শখের_সাদা_শাড়ি,10,11

0
659

#শখের_সাদা_শাড়ি,10,11
কলমে ~ ফাতেমা তুজ
১০.
প্রায় চার ঘন্টা মরার মতো ঘুমিয়ে ঘুম ভাঙলো উর্মির। এই দীর্ঘ সময়ে কেউ তাকে জ্বালাতন করে নি। ফ্রেস হয়ে নামতেই চোখ পরে সমীরের ওপর। ধূসর রঙের গেঞ্জি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে এদিক সেদিক। হাতে ড্রয়িং পেপার। পেন্সিলের কোন দিয়ে একটু একটু করে আঁকি বুকি করে। পেছনে থেকে ভাউ করে উঠে উর্মি। ভয় পায় না ছেলেটা।
” কি হলো? ভয় পেলে না কেন? ”

” পুরুষ মানুষ ভয় পায় না এসবে। ”

” আহারে, তাহলে নারী রা বুঝি ভীতু? ”

” সেটা ও না। ”

” তাহলে? ”

” বাদ দাও। এখন দেখো ডিজাইন টা। ”

আঁচলের এক অংশ দেখেই উর্মি হা হয়ে যায়। চোখ দুটো উজ্জ্বল।
” খুব সুন্দর হয়েছে। ”

” সত্যি বলছো? ”

” হ্যাঁ। তুমি একটা সুযোগ পেলে খুব নাম করবে। ধরো তোমার এই ডিজাইন এক দিন ইন্টারন্যাশনাল পর্যায়ে ও চলে যেতে পারে। আর ন্যাশনালে তো যাবেই। ”

শুকনো হাসলো সমীর। মনে মনে বললো ন্যাশনালে তো গিয়েছিলোই উর্মি। তবে সেসব এখন ভাবতে ও চাই না। বাইরের পরিবেশ টা উপভোগ করার মতো। টুকটাক কথা বলে ভেতরে এলো। রিসোর্ট এর একটা সাইট বুক করেছে সৌমেন। ওদের দুজন কে দেখে মাইশা এগিয়ে আসে।
” সমীর ভাইয়া আপনি আমার সাথে আসেন। আমি ডিজাইন গুলো সেট করে দিচ্ছি। ”

” চলেন। সৌমেন ভাই আসবে না? ”

” স্যার একটু বিজি। আর উর্মি আপনি দেখেন সবাই এসেছে কি না। ”

” ঠিক আছে ম্যাম। ”

উর্মি চলে যায়। মাইশার সাথে আলোচনায় বসে সমীর। মাঝ পথে আসে সৌমেন।
” সব রেডি মাইশা? ”

” জী স্যার। সমীর ভাইয়ার কাজ গুলো এবার আরও দারুণ হয়েছে। ”

” হতে তো হবেই। আফটার অল এই প্রজেক্ট এর মূল মাথা সে। ”

” কি যে বলো ভাই। ”

” সত্যিই বলছি সমীর। তোমার কাজের প্রশংসা না করলে পাপ হবে। ”

একটু হাসে সমীর। পাশেই ছিল উর্মি। বুক ভরে শান্তির শ্বাস নেয়। সৌমেন আর মাইশা কি যেন কথা বলে আর তার পর পর ই ডাকা হয় উর্মি কে। উর্মি সাধারণ ভাবেই বলে–
” জী স্যার। ”

” তোমাকে অভিনন্দন উর্মি। ”

” জী? ”

” তোমার জব কনফার্ম। এর সাথে বাইশ থেকে বেতন হলো ত্রিশ। ”

খুশি তে চোখে জল চলে আসে উর্মির। এতো টা শান্তি লাগে যে বলার বাহিরে। সমীর মেয়েটির কাছে এসে দাঁড়ায়। হালকা করে মাথা স্পর্শ করে বল‍ে–
” ব্রেফ গার্ল। মাস্টার্স কমপ্লিট করো দেখবে অনেক ভালো পজিশন পাবে। ”

” আমি কিছু বলতে পারছি না সমীর। তুমি জানো এই জব টা কতো টা দরকার ছিল আমার। আমি– ”

” কাঁদে না বোকা। ”

” এক সেকেন্ড আপা কে জানিয়ে আসি। ”

নিরবে সম্মতি জানায় সমীর। উর্মি চটপট কল করে মেঘনা কে। ওপাশ থেকে মেঘনা কেঁদে নাক চোখ লাল করে ফেলে। ধমকে উঠে উর্মি।
” পাগল হলি? বাবু অসুস্থ হয়ে যাবে না। বোকা মেয়ে তোকে সুস্থ থাকতে হবে। যা এখন রেস্ট নিবি। ”

” বোন! ”

” বল। ”

” আই লাভ ইউ। ”

ফোন হাতে কেঁপে উঠে উর্মি। চোখ দুটো জলে টুইটুম্বর। রাখছি বলে কল কাঁটে। ঝমঝমে কেঁদে উঠে। সমীর দ্রুত এগিয়ে আসে। উর্মির মাথা টা আলগোছে বুকে টেনে নিয়ে বলে ” পাগলি মেয়ে। ”

চোখের পলকে কেটে গেল তিন টে দিন। কাজের চার ভাগের তিন ভাগ ই কমপ্লিট। সবাই পরিশ্রম করাতেই সম্ভব হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আসা কিছু গেস্ট ইতোমধ্যেই চলে গেছেন। কাপড়ের ব্যবসা টা খুব ই জাকজমক এখন। একজন ব্যবসায়ী বিদেশে বাঙালি কস্টিউম সেল দিয়ে, বেশ সফল। সে যেন সকলের জন্য সুসংবাদ। স‍ৌমেন এর কোম্পানি এর অংশ হতে পেরে আপ্লুত প্রায়। কাজের মাঝে সতেজতার ও প্রয়োজন। সৌমেন নিজ থেকেই জানালো থানচি ঘোরার কথা। সমীর একটু আপত্তি করতে চেয়েছিল তবে উর্মির খুশি দেখে দমে যায়। মেয়েটার মনে যেন স্বস্তি লেপন হয়েছে। সমীর তাকিয়ে থাকে। মাঝে এক বার ও পলক ফেলে না। যখন বুঝে উর্মি তাকাবে তখনি চোখ সরিয়ে নেয়। তবে উর্মি দেখেছে বিষয় টা। লাল হয়ে উঠে গাল। সমীর এর থেকে দুরত্ব রেখে অন্য কলিগ দের সাথে আলাপে মগ্ন হয়। সমীর একবার শুকনো ঢোক গিলে। ছেলেটা ইশারা করে ডাকে উর্মি কে। উর্মি স্বাভাবিক ভাবেই আসে।
” কি হলো? ”

” থানচি না গেলে হয় না? ”

” কেন? ”

” একটু দরকার ছিলো। ”

” সৌমেন স্যার–”

” তুমি বলবে রেস্ট নিতে চাও। আর আমি কাজের বাহনা দিবো। ”

” ওকে। ”

এক গাল হাসে উর্মি। সমীর মৃদু স্বরে কি যেন আওড়ায়। এতে করে প্রশ্নবিদ্ধ হয় উর্মির মুখ। কোনো মতে সামাল দেয় সেসব। সমীর এর কথা অনুযায়ী রেস্ট এর বাহানা দিয়ে থেকে যায় উর্মি। সবাই বেরিয়ে পরে। সমীর কে কোথাও না পেয়ে কল করে। সমীর জানায় আধ ঘন্টার মাঝেই চলে আসবে। উত্তেজনায় পাগল হয়ে যাচ্ছে উর্মি। রিসোর্ট এর এপাশ টা ঘুরে দেখে একবার। এদিক সেদিক চোখ বুলিয়ে যেন আরও অস্থির হয়ে পরলো। সব কিছু এতো সুন্দর লাগে কেন?
সমীরের লেট হচ্ছে বিধায় রিসোর্ট এর পেছনের দিকে আসে। বাতাসের সাথে ভেসে আসে প্রকৃতির সুঘ্রাণ। ভিজে মাটির গন্ধে উর্মির যেন ঘোর লেগে আসে। হঠাৎ ই পা কেঁপে উঠে। চোখের সামনে কল্লোল আর মাইশা কে অপ্রত্যাশিত দৃশ্য তে দেখে লজ্জায় লাল হয়ে যায়। পিছিয়ে যায় উর্মি। কানের লতি রক্তিম। মুঠো ফোন বেজে উঠে। ধুরমুরিয়ে চলে আসে। মাইশা ম্যাম যে যান নি এটা জানতোই না উর্মি। রাগ হয় নিজের প্রতি। ইস এমন এক দৃশ্য চোখে পরতে হলো!

সমীরের হাতে ফুল। লাল টকটকে এক শাড়ি ও দেখা যায়। উর্মি অবাক স্বরে বলে–
” শাড়ি? ”

” কিনে নিয়ে এলাম, আসার পথে একটা দোকানে দেখেছিলাম। তুমি কেমন করে যেন তাকিয়ে আছো। ”

লজ্জা পায় উর্মি। সুন্দর শাড়ি টা। শখ হয়েছিল কিনে নিয়ে যাওয়ার। তবে কেন যেন হয়ে উঠে নি। তবে সেটা যে সমীর নিয়ে আসবে তা কল্পনায় ও আসে নি। সমীর শাড়ি টা তুলে দেয় সাথে সাদা এক থোকা ফুল। উর্মির ভালো লাগলো। সমীর কিছু টা কাছে এসে ফু দিলো।
” কি? ”

” অগোছালো চুল! ”

” তো? ”

বুকের বা পাশে হাত রেখে নাক কুচকায় সমীর। উর্মি মুখ টিপে হাসে। কিছু বলতে যাচ্ছিলো তবে গাড়ির হর্ণে থেমে যায়। সমীরের মুখ টা কালচে মেঘের রূপ নেয়। সৌমেন চোখ মুখ শক্ত করে ফিরে এসেছে।
” কি হলো ভাই ফিরে এলে কেন? ”

” ভালো লাগছে না সমীর। তোমাদের মতো আমার ও বোধহয় রেস্ট প্রয়োজন।”

” বাকি রা? ”

” ঘুরতে বলেছি। ”

ক্লান্ত মুখে ভেতরে যায় সৌমেন। উর্মি ছোট চোখ করে তাকিয়ে থাকে। বিষয় টা ভালো লাগে না একদম। পর পর রিসোর্ট এর পেছন থেকে ছুটে আসে মাইশা আর কল্লোল। সমীর ভ্রু কুঞ্চিত করে বলে–
” মাইশা আপনি থানচি যান নি? ”

” একটু পরে যাওয়ার কথা ছিল আমার। স্যার চলে এসেছেন? ”

” হুম। ”

মাইশা লম্বা লম্বা পা ফেলে ভেতরে যায়। কল্লোল ও চিন্তিত। মাইশার পিছু ছুটে। সমীর হতবাক হয়ে যায়। একটু পরে না বোঝার সুরে বলে–
” কি হলো এটা! মাইশার পেছনে এমন করে চিপকে আছে কেন কল্লোল। ”

উর্মি শুকনো গলা টা ভিজিয়ে নেয়। সেই দৃশ্য মনে হতেই শরীর কাপুনি দেয়। অসুস্থ বোধ করে। সমীর তৎক্ষণাৎ ভেতরে নিয়ে আসে। উর্মির হাত পা ঠান্ডা হবার জোগাড়। লাইভে এমন অপ্রত্যাশিত দৃশ্য আশা করে নি।

বিকেল টা এমনি এমনিই পেরিয়ে যায়। মা কে ফোন করে খোঁজ খবর নিলো সমীর। পুরো দিন টাই এক প্রকার মাটি। প্ল্যান টা ভেস্তে গেল। কি হতো সৌমেন ভাই ফিরে না এলে। হতাশ ভঙ্গিতে বসে চায়ের কাপে চুমুক দেয়। কাজ নেই। তাই মন টা ও ঠিক লাগছে না। ফেসবুকিং করার সময় দেখে সৌমেন এর একটা হার্ট ব্রোকেন পোস্ট। বিষয় টা কেমন লাগে। যদি ও বা সৌমেন আর সমীর অনেক টা ক্লাইন্ট এর মতো তবু ও দুজনার সম্পর্ক অন্যরকম। সে ম্যাসেজ করে ” কি হয়েছে ভাই? ”

রিপলের অপেক্ষা না করে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকায়। পাশের কটেজেই উর্মি। চুল গুলো খুলে রেখে এক মনে চোখ বুঝে আছে। সুন্দর লাগে দেখতে। মৃদু হাসে সমীর। প্রিয়তমার ওমন রূপে হার্ট ব্রেক না ঘটে।

নোটিফিকেশন এর আওয়াজ। সৌমেন রিপলে দিয়েছে–
” কিছু সময় বড্ড অগোছালো মনে হয় সমীর। শখের জিনিস সত্যিই সুখের নয়।”

কেন? কি হয়েছে ভাই। এই কথা টা লিখে ও সেন্ড করে না সমীর। পাছে যদি সৌমেনের পার্সোনাল বিষয়ে নাক গলানো হয়ে যায়। একটা স্যাড ইমুজি দিয়ে ফোন রেখে দেয়। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে উর্মি নেই। উদাস হয় আরও একবার। ঝটপট বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। উর্মি ও বারান্দায় এসেছে। সমীর কে দেখে অল্প হাসে। দুজনেই নিশ্চুপ থাকে।
” তখন কিছু বলতে চেয়েছিলে? ”

” কখন? ”

” ঐ যে শাড়ি দিলে– ‘

আলতো হাসে সমীর। এখন সঠিক সময় না। তার থেকে ভালো ঢাকায় ফিরে নিজ অনুভূতি জানিয়ে দিবে। প্রসঙ্গ বদল করে বলে–
” এখন কেমন লাগছে? ”

” ভালো আছি এখন। সন্ধ্যা হয়ে এলো। পরিবেশ টা সুন্দর লাগে। ”

” ঘুরতে চাও আশ পাশ টা? ”

চলবে…..
কলমে ~ফাতেমা তুজ

#শখের_সাদা_শাড়ি
১১.
বান্দরবান থেকে ফিরে আসার পর এক টা সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। উর্মি চোখ বন্ধ করলেই কিছু স্মৃতি ভাসে। সমীরের থেকে পাওয়া লাল শাড়ি, সেই সন্ধ্যা, সেই লাজুক হাসি। সব কিছু মিলিয়ে যে সুখ অনুভব হয় তা আগে কখনোই হয় নি। মৃদু হাসে উর্মি। বিছানা গুছিয়ে মেঘনার নিকটবর্তী হয়। উঁচু পেট টা তে চুম্বন করে। মেঘনা শুষ্ক হাসে। সত্যি বলতে উর্মির দেওয়া এই সকাল বিকাল নিয়ম করে চুমু টা অন্য কারো দেওয়ার কথা ছিলো। আজ ও অপেক্ষায় আছে মেঘনা। যদি একবার ফোন করে নয়ন। তবে সে আশা ফুরিয়ে যায় তবু কল আসে না। হয়তো আর আসবে ও না। তবে মেঘনা অপেক্ষায় থাকবে। হয়তো চিরদিন, চিরকাল। তবে অপেক্ষা করবেই। উর্মি ব্যস্ততা দেখায়–
” চট জলদি খেতে দে আপা। ছোট ভাবি জীবনে ও দিবে না। ”

” তুই বোস আমি ভাত নিয়ে আসি। ”

” সাবধানে আপা। ”

চেয়ার টেনে বসে উর্মি। কোথা থেকে উদয় হয় অন্তু। ছেলেটার জন্য অনেক কিছু এনেছে উর্মি। আর ও অনেক কিছু নিয়ে আসার ইচ্ছে ছিলো। তবে সৌমেন স্যার এর যে কি হলো। সাত দিনের প্ল্যান পাঁচ দিনেই ইস্তেফা। এতে অবশ্য ভালো টাই হয়েছে। উর্মি যাওয়া তে মেঘনার যত্ন যে হয় না সে খুব ভালোই জানে। বড় ভাবি কে ফোন করলেই বড় ভাবি বলেছে খুব ক্লান্ত হয়ে পরেছি রে। মেঘনার যত্ন তো হয় ঠিক ঠাক। জিজ্ঞাসা কর বিশ্বাস না হলে। ভুলে ও মেঘনা কে প্রশ্ন করে নি উর্মি। সে জানে মুখের উপর মিথ্যে বলবে ওকে। হতাশার পাঠ চুকিয়ে খাবারে মনোযোগ দিলো। অন্তু কে খুশি দেখাচ্ছে!
” কি হয়েছে রে। এতো খুশি লাগছে কেন। মনে হচ্ছে নেচে কুদে এসেছিস। ”

” ছোট ফুপি। নাচতে তো হবেই। ”

” কোন খুশি তে রে? আমার তো বিয়ে লাগে নি এখনো। তাহলে বিষয় কি। ”

” উফ ফুপি। ”

” আচ্ছা বাবা, বল কেন এতো খুশি। ”

উর্মি এবার সিরিয়াস। অন্তুর গাল দুটো লাল। লজ্জা পাওয়ার কি আছে? আবার সেই ভুল করে বসলো না তো! চিন্তিত হয়ে পরে উর্মি। অন্তু কতো গুলো পেপার বের করে আনে।
” এক্সাম কপি?”

” হুম। ”

উর্মি চেইক করতে থাকে। অন্তু গর্বের সাথে বলে–
” নব্বই শতাংশ নাম্বার পেয়েছি। ”

” আমি খুব খুশি রে অন্তু। বল কি চাই তোর। ”

” কিছু চাই না ফুপি। ”

” কেন রে? ”

ঠিক তখনি ঘাম মুছে ছুটে আসে জোৎস্না। চোখে মুখে উৎকন্ঠা। অন্তুর কান টা মুলে দেয়।
” ফুপি কিছু দিতে চাইলেই না না করিস। বেয়াদব হয়েছে একটা। আচ্ছা শোন রে উর্মি। ”

” বলো ভাবি। ”

” ওর কথায় কান দিবি না। তুই যখন গিফ্ট দিতে চাস তাহলে একটা ফোন কিনে দে ওকে। ”

” একদম না ভাবি। ”

উর্মির তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ। বড় ভাবি ঠোঁট বাকায়। উর্মি বলল–
” এই বাচ্চা বয়সে ফোনের থেকে দূরে থাকাই ভালো। আমি বরং ওকে ভালো দেখে একটা স্যুট কিনে দিবো। গত বছর খুব শখ করেছিল ছেলেটা। ”

ইয়ে বলে লাফিয়ে উঠে অন্তু। গতবার ঈদে খুব বড় শপিং মলে গিয়েছিল। যদি ও দাম শুনে খালি হাতেই ফিরে আসতে হয়েছিল। তবে একটা স্যুট দেখে খুব চোখে লেগে যায় অন্তুর। দাম ছয় হাজার টাকা। এতে করে অমর রিজেক্ট করে দেয়। কারণ বাজেট ছিলো তিন হাজার। সেই সময় টা তে অমরের কাজ কর্ম আরও খারাপ যাচ্ছিলো। উর্মি সেদিন ভেবেই নিয়েছিল টাকা হলে অন্তু কে গিফ্ট করবে। মাঝে এতো ঝামেলা এলো গেল যে খেয়াল ই ছিল না। অন্তুর গালে চুমু খায় উর্মি। কেন যেন ভাতিজা টা কে একটু বেশিই ভালোবাসে। হয়তো বা তার প্রতি অন্তুর আলাদা মায়া থেকেই মায়া জন্মেছে।

ঘেমে নেয়ে অস্থির সৌমেন। পর পর গ্লাস শেষ করলো। মাইশা দ্রুত ছুটে এলো। ইনহেলার এগিয়ে দিলো। সেটা নিয়ে প্রাণ এলো সৌমেন এর। মাইশার দিকে তাকিয়ে কাঠ গলায় বলল সৌমেন–
” কাজে মনোযোগ নেই কেন মাইশা! দিন কে দিন ভুল করেই চলেছো। ”

” স্যরি স্যার। আসলে — ”

” নো মোর এক্সকিউজ। ”

” স্যরি। ”

” গো। ”

মাথা নুইয়ে বের হয়ে যাচ্ছিলো ঠিক তখনি সৌমেন বলল–
” উর্মি কে পাঠিয়ে দিও। ”

” কেন? ”

” আমায় প্রশ্ন করছো? ”

” স্যরি। ”

পা চালিয়ে বের হয়ে যায় মাইশা। আজ বার বার সৌমেন স্যারের নিকট বকা খেতে হলো তাকে। সব দোষ কল্লোল এর। এই ছেলের জন্য কাজে গড়মিল করে ফেলেছে। উর্মির কেবিনে গেল মাইশা। উর্মি কম্পিউটারে সিডিউল তৈরি করছে। কাজ টা কে যতো টা সহজ মনে হয় সত্যি বলতে এই কাজ ততো টা সহজ নয়। খুব ই কঠিন।
” উর্মি শুনেন। ”

” ইয়েস ম্যাম। ”

” স্যার আপনাকে ডাকছে। ”

” এখন? ”

” হুম। ”

” কিন্তু আমি যে সিডিউল তৈরি করছিলাম। ”

” ইটস ওকে আমি করে দেই। আপনি গিয়ে দেখা করে আসেন। ”

” থ্যাংকস ম্যাম। ”

মাইশা মুচকি হাসে। একটু পরেই কল্লোল আসে। মুখ টা ফ্যাকাশে। মাইশা চোখ পাকায়। কল্লোল উদাসীন ভাবে তাকিয়ে থাকে।

এক সপ্তাহ পর আজ আবার সমীর এর সাথে দেখা। বিষয় টা যদি ও অফিসিয়ালি, প্রজেক্ট নিয়েই তবু ও মনে আলাদা এক শীতল সমীরণ যায়। সমীরের হেংলা পাতলা দেহ টা খুব করে টানছে উর্মি কে। যতো দিন যাচ্ছে ততোই পাগল হয়ে যাচ্ছে দুজনা। তবে মাঝে ভালোবাসি কথা টা বলা হচ্ছে না কেন যেন। উর্মি ছটফট করে।
” উর্মি তুমি অসুস্থ? ”

” নো স্যার। আম টোটালি ফাইন। ”

” ওয়েল এদিকে আসো। আমার ল্যাপটপ নিয়ে বসো আমি একটু আসি। ”

” ঠিক আছে স্যার। ”

সৌমেন চলে যায়। উর্মি মাত্র ই কিবোর্ডে হাত লাগিয়েছে ওমনি করে উপস্থিত হয় সমীর।
” হে উর্মি। ”

” তুমি। এখন এলে? ”

” লেট করে ফেলেছি। বাট আই ক্যান ম্যানেজ। সৌমেন ভাই আর আমি ভাই ভাই হা হা। ”

” হয়েছে, বসো পাশে। ”

” বাহ পাশে বসতে বলছো। কি ব্যপার হু। ”

রহস্য হাসে সমীর। ভেঙ্চি কাঁটার মতো করে উর্মি বলে–
” ভাবলাম আমায় আবার ভুলে টুলে যাও নি তো। খোঁজ খবর নেই। ”

” হু, হু, ভালো কথা বলেছো। আমি তিন দিন পর ইন্ডিয়া যাচ্ছি। ”

” ইন্ডিয়া! ”

ল্যাপটপ নিয়ে বসলে ও এখন মুখ টা ঘুরালো সমীর এর নিকট। দরজা ঠেলে প্রবেশ করলো সৌমেন। সমীর গিয়ে হাত মিলিয়ে বসলো। উর্মি ভ্যাবলার মতো দেখছে সেসব। দুজন কি যেন কথা বলে। সেসব উর্মির কানে আসে না। উর্মি ভীষণ চিন্তিত! অথচ চিন্তার কারণ নেই।

বিকেলে হঠাৎ ই ফোন করলো মেঘনা। এ সময়ে ফোন করার কথা না। উর্মি কাজের মাঝেই বলল
” আমি একটু বের হচ্ছি। ”

” উর্মি একটু পর যাও। ”

” আর্জেন্ট। ”

” ওকে দ্যান ইউ ক্যান গো। ”

” থ্যাংকস। ”

সমীর তাকিয়ে থাকে। উর্মি দ্রুত প্রস্থান করে। মেঘনার কন্ঠ কাঁপা। চাপা ভয়ে মেয়েটার অন্তর অব্দি কুকরে উঠে।
” আপা। ”

” বোন। ”

দুজনেই চুপ। উর্মি ভয়ে শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁট টা ভিজিয়ে নেয়।এবার মেঘনার ক্রন্দনের শব্দ আসে। উর্মির বুক কেঁপে যায়।
” আপা কি হয়েছে। ”

” বোন নয়ন। ”

” দুলাভাই কি? ”

” নয়ন। ”

” হ্যাঁ আপা দুলাভাই কি। বল আপা, কথা বলোস না ক্যান। এই আপা। ”

” নয়ন ফোন করেছিল। ”

উর্মি এক সেকেন্ড থমকায়। তারপর ই আবার ভয় জাগ্রত হয়। মেঘনা কাঁদছে।
” কি বলেছেন তিনি। ”

শক্ত গলা উর্মির। ওপাশ থেকে কথা আসে না। মেঘনা কেঁদে প্রতিযোগিতা করছে যেন। উর্মির হাত পা ঠান্ডা হবার মতো। এবার মেঘনা থামে। আর উর্মি মনোযোগ দেয়। নিজেকে দৃঢ় করে কঠিন কিছু শোনার জন্য। যা হয়তো কখনোই কল্পনা করে নি।

চলবে….
কলমে ~ ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here