#শখের_সাদা_শাড়ি,02,03
কলমে ~ফাতেমা তুজ
২.
আকাশে মেঘ করেছে। বৃষ্টি হবে নয় হয়েই গেল। এই ঝামেলা টা না এলে কি এমন যায় এসে যেতো! ছাতা মাথায় হাঁটা দেয় উর্মি। টেউ খেলানো এই জীবন টা গাছের পাতার মতো। সময়ে অসময়ে ঝরা যেন বিশেষ কোনো দায়িত্ব। দশ মিনিট হাঁটার পর রিক্সা পেল। ভাড়া আশি টাকা। অথচ বাস দিয়ে গেলে লাগতো বিশ টাকা। এখন টাকার মায়া করলে হবে না। আশি টাকা ভাড়া তেই রিক্সায় উঠে পরলো। এই তুমুল বৃষ্টি তে রিক্সার বাঁকানো হুডে মাথা তো বেঁচে গেল তবে দুই হাঁটু তে ঠিক ই পানি পরছে। উর্মি রিক্সা ওয়ালা মামা কে জিজ্ঞাসা করলো পলিথিন হবে কি না। মামা বললো নেই। চরম বিরক্তি নিয়ে বসে রইলো উর্মি। ছাতা টা আধ ফুটো করে ধরলো হাঁটুর বরাবর। এতে কিছুটা রক্ষা হলো। রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া দিতেই মামা বললেন–
” আপা আর বিশ টাকা দেন। ”
” কি বলেন মামা। এই টুকু পথের ভাড়া তো পঞ্চাশ টাকা। সেখানে আশি টাকা নিলেন। এখন আরো বিশ টাকা চান। ”
লোক টা কিছু বললো না। একটা হাসি দিয়ে চুপচাপ চলে গেল। উর্মি কে দেখে ভেবেছিলো খুব বড়লোক গোছের কেউ। তাই সুযোগ বুঝে বিশ টাকা আরো বেশি চাইলো। উর্মি হা করে তাকিয়ে থেকে ছাতা খুলে। এই যুগে সবাই সুযোগ বুঝে। আর মধ্যবিত্ত দের পরতে হয় বিপাকে।
সৌমেন ছুটোছুটি করছে। উর্মি কে দেখে ও না দেখার ভান করে চলতে লাগলো। উর্মি বুঝলো যে জয়েনের আগেই ভুল করে বসেছে। কোম্পানি নিশ্চয়ই নিজের স্বার্থ দেখবে। ইমপ্লয়ির অভাব নেই যেখানে, সেখানে কেন ই বা অধিক সুযোগ দেওয়া হবে উর্মি কে। ছাতা গুটিয়ে এক সাইটে রাখলো। তারপর ব্যাগ থেকে ছোট একটা রুমাল বের করে হাঁটুর দিক টা মুছে ফেললো। সৌমেন এক টা মেয়ে কে পাঠিয়েছে। সম্ভবত তার পি এ। সব সময় পেছন পেছন ঘুর ঘুর করতে দেখা যায়।
” আপনি আমার সাথে আসুন। ”
” জী। ”
” উম্মে উর্মি রাইট? ”
” ইয়েস ম্যাম। ”
” আপনার কাজ হচ্ছে প্রজেক্ট এর সকল সিডিউল তৈরি করা। তাছাড়া আরো কিছু কাজ আছে সেটা ও জানানো হবে। ”
” আচ্ছা ম্যাম। ”
” জামা বদলে ফেলুন। বিদেশী দের মাঝে স্মার্ট দেখাতে হবে। এই যে আপনার ড্রেস কোড। তিন স্যুট পাবেন। একদিন পর পর বদলে আসবেন। আর প্রতি সপ্তাহে লন্ড্রি থেকে ড্রাই ওয়াস করাবেন। ”
” আচ্ছা। ”
অগোচরে মুখ বাকায় উর্মি। কোন ঠেকা লন্ড্রি থেকে ড্রাই ওয়াস করার। উর্মির হাতের জাদু তে লন্ড্রি পাত্তা পাবে না। অফিসের কোড ড্রেস পরে নিয়ে আয়নায় তাকালো উর্মি। কেমন কেমন যেন লাগে। পোশাক যদি ও শালীন তবু ও আনইজি লাগছে। চুলে বেনী করা ছিলো সেটা খুলে নিয়ে উচু করে ঝুটি বাঁধলো। মন্দ লাগছে না।
সৌমেন কে বেশ ব্যস্ত দেখাচ্ছে। মুখের অভিব্যক্তি বলে দেয় কতো টা গুরুত্বপূর্ণ এই কাজ। হাতের সাহায্যে শব্দ করে এক একজন কে জড়ো করলো।
” লিসেন এভরিওয়ান। মিটিং টা আর্জেন্ট ভাবে এরেঞ্জ করা হয়েছে। এতে হয়তো আপনাদের সবাই কে প্যারা নিতে হলো। বাট কোম্পানির প্রফিট মানে আপনাদের সবার প্রফিট। এই টাকাতে আমি যেমন খাই আপনারা ও ঠিক তেমনি। আই হোপ সবাই নিজেদের বেস্ট দিয়ে চেষ্টা করবেন। আর আমরা সফল হবো। ”
সৌমেনের কল এলো। ফোন রিসিভ করে কিছু কথা বলল। তারপর ই ডাকলো ওর পি এ মাইশা কে। মাইশা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো। সৌমেন কিছু নির্দেশনা দিয়ে বলল
” দ্রুত কাজ করবে। ”
” ওকে স্যার। উর্মি কে পাঠাই? ”
” পাঠাও। ”
” উর্মি শুনেন। ”
কাপড় দেখছিলো উর্মি। ফ্যাশন হাউজ মানেই চোখ ধাঁধানো সব জামা কাপড়। এক একটার দাম হাজার থেকে লাখ টাকা।
” ইয়েস ম্যাম। ”
” বাহিরে গিয়ে দাড়াবেন। অনেক গুলো কস্টিউম আসবে। সব গুলো চেইক করে নিয়ে আসবেন। ”
” আচ্ছা। ”
” যে নিয়ে আসবেন অর্থাৎ ডিজাইনার এর নাম হচ্ছে সমীর শাহ। ”
” ঠিক আছে ম্যাম। আমি এক্ষুনি যাচ্ছি। ”
কাগজ আর কলম নিয়ে বাইরে এলো উর্মি। বৃষ্টি থেমে গেছে। তবে গাছের কচি পাতা গুলো তে এখনো পানি। টপটপ করে ঝরছে হালকা বাতাসে। মিনিট পাঁচেক পর একটা বড় গাড়ি এসে থামলো। ড্রাইভার সহ আরেক টা ছেলে বের হয়ে এলো। লম্বা দেহের রোগা পাতলা ছিম ছাম চেহারা। উর্মি এগিয়ে গেল। ছেলেটা শার্টের হাতা ফোল্ড করছে।
” সমীর শাহ? ”
” ইয়েস। আপনি কি উম্মে উর্মি। ”
” হুম। ”
” ও আচ্ছা। আপনি আসুন আমার সাথে। আমি কস্টিউম গুলো চেইক করে দেই।”
সমীর কস্টিউম চেইক করে দিলো। পুরো আটত্রিশ টা কস্টিউম। আধ ঘন্টা লাগলো সব মিল করতে। এদিকে সময় সাড়ে আট টা। উর্মি একজন লোক কে বললো সব গুলো কাপড় সাবধানে ভেতরে নিয়ে যেতে। সমীর চাচ্ছিলো না ভেতরে যেতে। তবে পেমেন্ট নেওয়ার জন্য যেতেই হলো। সৌমেন এর সাথে বেশ ভালোই সম্পর্ক। সমীর হেসে এগিয়ে গিয়ে সৌমেন কে জড়িয়ে ধরলো।সৌমেন বলল–
” সব ঠিক ঠাক হয়েছে তো? ”
” অলমোস্ট ডান। তাছাড়া মিস উর্মি তো চেইক করেছেই। ”
উর্মির দিকে তাকালো সৌমেন। উর্মি কাজ করছে। যাক ভালোই তবে। সমীর এর একটু তাড়াহুড়ো তাই সৌমেন ও ধরে রাখলো না। পেমেন্ট বুঝিয়ে দিলো।
অফিস থেকে বের হওয়ার সময় সমীরের সাথে আর একবার দেখা হলো উর্মির। মেয়েটি তাকে দেখে মৃদু হাসলো। গড়গড় করে বলল–
” আপনার হাতের কাজের প্রশংসা করতেই হয়। যা সুন্দর হয়েছে। আমি তো ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়েই ছিলাম। ভারী সুন্দর। ”
” এগুলো আমি করি নি। আমি ডিজাইন করেছি শুধু। ”
” সেটার কথাই বলছি। দারুন হয়েছে। ”
” থ্যাংকস। আপনাদের পছন্দেই আমার পেট চলে। ”
হালকা হাসলো উর্মি। সমীর বলল–
” আজ আসি। আবার দেখা হবে। ”
উর্মি ও সম্মতি জানায়। সমীর চলে যাওয়ার পর পর ই সৌমেন এর কল আসে, ঝটপট রিসিভ করে সে।
” হ্যালো স্যার। ”
” দ্রুত আসো উর্মি। মিটিং এখনি শুরু হবে। ”
” আমি এখনি আসছি। ”
মিটিং রুমের অবস্থা দেখে হা হয়ে গেল উর্মির মুখ। দুই ঠোঁটের মাঝ খানে তৈরি হলো মৃদু ফাঁক। এতো সব মডেল দাঁড়িয়ে আছে যে সে বুঝতে পারছে না কিছুই। মাইশা এসেই এক টা খাতা কলম ধরিয়ে দিলো। এই নাম অনুযায়ীই মডেল ডাকা হবে। সৌমেন যেন একটু পর পর ই দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে। এতোক্ষণ পর একটা পজিশন পেলো। অবশেষে অনলাইন মিটিং শুরু হলো। উর্মি একে একে মডেল ডেকে যাচ্ছে। আধ ঘন্টার মাঝেই মিটিং শেষ। ক্লাইন্ড এর হাফ ভাব দেখে যা মনে হলো তাঁরা বেশ খুশি। সৌমেন কে অনেক টাই রিফ্রেশ দেখাচ্ছে। তবে উর্মি আবার ব্যস্ত। সে কালকের জন্য সিডিউল তৈরি করছে। মাইশার চোখ টা তখন উজ্জ্বল। সে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলল–
” দেখে নিবেন স্যার আজকের সেশন টা সফল হবেই। ওনাদের চোখ মুখ দেখেই বুঝে ফেলেছি আমি। ”
” এতো নিশ্চিত হইয়ো না। লাস্ট সেশন এর কথা মনে আছে তো? ”
মাইশার মুখ টা মলিন হলো। গত বারের সেশন টা খুব ভালো ছিলো। তবু ও বিফল হয়েছে। সৌমেন এর মতে অন্য কোম্পানি থেকে কারসাজি করা হয়েছে।
” উর্মি কে পাঠাও। আমি সিডিউল চেইক করবো। ”
” ওকে স্যার। ”
মিনিটের মাঝেই উর্মি উপস্থিত। সৌমেন ক্লান্ত দেহ টা এলিয়ে বসলো। চোখের ইশারায় বসতে বললো উর্মি কে। উর্মি কে চিন্তিত দেখাচ্ছে। মাথা টা উঁচু করে সৌমেন বলল–
” তোমার কাজ ভালোই ছিলো। তবে সব থেকে বেশি যেটা ছিলো সেটা হচ্ছে আগ্রহ। আমি খুব ই খুশি তোমার উপর।”
” ধন্যবাদ স্যার। ”
” ডিনার করতে পারো নি নিশ্চয়ই? ”
” না মানে বসে ছিলাম মাত্র। তখনি কল আসলো। আর ঝটপট তৈরি হয়ে এসে গেছি। ”
” হুম বুঝেছি। এখন ফ্রি টাইম আছে। ডিনার করে যাবে। ”
” না না সমস্যা নেই। আমি বাসায় গিয়েই করবো। ”
” ইটস অর্ডার। ”
নুইয়ে গেল উর্মি। সকলের জন্য ই ডিনার আনা হয়েছে। অল্প করে খাচ্ছে উর্মি। অথচ ওর ই অপর প্রান্তে বসে গপ গপ করে খেয়ে চলেছে সৌমেন। এতো টাই ক্ষুধার্ত! বয়সের কিংবা অন্য কোনো কাজের এক টা রেখা নেই মুখে। এই ত্রিশ বছর বয়সেও কতো টা সতেজ।
চলবে….
কলমে ~ ফাতেমা তুজ
#শখের_সাদা_শাড়ি
৩.
উর্মি বাড়ি ফিরলো রাত এগারো টায়। ছোট ভাবি তুলি চোখ দিয়ে যেন গিলে খাবে। এদিক থেকে অবশ্য বড় ভাবির কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সে খাবার এনে রাখলো টেবিলে। যদি ও পেট ভরা তবু ও অল্প খেল। এর কারণ ও রয়েছে। একবার ভার্সিটিতে বান্ধবী জন্মদিনে লাঞ্চ ট্রিট দিয়েছিলো। সেই কথা যখন বাড়ি তে এসে বলল তখন দুই ভাবি মিলে বিষয় টা নিয়ে একে বারে মুখের ফেনা তুলে ফেলেছিলো। কারন সেদিন বাসায় রান্না হয়েছিলো আলু ডিম এর তরকারি। আর উর্মি খেয়ে এসেছে মুরগির লেগ পিছ। তুলি এসে বসলো পাশে। বোধহয় কিছু বলতে চায়। তবে মানুষ যখন চাকরিজীবি হয় রোজকার করে তখন কুটনৈতিক মানুষ গুলো ও বুঝে কথা বলে। এই দিক টা দুদিন ধরেই দেখছে উর্মি। তুলি বলল–
” তা এতো দেড়ি করলে কেন? ”
” ফরেন কান্ট্রির সাথে মিটিং ছিলো। তাই লেট হলো। ”
” ও ভালোই তো। বেতন কত তোমার? ”
” আঠারো হাজার। ”
ইচ্ছাকৃত ভাবে চার হাজার টাকা কম বললো উর্মি। সে জানে নিজের হাত খরচের টাকা টা নিয়ে ও একসময় কথা উঠবে। তুলি বেশ অবাক হয়েই বলল–
” আঠারো হাজার? ”
” হুম। ”
” ভালো তো। আজকাল চাকরির যা দাম বাবা। তোমার তো কপাল খুলে গেল। ”
কিছু বললো না উর্মি। তুলি নিজ থেকেই আপন মনে আরো কিছুক্ষণ ধরে উর্মির ভাগ্যের প্রশংসা করলো। তারপর নিজের দুঃখের কথা শুরু হলো।
” বুজলে উর্মি। তোমার ভাইয়ের বেতন পঁচিশ হাজার টাকা। মাসে দশ হাজার টাকা করে সংসার খরচ দেয়। তারপর আমাদের ব্যক্তিগত খরচ ও আছে।মাস শেষে সেভিংস হয় না এক টাকা ও। ”
তুলির কথার মানে বুঝে উর্মি। সে নিজের টাকা তেই পড়াশোনা করেছে এতোদিন। বাবা মারা যাওয়ার পর একটা টিউশনি বাড়িয়ে দিয়েছিলো। যেটা থেকে চার হাজার টাকা পেতো। আর সেই টাকা টা সংসারে তুলে দিতো। এখন তো আবার সাথে মেঘনা জুটেছে। তার খাওয়ার টাকার কথাই বলতে চাচ্ছে তুলি। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি নিয়ে এক ঢোক খেল উর্মি। তুলি আবারো এক কথা জুড়েছে। উর্মি ভনিতা না করে ছোট করে শ্বাস ফেলে বলল–
” আপার জন্য আমি আরো চার হাজার টাকা বাড়িয়ে দিবো ভাবি। এ মাস টা না হয় যাক। ”
” ছিই ছিই আমি তো সেসব বলি নি উর্মি। আমি শুধু বললাম তোমার ভাইয়ার কথা। বুঝোই তো। ”
” আমি বুঝতে পেরেছি ভাবি। অনেক রাত হয়েছে। ঘুমোও তুমি। ”
হাই তুলে তুলি। তারপর বলে–
” হ্যাঁ আমি যাই তবে। তুমি ও যাও। ”
মলিন হাসলো উর্মি। তুলি চলে যেতেই তাচ্ছিল্য নিয়ে তাকালো। উর্মি দুধের বাচ্চা না।সে বোঝে সব। বিয়ের আগে ছোট ভাইয়া যে ত্রিশ হাজার টাকা বেতনের জব করতো। আর বিয়ের পর পর ই সেটা ছেড়ে দিয়ে অন্য কোম্পানি তে জব নিলো। তুলির বুদ্ধি তেই বলেছিলো কোম্পানি নাকি এখন তাকে কাজে নিচ্ছে না। মন্দা যায় ব্যবসা। সেই কারনে জব ছাড়তে হয়েছে। অথচ উর্মি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে চল্লিশ হাজার টাকা বেতনের চাকরির জন্য আগের চাকরি ছেড়েছে ছোট ভাইয়া ।কষ্ট লাগে ওর। টাকা পয়সা সেভিংস করা টা কোনো দোষের না। তবে এভাবে হিংসে করা ও উচিত না। দীর্ঘশ্বাস নামায় উর্মি। তার বাইশ হাজার টাকার বেতনে এখন সবার চোখ পরেছে।
রাতে ঘুমানোর সময় মেঘনা বলল–
” তোর দুলাভাই কে একটা কল করি? ”
” প্রয়োজন কি আপা। সে তো সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে তোমার জায়গা নেই এই বাড়িতে। ”
” তবু ও একবার চেষ্টা করে দেখি। ”
” আচ্ছা কর। ”
সটান থেকে অন্য দিক পাশ হয়ে শুয়ে রইলো উর্মি। মেঘনা প্রবল উত্তেজনায় কল করে যাচ্ছে। গলার স্বর কাঁপছে তার। রিং হচ্ছে তবে ধরছে না। উর্মি এবার মেঘনার দিকে ঘুরলো। মেঘনার চোখে জল।
” কাঁদিস না আপা। সব ঠিক হয়ে যাবে। সে তোকে মনে করে না তাকে তুই কেন মনে করিস। ”
” আমার সন্তান কাকে বাবা বলবে বল তো। ”
” চিন্তা করিস না আপা। দুলাভাই যদি ঠিক না হয় তবে তোকেই ওর বাবা মা হয়ে উঠতে হবে। ”
” আমি কি পারবো রে উর্মি? ”
” একশ বার পারবি। এখন ঘুমো তো। ”
মেঘনা কে জড়িয়ে ঘুমোয় উর্মি। মেয়েটার চোখে ঘুম নেই। তবু ভান ধরে আছে। সে চায় তার আপা একটু শান্তি তে থাকুক। এমনি তে ও বিয়ের পর থেকে শান্তি তে নেই। মানুষ তো!
পরদিন ভোর বেলা উঠেই টিউশনি তে ছুটলো উর্মি। এ মাস টা পড়াতেই হবে। না হলে খাবে কি? হাজার হোক মেঘনার পিছনে এখন টাকা খরচ করতেই হবে। বাচ্চা টা কেমন আছে সেটার জন্য চেকাপ করাতে ও হবে। এসব চিন্তা নিয়েই ছুটছে সে। হেটেই যায়। কি দরকার রিক্সা চড়ে একশ টাকা নষ্ট করার। তার থেকে ভালো একটু আগে রওনা দিয়ে হেটে যাওয়া। টাকা ও বাঁচলো স্বাস্থ্য ও ঠিক রইলো। পর পর তিনটে টিউশনি। দুটো শেষ করে এবার তিন নাম্বার টায় এলো। নয় তলা এক বিল্ডিং। অথচ লিফ্ট নেই। আশ্চর্য মানুষ এরা! চার তলা তে থাকে উর্মির স্টুডেন্ট। এবার নবম শ্রেনি তে পড়ছে। সিড়ি বেয়ে উঠে ঘেমে চুপচুপ। কলিং বেল চেপে দিয়ে উড়না তে ঘাম মুছলো।
” আসসালামু আলাইকুম আপা। ”
” ওয়ালাইকুম আসসালাম। সালমা আপা এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দিবেন তো। আর ফ্যানের পাওয়ার টা ও বাড়িয়ে দিন। ”
” আইচ্ছা। ”
উড়না টা একটু সরিয়ে বসলো উর্মি। পানি দিলে পানি পান করলো এক নিশ্বাসে। এতো টাই বাজে অবস্থা। কিছুক্ষণ পর শশী এলো। চোখ দুটো লাল। এতোক্ষণ ঘুমোয় মেয়েটা!
” বসো শশী। তোমায় না বলেছি এতো ঘুমাবা না। ”
” ঘুমাই না তো আপু। আজ ভাইয়াদের সাথে আড্ডা দিয়ে আমি কাহিল। ”
ভাইয়াদের শব্দ টা একটু কেমন লাগলো ওর। উর্মির জানা মতে শশীর একটাই ভাই। নাম শৌখিন।
” আপু। ”
” হুম বলো। ”
একটু ভরকে উত্তর করে উর্মি। সব চিন্তা ফেলে শশীর হোম ওয়ার্ক দেখতে চায়। মেয়েটা একটু আমতা আমতা করছে।উর্মি বুঝে যায় এ মেয়ের ফাকিবাজি। তাই বাজ খাই কন্ঠে বলে–
” কেন করো নি। ”
” বললাম না ভাইয়াদের সাথে আড্ডা–”
” মিথ্যে বলার জায়গা পাও না হু? ”
” শশী সত্যিই বলছে। ”
পরিচিত কন্ঠ। ঘাড় বাকিয়ে তাকায় উর্মি। চোখের সামনে সমীর হাসছে। একটু অবাক হলো উর্মি তবে মুখে কিছুই বললো না। শশী লাল চোখে তাকালো। ওকে আশ্বস্ত করতে সমীর বলল–
” শশীর দোষ নেই। আমিই কাল জোর করে আমাদের আড্ডা তে বসিয়েছি। ”
” ও তাহলে ঠিক আছে। ”
” দেখলি তো তোর ম্যাডাম কিছুই বললো না। শুধুই টেনশন করছিলি। ”
” টেনশন হবে না। ”
” হয়েছে এবার পড়েন আপনি। ”
শশী খুশি মনে বই খুললো। উর্মি কে চিন্তিত দেখাচ্ছে। সম্ভবত শশীর সাথে সম্পর্ক টা মিলানোর চেষ্টা করছে। ভেতর থেকে শৌখিন এর ডাক এলো। আসছি বলে চলে গেল সমীর। মিনিট দশেক পর শৌখিন আর সমীর এলো। উর্মি সালাম জানাতেই শৌখিন বলল–
” কেমন আছো উর্মি? ”
” জী ভাইয়া ভালো আছি। এই অসময়ে কোথায় যাচ্ছেন। ”
” সামনেই। ”
” মেয়ে দেখতে। ”
মাঝে ফোরন কেটে বলে সমীর। গোল গোল করে তাকায় শৌখিন। উর্মি হা হয়ে রইলো। শশী বলল–
” তাই তো বলি ভাইয়ার জামাকাপড়ের প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নেই। সেই ভাই আজ নায়ক কেন সাজছে। ”
” একদম রে। এর জন্যই তো কাল আমায় টেনে হিচড়ে নিয়ে আসলো। ”
” হু হু বুঝলাম এবার। ”
শশী কে ধমক দিলো শৌখিন। সমীর মিটমিটে হাসছে। উর্মি যেন কিছুই বুঝলো না। ওরা চলে যেতেই বলল–
” তোমার ভাইয়ার সাথে কে ঐ টা? ”
” সমীর ভাই। জানো তো খুব ভালো কস্টিউম ডিজাইন করে। চোখ ধাঁধিয়ে যায়। ”
” ওহ। কেমন ভাই সে? ”
” ভাইয়ার কলেজ ফ্রেন্ড। ”
” আচ্ছা পড়ো। ম্যাথে কিন্তু খুব কাঁচা তুমি। সামনে এক্সাম ভুলে যেও না। ”
চলবে…….