শখের_সাদা_শাড়ি,06,07

0
787

#শখের_সাদা_শাড়ি,06,07
কলমে ~ ফাতেমা তুজ
৬.

কাজ কে সর্বাঙ্গে লেপ্টে রাখে যিনি সে নিশ্চয়ই জীবনে উন্নতি করে। আর তার বড় উদাহরণ হচ্ছে সৌমেন। এই যে দীর্ঘ সাত দিন যাবত বেড রেস্ট এর মধ্যে আছে তবু ও কাজের প্রতি সে কি খেয়াল। ঘরে বসেই সব সামাল দেয়। পুরো এক সপ্তাহের সব কাজের সিডিউল নিয়ে উপস্থিত হলো উর্মি। যেই ঠিকানা দেওয়া হয়েছে সেই ঠিকানায় এসে সৌমেন কে কল করলো। সৌমেন নির্দেশনা দেওয়ার পর ই গেট খোলা হয়। বিশাল বড় এক বাংলো। থাকা স্বাভাবিক। ওমন বড় কোম্পানির মালিক যারা তাদের বাড়ি নিশ্চয়ই খুপরি ঘর হবে না। বাড়ির এক পাশে ফুলের টপ দিয়ে বাগান করা। কোনো গাছ ই মাটি তে লাগানো নয়। এতে অবশ্য যখন তখন স্থান পরিবর্তন করে বাসার লুক টাই চেঞ্জ করে ফেলা যায়। এই ধার ঐ ধার চোখ ঘুরিয়ে দেখে উর্মি। কেমন এক আড়ষ্টতা আর ভয় লক্ষ্য হয়। হেসে ফেলে সমীর। মেয়েটা কে ভীতু মনে হয় নি তবে সব মানুষের মনেই যে ভয়ের বাস এটা আজ প্রমাণিত।
” উর্মি কত দিন ধরে কাজ করছে সৌমেন ভাই? ”

” দিন পনেরো হলো। মেয়েটা খুব কর্মঠ। এমন একজন ইমপ্লয়ি প্রয়োজন ছিলো আমার। ”

” হুম তাছাড়া মানুষ হিসেবে ও ভালো। ”

” যেমন? ”

” সেদিন হাইওয়ে ক্রস করছিলাম তখনি দেখলাম কিছু ফুটপাতের বাচ্চা দের সাথে খেলছে। যাওয়ার সময় আবার চকলেট ও কিনে দিলো। উর্মি না থাকলে হয়তো তুমি হসপিটালের বেডে ও যেতে পারতে না। ”

” তা ঠিক। আমার জীবন বাঁচানোর জন্য কৃতজ্ঞ থাকবো। ”

মৃদু হাসলো সমীর। সি সি টিভি ফুটেজ থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে তারপর চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে পেন্সিল দিয়ে ডিজাইন করতে লাগলো। সৌমেন অসুস্থ থাকায় দেখতে এসেছিলো। সাথে কিছু ডিজাইন দেখাবে বলে ও স্থির হয়েছে। উর্মি এসে গেছে। চক্ষু দুটো কপালে। এতো প্যারা নিতে হয়েছে যা ধারণার ও বাইরে। হাতের ছাপ দাও, বডি চেইক করো এটা সেটা কতো প্রযুক্তি। বাংলাদেশ তবে ডিজিটাল হয়েই গেল। শুধু মাত্র উর্মির কপাল খানাই ক্ষণে ক্ষণে বিতাড়িত হয়। বুক চিরে নেমে আসা দীর্ঘ শ্বাস টা সন্তপর্নে লুকিয়ে লম্বা করে সালাম দেয়। তারপর বল‍ে–
” ভালো আছেন স্যার? ”

” বেডে শুয়ে বসে থেকে যতো টা ভালো থাকা যায়। ”

” কি করার। আল্লাহ আপনাকে দ্রুত সুস্থ করে দিক। ”

” বসো উর্মি। ”

উর্মি একটু দূরের কাউচে বসলো। ঘরের এক পাশে দোলনা রাখা। ভারী সুন্দর লাগে। উর্মি চেয়েই রইলো।সৌমেন বলল
” চাইলে বসতে পারো। এখন তুমি ইমপ্লয়ি না গেস্ট। ”

লজ্জা পেয়ে উর্মি বলে–
” না না আমি এখানেই ঠিক আছি। এমনি দেখছিলাম বেশ শৌখিন আপনি। ”

” শখ ছাড়া কি মানুষ বাঁচে উর্মি। প্রতি টা মানুষের ই শখের জিনিস থাকে। এই যে এই বাড়ি টা এটা আমার দাদুর শখ ছিলো তবে মজার বিষয় হচ্ছে তার শখের জিনিস তো পূরণ হয়েছে কিন্তু তিনি তা উপভোগ করতে পারেন নি। ”

” ইসস। ”

উর্মির কন্ঠে ব্যথা। সমীর পাশ থেকে বলল
” তবে সৌমেন ভাই শখের জিনিস পেয়ে গেলে শতভাগ আনন্দ টা ও থাকে না। ঠিক যতো টা কল্পনা করার ক্ষেত্রে অনুভব করা যায়। ”

” বরাবর ই তুমি ঠিক বলো সমীর। ”

হাসে সৌমেন। সমীর পেছন থেকে উঠে গিয়ে সামনে বসে। উর্মি একটু বেশিই অবাক হয়। সে পাঁচ মিনিট ধরে এই রুমে উপস্থিত অথচ সমীর কে নজরেই পরলো না। রোগা পাতলা লম্বা দেখতে এক ছেলে সেই তাকে নজরে না পরার বিশেষত্ব তো নেই।
” হাই। ভাবুক হচ্ছেন কেন? ”

” আমি আসলে খেয়াল ই করি নি। ”

” পেছনে ছিলাম যে তাই দেখেন নি। আচ্ছা দেখেন তো কেমন হলো ডিজাইন টা। ”

উর্মি ডিজাইন টা দেখে। এতো সুন্দর করে গ্রাউন এর ডিজাইন করেছে সমীর যে ওর চোখ জুড়িয়ে আসে। সৌমেন ও দেখে বেশ প্রশংসা করে। নাস্তা দেওয়া হয় উর্মি কে। অথচ উর্মি লজ্জা পায়। সৌমেন বুঝে বিষয় টা।
” লজ্জা পাওয়ার বিষয় না এটা। খাবার না খেলে মানুষ বাঁচতে পারে না। তাই সবাই কেই খেতে হয়। ”

” লজ্জা পাচ্ছি না তো। ”

দ্বিতীয় বারের মতো চায়ের কাপ তুলে নিয়ে ভ্রু বাকিয়ে তাকায় সমীর। উর্মি বাচ্চা দের মতো সাফাই গায়
” সত্যিই লজ্জা পাচ্ছি না আমি। ”

ফিক করে হেসে দেয় সমীর। সৌমেন তখন ধীর পায়ে উঠে বেরিয়ে গেছে। কিছু ফাইল পত্র গুছিয়ে নিতে হবে। সমীরের হাসি তে এবার আরও বেশি লজ্জিত হয় উর্মি। হাতের তালু তে নখ ঘষে। কেমন যেন এক অনুভব হয়। আজকাল বড্ড লজ্জায় পরতে হয় তাকে। পরিবারের সাথে যতো টা ফ্রেন্ডলি কথা বলতে পারে তার এক অংশ প্রযোজ্য হয় না অন্য দের ক্ষেত্রে।

মেঘনা আর অন্তু কথা বলছিলো। উর্মি ঘরে ঢুকতেই চুপ হয়ে যায় দুজনে। ক্লান্ত থাকা তে পাত্তা ই দেয় না। সাওয়ার নিয়ে গা এলিয়ে দেয়। সকাল ছয় টা থেকে তিন টে বাচ্চা কে পড়ায় তারপর আবার একটা থেকে অফিস। রাতে এসে রান্নায় হেল্প।সব মিলিয়ে পড়াশোনা টা চাঙ্গে। সময় এখন সাড়ে সাত টা। না খেয়েই পড়তে বসেছে। আজ অনেক টা পড়তে হবে। আলগোছে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় মেঘনা। অন্তু কে নিয়ে ব্যলকনিতে বসে। অন্তুর চুপচাপ থাকা টা ভালো ঠেকে না। মেঘনার বুকের ভেতর ভয় নেমেছে।
” বাবা সত্যি করে বল,কি হয়েছে? ”

” কিছু হয় নি বড় ফুপি। ”

” মিথ্যে বলে না। দেখ পরে কিন্তু ঝামেলা হবে। ”

” পিংকি রাগ করেছে। ”

” এটা আবার কে? ”

” পাশের বাড়ির মেয়ে। ”

” কি বলিস! আমি তো মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝি না। ”

” স্কুলে ব্রেক টাইমে আমি খেলতাম ওর সাথে। এখন খেলি না যে। তাই আমাকে ধাক্কা মেরেছে। ”

” সর্বনাশ! এই বাচ্চা কালে কি শুরু করেছিস তোরা। ”

অন্তু সামান্য চেচিয়ে বলে–
” কারো সাথে খেলা টা দোষের নাকি। তোমরা সব সময় এমন করো। ”

” কি রে কি হলো তদের। কার সাথে কি খেলা দোষের। ”

জোৎস্না কে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠে দুজন। মেঘনা পরিস্থিতি সামাল দিতে হেসে উঠে।
” কি হবে ভাবি, তোমার ছেলে বলছে সে খেলবে। আমি বলছিলাম এই বয়সে কেউ খেলে নাকি। তাই বললো খেলা টা কোনো দোষের না। ”

” ও তাই বল। আর এখন কি খেলবি তুই। ঘরে যা পড়তে বোস। ”

নির্বিঘ্নে অন্তু উঠে যায়। জোৎস্না ছেলের পানে তাকিয়ে বলে–
” বাহ্বা এতো সুবুদ্ধি হলো কবে। মেঘনা তুই ঘরে গিয়ে উর্মি কে ডেকে দে তো কথা আছে একটু। আমি ভেজা কাপড় গুলো মেলে দেই। ”

” জী ভাবি। ”

পড়া শোনার পাঠ চুকিয়ে আসে উর্মি। পড়তে বসলেই যতো ঝোর ঝামেলা। বড় ভাবি কে বসার ঘরে না পেয়ে রান্না ঘরে যায়। সেখানে ই পেয়ে যায়। তুলি খাবার নিচ্ছিলো। উর্মি কে দেখে সৌজন্য হাসে। স্বামীর সাথে একান্তে খাবে বলে স্থির করেছে। বিষয় টা খারাপ না। যদি এর পেছনে ভালো উদ্দেশ্য থাকে।
” তুলি চলে গেছে? ”

” হ্যাঁ ভাবি। ”

” আচ্ছা শোন না রে। ”

উর্মি বলার পর ও তুলি গিয়েছে কি না সেটা দেখে নেয়। দেয়ালের ও যে কান আছে সেটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে সে। উর্মি বুঝতে পারে কঠিন কিছু শুনতে হবে। হলো ও তাই। বড় ভাবি জানালো অন্তুর জন্য রাখা প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা সঞ্চয়ের কথা। উর্মি একটু সময় নিয়ে উত্তর করলো —
” এক মাসে তো সম্ভব না ভাবি। আমি দু মাসে পাঁচ হাজার করে দশ হাজার টাকা দিয়ে দিবো। ”

” আচ্ছা ঠিক আছে। চিন্তা মুক্ত করলি রে। বেশ ঝামেলায় ছিলাম। ”

বড় ভাবি চলে যায়। উর্মি খোলা চোখে তাকিয়ে থাকে। আড়াল থেক সব টাই শুনেছে তুলি। রাগে ফুসতে থাকে। স্বামীর কাছে ইনিয়ে বিনিয়ে বলে। বউ সোহাগী স্বামী ক্ষিপ্ত হয়। তুলি যে মিথ্যে বলে না এই নিয়ে তার আবার বিরল ধারণা।

শশী কে পড়াচ্ছিলো উর্মি। দিন কে দিন বিগড়ে যাচ্ছে মেয়েটা। পড়া শোনা করা যেন বিষ।
” পড়াশোনা থেকে মন সরে গেছে তোমার। এটা কিন্তু ঠিক না। ”

” পড়ি তো আপু। ”

” সেটার নমুনা দেখলাম। লাস্ট উইকলি টেস্টে ইংলিশে পেয়েছো ৩৮ আর ম্যাথ এ ৩৩। বুঝো এসব? এক মার্কস এর জন্য ফেল আসে নি। ”

” আমি তো সব দিয়েছিই কিন্তু ”

” তবু টেনে টুনে পাস। বাহ ”

হতাশ হয় উর্মি। শেষ বেলায় এসে যদি শশীর অবস্থা এমন হয় তাহলে তো বড় সমস্যা।শশী কে এই মাসেই ছেড়ে দিবে ভেবেছিলো তবে এখন মত বদলেছে। বাকি দুটো টিউশনি ছেড়ে দিয়ে শশী কেই পড়াবে। না হলে এই মেয়ে নাম ডুবাবে।পড়া শোনা শেষ করিয়ে চলেই যাচ্ছিলো তবে ডেকে পাঠান শশীর মা। একটা কার্ড দিয়ে বলেন সামনে মাসের পাঁচ তারিখ শৌখিন এর বিয়ে। উর্মি যেন আসে। মুখে আসবো বললে ও মন টা টানছে না। বিয়ে তে আসতে গেলে ও একটা খরচা আছে। যা উর্মির পক্ষে ঝামেলার। তবে আসতে যে হবেই।

চলবে…..
কলমে ~ ফাতেমা তুজ

#শখের_সাদা_শাড়ি
৭.
অফিস থেকে ফিরতেই বাড়ির নিচ থেকে চেচামেচি শুনতে পায় উর্মি। এক মন ভয় নিয়ে ছুটে যায় ভেতরে। পাশের বাসার সুলেখা ফুপু ও তার ভাতিজা কে দেখে বুকে চিনচিন ব্যথা হয়। বড় ভাবি জোৎস্না সমান তালে চেচামেচি করছে। বাড়ির পেছন দিকের এক কোনে ভোতা মুখে দাড়িয়ে আছে মেঘনা। এক হাতে অন্তু কে জড়িয়ে রাখা। যা বোঝার বুঝে গেল উর্মি। এই ভয় টাই পেয়েছিল সে। তুলি কে আশ পাশে দেখা যাচ্ছে না। এর মানে সে ও এসব কান্ডের সাথে বেশ ভালোই জড়িত। উর্মি এগোয়। কেউ ওকে পাত্তা দেয় না। সুলেখা ফুপু নিজের ভারী শরীর টা নিয়ে একে বারে মুখের ফেনা তুলে ফেলেছেন। যেসব অকথ্য ভাষা ব্যবহার করলো তার মধ্যে সব থেকে খারাপ লাগে দুটি বিষয়ে। এক ফকিরের ছেলে মেয়ে আর দুই মেঘনার বাপের বাড়ি আসার অন্ন ধ্বংস। প্রতিবাদ করে উর্মি–
” মুখ সামলে কথা বলবেন ফুপু। আমরা মধ্যবিত্ত ঠিক তাই বলে ফকির না।কখনো আপনাদের বাসায় গিয়েছি দু মুঠো ভাত এর জন্য। ”

” চোরের মায়ের বড় গলা। ”

” আপনার বাসায় চুরি করেছি আমরা? চোর বলেন কোন সাহসে। বড়লোক হলেই মানুষ হওয়া যায় না। ”

সুলেখা একটু নিশ্চুপ। তখনি ভীরু বলল
” বেয়াদবি করবি না উর্মি। ”

” বেয়াদবি কোথায় করছি ভীরু ভাই। আপনিই বলেন আপনার ফুপু যে বললো আমরা ফকির চোর,সে কোন হিসেবে বল‍ে। ”

” তোর ভাতিজা কি করছে জানোস? ”

” কি করছে অন্তু? ”

” আমার মেয়ের সাথে লাইন মারার চেষ্টা করছে। ”

উর্মি একটু চুপ হয়ে অন্তুর পানে তাকায়। সত্যতা অন্তুর নিকট। বড় ভাবি মাঝ থেকে বল‍ে উঠে–
” আমার পোলা লাইন মারার চেষ্টা করছে তো ভালো করছে। আরও করবো। নিজে মেয়ে সামলান আগে। ”

” ভাবি মুখ সামলান। আমার মেয়ে এখানে কি করছে। আপনার ঐ টুকু লেংটা ছেলে আমার মেয়ের পেছনে ঘুরে। জিজ্ঞাসা করে দেখেন। ”

” আর আপনার মেয়ে সাধু? সে বুঝি আমার ছেলের সঙ্গ দেয় না? ”

” আমার মেয়ে সঙ্গ কেন দিবে। আপনার ছেলেই তো পিছু পিছু আসে। এই টুকু ছেলে নাক টিপলে দুধ বের হয় সেই ছেলে টাকার পেছনে দৌড়ায়। ভালোই তো শিক্ষা দিছেন। ”

জোৎস্না আরও ক্ষেপে যায়। দুজনের মুখোমুখি তর্ক চলতেই থাকে। উর্মি অন্তুর কাছে এসে দাড়ায়। মাথা নিচু করে আছে দেখে রাগ হয়। ইচ্ছে হচ্ছে চট করে দুটো বসিয়ে দিতে টকটকে গালে। টেনে নিয়ে যায় উর্মি। মেঘনা পেছন পেছন ছুটে।
” কিছু বলিস না বোন। বাচ্চা মানুষ। ”

” দেখছি আপা। তুই যা রেস্ট নে। ”

অসহায় এর মতো তাকিয়ে থাকে অন্তু। আর তারপর ই উর্মির ক্ষোভ এর মুখেয় পরতে হয়। গালে হাত দিয়ে কান্না করে ছেলেটা। উর্মির চোখ লাল।

ভীরু আর বড় ভাবির সাথে টক্কাটক্কি লড়াই চলে। আর আশ পাশের মানুষ মজা নিচ্ছে ফ্রি তে। রেগে আগুন হয়ে আছে উর্মি। সামনে গিয়ে বলে–
” আমার ভাতিজার দোষ দেওয়ার আগে নিজের মেয়ের দোষ টা দেখেন। আমি বলবো না আমার ভাতিজা সাধু। তবে দোষ একার না। ”

” আমার মেয়ের কোনো দোষ নাই। ”

” সেটার প্রমান এক্ষুনি দিচ্ছি। ”

নিজেদের বাড়ির বাগানে বসে কাঁদছে পিংকি। পাশেই ওর মা বসে আছে। তিনি অন্তু কে গাল মন্দ করছেন। তুলি বেশ ভালো করে কান পরা দিয়েছে। উর্মি কে দেখে একটু ভরকে যায় পিংকি। অন্তু বলেছে তার ফুপি খুব রাগি। মেয়েটা কে টেনে বের করে নিয়ে আসে। পেছনে ছুটে আসে পিংকির মা। ভীরু চেচাচ্ছে। তার মেয়ে কে কেন নিয়ে আসা হলো। উর্মি হাঁটু গেড়ে পিংকির কাছে বসে।
” আম্মু প্লিজ সত্যি কথা বলবে তুমি। অন্তু তো তোমার বন্ধু তাই না? ”

” পিংকি কিছু বলবো না। ছাড় আমার মেয়ে রে। ”

” ভীরু ভাই ফাজলামি করবেন না। আমি এখনি প্রমান দিবো। আপনি আটকান কেন!”
কথা শেষ করে পিংকির মাথায় হাত বুলায়। সুলেখা ফুপু এক নিশ্বাসে গোষ্ঠী উদ্ধার করে। উর্মি নরম কন্ঠে বলল–
” পিংকি, বাবা তুমি যদি আজ মিথ্যা বলো তাহলে তোমার বন্ধু কে সবাই বকবে। দেখো পাপা এখনো গালমন্দ করছে। প্লিজ বাবা সত্যি টা বল‍বে। বলবে তো? ”

হিচকি তুলে মাথা নাড়ায় পিংকি। ততক্ষণে ছোট ভাবি ও হাজির। উর্মি এক পলক তাকিয়ে পিংকি কে বলল–
” বাবা কি হয়েছিলো। অন্তু তোমাকে ছাঁদে গিয়ে কি দিয়েছে? ”

” চকলেট দিয়েছে। ”

” অন্তু বলেছিল তোমায় আসতে? ”

” না। ”

” তাহলে, একটু ক্লিয়ার করে বলো তো। ”

সবাই টান টান উত্তেজনা নিয়ে শুনে। পিংকি বলে–
” অন্তুর সাথে আমি স্কুলে খেলতাম। খুব ভালো বন্ধু। আমিই বলেছিলাম আমায় যেন ছাঁদে এসে চকলেট দিয়ে যায়।কারন মাম্মা আমাকে চকলেট খেতে দেয় না। ডক্টর আঙ্কেল নিষেধ করেছে। ”

ব্যাস সমস্ত টা পরিষ্কার। মাঝে হয়তো অন্তু দু একবার দুষ্টুমি করেছে। তবে এর মাঝে পিংকি নিজে ও দোষী। সবাই থমথমে হয়ে যায়। ফটফট পায়ে চলে যায় উর্মি। যাওয়ার আগে পিংকির কপালে চুমু দিয়ে বলল–
” থ্যাংকস আম্মু। সত্য টা বল‍ার জন্য। আশা করি আমার ভাতিজা কে একা দোষারোপ করা হবে না আর। আমি বলছি আপনাদের মেয়ে কে সামাল দিবেন। আমি অন্তু কে কি করার করে নিবো। ”

স্বীয় কক্ষে খাপটি মেরে বসে আছে উর্মি। রাত প্রায় এগারো টা। অফিস থেকে বিকেলে ফিরেছে আজ। মাঝে সৌমেন স্যার কাজ দিয়েছিল। সব টাই পানির মতো ভেসে গেল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সৌমেন স্যার কে কল করে।
” আমি আসলে খুব দুঃখিত স্যার। ”

” কি হয়েছে উর্মি? ”

” কাজ টা করতে পারি নি। পারিবারিক সমস্যায় আটকে গিয়েছিলাম। ”

” আচ্ছা ঠিক আছে। এতো ভেবো না। বাট কালকের মধ্যে কিন্তু লাগবে। ”

” ওকে স্যার। ”

” আর শাড়ির কালেকশন গুলো সমীর এর থেকে জেনে নাও। ”

” আচ্ছা। ওনার মেইল আইডি নেই আমার কাছে। ”

” আমি সেন্ড করে দিচ্ছি। ”

” ওকে স্যার। ”

ফোন রেখে কিছুক্ষণ জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকে উর্মি। নোটিফিকেশন এর শব্দে ঘোর ভাঙে। মেইল আইডি টা চেইক করে সমীর কে একটা মেইল পাঠায়। ঝটপট কল আসে সমীর এর।
” হ্যাঁ উর্মি কেমন আছেন? ”

” ভালো আপনি ভালো আছেন? ”

” হ্যাঁ ভালো আছি। উর্মি শুনেন আপনি আমায় হোয়াটস অ্যাপ অথবা ফেসবুকে নক দেন। আমি সব কালেকশন বুঝিয়ে দিচ্ছি তারপর মেইল করে একটা চার্ট পাঠিয়ে দিবো। ”

” আচ্ছা। ”

উর্মি কথা মতো ফেসবুকে নক করে। মেঘনা ধীর চিত্তে উপস্থিত হয়। উর্মির পাশে বসে।
” ঘুমা আপা, আমার লেট হবে। ”

” খাবার টা খেয়ে নে বোন। ”

” ক্ষিদে নেই আপা। ”

” অন্তুর উপর রাগ করেছিস? ”

” আমার রাগ আদেশ নিষেধ কারো যায় আসে না রে। তাই আর ভাবছি না। ”

অন্তু দরজার কাছ থেকে চলে আসে। উর্মি তখন ফোনের স্ক্রিনে ব্যস্ত। কান্নার শব্দে তাকায়। অন্তু কে দেখে বুক ভারী হয়। সামান্য চেচিয়ে উঠে অন্তু। উর্মি নিজের কান্না সংবরণ করে।
” আমি আর কখনো পিংকির সাথে কথা বলবো না ফুপি। তুমি আমায় মাফ করে দাও। প্লিজ ফুপি, প্লিজ। ”

মেঘনা ছলছল চোখে। উর্মি ডুকরে উঠে। অন্তু কে বুকে জড়িয়ে বলে–
” একদিন অনেক টাকা হবে তোর। আর তখন ঐ মানুষ গুলো কে দেখিয়ে দিবি মধ্যবিত্ত রাও পারে। ”

টুলুটুলু চোখ নিয়ে শশী কে পড়াচ্ছে উর্মি। কাল সারা রাত কাজ করেছে। ফলস্বরূপ চোখ দুটো কোটরে চলে এসেছে। শশী একটু পর পর ই এটা সেটা বলছে তবে উর্মি উত্তর করতে পারছে না। মাথা ব্যথা করে। হালকা হাতে মাথায় মালিশ করে।
শশী বলে–
” সালমা আন্টি একটু চা দেও তো আপু কে। ”

” তুমি পড়ো শশী। ”

” অসুস্থ লাগে তোমায়। ”

” ঘুম হয় নি তাই। তুমি সলভ করো ম্যাথ টা। ”

” হুম। ”

চা দিলে চা পান করে উর্মি। তবু মাথা ব্যথা যায় না। শশী কে পড়িয়ে বের হয়ে আসে। হেটে যাচ্ছে। পা যেন আটকে আছে। পরে যেতে নিচ্ছিল। তবে একটা গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে বেঁচে যায়। আবার হাঁটা দেয় তখনি এক গাড়ি এসে থামে। সমীর কে দেখে হাসার চেষ্টা করে উর্মি বলে–
” হাই ”

” হেই কোথায় যাচ্ছেন? ”

” বাসায় যাচ্ছি। ”

” ও তাহলে চলেন আমি প‍ৌছে দেই। ”

” না না ঠিক আছে। আমি যেতে পারবো। ”

” আরে আসেন তো। ”

মৃদু স্বরে হু বলে উঠে পরে উর্মি। শরীর টা সুস্থ থাকলে যেতো না। তবে আজ কে আর পারছে না।
তুলি ছাঁদে কাপড় মেলছিল। গাড়ির শব্দে নিচে তাকায়। উর্মি কে সমীর এর সাথে দেখে গোল করে ফেলে চোখ। উর্মি হেসে কথা বলছে। এক কাপ চা খাওয়ার অনুরোধ ও করলো। কাজের বাহনায় না করে দিলো সমীর। উর্মি বেশি ভনিতা না করে ঘরে চলে এলো। বড্ড মেজমেজ করছে শরীর টা।

চলবে….
কলমে ~ ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here