লেডি_ডন সিজনঃ২ পার্টঃ৭,৮

0
1267

লেডি_ডন
সিজনঃ২
পার্টঃ৭,৮
লেখিকাঃ Snigda Hossain Mona
পার্টঃ৭

জয়ঃ রুহিকে তো বাসায় সুস্থই রেখে গিয়েছিলাম হঠাৎ কি হল ওর?কেউ কিছু করে নাই তো?
ভাবতে ভাবতেই ডাক্তার বাইরে এল….
জয় দৌড়ে গিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাস করল রুহির কি হয়েছে?
ডাক্তারের কথায় জয়ের মনে হল সারাদিনে এই প্রথম ভাল কোনো খবর পেল।
কিন্তু পরক্ষনেই জয়ের মন খারাপ হয়ে গেল।আবারো বড় ধাক্কা খেল।

ডাক্তারঃ Congratulation মিঃ জয়…. রুহি একদম ঠিক আছে,ও মা হতে চলেছে….

জয়ঃ সত্যি….??? জয় আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল।

ডাক্তারঃ হুম জুনিয়র জয় আসতে চলেছে।
i wish যেন জুনিয়র জয়ই হয়।যদিও জুনিয়র রুহি হলেও সমস্যা নেই। যেই আসুক সে আমাদের শহরের নেত্রীত্ব দিবে।মা বাবার এমন বন্ডিং এর আগে কোন বেবি দেখে নি, বাবাও যেমন সাহসি মাও তেমন বলে ডাক্তার চলে গেল।

রুহি মা হতে চলেছে শুনে জয় খুশি হলেও ডাক্তারের কথাগুলি জয়কে ভাবাচ্ছে….
জুনিয়র জয়….????
কিন্তু এই কি করে জুনিয়র জয় হবে? ও তো আদির বাচ্চা।
রুহির বিয়ে এতই তাড়াতাড়ি হয়েছিল যে শহরের হাতেগুনা কয়েকজন ছাড়া প্রায় কেউই রুহির বিয়ে সম্পর্কে জানে না। আবার সবাইকে রুহি আর জয়ের এনগেইজমেন্টের দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল।
যেদিন এগেইজমেন্ট সেদিনেই দাওয়াত দেওয়ায় অনেকেই এটেন্ড করতে পাড়ে নি তাই যারা এটেন্ড করেনি তারা জানেই না সেদিন রুহির, জয়ের সাথে নয় আদির সাথে এনগেইজমেন্ট হয়েছিল।তার মধ্যে আদিকে এখানে কেউ চিনে না রুহির কাছেও কোন প্রমানো নেই যে সে আদির স্ত্রী।আদির বাবা মাও রুহিকে মেনে নিবে না।তাই কেউ বিশ্বাস করবে না রুহির বাচ্চা আদির।সবাই জানত জয়ের সাথেই রুহির বিয়ে হবে।
আদি না থাকলেও তার ভালবাসা এখুনো রুহির মাঝে বেঁচে আছে।এটা জয়ের জন্য খুশির খবর হলেও,এই সমাজ আদির ভালবাসার কি নাম দিবে?
আদির বাবা মা রুহিকে মেনে নিবে না,রুহি আমার কাছে থাকলে সবাই রুহির দিকে আংগুল তুলবে। ওকে দুঃচরিত্র ভাববে।আমার কাছে না রাখলেই বা রুহি তার বাচ্চার কি পরিচয় দিবে?
রুহি…..এমন একটা মেয়ে, যাকে সবাই এক নামে চিনে তার বিয়ে হয়েছিল লুকিয়ে লুকিয়ে এটা কেউ মানবে না আগে পিছে রুহিকে নিয়ে কথা বলবে।কারন সবাই ভাবত রুহির সাথে আমার বিয়ে হবে।আর সমাজের কথা বাদ দিলেও রুহির বাচ্চা সারাজীবন বাবার আদর ছাড়া বড় হবে?

আমি কি করতে পাড়ি রুহি আর রুহির বাচ্চার জন্য?
হয়ত কিছুই না কারন আমি চাইলেও রুহির বাচ্চাকে নিজের বাচ্চা হিসেবে পরিচয় দিতে পাড়ব না কারন আমার স্ত্রী আছে হাজার হোক সে ২ বছর ধরে আমার পরিচয়ে পরিচিত।একটা মেয়ে এতদিন আমার সাথে থাকার পর আমি তাকে ছেড়ে দিব কি করে? সেই মেয়েটাই বা সমাজে মুখ দেখাবে কি করে?

অন্যদিকে আদির বাচ্চাকে আমি কোনরকম অবহেলায় বড় হতে দিতে পাড়ব না কিন্ত আমারই বা করার আছেটা কি?কিছুই না, এমনকি আদির বাচ্চাকে নিজের কাছে রাখতেও পাড়ব না কারন সমাজ তা মেনে নিবে না।সমাজ তার মাকে খারাপ মেয়ে বানিয়ে দিবে।
সমাজে বাবা ছাড়া একটা বেবি কতটা অসহায় ভাবলেই খারাপ লাগছে।

রুহিরে তুই আমায় এ কোন প্রশ্নের সামনে এনে দার করালি আমি নাত তোকে ছাড়তে পাড়ব,না ত লিজাকে।আমি এখন কি করব?নিজেকে খুব অসহায় লাগছে।
,
,
,
,
,
চলবে…..!!!

#লেডি_ডন
#সিজনঃ২
#পার্টঃ৮
#লেখিকাঃ Snigda Hossain Mona

জয়ঃ যাকে ছোট থেকে পাঁজর দিয়ে আগলে বড় করলাম আজ তার এত বিপদে পাশে থাকব না?

আবার যাকে পবিত্র কালিমা পড়ে নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছি তাকেই বা ছেড়ে দিব কি করে?

আমার উপড়, আদির বাচ্চার কি কোন অধিকার নেই।আদিকেও তো নিজের বন্ধু হিসেবে মেনে নিয়েছিলাম।বন্ধুর মৃত্যুর পর তার বাচ্চাকে দেখার দায়িত্ব কি আমার নয়?

কিন্তু সবকিছুর পড়েও লিজা আমার স্ত্রী। আমি লিজাকে অনেক কস্ট দিয়েছি এখন আবার কি করে দিব?
নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। আমার ঠিক কি করা উচিত?
,
,
,
,
জয় ভাবনার জগত থেকে বের হয়ে বাস্তবে ফিরে আসল,
আর রুহির কাছে গেল।

জয়ঃ এখন ঠিক আছো?

রুহিঃ ঠিক আছি,কিন্তু তখন কি হয়েছিল আমি হঠাৎ করে পড়ে গেলাম কি করে?

জয়ঃ হয়ত মাথা ঘুরে গেছিল।

রুহি মনে হচ্ছে কেউ তাকে ধাক্কা দিয়েছিল কিন্তু জয়কে বলল না

রুহিঃ হুম হবে হয়ত।

জয়ঃ তোমার কি হয়েছে শুনবা না?

রুহিঃ না আমি প্রায়েই অসুস্থ হয়ে পড়ি,এটা কোন ব্যাপার না। চলেন বাড়ি যাই।

জয় রুহিকে বাচ্চার ব্যাপারে কিছু বলতে পাড়ল না না কারন সে শুনতে চায় না। তাছাড়া বাচ্চা কি সেটা বোঝার অবস্থায় রুহি নাই।

জয় রুহিকে বলল ঠিক আছে চলো বাসায় যাই,
রুহি উঠতে চাইল কিন্তু পাড়ল না রুহির অবস্থা খুবি খারাপ সেদিন শুধু আদির উপড় না রুহির উপড়েও আক্রমন হয়েছিল রুহি তখন থেকেই অসুস্থ তার উপড় কতদিন ঠিকমত খায় নি। তাই রুহি খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে।

জয়ের ইচ্ছা করছে রুহিকে কোলে করে নিয়ে যেতে কিন্তু সে এখন অন্য একজনের স্বামি। আমি চাইলেই একটা মেয়েকে কোলে নিতে পাড়ি না অন্যরা দেখলে আমাদের সম্পর্কে অনেক কিছুই ভাববে।

রুহি বেশ চেষ্টা করে উঠে দাঁড়াল তারপর গাড়িতে গিয়ে বসলো।

বাসায় আসার পর,জয় রুহিকে ঘরে যেতে বলল রুহিও চলে গেল।

জয় নিজের ঘরে এসে বলল লিজা তুমাকে কিছু কথা বলতে চাই।

লিজাঃ হুম বলো

জয়ঃ আদি আর বেঁচে নেই।

লিজাঃ কি বলছো এগুলা?

জয়ঃ হুম এটাই সত্যি।তাই রুহি আজ থেকে আমার কাছেই থাকবে। আমি জানি কোনো মেয়েই চায়না তার স্বামী অন্য কোন মেয়ের কাছাকাছি বেশিক্ষন থাকুক আর আমিও তোমায় কথা দিয়েছিলাম আমি তোমায় ছেড়ে অন্য মেয়ের কাছে কখনো যাব না।

কিন্তু রুহি আমার কাছে কি তুমি জানো? আমার কলিজার ঠুকরা আমি ওকে অবহেলা করতে পাড়ব না। তাই আমি চাই তুমি ওর দেখাশোনা করো যাতে ও খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যায়।
ও সুস্থ হলে ওকে ওর শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়ে দিব।

লিজাঃ বাহ ভাল চান্স দিচ্ছে তো….রুহি তোমার সাথে আমার অনেক হিসাব বাকি ছিল এখন সব শোধে আসলে শোধ করে নিতে পাড়ব।(মনে মনে)

জয়ঃ কি ভাবছো লিজা…???

লিজাঃ তুমি কিছু ভেব না আমি রুহির খেয়াল রাখব।

জয়ঃ একটু বেশিই খেয়াল রাখতে হবে লিজা।

লিজাঃ মানে….???

জয়ঃ রুহি মা হতে চলেছে….

লিজাঃ কি বলছো…. কার না কার বাচ্চা আমরা বড় করব?

জয়ঃ কার না কার মানে?

লিজাঃ আরে রুহি এতদিন কোথায় কোথায় ছিল কে জানে আর তুমি বলছো আদি বেঁচে নেই তাহলে এর মানে কি দাঁড়ায়?

জয়ঃ জোরে চিৎকার করে বলল লিজা….কি বলছো এসব।এই প্রথমবার সে লিজার সাথে জোরে কথা বলল।
জয়ের আর কিছু বলতে ইচ্ছা করছে না সে ঘরের বাইরে চলে গেল।

জয় নিচে এসে একা একা বসে ভাবছে, লিজাই বিশ্বাস করছে না এটা আদির বাচ্চা তাহলে সারা পৃথীবি কে আমি কি করে বিশ্বাস করাব রুহি অপবিত্র না। সবার মুখ কি করে বন্ধ করব আমি?সবাইকে চুপ করাবার একমাত্র রাস্তা বাচ্চাটাকে নিজের বাচ্চা হিসেবে পরিচয় দেওয়া।

কিন্তু লিজাও তো নির্দোষ একটা নির্দোষ মেয়েকেই বা কি করে এত বড় শাস্তি দিব?

জয় এতদিন কষ্ট পেত রুহিকে দেখতে পাচ্ছেনা বলে আর আজ রুহিকে সামনে পেয়ে আরো বেশি কষ্ট হচ্ছে।

জয়ঃ এভাবে আমি আর থাকতে পাড়ছি না খুব অসহায় লাগছে নিজেকে, চলার সব পথ যেন বন্ধ হয়ে গেছে।পায়ের নিচের মাটি ক্রমশো সরে যাচ্ছে।

জয় একের পর এক ড্রিংক নিতে লাগল।প্রচুর ড্রিংক করছে সব ভুলার জন্য।কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছেনা।

লিজা জয়ের মাকে ডেকে এনে উপড় থেকে দেখালো।
দেখুন মা,যে ছেলে কোনদিন সিগারেট পর্যন্ত খায় নি আজ সেই ছেলে বাসায় বসে ড্রিংক করছে।সবি এই রুহির জন্য।

জয়ের মাঃ না আমি এসব কিছুতেই হতে দিব না আমার এই একটাই ছেলে একটা নস্টা মেয়ের জন্য আমি ওকে নস্ট হতে দিব না।রুহিকে আমি যেভাবেই হোক বিদায় করব

পরদিন সকালে,
লিজা রুহির জন্য আলাদা খাবার বানিয়ে আনল।
জয় সেটা দেখে বেশ খুশি হল।
রুহিকে ডেকে আনা হল খাওয়ার জন্য।
রুহির বেশ ক্ষুদা পেয়েছিল তাই খাওয়া শুরু করতে চাইল,
জয়ঃ রুহি আমি তো কাজে ব্যস্ত থাকি আজ থেকে তুমি লিজার কাছে থাকবে।ওর সব কথা শুনবা।
যদি না শোন জয় আসবে না।

রুহি মাথা নাড়ল।

জয়ঃ আগে হলে কি আমি এটা বলতে পাড়তাম? কিন্তু আজ আমি অসহায় আমি চাইলেও আর তোকে আগের মত আগলে রাখতে পাড়ব না।এখন যে আমাকেও অন্য কারো কাছে জবাদিহি করতে হয়।সেদিন যদি তুই জোর করে আমার বিয়ে না দিতি আজ আমি এই অবস্থায় থাকতাম না….

জয়ের চোখ ভিজে আসছে তাই সে না খেয়েই উঠে গেল।যতটা সম্ভব আমাকে রুহির থেকে দূরে থাকতে হবে মনে মনে ভাবল জয়।

জয় চলে যাওয়ার পর লিজা সুযোগ পেয়ে গেল।এমনেতেও সে রুহির জন্য আলাদা খাবার এনেছিল কারন সে রুহির খাবারে অনেক ঝাল দিয়ে রান্না করেছিল।যাতে অন্য কেউ তা না বোঝে তাই আলাদা করে এনেছিল জয় চলে যাওয়ায় কাজ টা আরো সহজ হয়ে গেল।

লিজাঃ শুনেছো তো আমার কথা না শুনলে জয় কখনো আসবে না। তাই আমি যা বলব তাই করবা এখন এটা খেয়ে নাও।

রুহিঃ নিঃসন্দেহে খাবার মুখে দিল….
কিন্তু এক চামচ খেয়েই রুহির মুখ জ্বলে গেল।
আমি আর খাব না বলে উঠে যেতে চাইল।

লিজাঃজোর করে বসিয়ে দিল এই তো কেবল শুরু আরও কত কিছু তোকে করতে হবে… এখন সবটা খেয়ে নে নাহলে আমি জয়কে আসতে মানা করে দিব।
জয়ের আসবে না শুনেই রুহি খেতে শুরু করল ঝালে রুহির চোখ দিয়ে পানি পড়ছে তবুও সে একের পর এক চামচ করে খেয়ে নিচ্ছে শুধু জয়ের জন্য।

আর সেই জয়েই আজ তাকে অন্য কারো হাতে তুলে দিয়েছে অথচ সে তা বোঝতেই পাড়ছে না…
,
,
,
চলবে….!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here