় মনে মনে…স্যার আপনি আজ এত সকালে?

আদিঃ আমি কখন অফিসে আসব আর কখন আসব না সেটা তোমাকে জিজ্ঞাস করে আসতে হবে নাকি?

রুহিঃ না না স্যার আমি ত এমনি বলছিলাম

আদিঃ হুম চুপচাপ কাজ করো বাইরে যাওয়ার দরকার নাই….

রুহিঃ নিকুচি করেছে তর কাজের বেয়াদব,দেখিস ঠাডা পড়বে তর উপড় মনে মনে

আদিঃ কিছু বলছো মনে হচ্ছে

রুহিঃ কই নাত স্যার আমি ত ভাবছিলাম

আদিঃ কি ভাবছিলে?

রুহিঃএই যে আপনি একটা খাটাস…. মানেনননন কত ভালো আপনি এই আর কি..

আদিঃ বোঝেছি…

এউহিঃ কি বোঝেছেন স্যার?

আদিঃ এই যে তোমার পাকা গঁজিয়েছে, ছেঁটে দিতে হবে..কালকের প্রজেক্ট টা শেষ হইছে? নিশ্চুই না।
যাও কাজ করো (ধমক দিয়ে)

রুহিঃ বিড়বিড় করতে করতে ডেস্কে গিয়ে কাজে বসলো,হে খোদা অর যেনো একটা ফুটবল টিমের সমান বাচ্চকাচ্ছা হয়, যারা অকে সারাদিন বিরক্ত করবে।

আদি রুহির কথা শুনছে আর হাসছে,
হাসতে হাসতে আদি বলল শুধু ১ টা কেন?
১ টা ফুটবল টিম আর ১ টা ক্রিকেট টিম হলেও আমার কোন আপত্তি নাই যদি তোমার সমস্যা না হয়।
রুহিঃ বাচ্চা আপনার হবে তাতে আমার সমস্যা হবে কেন?

আদিঃ সেটা তুমি বোঝলে তো কাজেই হত।

রুহি কিছু বলতে চাইলে আদি ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেয় আর কাজ করতে বলে।

আদি আজ কোন কাজ করছে না, এক নজরে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে। রুহির প্রতি তার এক অদ্ভুত ভাল লাগা কাজ করছে।কিন্ত আদি তা প্রকাশ করতে পাড়ছে না কারন সে এমনেই।

আদিঃ কি করে বলব রুহিকে? ওই কি আমায় সে দৃষ্টিতে দেখে? অথবা ওর যদি পছন্দের কেউ থাকে?
থাকলে থাকুক তাতে আমার কিছু যায় আসে না রুহি আজ থেকে শুধুই আমার।যদি সে রাজি না থাকে তবুও আমার।এগুলি ভাবছিল আদি,আর রুহির দিকে দেখছিল।আদি রুহিকে ডাকল,

রুহিঃ জ্বি স্যার বলুন
আদিঃ তোমি কোথায় পড়াশুনা করেছো?
রুহিঃ স্যার আসলে মানেনেনে….আমি ত বড় স্যারকে বলেছিলাম আমি তেমন পড়াশুনা করি নি।

আদিঃ যাক বাচাঁ গেছে।

রুহিঃ জ্বি মানে…..

আদিঃ কিছু না। যাও কাজ করো

কিছুক্ষন ২ জনেই কাজ করে অতঃপর লাঞ্চের সময় হল,
রুহি বাইরে যেতে চাইলে আদি যেতে দেয় আর নিজেও রুহির সাথে রুমের বাইরে এসে সবার সাথে রুহির পরিচয় করিয়ে দেয়। আর সবাইকে বলে রুহিকে কাজে সাহার্য্য করতে।

রুহি অবাক হয়ে যায়, কয়েকজন মেয়ে কলিগ ছাড়া,সবাই তার সাথে মোটামুটি ভাল ব্যবহার করছে।

লিজার সাথে রুহির বেশ ভাল বন্ধুত্ব হয়ে গেছে, লিজা আদির বন্ধু ওরা একসাথেই পড়াশোনা করেছে।লিজার বাবা মা দেশের বাইরে থাকে, লিজা মুলত সময় কাটানোর জন্যই অফিসে আসে। রুহি আর লিজা অনেক্ষন কথা বলল তারপর একসাথে ক্যান্টিনে গেল খেতে।
খেয়ে রুহি ফিরে আসল,এসে দেখে আদি বসে আছে।
রুহিঃ স্যার খাবেন না
আদিঃ হুম খাব তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম বলে লিজাকে বলল রুমে খাবার পাঠাতে।
দারোয়ান এসে খাবার দিয়ে গেল।

আদিঃ রুহি এদিকে এসো…

রুহিঃ জ্বি স্যার বলুন

আদিঃ খাইয়ে দেও…!!!

রুহিঃ মানে কি? কি বলছেন এসব?

আদিঃ বাংলা ভাষায় ত বল্লাম

রুহিঃ স্যার আমি আপনার কর্মচারী বউ কিংবা প্রেমিকা নই।

আদিঃ পি এ মানে কি জানো….???পার্সোনাল এসিস্টেন্ড…!!! আর তারা ছাড়াও আমি অনেক আগেই তোমাকে বলেছি এখন থেকে যা চাইব তোমার তাই করতে হবে, শখুন এর দৃষ্টি পড়ে গেছে তোমার উপড় কিছু করার নাই।বাকি রইল অফিসের বস? তুমি ভুলে যাচ্ছ আমি আগে একটা বখাটে ছেলে তারপর অফেসের বস।তাই এমন কিছু কইর না যার ফল তোমার বাবাকে ভূগতে হয়।
রুহিঃ একটা অসহায় মেয়েকে ব্লেকমেইল করতে লজ্জা করে না?

রুহির কথা শুনে আদির জিদ চেপে গেছে।

আদিঃ না করে না… খাইয়ে দিতে বলছি সোসাইড করতে তো বলি নাই।

রুহির খুব রাগ হচ্ছে তাও খাইয়ে দিতে গেল

থামো থামো একটা থাপ্পড় মারবো ফাযিল মেয়ে… তোমাকে চামচ দিয়ে খাওয়াইতে কে বলছে? হাতে খাওয়াও চোখ পাকিয়ে বলল আদি

রুহিঃ কত ইচ্ছা ছিল হাবি কে তুলে খাওয়াব কিন্তু তার আগেই এই রাক্ষস টাকে খাওয়াতে হচ্ছে।

আদি রুহির হাতে কামড় বসিয়ে দিল
রুহিঃ আহ…. কি করলেন এটা?

আদিঃ রাক্ষস সাধারনত যা করে….

রুহিঃ আপনার কখনো ভাল হবে না।

আদিঃ জানি,যখন থেকে পেত্নিটাকে দেখেছি তখন থেকেই ত ঘুম চলে গেছে এখন আর ভাল থাকার আশা করি না।

সারাদিন আদি রুহির পিছনে লেগেছিল আদি রুহিকে হার্ট করতে চায় না কিন্তু রুহি আদির সব কিছুতেই বাঁধা দিয়ে আদির রাগ বাড়িয়ে দেয় তাই আদি বাধ্য হয়েই রুহিকে জোর করে।

ছুটির সময় হয়ে গেছে আদি কাজে ব্যস্ত ছিল সেই ফাঁকে রুহি আফিস থেকে বের হয়ে এসেছে। কিন্তু বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে,কোন যানবাহন নেই, তাই রুহি বৃষ্টিতে ভিজেই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে।
কিছু রাস্তা যাওয়ার পর একটা গাড়ি এসে রুহির সামনে থামলো গাড়ি থেকে নেমে এলো আদি, এসেই কোন কথা না বলে রুহির গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিল,এভাবে ভিজতেছ কেন?
খুব তো নিজের সম্মানের কথা বল,আর এখন ভিজে জামাকাপড়ে নিজের কি অবস্থা করেছো দেখছো? সবাই কুনজের দেখছে তোমায়, সেদিকে নজর আছে?
রুহি তাকিয়ে দেখে সত্যিই কিছু লোক ওর দিকে লোভনীয় চোখে তাকিয়ে আছে,
রুহি লজ্জায় মাথা নিচু করে দিল, আদি নিজের জ্যাকেট খুলে রুহিকে পড়িয়ে দিয়ে বলল চলো বাসায় পৌছে দিয়ে আসি।
গাড়িতে বসে রুহি ভাবছে স্যারকে যতটা খারাপ ভাবছিলাম তিনি ততটাও খারাপ না (মনে মনে)
ভিজে ভিজে রুহির অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে চুল থেকে টপ টপ পানি পড়ছে। রুহি রীতিমত কাঁপছে।

আদিঃ আমার কি ইচ্ছে করছে যানো রুহি?
রুহিঃ কি স্যার?

আদিঃ ইচ্ছা করছে তোমাকে বরফ জ্বলে ডুবিয়ে রাখতে।

রুহিঃ তাহলে তো আমি মরেই যাব,

কথাটা শুনা মাত্র আদি গাড়ির ব্রেক চেপে দিল।
হঠাৎ ব্রেক করায় রুহি সামনের দিকে জুঁকে গিয়ে মাথায় ব্যাথা পেল।
আদিঃ আর কখনো মরার কথা বলবা না রুহি…

রুহিঃ অবাক হয়ে,ঠিক আছে বলব না।

আদি হাতে রুমাল নিয়ে রুহির মাথা আস্তে করে মুছে দিলো। আজ তোমার জ্বর আসবে সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।জ্বর আসলে তুমি অফিসে আসবেনা আমার খুব খারাপ লাগবে।

রুহি যেনো অবাকের শেষ সীমায় পৌছে গেছে।
রুহি নিজের অজান্তেই বলে ফেলল,
আমি আসব স্যার।
বাসার সামনে গিয়ে রুহিকে নামিয়ে দিল,রুহি চলে যাচ্ছিল তখনি আদি বলল
আমি যদি কাল তোমায় নিতে আসি….???

রুহিঃ চিন্তা করবেন না স্যার আমি অফিসে যাব কথা দিলাম।
আদি রুহির ঘরে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে চলে গেল
রুহিরও আজ আদিকে অন্যরকম লেগেছে।বেশ ভালই লেগেছে।
পরেরদিন রুহি অফিসে এসেছে,আদির সাথে আজ আর কোন ঝামেলা হয় নি আদিকে এখন রুহির বেশ ভাল লাগে।
এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে গেল….
,
,
,
,
,
,
কিন্তু হঠাত করেই একদিন,

রুহিঃ এই নিন আমার রিজাইন লেটার,আমি আর আপনার অফিসে কাজ করতে চাই না।

আদিও লেটার টা নিয়ে নিল কোন রকম বাঁধা দিল না।
আদিঃ ঠিক আছে আপনি যেতে পাড়েন।
.
.
.
চলবে…!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here