#শখের_সাদা_শাড়ি,04,05
৪.
বড় ভাইয়ার ছেলের নাম অন্তু। সবে ক্লাস থ্রি তে পড়ে। একদম ই শান্ত নয়। পুরো ঘর মাতিয়ে তুলে। তবে কিছু দিন ধরে বেশ চাপ যাচ্ছে পড়াশোনা নিয়ে। সেই জন্যই বের হয় নি ঘর থেকে। আজ ফ্রি। উর্মি গোসল করে চুল মুচছিলো। ওমনি করেই চুলের মধ্যে টান। আহ করে ককিয়ে উঠে উর্মি। আর হাসে অন্তু।
” বাদরামো শুরু হয়ে গেছে? ”
” ইসস কতো দিন তোমায় জ্বালানত করি না বলো তো ফুপি। ”
” হ্যাঁ অনেক দিন হলো রে। এক্সাম কেমন হয়েছে রে? লেটার মার্ক থাকবে তো। ”
” একদম। সব গুলো তে প্লাস। ”
” যাক টেনশন মুক্ত। ”
” কোথাও যাচ্ছো? ”
” হ্যাঁ রে বাবা, অফিস যেতে হবে না। ”
” তাহলে তোমার ভারসিটি? ”
” অর্নাস তো শেষ। টাইম ম্যানেজ করে মাস্টার্স করবো রে। তুই শোন, বড় ফুপি কে দেখে রাখবি। আপু কাজ করলে হেল্প করিস বাবা। ”
” ওকে। তুমি টেনশন নিও না। ”
” আমার সোনা ছেলে। ”
অন্তুর গালে চুমু দিলো উর্মি। মুহুর্তেই লাল হয়ে গেল তার মুখ। এমন লজ্জা পাওয়ার রহস্য কি?
” ফুপি একটা কথা বলবো। ”
” বল। ”
” কাল কে না আমি একটা কাজ করেছি।”
মুখ ভর্তি রুটি নিয়ে প্রশ্ন করে উর্মি।
” কি কাজ। ”
” একটা মেয়ে কে চুমু দিয়েছি। ”
মেঘনা এদিকেই আসছিলো। অন্তুর কথা শুনে হাসতে হাসতে হামাগুড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা। উর্মি চটজলদি দরজার দিকে তাকালো। না কেউ নেই। দরজা লাগিয়ে বলল–
” কি করেছিস বেয়াদব। ”
” আই লাইক হার। জানো কি সুন্দর ওর ঠোঁট টা। ”
” ইয়াক ছিই, কি অশ্লীল কথা। ”
উর্মি কে নাক কুচকাতে দেখে মেঘনা বলল–
” তুই সর তো। আমাকে কথা বলতে দে। ”
” পেকে গেছে এই ছেলে। ”
” হ্যাঁ রে অন্তু। তারপর কি হলো? ”
” বলছি। কাল আমার এক্সাম শেষ হলো। আমি রোজ ঐ মেয়ে টাকে দেখতাম। টু তে পড়ে। আমাদের হলেই সিট পরেছে। ”
উর্মি উদ্বিগ্ন গলায় বলল–
” ঐ মেয়ে কে দেখার চক্করে এক্সাম খারাপ দিছ নি তো। কি রে বল। ”
” আরে ধুর শোনো না। ”
উর্মি দমে গেল। খাবার নামছে না গলা দিয়ে। এই টুকু ছেলে এমন নির্লজ্জ আর পাকা!
” শোনো বড় ফুপি, তো পরীক্ষা শেষ হলে আমি বললাম ওকে দাঁড়াতে। মেয়ে টা দাড়ালো। আমি একটা চকলেট দিতেই ও নিলো। আর তখনি ওর গালে টুপ করে চুমু দিয়ে দৌড়।”
মেঘনা হেসে কুটি কুটি। এদিকে চিন্তায় পরলো উর্মি। এই ছেলে দেখি বাড়িতে নালিশ আনাবে। অফিস যাওয়ার আগে ভালো করে বুঝালো উর্মি। আর এসব কথা কাউ কে না জানাতে নির্দেশ দিলো। বিশেষ করে তুলির কানে যেন না যায়।
অফিসে এসে ক্লান্ত লাগছে উর্মির। এক কাপ চা হলে মন্দ হয় না। এখানে চা কোথায় পাওয়া যায় কে জানে। আশে পাশের মানুষ গুলো কেমন স্থির। যেন কাজ করতে করতে যন্ত্র হয়ে গেছে। চেনা জানার মাঝে শুধু মাইশা। তার কেবিনে নক করা কি ঠিক হবে? কিছু একটা ভেবে নক করলো না আর। কাজের ফাঁকে সে নিজেই চা নিতে বের হলো। নিচ তলা তে ক্যান্টিন দেখেছিল। সেখান থেকেই চা নিয়ে এলো। এবার একটু শান্তি লাগছে। ক্লান্ত লাগলে ও কিছু করার নেই। কেউ তো বসে বসে বাইশ হাজার টাকা দিবে না। পরিশ্রমী উর্মি। তবে আজকাল এতো টেনশনে মাথা ঠিক থাকে না। সমস্ত ফাইল রেডি করে সৌমেন এর কেবিনে এলো। কিছু টা রেগে আছে সৌমেন। উর্মি কে দেখে রাগ খানা প্রশমন করলো। হাত বাড়িয়ে ফাইল নিলো।
” সন্ধ্যার পর কজন কাজ করবে সেট করেছো তো? ”
” হ্যাঁ স্যার। এখন মাইশা ম্যাম এর কাছে সাবমিট করবো কি? ”
” না দরকার নেই। তুমি গিয়ে দেখো কাজ কতো টুকু হয়েছে। ইটস ভেরি আর্জেন্ট। ”
” ওকে স্যার। ”
সৌমেন ফোন ঘাটতে ব্যস্ত। আড়চোখে দেখে নিয়ে কেবিন থেকে বের হলো। তখনি ধাক্কা লাগলো এক কলিগ এর সাথে। বয়স টা খুব বেশি নয়। পঁচিশ এর আশ পাশ।
” স্যরি আমি আসলে দেখি নি। ”
” ইটস ওকে। আপনি যেতে পারেন। ”
” থ্যাংকস। ”
সম্মান হিসেবে আগে যেতে বললো উর্মি কে। উর্মি চলে যেতেই সৌমেন এর কেবিন এ প্রবেশ করলো।
বিকেল এর দিকে ঘুম এসে গিয়েছিল। রাতে ঘুম না হওয়ার ফল। একটু রেস্ট নিয়ে কল করলো মেঘনা কে। মেঘনা ঘুমিয়ে ছিলো বিধায় বেশি সময় নিলো না উর্মি।শুধু বললো ঠিক মতো খাবার খেতে। কথা শেষ করবে তখনি সৌমেন এর কেবিন থেকে চেচামেচির আওয়াজ পেল। ভরাট কন্ঠের আওয়াজে কেঁপে উঠে উর্মি। ছুটে যায় কেবিন এর সামনে। আচমকাই বের হয় কল্লোল। চোখ মুখ গেঁধে গেছে কোটরে। দরজা খোলা থাকায় সৌমেন কে ও দেখতে পায় উর্মি। রাগে থরথর কাঁপছে ছেলেটা। মনে হলো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে সৌমেন। দ্রুত গতিতে কেবিনে ঢুকলো। সৌমেন এর শ্বাস এর গতি তীব্র। হাতের সাহায্যে ইশারা করলো। উর্মি চোখের পলকে ইনহেলার এনে দেয়। প্রায় দশ মিনিট সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে উর্মি। সৌমেন এখন বেটার ফিল করছে। উর্মি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিল।
” থ্যাংকস উর্মি। আমার শ্বাসের রোগ রয়েছে। অধিক উত্তেজিত হলে এমন হয়। থ্যাংকস অ্যা লট। ”
উর্মি সাবলীল কন্ঠে বলল–
” আপনি তখন এমন রাগান্বিত হয়েছিলেন কেন? ”
” এমনি। নিজের কেবিনে যাও। ”
” ওকে স্যার। ”
” শুনো উর্মি। ”
” জী স্যার। ”
” আজকের সিডিউল চেঞ্জ। এখনি সবাই কে ছুটি দিয়ে দাও। আর তুমি ও চলে যাও। ”
” বাট স্যার,এতে তো কাল অনেক চাপ যাবে। ”
” যাবে না। এক মাসের সিডিউলে একটু একটু করে পুষিয়ে নিবো। ”
দীর্ঘশ্বাস নামায় উর্মি। কে জানে কি হয়েছে। একবার মনে হলো ক্ষমা চাওয়া প্রয়োজন।
” স্যার আম স্যরি। ”
” কেন? ”
” তখন আপনাকে প্রশ্ন করার জন্য। আসলে আমি ঠিক বুঝি নি। ”
” ইটস ওকে। এটা নর্মাল ই্যসু। নট অ্যা স্পেশাল অর সিক্রেট। ”
” থ্যাংকস স্যার। আমি তাহলে যাচ্ছি। ”
মৃদু হাসলো সৌমেন। মন টা স্থির করে কাজে মনোযোগ দিলো। সব কিছুর আগে নিজের কোম্পানি।
বাসে বসে বসে ফোন স্ক্রল করছে উর্মি। হঠাৎ ই একটা ম্যাসেজ এলো। আননোন নাম্বার। কেন যেন ম্যাসেজ টা চেইক করলো।
” হাই আমি সমীর। আপনার সাথে কিছু কথা আছে। কল করা যাবে? ”
ভদ্রতা দেখে অবাক হলো উর্মি। তবে ওর নাম্বার পেল কোথায়। নিজ থেকেই কল করলো। একবার রিং হতেই কল রিসিভ হলো।
” হাই, বিরক্ত করলাম তাই না। ”
” না না বিরক্ত করবেন কেন। বলুন আমি শুনছি। ”
” প্রচন্ড প্যারায় আছি বুঝেছেন। সৌমেন ভাই এর নাম্বার টা বিজি বলছে। একটু আগে কল করলাম
এখন বলে বন্ধ। তো সেই জন্য আপনাকে করা। ”
” ও আমি তো এসে গেছি। স্যার আগে ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। ”
” ও সীট। এখন কি করা যায় বলুন তো। ইটস ইমপরট্যান্ট। ”
” এক টা কাজ করুন আপনি মাইশা ম্যাম কে কল করুন। তিনি হয়তো কিছু বলতে পারবেন। ”
ওপাশ থেকে ঘন নিশ্বাসের শব্দ এলো। সমীর বলল–
” মাইশা কে কল করেছি আমি। সুইচ অফ বলছে। সেই জন্যই আপনাকে কল করা।”
” ও। ”
” তো বাসায় যান। রাখছি আমি। দেখি কি করা যায়। ”
কল কেটে নিজের মাথায় নিজেই চাটি মারে উর্মি। এতো টা গাঁধা কেন সে! এই টুকু কমনসেন্স নেই কাউ কে না পেয়েই তো সমীর তাকে কল করেছে। না হলে দুদিনের দেখা তে সোজা তাকেই কেন কল করবে।
সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরতে দেখে চমকে গেলেন জোৎস্না। মনে মনে কিছু টা ভয় ও পেলেন। দ্রুত বললেন–
” কি রে এতো দ্রুত ফিরলি যে। সব ঠিক আছে তো। ”
” হ্যাঁ ভাবি সব ঠিক ঠাক। কাজ শেষ তাই স্যার সবাই কে আগে ছুটি দিয়েছেন। ”
” ও তাই বল। আমি ভাবলাম কি না কি। তা ভাত খাবি তো? ”
” না ভাবি। রাতে একেবারে খাবো। অন্তু কই গো। ”
” দেখ ছাদে গিয়ে বসে আছে হয়তো। ”
” ছাদে কেন গেছে। কতো বার করে বলেছি ছাদে যেন না যায়। ”
” কথা শোনে না। ”
” ব্যাগ টা ধরো আমি ওকে নিয়ে আসি। ”
চিন্তা নিয়ে ছাদে ছুটলো উর্মি। চার তলা বিল্ডিং এর দোতলা টা ওদের। আর বাকি তিন তলা আরো তিন ফ্যামেলির। ছাদে যাওয়া নিয়ে একবার বেশ ঝগড়া হয়ে ছিলো। সেই থেকে বাড়ির ছোট দের ছাদে আসা যাওয়া পুরোপুরি নিষেধ।
চলবে
কলমে ~ ফাতেমা তুজ
#শখের_সাদা_শাড়ি
৫.
আধ ঘন্টা ধরে দরজা বন্ধ করে কি যে করলো উর্মি তা কেউ ই বুঝলো না। সর্বশেষ মুখ কালো করে বের হলো অন্তু। বেশ বকা খেয়েছে আজ। এমন অপকর্ম করলে বকা তো খেতেই হবে। ছাদে গিয়ে উর্মি দেখে পাশের বাসার এক বাচ্চার সাথে ইশারা করছে অন্তু। এতো পেকে গেছে? যখন টেনে ঘরে নিয়ে এসে প্রশ্ন করা হয় তখন অন্তু জানায় এটাই সেই মেয়ে যার গালে সেদিন চুমু দিয়েছিলো। তারপর উর্মি বেশ কড়া কে বোঝায় এই বয়সে এমন করা ঠিক কত টা অপরাধ। তাছাড়া এতে ফ্যামিলি তে নালিশ আসবে। পুরো বদনাম হয়ে যাবে। অন্তু বোধহয় বুঝেছে বিষয় টা। ছোট মানুষ সে, চারপাশে যা দেখে তাই করে বসে। তবু উর্মি নরম হলো না। আজ যদি শাসন না করা হয় তাহলে পরে ভুগতে হবে। যা চায় না উর্মি। সন্ধ্যায় উর্মি খেতে বসলো। কাচ কলার তরকারি। স্বাদ টা ভালো তবে কেন যেন পেটে জায়গা হলো না। আচমকাই বমি করে ভাসিয়ে দিলো মেঝে। এই অহেতুক বমির কারন অনুধাবন হলো না। মেঘনা চটজলদি সব পরিষ্কার করলো। বিছানায় এসে বসলো উর্মি।বোধহয় এতো টেনশন শরীরে কুলোয় না। রাত দিন খেটে বাড়ি তে এসে ও সেই টেনশন নিতে হয়। একটা মানুষের পক্ষে যন্ত্র সৃষ্টি সম্ভব তবে নিজে যন্ত্র যন্ত্র হয়ে যাওয়া টা একে বারেই অসম্ভব। নুন চিনির সরবত গুলিয়ে এনেছে মেঘনা। বাসায় স্যালাইন এর একটা প্যাকেট ও অবশিষ্ট নেই। সরবত টা খেয়ে নেয় উর্মি। ভীষণ বাজে লাগে এর স্বাদ টা। তবে সুস্থ না হলে কাল অফিস যেতে পারবে না। এতে করে সৌমেন স্যার রেগে যাবেন। জয়েন এর পর পর ই যদি এমন করে অসুস্থ হয় তাহলে কি চলবে নাকি? মাথার খুব নিকটে বসে মেঘনা আলগোছে মাথা টা কোলের উপর রাখে উর্মি।
” অন্তু কে থামাতে হবে আপা। না হলে পরে পস্তাতে হবে। ”
” কেন? সে আবার কি করেছে। ”
” অন্তু যাকে চুমু দিয়েছে সে জানিস কে? ”
” কে? ”
” সুলেখা ফুপুর বড় ভাইয়ের নাতনি। ঐ যে কিছু দিন আগে সৌদি থেকে আসলো না। ফুটফুটে একটা মেয়ে। নাম টা ভুলে গেছি। জানিস আজ দেখলাম ছাদ থেকে ঈশারায় কথা বলছে। আমার মাথা ঠিক নেই রে আপা। কিছু ভালো লাগে না। ”
” ধুর এতে টেনশন করার কি আছে। বাচ্চা রা তো খেলাধুলো করবেই। ”
” বুঝতে পারছিস না। এতে অনেক কিছু হতে পারে। ”
” তাহলে বাসায় জানাবি কথা টা? ”
” এটা আরো সমস্যার। বড় ভাবি জানতে পারলে অন্তু কে আরো লেলিয়ে দিবে। বড় লোকের মেয়ে, দেখতে সুন্দর সব মিলিয়ে বড় ভাবির রাজকপাল। এমন টাই বলবে পারলে এই বাচ্চা বয়সেই বিয়ে করিয়ে নিবে। আর ছোট ভাবি জানলে সুলেখা ফুপুর কান ভাঙাবে। তিনি কি কি করতে পারে সেটা তো ভালোই জানিস। ”
” তাহলে কি করা যায় বল তো। ”
এতোক্ষণ পর মেঘনার কন্ঠে ও তীব্র ভয়ের আভাস। রুচিশীল ফ্যামিলির মানুষ হলে ও পয়সার দিক থেকে নগন্য। বাবার রেখে যাওয়া এই বাড়ির এক টা অংশ ব্যতীত আর কিছুই নেই। মোটামুটি ভাবে চলছে সংসার টা। এখন যদি অহেতুক কেচ্ছা রটে যায় তাহলে চরম মূল্য চুকাতে হতে পারে। সেসব ভেবে উর্মির চোখ দুটো অস্থির হয়ে এলো। তবে মেঘনার কথা মনে করে শান্ত হলো। বাচ্চা পেটে রেখে টেনশন করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। প্রসঙ্গ বদল করে উর্মি ঘুমাতে এলো।
সচরাচর বাস পাওয়া যায় না। আজ যেন উর্মির জন্যই অপেক্ষা করছিলো বাস টা। উর্মি সবার আগে অফিস পৌছালো। দারোয়ান সালাম দিতেই উর্মি বলল–
” সৌমেন স্যার কি এসেছেন? ”
” স্যার তো কাল অফিস থেকে যান ই নাই। এখানেই তো আছেন। ”
” ও। আর কেউ আছেন? ”
” না। আর কেউ ছিলো না। ”
ভাবনা নিয়ে এগোয় উর্মি। সৌমেন স্যার কাল বাড়ি ফিরেন নি। তাহলে অফিসের সবাই কে কেনো ছুটি দিলেন। হঠাৎ এতো রেগেই ছিলেন কেন। কি আছে এর আগে পিছে। ভাবতে ভাবতে লিফ্ট এর কাছে পৌছে গেল। একজন লোক বের হচ্ছে দেখে সাইট হয়ে দাড়ালো। লিফ্ট এ চরে নির্দিষ্ট ফ্লোরে প্রেস করে দিয়ে চুপ করে রইলো। নিজের ডেক্স এ এসে আবার সৌমেন স্যার এর কেবিনে এলো। সৌমেন উবু হয়ে শুয়ে আছে টেবিলের উপর মাথা রেখে। অদ্ভুত লাগলো দেখতে। একবার ভাবলো ডাকবে তারপর ভাবলো কোনো দরকার নেই। তবে হঠাৎ করেই চোখ গেল পরে থাকা ইনহেলার এর দিকে। সেটা তুলে দিয়ে যেই না ফিরবে তখনি চেচিয়ে উঠলো উর্মি। সৌমেন এর নাক দিয়ে রক্ত ঝরছে। কি করবে বুঝতে পারছে না। একি মসিবত! সময় নষ্ট না করে দারোয়ান কে ডেকে নিয়ে আসে উর্মি। ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসার জোগাড়। অফিসে সে প্রথম পা দিয়েছে। এতে করে সৌমেন স্যার এর এক বিন্দু পরিমাণ ক্ষতি হলে ও এর জন্যে উর্মি কে সবার প্রথম নাকাল হতে হবে। হসপিটালে নিয়ে এসে আরো চিন্তায় পরে গেল। মেঘনা কে একটা কল করলো।
” হ্যাঁ রে উর্মি এই টাইমে তো কল করিস না। তুই ঠিক আছিস তো। শরীর খারাপ লাগছে কি। ”
” আপা আমি ঠিক আছি। তুই খেয়েছিস নাকি সেটা জানার জন্য কল করলাম। আর অন্তু কোথায় রে? ”
” অন্তু কে দেখলাম টিভি দেখে। আর আমাকে খাইয়েই তো বের হলি। ভুলে গেলি নাকি। ”
” ও হ্যাঁ। একদম ই ভুলে গেছি। আচ্ছা কাজ করতে দিলে দেখে শুনে করবি। ভারী কিছু তুলবি না। ছোট ভাবি কথা শুনালে ও না। ”
” ঠিক আছে। কিন্তু তোকে কেমন যেন অস্থির লাগছে। ”
” চাপে আছি তো তাই। রাখছি রে। ফলের জুস রেখে এসেছি। ফ্রিজ থেকে নিয়ে সরাসরি খাস না আবার। ঠান্ডা কমলে তারপর খাবি। ”
” ঠিক আছে ম্যাডাম। ”
ফোন রেখে হাঁটু তে মুখ গুজে দেয় উর্মি। ভালো লাগে না। মাথা টা কেমন ঝি ঝি পোকার মতো শব্দ করে। সৌমেন স্যার এর বিষয় টা ওকে আরো বিচলিত করে তুললো। কি দরকার ছিলো আগ বাড়িয়ে সৌমেন স্যার এর কেবিনে যাওয়া।
এক বোতল পানি কিনে এগিয়ে এলো সমীর। পথের ধারে বসে আছে উর্মি। কেমন যেন অগোছালো লাগছে। বোতল টা ব্যাগে রেখে উর্মির পাশাপাশি বসলো। অথচ উর্মি টের ও পেল না। মন দিয়ে কি এমন রাজকার্যের কথা ভাবছে মেয়েটা। সমীর নিশ্বাস চেপে রইলো। আর তারপর ই শুধালো–
” এখানে বসে আছেন যে। আমার জানা মতে এখন তো অফিস টাইম। ”
উত্তর আসে না। হাত টা এগিয়ে নিয়ে আবার গুটিয়ে ফেললো। খ্যাক করে কাশলো। এবার মনোযোগ এলো। ভীষণ ভাবে চিন্তিত দেখালো। উর্মি বোধহয় ঘোর এর মাঝে আছে।
” আপনি ঠিক আছেন? পানি খাবেন। আমার কাছে পানি আছে। ”
পানি বের করে দেয় সমীর। এক সেকেন্ড ব্যয় করলো না। ঢগঢগ করে পানি খেতে লাগলো। তারপর স্থির হয়ে বুঝতে পারে এতোক্ষণ কি ঘটেছে। বৃথা হাসার চেষ্টা করে উর্মি। তবে সমীর এর ধারালো দৃষ্টি।
” কি হয়েছে উর্মি। আপনাকে এমন অস্থির আর দুর্বল লাগে কেন? অফিসে যান নি?”
” গিয়েছিলাম,আবার চলে আসছি। ”
” অহ ঠিক আছে। তবে এখানে বসে বসে কি করছেন। কেমন যে আছেন সেটা যে মুখের ভঙ্গিমাতেই প্রকাশ। ”
” আসলে আমি ক্লান্ত। ”
” সেটা তো বুঝলাম। তবে ক্লান্তি টা শুধু কাজের প্রেসার থেকে নাকি আদার্স কোনো ইস্যু। ”
একটু থামে সমীর। তারপর আবার বলে
” আপনি কি বিরক্ত হচ্ছেন উর্মি। আমি কি পৌছে দিবো আপনাকে। ”
” না না এখন যেতে পারবো না। ”
” আচ্ছা ঠিক আছে। তবে এখানে কেন? ”
” স্যার হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পরেছেন। সেই জন্যই এখানে আসা। ”
” সৌমেন ভাই অসুস্থ! ও সীট, আমি তো ভাবলাম ভাই হয়তো আদার্স কোনো ইমপরট্যান্ট ওয়ার্ক নিয়ে বিজি। বাট! ”
সব টা খোলসা করে বললো উর্মি। এখন শান্তি লাগছে। পেটের কথা কাউ কে না বলে থাকা যায় নাকি? সব টা শুনে ব্যথিত হয় সমীর। সে জানায় সৌমেন কে দেখতে যাবে। উর্মি নিজে ও পিছু পিছু হাঁটে।
চলবে…..