লেডি_ডন
পার্টঃ ৯
#লেখিকাঃ গাজি স্নিগ্ধা হোসেন
২ মাস হয়ে গেছে রুহি আদির বাসায় এসেছে,২ মাসের মধ্যে সে বাড়ির কাজের লোক সহ লিজা সাওন মাহির সবার মন জয় করে নিয়েছে। সবার মাঝে রুহি মধ্যমণি হয়ে উঠেছে।রুহিকে দেখে বোঝায় যায় না সে বাড়ির বউ নাকি অন্য কিছু। আদির সাথে সে এমন ব্যবহার করে যেন সে আদির বউ।রুহি প্রতিদিন আদিকে খাইয়ে দেয় বউয়ের মতই যত্ন করে। রুহি নিয়ম করে সবাইকে কার্টুন দেখতে বাধ্য করে মাঝে মাঝে সবাইকে নিয়ে ঘুরতেও যায়। আদিও তাকে বেশ আদরে রেখেছে কখনো একটা ধমকও দেয় নি। মাহির সাওন লিজা ত রুহিকে ছাড়া কিছু ভাবতেই পাড়ে না।
সবকিছুই ভাল ভাবে চলছিল।
কিন্তু আদি আর রুহির ডেসটিনিটাই এমন সবকিছু বেশিক্ষন ঠিক থাকে না এবারেও তাই হল।
,
,
,
,
হঠাৎ একদিন আদি একটি মেয়ে নিয়ে আসল,লিজা সাওন মাহির ওকে দেখে রীতিমত নাচানাচি শুরু করছে সবার সাথে মেয়েটি হেসে হেসে কথা বলছে।
কিন্তু রুহির এসব ভাল লাগছে না বিশেষ করে মেয়েটি রুহির হাত ধরে আছে সেটা রুহির সহ্য হচ্ছে না।কারন রুহি আদিকে ভালবেসে ফেলেছে।রুহি চাপা স্বভাবের হওয়ায় মুখফোটে বলতে পাড়েনি।রুহির খুব রাগ হচ্ছে কে এই মেয়ে? অনেক্ষন বিশ্লেষণ করে বোঝতে পাড়ল, মেয়েটির নাম মনি।
ও আদির বান্দবি বিদেশে একসাথে পড়াশোনা করত অনেকদিন পর দেশে ফিরেছে।লিজা সাওন মাহিরের সাথেও বেশ ভাল সম্পর্ক।
আদি রুহির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য রুহিকে ডাকল।
আদিঃ রুহি এই হচ্ছে মনি আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড বলতে পারো আমার আত্মা।আর মনি এই হল রুহি………..
আদির বলা বাকি শব্দগুলি শুধু রুহিকে না সবাইকে অবাক করে দিয়েছে।
কারন আদি বলেছে এই হল রুহি আমাদের বাসার কাজের মেয়ে।
রুহি কি বলবে বোঝতে পাড়ছে না শুধু আদির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।আদি খুব সাভাবিক ভাবে কথা বলছে যেন কিছুই হয় নি।
আদিঃ রুহি যাও উপড়ে মনির ঘর গোছিয়ে দাও।
রুহি খুবি চাপা স্বভাবের তাই ধাক্কাটা সামলে নিয়ে সবার সামনে সাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে।
রুহিঃস্যার উপড়ে তো কোন রুম খালি নেই।
আদিঃ আজব তো,তোমাকে এতদিন আমি মুল্যায়ন করেছি কিন্তু তোমারও তো উচিত নিজের জায়গাটা বোঝে নেওয়া তাইনা? এক্ষুনি নিজের সব জিনিস নিয়ে ছাদের চিলিকোঠায় চলে যাও আজ থেকে মনি তোমার রুমে থাকবে।
রুহিঃ জ্বি স্যার,ম্যাডাম চলুন বলে মনিকে নিয়ে উপড়ে গেল,
পাশ থেকে মাহির এগিয়ে এসে বলল এসব কি করছিস আদি?
লিজাঃআমিও কিছু বোঝলাম না…
আদিঃ সময় হলে ঠিক বোঝবি।
সাওনঃঝামেলা কিছু একটা হয়েছে সেসব নাহয় বোঝলাম কিন্তু চিলিকোঠা কেন? গেস্টরুমেও তো থাকতে পাড়ত।চিলিকোঠাটায় কোন মানুষের পক্ষে থাকা সম্ভব কি?না আছে লাইট না আছে বিছানাপত্র ওখানে থাকলে যেকেউ ধম আটকে মরে যাবে।
আদিঃ মরা এত সহজ না এই মেয়ের শাস্তি পাওয়া দরকার আদির সাথে ফাযলামি করার শাস্তি কি হতে পাড়ে সেটা আজ থেকে বোঝবে।
লিজাঃ কিন্তু ও করেছেটা কি?
আদিঃ সেটা অন্যদিন বলব।এখন ছাড় এসব আমি ওইসব মনে করে নিজের রাগ আর বাড়াতে চাচ্ছি না।আর একটা কথা মাথায় ঢুকিয়ে নে,আমি ওর সাথে যাই করি না কেন তোরা বাধা দিবি না। ওর সাথে আমার অনেক হিসাব বাকি আছে সব মিটাতে হবে আদি কারর ঋন রাখেনা। দেখি রুহি কত সহ্য করতে পাড়ে।
রুহি মনির ঘর গোছিয়ে দিয়ে নিজের জিনিসপত্র নিয়ে চিলিকোঠায় গেল
কিন্তু একি এখানে থাকা তো দূর ডোকার জায়গায়ই তো নাই পুরোনো জিনিসপত্র দিয়ে সবটা ঘর ভর্তি হয়ে আছে।
কিন্তু কিছু ত করার নেই এখানেই থাকতে হবে তাই কিছু জিনিস বের করে ছাদে রেখে এক কোনায় একটু জায়গা খালি জায়গা খালি করে নিজের জিনিসপত্র রাখতে রাখতে আদির গলা শুনতে পাড়লো হুম আদি ওকেই ডাকছে।
তাড়াতাড়ি নিচে গেল
রুহিঃ স্যার আমাকে ডাকছেন?
আদিঃ না গান গাইছিলাম,ডাকতে ডাকতে গলা ফাটিয়ে ফেলছি এখন মহারানী বলছেন ডাকছি কিনা।রাতের রান্না কে করবে শুনি?ধমক দিয়ে
রুহিঃ রান্নাত উমা আন্টি…..বলে রান্নাঘরের দিকে তাকালো।কিন্তু রান্না ঘরে কেউ নেই দেখে সে খুব অবাক হল।
আদিঃ হুম এতদিন উমা আন্টিই করত এখন থেকে আর করবে না বাড়ির সব কাজের লোক কে আমি ছুটি দিয়ে দিয়েছি।কারন তোমাকে আমার যত টাকা দিতে হয় তার অধের্ক টাকায় এদের সবাইকে দিলেই হত তাহলে শুধু শুধু ইনভেস্ট করবো কেন?এরা সবাই মিলে যে কাজ করতো আজ থেকে তুমি একা সেসব কাজ করবে কারন তোমার বাবা এখনো হাসপাতালে।এখানকার বেস্ট হাসপাতালে উনার চিকিৎসা হচ্ছে সে খরচ ত আছেই তার পর নুরার পড়াশোনা সহ সংসারে সব খরচ….
রুহিঃ জ্বি স্যার আমি বোঝতে পেড়েছি,
আমি সব করতে রাজি আছি বলে দৌড়ে রান্না ঘরে চলে গেল ।রুহির চোখের পানি বাধ মানছিল না তাই সেখানে দাঁড়িয়ে থাক সম্ভব ছিল না তাই রান্না ঘরে চলে এসেছে।
রুহি তেমন কিছুই রান্না করতে পাড়েনা তবু অনেক কষ্টে ফোন দেখে দেখে রান্না শেষ করে টেবিলে রাখলো সবাই খেতে বসেছে যথারীতি প্রতিদিনের মত রুহিও খেতে বসেছে।
কিন্তু আদি এসেই রুহিকে একটা ধমক দিল রুহি ভয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল আদি লাথি দিয়ে রুহির চেয়ার টা ফেলে রুহি ভয়ে একদম চুপসে গেছে।আদিকে এর আগে এত রাগতে কখনো দেখে নি রুহি।
আদিঃ কখনো শুনেছো বাড়ির কাজের মেয়ে আর বাড়ির মালিক এক টেবিলে বসে খায়? (ধমক দিয়ে)
রুহিঃ স স স স সরি স্যার আমি বোঝতে পাড়ি নি (ভয়ে ভয়ে)
মনিঃ রুহি কি প্রবলেম?
তোমার আচারন কোনভাবেই কাজের মেয়ের মত লাগছে না সবাই তোমাকে ভালবাসে মানে এই না যে তুমি নিজের জায়গা ভুলে যাবে।
রুহির চোখের কোণে জল জমে গেছে, মাথা নিচু করে বলল ভুল হয়ে গেছে ম্যাডাম আর হবে না বলে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।
রুহির অবস্থা দেখে লিজা সাওন আর মাহিরের খুব খারাপ লাগছে আদির প্রতি রাগও হচ্ছে কিন্তু কিছু বলতে পাড়ছে না কারন আদি আগেই নিষেধ করে দিয়েছে।
আদিঃ আজ থেকে নিজের খাবার আলাদা রান্না করবে আমাদের খাবারের সাথে না। রাতে স্রেফ ২ টা রুটি আর সবজি এর বেশি কিছুনা। যদি বেশি কিছু করো সিসি টিভি ত আছেই।
রুহি কিছু বলল না মাথা নিচু করে শুনছে।
সবার খাওয়া শেষ,রুহি সবকিছু গুচাচ্ছিল এর মধ্যেই ৯ টা বাজল রুহি সব ফেলে টিভির রুমে যেতে চাইল কিন্তু সারাদিনের সব ঘটনা মনে পড়ে গেল তাই আর ওখানে যাওয়ার সাহস হল না।
সবাই মিলে টিভি দেখছিলো রুহি না আসায় আদির রাগ হল,রাগে গজ গজ করতে করতে বলল দেখেছিস মেয়ের জেদ কত? একদিন কার্টুন দেখতে না পাড়লে সারা বাড়ি মাথায় করত আর এখন আসার নামেই নাই। দেখিস আমি ওর ভালো লাগার কোন কিছু করতে দিব না আমার সাথে জেদ দেখানোর মজা বোঝাব।
লিজাঃ আদি তোর ব্যাপার স্যাপার কিছুই বোঝতে পাড়ছি না।কি চাচ্ছিস তুই?
আদিঃ আমি ওকে কস্ট দিতে চাই কিন্তু আমার সামনে রাখতে চাই।
মাহিরঃ এসবের মানে কি?
আদিঃ জানি না বলে উঠে চলে গেল।
মনিঃ কি ব্যাপার বলতো তোরা সবাই এই মেয়ের প্রতি এত conscious কেন বলতো
ফালতু একটা মেয়ে….!!!
সাওনঃ যা জানিস না সেই বিষয়ে কথা বলবি না মনি।
মাহির, লিজাঃহুম ঠিক বলেছিস সাওন।
মনির এদের কথায় রাগ হয়েছে,
এই মেয়েকে তো আমি দেখে নিব মনে মনে বলল মনি।
আদি এসে দেখে রুহি রান্না ঘরে খেতে বসেছে আদিত রেগে ছিল তাই এসেই রুহির খাবার ছুড়ে ফেলে দিল।
রুহি অবাক হয়ে বলল আমি কি কিছু ভুল করেছি স্যার…
আদিঃ অবশ্যই করেছিস। তোকে বলছি না আজ থেকে আলাদা রান্না করবি।আজ মানে আজ থেকেই।
রুহিঃ জ্বি স্যার…..
আদিঃ ঘর পরিষ্কার কর যা,
একটু খাবারো যেন কোথাও পড়ে না থাকে।
রুহিঃ হাত ধুয়ে ঘর পরিষ্কার করতে শুরু করল।
আদিঃ সকালে উঠে সারা বাড়ি পরিষ্কার করবি সবার জন্য খাবার বানাবি মনির সব কাজ করবি।আমার অফিসে যাওয়ার জন্য সব ঠিকঠাক গুছিয়ে দিবি বোঝেছিস।আর শোন তর আর অফিস যাওয়ার দরকার নেই।
রুহি মাথা নাড়ল।
,
,
,
রুহি ঘর পরিষ্কার করে শুতে গেল।
রুহি ছাদে যাওয়ার সাথে সাথে বোঝতে পাড়ল কেউ দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়েছে।রুহি তাতে কিছু মনে করল না ঘরে লাইট নেই তাই রুহি ফোনের লাইট জ্বেলে ঘুমাতে গেল।
কিন্তু যেই সে শুতে যাবে, তখনি তার চোখ কপালে উঠে গেল চারদিকে তেলাপোকা কিলবিল করছে
রুহি উঠে দৌড় দিল কিন্তু দরজা ত বাইরে থেকে লাগানো। চিলিকোঠা থেকে বের হতে পাড়লেও নিচে যাওয়ার দরজা বন্ধ।
রুহিঃ কি করব এখন? চিলিকোঠায় থাকা অসম্ভব তাহলে কি করা যায়?আচ্ছা রাতটা না হয় ছাদেই কাটিয়ে দেই। বলে এক কোণায় গিয়ে শুয়ে পড়ল
কিন্তু কপালে দুঃখ থাকলে যা হয় কোন সংকেত ছাড়ায় হঠাৎ অঝোর ধারায় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। রুহির বৃষ্টির চেয়ে তেলাপোকাতেই বেশি ভয় তাই সে চিলেকোঠায় না গিয়ে সারারাত বৃষ্টিতে ভিজেছে।
সকালে আদি ছাদের দরজা খুলল রুহিকে দেখে আদির মেজাজ খারাপ হয়ে গেল এসে রুহিকে স্বজোরে একটা থাপ্পড় মারল, এতই জোরে থাপ্পড় মেড়েছে যে রুহির ঠোঁট ফেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝড়তে শুরু করেছে।
আদিঃকি করছো এখানে?এভাবে ভিজেজো কেন?
রুহিঃ ঘরে তেলাপোকা ছিল ঠোঁটের রক্ত মুছতে মুছতে।
আদিঃ তারমানে তুমি সারারাত বৃষ্টিতে ভিজেজো?
রুহিঃ জানি না আমার কাজ আছে সরুন বলে চলে গেল।
আদিঃ এই মেয়েকে তো আমি আজ মেরেই ফেলব তেলাপোকার জন্য সারারাত ভিজেছে।নিজের প্রতি কোন খেয়াল নেই।
রুহি কাপড় বদলে সবার জন্য চা বানিয়ে সবার রুমে দিয়ে আসল,
সে মনিকেও চা দিতে গেল মনি চা টা হাতে নিয়ে রুহির উপড় ছুড়ে মারল।
জানো না আমি চা খাই না কফি কোথায়?
রুহির এমন জায়গায় চা টা পড়েছে যে কাউকে দেখানো সম্ভব না গলার নিচে গরম চা পড়ে ছ্যাকা লেগেছে।
রুহি এসে আদি বলল আপনার বন্ধবি এমন কেন? আমাকে পুড়িয়ে দিল।
আদিঃ পুড়িয়ে দিল মানে কোথায় পুড়েছে দেখি
রুহিঃ না কিছু না কিছু হয় নি,
আদিঃ অহ আচ্ছা শোন এক পাতিল গরম পানি নিয়ে এসো তো দরকার আছে।
রুহি না বোঝেই সত্যি সত্যি গরম পানি নিয়ে আসল।
আদি গরম পানি টা রুহির উপড় ছুড়ে মারল।
আদিঃ আর কখনো কারোর ব্যাপারে মিথ্যা বলবা?
রুহিঃ আহ…. কি করলেন এটা?কিসের মিথ্যা?
আদিঃ এই যে মনি তুমাকে পুড়িয়ে দিয়েছে বললা
রুহিঃহুম তাহলে ত এখন যা ঘটল এটাও মিথ্যা।কারন আমি এটাও দেখাতে পাড়ব না যে কই পুড়েছে।
কি বলুন তো স্যার আমি মেয়ে ছেলে নই তাই শরীরের সব জায়গা দেখাতে পাড়লাম না।
আদি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে কি বলবে বোঝতে পাড়ছে না।
আদিঃ আমি কি করলাম এটা….???
আদি রুহির পিছন পিছন গেল একটা এন্টসেপ্টিক ক্রিম রুহির হাতে দিয়ে বলল লাগিয়ে নাও প্লিজ, না হলে খুব কষ্ট হবে।
রুহিঃ আপনার ভাবতে হবে না।
আদিঃ লিজা এই লিজা এদিকে আয় তো….
লিজাঃ কি হল ডাকছিস কেন?
আদিঃরুহির দিকে ইশারা করে বলল এটা ওকে লাগিয়ে দে.
লিজাঃ কেন কি হয়েছে ওর?
আদিঃ এত পেঁচাস কেন? জামাটা খুলে দেখ
কি হইছে?ইচ্ছা ত করছে আমি নিজেই দেখে নেই
আদি এটা বলতেই রুহি জামাটা আঁকড়ে ধরল।
আদিঃ ভয় পেতে হবে না আদি এতও খারাপ না বলে চলে গেল।
,
,
চলবে।
(আর ৩ টা পার্ট বাকি আছে যার যা প্রশ্ন আছে এই ৩ পার্টে উত্তর পেয়ে যাবেন আশা করছি)