শখের_সাদা_শাড়ি,08,09

0
644

#শখের_সাদা_শাড়ি,08,09
কলমে ~ ফাতেমা তুজ
৮.
হলুদ রঙের কাপড় পরেছে উর্মি। গায়ে ফুলের গহনা। আয়নায় দাঁড়িয়ে ঠোঁটে লিপস্টিক লাগালো। সাজ গোজ বেশ একটা পছন্দ না। সেই কারনে মেকাপ এর সরঞ্জাম ও নেই তেমন। ধীর পায়ে উর্মির বরাবর এগোয় মেঘনা। বোন টা তাঁর ভীষণ সুন্দর। বলতে গেলে উপমা খুঁজতে হয়। চোখ দুটো বড় বড়। এই চোখে কাজল টা খুব মানায়। তবে উর্মি কখনোই কাজল পরে না। নিজের ব্যাগ থেকে কাজল নিয়ে আসে মেঘনা। উর্মি না বলতেই মেঘনা চোখ পাকায়। চিকন করে রেখা টেনে দেয় সুন্দর নয়নে। কপালের ডান পাশ টায় নামিয়ে দেয় এক গাছি চুল। বড্ড সুন্দর লাগে দেখতে। তুলি নাক মুখ কুচকে বসে আছে। উর্মি কে দেখে খুব একটা ভালো লাগলো না। মুখ টা বাকালো আড়ালে। উর্মি ছোট ভাইয়ার পাশে বসলো। পেপার টা টেনে রেখে দিলো।
” তোমায় তো পাওয়াই যায় না ছোট ভাইয়া। কাজের ব্যস্ততায় পরিবার কে ভুলে গেছো? ”

” ধুর পরিবার কে ভুলবো কেন। ”

” সে জন্যে একবার খোঁজ ও নিলে না। ”

” তোমার ভাইয়া খুব টায়ার্ড ছিলো উর্মি। ”

তুলি এসে পাশে দাঁড়ালো। সৌজন্য তো দেখা করতে চেয়েছিল তবে তুলিই বাঁধা দেয়। সে কথা কে ইনিয়ে বিনিয়ে ঝটলা বাঁধায়।
” তা কোথায় যাওয়া হচ্ছে আমার বোনের? ”

” স্টুডেন্ট এর বাসায়। শৌখিন ভাইয়া কে চিনো না? তোমার স্কুলেই পড়েছে। ”

” ওও হ্যাঁ। খুব মেধাবি ছিল। জুনিয়র হলে ও ওর নাম ডাক ছিলো আশ পাশে। সেই ছেলে আজ বিয়ে করছে। বাহ ”

” হুম বিয়ে তো করতে হবেই। বয়স তো কম হলো না। দুই এক বছর পর ই ত্রিশ ছুঁবে। ”

” সেটাও ঠিক। ”

কথার মাঝে বড় ভাবি চা দিয়ে গেলেন। উর্মি দীর্ঘশ্বাস নামিয়ে অন্তুর ঘরে প্রবেশ করে। সারাদিন শুয়ে বসে দিন কাঁটায়। ঘটনার এক সপ্তাহ হতে চললো অথচ ছেলেটা অস্বাভাবিক। বাচ্চা এক ছেলে তাঁর মনে ও কেমন অনুভূতি বুনে দিয়েছেন সৃষ্টিকর্তা।

রিক্সা থেকে নেমে একটু থমকায় উর্মি। ভীষণ অস্বস্তি হয়। হলুদের শাড়ি পরে কেমন যেন হলদে পরি লাগে। গাড়ি থেকে নেমে ভ্রু কুঞ্চিত করে সমীর। মুখ ভরা হাসি ফুটিয়ে ফিসফিস করে বলে–
” এখানে কি করেন। ”

” ওরে বাবা ” শব্দ করে পিছিয়ে যায় উর্মি। আচমকা ভরকে গিয়েছিল। সমীর ঠোঁট উল্টিয়ে হাসে।

” আমি আসলে চমকে গিয়েছিলাম। ”

” সে তো দেখলাম ই। এখানে দাঁড়িয়ে এমন কাচুমাচু করছেন কেন? ”

” কি করবো বুঝতে পারছি না। সেন্টারে বিয়ে দেখে কেমন যেন লাগে। ”

” নর্মাল বিহেভ করেন। এটা একটা সেন্টার, যেখানে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। তাছাড়া আপনি গেস্ট হয়েই এসেছেন এটাই মাথায় রাখেন। ”

” জী। ”

” আসুন আমার সাথে। ”

সোফা সেটে বসে আছে শৌখিন। সেখান জুড়ে মেয়ে ছেলেদের ভীড়। শশী তো ভাইয়ের বিয়ে কে নিজের বিয়েই মনে করে ফেলেছে। চোখে কালা চশমা লাগিয়ে কোমর দুলিয়ে নাচে। হেসে উঠলো উর্মি। সমীর তার পাশ থেকে চলে গিয়ে শৌখিন এর পাশে বসে। কি যেন বলে ফিস ফিস করে। ওমনি পেটে গুতো দেয় শৌখিন। সমীর একটু ব্যথা পাওয়ার ভঙ্গিতে আবার কি যেন বললো। এবার উর্মি ঠোঁট কামড়ে হেসে ফেললো।এই ছেলের অভিনয় দারুণ।
” ম্যাম সফট ড্রিঙ্কস? ”

” থ্যাংকস। ”

সফট ড্রিঙ্কস এ ঠোঁট ছোঁয়ায় উর্মি। টেস্ট ভালো। সমীর আর শৌখিন দুজনে নেচে কুদে একাকার। দুজন কে দেখে মনে হবে না এরা পঁচিশ পেরিয়েছে আরও কয়েক বছর পূর্বে। শৌখিন এর মা শ্যামলতা এসে উর্মি কে নিয়ে গেল। খাবার খাইয়েই ক্ষান্ত হলেন। পেটে আর জায়গা নেই। শশী এক বার ডাকলো নাচ করার জন্য। উর্মি বারণ করে দিলো। আলো নিভে গেল। নিভু আলো তে কাউ কে দেখাই যায় না। মৃদু সাউন্ডে রোমান্টিক গান চলছে। গুরুজন রা আগেই চলে গেছেন। একটু আগেই সবাই ছিলো হলুদে মাখো মাখো। উর্মির গালে নেই তার লেশ মাত্র। বহু কষ্টে এই হলুদ থেকে বেঁচেছে। উর্মি একটু পেছন যেতে চাইলেই এক টা শীতল হাতের স্পর্শ পেল বাহু তে। পিঠ ঠেকে গিয়েছে সেই শক্ত বুকে। দুরুদুরু করে উর্মির হৃদয়। এক রাশ ব্যকুলতা থেমে যায় চেনা পারফিউম এর ঘ্রাণে। একটু আগেই সমীর এর গা থেকে এই ঘ্রাণ টা এসেছিল। তবে কি সমীর? ভাবনার ছন্দপতণ ঘটাতে বলে সমীর।
” আপনি হলুদ লাগান নি কেন উর্মি? ”

নিরুত্তর উর্মি। এভাবে আটকে আছে ভাবতেই লজ্জায় মেখে গেল। সমীর বেশ অনেক টা ঝুকলো। এতে করে উত্তপ্ত নিশ্বাস গুলো উর্মির ঘাড়ে লেপন হয়। ছুটোছুটি করে না উর্মি। এই মৃদু শ্বাস গুলো ভালো লাগছে কেন যেন। একটু শ্বাস নিতেই বুঝতে পারে সমীর এর মুখ থেকে মদের ভোটকা ঘ্রাণ ভেসে আসে। উর্মি তড়িঘড়ি করে বলে–
” আপনি মদ খেয়েছেন। সরেন প্লিজ। ”

” মদ! না না আমি মদ খাই না উর্মি। ট্রাস্ট মি খাই না। আপনার কসম জাস্ট একটু খেয়েছি। ”

না চাইতেই হেসে উঠে উর্মি। মানুষ টা পাগল নাকি? উর্মি একটু জোর লাগিয়ে সরে আসে। এবার গান টা একটু জোরালো হয়। হেভি মিউজিক আর দারুণ এক ল্যারিক্স। হাতে টান অনুভব করে উর্মি। সমীর তাকে বাহু ডোরে আবদ্ধ করে নিয়েছে। একবার ভয় হয়। মদ খেয়ে মাতলামো করবে না তো? তবে ধারণা কে বদলে দিয়ে তীব্র আকুলতা প্রকাশ করে সমীর–
” উইল ইউ বি মাই ডান্স পার্টনার? ”

কি আশ্চর্য! প্রশ্ন করলো ঠিক তবে উত্তর এর প্রয়োজন মনে হলো না। উর্মির হাতের তালু তে হাত মিশিয়ে ডান্স করতে শুরু করলো। হতবাক উর্মি শুধু ই চেয়ে রইলো। এমনকি তাল মিলিয়ে দিচ্ছে সমীর। দারুণ নাচে এই বিষয়ে সন্দেহ না করাই উত্তম। কোনো গভীর স্পর্শ না করেই রোমান্টিক গানে দারুণ নাচ তুলে ফেললো। উর্মি এক বার ভাবলো এই ছেলে পাগল, তারপর ভাবলো এই ছেলে শিল্পী, না না তারপর ই ভাবলো এই ছেলে মাতাল। পুরো দমে মাতাল। যা আভাস দেয় সমীরের অন্তরের প্রেমাতাল।

পরদিন খুব আড়ালেই অনুষ্ঠানে জয়েন করেছে উর্মি। সমীর এর মুখোমুখি হয় নি। শশী কে শরীর খারাপের অযুহাত বলে একাই ফিরে এসেছে। জামা কাপড় বদল করে সাওয়ার নিলো লম্বা করে। সৌমেন এর কল এলো তৎক্ষণাৎ। মেঘনা ফোন রিসিভ করে দিয়ে বলল–
” তোর অফিস থেকে কল এসেছে। ”

” দে। ”

” স্যার আমি তো আজ আর কালকের দিন টা ছুটি নিয়েছি। ”

” হুম জানি উর্মি। তবে রাতে তো ফ্রি থাকবে? ”

” হ্যাঁ। ”

” তাহলেই হচ্ছে। আমরা অনলাইন মিটিং অ্যারেঞ্জ করবো একটা। সেটা তেই জয়েন করবে কেমন? ”

” ওকে স্যার। ”

” পরশু ঠিক টাইমে চলে আসবে। মিস যেন না হয়। রাখছি। ”

” আপা এক গ্লাস পানি দে তো। ”

” কি হয়েছে? ”

” তেমন কিছু না রে। তবে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ”

” তাই বল। তোর ভয় পাওয়া দেখে আমি ও — ”

গ্লাস টা টেবিলে রেখে আয়না তে নিজেকে দেখে উর্মি। মেঘনা বেড টা ঝেড়ে দিলো। কাবাড থেক জামা বের করতে করতে উর্মি জানালো এখনি ডাক্তার এর কাছে যাবে। মেঘনার চেকাপ করা দরকার।

বড় ভাইয়া আয়েসে চা খাচ্ছেন। ওদের কে দেখেই প্রশ্ন করলো কোথায় যাচ্ছে। উর্মি জানালো ডাক্তার এর কাছে যাচ্ছে চেকাপ করাতে। নড়ে চড়ে উঠে অমর।
ঘর থেকে তড়িঘড়ি করে আসে বড় ভাবি জোৎস্না। উর্মি এক পলক তাকিয়ে হৃদয়ে দীর্ঘশ্বাস লুকালো।
” ভাবি অন্তুর টাকা টা। চার হাজার দিচ্ছি পরের মাসে ছয় হাজার দিবো। ”

” ঠিক আছে। মনে রাখিস রে। না হলে এই দিকে অনেক চাপ যাবে। ”

” মনে থাকবে ভাবি। ”

মেঘনা কে নিয়ে বেরিয়ে আসে উর্মি। এক পলক দেখে মেঘনা। উর্মির ঠোঁট জুড়ে হাসি। মলিন গুটানো এক ব্যথিত হৃদয়। মেঘনা চুপ থাকে। কি বলবে? নিজেই তো বোঝা স্বরূপ।

সন্ধ্যার মিটিং এর আগে রাতের খাবার শেষ করলো উর্মি। না জানি কত সময় ধরে চলবে মিটিং। মেঘনা পাশে বসা ছিল। ল্যাপটপ অন করা দেখে উঠে গেল।
” যাস কেন? ”

” তোর কাজে সমস্যা হবে। আমি বরং অন্তুর ঘরে যাই গে। ”

” যা। দেখিস তো খাবার খেয়েছে কি না। আর একটু বুঝিয়ে দিস। ”

” হুম। ”

ল্যাপটপ অন করে উর্মি। প্রথমেই চোখ যায় সমীর এর দিকে। এই মিটিং এ সমীর ও রয়েছে? তীব্র এক লজ্জা জাগে অন্তরে। এই লাজুকতা নিয়ে কি করে শেষ করলো মিটিং তা উর্মি নিজে ও বুঝে না। ঘুমিয়েই পরেছিল তবে তখনি সমীর এর ম্যাসেজ এলো। ” সময় হবে উর্মি? ”

” হবে। ”

কল আসে সেকেন্ডেই। উর্মি একটু সময় নিয়ে রিসিভ করে। ওপাশ থেকে উদ্বিগ্ন হয়ে বলে সমীর–
” আমি কি সেদিন উল্টো পাল্টা কিছু করেছি উর্মি? প্লিজ বলেন। আমার খুব টেনশন হচ্ছে। ”

” না কিছু করেন নি। ”

” উফ বাঁচালেন। ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ”

” কেন? কিছু করার কথা ছিল না। ”

” আসলে উর্মি আমি স্যরি। আমি ফুটেজ এ সব টাই দেখেছি। প্লিজ আর লজ্জা দিবেন না। ”

লজ্জিত কন্ঠ টা এতো সুমধুর ছিলো যে উর্মি হেসে উঠলো।
” ঠিক আছে আমি কিছু মনে করি নি। মাতলামো করেন নি এটাই অনেক। ”

” ইস কি লজ্জা। ”

হো হো করে হাসে উর্মি। এবার সমীর ও হেসে কুটি কুটি। ফোন আলাপ চললো অনেক সময়। কখন যে সারারাত পার হয়ে গেল খেয়াল ই হলো না।এ যেন এক শখের কথা।

চলবে…
কলমে ~ ফাতেমা তুজ

#শখের_সাদা_শাড়ি
৯.
মেঘনার প্রেগন্যান্সির সাত মাস পেরোলে। মাঝে চলে গেছে তিন টে মাস। উর্মি ভেবে পায় না সময় এতো দ্রুত কেন যায়! নিজ কর্ম কে আরও জোড়ালো করতে হবে না হলে সময় চলে যাবে অথচ কাজের কাজ কিছুই হবে না। চার দিক সামলাতে প্রথম প্রথম বেগ পেতে হলে ও এখন স্বাভাবিক লাগে। সৌমেন কে দেখে বিশেষ শক্তি পায় উর্মি। মানুষ টার কাজের গতি দেখলে হিংসে ও হয়। কোম্পানির কাজে বান্দরবান যাবে সকলে। এক সপ্তাহের কাজ। আগে শেষ হলে ঘুরাঘুরিও হবে। ব্যাগ প্যাক করছে মেঘনা। উর্মি উদাস ভঙ্গিতে চেয়ে আছে। বড্ড চিন্তা হয় মেঘনার জন্য। তবে মেঘনা শক্তিশালী। ইদানিং তাকে দেখলে মনেই হয় না রোজ রাতে স্বামীর জন্য লুকিয়ে চোখের জল ফেলে। হাসে উর্মি। বোন কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
” বাচ্চামো শুরু হয়ে গেল? ”

” মাত্র ই তো শুরু করলাম রে আপা। এই যে পেটের ভেতর পুচকে পাখি টা ঘুমিয়ে আছে এটা বের হোক তখন দেখবি দুজন মিলে কি বাদরামো করি। অন্তু কে ও সাথে নিবো। ”

” হয়েছে, এবার সরেন ম্যাডাম। কাপড় গুলো গুছিয়ে দেই। ”

” তুই সর আমি করে নিচ্ছি। ”

মেঘনা সরেই যাচ্ছিলো ওমনি করে ফোন টা বেজে উঠলো। সমীর কল করেছে এই অসময়ে। মেঘনা তীঘ্ন দৃষ্টি তে দেখে। একটু পর ই হেসে দেয়।
” লজ্জা পাওয়ার দরকার নেই,কথা বল। ”

” না রে আপা। তেমন কিছু না। ”

” আমি কি বলেছি তেমন কিছু? ”

ধরা পরে যায় উর্মি। নিজেকে বাঁচানোর বৃথা চেষ্টা করে না আর। মেঘনা হেসে বলে–
” ফিরে আয় তারপর সব টা শুনবো কিন্তু। ”

লজ্জিত ভঙ্গিতে হাসে উর্মি। মনে মনে বলে কি বলবো তোকে, গাঁধা টা তিন মাসে ও পারলো না ভালোবাসি বলতে। কল কেঁটে যাওয়া তে কল ব্যাক করলো উর্মি।
” উর্মি কখন আসবে? ”

” এই তো হয়েই গেছে। ”

” সেই কখন থেকে আমি অপেক্ষা করছি। এবার কিন্তু সত্যিই লেট হচ্ছে। ”

” আসছি বাবা। ”

” হুম আসো। আর সাবধানে এসো। ”

” আচ্ছা রাখছি এখন। ”

কল কেঁটে মুঠোফোন বুকে চেপে রাখে উর্মি। এই তিন মাসে বহু কাজ এক সাথে করা হয়েছে। সেই জন্য বন্ধুত্ব গড়েছে। তবে ভালোবাসা টা অব্যক্ত। উর্মি মনে মনে স্থির করে এই ছেলে ভালোবাসার কথা জানান না দিলে ও উর্মি জানিয়ে দিবে স্বীয় মনের অনুভূতির কথা।

উঁচু পেট টায় হাত বুলায় উর্মি। মেঘনার চোখ হাসে। এই ছোট বোন টা আছে বলেই কি না আজ বেঁচে আছে। না হলেই সেই কবেই শিয়াল কুকুরে টেনে হিচড়ে নিতো। অন্তু পেছন পেছন আসে। উর্মি একটু ঝুঁকে ছেলেটার কপালে চুমু আঁকে। অন্তু ও একি কাজ করে।
” আমার সোনা বাবা। বড় ফুপি কে দেখে রাখবি কেমন? ”

” ঠিক আছে ফুপি। তুমি কিন্তু সাবধানে যাবে। ”

” যাবো বাবা। আর তোর জন্য গিফট ও নিয়ে আসবো এবার। ”

” ওকে আমি এখন যাই। ”

অন্তু চলে যায়। তুলি আঁচল মুরিয়ে বের হয়। সচরাচর শাড়ি পরে না সে। তাই একটু অবাক হয় উর্মি।
” কোথাও যাবে ছোট ভাবি? ”

” হুম ঘুরতে যাচ্ছি। ”

” ছোট ভাইয়া ও যাচ্ছে? ”

” অবশ্যই। সে না গেলে আমি একা যাবো নাকি? ”

” না এমনিই বললাম। ”

ইদানিং তুলির ব্যবহার ভালো ঠেকছে না। উর্মির সাথে ও কেমন যেন ব্যবহার করে। উর্মি চুপচাপ বের হয়। বড় ভাবি, তুলির যাওয়ার পর থেকেই বকবক শুরু করে দিয়েছেন। দুজনে একে অপরের পুরনো শত্রু। কেউ কাউ কে এক চুল ও ছাড়বে না। অথচ দিন শেষে এরা একি সংসারে। তুলি যে সংসার ভাগের চিন্তায় বুদ হয়ে গেছে তা আরও দু মাস আগেই বুঝেছে উর্মি। না হলে ছোট ছোট বিষয় নিয়ে কেউ ঝগড়া করে?

বুকের মাঝ খানে সানগ্লাস রেখে বেশ এক ভাব ধরেছে সমীর। উর্মি পাশে এসে বসলো। সমীর লুকিং গ্লাস টা ঘুরিয়ে দিয়ে বলে–
” বড্ড লেট করে ফেললে। ”

” সব সামাল দিতে হয়। ”

” তা ও ঠিক। চলো তাহলে যাত্রা শুরু করি। ”

” সৌমেন স্যার ফোন করেছিল? ”

” হুম। তুমি আরেকবার কথা বলে দেখো। ”

” আচ্ছা। ”

সৌমেন কে কল করে কথা বলে উর্মি। আর তারপর কল করে মেঘনা কে। সে জানিয়ে দেয় গাড়ি তে উঠে গেছে। নিশ্চিত হয় মেঘনা। বোন টা তার খুব বড় নয়। সবে তেইশ এ পা রেখেছে। এর ই মাঝে অনেক পরিশ্রম করলো। শেষ টা যেনো ভালো হয় সেটাই চায় মেঘনা।

গাড়ি চলছে। উর্মি বললো গ্লাস খুলে দিতে। সমীর তাই করলো। কোমর সমান চুল গুলো খুলে দিলো উর্মি। ভালো লাগে এভাবে। সমীর অবশ্য হাসলো।সে ভেবেছে কোনো ভাবে উর্মি জেনে গেছে মেয়েটির খোলা চুলে সমীরের এক রাশ দূর্বলতা। গাড়ির স্ট্রেয়ারিং এ হাত রেখে আড়চোখে তাকায়। তৎক্ষণাৎ উর্মি ঘুরে যায় যার ফলে চোখাচোখি হয়। দুজনেই বেশ লজ্জা পায়। সমীর এর দম বন্ধ হয়ে আসে। পুরুষ মানুষ হয়ে ও কেমন যেন লজ্জা পাচ্ছে! প্রেমের অনুভূতি এমন হয় বুঝি? এর আগে ও দুটো প্রেম করেছে সমীর। একটা কলেজ লাইফ এ আর একটা ভারসিটির শেষ বর্ষে এসে। তখন তো এমন লাগে নি। তাহলে সেগুলো কি ছিলো? শুধুই কি সময় কাটানোর চেষ্টা। ঘেমে উঠলো সমীর। অসুস্থ লাগছে। উর্মি তাকায় নি এ দিকে। ঝটপট গাড়ি থামায়। উর্মি বলল
” কি হলো? ”

” একটু চোখ মুখে পানি দিয়ে আসি। ঘুমে চোখ টা জড়িয়ে আসছে। ”

” আচ্ছা। ”

বোতল ভর্তি পানি। সেটা মুহুর্তেই খালি করে ফেললো। এবার সব টা ঠিক লাগছে। হালকা গলা ভিজিয়ে নেয়। মেয়েটির নজরে ধরা পরা যাবে না। এতে করে আড়ালে হাসতে পারে উর্মি। নিজের পছন্দের মানুষের কাছে সব পুরুষ ই বীর থাকতে চায়। কখনোই এদের কে নিজের দূর্বলতা দেখানো যাবে না।

সকাল সাত টায় রওনা হয়েছিল। এখন বাজে দুপুর দেড় টা। বেলা হয়েছে। পেটে ক্ষিদে ও প্রুচর। জ্যাম ছিলো অনেক টা পথ। সকালের নাস্তা সব পানি হয়ে গেছে। পাশ ফিরে দেখলো উর্মি ঘুম। ডাকলো না সমীর। বান্দরবান এখনো নব্বই কিলো। ধরা যায় বিকেলের আগেই পৌছে যাবে। নিজে গিয়ে লাঞ্চ করে এলো।আর উর্মির জন্য প্যাকেটে খাবার নিয়ে এলো। যদি ও উর্মির ফ্রেশ হওয়া প্রয়োজন তবু ও ডাকে না সমীর। মেয়েটির ঘুম ভাঙাতে ইচ্ছেই করলো না। একটু নিচু হয় সমীর।গোলাপি ঠোঁটে নিজের উষ্ণতা লেপনের ইচ্ছে জাগে। তবে এ যে অন্যায়। নিজের ইচ্ছে কে প্রতিহত করে সমীর। মুখ টা বাংলার পাঁচের ন্যায় বেকিয়ে ড্রাইভ করে আবার।
আধ ঘন্টার মাঝেই ঘুম ভেঙে যায় উর্মির। টুলুটুলু চোখ ডলে নিয়ে বলে–
” স্যরি আসলে কাল রাতে একদম ঘুম হয় নি। ”

” ইটস ওকে। তুমি কি ফ্রেশ হবে? ”

” হুম। লাঞ্চ ও করা দরকার। ”

” সামনে তেমন কোনো ভালো রেস্টুরেন্টে নেই। আমি খাবার এনে রেখেছি। দেখি ফ্রেশ হওয়ার জন্য আশে পাশে কোথায় দাঁড় করানো যায়। ”

একটা ছোট ওয়েটিং জোনে গাড়ি থামায় সমীর। উর্মি ফ্রেশ হয়ে এলে খাবার দেয়। খাবার খায় উর্মি। এই ফাঁকে বাড়ির লোক দের সাথে কথা বলে সমীর। মা আর এক ভাই ছাড়া এই দুনিয়ায় কেউ নেই। নেই বললে অবশ্য ভুল ই হবে। আছেন বাবা, যিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন বছর দশেক আগে। সেই থেকেই মা ভাই নিয়ে ঘর ছেড়েছে সমীর। মায়ের সাথে কথা চলা কালীন ফোনে ভাইব্রেশন হয়। সৌমেন ভাই কল করেছে। রাখছি বলে সৌমেন এর কল রিসিভ করলো।
” উর্মি কে সাথে এনেছো? ”

” হ্যাঁ ভাই। ”

” ভালো করেছো। এমনি তে ও অনেক ইমপ্লয়ি বাসে অসুস্থ হয়ে পরেছেন। ”

” যা গরম,অসুস্থ হওয়া স্বাভাবিক। ”

” আচ্ছা তোমরা লাঞ্চ করে নিও। আবার অসুস্থ হয়ে যেও না। তোমার ভরসা তেই এই আয়োজন। ”

” অসুস্থ হবো না ভাই। রাখছি তবে। ”

” হু। রিসোর্ট এ এসে মনে করে কল করিও। ”

” আচ্ছা। ”

ফোন রেখে গাড়ির কাছে আসে সমীর। বলে–
” খাওয়া শেষ? ”

” হুম। তুমি খেলে না? ”

” আমি আগেই খেয়েছি। তুমি ঘুমে তাই ডাকি নি। ”

” ও। আর কতোদূর? ”

” নব্বই কিলোমিটার এর মতো। ”

” এতোদূর!”

” তা তো একটু হবেই। ”

হতাশ ভঙ্গিতে গা এলিয়ে বসে উর্মি। সমীর পানির বোতল কিনে নিয়ে গাড়ি তে বসলো। প্রায় তিন ঘন্টা পথ পাড়ি দিয়ে রিসোর্ট এর কাছে প‍ৌছায়। পাহাড়ি পথে খুব সাবধানে গাড়ি চালাতে হয়েছে। উর্মি যেন কাহিল হয়ে পরেছে। শরীর টাকে টেনে নিয়ে স্বীয় কক্ষে উপস্থিত হয়। ঘুমে টুলুটুলু দেহ। বেডে শুয়ে আচানাক উঠে বসে। আপা কে একটা কল করতে হবে। পুরো রাস্তা তে এক বার ও খোঁজ নেওয়া হয় নি।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here